আরেক রকম ● নবম বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা ● ১৬-৩১ মার্চ, ২০২১ ● ১-১৫ চৈত্র, ১৪২৭

প্রবন্ধ

একটা অন্যরকম বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প

অনিন্দিতা রায় সাহা


জেএনইউ নামটা এখন বাংলা শারদীয়া উপন্যাস আর পত্র-পত্রিকার ছোটগল্পের পাতাতেও জায়গা করে নিয়েছে। কলকাতার বুকে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং সেন্টারও গজিয়েছে বেশ কিছু। জেএনইউ থেকে পাশ করা অনেক মানুষ এখন কলকাতা শহরে বিভিন্ন পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। এক ডাকে এক নামে আজ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি চিনতে পারে দিল্লির নেহেরু-নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। আমরা যখন সেখানকার ছাত্র ছিলাম আশি-নব্বইয়ের দশকে, তখন কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক এমন ছিল না। তখনও সে ছিল রাজধানীতে অবস্থিত এক প্রায় নাম-না-জানা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই জেএনইউ এখন রাজনৈতিক সংবাদের শিরোনাম, সর্বভারতীয় মূল্যায়ন সংস্থা ন্যাক-এর প্রদত্ত নম্বর অনুযায়ী ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার সেরা পীঠস্থান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সুবর্ণ জয়ন্তী (১৯৬৯-২০১৯) পেরিয়ে আসা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই - জেএনইউ স্টোরিসঃ দ্য ফার্স্ট ফিফটি ইয়ার্স। সম্পাদক সেখানকার ইতিহাস বিভাগের পাঁচজন অধ্যাপক, যাঁরা এই অন্যরকম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসটিকে ধরে রাখার তাগিদ অনুভব করেছেন। আজকের এই পরিবর্তিত সমাজে, জটিল রাজনৈতিক আবহে আর ক্ষয়িষ্ণু মুক্তচিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ইতিবৃত্তটির বড় প্রয়োজন ছিল। বইটি সেই সময়ের পদধ্বনি রেখে যাবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, এই আখ্যান পথ গড়ে দেবে শিক্ষার স্বাধীনতার ধারাটিকে বজায় রাখার জন্য, এই ভাবধারা অনুপ্রাণিত করবে একটি প্রগতিশীল বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার জন্য। বইটি হাতে পেয়ে একনাগাড়ে পড়ে ফেলা ছাড়া আর অন্য কিছু সম্ভব ছিল না। জেএনইউ প্রাক্তনী হিসেবে এ এক গভীর রোমন্থন, সেই ফেলে আসা দিনগুলিতে নিঃশব্দ পদচারণা আর ভাবী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতার আরেকবার স্ব-ঘোষণা।

বারোটি বিভাগে ছড়িয়ে রয়েছে পঁচাত্তরটি রচনা। লেখক এখানকার বর্তমান ও অতীত শিক্ষক, ছাত্র এবং আরো নানাভাবে যুক্ত থাকা মানুষেরা, যাঁরা জেএনইউ-এর প্রথম পঞ্চাশ বছরের সাক্ষী। কিংবা বলা যেতে পারে তাঁরাই আজকের জেএনইউ-এর আদি কারিগর। এঁরা নির্বাচিত প্রতিনিধি সেই শিক্ষাব্যবস্থার যা ভারতবর্ষে একটি অন্য রকম ধারা ও মুক্তচিন্তার বাতাবরণ সৃষ্টির অন্যতম পথিকৃৎ। বইটির শুরুতেই রয়েছে লাল ইঁটপাথরে গড়া একটা নতুন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের ইতিহাস। তারপর ধীরে ধীরে আলোচিত হয়েছে সেই নয়া শিক্ষাপদ্ধতি আর ক্যাম্পাস-জীবন জুড়ে গড়ে ওঠা যুক্তি তক্কো আর গপ্পের ইতিহাস। তার বিস্তার ক্লাসরুমের বাইরে হোস্টেল থেকে ধাবা, ছাত্র রাজনীতি থেকে গণসংস্কৃতি, জাত, ধৰ্ম ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিতর্ক থেকে শুরু করে ‘জেএনইউ-আইট’ শব্দটির নিগূঢ় অর্থ অন্বেষণ পর্যন্ত। এ সেই শব্দ যার অর্থের খোঁজ রয়ে যায় গোটা জীবন, যার প্রভাব গায়ে লেগে থাকে জীবনের পুরো পথ পরিক্রমায়, যা আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই আমাদের ছাত্র, বন্ধু আর বৃহত্তর সমাজে।

স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহেরুর জীবদ্দশাতেই একটি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির ভাবনা শুরু হয়েছিল। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল তৎকালীন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ। সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও ছিল যে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরে এসে খানিক মার্কিনি ধারার খোলা হাওয়া আনা যায় কিনা। কীভাবে সরকারি উদ্যোগে, দীর্ঘ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি হল জেএনইউ, তার একটি অনুপুঙ্খ ঐতিহাসিক দলিল ‘ভূমিকা’ অধ্যায়টি। নিজের নাম ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নামই কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাখা হয়েছিল, কারণ ততদিনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। প্রস্তাবিত রাইসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নাম আর রাখা হল না, তৈরি হল জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়, ওরফে জেএনইউ। প্রথম যুগের উদ্ভাবনী ভাবনা-চিন্তা, শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নতুন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিভিন্ন স্কুল ও সেন্টারের ধারণা, এইসব বর্ণনা সবিস্তারে ফুটে উঠেছে বইটির বিভিন্ন অধ্যায়ে। এই অন্য ধারার উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখানে কোনোদিনই ছাত্রদের হাজিরা নেওয়া হত না, পরীক্ষার কোনো বাঁধা গৎ ছিল না। ইতিহাস বিভাগের টিউটোরিয়াল রুম মানে ছিল শিক্ষকদের কক্ষগুলিই। অর্থনীতি বিভাগে ছাত্রের করা প্রশ্ন নিয়ে মাস্টারমশাইদের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল বিতর্ক আর আলোচনা। আবার অন্য কোনো দিন হোস্টেলের ছাত্রদল সন্ধ্যাবেলা ঘেরাও করতে এলে অধ্যাপক বললেন, “সময় নির্বাচনটা তো তোমাদের ভুল হয়েছে! এখন ভেতরে এসে আমার সাথে খাবার খাও, কাল সকালে আপিসে এসে ‘বুর্জোয়া! বুর্জোয়া!’ বলে স্লোগান তুলো।” এইসব ছোট ছোট ঘটনার সরস বর্ণনা পাঠককে বুঝিয়ে দেবে জেএনইউ-তে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সে সময় কেমন ছিল, কীভাবে হতো ছাত্রদের ব্যতিক্রমী ধারার শিক্ষায় জীবনদীক্ষা। এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়, ক্লাসরুম থেকে চায়ের দোকান, সারা রাত খোলা লাইব্রেরি থেকে গঙ্গা/নীলগিরি ধাবা - এ সবই তো সেই স্বাধীন চিন্তা, জিজ্ঞাসা আর প্রশ্নের অধিকারের পরম্পরা সৃষ্টির উপাদান।

দক্ষিণ দিল্লিতে আরাবল্লীর রুক্ষ শুষ্ক পার্বত্য প্রদেশে অব্যবহৃত বিস্তীর্ন জমি-জায়গা খুঁজে নেওয়া হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলার জন্য। স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেও অভূতপূর্ব এই ক্যাম্পাস। বিদ্যাচর্চার মুক্ত প্রাঙ্গন উল্টো-পিরামিড ধাঁচের স্কুল আর সেন্টারগুলি। অন্যদিকে, কর্ম-অন্তে বিশ্রামস্থল ছাত্রাবাসের গঠন পিরামিডের মতো। আরাবল্লী পাহাড়ের কোলে এই অঞ্চল একটি ছোটখাট বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক। আসা যাওয়ার পথের ধারে ময়ূর, সাপ, নীলগাই আজও খালি চোখে দেখা যায়। এক কালের কাঁটাঝোপে ভরা জঙ্গল ধীরে ধীরে রং বদলেছে। বসন্তের শিমুল, পলাশ আর বোগেনভিলিয়া ঘেরা দীর্ঘ রাস্তা এঁকে বেঁকে চলে গেছে জেএনইউ ক্যাম্পাসের বুক চিরে। পরে অবশ্য অনেক গাছ কেটে আরো ইমারত তৈরি হয়েছে । তবু জেএনইউ রয়ে গেছে প্রকৃতির মাঝখানেই। বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবিসহ এই লেখাগুলি পড়তে পড়তে আমরা যেন স্পষ্ট দেখতে পাই এই হাজার একরের বিশাল ও অসাধারণ ক্যাম্পাসটি।

‘যমুনাপুলিনে ক্রেমলিন’ এই সীমিত পরিচয়টুকু কলকাতা থেকেই শুনে এসেছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে তাকে চেনা, জানা আর আপন করে নেওয়া। জেএনইউ-এর মূল চালিকা শক্তি ছিল তার ছাত্রদল আর দীক্ষাগুরু সেখানের অধ্যাপকেরা, যাঁদের প্রজ্ঞা আর খ্যাতি বিশ্ববিশ্রুত। তাঁরাই প্রথম যুগের আদি কবি, যাঁরা ছাত্রদের মনে রোপন করেছিলেন গণতন্ত্রের ধারণা, সমাজতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা আর আত্মসম্মানের সাথে সংগ্রামের বুনিয়াদ। জেএনইউ-এর ছাত্র আন্দোলন আজকের ভারতবর্ষে সর্বজনবিদিত। এর ইতিহাসের গোড়ার দিকে আছে জরুরি অবস্থার সময় ছাত্রদের প্রতিরোধ আর ১৯৮৩ সালের আন্দোলন, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই উত্তরাধিকার নিয়েই ছাত্রসংঘ পরবর্তীতে এগিয়ে গিয়েছে অবিরত - মুক্তি, ন্যায় আর সমান অধিকারের লড়াইতে। জেএনইউ-এর পরিবেশ জাত, ধৰ্ম আর লিঙ্গ বৈষম্যের ঊর্ধ্বে এক মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্রনেতার জবানিতে এই ছবিগুলি ধরা পড়েছে, যা পাঠককে ভাবাবে আর চেনাবে জেএনইউ নামক বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। ভারতবর্ষের বেশ কিছু প্রথম সারির চিন্তাশীল মানুষের নাম জেএনইউ-এর আকাশের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তেমন অনেকের পুরোনো ছবি এই বইটি নাড়াচাড়া করার উপরি পাওনা। বিভিন্ন অধ্যায়গুলি পড়লে জেএনইউ সম্পর্কে আজকের অপপ্রচার আর বিরোধিতায় বিভ্রান্ত ভারতবাসী হয়তো এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কিছুটা বুঝতে পারবে। এ সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে ছাত্রসংঘের নেতা আপত্তি জানালে কর্তৃপক্ষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ছাত্রদের মতে এই বিপুল ব্যয় ছিল অহেতুক, এ অর্থ দিয়ে এর পরিবর্তে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা যেত। সেই ভাবধারার চিহ্ন আমরা আবার দেখতে পাই যখন শুনি জেএনইউ-তেই প্রথম শুরু হয়েছিল অনগ্রসর এলাকার ছাত্রদের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ডেপ্রিভেশন পয়েন্ট। জন্মগত বঞ্চনা আর অসাম্য থেকে বেরিয়ে এসে সবার সাথে সমান তালে পা ফেলে এগিয়ে চলার এই তো প্রথম প্রতিশ্রুতি। আরেকটি লেখায় আমরা পাই সেই অকুন্ঠ স্বীকার, জেএনইউ এক সুবিধাপ্রাপ্ত শহুরে তরুণকে চেনায় প্রকৃত ভারতবর্ষ, বৈষম্যের ভারতবর্ষ, পিছিয়ে থাকা ভারতবর্ষ। ছাত্রসংঘ ছাড়াও এই শতাব্দীর গোড়ায় তৈরি হয়েছিল আরো কিছু ছাত্র ফোরাম। তাতে আছে নারী সচেতনতার মঞ্চ ‘পারওয়াজ’, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে ‘আঞ্জুমান’ আর অতি অবশ্যই যৌন নির্যাতন বিরোধী কমিটি GSCASH। বিভিন্ন রচনা থেকে জানা যায় এই সব সংগঠন কীভাবে তৈরি হয়েছিল ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষ্যে - কখনো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে, কখনো কোনো বিশেষ ঘটনার অভিঘাতে, কখনো বা নিছকই তরুণদলের আন্তরিক তাগিদে। জেএনইউ মঞ্চে একের পর এক ঘটে গিয়েছে নানা উত্থান আর অভ্যুত্থান। তার পিছনের চালচিত্রে রয়েছে হোস্টেল, ক্যান্টিন আর ধাবার জীবন। অনেক প্রাক্তনীর কলমের আঁচড়ে সেই ব্যস্ত জায়গাগুলির আর ছাত্রদের নিখাদ আবেগের ছবি আঁকা হয়েছে। প্রতিবাদী গানের দল ‘পর্চম’-এর উদ্দীপক গণসংগীত, ইলেক্শনের আগেপরের উত্তেজনা, হোস্টেলের মেসে রাত্রিবেলা অধ্যাপকদের সুললিত ভাষণ ঋদ্ধ করেছে বহু প্রজন্মের ছাত্রকূলকে। ক্যাম্পাসে এসেছেন ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, ফৈজ আহমেদ ফৈজের কথায় সুর দিয়ে ছাত্রদের গানের তালিম দিয়েছেন অনিল বিশ্বাস, প্রতিটি নাটক প্রথম জেএনইউ-তে পরিবেশন করেছেন হাবিব তনবীর। এই সমস্ত অভিজ্ঞতাই তো ‘জেএনইউ-আইট’-দের সারা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উত্তরাধিকার।

স্পষ্ট ভাষণ যদি হয় এই শিক্ষাধারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, তবে সেই অধিকারেই বইটিতে সংযুক্ত হয়েছে এমন কিছু অধ্যায়, যাকে মোটেই প্রশংসা বলা যায় না। সেখানে নিজেদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করতে কুন্ঠিত হননি লেখকেরা। জেএনইউ-তে সমাজ বিজ্ঞানের মাত্রাধিক প্রাধান্য, অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল ও অর্বাচীন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগ, প্রকৃতপক্ষে ইন্টারডিসিপ্লিনারিটির অভাব, এমনকি উপযুক্ত টয়লেটের মতো আপাত-তুচ্ছ অথচ অতি প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাবের কথাও লেখাতে স্থান পেয়েছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে ফুটে উঠেছে এক অসীম মর্মবেদনা। এর মূল সুরটি হল বর্তমান সময়ে জেএনইউ-র পরিবেশের ক্রমাগত অবক্ষয়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারী আচরণ আর ছাত্রদলের শ্বাসরুদ্ধ অস্তিত্ব। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিয়ত প্রবল হয়ে উঠছে আক্ষেপ আর আতঙ্ক। তবু আশা, এই দিনও কেটে যাবে একদিন। “জেএনইউ হামারা হ্যায়” ধ্বনি আবার সোচ্চার হবে ক্যাম্পাসের বুকে। সেই আশা নিয়েই এই বইটি পড়া, সেখানেই এই সংকলনটির গুরুত্ব অসীম। ভালোমন্দ মিশিয়ে জেএনইউ একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের যাত্রায় বদলেছে অনেক কিছু। গোড়ার দিকের দীপ্তি হয়তো আজ অনেক নিষ্প্রভ। ক্রমাগত আভ্যন্তরীণ ছাত্রদের শিক্ষক পদে নিয়োগের ফলে জেএনইউ হয়তো কিছুটা বদ্ধ হয়ে পড়ছে। আরেক জন করে রোমিলা থাপার-বিপান চন্দ্রের মতো ঐতিহাসিক অথবা কৃষ্ণা ভরদ্বাজ-প্রভাত পট্টনায়কের মতো অর্থনীতিবিদ হয়তো তৈরি হচ্ছে না। একচেটিয়া মতাদর্শ হয়তো শত ফুল বিকশিত হতে কোথাও বাধা দিয়েছে, এক অংশের মনে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। তবু শিক্ষার মানচিত্রে জেএনইউ আজও একটি উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী উপস্থিতি। আলোচিত বইটি একটি অসামান্য ঐতিহাসিক দলিল। বইটি সকল প্রাক্তনীর হৃদয়াবেগ, বইটি সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ভারতীয় ছাত্রের পথপঞ্জী। আজকের এই অস্থির সময়ে ঘৃণা, বৈষম্য আর জাতপাতের রাজনীতিতে ভরা ভারতবর্ষে এই পঞ্চাশ বছরের ইতিকথা প্রবীণদের পুনরুজ্জীবিত করবে আর নতুন প্রজন্মকে সুস্থ আগামীর পথে উৎসাহিত করবে, এই আশা রাখি। সমগ্র জেএনইউ প্রাক্তনীদের তরফ থেকে এই অনবদ্য সংকলনের সম্পাদকদের অকুন্ঠ ধন্যবাদ।

________________________________________


জেএনইউ স্টোরিজঃ দ্য ফার্স্ট ফিফটি ইয়ার্স (ইংরাজি)
JNU Stories: The Forst Fifty Years
সম্পাদনাঃ নীলাদ্রী ভট্টাচার্য, কুণাল চক্রবর্তী, এস গুণাসেকরণ, জানকী নায়ার, জয় এলকে পাচাও
প্রকাশকঃ আলেফ বুক কোম্পানি, নয়াদিল্লি
প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর, ২০২০
বাঁধাইঃ হার্ড কভার
মুদ্রিত মূল্যঃ ৯৯৯ টাকা