আরেক রকম ● নবম বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা ● ১৬-৩১ মার্চ, ২০২১ ● ১-১৫ চৈত্র, ১৪২৭
প্রবন্ধ
দানবের পেটে দু'দশক - আমার আরএসএস বিজেপির স্মৃতি
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলার মানুষ জানেই না এরা আসলে কেমন ধরনের প্রাণী।
"কেমন ধরনের প্রাণী" - এ কথা বলে আমি কিন্তু তাদের মনুষ্যেতর জীব হিসেবে বর্ণনা করিনি। দানবের পেটে প্রায় দু'দশক ছিলাম বটে, এবং ইন্টিমেটলি ছিলাম। পরিশ্রমী, নিঃস্বার্থ কর্মী ছিলাম। তারপর রাইজিং স্টার ছিলাম। এবিভিপির পশ্চিমবঙ্গ সেক্রেটারি। জনতা পার্টি তৈরির দিল্লি কনফারেন্সে পশ্চিমবঙ্গের জনসঙ্ঘ প্রতিনিধি।
কিন্তু "দানব" কোনো ব্যক্তি নয়। কোনো নেতা নয়। দানব একটা দর্শন, যা ভারতকে এবং আমাদের দেশের সুদীর্ঘ "বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়" জীবনপদ্ধতিকে কুরে কুরে খেয়ে শেষ করে দেবে। যে জীবনপদ্ধতিতে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ অনুপস্থিত। যেখানে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণদেব, লালন, শ্রীচৈতন্যদেব অনুপস্থিত। যে দানব সমস্ত রকম প্রগতিশীলতা, সমানাধিকার, আধুনিকতার পরিপন্থী একটা অশুভ শক্তি।
আমার স্মৃতি দীর্ঘকালের। ওদের মধ্যে অনেক উচ্চশ্রেণীর মানুষ দেখেছি, সেই সময়কার সম্পূর্ণ স্বার্থত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো মানুষও দেখেছি। আমার বাবা জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একশো ভাগ সৎ, স্বার্থত্যাগী এবং স্বাবলম্বী মানুষ দেখেছি। যিনি আদর্শের জন্যে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে আরএসএস প্রচারক হয়েছিলেন, এবং বাজপেয়ী, দেওরাস, দেশমুখ, ঠেঙ্গাড়ির অতি ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আখের গুছিয়ে নিতে পারলেন না। সারা জীবন আমরা দারিদ্র্যে কাটালাম।
আবার খলনায়ক দেখেছি খুব কাছ থেকে। বাংলায় এসে সারা জীবন থেকেও বাংলাকে অবজ্ঞা করা, হাস্যকর হিন্দিমিশ্রিত বাংলায় কথা বলা, এবং বাঙালি জাতিকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা আরএসএস প্রচারকও দেখেছি।
অনেক স্মৃতি। কুড়িটা বছর এই ছোট্ট জীবনের। কত বন্ধু, কত খেলা, কত মিটিং, মিছিল, গান, বক্তৃতা। জীবনের কতখানি অমূল্য সময়! আদর্শকে পরিত্যাগ করলেও স্মৃতিকে ভুলে যাওয়া যায়না। সেই বন্ধুগুলোকেও না।
আজকের আরএসএস, বিজেপি অবশ্য একেবারেই নতুন প্রজাতির। দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী লোকজন ভর্তি। হিংস্রতা, চোখে ক্ষমতার রক্ত। যাদের দেখলে ভয় করে - এদের হাতে আজ আমাদের ভারত? আমাদের বাংলা? ভোটে ক্ষমতায় আসার জন্যে ঘোড়া কেনাবেচার খেলা প্রকাশ্যে? কালকের ক্রিমিনাল আজকে রাতারাতি মিডিয়া-হোয়াইটওয়াশ করা দেবতা?
"খুনি হয় দেশনেতা, দেশপ্রেম বিক্রেতা?"
নতুন বই "দানবের পেটে দু'দশক", "আপনি কি দেশদ্রোহী?", অথবা আমার স্মৃতিকথা "ঘটিকাহিনিতে" আমি আমার প্রায় কুড়ি বছরের আরএসএস বিজেপি এবিভিপি জীবন নিয়ে অনেক লিখেছি। আরএসএসের অদ্ভুত দর্শন ও জীবনচর্যা, যা বাংলার সমাজের সঙ্গে একেবারেই মেলেনা। যেমন, ওদের কোনো অনুষ্ঠানে হাততালি দেওয়া বারণ, স্ফূর্তি প্রকাশ করা বারণ। প্রায় সবাই ভীষণ সিরিয়াস। হাসতে খুব একটা দেখিনি। বাঙালির হাস্যরস, ঘরে ঘরে আড্ডা, পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামেগঞ্জে গান ওরা বোঝেনি। বাংলার ইতিহাস ওরা পড়েনি, মঙ্গলকাব্য ওরা জানেনা, দ্বীন ইলাহীও নয়, তুহ ফাতুল-মুয়াহীদিন-এর নামও তারা শোনেনি।
রামকৃষ্ণ কথামৃত একদিকে, আবার গোরা থেকে সভ্যতার সঙ্কট - আরএসএস-এ আমার দু'দশকে আমি কখনো এসব নিয়ে কোনো আলোচনা শুনিনি। বৈষ্ণব, ব্রাহ্ম, সুফী, লালন, উদারপন্থী খ্রীষ্টধর্মের নানা ডিনোমিনেশন - এসব তো একেবারেই নয়।
জঙ্গী হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুধর্মকে সামনে রেখে অজ্ঞ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার রাজনীতি করে যাচ্ছে। ঠিক যেমন অধ্যাপক সুদীপ্ত কবিরাজ বলেছেন, "হিন্দুধর্ম হাজার বছরের, কিন্তু হিন্দুত্ব একশো বছর আগে সাভারকারের সৃষ্টি করা ডক্ট্রিন।"
হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুধর্ম জানেনা।
************
একদিকে চরম ইতিহাস-অজ্ঞতা, এবং ফলে ইতিহাস-বিকৃতি, তার সঙ্গে অজ্ঞ কর্মী-সৈন্যদের জন্য মিলিটারির মতো শৃঙ্খলা, এবং প্রশ্নহীন আনুগত্য। নারী ও পুরুষের সম্পূর্ণ আইসোলেশন - প্রতি পদে পদে। সারা দেশের কোনে কোনে হাজার হাজার দৈনিক আরএসএস শাখায় কোনোকালেও পুরুষ-নারীর সহাবস্থান নেই, মেলামেশা নেই, এবং সমানাধিকারের কোনো উল্লেখ নেই। প্রশ্ন নেই। আধুনিক জীবনযাত্রার কোনো ছোঁয়া নেই।
বরং আছে উচ্চবর্ণের তীব্র প্রাধান্য। তীব্র প্রাচীনপন্থা, বিজ্ঞানবিরোধিতা, মুসলমানবিদ্বেষ, খৃস্টানবিদ্বেষ, আর সমাজবাদ-বিদ্বেষ।
ওদের ছটা উৎসব - যার মধ্যে বিজয়া দশমী ছাড়া এমন একটাও উৎসব নেই যা বাংলার ঘরে ঘরে পালন করা হয়। যেমন, বর্ষ প্রতিপদ, হিন্দু সাম্রাজ্য দিনোৎসব, রক্ষাবন্ধন। না, আমাদের বাংলার মাটি বাংলার জল রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধন নয়। এখানে হিন্দু-মুসলমানের মিলনের কোনো প্রশ্নই নেই। নজরুল, লালনের নাম ওরা শোনেনি। ভুল বললাম, আমাদের এবিভিপির অনুষ্ঠানে এসে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে গেছেন। ব্যস।
হ্যাঁ, ওদের উৎসবের তালিকায় মকর সংক্রান্তি আছে। কিন্তু তা বাঙালির পৌষ সংক্রান্তি নয়। একেবারেই গুজরাটি মারাঠি ভার্সন বিদেশী সংস্কৃতি। কেঠো কেঠো, বিশুষ্ক। সবুজ নেই তাতে। জল নেই। মিষ্টি নেই। ঠিক তেমনই আছে গুরুপূর্ণিমা, গুরুদক্ষিণা। যা বাঙালির লোকায়ত সংস্কৃতি নয়। আছে বিজয়া দশমী। যা বাঙালির হৈ হৈ "আসছে বছর আবার হবে" ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে বড়দের প্রণাম করে জোর করে মিষ্টি খাওয়ার উৎসব নয়। একেবারেই নয়।
এসবের বাইরে যা যা মনে হয়েছে, তা হলো এই। বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে ওদের সম্পূর্ণ উদাসীনতা, বাংলার দুর্গাপুজো, বাংলার চড়ক, গাজন, রাস, পৌষ পার্বণ, পিঠেপুলি, ভাইফোঁটা, পয়লা বৈশাখ, সরস্বতী পুজো, এসবের প্রতি সম্পূর্ণ অজ্ঞানতা। মহানবমীর দিন পাঁঠার মাংস। ইলশেগুঁড়ির বৃষ্টির দিন ইলিশ মাছ ভাজা আর ইলিশ মাছের তেল দিয়ে মাখা ভাত। বিয়েবাড়িতে রুই মাছের কালিয়া আর ভেটকি মাছের ফ্রাই, চিংড়ি মাছের মালাইকারি। নেই।
রবীন্দ্রজয়ন্তী নেই, নজরুলের নাম আরএসএস হিন্দিভাষীরা কখনো শোনেনি। পল্লীগীতি আরএসএস শাখায় কখনো গাওয়া হয়নি।
জ্যোতিষী, হোকাস পোকাস, প্রাগৈতিহাসিক বিজ্ঞানবিরোধী কথাবার্তা। গোমূত্র, গরুর কুঁজে সোনা। আজ একটা বিজাতীয় মারাঠি, গুজরাটি-কেন্দ্রিক সংস্কৃতি ওরা ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রজাতির সংস্কৃতঘেঁষা হিন্দির মাধ্যমে বাংলার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যেসব জিনিস আজ মোটামুটি কুড়ি বছর ধরে বলিউড আর বাংলা টিভি সিরিয়াল খুব চুপিসাড়ে মধ্যবিত্ত ও মধ্যমেধা বাঙালির মনকে দখল করে নিয়েছে। মিডিয়ার এই সুদীর্ঘকালীন নিম্নমেধার উলুবন-চাষ মুক্তো ছড়ানোর রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে।
যেখানে পতিত মানবজমিন পতিতই থেকে গেছে। সেখানে এখন সোনা ফলানো অসম্ভব।
আমি আমার দু'দশকের আরএসএসের জীবনে দেখে কোনোকালেও কমফর্টেবল ফিল করিনি। ওই প্রচণ্ড পরিশ্রমের মধ্যেও, আর সম্পূর্ণ ডেডিকেশনের মধ্যেও অনেক সময়েই মনে হয়েছে, এরা কি সুচিত্রা মিত্র, দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান শুনেছে? ওঁরাও তো বামপন্থী মনোভাবের হয়েও ব্রহ্মসঙ্গীত গেছেন নিবেদিতপ্রাণ হয়ে।
মনে হয়েছে, এরা কি সত্যজিৎ রায়ের 'গুপী গায়েন বাঘা বায়েন', বা 'দেবী', 'পরশপাথর' দেখেছে কখনো? 'দেবী' নিয়ে আমার বাবাকে বিরক্ত মনোভাব প্রকাশ করতে দেখেছি অনেকবার।
মনে হয়েছে, এরা কি তপন সিংহের 'অতিথি' দেখেছে, তরুণ মজুমদারের 'ফুলেশ্বরী' দেখেছে? হার্ডকোর লেফট মৃণাল সেন, সলিল চৌধুরী, উৎপল দত্ত, অজিতেশ, ঋত্বিকের কথা তো ছেড়েই দিলাম। মনে হয়েছে, এরা কি বাংলার আধুনিক গান কখনো মন দিয়ে শুনেছে? পদাবলী, কীর্তনের কথা, ভাটিয়ালি, সারি, জারি, ভাদু, টুসুর কথা তো ছেড়েই দিলাম।
সত্যি কথা বলতে, আজ যখন মনের অনেক গভীরে ঢুকে সেসব দিনের কথা ভাবি, তখন মনে হয়, আমি এদের কখনো হিন্দুধর্মও তেমন করে পালন করতে দেখিনি। হিন্দু হিন্দু করে ফাটিয়ে দেয় বটে এরা, কিন্তু দেখুন, আমার ঘোর সংঘী বাবাকে, কাকাকে পর্যন্ত আমি কখনো পুজোপাঠ করতেও দেখিনি, বা আমাদের বাড়িতে কখনো কোনো নিয়মিত ধর্মাচরণ পর্যন্ত হতনা।
কিন্তু সেলফ-গ্র্যাটিফায়িং রক্ষণশীলতা ছিলই। আমার পৈতে দেওয়া হয়েছিল খুব ঘটা করে, এবং নাপিত ডেকে মাথা মুড়িয়ে, কান বিঁধিয়ে, আর সন্ন্যাসীর মতো তিন দিন মালসায় ফোটানো ভাত আর ঘি দিয়ে মাখা কাঁচকলা সেদ্ধ খাইয়ে আমাকে ভীষণ রকম ব্রাহ্মণ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল। সান্ধ্য আহ্নিকও বাদ যায়নি। খাওয়ার সময়ে এক বছর ধরে আচমন। অর্থ না বুঝে গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ।
ঠিক যেমন আরএসএস প্রার্থনা প্রতিদিন। নব্বই ভাগ স্বয়ংসেবক যার অর্থ বোঝেনা। বুঝিয়ে দিলেও বোঝেনা।
তারপর ছিল ওদের মধ্যে অতি জঙ্গী রক্ষণশীলতা, কুসংস্কার, আর মেয়েদের সমাজে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসেবে ব্যবহার করা। যার পরিচয় আরএসএস বিজেপির বাড়ির ঘরে ঘরে দেখেছি। কংগ্রেস, সিপিএমের মধ্যেও দেখেছি, কিন্তু তা একটা বাঙালিত্ব-মোড়া একটু লাইট ভার্সন। একটু সফ্ট প্রজাতির পুরুষতান্ত্রিকতা।
এদের মধ্যে যা দেখেছি, তা একেবারেই উগ্র প্রজাতির উত্তর ভারত পশ্চিম ভারতের তৈরি করা নারীবাদের উলটো মেরুর জীবনপদ্ধতি। যেখানে মেয়েরা ভেতরের ঘরে থাকে, রান্না করে, বাড়ি পরিষ্কার করে, সন্তান উৎপাদন আর প্রতিপালন করে, এবং কখনো পুরুষের রক্তচক্ষু শাসনকে চ্যালেঞ্জের সাহস দেখায় না।
যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে দিবারাত্র বিষ ছড়ানো হয়, নিচু জাত উঁচু জাত করা হয়, বাঙালির রেনেসাঁ কাকে বলে যেখানে কেউ কখনো শোনেনি। নেতারা যারা শুনেছে, তারা বাংলার নবজাগরণকে হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন বলে বিকৃত ব্যাখ্যা করে। যেখানে রবীন্দ্রনাথ শুধু শিবাজী উৎসব আর বন্দী বীর। যেখানে সত্যজিৎ রায় অত্যন্ত অপছন্দের মানুষ। যেখানে সুনীল গাঙ্গুলি অশ্লীল, শক্তি চট্টোপাধ্যায় মাতাল। যেখানে বাংলা সাহিত্য সম্পূর্ণ ব্রাত্য। বঙ্কিম যেখানে শুধু বন্দেমাতরম, কিন্তু দুর্গেশনন্দিনীর আয়েষা, শরৎচন্দ্রের গফুর, বিভূতিভূষণের রুপোকাকার খোঁজ কেউ রাখেনা। মহাশ্বেতা যেখানে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। যেখানে বাঙালির ক্ষুদিরাম থেকে সূর্য সেন, প্রীতিলতা, বাঘা যতীনের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা কেউ বলেনা। কিন্তু শিবাজীর জীবনের গল্প ফলাও করে বলা হয়। যেখানে একদল অজ্ঞ, মূর্খ, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, মধ্যযুগীয় মনোবৃত্তির লোক বাংলার বুদ্ধিজীবিতার প্রতি চব্বিশ ঘন্টা বিষোদ্গার করে।যেখানে মারাঠা বর্গীদের বাংলায় অত্যাচারের কথা কেউ জানেনা। আগেও জানতো না। এখনো জানেনা।
________________________________________
লেখকের সাম্প্রতিক দুটি বই, দানবের পেটে দু'দশকঃ বিজেপি, আরএসএস ও হিংস্র হিন্দুত্বকে যেভাবে দেখেছি (পিপলস বুক সোসাইটি, কলকাতা, ২০২১) এবং আপনি কি দেশদ্রোহী? (রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন) (আর বি ই, কলকাতা, ২০২১)। এই দুই বইয়ের সারাংশ এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছে।