আরেক রকম ● নবম বর্ষ পঞ্চম সংখ্যা ● ১-১৫ মার্চ, ২০২১ ● ১৬-২৯ ফাল্গুন, ১৪২৭

প্রবন্ধ

কবি ও আদালত

স্বপন ভট্টাচার্য


‘যখন কাঁপন লাগে জিভে/বাতাসকে মুক্ত করে দেয় সুর/গান যখন হয়ে ওঠে যুদ্ধেরই শস্ত্র/কবিকে তখন ভয় পায় ওরা/কয়েদ করে তাঁকে, আর/গর্দানে আরও শক্ত করে জড়িয়ে দেয় ফাঁস/কিন্তু, তারই মধ্যে, কবি তাঁর সুর নিয়ে/শ্বাস ফেলছেন জনতার মাঝখানে।’
- কবি শঙ্খ ঘোষের অনুবাদে ভারাভারা রাওয়ের কবিতা ‘চারনকবি’

রাষ্ট্রের চোখে ভারাভারা রাও বিপজ্জনক কবি। আরো বিপজ্জনক ভারাভারার কবিতা। কবি শঙ্খ ঘোষের অনুবাদে ভারাভারা রাওয়ের কবিতা ‘চারনকবি’ এও জানিয়ে দেয় বিপদকে সঙ্গী করাই তাঁর কবিতার দস্তুর। একাশি বছর বয়স্ক, অসুস্থ সেই কবিকে জামিনে মুক্তি দিয়ে গত ২২শে ফেব্রুয়ারি বোম্বাই হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ আমাদের কিছুটা হলেও, মধুর চমক দিয়েছে। বলার কথা এই যে, সুপ্রিম কোর্টের অতি সাম্প্রতিক এক আধখানা পর্যবেক্ষণের কথা মনে রাখলে, এ জামিনকে চমক বলে মনে তো হবেই না, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বলেও মনে হচ্ছে না। কেন সে কথায় পরে আসছি, তার আগে ভারাভারা রাওকে নিয়ে রাষ্ট্রের সমস্যাটা কোথায় তা দেখে নিতে পারি।

পোষ না মানা কবি

ভারাভারা রাওয়ের জন্ম ১৯৪০-এ ওয়ারাঙ্গালের এক তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে। কবিতা লিখতে শুরু করেন কৈশোরকালেই। সতের বছর বয়সেই তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে পত্র পত্রিকায়। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তেলেগু সাহিত্যের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে অধ্যাপনায় আসেন। প্রথমে তেলেঙ্গানার একটি ও পরে মেহবুবনগরের অপর একটি প্রাইভেট কলেজে চাকরি নেন রাও। অন্তর্বর্তী সময়ে কিছুদিন দিল্লিতেও কাটিয়ে আসেন তথ্য-সম্প্রচার দপ্তরের চাকরিতে। রাজনৈতিক প্রতীতি গড়ে ওঠার সময় থেকেই ভারাভারা মার্ক্সীয় দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং তাঁর কবিতায় বার বারই ফিরে আসতে থাকে মানুষের কথা, মানুষের বঞ্চনার কথা। পশ্চিমবঙ্গের ১৯৬৭’র নক্সালবাড়ি আন্দোলন এবং অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামের কৃষক আন্দোলন (১৯৬৭-৭০) তাঁকে তীব্রভাবে নাড়া দেয় এবং তাঁর রাজনীতির দিশা চিহ্নিত করে দেয়। একই সঙ্গে তেলেঙ্গানাকে রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে সরব হয়ে তেলেগুভাষার প্রবীন ও প্রতিষ্ঠিত লেখককুল ও শিল্পীদের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন রাও। তবে এসবে দমে যাবার লোক তিনি কোনকালেই ছিলেন না বরং সমমনের সাহিত্যিকদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘ভীরাসম’- অন্ধ্রের রেভোলিউশনারি রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন। ভারাভারা ছিলেন ভীরাসম-এর মুখ তবে কেবল দেখানোর মুখ নয়। লেখক সঙ্ঘের হয়ে মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানুষকে জানা দরকার মাঠে ঘাটে কলে কারখানায় নেমে, তার পাশে দাঁড়িয়ে- এ বিশ্বাস থেকে সারা জীবনে তিলমাত্র চ্যুত হন নি ভারাভারা।

বারবার রাও শাসকের রোষে পড়েছেন। প্রথম বন্দী হন ১৯৭৩ সালে কুখ্যাত MISA আইনে। সে যাত্রায় মুক্ত হবার পরে জরুরী অবস্থার সময় পুনরায় অন্তরিন হন ১৯৭৫-এ ওই একই আইনে। জনতা পার্টি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে ১৯৭৭-এ রাও মুক্তি পান বটে, তবে পুলিশ, তা সে কেন্দ্র বা রাজ্য, যেখানকারই হোক না কেন, তাঁর উপর থেকে নজর সরায় নি। ১৯৮৫ তে ধরা পড়েন সেকেন্দ্রবাদ ষড়যন্ত্র মামলায়। অভিযোগ ছিল তিনি নাকি অন্ধ্র সরকারকে ফেলে দেবার ষড়যন্ত্রে সামিল। অন্ধ্র প্রদেশের এক পুলিশ কনেস্টেবল সামবাইয়া ও ইনস্পেকটর ইয়াডাগিরি রেড্ডিকে খুনের চক্রান্তের অভিযোগ নিয়ে আসা হয় তাঁর বিরুদ্ধে, যে অভিযোগের অসারত্ব প্রমাণে সতের বছর সময় লেগে যায়। ২০০৫ সালে অন্ধ্র সরকার কবিকে পিপলস ওয়ার গ্রুপ ও তাদের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থ হিসাবে চায়। সে আলোচনা, বলাই বাহুল্য, ফলপ্রসূ হয় নি এবং তার ফলে ভীরাসম এবং কবি ভারাভারা রাও-উভয়কেই পাবলিক সিকিউরিটি অ্যাক্টে অভিযুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে লেখা থামে নি তাঁর, বরং ধীরে ধীরে তা দেশের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হতে শুরু করেছে। ১৫ খানা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর এবং সৃজনা নামের ত্রৈমাসিক প্রকাশ করতে শুরু করেছেন তিনি। সৃজনা মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুললে ত্রৈমাসিক পত্রিকাকে মাসিক পত্রিকায় রুপান্তরিত করতে হয় তাঁকে। ভারাভারার প্রিজন ডায়েরি ‘সহচারালু’ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ ‘তে। এটির ইংরাজি অনুবাদ Captive Imagination বেরোয় ২০১০’এ। ২০১৮ তে ভিমা কোরেগাঁও সংগ্রামের দ্বিশত বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অতিবাম ও আন্ডারগ্রাউন্ড নক্সালপন্থী বলে অভিযুক্ত সংগঠন এলগার পরিষদ আয়োজিত একটি সভায় হাজির থেকে তিনি বা তাঁরা নাকি ২০১৭ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, পরের দিন অর্থাৎ পয়লা জানুয়ারি তা একটি দাঙ্গায় ইন্ধন যোগায় বলে একটি অভিযোগ দায়ের হয় পুনে পুলিশের কাছে। তাঁরা বলতে সুধা ভরদ্বাজ, রোনা উইলসন, গৌতম নওয়ালখা, আনন্দ তেলতুম্বে, অরুন ফেরেইরা ও অন্যান্যরা যাঁদের আজ বাইশ মাস ধরে UAPA আইনে আটক করে রাখা হয়েছে। অন্তরীণ অবস্থায় কবি ভারাভারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, প্রাণ সংশয় হয়েছে, তাঁকে নানাবতী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে, সারা বিশ্ব থেকে তাঁর মুক্তি চেয়ে দাবি উঠেছে, আবেদন করা হয়েছে ভারত সরকারের কাছে, তবু ভবী ভোলেনি। ২২ শে ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর আগে তাঁর জামিনের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এবার তা মঞ্জুর হল এবং হঠাৎ এই ভোলবদল গায়ে চিমটি কেটে বিশ্বাস করানোর মত আকস্মিক। আসলে এর পিছনে আছে ইউএপিএ আইনের ৪৩ ডি(৫) উপধারার একটি ব্যাখ্যা যার বলে কেরল হাইকোর্ট ২০১৯-এ UAPA আইনে বন্দী জনৈক টি এ নাজিবকে জামিন দিয়েছিল এবং এই বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারি যে রায়কে মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আইনের ব্যাখ্যা ও পরিপ্রেক্ষিত

আনলফুল অ্যাকটিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট (UAPA)-তে গ্রেফতারির পরে বিচারের গজকাঠি হিসাবে এখন অবধি যে মামলাটির উল্লেখ স্বতঃসিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়ে আসছিল তা হল ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সী (NIA) বনাম ওয়াতালি মামলা। ২০১৯ সালে জহুর আহমেদ শাহ ওয়াতালি গ্রেফতার হন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসবাদী একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের এক সদস্যর কাছ থেকে অর্থ জোগাড়ের জন্য যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ আদালতে ওয়াতালির জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট বিশেষ আদালতের এই রায় বাতিল করে জামিন ঘোষনা করলে এনআইএ সুপ্রিম কোর্টে যায়। সর্বোচ্চ আদালতের দুই সদস্যের বেঞ্চ সব দিক খতিয়ে দেখে অভিমত প্রকাশ করে যে দিল্লি আদালতের রায়টি ‘পারভার্স’-সম্ভ্রমহীন এবং জামিনের আবেদন বিবেচনা করবার বদলে দিল্লি হাইকোর্ট একটি ছোটখাটো বিচারসভা বসিয়েছিলেন বলেই মনে হয়েছে মাননীয় বিচারপতিদ্বয়ের। এর পর থেকে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ইউএপিএ-আইনে আটক ব্যক্তির জামিনের বিবেচনা হত ওয়াতালি মামলার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে। কেরল হাইকোর্টের কে এ নাজিব বনাম ভারত সরকার মামলায় এর প্রথম ব্যতিক্রম দেখা গেল যা সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকেও সবুজ সংকেত পেয়েছে।

টি এ নাজিব গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১০-এ পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া নামক একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সদস্যরূপে জনৈক অধ্যাপক টি জে জোশেফের হাতের পাঞ্জা চপার দিয়ে কেটে ফেলার ঘটনায়। অধ্যাপক জোসেফ নাকি ইসলাম ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করার কাজে লিপ্ত ছিলেন (ব্ল্যাশফেমি) এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সে কাজের শাস্তি দিতে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছিল, অভিযোগ, নাজিব তাদের মধ্যে একজন। ঘটনার পরে, গ্রেফতারি এড়াতে তিনি ফেরার হয়ে যান বলে দাবি করে এনআইএ। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ধরা পড়লে নাজিবের হদিশ মেলে এবং তিনি কারাগারে অন্তরীণ হন। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সময়কালে তাঁর জামিনের আবেদন ছ’বার প্রত্যাখাত হয়। আদালত প্রতি ক্ষেত্রেই অভিমত দেয় যেহেতু আক্রমণের পরিণতি সম্পর্কে নাজিব ওয়াকিবহাল ছিলেন সেহেতু তিনি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশীদার, ফলে, তাঁর জামিনের আবেদনে সারবত্তা নেই। এবার কিন্তু কেরল হাই কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করে বলে অভিযুক্ত যেহেতু অতি লম্বা সময় জেলেই কাটিয়েছেন এবং যেহেতু সুনির্দিষ্ট প্রমান এখনো দাখিলে সক্ষম হয় নি এনআইএ, সেহেতু তাঁকে জামিন না দেওয়াটা একদেশদর্শিতার উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে এবং সেটা হবে পূর্ববর্তী মামলাগুলি দ্বারা প্রভাবিত সিদ্ধান্ত।

মনে রাখা দরকার, একজন নাগরিকের সাধারণ আইনি অধিকারগুলোর সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে UAPA-আইনে গ্রেফতার হওয়া নাগরিকের অধিকারগুলি বিবেচিত হয়ে থাকে। সে ধারাই এমন যে জামিন এখানে ব্যতিক্রম। জামিনের আবেদন বিবেচনায় আদালত সাধারণত UAPA আইনের 43D(5) ধারাটিকে মানদণ্ড ধরে নিয়ে থাকে। এই ধারা কি বলছে তা দেখে নিতে পারি একবার। বলছে ‘‘on a perusal of the case diary or the report made under section 173 of the CrPC is of the opinion that there are reasonable grounds for believing that the accusation against such person is prima facie true’’ - যদি কেস ডায়েরি বা রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা যায় যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ১৭৩ ধারায় তোলা অভিযোগগুলির যুক্তিগ্রাহ্য ভিত্তি আছে তা হলে ধরে নিতে হবে যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসমূহ প্রাথমিকভাবে সত্য। এ একটা মারাত্মক ধারা কেন না ১৭৩ ধারায় এমনিতেই অভিযুক্তের পূর্ব অপরাধ, ফেরার হবার সম্ভাবনা, অভিযোগকারীর ক্ষতিসাধনের চেষ্টা ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনা করে জামিনের আবেদন ফয়সালা করে আদালত। এই UAPA আইনে এসব তো বিবেচ্য বটেই, উপরন্তু রয়েছে এই ‘প্রাইমা ফেসি ট্রু’ বলে ধরে নেবার লাইসেন্স, ফলে সুধা ভরদ্বাজ থেকে উমর খালিদ, সকলেরই কারাজীবন ইলাস্টিকের মত লম্বা হতে বাধা নেই। এর প্রথম ব্যতিক্রম ঘটল টি এ নাজিবের এই মামলাটির ক্ষেত্রে।

কেরল হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে ভারত সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলে জাস্টিস রামানা, সূর্যকান্ত ও অনিরুদ্ধ বোসের বেঞ্চ অবশ্য মেনে নিয়েছেন যে আদালতের জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার হক আছে যদি ওই ‘প্রাইমা ফেসি ট্রু’ সংস্থানটি সঠিকভাবে প্রযোজ্য হয়। নাজিবের ক্ষেত্রে আদালতকে এড়িয়ে চলার, ফেরার হবার নজির আছে ফলে সে জামিন পেলে আবার পালাবে না তার নিশ্চয়তা নেই কিন্তু, NIA যে কেরল হাইকোর্টের জামিনের সুযোগ দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বলছে এই মামলায় এখনো ২৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি তা সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনায় লোকটা পাঁচ বছরের বেশি জেল খেটে ফেলার পরে অভিযোগকারীর দুর্বলতা, অভিযুক্তের নয়। দ্বিতীয়ত, এ মামলায় যারা অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটছে তাদের সর্বোচ্চ কারাবাসের মেয়াদ হতে চলেছে আট বছর। নাজিব সে মেয়াদের দুই তৃতীয়াংশ বিচারাধীন হয়েই কাটিয়ে দিয়েছে। তৃতীয়ত, সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় বলছে ‘‘Watali dealt with an entirely different factual matrix’’ - ওয়াতালি মামলার সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না কেন না সে মামলার ঘটনাজাল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নাজিবের জামিন মঞ্জুর করে কেরল হাইকোর্ট আধিকার লঙ্ঘন তো করেই নি বরং ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় পার্টে বর্ণিত নাগরিকের ‘মৌলিক অধিকার’-এর প্রেক্ষিতে দেখতে হবে এই রায়কে। সুতরাং সর্বোচ্চ আদালত এতাবৎকালের প্রথার বাইরে গিয়ে একটি UAPA মামলার 43-D(5) উপধারাটিকে বিবেচনা করেছে বলা যায়। এর আগে ব্যতিক্রম ঘটেছিল সারুফা জারগার এর মামলায় যখন গর্ভাবস্থার কারণে তাকে জামিন দিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট বলেছিল এ যেন প্রিসিডেণ্ট বা অনুসরণযোগ্য নজির হিসাবে UAPA আইনের অন্য মামলায় দাখিল করা না হয়, কেন না অভিযোগকারী সংস্থা জামিনের বিরোধিতা করেন নি। নাজিবের মামলায় এই একুশ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশ্য ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’ - বিচারে দেরি মানে বিচারে বঞ্চনা - এই যুক্তি মেনে পরবর্তী সমস্ত মামলায় এ রায়কে উল্লেখ করার সুযোগ খুলে রেখেছে। উচ্চতম আদালতের সাম্প্রতিককালের হাল-হকিকতের নিরিখে এই রায়কে অন্তত আপাতভাবে অন্ধ কারায় আশার আলো বলে মনে হওয়াটা অন্তত এখনো পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়নি।

ভারাভারা রাওয়ের জামিন

মুম্বাই হাইকোর্টে জাস্টিস সিন্ধে ও মনীশ পিতালে-র ডিভিশন বেঞ্চ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত কবি ভারাভারা রাওকে জামিন দেবার সময় আর একবার মানবাধিকার ও চিকিৎসা পাবার অধিকারকে ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় অলঙ্ঘ্য বলে উল্লেখ করেছেন। "We are of the opinion that this is a genuine and fit case to grant relief; or else, we will be abdicating our constitutional duty and function as a protector of human rights and right to health covered under right to life guaranteed by Article 21 of the Constitution of India," বলেছেন, মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে এবং সংবিধান স্বীকৃত স্বাস্থ্যের অধিকারের রক্ষক হিসেবেও তাঁরা ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকারকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন এই মামলায়। ভারাভারা আগামী ছ’মাস এন আই এ-র নজরদারিতে থাকবেন এবং তাঁর মামলাটিও এই জাতীয় নিরাপত্তা আদালতে চালু থাকবে। এখন দেখার এন আই এ সুপ্রিম কোর্টে জামিন বাতিল করার আবেদন করে কিনা! ধরেই নেওয়া যায় তা করবে তারা। আমাদের আগ্রহ থাকবে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের নিরীক্ষণের দিকে। একই সঙ্গে আগ্রহ থাকবে তখন, যখন সুধা ভরদ্বাজের মামলাটি বহে যাওয়া সময়ের নিরিখে আবার শোনা হবে, যখন ফাদার স্ট্যান স্বামীর বয়স ও মানসিক স্থিতি পুনর্বার বিবেচিত হবে, যখন উমর খালিদের জামিনের আবেদন আবার উঠবে আদালতে, যখন গৌতম নওয়ালখা, আনন্দ তেলতুম্বে, অরুন ফেরেইরা, রোনা উইলসনের জামিনের আবেদন উঠবে মানবাধিকার বা তা লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে। আপাতত আশায় বাঁচে চাষা।