আরেক রকম ● নবম বর্ষ দ্বাবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০২১ ● ১-১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার - গবেষণার ফলের থেকেও যখন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার পদ্ধতি

প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


অর্থনীতির খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস হেকম্যান দু'বছর আগে লিখেছিলেন, "Those who ignore intellectual history are condemned to repeat past mistakes"। হেকম্যানের কটাক্ষের নিশানা ছিলেন 'রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল' (RCT) বিশেষজ্ঞরা যাঁরা (হেকম্যানের মতে) অর্থনৈতিক মডেলের ফলাফলের ওপর পুরো নজর দিতে গিয়ে মডেলের তাত্ত্বিক গুরুত্বকে হয় অনুধাবন করেন না অথবা অস্বীকার করে বসেন। অর্থনীতিতে বহু গুরুত্বপূর্ণ RCT জনিত কাজ যে কার্যকারণ সম্পর্ককে ধরতেই পারেনা সে কথা হেকম্যান বোধহয় আজ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পাঠকদের জানাচ্ছেন। অথচ ওই ২০১৯-এই নোবেল কমিটি অর্থনীতির পুরস্কারটি তুলে দেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এস্থার ডুফলো এবং মাইকেল ক্রেমারের হাতে, অর্থনীতিতে রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল সম্পর্কিত গবেষণার জন্য। হেকম্যান অভিজিৎদের কাজ নিয়ে আর নতুন করে সমালোচনা না করলেও, আর এক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অ্যাঙ্গাস ডিটন ২০২০ সালে ফের মনে করিয়ে দেন RCT ভিত্তিক গবেষণার পক্ষে অর্থনৈতিক কার্যকারণ সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বহু তরুণ অর্থনীতিবিদ এই ভুল ধারণাটি পোষণ করেন বলেই হেকম্যান বা ডিটনদের মতন প্রাজ্ঞ পণ্ডিতদের বারেবারে কলম ধরতে হয়, কারণ গবেষণার নৈতিক দিকটি রক্ষা করার দায়িত্বও আদতে গবেষকদের ওপরেই বর্তায়।

২০২১-এর নোবেল পুরস্কার কিন্তু এক হিসাবে হেকম্যান-স্কুলের নোবেল প্রাইজ। আজ থেকে একুশ বছর আগে অর্থনৈতিক মডেলে কার্যকারণ সম্পর্ককে কিভাবে দাঁড় করানো যায় তার হদিশ দিয়ে হেকম্যান নিজেই নোবেল পেয়েছিলেন। একুশ বছর পর নোবেল কমিটি 'ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্ট' শব্দবন্ধের ওপর গুরুত্ব দিলেও আদতে পুরস্কারটি 'স্ট্রাকচারাল ইকোনোমেট্রিক্স'-এর গুরুত্বকে স্বীকার করে নেয়। অর্থাৎ অর্থনীতির যে শাখায় স্ট্যাটিস্টিকাল মডেল গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক তত্ত্বের ভিত্তিতে সেই শাখার প্রয়োজনীয়তা যে কোনোদিন ফুরোবে না সেটাই জানানো। কারা পেলেন এ বছরের পুরস্কার? পুরস্কার অর্থের ৫০% পাবেন ক্যালিফোর্নিয়ায় বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড কার্ড। আর বাকি ৫০% শতাংশ সমান ভাগে ভাগ করে নেবেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির অধ্যাপক জশুয়া অ্যাংরিস্ট এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুইডো ইমবেন্স।

অর্থনীতি সমাজবিজ্ঞানের একটি বিশিষ্ট শাখা। সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের মতন অর্থনীতিতেও ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম। বৃহত্তর প্রেক্ষিত, বৃহত্তর প্রশ্নের কথা মাথায় রাখলে সমস্যাটি আরোই ভালো বোঝা যায়। ন্যূনতম মজুরির মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কথাই ধরা যাক। ন্যূনতম মজুরি বাড়ালে কি চাকরির সংখ্যা কমে যাবে? এই প্রশ্ন, এই বিতর্ক চিরকালীন। এই একবিংশ শতকে এসেও আমেরিকা হোক বা ভারত, বহু উদ্যোগপতি এবং রাজনীতিবিদ সোচ্চারে বিরোধিতা করেন ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির, তাঁদের আশঙ্কা (যা বহু সময়েই হুমকির মতন শোনায়) বাজারের ভারসাম্য ধরে রাখতে গেলে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পর শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। কিন্তু শ্রমবাজার ঠিক কোন পথে হাঁটবে তা বিশ্লেষণ করতে গেলে গবেষকরা নিজেদের সামর্থ্যে কোনো পরীক্ষা চালাতে পারবেন না, কারণ শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো-কমানোর দায়িত্ব তাঁদের হাতে নেই। একইসঙ্গে ল্যাবরেটরিতে চাকরি কমানো বা বাড়ানোর সম্ভাবনাও শূন্য। অতএব, নীতিনির্ধারণের রুক্ষ, বাস্তব জমিতে যাওয়া ছাড়া তাঁদের গতি নেই। সরকারী নীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগার প্রসূত নয়, তাই এই বাস্তবের জমিতেই গবেষকরা চালাচ্ছেন ‘ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্ট’।

যেমন ডেভিড কার্ড এবং তাঁর সহ-গবেষক (প্রয়াত) অ্যালান ক্রগার ন্যূনতম মজুরি সম্বন্ধীয় প্রশ্নের উত্তর পেতে তাকিয়ে ছিলেন আমেরিকার দুই রাজ্য নিউ জার্সি এবং পেনসিলভানিয়ার দিকে। নিউ জার্সির ফাস্ট ফুড শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হয়েছিল, পাশের রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় বাড়ানো হয়নি। সুতরাং, প্রায় এক আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে কার্ড পেয়ে গেছিলেন একটি ‘ট্রীটমেন্ট গ্রুপ’ এবং একটি ‘কন্ট্রোল গ্রুপ। কিন্তু অর্থনৈতিক গবেষণায় বাধাবিপত্তি বিস্তর। শুধুমাত্র দুই রাজ্যের মজুরি, চাকুরি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে গতানুগতিক স্ট্যাটিসটিকাল মডেলে (যেমন সাধারণ রিগ্রেসন) ফেলে দিলে আমরা বড়জোর মজুরি এবং চাকুরির সংখ্যার মধ্যে একটা আপাত সম্পর্ক (সংখ্যাতত্ত্বের পরিভাষায় যাকে বলে correlation) বুঝতে পারি, তার বেশি কিছু নয়। কার্যকারণ সম্পর্কটি যে ঠিক কী, কেন মজুরি বাড়লে চাকুরি কমবে (বা কমবে না) সেটা বোঝা আরো জরুরি। এবং এই কার্যকারণ সম্পর্ক বোঝার জন্য দরকার নতুন স্ট্যাটিসটিকাল মডেল, যার ভিত তৈরি হবে অর্থনৈতিক তত্ত্বের ওপর। ডেভিড কার্ডদের আসল কৃতিত্ব সেখানেই, তাঁরা নিজেদের গবেষণায় অর্থনৈতিক তত্ত্ব এবং স্ট্যাটিসটিকাল মডেলের এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটালেন। অর্থনীতির অন্যান্য কিছু শাখায় কাজটা আগেই শুরু হয়েছিল কিন্তু শ্রম-অর্থনীতি বা উন্নয়ন-অর্থনীতির আঙিনায় এই মেলবন্ধনের কাজটি শুরু হল ডেভিড কার্ডদের হাত ধরেই। শ্রম-অর্থনীতি বা উন্নয়ন-অর্থনীতির গবেষকরা আজ difference-in-difference বা instrumental variable regression-এর মতন যেসব মডেল অনবরত ব্যবহার করে চলেছেন সেইসব মডেল ডেভিড এবং তাঁর সহযোগী গবেষকদের দরুণ বৃহত্তর পরিচিতি পায় সেই নয়ের দশকেই। তাঁদের গবেষণায় ডেভিড এবং অ্যালান দেখিয়েছিলেন ন্যূনতম মজুরি বাড়লে চাকরি কমে না, বরং বাড়ে। ফাস্ট ফুড আউটলেট (যেমন ম্যাকডোনাল্ডস) তাদের খাবারের দাম প্রায় বাড়াতেই পারে না (যেহেতু এহেন সাধারণ খাবারের বিকল্প প্রচুর), ফলে আয় বাড়ানোর জন্য তাদের দরকার আরো বেশি উপভোক্তা। এবং আরো বেশি উপভোক্তাকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য দরকার আরো কর্মী। এ প্রসঙ্গে আরো একটি ব্যাখ্যা হতে পারে যে, এই ধরণের শ্রমক্ষেত্রে কোম্পানিরা আগে থেকেই তাদের মজুরি ঠিক করে নিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়, এবং সেই বিজ্ঞাপন দেখে শ্রমিকরা তাঁদের পছন্দের কোম্পানিটি খুঁজে নেন। এই সার্চ মডেল-ও কিন্তু দেখায় ন্যূনতম মজুরি বাড়লে, চাকুরির সংখ্যাও বাড়বে।

ন্যূনতম মজুরি নিয়ে গবেষণা ডেভিডকে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছে দিলেও সে খ্যাতি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে নড়িয়ে নীতিনির্ধারণের পীঠস্থান ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়ে যেতে পারেনি। বরং শিকাগো, প্রিন্সটন ও বার্কলির মতন জায়গায় থেকে তিনি অভিবাসন, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন। আশি বা নব্বইয়ের শুরুতেও এসব কাজের শিরোনাম হত, ‘’Effects of education on wage earnings’’ ধাঁচের, ডেভিডদের জন্য নব্বইয়ের শেষে শুধু effects-এর বদলে দেখা যেতে শুরু করল নতুন এক শব্দবন্ধ ‘’Causal Effects’’।

ন্যূনতম মজুরি নিয়ে ডেভিড যে গবেষণাপত্রটি লিখেছিলেন সেটি অর্থনীতির গবেষকরা মূলত মনে রেখেছেন নতুন গবেষণাপদ্ধতির দরুণ। একই কথা খাটে জশুয়া অ্যাংরিস্ট বা গুইডো ইমবেন্সদের জন্যও। গবেষণার সিদ্ধান্তের থেকেও তাঁদের কাজ আরো অনেক বেশি চর্চিত হত তাঁদের গবেষণাপদ্ধতির জন্য। ১৯৯১ সালে জশুয়া এবং তাঁর সহগবেষক অ্যালান ক্রগার (হ্যাঁ, আবারো সেই অ্যালান! ২০২০ সালে মানসিক অবসাদের দরুণ আত্মঘাতী না হলে ইনিও সম্ভবত এ বছরেই নোবেল পেতেন) একটি অসামান্য গবেষণায় দেখান শিক্ষার সামান্যতম তারতম্যের জন্যও আর্থিক সাফল্যে প্রভূত তারতম্য হতে পারে। তিন বা চারের দশকে আমেরিকায় যে সব ছেলেমেয়েরা ডিসেম্বর মাসে জন্মাত তারা তার পরের মাসে (অর্থাৎ জানুয়ারিতে) জন্মানো ছেলেমেয়েদের তুলনায় সামান্য বেশিদিন স্কুলে থাকতে পারত কারণ - (১) জানুয়ারিতে জন্মানো ছেলেমেয়েদের পরের শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে হত, এবং (২) সে সময় ১৬ বছর বয়স হলেই স্কুলিং শেষ করে ফেলা যেত। এদের জন্মানোর প্রায় তিরিশ-চল্লিশ বছর পরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জশুয়া এবং অ্যালান দেখালেন ডিসেম্বরে জন্মানো ছেলেমেয়েদের সাপ্তাহিক আয় জানুয়ারিতে জন্মানো ছেলেমেয়েদের আয়ের তুলনায় প্রায় ১% বেশি। এদিকে ডিসেম্বরে জন্মানো ছেলেমেয়েরা গড়ে ০.১% বছর বেশি শিক্ষা পেয়েছেন। সুতরাং, প্রান্তিক শিক্ষাবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে প্রান্তিক আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রায় ১০%। জন্মের মাসের সামান্য তারতম্য যে এত বড় প্রভাব ফেলতে পারে কে ভেবেছিল!

জশুয়া কিন্তু শুধু চমকপ্রদ ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেন না। গুইডো ইমবেন্সকে সঙ্গী করে তিনি শুরু করলেন ‘Credibility Revolution’ - ন'য়ের দশকের মাঝামাঝি একাধিক গবেষণাপত্রে তাঁরা দেখালেন ট্রীটমেন্ট এফেক্ট (যেমন নিউ জার্সি রাজ্যের শ্রমক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির প্রভাব)-কে সঠিক ভাবে বুঝতে গেলে statistical restrictions এবং economic assumptions-এর হাত থেকে মুক্তি দরকার। জশুয়া এবং গুইডো আরো দেখালেন ‘ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্ট’-এর অফুরন্ত তথ্যভাণ্ডার এই ক্ষেত্রে গবেষকদের বিশেষভাবে সহায়তা করতে পারে, যা রান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালে (RCT) পাওয়া সম্ভব নয়। Restriction এবং assumptions-এর বিধিনিষেধকে যতটা সম্ভব ঠেকিয়ে রেখে, অর্থনৈতিক কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই দুই গবেষক বিশেষভাবে জোর দিলেন ‘Instrumental variable’-এর ওপর।

এই instrument বস্তুটি কী সেটি বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরা যাক কোনো গবেষক জানতে চাইছেন একটি অতিরিক্ত বছরের শিক্ষাগ্রহণের ঠিক কতটা প্রভাব রয়েছে চাকরির পারিশ্রমিকের ওপর। সাধারণ স্ট্যাটিসটিকাল মডেল এখানে পারিশ্রমিককে শিক্ষার একটি গাণিতিক ফাংশন হিসাবে দেখবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সহজ মডেলটি অন্য বহু বিষয়কে বাদ দিয়ে দেবে যা পারিশ্রমিকের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যেমন নিজস্ব কর্মদক্ষতা, বৌদ্ধিক পারদর্শিতা, বাবা-মা’র আর্থিক সঙ্গতি ইত্যাদি। কিন্তু এরকম বহু নির্ণায়ক শুধু যে পারিশ্রমিককে বাড়ায় বা কমায় তাই নয়, একইসঙ্গে বাড়ায় বা কমায় অতিরিক্ত শিক্ষাগ্রহণের সঙ্গতিকেও। সুতরাং, পারিশ্রমিক ও শিক্ষাকালের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের দরকার এমন একটি নির্ণায়ক যা শুধুমাত্র শিক্ষাকালকে প্রভাবিত করবে কিন্তু পারিশ্রমিককে করবে না। এই বিশেষ নির্ণায়ককেই বলা হয় instrument। জশুয়া এবং অ্যালানের গবেষণায় যেমন জন্মমাস হয়ে উঠেছিল একটি instrument, কারণ এটি সরাসরি শিক্ষাকালকে প্রভাবিত করে কিন্তু ভবিষ্যৎ পারিশ্রমিকের ওপর কোনো প্রভাবই বিস্তার করে না। জশুয়া এবং গুইডো এই instrument variable-কে রাশিবিজ্ঞানের কার্যকারণ সম্পর্কের কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে অর্থনৈতিক গবেষণাকে আরো মজবুত এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তুললেন। যে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি বহু আগে এলেও নোবেল পেতে তাঁদের লেগে যাবে প্রায় আরো দু’দশক।

ডেভিড কার্ড - জশুয়া অ্যাংরিস্ট - গুইডো ইমবেন্সরা অবশ্য RCT ধাঁচের গবেষণার গুরুত্বকে অস্বীকার করেন না। অ্যাংরিস্ট নিজেই লেখালেখি করেছেন RCT কাঠামোর মধ্যেও কীভাবে কার্যকারণ সম্পর্ককে ধরা যায় তা নিয়ে। কিন্তু বাজারচলতি এবং সবথেকে জনপ্রিয় স্ট্যাটিস্টিক্যাল সহায়গুলি যে অধিকাংশ সময়েই causation দাবি করে আদতে correlation দেখায় সে নিয়ে বারবার সতর্কও করেছেন। কিছু regression technique যে নেহাতই descriptive tool সে কথাটা আজকের দিনেও অর্থনীতির বহু গবেষক বোঝেন না, ফলে p value বা t statistic-এর হেরফের দেখিয়ে তাঁরা যুগান্তকারী সব দাবি জানিয়ে বসেন। অথচ সরকারী নীতিনির্ধারণ করতে গেলে কার্যকারণ সম্পর্কটি বোঝা নিতান্ত জরুরী। ডেমোক্র্যাট বা লেবার পার্টির নেতারা ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করতে গেলে তাঁদের নিশ্চিতভাবে দেখানো দরকার যে মজুরি বাড়লে চাকরি কমবে না। আর সেখানেই দরকার তত্ত্ব ও তথ্যের বিজ্ঞানসম্মত সহাবস্থান, যা ডেভিড কার্ডের গবেষণায় ধরা পড়ে।

এবং এই সহাবস্থানের কথাটিই সার কথা। যে কারণে অ্যাংরিস্ট অর্থনীতিতে 'মেশিন লার্নিং'-এর মতন অধুনা জনপ্রিয় পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে সন্দেহপোষণ করে থাকেন। মেশিন লার্নিং জানাবে 'কী হতে পারে' কিন্তু 'কেন হতে পারে' সে নিয়ে বক্তব্য রাখতে পারবে না। অন্তত ২০২১-এ দাঁড়িয়ে পারবে না। এ প্রসঙ্গে অবশ্য বলে রাখা ভালো অর্থনীতিতে মেশিন লার্নিং-এর অবদান নিয়ে ভবিষ্যতে নোবেল প্রাইজ এলে তা পাওয়ার অন্যতম দাবিদার সুসান অ্যাথে, যিনি এবারের অন্যতম নোবেল প্রাপক গুইডো ইমবেন্সের সহকর্মিণী ও সহধর্মিণী। বস্তুত, সুসানের আগে যে গুইডো নোবেল পেতে পারেন এ কথা অধিকাংশ তরুণ অর্থনীতিবিদই সম্ভবত ভাবতে পারেন না। আর এখানেই এ বছরের নোবেল পুরস্কারের প্রাসঙ্গিকতা, যেখানে গুরুত্ব পায় কাঠামোর জোর। জানায় প্র্যাগম্যাটিজম দরকার, দরকার সতর্কতাও। জানায় ফল গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু গবেষণাপদ্ধতির গুরুত্ব সময় সময় আরো বেশি।

বৃহত্তর পরিধির প্রেক্ষিতেও এ বছরের পুরস্কার একটি বার্তা রেখে যায়। RCT ভিত্তিক গবেষণা দেখাতে পারে স্যানিটারি প্যাড পেলে কিশোরী ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার হার বাড়বে। কিন্তু সার্বিক women's empowerment-এর প্রভাব চাকরির মজুরি বা গৃহস্থালি ক্ষমতার ওপর কতটা পড়বে সেটা বুঝতে গেলে কার্ড-অ্যাংরিস্ট-ইমবেন্সদের দেখানো পথেই হাঁটতে হবে।