আরেক রকম ● নবম বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২১ ● ১৬-৩০ কার্ত্তিক, ১৪২৮

প্রবন্ধ

প্রযুক্তি-প্রশাসন-রাজনীতি-অর্থনীতির মিশেলে তৈরি বিকল্প ভাবনার সাহসী শহর নিউটাউন

পার্থপ্রতিম বিশ্বাস


ইতিহাস কারে কয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ E. H. Carr বলেছিলেন, ‘History is the long struggle of a man, by exercise of his reasons to understand his environment and to act up on it'. বাস্তবে মানুষের হাতেই ইতিহাস তৈরি হয় আর্থ সামাজিক পরিবেশের ঘাত প্রতিঘাতের উত্তরণের মধ্য দিয়েই। কলকাতার উপকণ্ঠে তৈরি হওয়া একটা নতুন জনপদ 'নিউটাউন' তৈরির ইতিহাসের মধ্যেও রয়েছে সেই উপাদান। একুশ শতকে তৈরি হওয়া এই শহর তৈরির সংগ্রামের সাথে জুড়ে রয়েছে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য। আর সেই সাফল্য অর্জনের অন্দরমহলের কথা গল্প বলার ঢঙে উপস্থাপিত করেছেন যিনি, তিনি কোন ইতিহাসের ছাত্র নন তিনি হলেন বিশিষ্ট বাম নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব তাঁর 'Forging an Audacious City' গ্রন্থে। বাঙালির জীবনে সংগ্রাম শব্দের মধ্যে যেমন একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার আবশ্যিক উপাদান নিহিত থাকে কিন্তু তার সাথে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ার লড়াই যে সামাজিক রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ হয়ে ওঠে, সেটাই উঠে এসেছে এই গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায় জুড়ে খানিক আত্মকথনের ঢঙে, স্মৃতি রোমন্থনের মেজাজে।

টাকির ইচ্ছামতির ধারে বেড়ে ওঠা এক মন যখন কলকাতার ভিড়ে মিশে চলেছে ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে, তখন সেটা শুধু এক মানুষের শহরতলি থেকে শহর যাত্রার খণ্ডচিত্র নয় বরং সেটা হয়ে ওঠে মানুষের জীবনে পরিনতি বোধের এক উন্নত সংস্করণ। লেখকের টাকি থেকে দমদম-বাগুইআটি, রাইটার্স বিল্ডিং, নিউ সেক্রেটারিয়েট জুড়ে পরিযায়ী জীবনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এই গ্রন্থটি। সন্দেহ নেই, উন্নত জীবনের খোঁজে নগরায়ন হয়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতার গতিমুখ। গ্রাম থেকে শহর এমন গতিতে যখন শহরে মানুষের ভিড় বেড়ে চলা এক স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠছিল দেশজুড়ে এবং দুনিয়া জুড়েই তখন এই শতাব্দীর শুরুতে তিনশো বছরের পুরানো শহর কলকাতার জনসংখ্যা খানিক কমার ইঙ্গিত মিলেছিল দেশের জনগণনার তথ্যে। আর এমন নেতিবাচক অভিবাসনের প্রেক্ষিতে কলকাতার জনবৈচিত্র্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে খোঁজার চেষ্টা রয়েছে এই গ্রন্থে।

আবাসন একটা নগর পরিকাঠামোর অত্যন্ত জরুরী উপাদান। লেখক নিজে এ রাজ্যের দীর্ঘ সময়ের আবাসন এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন। ফলে তাঁর চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের চেয়েও ঢের বেশি ট্রেনে বাসে বাদুড় ঝোলা হয়ে শহরে আসা নিত্যযাত্রীর দল। যারা অর্থনৈতিক কারণে দলে দলে প্রতিদিন শহরে পা ফেললেও দিনান্তে শহর ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয় সাধ্যের মধ্যে আবাসনের অভাবেই। অথচ মুল শহর অপরিকল্পিত কলকাতার তেমন আবাসন বৃদ্ধির সুযোগ ছিল নিতান্তই সীমিত। ফলে এমন ক্রমবর্ধমান নগর কেন্দ্রিক অর্থনীতির চাপ থেকে মুল শহরকে রক্ষা করতে শহর ঘেঁসে তৈরি হয় উপনগরী। পরিকল্পিত উপনগরীর পরিকাঠামো অনেকটাই চাপ কমিয়ে মুল শহরকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। আর সে পথেই জন্ম নিয়েছিল বিধাননগর ঠিক সেই তাড়নাতেই জন্মেছে নিউটাউন-এর মতো কলকাতার উপনগরী। কিন্তু কলকাতার মত শতাব্দী প্রাচীন শহর গঠন যেমন সুপরিকল্পিত পথে ঘটেনি বরং পর্যায়ে পর্যায়ে বদলেছে কলকাতার রূপ অনেকটাই বাজারের চাহিদা মেনে। কিন্তু বিপরীতে সরকারি পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই গড়ে উঠেছিল বিধাননগর, শহর কলকাতার আবাসন, বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক চাপ পুরণ করতে। কিন্তু নিউটাউন-এর মুল বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠল সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সামাজিক ভারসাম্যের আবাসন। উত্তম, মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের মানুষের সহাবস্থানের এক আধুনিক মডেল।

দেশভাগের পর এই বাংলার একমাত্র শহর হিসাবে কলকাতাকে উদ্বাস্তু মানুষের ভয়াবহ চাপ নিয়ে বেড়ে উঠতে গিয়ে মাথা গোঁজার আস্তানার যে সংকট তৈরি হয় তার থেকে উত্তরণের পথ হিসাবে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে গৃহীত হয়েছিল রাজ্য জুড়েই ছোট এবং মাঝারি মাপের শহর গড়ার উদ্যোগ। দুর্গাপুর, আসানসোল, মালদহ, শিলিগুড়ি কিংবা খড়গপুর ছিল এমনই নগরায়নের মডেল। কিন্তু এগুলির প্রতিটি ছিল একটা চালু শহরের মান উন্নয়নের মডেল। সে তুলনায় একটা নতুন শহর স্থাপনের চ্যালেঞ্জ যে গুনগতভাবে ভিন্ন সেটাও এই গ্রন্থের আলোচনায় চলে এসেছে। লেখক নিজে বাস্তুকার কিংবা স্থাপত্যবিদ না হয়েও নগরায়নের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠের বিভিন্ন পর্যায়কে যেভাবে বিশদে উপস্থাপন করেছেন, সেটি অতি অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় প্রয়াস। তাঁর এমন প্রয়াসের পেছনে অবশ্যই রয়েছে তরুন বয়সে বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সক্রিয় সদস্য হিসাবে তাঁর বিবিধ অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মতো বিচক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীদের সক্রিয় সহযোগিতা এক নগরায়নে অনভিজ্ঞ তরুণ মন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে হয়েছিল পাথেয়। নিউটাউন-এর মতো নতুন নগরায়নের এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে জন্য যে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল - সেটিও কিভাবে সিঁড়ি ভাঙা অংকের মতো এগিয়ে ছিল ধাপে ধাপে আত্মকথনের ঢঙে সেকথাও এসেছে এই বইয়ের বিভিন্ন অংশে।

নিউ টাউন তৈরির প্রারম্ভিক পর্যায়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সি কে জাফর শরিফের সঙ্গে লেখকের সাক্ষাৎকারের এক প্রাসঙ্গিক মন্তব্যে রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, শহরের ভেতরের আবাসনে গরিবদের থাকা সম্ভব নয় এমনকি প্রয়োজনও নেই। বরং তিনি গরিবের বাসস্থান শহরতলি কিংবা গ্রামের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আরও কয়েক জোড়া বাড়তি লোকাল ট্রেনের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন এমন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেদিন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমশাইয়ের এমন কঠিন বাস্তববোধের পেছনে যে মতাদর্শ তাঁর চেতন এবং অবচেতনেই লুকিয়ে ছিল তা হল, শহরে থাকার বাড়তি খরচ সামলাতে পারবে তারাই যাদের পকেটের জোর থাকবে নচেৎ নয়। আর ঠিক এই ভাবনার একশো আশি ডিগ্রি উল্টোদিকে ঘুরে বামেরা বিকল্প নগরায়নের পথ খুঁজতে চেয়েছিল। যে শহরে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে আসা ভিন্ন আয়ের মানুষের বাসের স্থান হবে সেই নগরের চৌহদ্দির ভেতরেই। উন্নত জীবনের খোঁজে শহরে-নগরে ভিড় করা মানুষজনকে নিয়ে একটা 'inclusive development'-এর নতুন মডেলের অন্বেষণে শুরু হয়েছিল অপারেশান 'নিউটাউন' পর্ব।

স্মৃতিচারণের ঢঙে বইয়ের কিছু অংশে লেখক তুলে ধরেছেন এই নতুন শহর নিউটাউন গড়ার ক্ষেত্রে প্রবীণ মন্ত্রীদের টিম ওয়ার্ক আর সক্রিয় সহযোগিতার বহু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নেতা, মন্ত্রী, আমলা আর ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের খুঁটিনাটি বিবরণ তুলে ধরেছেন তিনি তাঁর 'সাহসী নগরীর' জন্মের ধারা বিবরণীতে। গ্রন্থের এই অংশটি দলমত নির্বিশেষে বর্তমান প্রজন্মের প্রশাসক, মন্ত্রী, আমলা, পরিকল্পনাবিদ, রাজনৈতিক নেতা, প্রত্যেকের জন্য হতে পারে এক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। হাতে টাকা না থাকলেও প্রকল্পের জন্য উপদ্রবহীন জমি, প্রযুক্তি নির্ভর পরিকল্পনা আর সরকারের সদিচ্ছা থাকলে একটা দুঃসাধ্য প্রকল্প যে ধীরে ধীরে সহজসাধ্য হয়ে ওঠে সেটাই উঠে এসেছে এই শহর গড়ার ইতিহাসে। সেই ইতিহাসের পথে বহু হোঁচট খাওয়ার অভিজ্ঞতায় অর্জিত শিক্ষা আর পরিণত বিচারবুদ্ধির সমন্বয় শেষমেশ এই নিউটাউন-এর স্বপ্নকে বাস্তব করেছে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মত জনঘনত্বের রাজ্যে এবং বিশেষত উদ্বাস্তু অধ্যুষিত শহর কলকাতার উপকণ্ঠে শিল্পের জন্যই হোক কিংবা আবাসনের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ যে ছেলেখেলা নয় সেটা বিলক্ষণ বোঝে সব পক্ষই। এই প্রেক্ষিতে নগরায়নের প্রয়োজনে কয়েক হাজার একর জমি এক লপ্তে খুঁজে বের করা এবং তার সরকারি অধিগ্রহণই ছিল নিউটাউন গড়ার ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকার এবং দলের কাছে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। কারণ এ রাজ্যে বামেদের রাজনৈতিক সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার ছিল জমির আন্দোলন গরীব কৃষকের স্বার্থে। সেই প্রেক্ষিতে রাজারহাট থেকে ভাঙ্গড় অবধি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রাজনৈতিক সহমত গড়ে যেভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, এক বাক্যে তা ছিল ঐতিহাসিক।

বিশেষত বামফ্রন্ট আমলে আবাসনের ক্ষেত্রে পি পি পি মডেলে, সরকারি এবং বেসরকারি যৌথ মালিকানায় বেঙ্গল-পিয়ারলেস আবাসন প্রকল্পের বেসরকারি জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায় প্রাসঙ্গিক ভাবেই এই গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। যেখানে সরকারের এমন যৌথ আবাসন প্রকল্পের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জনস্বার্থের কাজ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ফলে নতুন উপনগরীর জমিকে দালাল জমি হাঙরদের থেকে রক্ষা করার একটা আইনি রক্ষা কবচ হয়েছিল সেই রায়। শুধু সেই রায় নয়, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে নিউটাউন প্রকল্প এলাকার সীমানার লাগোয়া কৃষি জমি, জমির দালালদের থেকে কৃষকদের হাতে সুরক্ষিত রাখতে 'ভাঙ্গড়-রাজারহাট এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটি' গঠন করার মাধ্যমে নিউটাউন শহরের পরিকাঠামোগত সুফল পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষের কাছেও তুলে ধরা গিয়েছিল। ফলে একটা নতুন শহরের প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণে প্রত্যাশিত সংঘাতের পরিবর্তে সমঝোতার পথেই এগিয়েছিল সেই উদ্যোগ। এই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার একই সঙ্গে শাসক এবং বিরোধী দল উভয়পক্ষকে স্থানীয় স্তরে সামিল করেই এমন অসাধ্য সাধন করেছিল। আর এমন কঠিন অভিজ্ঞতায় পরিণত সংগঠকের ভুমিকায় ছিলেন লেখক স্বয়ং। ফলে একটা চলমান ইতিহাসের অংশ হিসাবে নিউটাউন গড়ার এই ইতিহাসকে দেখতে পেরেছেন তিনি। যেটা হয়ে উঠেছে এই গ্রন্থের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এমন টাটকা ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ বিশ বাঁও জলে গিয়ে পড়েছিল। আর তার জেরে গোটা রাজ্যে বিশিল্পায়নের মাশুল গুনে চলেছে একটা গোটা প্রজন্ম।

নিউটাউন শহর গড়ার ক্ষেত্রে সরকার যৌথ উদ্যোগে গড়ে তুলেছিল শহরের মূল রাস্তা, সার্ভিস রোড, নিকাশির সংস্কার, বিদ্যুতের পরিবহন পরিকাঠামোর মত বুনিয়াদী বিষয়গুলি বিভিন্ন পর্যায় জুড়ে। ফলে এই নতুন শহর তৈরির সাথে সাথেই প্রকল্প এলাকা জুড়ে পরিষেবা ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটেছিল দ্রুতলয়ে। কার্যত শহর কলকাতার রাস্তা আর নিকাশির মত দুটো মূল অসুখ সম্পর্কে সচেতন থেকেই নতুন শহর নিউটাউন-এর পরিকল্পনায় এসেছিল কাঙ্খিত মানের পরিকাঠামো গড়ার ভাবনা। বিশেষত নিউটাউন প্রকল্প এলাকা সন্নিহিত নিকাশি খালের গভীরতা না বাড়ালে, নিয়মিত পলি সংস্কার না হলে, বিদ্যাধরীর সাথে উপযুক্ত পাম্পিং ব্যাবস্থার মাধ্যমে খালগুলির সংযোগ না ঘটালে বৃষ্টির জলে প্লাবনের বিপদ শুধু যে নতুন নগরীর নয় বরং সেই দীর্ঘস্থায়ী প্লাবনের বিপদ বরানগর, বেলঘরিয়া দমদম, বিরাটি, খড়দহ, পানিহাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্লাবনের কারন হবে, এমন সতর্কতার বার্তা ছিল এই নিউটাউন প্রকল্পের বিশদ রিপোর্ট জুড়েই। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর শহরের অসমাপ্ত নিকাশি পরিকাঠামোর সংস্কার অথবা যোগাযোগের দ্বিতীয় প্রধান সড়ক নির্মাণের কাজ থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে এমন আক্ষেপের কথাও ফুটে উঠেছে লেখকের অপ্রাপ্তির খতিয়ানে। পাশাপাশি অধরা রয়ে গেছে শহরের বর্জ্য নিষ্কাশনের ও পরিশোধনের বিকল্প প্রযুক্তি নির্ভর পরিকাঠামো গড়ার কাজ। রাজ্যে পালাবদলের পর নামবদলের রাজনীতির ধাক্কা এসে পড়েছে এই শহরের ক্ষেত্রেও। বামেদের রাজনৈতিক গুরুত্বকে খাটো করে দেখাতে গিয়ে হালের রাজ্য সরকার এই নগরের সাফল্যকে খাটো করতে উদ্যত হয়েছিল। এটাই উন্নয়নের পথে এই রাজ্যের বড় অসুখ, এমন যন্ত্রণা কলমে ভরেই শেষ করেছেন লেখক তার প্রিয় নগরীর স্মৃতি রোমন্থন পর্ব। কার্যত ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতির, এক চমৎকার কোলাজ হয়ে উঠেছে গৌতম দেবের 'Forging an Audacious City'।
 


Forging an Audacious City: A Participatory Perspective
Author: Gautam Deb
Publisher: Dasgupta & Co. Pvt. Ltd.
54/3, College Street, Kolkata-700073
Price: Rs. 700/-