আরেক রকম ● নবম বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২১ ● ১৬-৩০ কার্ত্তিক, ১৪২৮

প্রবন্ধ

সাভারকরঃ কিছু সাম্প্রতিক বিতর্ক ও ইতিহাসের সাক্ষ্য

রঞ্জন রায়


[ভারত সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রীর কিছু সাম্প্রতিক মন্তব্য পত্র-পত্রিকা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে বিতর্কের ঝড় বইয়ে দিয়েছে। বিতর্ক ‘বীর’ সাভারকরকে নিয়ে, ওঁর আন্দামান জেলে থাকাকালীন ব্রিটিশ সরকারকে লেখা ‘মাফিনামা’ নিয়ে। এতদিন বলা হত উনি কোনো 'মাফিনামা' লিখে দেননি। এবার রাজনাথ সিং বললেন - দিয়েছিলেন, কিন্তু গান্ধীজির নির্দেশে। বিরোধীপক্ষ চটপট মনে করিয়ে দেয় যে সাভারকার একাধিক মাফিনামা লিখেছিলেন। এবং প্রথম তিনটি, মানে ১৯১১ থেকে ১৯১৫ পর্যন্ত, লেখার সময় গান্ধীজি সাউথ আফ্রিকায় আন্দোলনরত এবং নিজে ওখানকার জেলে।]


১.০ বিতর্কের প্রেক্ষাপট

ক’দিন আগে ‘লল্লন টপ’ চ্যানেলে সান্ধ্যকালীন দীর্ঘ বিতর্কের সময় সাভারকরের নবীনতম জীবনীলেখক ভি সম্পত স্বীকার করেন যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যটি অর্ধসত্য। ১৯২০ সালে সাভারকরের ছোটভাই ডাক্তার নারায়ণ রাও গিয়ে গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করে দাদার মুক্তির জন্য কিছু করার অনুরোধ করলে গান্ধীজি বলেছিলেন আর একবার আবেদন পাঠাতে, উনি চেষ্টা করবেন। তখন সাভারকর শেষ বা সাত নম্বর মাফিনামাটি লেখেন এবং ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’য় সাভারকরের মুক্তির দাবিতে গান্ধীজির জোরালো প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

কিন্তু নবীন জীবনীলেখকের পরের বক্তব্যটি ভুল। উনি বললেন - অমন মাফিনামা লেখা রুটিন, সাভারকর যেভাবে লিখেছিলেন সেটা একটা টেমপ্লেট মাত্র। বারীন ঘোষ, শচীন সান্যালও লিখেছিলেন।

আমরা এই প্রবন্ধে দেখাতে চাইব যে ইতিহাসের তথ্য ঠিক তা’ নয়। ওই টেমপ্লেট সাভারকরের নিজস্ব। বাকিদের মাফিনামা অমন শিরদাঁড়া ভেঙে মাথা নুইয়ে দেয়া নয়। এছাড়া অনেকেই জেলে মৃত্যুবরণ শ্রেয় মনে করেছিলেন, কিন্তু মাফিনামা লেখেননি। যেমন, ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে লাহোর জেলে ৬৩ দিন অনশন করে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া যতীন দাস। একইভাবে ভগত সিং, রাজগুরু ও সুখদেব ফাঁসির আদেশের পর প্রাণভিক্ষা চাইতে অস্বীকার করেন। আমরা সাভারকরের সমান্তরালে তুলে ধরতে চাই একটি নাম - অনুশীলন সমিতির ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী বা ত্রৈলোক্য মহারাজ। সাভারকর কালাপানিতে ছিলেন ১০ বছর, দেশে এবং বিদেশ মিলিয়ে ওঁর বন্দীজীবন সাকুল্যে ১৪ বছর। অথচ ত্রৈলোক্য মহারাজের কালাপানি এবং পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত, বর্মার মান্দালয়, ইসনিন ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জেল মিলিয়ে মোট জেলযাত্রা ৩০ বছরের। উনি এবং আরও অনেকে মুক্তির প্রলোভন সত্ত্বেও মাফিনামা দেননি।

আরেকটি ভুল বক্তব্য অনেকেই টিভির পর্দায় জোর গলায় বলেন। সাভারকরকে নাকি আন্দামানে দশ বছর ধরে রোজ ৩০ পাউন্ড তেল পিষে বার করতে হত। এটা সত্যি নয়, এই শাস্তি অল্পদিনের এবং এটাও বলতে চাই - যে ধরনের শাস্তি সাভারকর পেতেন সেটা সেলুলার জেলে বন্দীদের কমবেশি সবাইকে ভুগতে হত।। সাভারকরের প্রশংসকদের বক্তব্যের মধ্যে সত্যি এইটুকু যে দুটো মামলায় ওঁর পঁচিশ পঁচিশ বছর হিসেবে মোট পঞ্চাশ বছরের কালাপানির সাজা হয়েছিল। কিন্তু দশ বছর পর ওঁর মাফিনামা মঞ্জুর হয় এবং তাঁকে ভারতের জেলে স্থানান্তরিত করা হয়।

এই পর্যায়ে আমরা ক্রমানুসারে দেখব - সাভারকরের অপরাধ, শাস্তির পরিমাণ, আন্দামানের জীবন ও মাফিনামা বৃত্তান্ত এবং যে ধরনের মুচলেকা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন তাতে তৎকালীন খবরের কাগজ ও স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া এবং সাভারকরের আত্মপক্ষ সমর্থন।

ইদানীং পোর্ট ব্লেয়ারে একটি বক্তব্যে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ নেতাজি ও সাভারকরকে এক আসনে বসিয়ে ‘উপেক্ষিত স্বাধীনতা সংগ্রামী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভবিষ্যতে আমরা আলোচনা করব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজী ও সাভারকরের অবস্থান, অর্থাৎ কেন তাঁদের এক আসনে বসানো ইতিহাসের বিকৃতি মাত্র। আলোচনা করব নাথুরাম গোডসে এবং সাভারকরের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ও গান্ধীহত্যা মামলা এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বক্তব্য নিয়ে।

ইতিহাসে উপেক্ষিত যদি কেউ থাকেন তিনি অনুশীলন দলের ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ‘মহারাজ’। যিনি বিনা বিচারে মান্দালয় জেলে বন্দী থাকার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে মুক্তির জন্য ‘মাফিনামা’ লিখতে বলায় উলটে ব্রিটিশ সরকারকে তিনটে কারণে মাফিনামা চাইতে হবে বলেছিলেন এবং পরে তাঁকে অস্ত্র সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দিলে স্ট্যানলি জ্যাকসনকে পাঁচ পয়েন্ট ‘শো-কজ’ করেছিলেন। তিনি এবং তাঁর সাথীরা হিজলী এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে গান্ধীজির ক্রমান্বয়ে তিন এবং দু’ঘন্টা ধরে বোঝানোর পরও মুক্তির বিনিময়ে সহিংস আন্দোলনের পথ ছেড়ে দেবার কথা লিখতে রাজি হননি।

বর্তমান পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব এই দুজনের - সাভারকর ও ত্রৈলোক্য মহারাজের - স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কারাবাসের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে।

২.০ সাভারকরের অপরাধ

১৯০৮ সালে সাভারকর লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় ও কৃষ্ণজী বর্মার ইন্ডিয়া হাউসে থাকাকালীন কুড়িটি ব্রাউনিং পিস্তল লন্ডন থেকে ইন্ডিয়া হাউসের রাঁধুনি চতুর্ভূজ আমিনের মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু ১৯০৯ সালের ২১ ডিসেম্বরে নাসিক শহরে কালেক্টর এবং ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকসনকে একটি থিয়েটার হলে অনন্ত কানহারে গুলি করে মারেন। উনিই সাভারকরের দাদা বাবুরাওকে রাষ্ট্রদ্রোহের কবিতা ছাপার অপরাধে আজীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়েছিলেন।

সন্দেহ করা হয় যে হত্যার পেছনে আসল মাথা হচ্ছে লন্ডনে বসে বদলা নিতে কলকাঠি নাড়া ছোটভাই বিনায়ক দামোদর সাভারকর। আমিন রাজসাক্ষী হলে অভিযুক্তদের কাছ থেকে পাওয়া একটি পিস্তল যেটি সেই কুড়িটির একটি বলে প্রমাণিত হোল।

সবাই বলল এখান থেকে সরে যাও, তাই সাভারকর চটপট প্যারিসে গিয়ে মাদাম কামার আশ্রয়ে থেকে ওঁর পত্রিকায় লিখতে থাকেন। সেখানে তখন রয়েছেন সরোজিনী নাইডুর ভাই বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। যাঁর মাধ্যমে পরিচয় হল সেখানকার বামপন্থী ও সোশ্যালিস্ট কর্মীদের সঙ্গে। হঠাৎ উনি প্যারিসের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে সবাইকে অবাক করে লন্ডনে ফিরে গেলেন এবং ১৩ মার্চ ১৯১০ তারিখে ভিক্টোরিয়া রেল স্টেশনে নামামাত্র গ্রেফতার হলেন।

মনে হয় পুলিশকে কেউ গোপনে খবর দিয়েছিল। ধরা পড়বেন জেনেও উনি কারও কথা (বিশেষ করে মাদাম কামা এবং বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের) না শুনে লন্ডন ফিরে গেলেন? কেন? এ নিয়ে অনেকগুলো থিওরি প্রচলিত।

যেমন দলকে উজ্জীবিত করতে বা নিজের সাহস প্রমাণ করতে, কারণ দলের মধ্যে কথা উঠছিল যে উনি সবাইকে ফিল্ডে অ্যাকশনে এগিয়ে দেন, কিন্তু নিজে নিরাপদে পেছনে থাকেন। আরও একটা ইন্টারেস্টিং থিওরি ব্রিটিশ প্রেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তা হল উনি মার্গারেট লরেন্স নামে এক ইংরেজ মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর গোপন আমন্ত্রণে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের ফাঁদে বন্দী হন।

কৃষ্ণবর্মা প্রেসে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন যে এটা পুলিশের দ্বারা প্রেমিকার বকলমে পাঠানো জাল চিঠি পেয়ে উনি ধরা পড়েন - গুজব মাত্র। কিন্তু সাভারকরের কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ লন্ডন চলে যাওয়ার আসল কারণ আজও অজানা।

আমার মনে পড়ে সমারসেট মম-এর ছোটগল্প সংকলনের দ্বিতীয় ভল্যুমে অ্যাশেন্ডেন সিরিজের ওই গল্পটি যাতে চন্দ্র নামের পাগড়ি পরা ভারতীয় বিপ্লবীকে ব্রিটিশ পুলিশ প্রেমিকার চিঠি পাঠিয়ে বন্দী করে। তিন জজের ট্রাইব্যুনাল মুম্বাইয়ে বিচার শুরু করে দশ মাসের মধ্যে রায় দিল।

প্রথম মামলার - রাষ্ট্রদ্রোহিতার (বিভিন্ন বক্তৃতা এবং লেখার ভিত্তিতে) - রায় বেরোল ২৩ ডিসেম্বর, ১৯১০। যাবজ্জীবন কারাবাস, দ্বীপান্তর এবং স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ। তখন এর মানে শাস্তি ছিল ২৫ বছর।

জ্যাকসন হত্যা মামলার রায় বেরোল ৩০ জানুয়ারি, ১৯১১। একই রায় - আজীবন কারাবাস, মানে ২৫ বছর সশ্রম জেল। কিন্তু দুটো শাস্তি একসঙ্গে (কনকারেন্টলি) চলবে না; হবে একের পরে এক (কঞ্জিকিউটিভলি)। ফলে মোট কারাবাস ৫০ বছর, ওদিকে সাভারকর তখন ২৮ বছরের যুবক এবং ভারতীয়দের গড় আয়ু তখন ছিল ৪০-এর কম।

৩.০ সাভারকরের কারাবাস

গন্তব্য প্রথমে পোর্ট ব্লেয়ার বন্দর, তারপর সেলুলার জেল। সময় ১৯১১ সালের জুলাই মাস।

জেলর ডেভিড ব্যারি আগেই বলে দেন যে, জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে ওঁর মর্জিই আইন। ব্রিটিশ আইনে রাজনৈতিক ও অন্যান্য বন্দীদের জন্যে যে ব্যবস্থা বা সুবিধেগুলো স্বীকৃত তার কিছুই এখানে খাটবে না। এবং তাঁর চেলাচামুন্ডারা (জমাদার, ওয়ার্ডার, পেটি অফিসার), যারা নিজেরাই দীর্ঘমেয়াদি জেল খাটছে - তাদের ব্যবহার অত্যাচারের পর্যায়বাচী। বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, উপেন্দ্রনাথের ‘নির্বাসিতের আত্মকথা এবং ত্রৈলোক্য মহারাজের স্মৃতিচারণে এর বিস্তৃত বিবরণ আছে।

সাভারকরকে আলাদা করে একটা ১৪ বাই ৮ ফুটের সেলে রাখা হল। রোজ খাটতে হবে সকাল ৬টা থেকে ১০টা, এবং দুপুরের খাওয়ার পরে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। কাজ নারকোলের ছোবড়া মুগুর দিয়ে পিটিয়ে বিকেলের মধ্যে অন্ততঃ ১ থেকে ৩ পাউন্ডের মত জাজিম গোছের বানানো।

এরপর ১৬ আগস্ট ১৯১১ তারিখে সাভারকরের কপালে জুটল নেংটি পরে তেলঘানিতে সর্ষে পিষে তেল বের করার কাজ। বারীন ঘোষ এবং উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে এই কাজটা যেন কুস্তি করার মত, অমানুষিক পরিশ্রম। তায় অপর্যাপ্ত খাবার (লপ্সি) এবং কথায় কথায় অশ্রাব্য গালাগাল ও টার্গেট পুরো হয়নি অজুহাতে পেটানো, চাবকানো। রাজবন্দীদের কাগজ/কলম/বই কিছুই দেওয়া হত না। নিজেদের মধ্যে কথা বলা বারণ। বিনায়কের বড়ভাই বাবারাও এক বছর আগে থেকেই সেলুলার জেলে আছেন কিন্তু দেখা করা বা কথা বলা যাচ্ছে না।

২০ অগাস্ট, ১৯১১। সাভারকর ছ’মাসের জন্য নির্জন কারাবাসের শাস্তি পেলেন? কেন তা হোম ডিপার্টমেন্টের জেল হিস্ট্রি টিকেট অফ ভি ডি সাভারকরের (কনভিক্ট নং ৩২৭৭৮, সেল নং ৫২) নথিতে নেই। যা পাওয়া যাচ্ছে তা হল এরপর জুন, ১৯১২-তে বন্দীদের হয়ে চিঠি লেখার অপরাধে ফের একমাসের নির্জন কারাবাস। ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১২-তে খানাতল্লাসিতে অন্য এক বন্দীর লেখা চিঠি পাওয়া গেল, ফলে শাস্তি হল সাতদিনের ‘খাড়া ডান্ডাবেড়ি’। মানে, রোজ আটঘন্টা হাতে হাতকড়া লাগিয়ে জোড়া হাত উঁচুতে দেয়ালের গায়ের আংটায় আটকে দেওয়া হবে। ওই সময়টুকু বন্দী বাথরুম-পায়খানায় যেতে পারবে না।

ডিসেম্বর ১৯১৩ এবং ১৭ জানুয়ারি ১৯১৪ ও ৮ জুন, ১৯১৪-তে বেঁকে বসলেন - কোনো কাজ করবেন না। ফল হল ক্রমশঃ নানারকম শাস্তি - একমাস সলিটারি কনফাইনমেন্ট, এক সপ্তাহ হাতকড়ি, তারপর ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে দেয়ালে হাত তুলে পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে থাকা, এইসব।

ডিসেম্বর ১৯১৩ থেকে ৮ জুন ১৯১৪। এই সময়ের মধ্যে দড়ি পাকানোর কাজ করবেন না বলে বেঁকে বসায় কপালে আবার জুটল একমাসের নির্জন কারাবাস, খাড়াবেড়ির শাস্তি। সাভারকর অনঢ়। শেষে ৮ জুন, ১৯১৪-তে দেওয়া হল খাড়া ডান্ডাবেড়ি। মানে একটা ধাতব ত্রিভুজ। তার তিন কোণায় কোমর এবং পা ফাঁক করা দু’পা; এদিকে মাথার উপর হাতকড়ি লাগানো জোড়া হাত।

জেল টিকিট অনুযায়ী একদিন পরে উনি দড়ি পাকানোর কাজ করতে রাজি হলেন। তবে বেড়ি খুলল দশ দিন পরে।

এই পরিবেশে উল্লাসকর দত্ত পাগল হয়ে গেলেন, ইন্দুভুষণ রায় আত্মহত্যা করলেন।

এবার রাজবন্দীদের প্রতিবাদ শুরু হল। দাবি জেলের অন্যান্য বন্দীদের সমান সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। কাগজ-কলম-বইপত্র-পত্রিকা দিতে হবে। হালকা কাজ, ক্লার্কের কাজ দিতে হবে। দুজন বন্দী - 'স্বরাজ' পত্রিকার সম্পাদক লাধারাম এবং সতেরো বছরের ননীগোপাল রায় - ভুখ হরতালে বসলেন। অন্যেরা কাজ বন্ধ করল।

বিনায়ক সাভারকরের বড়ভাই বাবুরাও প্রথম দিন থেকেই হরতালে যোগ দিয়ে অত্যাচার সহ্য করলেন। কিন্তু সাভারকর যোগ দিলেন না।

সাভারকর তাঁর 'মাই ট্রান্সপোরটেশন ফর লাইফ' বইয়ে লিখেছেন যে ভুখ হরতাল তাঁর পছন্দ নয়। ননীগোপাল রায়ের অবস্থা খারাপ হলে উনি তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে হরতাল ভাঙালেন ও বললেনঃ
"ডু নট ডাই উইথ এ ফেমিনিন স্টাবর্ননেস; ইফ ইউ মাস্ট ডাই, ডাই ফাইটিং"। তাঁর জীবনীকার বৈভব পুরন্দরের মতে বক্তব্যটি আজকের চোখে অবশ্যই পলিটিক্যালি ইনকরেক্ট মনে হবে।

৪.০ সাভারকর আদৌ মাফিনামা লিখেছিলেন কিনা? লিখলে কবে এবং কতবার? তাঁর এবম্বিধ আচরণের ব্যাখ্যা কী?

সমর্থকরা এই অধ্যায়টি এড়িয়ে যেতে চান বা অস্বীকার করেন। যেমন মারাঠি পত্রিকা 'লোকসত্তা'র ২৭ মে, ২০১৮ সংখ্যায় দাবি করা হয়েছে যে উনি আদৌ কোন পিটিশন পাঠাননি। বা, পাঠালেও তাতে 'মার্জনা ভিক্ষা' করেননি।

সমস্ত দলিল (ব্রিটিশ এবং ভারতীয়) আজ উপলব্ধ। এবং সাভারকর নিজে তাঁর এই 'এবাউট টার্ন'কে ডিফেন্ড করে সেসময় গুচ্ছের লেখা লিখেছেন, উকিলের মেধা দিয়ে এই স্ট্যান্ডকে থিওরাইজ করেছেন। কতদূর সফল হয়েছেন বা আদৌ হয়েছেন কি না তা বিতর্কের বিষয়।

কতবার ক্ষমা চেয়ে পিটিশন লিখেছিলেন? সাতবার।

প্রথমবার সেলুলার জেলে আসার দু'মাসের মাথায় - ৩০ অগাস্ট, ১৯১১, নির্জন কারাবাসের শাস্তির মাথায়। চারদিনে খারিজ হোল পিটিশন। তারপর ২৯ অক্টোবর, ১৯১২; নভেম্বর ১৯১৩, সেপ্টেম্বর ১৯১৪। তারপর ১৯১৫ এবং ১৯১৭। শেষ দুটোতে আগের আগুনখেকো বিপ্লবী সাভারকর ওকালত করছেন হোমরুলের পক্ষে। তখন মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংবিধান রিফর্মের কথা চলছে যা এল ১৯১৯-এ। সাভারকর লিখছেন কোনো দেশপ্রেমিকই ভাল সংবিধানের আওতায় কাজ করার সুযোগ পেলে সহিংস পথে বিপ্লবের কথা ভাববে না। এও বললেন যে আজ যখন ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মত প্রগতিশীল এবং নমনীয় (ইল্যাস্টিক) সংবিধান রয়েছে তখন বিপ্লবের কথা বলা 'অপরাধ' (!)।

লক্ষণীয়, সাভারকর ১৯১২ থেকে ১৯১৪ পর্যন্ত কাজ করতে অস্বীকার করা এবং নিষিদ্ধ কাগজপত্র রাখার অপরাধে আটবার শাস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু পরের পাঁচ বছর তাঁর আচার-আচরণ ছিল 'ভেরি গুড'।

ত্রৈলোক্য মহারাজের আন্দামানের স্মৃতিকথায় পাই বিনায়ক সাভারকরের নেতৃত্ব দেবার এবং মেধার প্রশংসা। কিন্তু তারপরই উনি লিখেছেন যে, পাঁচ বছর কারাবাসের পর সাভারকররা ‘নরমপন্থী’ হয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আপোষ করে চলছেন, প্রতিবাদের থেকে দূরে থাকছেন এবং আন্দামান কর্তৃপক্ষের সুনজরে রয়েছেন।

মন্টেগু-চেমসফোর্ড কন্সটিট্যুশনাল রিফর্মের (১৯১৯) মাথায় অনেক রাজবন্দীকে মুচলেকা লিখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল 'রয়্যাল অ্যামনেস্টি' বলে। একই রকম মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন বারীন ঘোষ, হেমচন্দ্র দাস এবং ভাই পরমানন্দ। কিন্তু 'মন্টেগু-চেমসফোর্ড রিফর্মের পর সাংবিধানিক পথেই থাকবেন' আশ্বাসন সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার সাভারকর ভাইদের বিশ্বাস করতে পারছিল না। তাঁরা মার্জনা পেলেন না।

সাভারকরের শেষ পিটিশনের তারিখ ৩০ মার্চ, ১৯২০ যাতে উনি ছাড়া পাওয়ার পর সরকার যতদিন না বলবে ততদিন কোনো রাজনৈতিক কাজকর্মে যুক্ত হবেন না, একটি এলাকার বাইরে পা রাখবেন না এবং নিয়মিত থানায় হাজিরা দেবেন - এই মর্মে মুচলেকা দিতে রাজি বলে জানালেন।

সাভারকর তাঁর নিষ্ঠার পরিচয় দিতে গিয়ে লিখলেন যে, উনি চাইছেন ব্রিটিশ ডোমিনিয়নের সঙ্গে ‘ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সাহায্যের বাঁধনকে শক্ত করতে এবং রাজকীয় সনদে বর্ণিত সাম্রাজ্যের সঙ্গে সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিক পথে এক সম্পর্ক গড়ে তুলতে'

সাভারকর নিজের কারাবাসের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় লিখছেন যে উনি তখন জেলের মধ্যে অন্য বন্দীদের গোঁড়ামি ছেড়ে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এসে দেশের কাজ করতে বোঝাচ্ছেন। শিবাজী এবং কৃষ্ণের উদাহরণ দিচ্ছেন। অনেকে মানছে না। কিন্তু জেলের ভেতরে জীবন নষ্ট করে কি লাভ? এই ছিল ওঁর যুক্তি।

গান্ধীজি মে ১৯২০-এর ইয়ং ইন্ডিয়ায় লিখলেনঃ এত লোককে আম মাফি দেওয়া হোল, শুধু এই দুই ভাই বাদ! ওরাতো বিপ্লবের পথ ছেড়ে রিফর্ম অ্যাক্টের হিসেবে কাজ করবে বলে কথা দিয়েছে। ওদের অবিশ্বাস করার কি দরকার? বর্তমানে ভারতে সহিংস পথের অনুগামী নেই বলা যায়।

শান্তিনিকেতন থেকে সি এফ এন্ড্রুজ 'বোম্বে ক্রনিকল' পত্রিকায় এ নিয়ে লিখলেন যাতে বোম্বের গভর্নর জর্জ লয়েড সাভারকর ভাইদের ছেড়ে দেন। ব্রিটিশ রাজ এপ্রিল ১৯২১-এ বোম্বে গভর্নরকে এক মাসের মধ্যে আগের সিদ্ধান্তের রিভিউ করতে বলল।

অবশেষে ১৯২১ সালের মে মাসে বিনায়ক দামোদর সাভারকরকে ভারতে এনে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ১৯২৩-এর শেষের দিকে ঠাঁই হল পুণের ইয়ারবেদা সেন্ট্রাল জেলে। এদিকে কাকিনাড়ায় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সাভারকরের মুক্তির দাবিতে প্রস্তাব পাশ হল। ব্রিটিশ সরকার সাভারকরকে পরীক্ষা করতে আরও দুটো শর্ত মানতে বলল এবং স্পষ্ট করে দিল যে মানলেই মুক্তি দেওয়া হবে এমন নয়।

এক, সাভারকরকে ‘স্বীকার’ করতে হবে যে উনি ‘ন্যায়-বিচার’ পেয়েছেন এবং ওঁকে ‘উচিত’ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দুই, ‘সহিংস পদ্ধতি’র নিন্দা করে বিবৃতি দিতে হবে।

সাভারকর এসব শর্ত মেনে নিলেন। অবশেষে ৬ জানুয়ারি, ১৯২৪ উনি পাকাপাকিভাবে জেলের বাইরে খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিলেন। কিন্তু থানায় হাজিরা দেওয়া, এবং রাজনৈতিক কাজকর্মের প্রতি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রইল। সরকার বলল পাঁচ বছর উনি রত্নগিরি জেলার বাইরে যেতে পারবেন না। সাভারকর এই শর্তটিও মেনে নিয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে সংসার করতে এবং ভগ্নস্বাস্থ্য উদ্ধারে মগ্ন রইলেন।

তাহলে লন্ডনে গ্রেফতারির দিন থেকে ধরলে ওঁর কারাবাস হল প্রায় ১৪ বছর। জনগণমনে বিতর্কের ঝড় বয়ে গেল। সাভারকর নিজের বন্দীজীবনের স্মৃতি ও মুচলেকার সাফাই নিয়ে কেশরী এবং মারাঠি সাপ্তাহিক 'শ্রদ্ধানন্দে' লিখতে লাগলেন। ওদিকে 'কেশরী', 'ইন্দুপ্রকাশ' এবং অন্যান্য মারাঠি দৈনিকে বেরোল ওঁর মুচলেকার শর্তাবলি।

৫.০ সাভারকরের মাফিনামা বিতর্ক

সাভারকরের মাফিনামার শর্তগুলো প্রকাশ্যে আসায় অনেক হোমরুলের সমর্থক খুশি হলেও অন্যেরা ক্ষুণ্ণ হলেন - একজন খ্যাতনামা দেশপ্রেমিক চাপের মাথায় এমন সব শর্ত মেনে নিলেন! বোম্বের হোম সেক্রেটারি স্বস্তি পেয়ে লিখলেন যে, কিছু উগ্রপন্থী পত্রিকা সাভারকরের মুচলেকা দেখে একেবারে হতভম্ব।

রত্নাগিরি জেলার বাইরে যাওয়া পাঁচ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ, কিন্তু সাভারকর ঘরে বসে (তখন স্ত্রীও সঙ্গে থাকছেন) 'কেশরী' এবং 'শ্রদ্ধানন্দ' (বোম্বে থেকে ছোটভাই ডাক্তার নারায়ণ সাভারকরের সম্পাদিত মারাঠি পত্রিকা) পত্রিকায় ধারাবাহিক নিজের ১৪ বছর কালাপানির অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করছেন। সেসব একটি বইয়ের আকারে মে, ১৯২৭-এ প্রকাশিত হয়। তাতে মাফিনামার সমর্থনে কিছু যুক্তি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু প্রখ্যাত রাজনৈতিক কর্মী এবং কানপুরের 'দৈনিক প্রতাপ' পত্রিকার সম্পাদক গণেশ শংকর বিদ্যার্থী 'শ্রদ্ধানন্দ' পত্রিকায় খোলা চিঠি লিখে অভিযোগ করলেন যাঁরা দেশের জন্যে শহীদ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তাঁরা কী করে মার্জনা চেয়ে চিঠি লিখলেন? 'হোয়াই ডিডন্ট দে এমব্রেস ডেথ ইন প্রিজন?' বিশেষ করে সাভারকর যে লিখেছিলেন, 'যদি পথভ্রষ্ট সন্তান (প্রডিগাল সন) নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে তাহলে পিতার আশ্রয়লাভের করুণা থেকে নিশ্চয় বঞ্চিত হবে না!' - এটা সবাইকে ঘা দিয়েছিল।

সাভারকরের জবাব বেরোল যার সারমর্ম হচ্ছে যে, যদি কেউ ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্যে প্রাণ বাঁচাতে শত্রুর শর্ত মেনে সাময়িকভাবে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে আসে তাতে ভুল কোথায়? শিবাজি আগ্রা দুর্গে বন্দী অবস্থায় তাই করেননি কি? ঔরংজেবের শর্ত মেনে জান বাঁচিয়ে আবার যুদ্ধের ময়দানে ফিরে যাননি? যখন তিনি আফজল খাঁর সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন তখন হাতে লুকনো ছিল বাঘনখ।

১৯২৮ সালে কাকোরি সরকারি ফান্ড লুঠের মামলায় রামপ্রসাদ বিসমিল এবং আরও তিনজনের ফাঁসি হয়, শচীন সান্যাল এবং আরও কয়েকজনের কালাপানি হয়। বিসমিল এবং আরও দু'য়েকজন প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন, মঞ্জুর হয়নি। শুধু শচীন্দ্রনাথ সান্যালের ফাঁসির হুকুম রদ হয়ে যাবজ্জীবনে বদলে যায়।

কিন্তু ভগত সিং ও তাঁর সাথীরা প্রাণভিক্ষাও চাননি, বরং বলেছিলেন ওঁদের ফাঁসি না দিয়ে গুলি করা হোক। সাভারকর তাঁর লেখায় বারীন ঘোষ এবং হেমচন্দ্রের মাফিনামা দিয়ে বেরিয়ে আসার উল্লেখ করেন, এবং বলেন - লড়াই না করে জেলে পচে মরার বীরত্বে ওঁর বিশ্বাস নেই। তার চেয়ে যেভাবে হোক বেরিয়ে এস, তারপরে আবার লড়াই কর।

ঠিক আছে, তর্কের খাতিরে এসব যদি সাময়িক রণকৌশল বলে ধরে নিই তবু প্রশ্ন ওঠে। ওঁর উদাহরণের সবাই - শ্রীকৃষ্ণ, শিবাজী, ওঁর গুরু তিলক - ছাড়া পাবার পরে আবার লড়াইয়ের ময়দানে ফিরে এসেছেন - নিজের নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী লড়াই করেছেন, দুশমনকে আঘাত হেনেছেন। আর গান্ধী ও নেহেরু কখনই মাফিনামা দেননি, উলটে জেল ভরো আন্দোলনে বারবার শরিক হয়েছেন। কিন্তু সাভারকর?

ভারতে এসে বাকি জীবনে একবারও ব্রিটিশকে উচ্ছেদ করতে অস্ত্র ধরা দূর কি বাত, শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনেও সামিল হননি। বরং উনিও ব্রিটিশ সংবিধানের মধ্যেই দেশের উন্নতির সম্ভাবনা দেখেছেন। তাহলে লন্ডন প্রবাসের দিনগুলোয় গান্ধী-গোখলে ইত্যাদি কন্সটিট্যুশনালিস্টদের এত বিরুদ্ধতা, সমালোচনা এবং তাচ্ছিল্যের যুক্তি কি? গান্ধীরা বরং এগিয়ে গেছেন। জেলে যাচ্ছেন কালাকানুনের প্রতিবাদে; মাস মোবিলাইজেশন করছেন, সত্যাগ্রহ শুরু করছেন। সাভারকর পিছিয়ে গেছেন তিরিশ বছর বা আরও বেশি। কারণ তাঁর শত্রু বদলে গেছে। খুঁজে পেয়েছেন তাঁর আসল শত্রু - মুসলমান।

এটাও উল্লেখনীয় যে আর যারা তাঁর মত মাফিনামা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, যেমন বারীন ঘোষ, হেমচন্দ্র ইত্যাদি, তাঁরা কেউ আর পরবর্তী জীবনে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেননি। অর্থাৎ কৌশল হিসেবেও মাফিনামা একেবারে অচল সিকি।

৬.০ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে উনি কী করলেন?

এইসময়েই উনি ‘হিন্দুত্ব’ নামক ধারণাটির কথক হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই সাভারকর হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করার সংকল্প নিলেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে ‘হিন্দু মহাসভা’ দল গঠন এবং ‘হিন্দুত্ব’ আদর্শের প্রচার তাঁর সারা জীবনের ব্রত হয়ে গেল, ইংরেজ তাড়িয়ে দেশ স্বাধীন করা নয়।

সাভারকরের জীবনী লেখক পুরন্দরে বলছেন যে, যাঁরা ভারতের বহুত্ববাদী আপাতবিরোধী ধর্মাচরণ এবং জীবনযাপনের সমন্বয়ের কথা বলতেন তাঁদের বিপরীতে সাভারকর দাঁড়ালেন এমন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারণা নিয়ে যা মুসলিম-ক্রীশ্চানদের বাদ দিয়ে শুধু হিন্দু ভারতের কথা বলে।

১৯৩৭ সালে মুম্বাইয়ে ইলেকশন হয়ে জমনাদাস মেহতা এবং ডি কাপুরের নেতৃত্বে অ-কংগ্রেসি প্রাদেশিক সরকার ক্ষমতায় এল। অবশেষে মে ‘১৯৩৭-এ সাভারকররা দু’ভাই পুরোপুরি মুক্তি পেলেন। মানে তাঁদের থানায় হাজিরা দেওয়া বন্ধ হল আর জেলার বাইরে যেতে এবং সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে কোন বাধা রইল না।

সেই সময়ের খ্যাতনামা মারাঠি নাট্যকার, লেখক, ফিল্ম-নির্মাতা পি কে আত্রে তাঁর পুণের বালমোহন থিয়েটার গ্রুপের তরফ থেকে এক সম্বর্ধনা সভা ডেকে সাভারকরকে “স্বতন্ত্রবীর” উপাধি দিলেন। সেটাই লোকের মুখে মুখে ‘বীর’ সাভারকর হয়ে গেল।

সাভারকর অগাস্ট ১৯৩৭-এ তিলকের ডেমোক্র্যাটিক স্বরাজ পার্টিতে যোগ দিলেও তিন মাসের মাথায় সেটা ছেড়ে হিন্দু মহাসভায় যোগ দিয়ে অচিরেই তার প্রাণপুরুষ হয়ে উঠলেন।

৭.০ ত্রৈলোক্য মহারাজের জেলযাত্রা ও বন্দিজীবন

পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহ জেলার ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, লোকের মুখে ‘মহারাজ’ নামে বিখ্যাত, স্কুল জীবন থেকেই অনুশীলন দলের সঙ্গে যুক্ত। স্কুলে সবাই আশা করেছিল উনি বৃত্তি পেয়ে স্কুলের মুখোজ্জ্বল করবেন। কিন্তু একটি মামলায় ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জে ধরা পড়ে পাঁচ মাস জেল হল, পড়াশুনোর সেখানেই ইতি। উনি আত্মজীবনীতে লিখেছেনঃ
“আমি ১৯০৮ সন হইতে ১৯৪৬ সন পর্য্যন্ত ৩০ বছর কারাগারে কাটাইয়াছি’। চার-পাঁচ বছর অজ্ঞাতবাসে কেটেছে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের বিপ্লবী কাজকর্মের এবং তাঁর কারাবাসের কিছু ফিরিস্তি তাঁর আত্মজীবনী থেকে নিয়ে এখানে দেওয়া হলঃ
• ১৯০৯ সালে ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলার ফেরার আসামী, ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা।
• ১৯১২ সালে ঢাকা শহরে পুলিশ খুনের মামলায় বন্দী। কয়েকমাস পরে প্রমাণাভাবে ছাড়া পান।
• অনুশীলন সমিতি ও গদর পার্টির যোগসাজশে সিঙ্গাপুর ও বার্মায় অভ্যুত্থান। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯১৪ সালে এঁরা স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করেন। ১৯১৫ সালে ১৩০ নম্বর বালুচ রেজিমেন্টের মধ্যে বিদ্রোহের প্রচার করার সময় ধরা পড়েন সোহনলাল পাঠক, মুস্তাফা হোসেন এবং আরও অনেকে। মান্দালয় স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারে লালা হরদয়াল, রাসবিহারী বসু, বরকতুল্লা, সোহনলাল এবং চারজনের ফাঁসির আদেশ হয়। রাসবিহারী বসু ধরা পড়েননি। সোহনলাল লাটসাহেবের প্রলোভন সত্ত্বেও ক্ষমা চাননি, বলেছিলেন - ইংরেজকে ক্ষমা চাইতে হবে।
• এরপর বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯১৩-১৪) ত্রৈলোক্য চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সিডিশনের চার্জ (রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা) লাগানো হয় এবং তাঁর ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। হাতকড়ি ও ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে বরিশাল জেলে প্রায় এক বছর রাখা হয় এবং ঘানিতে পিষে তেল বের করার কাজ দেওয়া হয়।
• ১৯১৬ সালে আন্দামানের সেলুলার জেলে পাঠানো হল। তাঁর প্রবল হাঁপানি দেখে জেলার জাহাজে ওঠার সময়ে বললেন - ‘তুমি সেখানেই মরিবে’। সেখানে এমন অবর্ণনীয় অবস্থা যে সরকারি হিসেবে প্রতিমাসে গড়ে তিন জন করে বন্দী আত্মহত্যা করত। বর্মা বিদ্রোহের বন্দী পন্ডিত রামরক্ষা অনশনে প্রাণত্যাগ করলেন।
• সেলুলার জেলের বন্দীরা প্রতিবাদে আন্দোলনে নামলেন। মহারাজের ভাষায় “আমরা ‘নরম ও গরম’ দুই দলে বিভক্ত হইয়া পড়িলাম”। সাভারকর ভাইয়েরা এবং বারীনবাবুরা পুরনো, আগে নির্যাতন সহ্য করেছেন, আন্দোলন করে কিছু সুবিধাও পেয়েছেন। এখন পাঁচ বছর পর “তাঁহারা জেলার ও সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেবের নিকট খুব প্রিয় পাত্র হইয়া উঠিয়াছেন। তাঁহারা এখন ঐসব সুবিধা ত্যাগ করিয়া আমাদের সঙ্গে আসিয়া আন্দোলন করিতে প্রস্তুত নন।" জেলে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হল। সাভারকর ও অন্যান্য নরমপন্থীরা যোগ দিলেন না।
• এই সময়ে সাহেব জেলার পন্ডিত পরমানন্দকে মা-বাপ তুলে গালি দেওয়ায় সে সাহেবকে লাথি ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর লাঠিচার্জে ভান সিং প্রায় মৃত্যুমুখে, পরে মারা যান। প্রতিবাদে জেনারেল স্ট্রাইক ডেকে ৭০ জন ধর্মঘটে যোগ দিল। এই অপরাধে সবার শাস্তি হল - ৬ মাস ডান্ডাবেড়ি, ৬ মাস সেল, ৭ দিন খাড়া হাতকড়ি ও কম খাবার।
• এই খবরগুলো বেঙ্গলী খবরের কাগজে বেরোল এবং সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি কাউন্সিলে প্রশ্ন তুললেন। সরকার জানাল - এসবে কোনো বড় নেতা যোগ দেননি। এই হরতাল ছ’মাস চলার পর কর্তৃপক্ষ বন্দীদের পায়ের বেড়ি কেটে দিল।
• সেই ১৯১৬-১৭ সালে আন্দামানে যারা গন্ডগোল পাকিয়ে কুনজরে পড়েছিলেন তাঁদের মধ্যে মহারাজ অন্যতম। ফলে বেত খাওয়া ছাড়া সব শাস্তি কপালে জুটেছে। যেমন, ক্রস-বার-ফেটার্স, ডাণ্ডাবেড়ি, শিকলী-বেড়ি, খাড়া হাতকড়ি, পেছনে হাতকড়ি, রাত্রে হাতকড়ি, পেনাল ডায়েট, সেলবাস ইত্যাদি।
• ১৯২১ সালের শেষে সাভারকর সমেত অধিকাংশ বাঙালি রাজবন্দীকে আন্দামান থেকে ভারতের জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হল। সাভারকর মহারাষ্ট্রে, এঁরা কলকাতার আলিপুর জেলে। কিন্তু এঁরা কেউ সাভারকরের মত মাফিনামা দেননি। বাকি জীবন ব্রিটিশ শাসকের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দেননি। এঁদের মধ্যে সাত জনের ছিল যাবজ্জীবন কারাবাস, অন্যদের আট, দশ এবং মহারাজের ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড।
• ১৯২৪ সালের প্রথম ভাগে ময়মনসিংহ জেলে স্থানান্তরণ পরে মুক্তি। কিন্তু বছরের শেষে ফের গ্রেফতার হয়ে আলিপুর জেলে। তারপর মেদিনীপুর জেলে। শেষে ১৯২৫ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু ও আরও কয়েক জনের সঙ্গে বর্মার রেঙ্গুন জেল থেকে মান্দালয় জেলে ট্রান্সফার। এরপরে ওখানকার ইনসিন এবং ফের মান্দালয় ও মিঞ্জান জেল।
• দ্বিতীয়বার মান্দালয় জেলবাসের সময়, ১৯২৭ সালে, ইন্সপেক্টর নরেশ চন্দ্র দত্ত এসে বললেন যে, সরকারের কিছু শর্ত আছে। সেগুলো যদি মেনে নিতে রাজি হও তাহলে মুক্তি দেওয়া হবে। মহারাজ পালটা বললেন যে ওঁরও তিনটে শর্ত আছে, সেগুলো ভারত সরকার মেনে নেবে কি?
• শর্তগুলো হলঃ ১) বিনা বিচারে এতদিন আটক করে রাখার জন্য গভর্ণমেন্টকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ২) বে-আইনি ভাবে বন্দী করে রাখার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৩) গভর্ণমেন্টকে কথা দিতে হবে যে ভবিষ্যতে কখনও এরকম হয়রানি করবে না। সহবন্দী ঢাকার সত্যেন্দ্র চন্দ্র মিত্র পরে ছাড়া পেয়ে খবরের কাগজে মহারাজের ওই পালটা তিন শর্তের কথা প্রকাশ করেছিলেন।
• এরপর ১৯২৮ সনে ইনসিন থেকে কলকাতা এনে নোয়াখালির হাতিয়া দ্বীপে অন্তরীণ করা হোল। বছরের শেষের দিকে মুক্তি দেওয়া হল। তারপর ১৯২৯ সালে পুলিশকে লুকিয়ে বর্মায় রেঙ্গুন ও মান্দালয়ে আত্মগোপন করে থাকা। ফের ১৯৩০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় ফিরে আসা। ১৯৩০ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহীতে রাজনৈতিক কর্মীদের সম্মেলনে যোগ দিতে এসে মাঝরাত্তিরে ধরা পড়ে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেল।

সে’বছরের জুন মাসে জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট এসে কয়েক দফা চার্জ শুনিয়ে গেল যার মধ্যে রয়েছে ‘অস্ত্র আমদানী’। এর জবাবে ত্রৈলোক্যনাথ পাঁচ দফা পালটা চার্জশীট দিলেন যার শেষ তিনটে প্যারা হচ্ছেঃ
• “(3) I charge you Stanly Jackson ‘for arresting innocent people and illegally detaining them in Jail.
• (4) for looting the properties of innocent people for in the name of searches.
• (5) for shooting the innocent people in the name of quelling riots.
• You are asked to answer the above charges. The charges along with your answers will be submitted before the National Tribunal.
• Trailokya Nath Chakravorty 10.6.30

১৯৩১ সালে রাজশাহী জেল থেকে ফের বদলি করা হল; প্রথমে বহরমপুর জেলে সেখান থেকে দুর্গম বক্সা ক্যাম্প। বছরের শেষে আবার সিডিশনের তিন আইনের চার্জ লাগিয়ে পাঠানো হল সোজা দক্ষিণ ভারতের জেলগুলোতে। প্রথমে ভেলোর, পরে কান্নানোর। ভেলোরে সাথী ছিলেন মালাবার বিদ্রোহের নায়ক নারায়ণ মেনন এবং কান্নানোরে ই এম এস নম্বুদ্রিপাদ, এ কে গোপালন প্রমুখ তৎকালীন কংগ্রেস কিন্তু ভবিষ্যতের কমিউনিস্ট নেতারা।

কান্নানোর জেলে কংগ্রেস কর্মীদের উপর দু’বার লাঠিচার্জ এবং তাঁর তিন আইনের রাজবন্দী হিসেবে প্রাপ্য সম্মান ও সুবিধা ('সঞ্জীবনী' পত্রিকা দেওয়া ইত্যাদি) না দেওয়ার প্রতিবাদে মহারাজ ১৭ দিন অনশন করে জয়ী হলেন। এর দু’বছর পর আবার ভেলোর জেল।

১৯৩৫ সালে বাঙালি বিপ্লবীদের সারা ভারতের বিভিন্ন জেল থেকে সরিয়ে এনে বাংলার মেদিনীপুর জেলার হিজলী জেলে একসঙ্গে রাখা হয়। তখন ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীকেও হিজলী জেলে অন্যান্যদের সঙ্গে রাখা হয়। এমন সময় মহাত্মা গান্ধী হিজলী জেলে এসে তিন ঘন্টা বিপ্লবীদের সঙ্গে আলোচনা চালালেন। উদ্দেশ্য, যদি তাঁরা হিংসার পথ ছেড়ে গান্ধীজির অহিংস পথে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে রাজি হন, তাহলে তাঁদের মুক্তির জন্য উনি ভারত সরকারের কাছে দরখাস্ত করবেন। আলোচনা ব্যর্থ হল।

এরপর কয়েকমাস পরে অসুস্থ মহাত্মা ফের দু’ঘন্টা আলাপ-আলোচনার প্রস্তাব দিলে সবাইকে হিজলী থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বদলি করা হল। আলোচনায় কেউ কাউকে নিজের মতে আনতে পারেননি। সবাই নিজের মতে অটল রইলেন। ফের সবাইকে হিজলী জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল।

এঁরা গান্ধীজিকে বলেছিলেন - ওঁদের কথা না ভেবে ১৯৩০ সালের বিপ্লব প্রচেষ্টায় যাঁরা আন্দামানে এবং ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দী, তাঁদের মুক্তির চেষ্টা করতে। অবশেষে ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহারাজের মতো যাঁরা বিনাবিচারে আটক ছিলেন সবাই মুক্তি পেলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রামের প্রকাশ্য রাজনৈতিক সভার মঞ্চ থেকে ফের গ্রেফতার হলেন। বে-আইনি ঘোষিত সভায় থাকার জন্য এক বছরের শাস্তি হল। সেখান থেকে ঢাকা জেল। তারপর হিজলি জেলে বদলি করা হল। কিন্তু এক বছর শাস্তি পুরো হওয়ার পরও ছাড়া হল না। দেশের সুরক্ষার জন্য বিপদ বলে তাঁকে ছ’বছর আটকে রাখা হল।

অবশেষে ২৩শে মে, ১৯৪৬ সালে শেষবারের মত ইংরেজ সরকারের জেল। দমদম সেন্ট্রাল জেল - থেকে মুক্তি পেলেন।

দু’জনের সংগ্রাম, কারাবাস ও বিভিন্ন কাজকর্মের তুলনা করলে আন্দামানের সেলুলার জেলের নাম আজ কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীর নামে হওয়া উচিত - সে বিচার পাঠকদের হাতে রইল।

পরের পর্যায়ে আমরা বেয়াল্লিশের আন্দোলনের সময় সাভারকর, নেতাজি ও কংগ্রেসের ভূমিকার সঙ্গে দেখে নেব ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের দ্বি-জাতি তত্ত্বে জিন্না ও সাভারকরের ভূমিকা, গান্ধী হত্যার কালো দাগ আদৌ সাভারকরের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া যায় কিনা এবং গোমাতা, জাতিভেদ, খাদ্যাখাদ্য প্রশ্নে সাভারকর কতখানি হিন্দু ছিলেন।
 

পাদটীকাঃ
1. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (মহারাজ); 'জেলে তিরিশ বছর'; পৃঃ ১৬৭।
2. ঐ; পৃঃ ১৮৫।
3. ঐ; পৃঃ ১৯৮।
4. বৈভব পুরন্দরে, ’সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব’; পৃঃ ৯০।
5. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ৯৫।
6. ঐ; পৃঃ ১১৮।
7. ঐ; পৃঃ ১১৮।
8. বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, 'দ্য টেল অফ মাই এক্সাইল'; পৃঃ ৫১-৫২।
9. সাভারকর, ‘মাঝি জন্মথেপ’ (মারাঠি ভাষায়); পৃঃ ১১০-১১৩।
10. সাভারকর, ‘অ্যান ইকো ফ্রম আন্দামান্স’; পৃঃ ১৮।
11. রেজালি, ‘টর্চার এন্ড ডেমোক্র্যাসি’; পৃঃ ৩০০। (গুগল বুকস থেকে নেওয়া)।
12. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৩৬।
13. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৩৮।
14. “সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব”; পৃঃ ১৩৮।
15. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৩৯।
16. সাভারকর, ‘মাঝি জন্মথেপ’ (মারাঠি ভাষায়); পৃঃ ২০৩।
17. বৈভব পুরন্দরের লেখা সাভারকরের প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৭২।
18. ঐ; পৃঃ ১৪৭-১৫০।
19. সাভারকর, 'অ্যান ইকো ফ্রম আন্দামান'; পৃঃ ৭০-৭২।
20. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (মহারাজ); 'জেলে তিরিশ বছর'; পৃঃ ১২৪, ১২৬। এবং 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৫৬।
21. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৫৯।
22. 'সোর্স মেটেরিয়ল ফর এ হিস্ট্রি অফ দ্য ফ্রীডম মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া', ভল্যুম ২, বোম্বাই; গভর্নমেন্ট অফ বোম্বে, ১৯৫৮; পৃঃ ৪৬৩-৭১।
23. সাভারকর, 'মাই ট্রান্সপোর্টেশন অফ লাইফ'; পৃঃ ৩১৮।
24. 'ইয়ং ইন্ডিয়া', ২৬ মে, ১৯২০; গান্ধীজির কলেক্টেড ওয়ার্কস, খন্ড ২০;, পৃঃ ৩৬৮-৭১।
25. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৬৫।
26. বম্বে ক্রনিকল, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯২৪।
27. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৬৮-১৬৯।
28. ফাড়কে, 'শোধ সাভারকরচা' (মারাঠিতে); পৃঃ ৭৪-৭৫।
29. সাভারকর, 'মাই ট্রান্সপোর্টেশন অফ লাইফ', ১৯২৭।
30. 'শ্রদ্ধানন্দ' পত্রিকায় (৩ অগাস্ট, ১৯২৮) প্রকাশিত প্রবন্ধ।
31. 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৭১।
32. ঐ; পৃঃ ১৭০-১৭১।
33. পুরন্দরে, 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ১৭৭।
34. আত্রে, 'কড়েছে পানি', খন্ড-২; পৃঃ ৩১৫-১৬।
35. পুরন্দরে, 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব'; পৃঃ ২৪১।
36. ঐ, পৃঃ ১১৯।
37. ঐ, পৃঃ ১২৪।
38. ঐ, পৃঃ ১৩৫।
39. ঐ, পৃঃ ১৪৩।
40. ঐ, পৃঃ ১৬০।
41. ঐ; পৃঃ ১৬৭।
42. ঐ; পৃঃ ১৮১।
43. ঐ; পৃঃ ১৮৫।
44. ঐ; পৃঃ ১৯৪।
45. ঐ; পৃঃ ১৯৮।
46. ঐ; পৃঃ ১৯৯।
47. ঐ; পৃঃ ২১৬।
48. ঐ পৃঃ ২৩৭।