আরেক রকম ● নবম বর্ষ বিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ অক্টোবর, ২০২১ ● ১-১৫ কার্তিক, ১৪২৮

প্রবন্ধ

নবনীতার রামকথা

নীলরতন সরকার


সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন (১৯৩৭-২০১৯)-এর বর্ণময় উপস্থিতি তাঁর সমালোচক সত্তাকে অনেকটাই আড়াল করে রেখেছিলো। অথচ 'ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও অন্যান্য রচনা'-র মতো সুলিখিত সমালোচনাগ্রন্থ বাংলায় খুব বেশি নেই। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিদ্যায়তনিক প্রকল্পে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। এই কার্যক্রমের সিংহভাগই অবশ্য ইংরাজি ভাষায় রচিত। এমনকি তাঁর বহুচর্চিত রামায়ণ-সংক্রান্ত নিবন্ধাবলিও ইংরাজিতেই লেখা, যার প্রাথমিক রূপটি উপস্থাপিত হয় নয়ের দশক জুড়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে এগুলি অনুবাদ ও পুনর্লিখনের মধ্যবর্তিতায় বাঙালি পাঠকদের সামনে আসে। এই কয়েকটি রচনা সংকলিত হয়েছে 'চন্দ্রমল্লিকা ও প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ' শীর্ষক একটি বইতে। মূলত ষোড়শ শতাব্দীর বাংলাদেশে চন্দ্রাবতী রচিত রামায়ণকে কেন্দ্র করে গ্রন্থটি লেখা। যদিও দক্ষিণ ভারতীয় আরো দুটি টেক্সট সমান্তরালভাবে উল্লিখিত হয়েছে এখানে। কিন্তু আমাদের আলোচনা মুখ্যত বাংলা টেক্সট ঘিরেই আবর্তিত। অর্থাৎ ষোড়শ শতকের চন্দ্রাবতীর সীতাকে নিয়ে বিশ শতকের নবনীতার পাঠ আমরা দেখে নিতে চাই। এজন্য অবশ্য সীতাকে নিয়ে লেখা নবনীতার অন্যান্য দু-একটি লেখাও আমাদের নজরে থাকবে।

চন্দ্রাবতী ও অংশুমালা

১৯৩২ সালে দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯) সম্পাদিত পূর্ববঙ্গ গীতিকা-র চতুর্থ খণ্ডের দ্বিতীয় ভাগে “চন্দ্রাবতীর রামায়ণ” কাব্যটি প্রথমবার গ্রন্থিত হয়। পরবর্তীকালে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক এটিকে পুনর্সম্পাদিত করে প্রাচীন পূর্ববঙ্গ গীতিকা-র সপ্তম খণ্ডে প্রকাশ করেন। এই দুই সংস্করণে পাঠভেদ থাকলেও আখ্যানভাগের কোনো মৌলিক ফারাক চোখে পড়ে না। উল্লেখ্য, দীনেশচন্দ্রের সংকলনে আখ্যায়িকাটি ৩ পর্বে মোট ১৬-টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত, আর ক্ষিতীশচন্দ্র আরো তিনটি অধ্যায় যুক্ত করেছেন, মোট অধ্যায় ১৯। নবনীতা আকরসূত্র হিসেবে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিকের পাঠই গ্রহণ করেছেন। এরই সঙ্গে নবনীতা গ্রহণ করেছেন নয়ানচাঁদ ঘোষের ‘চন্দ্রাবতী’ নামক গাথাকাব্যটি, যেখানে চন্দ্রাবতীর জীবনকাহিনিটি বিধৃত হয়েছে। এই গাথাকাব্যেই চন্দ্রাবতী-জয়ানন্দের প্রণয় থেকে শুরু করে তাঁদের বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ এবং পিতা দ্বিজ বংশীদাসের নির্দেশে চন্দ্রাবতীর রামায়ণ রচনার পটভূমিটি পাওয়া যাবেঃ ‘শিবপূজা করো আর লেখো রামায়ণ’। নবনীতা দেবসেন চন্দ্রাবতীর জীবনের সূত্রেই তাঁর রচিত রামায়ণটি পড়তে আগ্রহী।

প্রথম সম্পাদক দীনেশচন্দ্র সেন বা পরবর্তী সম্পাদক ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক এমনকি এই পালার সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে (১৮৮৯-১৯৪৬) প্রত্যেকেই চন্দ্রাবতীর ঐতিহাসিক অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।মৈমনসিংহ গীতিকা-য় সংকলিত ‘মলুয়া সুন্দরী’ ও ‘দস্যু কেনারাম’ পালাটি যে চন্দ্রাবতীরই রচনা, এ বিষয়েও তিনি নিঃসন্দিগ্ধ। কিন্তু নয়ানচাঁদ রচিত প্রাগুক্ত গাথাকাব্যের সূত্রেই চন্দ্রাবতীর প্রেমে-প্রত্যাখ্যাতা দুঃখিনী এক বিষাদপ্রতিমা বাংলার পাঠক-চৈতন্যে প্রোথিত হয়। কাব্যে দেখি, বাল্যসখা জয়ানন্দর (মতান্তরে জয়চন্দ্র) সঙ্গে বিবাহের লগ্নেই খবর আসে জয়ানন্দ ঘটনাচক্রে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান বালিকা আশমানিকে বিয়ে করেছে। আহত চন্দ্রাবতী এরপরেই কুমারী থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং পিতার নির্দেশে শিবপূজায় ব্রতী হয় ও রামায়ণ গান গায়। নয়ানচাঁদের রচনায় শিবের মন্দিরের প্রসঙ্গটিই আসে জয়ানন্দর সঙ্গে প্রণয়ের সূত্রে। কারণ বছর তিনেক পর অনুতপ্ত জয়ানন্দ এই শিবমন্দিরের দুয়ারেই এসেছিলো চন্দ্রাবতীকে একবার দেখবার আশায়। জয়ানন্দর আহ্বান ধ্যানমগ্ন চন্দ্রার শ্রুতিকে স্পর্শ করেনি। তাই মন্দিরের বাইরে জয়ানন্দ এক বিদায়বার্তা লিখে যায়ঃ ‘শৈশবকালের সখী তুমি যৈবনকালের সাথী/অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী/পাপিষ্ঠ জানিয়া মোরে না হইলা সম্মত/বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মত’ (দীনেশচন্দ্র সেন ১৯৭৩, ১১৮)। এই বার্তা দেখেও চন্দ্রাবতীর মনে করুণার উদ্রেক হয়নি। বরং সেভাবে ‘অপবিত্র হইল মন্দির হইল অধোগতি’ (দীনেশচন্দ্র সেন ১৯৭৩, ১১৮)। এবং মন্দিরকে শুচি করবার জন্য নদীতে জল আনতে গিয়ে জয়ানন্দর লাশ ভাসতে দেখে। তা দেখে নিথর উন্মাদপ্রায় চন্দ্রা একলা দাঁড়িয়ে থাকে। দীনেশ সেনের সিদ্ধান্ত এই ঘটনার পর চন্দ্রাবতী আর খুব বেশিদিন বাঁচেননি। ষোড়শ শতক শেষ হবার আগেই তিনি প্রয়াত হন।

নয়ানচাঁদ বর্ণিত বিরহবিধুর এই আখ্যানের কারণেই চন্দ্রাবতীর রচয়িত্রী পরিচয় ছাপিয়েও বড়ো হয়ে উঠেছে তাঁর চিরকুমারী বিরহিনী মূর্তিটি। কবিকে নিয়ে তৈরি হওয়া আখ্যানের অন্তরালে থেকে গেছেন ব্যক্তি কবি। নবনীতা দেবসেন এই সূত্রেই তাঁর আলোচনাটি শুরু করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাগাধুনিক যুগের একমাত্র মহিলা কবি প্রসিদ্ধ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থগুলিতে প্রায় অনুক্তই থেকে যান। বা তাঁর কাব্যকে সাহিত্যের ইতিহাস ও গাথা-সংকলনে ‘অসম্পূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের মনে হয়েছিলো অসম্পূর্ণ বা সুকুমার সেন (১৯০০-৯২)-এর মনে হয়েছিলো জাল রচনা-সংগ্রাহকই আসলে রচয়িতা (সুকুমার সেন ১৪১৪ ব, ২৪১)। সুকুমার সেন রামকথার প্রাক্-ইতিহাস-এ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রামায়ণের আলোচনা করলেও চন্দ্রাবতীর রচনার কথা উল্লিখিতই হয়নি। কিন্তু নবনীতা তর্ক করেন চন্দ্রাবতীর হয়ে। এবং সাহিত্যের ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে প্রয়াসী। এ নিয়ে তিনি দেশে-বিদেশে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেই ক্ষান্ত হননি, চন্দ্রাবতীর টেক্সটের পূর্ণাঙ্গ ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। তাঁর মতে চন্দ্রাবতীর রামায়ণ বাল্মীকি বা কৃত্তিবাসকে অনুসরণ করেনি বলেই যে অসম্পূর্ণ, এই সিদ্ধান্তের কোনো ভিত্তি নেই। বরং এই রচনাটিকে ‘সীতার জীবনকথা’ হিসেবে বিচার করাই যুক্তিযুক্ত।

আমাদের মনে পড়তে পারে নবনীতা দেবসেনের লেখা 'বামাবোধিনী' উপন্যাসের কথা। নায়িকা অংশুমালা বিদেশে গবেষণা করেছে রামায়ণ নিয়ে। তার গবেষণার বিষয়ঃ ‘বাল্মীকি রামায়ণের কাব্যশৈলীর চরিত্র নির্ধারণে তার গঠনতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’। এই গবেষণাপত্রটিকে বিদেশি প্রকাশক গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু সেই সময়েই অংশুমালা পরিচিত হয় চন্দ্রাবতী সহ ভারতের আরো কয়েকটি রামায়ণ গানের সঙ্গে, যা আবহমানকাল ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মেয়েদের মাধ্যমে প্রচলিত। অংশুমালা পূর্বপরিকল্পিত বইয়ের কাজ ছেড়ে মেয়েদের রামায়ণ গান নিয়ে চর্চায় মন দেয়। অংশুমালা দেখে, ‘এপিকের জগৎ পুরুষের জগৎ, শৌর্য-বীর্যই তার সার কথা। কিন্তু চন্দ্রাবতীর রামায়ণে যুদ্ধ কেন্দ্রবিন্দু নয়’। এই রামায়ণে কেন্দ্রে আছেন সীতা। নবনীতার মতোই অংশুমালাও মনে করেন, মেয়েদের এইসব রামায়ণ গান আসলে এক একটি ‘সীতায়ন’। স্রষ্টা নবনীতার মতোই চরিত্র অংশুমালাও চন্দ্রাবতীর সন্ধানে নেমে দেখতে পান প্রাগুক্ত নয়ানচাঁদের পালায় চন্দ্রাবতীর কবি পরিচিতির কথা উল্লেখিতই হয়নি। আবার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকাররা মলুয়া ও দস্যু কেনারাম পালার রচয়িতা চন্দ্রাবতীর কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করলেও তাঁর রামায়ণের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন না, বা ‘অসম্পূর্ণ’ তকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখেন। নবনীতা তাঁর উপন্যাসের চরিত্রের মতোই এর একটি প্রতিস্পর্ধী বয়ান রচনা করতে চেয়েছেন।

রামায়ণ বনাম সীতায়ন

নবনীতা দেবসেন প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের একাধিক মহাকাব্যের তুলনামূলক আলোচনা করে দেখিয়েছেন, এপিক মোটের ওপর ৩৮-টি থিমের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে ১৪-টি বিষয় প্রত্যক্ষভাবে নায়কের জীবননির্মাণ সংক্রান্ত। আর ২৪-টি কাহিনি বৃত্তান্ত সংক্রান্ত। এই ২৪-টির সঙ্গেও মহাকাব্যের নায়কের নিবিড় যোগ রয়েছে। নবনীতা খেয়াল করেছেন এই ৩৮-টি থিমের মধ্যে মাত্র ৯-টি থিমের সঙ্গে নারীজীবনের সম্পর্ক রয়েছে। এবং তারও বেশিরভাগই গৌণ, অথবা নিছক নায়ক-চরিত্রকে পূর্ণতা দেবার লক্ষ্যেই সংযোজিত। নবনীতা লক্ষ করেছেন, এপিক কাহিনিতে নারীর একমাত্র কাজ বিভিন্নভাবে অপমানিত হওয়া। একদল নারীকে অপমান করে আর একদল সেই অপমানের শোধ তোলে, এই নিয়েই জমে ওঠে এপিক লড়াই। সেখানে চন্দ্রাবতীর রামায়ণে রাম কেন্দ্রচ্যূত হয়েছে, কেন্দ্রে চলে এসেছে সীতা।

সীতাকে নিয়ে উৎসাহ নবনীতার নতুন নয়। সীতাকে নিয়ে সাতের দশক থেকেই দু-একটি টুকরো গল্প তিনি লিখতে শুরু করেন, যা সীতা থেকে শুরু বইয়ের প্রথম পর্বে সংকলিত হয়েছে। ‘অমরত্বের ফাঁদে’, ‘সীতার পাতাল প্রবেশ’ ইত্যাদি রচনায় সীতা কোথাও নিছকই ভোগ্যপণ্য, কোথাও বা প্রতিবাদিনী। ধ্রুপদী আখ্যানের সীতাকে নিজের কল্পনা দিয়ে নবনীতা এইসব রচনায় অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে মজাচ্ছলে খুব সহজেই সীতা চরিত্রের নির্মাণে বাল্মীকির প্রকল্পের ফাঁকগুলি ধরা পড়ে যায়। বাল্মীকির কাহিনিবৃত্ত সম্পর্কে প্রশ্নই শুধু উঠতে পারে, জমতে পারে অস্বস্তি, কিন্তু এপিকের নায়িকাকে ঘিরে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ খুব বেশি থাকে না। কারণ সীতারা যেকোনো এপিকেই গৌণ।


নবনীতা লক্ষ করলেন, ধ্রুপদী এই আখ্যানের বাইরে ভারতে রামায়ণের আরো কয়েকটি পাঠ রয়েছে, আখ্যান যেখানে নায়িকা-কেন্দ্রিক। তাঁর কথায়ঃ
ক্ষমতার উৎস যেখানে, সেখানে মেয়েদের ঠাঁই নেই। এপিক জগৎ পুরুষের জগৎ, বলবানের জগৎ। সেই বল কখনো বাহুবল, কখনো আত্মিক বল।... এই দুইয়ের কোনোটাই মেয়েদের জীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডির নাগালের মধ্যে আসে না। তাই মেয়েদের গানে দেখি, দুই বিষয়েই মেয়েরা একইরকম উদাসীন।...

মেয়েরা যখন রামায়ণ গাইবে বলে মনে করে, তারা তাদের নিজেদের মতো করে রামকথার বৃত্তান্ত বেছে নেয়। মেয়েরা গান বাঁধে সেইসব বিষয়বস্তু নিয়ে, যার সঙ্গে তাদের বাঁচা-মরার যোগ আছে। যে-গান গাইলে তাদের বুকের ভার কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। (নবনীতা দেবসেন ২০১৯, ৭৬-৭৭)
এ-কারণেই তিনি চন্দ্রাবতী ছাড়াও মৈথিলি, মারাঠি ও তেলেগু ভাষায় রচিত রামায়ণ গানের একটি তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। বিশেষত অন্ধ্রের রঙ্গনায়কাম্মা (১৯৩৯-) রচিত 'রামায়ণম্ বিষবৃক্ষম্' রচনাটি প্রায় সমান্তরাল টেক্সট হিসেবে উঠে আসে। তিনি দেখান ভারতবর্ষ জুড়ে মেয়েদের মুখে মুখে যে রামকথা প্রচলিত সেখানে রামের নামের আড়ালে আসলে সীতা চরিত্রেরই বর্ণনা, যেখানে রাম নয়, সীতার দৈবী-জন্ম থেকে দৈবী-মৃত্যু পর্যন্ত বিধৃত। এছাড়া আরো তিনটি বিষয়ে নবনীতা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রথমত, এটি দুঃখিনী এক নারীর লেখা আর এক দুঃখী নারীর কাহিনি, যা পরিবেশিত হচ্ছে নারীদেরই সামনে। দ্বিতীয়ত, বন্দনার পরিবর্তে রচয়িতা রামকে ভর্ৎসনা করেন, সীতার দুঃখ এমনকি অযোধ্যার পতনের জন্যও তাঁকেই দায়ী করেন। তৃতীয়ত, যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় এখানে একেবারেই প্রাধান্য পায়না। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধের প্রসঙ্গটি চন্দ্রাবতী বলেন মাত্র চার লাইনে, যা আসলে ‘সীতার বারোমাসি’র অংশ মাত্র। বরং এইসব মৌখিক পরম্পরায় প্রাধান্য পেয়েছে সীতার জন্ম, বিয়ে, সীতাহরণ, অগ্নিপরীক্ষা, বনবাসযাত্রা, আসন্ন মাতৃত্ব, লব-কুশের জন্ম, শেষবিদায় ইত্যাদি প্রসঙ্গ। রামায়ণের পুরুষ কথক যেখানে রামের গান করেন, মেয়েরা সেখানে পরিবেশন করেন সীতার গান। বয়ান এতোখানি মেয়েলি বলেই এই টেক্সটের প্রতি পংক্তিতে রচয়িতা ‘গো’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সীতার মধ্যে দিয়ে যে আসলে ভারতীয় নারীর এক বিশেষ রূপ প্রকাশিত হয়েছে তা নবনীতা নিবিড়ভাবে অনুধাবন করেছেন,
ভারতীয় উপমহাদেশের মেয়েরা এখনো পর্যন্ত যে শতাব্দীতেই বাঁচি, আর যে ভাষাতেই কথা কই না কেন আমরা সকলেই বুঝি সেই একই দুঃখ-মায়ের গর্ভজাত অভিন্নশোণিত সহোদরা। আমাদের ধমনীতে বইছে একই দুঃখস্রোত। এই বিপুল উপমহাদেশের যে-কোনো কোণেই আমার বাসা হোক, রান্নাঘরে বসে আমি যে মশলাপাতি দিয়ে যা-খুশি রান্না করি না কেন, আমার পরনে চেনা অচেনা যে পোশাকই থাকুক, আর আমি যাকেই ভোট দিই না কেন, আমরা মেয়েরা যখন নিজেদের মধ্যে রাম-সীতার গান গাইতে বসি, কথা বলি - তখন আমাদের প্রাণের ভাষাটি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। (নবনীতা দেবসেন ২০১৯, ৭৭)

যায় যে, তা বুঝি অংশুমালাকে দেখে। মৌখিক পরম্পরার সীতাকে নিয়ে গবেষণা করতে করতে, উচ্চশিক্ষিতা অংশু খেয়ালই করেনি কখন তার জীবনটাও বঞ্চনায়-বঞ্চনায় সীতার সঙ্গে একাসনে বসে গেছে, তার পরিচারিকা কমলাম্মার মতোই। যে-কারণে শেষে সীতার পালার মতোই শুরু হয় ‘অংশুমালার পালাঃ' ‘তোমারেই হৃদিমূলে করিয়া আশ্রয়/চন্দ্রা-কমলাম্মা-অংশু সীতার গীতি গায়/তুমি যদি ছাড়ো মাতা আমরা না ছাড়িব/বাজন্ত নূপুর হইয়া চরণে ধরিব/নারীর গহীন ঢেউ বাঁধে না ভাষায়/স্বপ্নের হাসন স্বপ্নের কান্দন অংশুমালা গায়’। (নবনীতা দেবসেন ২০১০, ২৮১)

‘এক’ রামের বিরুদ্ধে

‘উদ্দীপ্ত নারীচেতনার স্বতঃস্ফূর্তি’ ছাড়াও আরো একটি প্রসঙ্গে এই প্রবন্ধগুলির মূল্য অপরিসীম। সাহিত্য সমালোচনাকে অতিক্রম করে এই টেক্সট ভারতবর্ষের প্রচলিত সমাজ-রাজনৈতিক চেতনায় এক অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করে। চন্দ্রাবতীর রচনার সঙ্গে নবনীতা সম্যকভাবে পরিচিত হন আটের দশকে। ততোদিনে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নিয়ে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে, যার অল্প ক’দিনের মধ্যেই বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে ফেলা হবে। এই উত্তেজনার বছরগুলিতেই নবনীতা দেশে-বিদেশে রামায়ণের এই ভিন্ন পাঠের কথা বলছিলেন। এই কথা যে নবনীতাই প্রথম বলেন এমন নয়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭) থেকে সুকুমার সেন অনেকেই এমন কথা উল্লেখ করে গেছেন।সুনীতিকুমার-সুকুমার সেনের উল্লেখ আছে অংশুমালা আখ্যানেও। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭) সম্পাদিত 'কৃত্তিবাসী রামায়ণ'-এর ভূমিকায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন,
বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণ ছাড়া প্রাচীন ভারতে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বন করিয়া বহু ছোট-বড়ো কাব্য-নাটকাদি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হইয়াছিল; প্রাচীন ভারতীয় অন্যান্য ভাষাতে যথা পালি ও বিভিন্ন প্রাকৃতে, রামায়ণ-কথা নানাভাবে মিলে। রামায়ণ জৈনদের মধ্যেও বিশেষ লোকপ্রিয় ছিল, এবং সংস্কৃত ও জৈন রামায়ণ আছে। ভারতের দ্রাবিড় ভাষাগুলিতে, উত্তর ভারতের আর্য্যভাষার মতই, রামায়ণের বিভিন্ন প্রকাশ দেখা যায়। বিভিন্ন আধুনিক ভারতীয় আর্য্যভাষায় সাহিত্যের অনেকখানি স্থান জুড়িয়া রাম-কথা নানাভাবে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। প্রায় প্রত্যেক ভারতীয় ভাষার অন্যতম প্রধান গ্রন্থ হইতেছে - রামায়ণাশ্রয়ী কোনও-না-কোনও মহাকাব্য। (সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ২০১৯, ২৫)

এছাড়া ভারতের বাইরে চিন-তিব্বত সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত রামায়ণের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। মোদ্দা কথা, সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ নামে একটি কাব্য আছে, যার রচয়িতা বাল্মীকি, কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিদেশেও তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। এমনকি বাল্মীকি রামায়ণের সপ্তকাণ্ড নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। উত্তরকাণ্ড যে পরবর্তীকালের সংযোজন একথা অনেককাল ধরে বিদ্বানরা বলে আসছেন। এমনকি প্রথম ছয় খণ্ডেও সর্বত্র একই পাঠ প্রচলিত নয়। ভাণ্ডারকর রিসার্চ ইনস্টিটিউট যেভাবে পাঠান্তর সংবলিত মহাভারতের প্রামাণিক সংস্করণ প্রকাশ করেছে, তেমনি বরোদার ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউট ১৯৫১-৭৫ পঁচিশ বছর জুড়ে সাতটি সুবৃহৎ খণ্ডে রামায়ণের ক্রিটিকাল এডিশান প্রস্তুত করেছে, যা থেকে রামায়ণের বিভিন্ন পাঠের প্রভেদ বোঝা যায়। মনে রাখতে হবে, এই প্রামাণ্য সংস্করণের ভিত্তি শুধুমাত্র সংস্কৃত ভাষায় বাল্মীকির নামে প্রচলিত রামায়ণ। এর সঙ্গে যদি কম্বন, কৃত্তিবাস, তুলসীদাস, সরলাদাস সহ প্রাদেশিক ভাষায় প্রচলিত রামকথাগুলি যোগ করা হয় তাহলে তার আয়তন কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ রামকথার বৈচিত্রময় এই ঐতিহ্যকে বছরের পর বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ভারতীয় সংস্কৃতিতে আদিকবি বাল্মীকি ও তাঁর কাব্য রামায়ণের দাপট উত্তরোত্তর এতোটাই বাড়ছে যে, তা অপরাপর যাবতীয় রামকথাগুলিকে গ্রাস করে ফেলতে উদ্যত। এই আখ্যানের সূত্র ধরেই অযোধ্যা রামের জন্মস্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। সুনীতিকুমারের মতোই নবনীতাও আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রামায়ণ এক নয়, এবং সেই কারণে রামও একজন নন। ভারত তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একদিন একাধিক রামায়ণ প্রচলিত ছিলো, যার কোনো-কোনোটির রচয়িতা মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত। আর নবনীতা উল্লেখ করেছেন মুদ্রিত টেক্সটের বাইরে মেয়েদের মধ্যে প্রচলিত রামায়ণ-আখ্যানের কথা। এই সমস্ত রামায়ণের সঙ্গে পরিচিত হতে পারলে এই আহাম্মক দাবিটা নিতান্তই মামুলি হয়ে যায় যে, অযোধ্যাই রামের জন্মভূমি। বামাবোধিনী-র অংশুমালা ঠিক এই কাজটিই শুরু করেছিলো। যে কারণে অংশুমালার প্রথম প্রবন্ধটি প্রকাশের পরই ঘরে-বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এমনকি তার স্বামীও বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। সে স্পষ্টতই জানায়ঃ
মাথা আমার ঠাণ্ডাই আছে অংশু। সেইজন্যই কথাটা বলছি। যখন সারাটা দেশ রাম রাম করে খেপে রয়েছে, ঠিক তক্ষুনি তোমায় প্রবন্ধ লিখতে হল কোন দেশের রামায়ণে রাম সীতার দাদা, আর কোন দেশের রামায়ণে সীতা রাবণের মেয়ে আর কোন দেশের রামায়ণে বাল্মীকি সীতার প্রেমিক-কাম-পালক পিতা, আবার কোথায় যেন রাম-লক্ষণ দুই ভাই-ই সীতাকে নিয়ে সুখে ঘরকন্না করেন - দ্রৌপদী স্টাইলে - রামভক্তরা এসব নোংরা কথায় ক্ষেপে উঠবে না ভেবেছো? (নবনীতা দেবসেন ২০১০, ২৬৪)

এই কারণেই অংশুমালার দ্বিতীয় প্রবন্ধটি প্রকাশের জন্য মনোনীত হয়েও ফেরত আসে। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র, ছাপার বই, টেলিভিশনের ধারাবাহিকের দাপটে অনেক রাম ততোদিনে এক রামে পর্যবসিত। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না, এর মধ্যে ব্যক্তি নবনীতার প্রক্ষেপ আছে কিনা! রামায়ণ বিষয়ক বক্তৃতার পর জাতীয় অধ্যাপক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কেও আক্রমণ সহ্য করতে হয়। ১৯৮৭-তে এ কে রামানুজন (১৯২৯-৯৩) দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত রামায়ণ নিয়ে একটি তথ্যনিষ্ঠ নিবন্ধ লেখেন, যা অচিরেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠক্রমে চলে আসে। যদিও এর সমালোচনাও কম কিছু হয়নি। হিন্দু ভাবাবেগকে আহত করছে এই ছুতোয় কয়েক বছর আগে প্রবন্ধটি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে ছেঁটে ফেলা হয়।

জাতীয়তাবাদী প্রকল্পগুলি সন্ধান করে এক রাষ্ট্রনায়কের। ভারতের মতো বহু ভাষাভাষীর দেশে একজন সর্বজনমান্য নায়ক কোনো যুগেই খুব সহজে বাস্তব সমাজ থেকে উঠে আসে না। যে কারণে উনিশ শতকের বঙ্কিমকে কৃষ্ণর শরণাপন্ন হতে হয়েছিলো। বহু শতাব্দী প্রচলিত জাতপাত ও গোষ্ঠীচৈতন্য নিয়েই পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ও হিন্দু আত্মপরিচয় বক্র পথে একাকার হতে চেয়েছে। এযুগে সেই জায়গা নিয়েছেন মহাকাব্যের আর এক নায়ক। মহাকাব্যের নায়ক রামচন্দ্র আজ জাতির নায়ক শ্রীরাম। তাই রামানুজন, নবনীতা বা অংশুমালার নিখাদ বিদ্যায়তনিক যুক্তিগুলি কেউ কানেই তুলতে চায় না। শুধু রামের বিরুদ্ধতা তো বটেই, বাল্মীকির রাম ছাড়া অন্য কোনো রামের অস্তিত্বই রামভক্তদের কাছে প্রবল অস্বস্তির। নব্যভক্তবৃন্দ চাইছে 'ব্যূঢ়োরস্ক বৃষস্কন্ধ শালপ্রাংশু মহাভুজঃ' রামকে। আর নবনীতা উল্লেখ করেন সেইসব রামায়ণের কথা, যেখানে এই পুরুষকার প্রতীকটি প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হয়, নায়ক রামের বীরত্ব, মহত্ত্ব নয় - নায়িকা সীতার দুঃখ-যন্ত্রণা, সাংসারিক জীবনই মুখ্য যেখানে। আর কে না জানে যেকোনো ফ্যাসিস্ত শক্তি সাধারণভাবেই নারীকণ্ঠ রোধ করতে চায়। সেই কারণেই বাংলাদেশের চন্দ্রাবতী বা অন্ধ্রের রঙ্গনায়কাম্মা রচিত রামের আখ্যান জাতীয়তাবাদী প্রকল্পে অপাংক্তেয় থেকে যায়।

আশ্চর্য সমাপতনে নবনীতার প্রয়াণের একদিন পরেই ৯ নভেম্বর ২০১৯ ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বাল্মীকির রামের ঐতিহাসিকতায় শিলমোহর দিয়ে দিলো। ভারতে প্রচলিত অজস্র রামকথার ওপর বাল্মীকির রামই সৌধ হিসেবে স্বীকৃতি পেলো। নবনীতা দেবসেন সক্রিয় রাজনীতি করেননি, মিছিলেও হাঁটতে দেখা যায়নি সেভাবে। এমনকি তাঁর নিবন্ধ যে প্রখর রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ঝাঁঝালো মন্তব্যে প্রখর, এমনও নয়। অথচ নয়ের দশকে রাম-জন্মভূমি নিয়ে উত্তাল প্রহরগুলিতে নবনীতা নীরবে সেই অস্বস্তিকর কাজটিই করে গেছেনঃ রামকে ঘিরে তৈরি হওয়া জাতীয়তাবাদী প্রকল্পের মস্ত ফাঁকটি চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যায়তন বোধ হয় এমনভাবেও সমকালকে প্রত্যাঘাত করতে পারে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় থেকে এ কে রামানুজন, সুকুমার সেন থেকে নবনীতা দেবসেন এদেশের প্রসিদ্ধ বিদ্বানেরা এই কাজটিই নীরবে করেছেন, উগ্র রাষ্ট্রবাদী হিন্দুত্বের প্রতিস্পর্ধী রামকথার বহুত্ববাদের কথা বলে গেছেন নিজেদের রচনায়।


উল্লেখপঞ্জিঃ
● দীনেশচন্দ্র সেন (সম্পা.), ১৯৭৩, মৈমনসিংহ গীতিকা, কলকাতাঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
● দীনেশচন্দ্র সেন (সম্পা.), ১৯৩২, পূর্ববঙ্গ গীতিকা চতুর্থ খণ্ড, কলকাতাঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
● নবনীতা দেবসেন, ২০১৯, চন্দ্রমল্লিকা ও অন্যান্য প্রবন্ধ, কলকাতাঃ দে’জ পাবলিশিং।
● নবনীতা দেবসেন, ২০১০, বামাবোধিনী, দ্র. দশটি উপন্যাস, কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স, পৃ. ২২৩-৮১।
● নবনীতা দেবসেন, ২০১৮, সীতা থেকে শুরু, কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স।
● রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, “শ্রীরামের এ কী হালঃ অবতার থেকে রাষ্ট্রপুরুষ!”, কলকাতাঃ পাবলভ ইনস্টিটিউট, পৃ. ৩১৬-২২।
● রামানুজন, এ কে, ২০০৪, “থ্রি হানড্রেড রামায়নাসঃ ফাইভ এক্সাম্পলস্‌ এ্যান্ড থ্রি থটস্‌ অন ট্রান্সলেশন”, দ্র. কালেক্টেড এসেজ অফ এ কে রামানুজন, দিল্লিঃ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পৃ. ১৩১-৬০।
● সুকুমার সেন, ১৯৭৭, রামকথার প্রাক্-ইতিহাস, কলকাতাঃ জিজ্ঞাসা।
● সুকুমার সেন, ১৪১৪ ব., বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, দ্বিতীয় খণ্ড, কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স।
● সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ২০১৯, “রামায়ণ”, দ্র. সাংস্কৃতিকী অখণ্ড সংস্করণ, কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স, পৃ. ২৩-৩৫।