আরেক রকম ● নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা ● ১-১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ● ১৬-৩০ পৌষ, ১৪২৭

প্রবন্ধ

সুধীর চক্রবর্তী (১৯৩৪-২০২০): প্রজ্ঞা-প্রত্যয়-প্রভা

সুমন ভট্টাচার্য



পরিচয়ের রূপ-রূপান্তর

সুধীর চক্রবর্তীর পরিচয় যদিও সকলেরই এক কথায় জানা, কিন্তু সেই এককথায় তাঁর পরিচয় দেওয়া অসম্ভব। একদা নূতন সাহিত্য সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধের প্রতিবাদ করে লিখেছিলেন ‘সংগীত-অঙ্গে বাঙালী’। দূরদর্শী সম্পাদক অনিলকুমার সিংহ চিনে নিয়েছিলেন তাঁকে। লেখককে। সেই গত শতকের পাঁচের দশক থেকে তাঁর নিয়মিত প্রবন্ধ-রচনার আরম্ভ হওয়ার পর, এই শতকেরও দুই দশকের ব্যাপ্তিতে তিনি - নিয়মিতই। শেষ লেখাটি প্রকাশ পেয়েছে দেশ (২ ডিসেম্বর, ২০২০)-এ, ‘আমার বন্ধু পুলু’। প্রমথ চৌধুরীর যে সতর্কতাজ্ঞাপন - যার যে বিষয়ে অধিকার নেই, তিনি যেন সে বিষয়ে না লেখেন - বিশেষ করে সংগীতবিষয়ে সে নিষেধাজ্ঞা কঠোরতর। সুধীর চক্রবর্তীর বিশেষ অধিকার ছিল সংগীতে - গায়নে এবং শাস্ত্রে। তিনি বেশ দীর্ঘকাল পরিচিত ছিলেন সংগীত, সংক্রান্ত বিষয়ের লেখক-খ্যাতিতে।

গবেষক সুধীর চক্রবর্তী একদিকে যেমন নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ করেছেন, এ-বিষয়ে পূর্বসাধক পন্ডিত-গবেষকদের দৃষ্টিকোণ, হারবার্ট হোপ রিজলে-র তথ্যানুসন্ধান ও ভাষ্য-মন্তব্য এবং ধারণা ও সিদ্ধান্ত, অনুরূপে যোগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, এডওয়ার্ড বি. ডিবক-এরও ভাবনা, তেমনই গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁর সমকালীন সহযাত্রী অজিত দাসের চিন্তাচর্চাকেও জাত বৈষ্ণব কথা-র পরিসরে, তাঁর পাঠও সুধীর চক্রবর্তীর কাছে সমাদৃত। এবং প্রত্যেকটা পর্যায়েই তিনি বারংবার বিচার করেছেন তার বিরুদ্ধ মতবাদ এবং সম্ভাব্য বিরুদ্ধতার রূপ থেকেও। সব থেকে বড় কথা, যা যে-কোনো গবেষকেরই একটি আদর্শ তো বটেই একটি অবশ্যমান্য নির্দেশিকাও হয়ে যায়, যে সম্প্রদায়গত কেন্দ্রিকতার আলোচনার পর, তার তথ্যসংগ্রহ আর সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব ভাষ্যের পরেও, সে সন্ধান কিন্তু থামেনি। তার নিয়ত সম্প্রসারের ইতিবৃত্তকে তিনি বুঝবার চেষ্টা করেছেন তাঁর সাম্প্রতিককালের জনজীবনে। বিশেষত অবতলের জনজীবনের অনুভূতির বিস্তারে।

এই জনজীবনকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন বিভিন্ন মেলায়। তাঁর কথায় শোনাই ভালোঃ
এই ভাবে ‘গৌরাঙ্গের কৃপা’ তার ‘গৌরাঙ্গের খেলা’ শব্দ দুটিকে অনর্গল অব্যয়ের মতো ব্যবহার করে মন্মথ অধিকারী আমার সঙ্গে জমিয়ে নিল। কথায় কথায় প্রসঙ্গের ফুঁপি বেরোয়। ...সেই সুযোগে আমি আমার মনে-পুষে রাখা অনেক দিনের একটা প্রশ্ন খালাস করে ফেলিঃ ‘এই যে পাঁচ-ছমাস ধরে সব বাড়িছাড়া। সবাই কি সংযম করে থাকে নাকি? শরীরের ব্যাপার-স্যাপার আছে তো, নাকি?’

জিভ কেটে মন্মথ বলে ‘বিলক্ষণ। গৌরাঙ্গের খেলায় এই দেহ নিয়েই যত গোলমাল। আছে, তারও ব্যবস্থা আছে। সব মেলাতেই উস্কো মেয়েছেলে থাকে বৈকি। ...সব মেলাতেই এ-সব চোরা গোপ্তা ব্যবস্থা থাকে। এক অগ্রদ্বীপের মেলা বাদে।’ (উৎসবে মেলায় ইতিহাসে, পৃঃ ৪৭)

১৯৮০-৮১-র খুবই জনাদৃত পত্রিকা ‘পরিবর্তন’-এ লিখতেন সুধীর চক্রবর্তী। পাঠকেরা অপেক্ষা করতেন সেই সুরম্য কথবার্তার জন্য। কোনো পান্ডিত্যকার নেই, কোনো তথ্যগত কড়াক্রান্তির প্রশ্ন নেই, শুধুই জনজীবনের বৃত্তান্তধারা। যা মানুষের সামনেই প্রতিনিয়তের ঘটমান বর্তমান - শুধু তার বিশেষত্ব ছিল ‘‘চোখের বাহিরে’’ - নিবারণ চক্রবর্তীর সেই লেখা এবং সঙ্গে চন্ডী লাহিড়ীর রঙ্গচিত্রের যুগ্মকে তা পরিবর্তনের পাঠকের কাছে ছিল এক খোলা বারান্দার মুক্তি, পরে তারই রূপ তাঁর আর এক প্রবাদপ্রতিম বই সদর-মফম্বল। এলেন খণ্ডবৃত্তান্তের লেখক, আখ্যান-এর সুধীর চক্রবর্তী। পাঠকেরা অনায়াসেই স্মরণ করতে পারবেন, অশোক সেন সম্পাদিত বারোমাস পত্রিকায় পৃষ্ঠায় তাঁর সেই সমস্ত, আক্ষরিক অর্থেই সমস্ত আখ্যানগুলিকে। এবং বারোমাস-এরও পাঠককুল সাগ্রহে পড়তেন তাঁর সেই লেখাগুলি। কেউ বা সর্বাগ্রে। কেউ শেষপাতের মিষ্টিমুখ করবার মতো।

আর এই পরিচয় ‘‘সমূহে’’র আড়ালে তিনি অধিকতর যত্নে আড়াল করেছেন বা অবরুদ্ধ করেছেন কবি সুধীর চক্রবর্তীকে। স্নাতকোত্তর পাঠপর্বে তাঁর এবং শিশিরকুমার দাশের প্রত্যক্ষ উৎসাহ আর কর্মিষ্ঠতায় গড়ে উঠেছিল একটি খাতা ‘‘অমৃত-যন্ত্রণা’’। শিশিরকুমার দাশ অপরিমেয় অনুরাগে সহাধ্যায়ী বন্ধুদের কবিতার প্রতিলিপি প্রস্তুত করেছিলেন নিজস্ব হস্তাক্ষরে। সেই খাতা তারপদ রায়ের আগ্রহে এবং প্রকাশন-কর্তৃত্বে প্রকাশিতও হয়, আর দীর্ঘকাল পরে একুশ শতকের প্রথম দশকে স্মৃতি ও অনুষঙ্গ সহ পুনর্মুদ্রণ ঘটে অমৃত-যন্ত্রণা-র। তা ছিল সুধীর চক্রবর্তীর নিভৃতি। যাকে আরো অল্প করেই উন্মোচন করেছিলেন আরেকটি গ্রন্থেঃ অবতলের রূপাবলি। শিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্তর আঁকা অনুপম বহুবর্ণের বাউল-বাউলানীদের বিভিন্ন বিভঙ্গের সঙ্গে সুধীর চক্রবর্তীর কবিতা। কবি সুধীর চক্রবর্তী এখনো বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতেই-আবদ্ধ। একটি কবিতা একটু উপস্থাপনা করা যায়ঃ
আর কিছু নেই শুধু জানলার রিক্ত আকাশঃ
বাউল দুপুর। আকাঙ্ক্ষা আছে অনাসক্তির মর্মমূলে;
নীল আকাশের এ-প্রান্তশায়ী চিলেকোঠা ছাদে
সেই সনাতন যুগ্ম প্রতীক কপোতকপোতী ঠোঁট টুকরোয়।...
...নীল আকাশের স্নেহকরপুটে আমার হৃদয় দুই পাখী হয়ে
উড়ে যেতে চায়, আসঙ্গনীল তোমার সে-মনে;
যে-মন এখন আমার নামের স্মৃতিমন্থর।।

(‘আসঙ্গনীল’, প্রবাসী ষষ্টি-বার্ষিকী, পৃঃ ৭৪৬, ১৯৬১)

এষণার অন্বয়ে এককে

সুধীর চক্রবর্তীর রচনা সংখ্যায় বিপুল। কিন্তু তা সংখ্যাধিক নয়। কারণ কোনো লেখাই অবান্তর নয়। তাঁর গবেষণাধর্মী লেখার যে গুরুত্ব, আখ্যানের গুরত্বও সমরূপ। এবং তিনি সেই মানুষ সেই লেখক-গবেষক, যিনি গবেষণাকে ইচ্ছাকৃত জটিলতায় বা পান্ডিত্যের হদ্দমুদ্দ করেননি। করতে চাননি বলেই। প্রতিষ্ঠানিক বা বিদ্যায়তনিক গবেষণা করেছেন। কিন্তু সেই পি.এইচ.ডি-র ডক্টর-অভিধা কখনো বুঝতে দেননি, নামের গোড়ায়। আর তাঁর গবেষণার গভীরতাও ছত্রে ছত্রে সুপ্রকাশ। ধরা যাক, সাহেবধনী ও বলাহাড়ি সম্প্রদায়ের গান নিয়ে তাঁর যে লেখা, যা পরে এক মলাটে বাংলার গৌণধর্ম - সেখানে লিখছেনঃ

১. তাঁদের গানের ভাষা ও প্রতীক আমাদের অচেনা, তাই প্ৰহেলিকায়। একবার একজন খুদে গবেষক আমাকে উদাসীনদের কাছ থেকে সদ্য আবিষ্কৃত এক গান পড়ে শোনান, যাতে বলার কথাটা এই যেঃ ‘ভগলিঙ্গে হলে সংযোগ/সেই তো সকল সেরা যোগ’। তাঁকে বোঝাতে হয় যে এর জবাবী গানে মূল সত্যটা আছে। অর্থাৎ ‘গুরু-বাক্য লিঙ্গ হয় শিষ্যের যোনি কান’। তার মানে গানটা মৈথুনতত্ত্বের নয়, গুরুতত্ত্বের। যুগে যুগে এমন ভুল অনেক হয়ে চলেছে তার মধ্যে লোকধর্ম একটি। উন্নতমনস্ক উচ্চবর্ণের অনেক মানুষ ও পন্ডিত বারে বারে লোকধর্মকে অনাচারবাদী, বিকৃতরুচি ও কামসর্বস্ব বলে বুঝিয়েছেন। অথচ তাঁদের সত্য এই ভাবে ফুটেছে একটা গানেঃ

প্রেমের রসিক যেমন পর আর আপন সেতো ভাবে না!
সে প্রেম হয় যার -
তার আর কামের ব্যবহার থাকে না।।

(পৃঃ ১৯)

২. মুল্লুক হল লক্ষ্মীছাড়া আট আনা বাউলের ধাড়া
এমনই লোকের কপাল পোড়া মেলে না তাও ঢুঁড়ে।...

গ্রামের দারিদ্র্য ও বুভুক্ষার এই বাস্তবচিত্র এখনকার বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজ সচেতনতা বলে বাহবা দেয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সমাজ তাত্ত্বিকদের তারিফ কুড়োবার তাগিদে গ্রাম্য কবি এই গান লেখেননি। তাঁকে গানটি লিখতে হয় জীবনেরই তাগিদে। চিরকালই গ্রামের মানুষ তার চারপাশের পরিচিত জীবনের ও ঘটনার গান শুনতে চান।... [তা’তে] বরাবর সমকালীন বাস্তব প্ৰতিবেদন থাকে। অন্য ধরনের গানে (এমন কি বাউল জাতীয় গানেও) যে-সমাজ সমালোচনা বা সদ্যঘটিত ব্যাপারের নিখুঁত ছবি ধরা থাকে তা অনেকে লক্ষ করেন না।
(১৭১: বাংলার গৌণধর্ম সাহেবধনী ও বলাহাড়ি)

কিন্তু তার মধ্যেও যে প্রবিষ্ট হয় কামকেন্দ্রিকতা, ব্যাভিচারের চোরাটান, তাকেও চিহ্নিত করেছেনঃ
...ছিল দুইচন্দ্র ও চারচন্দ্রের সাধনা। দুইচন্দ্র মানে মলমূত্র সেবা এবং চারচন্দ্র মানে মল-মূত্র-রজ-বীর্য একত্র করে সেবা। এবং যদি কোনো দেহযোগকেন্দ্রিক তাৎপর্য থেকেও থাকে তবু এসবের মধ্যে বেশ কিছুটা বিকৃতির ঝুঁকি থাকেই। (ওই, পৃ. ৯৮)

১৯৮৯ সালে প্রকাশ পায় ‘গভীর নির্জন পথে’, গড়-পাঠকের প্রায় সম্পূর্ণ অপরিচয়ের এক বিষয়কে তিনি উপস্থাপিত করলেন পাঠকের কাছে। গবেষকদের কাছেও। শহর-গ্রামের শিষ্টসমাজের কাছে-দূরে থেকেও যে অথবা যে যে জনসমাজ স্বতন্ত্র সাধনাপদ্ধতির অনুগত-অন্তর্গত তাঁদের কথা জানা তো তেমন ছিল না তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের। তাঁর প্ৰকাশিত প্রথম বই সাহেবধনী সম্প্রদায়ঃ তাদের গান (১৯৮৪) এবং একই বর্ষে গানের লীলার সেই কিনারে। বিশেষভাবেই সংগীতবিষয়ের প্রাবন্ধিক সুধীর চ্ক্রবর্তীর পরিচয় হয়ে ওঠে লোকসংস্কৃতির গবেষক সুধীর চক্রবর্তীর অভিধায়।

আবার এই সন্ধিৎসায় তিনি এগিয়েছেন লালন সংক্রান্ত পাঠে ও সমাজতাত্ত্বিক এবং অবশ্যই সমাজ-নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর মূল্যায়নে। ব্রাত্য লোকায়ত লালন - লালন ফকিরকে চেনায় তাঁর ইতিহাসের অতল থেকে। তারই বিস্তৃততর অন্বেষার রূপ বাউল ফকির কথা - আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত গ্রন্থ। এবং এই সন্ধানের মাত্রান্তর - বাংলা দেহতত্ত্বের গান। ব্যাপ্ত এই জিজ্ঞাসাযাত্রার গতিতে, তাঁর বীক্ষা আর জিজ্ঞাসার গতিতে-দ্যুতিতে অভিজ্ঞতা আর তথ্যসংগ্রহ, অনুরাগ আর কার্যকারণের সন্ধান বহন করে লিখেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মেলা ও মহোৎসব। পরে আবার তাকে নূতন রূপ দেন - উৎসবে মেলায় ইতিহাসে। সুতরাং লোকসংস্কৃতির পরীক্ষার খাতায় তিনি হলেন - ‘‘লোকধর্মের প্রবর্তক সুধীর চক্রবর্তী’’ - মন্তব্য আপাতত স্থগিত।

সুতরাং রবীন্দ্রনাথের গান এবং তার সঙ্গে সমগুরুত্বে আলোচনা করেছেন - দ্বিজেন্দ্রলাল রায় - অতুলপ্রসাদ- রজনীকান্তর গীতিকার সত্ত্বার বিশেষত্ব। নয়ের দশকে যখন নূতন সংগীতভাষা ও সুর নিয়ে আর তার গ্রহণীয়তার তর্কবিতর্ক নিয়ে দেখা দিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়, অধুনা কবীর সুমন, নিপুণ বিশ্লেষণে সুধীর চক্রবর্তী চিনিয়েছিলেন তাঁর বিশেষত্বকেও। সংগীত-সংক্রান্ত বিষয়ের সেই প্রাবন্ধিক সুধীর চক্রবর্তীও, লোক ধর্মর গবেষণার সমান্তরালে দীপ্যমান।

মানুষ আর ঘটনার প্রসঙ্গ থেকে এরপর চলে যান অগ্রদ্বীপের মেলার বিশেষত্বে। মন্মথ অধিকারীর কথাকেই ধরে থাকেন লেখকঃ
১. ‘গৌরাঙ্গের খেলায় আমি লেখাপড়া শিখিনি।... আমার শ্রীগুরুর শ্রীমুখে শুনেছি স্বয়ং শ্রীগৌরাঙ্গ তাঁর পরিবার গোবিন্দ ঘোষকে দিয়ে ওখানে গোপীনাথ জীউ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই গোপীনাথ জিউকে ঘিরে তিন দিন মেলা বসে অগ্রদ্বীপে বারুণীর সময়ে। যাকে বলে আম-বারুণী...’
২. বেশির ভাগ মানুষের ভাষা থেকে মালুম হয় যে তারা পূর্ব বঙ্গের মানুষ। ব্যাপারটা কি? পূর্ববঙ্গের এত মানুষ এই রাতের অগ্রদ্বীপে কেন?
এ কৌতূহলের ফুঁপি থেকে আরেকটা রহস্যের জট খুলে যায়। পূর্ববঙ্গের নিম্নবর্গের বেশির ভাগ মানুষ গৌরভক্ত। দেশভাগের সময় তাদের অনেকেই পুনর্বসতির জন্য তাই বেছে নেন নবদ্বীপ আর তার আশপাশ। ...এটাও লক্ষ করা হয়নি যে অনেক জেলার জনপদে অন্যান্য মেলার নাভিশ্বাস উঠেছে... মেলা এখন শুধুই বিনোদন আর শীর্ণপ্রথা কিংবা নৈমিত্তিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অগ্রদ্বীপের রমরমাই আলাদা। (ওই, পৃঃ ৪৮-৪৯)

কারণ এখানে স্বয়ং গোপীনাথ, আম-বারুণীর একাদশীর দিন কাছা পরে ঘোষঠাকুর অর্থাৎ গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধ করেন! সুতরাং এই বিশ্বাসের প্রাণসত্তায় মানুষজন এই মেলায় এসে মনেও স্থান দেন না, কোনো ব্যাভিচারের আমোদকে।

বাউল-ফকিরদের জীবনযাত্রায় তো হিন্দু-মুসলমান বলতে গেলে অঙ্গাঙ্গি। পারস্পরিক। কিন্তু সুধীর চক্রবর্তী দেখেছেন খ্রিষ্টানদের মেলাকেও। কারণ ধর্মকে অতিক্রম করে, মেলার অঙ্গ ও উপাদানের হ্রস্বদীর্ঘ - শুধুই মানুষ। যা বলার জন্য এই কথাসূত্র - এই বীক্ষা এবং এই উপস্থাপনরীতি কিন্তু যথাযথ গবেষণা। আর সুধীর চক্রবর্তীর গবেষণা - এভাবেই গড় পাঠককে দূরে না সরিয়ে টেনে নেয় তাঁর কথকতার প্রসাদগুণের অমোঘে।

তাঁর আরেকটি পরিচয় - অন্যতম পরিচয়ও, পূর্ব পর্যায়ে অনুক্ত ছিল। তা তাঁর গবেষক-সত্তারই অপরার্ধ। সম্পাদক পরিচয়। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় খুবই দূরান্বয়ী আধুনিক ভাবনার এক বই - রবীন্দ্রনাথঃ মনন ও শিল্প । বিভিন্ন পত্রিকার অন্দরমহলেও ছিল তাঁর সম্পাদনার সুচারুতা। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি প্রকাশ করেন বার্ষিক পত্রিকা ধ্রুবপদ । একদিকে ধ্রুবপদ, সংগীতের অঙ্গ, রবীন্দ্রনাথের গানেরও অনুষঙ্গ আর তা চিরায়ত সত্তারও পরিচয়। ধ্রুবপদ সম্পাদক সুধীর চক্রবর্তীর এক অনুপম ও একমেব সৃজন। ধ্রুবপদের বারোটি সংকলন তাঁর বিষয়-ভাবনার চমৎকৃতি দুর্লভ ও অভাবনীয়। বিশেষত ‘বুদ্ধিজীবীর নোটবই’ , ‘দৃশ্যরূপ’ , ‘যৌনতা ও সংস্কৃতি’ , ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘পথের পাঁচালী-র পঞ্চাশ বছর’, ‘অন্যরকম বাঙালি’, ‘গবেষণার অন্তরমহল’ - প্রত্যেকটি সংখ্যাতেই তিনি এক সুবিস্তৃত সংযোগে বিভিন্ন ঘরানার ও কালের মানুষজনকে দিয়ে লিখিয়েছেন। এবং যাঁরা লিখেছেন, তাঁরাও যথাসাধ্য ও সাধ্যাতিক্রমী প্রয়াসে লিখেছেন, নিজস্বতাকে রেখেও, প্রায়শই সম্পাদকের দৃষ্টিকোণ ও প্রত্যাশার ধর্মে। বিশেষ করে ‘দৃশ্যরূপ’ সংখ্যাটি বাংলা চিন্তনচর্চায় অনন্য। এখানে সুধীর চক্রবর্তী মনোযোগী হলেন পত্রিকার নিজস্ব যে দৃশ্যরূপ, তার উৎকর্ষ ও নান্দনিকতায়। পৃষ্ঠার সূচনা ও শেষ - একটি বিশেষ রেক্টো-ভার্সো সমতায় মুদ্রিত। এবং পৃষ্ঠা বিন্যাসেও মূল বয়ান তার সঙ্গে উপস্থাপিত চিত্রের বিন্যাসের শৃঙ্খলা, শুধু বারংবার দর্শনীয় নয়, অনুকরণীয় এবং অননুকরণীয় শেষত। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা - এখানকার নির্বাচিত বিষয় ও তার বিভঙ্গভাবনাও লেখককে রীতিমতো এগিয়ে দিয়েছে গবেষণার গভীরে, কিন্তু তার প্রকাশরীতিতে নেই কোনোই, বিদ্যায়তনিক গবেষণার কাঠামো সর্বস্ব আয়োজন বা তার বিশুদ্ধতা। যেন গড়ে তুললেন এমন এক যৌথ পরিবার - যার সদস্যরা সকলেই গবেষক - আর তাদের সেই গবেষণার নিরন্তরে, তার অশেষে, তাঁদেরও সেই ‘পথ চলাতেই আনন্দ’!

তাঁর সম্পাদিত বইগুলিও তো সম্পাদনার আদর্শ। একদা আটের দশকের প্রথম ভানে তিনি সংযুক্ত ছিলেন শিলাদিত্য পত্রিকার সঙ্গে। অনেকেই মনে করতে পারবেন, শিলাদিত্য সেই সময় প্রজ্ঞাবান এবং সাধারণের কাছেও প্রায় অবশ্যপাঠ্য ও অতি সমাদৃত পত্রিকা। একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস, ছোটোগল্প এবং চমৎকার সমস্ত প্রবন্ধ, বিশেষ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লেখা - যেমন রাধামোহন ভট্টাচার্য বা সমরেশ বসু। কবির পান্ডুলিপি সাজিয়ে তাঁর ব্যক্তিস্বরূপকে চেনানো এবং জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত উপন্যাস ‘জলপাইহাটি’-র ধারাবাহিক প্রকাশ শিলাদিত্যকে করে তুলেছিল একই সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক ও সাহিত্যিক পত্রিকা। বলা ভালো বাণিজ্য সফল সাহিত্যিক পত্রিকা।

পরবর্তীকালে যে বইগুলি সম্পাদনা করেছেন - তা-ও, বলাবাহুল্য - ‘‘অতিশয় মূল্যাবান’’ - বিনাভাষ্যে। বাংলার বাউল ফকির, জনপদাবলি, যৌনতা ও সংস্কৃতি, এবং রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবার্ষিকীতে তাঁর সম্পাদনার magnam opus রবীন্দ্রনাথঃ বাকপতি ও বিশ্বমনা -র দুই খন্ড। এবং এখানেও সেই সম্পাদক সত্তা, যিনি বার করে আনেন অভাবনীয় বিষয়, গবেষণায় এগিয়ে দেন, প্ররোচিতই করেন লেখকদের।

প্রাণবন্তের স্বরূপ ও সংরূপ

সুধীর চক্রবর্তী জীবনকে দেখেছেন তৃপ্তির দৃষ্টিকোণে। মনে হতে পারে, নিরাপদ জীবন-তৃপ্তি তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা কারো জীবনেই সত্য নয় - তাঁরও না। কিন্তু তা নিয়ে কোনো অভিযোগ না করে তিনি দেখেছেন জীবনের নানান আয়োজনকে। দীর্ঘ ছিয়াশি বছরের জীবন - সুস্থ ও প্রত্যয়ী। সম্ভবত এ বিষয়ে তাঁর অন্যতম আদর্শ ছিলেন দার্শনিক কান্ট্। মাঝেমাঝেই কথা প্রসঙ্গে বলেছেন কান্টের আপাতদৃষ্টিতে ঘড়ির কাটায় গাঁথা জীবনের কথা। আরো কিছু মানুষেরও। তাঁর লেখা যেমন, তেমনি তাঁর কথকতায়, প্রত্যক্ষ আলাপেও ছিল একই স্বচ্ছন্দ উপভোগ্যতা!

আপামর, সকলের সঙ্গেই তাঁর মেলামেশা সম্ভাষণ আলাপন ছিল এই সূত্রেই সাবলীল। যে-কোনো মানুষকেই দেখতেন তাঁর নিখুঁত ও নিপুন জরিপে। এই দেখার যে নিষ্ঠা, সেখান থেকেই তো তাঁর আখ্যান-ধারা। একদিকে গানের অন্ধিসন্ধি - যেমন রসোপভোগে এবং তত্ত্বে, তেমনই তার বহিরঙ্গের বিবিধ বিন্যাসও যে নজর করতেন যেমন, তার পরিচয় আছে তাঁর ‘গানের চেহারা’ বলে একটি লেখায়। যেখানে নয়ের দশক থেকেই মুখ্যত গায়ক-বাদকদের বেশবাসের পরিবর্তন আর শ্রোতৃবর্গের মধ্যে তার উত্তাপ-অনুরাগকে চিনিয়েছিলেন, সংবাদ প্রতিদিন-এর ‘রোববার’ নামক ক্রোড়-পত্রিকায় ধারাবাহিক লিখলেন ‘দেখা না-দেখায় মেলা’ আর তারও পরে দেশ-এ সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী আরেক ধারাবাহিক ‘এলেম নতুন দেশে’।

কিন্তু এই আখ্যানধারার কথা না বললে, তাঁর কথার অসস্পূর্ণতার আরো কয়েক পরত চড়ে। লোকধর্মের সূত্রে নিম্নবর্গের মানুষের কথা যেমন বিশদ, তেমনই বিশদ-মধ্যবর্গের অবস্থানের কথাও। যেখানে গত-অন্তত অর্ধশতকের সামাজিক পরিবর্তনকে চোখে আঙুল দিয়ে চেনান- গল্পেরই আকারে, কিন্তু তার সামাজিক বিশ্লেষণের কার্যকারণ-ও স্পষ্ট। বিশেষ করে গড় মধ্যবিত্ত মানুষ, শিক্ষক সমাজ, বিভিন্ন ‘শ্বেতাম্বর’ জীবিকার কয়েক ধাপের মানুষের আশা-আহ্লাদ-যন্ত্রণা-সংকটের একটি রূপ যেমন পঞ্চগ্রামের কড়চা, তেমনই অপর রূপ নির্যাস। একপাশে মাটি পৃথিবীর টানে আবার শিক্ষকসমাজকে কেন্দ্রে রেখে লেখাপড়া করে যে।

তাঁর লেখার ভেতর ঢুকলেই বোঝা যায়, তাঁর পঠনপাঠনের ব্যাপ্তি তো বটেই, তার সঙ্গে বিষয়ের দিকে, তাঁর নিবিষ্টতার সংরাগ।

তাঁর নিত্যদিনের জীবনযাত্রাও ছিল, সময়চিহ্নিত। বলতেন, তিনি ওঠেন ভোর পাঁচটায়। তারপর লিখতে বসেন। পাঁচটা থেকে সাতটা লেখা। তাঁর সাংসারিক দায়িত্ব পালনেও তিনিই একক। বাজার দোকানপাট করবার সময়ে দু-একটি পরিচিত দোকানে পাঁচ-দশ-পনেরো মিনিটের লঘুগুরু আড্ডা। বাড়ি ফিরে আবার কিছুক্ষণ লেখা। অথবা পড়াও। বিকেলে আবাল্য বান্ধব, প্রয়াত সত্যেন্দ্র মন্ডলের স্টুডিও আলেখ্য-র ঘরে বা তাঁর বারান্দায় আড্ডার আরেকপ্রস্থ। এই সত্যেন্দ্র মন্ডল তাঁর লেখাপত্রেও উপস্থিত। বিশেষ করে অমৃত-যন্ত্রণা-র পুনর্মুদ্রণ পর্বে, তিনি লেখেন, তাঁদের সেই খাতাটি এবং আনুষঙ্গিক নথি যত্নের সঙ্গে রক্ষা করেছিলেন আলোকচিত্রী সত্যেন্দ্র মন্ডল। খুবই আঘাত পেয়েছিলেন ঘনিষ্টতর, তাঁর কথায় শাস্ত্রীয় ‘‘অত্যাগসহন’’ মিত্র শিশিরকুমার দাশের মৃত্যুতে। সত্যেন্দ্র মন্ডলের মৃত্যুও তাঁর কাছে যন্ত্রণার আরেক প্রান্ত। তবু এই যন্ত্রণাকেও গ্রহণ করেছিলেন, সহ্য-ই করেছিলেন উদ্ধৃত্ত বাক্যের সংবরণে। জানতেন, তাঁর যে ভাবনাচিন্তা তাঁকে করতে হবে, করে চলতে হবে। স্টেট ইউনিভার্সিটির সূচনা পর্ব থেকে পালন করেছেন উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ এবং কর্মকুশল দায়িত্ব। বিশেষ আমন্ত্রণে অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগেও। ইনিস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ্ কলকাতা-র প্রতিষ্ঠা পর্ব থেকেই সংযুক্ত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। জীবনের, যাপনের আনন্দে যে লেখালিখি-সম্পাদনা-গান-অধ্যাপনাকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন তার স্বাদ ও আনন্দ পুর্ণমাত্রায় যে ছিল, তার পরিচয় শোনা যায়, কৃষ্ণনগর ও চন্দননগর রাষ্ট্রীয় মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সশ্রদ্ধ বিষ্ময়বাচনে। ১৯৯৩ সালে শিরোমণি পুরস্কার, ২০০১-এ আনন্দ, ২০০৪-এ সাহিত্য অকাদেমি, অবশ্যই আনন্দিত করেছে তাঁকে - তার স্বীকারও ছিল তাঁর সহজ উচ্চারণে। সব থেকে বেশি আনন্দিত হয়েছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত বিশেষ অধ্যাপকের সম্মানে। এই লেখার পরিসর তাও ছুঁতে পারলো না তাঁর আরও বহুলবৃত্ত বহুস্বরকে। নিজস্ব বাসস্থান কৃষ্ণনগরেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। এবং সর্বত্রই যথাসময়ে। তাঁর বক্তৃতাও ছিল, একই সঙ্গে স্বচ্ছন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত - তা আরো উপভোগ্য হয়ে উঠতো বক্তৃতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক গানে। একটি সভায় যখন শ্রোতারা বিশৃঙ্খল এবং মহিলারা পারস্পরিক আলাপনে বেশ উচ্চকন্ঠ তিনি বললেন যে এ নিয়ে তাঁর বিস্ময় নেই। তা স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথই লিখেছেন - এক দন্ডে খুলি গেল রমণীর মুখ! আর এই উচ্চারণের পরেই সভাঘরে আর বিশৃঙ্খলা ঘটেনি কোনোই।

অহেতুক অতিবিনয় তাঁর ছিল না। আদ্যন্ত স্পষ্টবাদী। যা কখনো কখনো অনেকেই মনে করেছেন তাঁর কাঠিন্য। কিন্তু আদতে তা নয়, তা অধিকারের প্রত্যয়।

আর যে প্রসঙ্গ স্থগিত রাখা হয়েছিল, সেখানে ফিরবার আগে একবার দেখা যেতে পারে, তাঁরই কথায় - তাঁর ব্যথিত আত্মদর্শন। ইংলন্ড-এর স্প্যাসটিক সোসাইটির কাজে এদেশে আসা ফরাসি তরুণী মিশেল, তাঁকে জানান - জীবিকা ত্যাগ করে এলাকার জড়বুদ্ধি মানুষজনের জন্য সেবাসত্র গড়ে তোলার দরকার কতটা তার কথাঃ
স্কুল কলেজে পড়াবার লোকের অভাব হবে না। তোমাদের মতো দুঃখের অভিজ্ঞতা পাওয়া অথচ শিক্ষিত মানুষের অভাব।...

আমি অধোবদনে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নীরবে বার হয়ে এলাম। ...কন্যার ব্যাধি আমাকে সৌখিন দুঃখবিলাসী করে দিয়েছে। আমি স্বার্থপরের মতো তার হাত থেকে পরিত্রাণ চাই, তাদের মতো ব্যাধিগ্রস্তদের সার্বিক ত্রাণ চাই না। আমার উচ্চশিক্ষা, বুদ্ধি, জ্ঞান আর যশোলিপ্সা আমাকে এ শিক্ষা দেয়নি যে আত্মদানই সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
(‘‘শিক্ষা-অশিক্ষা’’/‘সদর মফম্বল’, আখ্যানের খোঁজে, পৃ. ১৫৪)

হয়তো এরপরে কিছু বলবার থাকে না। কিন্তু সংকটকে অতিক্রম করে প্রসন্নতাই সুধীর চক্রবর্তীর যথাযথ শিক্ষা। যে কোনো আলাপনে তিনি শেষপাতে প্রায়শ একটি চুটকি গল্প পরিবেশন করে উঠতেন। একদিন বাজারের পথে তাঁর এক পরিচিত জনকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ দ্যাখো তো, আমার মাথার চারপাশে কোনো হ্যালো, জ্যোতির্বলয় দেখতে পাচ্ছো? বিমূঢ় শ্রোতাকে বিমূঢ়তর করে বললেনঃ লোকসংস্কৃতির পরীক্ষার খাতায় লেখা হচ্ছে, লোকধর্মের একজন প্রবর্তক সুধীর চক্রবর্তী!

হ্যাঁ আমরা, তাঁর অনুরাগীরা, তাঁর পাঠকরা মানুষটির উপস্থিতিতেই সেই জ্যোতির্বলয় প্রত্যক্ষ করেছি। করছি। আর আরো বেশি করেই তা করবো। উজ্জ্বলতর হবে সেই জ্যোতির্বলয়।