আরেক রকম ● নবম বর্ষ প্রথম সংখ্যা ● ১-১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ● ১৬-৩০ পৌষ, ১৪২৭

সম্পাদকীয়

লড়াই জারি রয়েছে


প্রকৃতি প্রতিকূল। হাওয়া বয় শনশন। কুয়াশা আবৃত চরাচর। কখনও কখনও আচমকা বৃষ্টি। তাপমাত্রা কমতে কমতে কমবেশি তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই পরিস্থিতিতেও তাঁরা লক্ষ্যে অবিচল। রাষ্ট্রের ঔদ্ধত্যকে পরোয়া না করে বরং চোখে চোখ রেখে তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে কার্যত অস্বীকার করে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে চলছে তাঁদের ধারাবাহিক অবস্থান আন্দোলন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি থাকবে বলে তাঁরা ঘোষণা করেছেন।

এ এক অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ অবস্থান আন্দোলন। বছরের শেষ দিনগুলিতে উত্তর ভারতের তীব্র শীতল আবহাওয়ায় উন্মুক্ত আকাশের নিচে রাজপথে চলছে তাঁদের জীবনযাপন। বিভিন্ন বয়সের কৃষক দলে দলে বসে আছেন এদিকসেদিক। গল্প করছেন। গান গাইছেন। কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত যুবক। ইন্টারনেট মারফত ছড়িয়ে পড়ছে প্রতি মুহুর্তের তাজা খবর। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চলছে কয়েকজনের আলাপচারিতা। পাশেই রয়েছে অস্থায়ী চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থা। কারো ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা হচ্ছে। কেউ অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কথা চিকিৎসককে জানাচ্ছেন। এত কিছুর পরেও ঠান্ডার তীব্রতায় মারা গেছেন অন্তত চল্লিশ জন। পাশেই একদল মানুষ রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত। তিন বেলা সকলের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে তো! যে কোনো সাধারণ ভারতীয় গ্রামের দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রক্রিয়ার মতো গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির সিংঘু সীমান্তে এটাই কৃষকদের সাধারণ জীবনযাত্রা। এই সড়ক কিন্তু ভারতের অন্যতম ব্যস্ত জাতীয় সড়ক (গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড)। দিল্লির সঙ্গে হরিয়ানা-পাঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরের যোগসূত্র এই সড়ক। যে রাস্তাতে পুলিশ কোনও গাড়িকে কয়েক মিনিটের বেশি দাঁড়াতে দেয় না, সেই সড়কই এখন কৃষকদের অস্থায়ী বাসস্থান। এখানেই পুরোদস্তুর চালু রয়েছে তাঁদের নিত্যকার পরিচিত জীবনযাত্রা।

শুধু সিংঘু সীমান্ত নয়। আরও যে পাঁচটি জাতীয় সড়ক দিল্লিকে অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, সেগুলোরও একই অবস্থা। সিংঘু সীমান্ত ছাড়া কৃষকরা বসে আছেন টিকরি সীমান্তে। যে সীমান্ত দিল্লিকে রোহ্টক এবং পাতিয়ালার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। তাঁরা আছেন দিল্লি-মীরাট সংযোগরক্ষাকারী গাজীপুর সীমান্তে। দিল্লি-মথুরা সংযোগরক্ষাকারী পালেওয়াল সীমান্তেও তাঁদের অবস্থান চলছে। দিল্লি-জয়পুর জাতীয় সড়কের শাহজাহানপুর সীমান্তেও কৃষকরা অবস্থান শুরু করেছেন।

কৃষকেরা কিন্তু স্বেচ্ছায় দিল্লি অবরোধ করেননি বা জাতীয় সড়কে ধর্নায় বসেননি। তাঁদের এইভাবে খোলা আকাশের নিচে শীতে রাত কাটাতে বাধ্য করেছে রাষ্ট্র। কৃষকেরা রাজধানীতে আসছিলেন দেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে। নতুন কৃষি আইন তাঁদের জীবন এবং জীবিকার জন্য কেন উপযোগী নয় তা সরকারকে জানাতে তাঁরা আসছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে রাস্তায় অবরোধের ব্যবস্থা করে, প্রয়োজনে জাতীয় সড়ক গভীরভাবে কেটে ফেলে (আইন অনুযায়ী যা দণ্ডনীয় অপরাধ) কৃষকের যাত্রা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। কৃষক মিছিলের গতি স্তব্ধ করতে ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। জলকামান থেকে জল ছড়িয়ে কৃষকের পথ চলা বন্ধ করার চেষ্টাও হয়েছে। হাজারে হাজারে কৃষক পিছিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রাম-ঘর ছেড়ে ট্রাক-ট্রাক্টর নিয়ে রাজধানীর দিকে রওনা হননি। তাঁদের মৌলিক দাবি নতুন কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। সময়ের ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত হয়েছে আরও দুটি বিষয়। এবং এতকিছুর পরেও প্রতিটি কৃষকের মনে আছে প্রত্যয়।

জুন মাসে প্রস্তাবিত নতুন কৃষি আইন নিয়ে অধ্যাদেশ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশের কৃষিজীবী মানুষ প্রতিবাদ শুরু করেন। রাষ্ট্র বধির। কিন্তু লক্ষ্যে স্থির। সংক্রমণের আবহে অবরোধের আড়ালে জবরদস্তি ভাবে সংসদীয় রীতিনীতি উপেক্ষা করে সেই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে দেওয়া হলো। কৃষকের ধারাবাহিক প্রতিবাদ অবজ্ঞা করতে দ্বিধা নেই। নতুন কৃষি আইন বাতিল করার দাবিতে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটও হয়ে গেল। রাষ্ট্র নির্বিকার। মন্দির, গোরক্ষা, নতুন শিক্ষা নীতি ইত্যাদি পাচ্ছে অগ্রাধিকার।

‘‘ঈশ্বর বললেন, ‘আলো হোক!’ আর সঙ্গে সঙ্গেই আলো হলো’’ (ওল্ড টেস্টামেন্ট ১: ৩)। অনেকটা যেন সেইভাবে উচ্চারিত হলো, ‘এই আইন কৃষকের স্বার্থরক্ষা করবে।’ তৎক্ষণাৎ ভক্তবৃন্দ শুরু করলেন বৃন্দগান। নতুন আইনে কৃষকের কী কী ভালো হবে বলার পরিবর্তে প্রচারিত হতে থাকলো যে গত সত্তর বছরে দেশের কৃষকের কোনো উন্নতি হয়নি; বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সংক্রমণের আবহে সরকারকে বিব্রত করার জন্য এই আন্দোলন সংগঠিত করেছে। আন্দোলনের উপর খলিস্তানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী তকমা লাগিয়েও কাজ না হওয়ায় উচ্চকন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকলো, সকলের সঙ্গে বিস্তর আলোচনার পর এই আইন প্রণীত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী সমাজমাধ্যমে আলোচনার সময় ২৮শে ডিসেম্বর বললেন যে যথেষ্ট আলোচনা করেই এই আইন পাশ হয়েছে। সেখানে তিনি বললেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে দেশে। অনেক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেছে।’’ ডিসেম্বরের শুরুতে আইনমন্ত্রীও একই দাবি করেছিলেন। তিনি আরও নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, ‘‘কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার জন্য ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ওয়েবিনার এবং ট্রেনিংয়ের আয়োজন হয়েছিল। ৯২ লক্ষেরও বেশি কৃষক সেখানে অংশ নিয়েছিলেন।’’ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও দাবি করেন আইনমন্ত্রী। বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী তথ্য সামনে আসার পর একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ১৫ই ডিসেম্বর আরটিআই-এর মাধ্যমে, তিনটি কৃষি বিল আইন হওয়ার আগে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যে সব আলোচনা হয়েছে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে আবেদন করে। সেই সব আলোচনার বিস্তারিত তথ্যও জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু ২২শে ডিসেম্বর এই আরটিআই-এর উত্তরে মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেছেন, ‘‘এই আলোচনা নিয়ে কোনও তথ্য রাখা হয়নি।’’ অর্থাৎ মুখে দাবি করলেও সরকার কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা সম্পর্কিত কোনও তথ্যই দিতে পারল না। নিজের মুখরক্ষায় অনবরত হয়ে চলেছে মিথ্যাচার।

কৃষকের সঙ্গে আলোচনায় না থাকলেও বাছাই করা কয়েকজনের সঙ্গে ভার্চুয়াল কথাবার্তায় প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি নেই। গুজরাটের কচ্ছ জেলার উত্তর প্রান্তের একজনকে তাঁর ভার্চুয়াল আলোচনায় দেখা গেছে। কচ্ছের মরুভূমিতে তিনি এমন এক কৃষক খুঁজে পেয়েছেন যিনি বাস্তবে লাখপত এলাকার এক গেরুয়া ভক্ত। লাখপত এলাকার ধারেকাছে কোনো কৃষিজমি নেই। মরুভূমির ধু-ধু প্রান্তরে অবস্থিত লাখপত কয়েকটি কারণে পরিচিত। লাখপত প্রাচীন আমলের বন্দর। বহু পুরোনো একটি দুর্গ এখানে অবস্থিত। গুরু নানক এখানে বেশ কিছুদিন বসবাস করেছিলেন বলে লাখপতে একটি গুরুদোয়ারা আছে। আর এখানকার সমুদ্রতটে দাঁড়ালে সমুদ্রের ওপারে পাকিস্তানের তটরেখা দেখা যায়। তিনি সেই মরুপ্রান্তরে কৃষক খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু দিল্লির দোরগোড়ায় অবস্থানরত লক্ষ লক্ষ কৃষকের সামনে উপস্থিত হয়ে নতুন আইনের বৈশিষ্ট্য বোঝাতে রাজি নন।

কৃষি মন্ত্রী এবং বাণিজ্য মন্ত্রী বার কয়েক কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। অমিত পরাক্রমশালী বলে পরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একবার আলোচনায় বসেছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কৃষকদের আইন বাতিল করার দাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র আইন বহাল রাখতে আগ্রহী। অর্থাৎ একটা হ্যাঁ আর একটি না সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছে। অথবা একই জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কৃষকদের পরিষ্কার বক্তব্য নির্দিষ্ট চারটি বিষয়ে ফয়সালা চাই। প্রথমটি হল, তিন কৃষি আইন রদ করতে হবে। অর্থাৎ, আইন যে ফেরাতেই হবে, সেই দাবি থেকে এক পা-ও পিছু হটার প্রশ্ন নেই। কী ভাবে সেই কাজ করা হবে, তা নিয়ে সরকার চিন্তা করুক।

বাকি তিনটি বিষয় হল, ফসলের ন্যূনতম দাম বা এমএসপি-র আইনি গ্যারান্টি, দিল্লির দূষণ রুখতে নাড়া পোড়ানোর জন্য কড়া শাস্তির আইনে সংশোধন এবং বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল প্রত্যাহার।

কৃষকরা দেশবাসীর সামনে শাসকের আসল মুখটা উন্মোচিত করতে চাইছেন - যে সরকার বাজার ও তার কর্পোরেট প্রভুদের আজ্ঞা মেনে দেশের বিপুল সংখ্যক কৃষিজীবী ও সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলতে দ্বিধাবোধ করে না। গণতন্ত্রে, সাধারণ মানুষের অধিকার আছে তাদের সমস্যা ও দাবিদাওয়ার কথা নির্বাচিত সরকারের কাছে তুলে ধরার, এবং সরকারের দায়িত্ব সেইসব অভাব-অভিযোগের কথা শোনা৷ কয়েক লক্ষ কৃষক দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কোভিড-১৯ জনিত সংক্রমণ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবহনের জন্য অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও সেখানে পৌঁছতে পারেননি, কিন্তু সারা দেশের কোটি কোটি কৃষক নিজের নিজের রাজ্যে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

কৃষকদের এই শান্তিপূর্ণ অবস্থান গত কয়েক দশকের বৃহত্তম গণ-আন্দোলন। লক্ষ-লক্ষ কৃষক তাঁদের জীবন-জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে সামিল হয়েছেন। সমস্তরকম প্রতিকূলতা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাঁরা তাঁদের প্রতিজ্ঞায় অটল, এবং লক্ষ্যে অবিচল। প্রবল শীতের মধ্যেও তাঁদের দৃঢ় অবস্থান, দৃপ্ত পদক্ষেপে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়া, পূর্ণ উদ্যমে স্লোগান, এবং সরকারের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস ইতিমধ্যেই সারা দেশের মানুষকে আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু আরও বেশি অনুপ্রেরণার বিষয় কৃষকদের অসীম ধৈর্য ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। দেশের যুবসমাজ কৃষি ও জমির সমস্যার বিষয়ে পারতপক্ষে আগ্রহী নয় - এই প্রচলিত মিথ ভেঙে বিশাল সংখ্যক যুবকরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন এবং যথেষ্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, তাঁরা যথেষ্টই দায়িত্ববান, দেশের কৃষিব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত ওয়াকিবহাল, এবং কৃষকদের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আরও যে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ - প্রতিবাদকারীরা সরকারি নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের ক্রোধ ও উষ্মাপ্রকাশে সোচ্চার হলেও, পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক প্ররোচনা সত্ত্বেও একবারের জন্যও হিংসার আশ্রয় নেননি। তাঁদের লড়াই প্রতিদিন আরও গতিসঞ্চয় করছে, শক্তিশালী হয়ে উঠছে, প্রতিদিনই আরও কৃষক আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র থেকে প্রায় তেরোশো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হাজার-হাজার কৃষক হরিয়ানার সীমানায় এসে পৌঁছেছেন। দিল্লির আশেপাশের প্রায় শ’খানেক গ্রামের মানুষ কৃষকদের সহায়তায় যেমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতেই আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে। অবস্থানরত কৃষকদের জন্য শাকসবজি, দুধ, আটা, জ্বালানি কাঠ/গ্যাস, গরম জামাকাপড় সমেত সবরকম প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। এরই পাশাপাশি, ছাত্র-যুব-মহিলা-চাকুরিজীবী-কারিগর-ব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবী-বিজ্ঞানী-ডাক্তার-উকিল-আইনজীবী সমেত সমাজের সমস্ত অংশের মানুষ কৃষকদের প্রতি তাঁদের অকুণ্ঠ সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা অনেকগুলি রাজনৈতিক দলের কোনো যুক্ত মঞ্চ এই আন্দোলনের নেতৃত্বে নেই। শুধুমাত্র পঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষক এই আন্দোলনের শরিক এমন প্রচারও ধোপে টেকেনি। কৃষকদের অসংখ্য সংগঠন এই শান্তিপূর্ণ অবস্থান আন্দোলনের শরিক। তবে সকলেই দাবি আদায় করার জন্য দাঁতে দাঁত চেপে সংঘবদ্ধ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র অবিশ্যি সমস্যার সমাধানে আগ্রহী নয়। সম্ভবত কোনো এক আপাত অদৃশ্য শক্তির কাছে গচ্ছিত রয়েছে সরকারের দায়বদ্ধতা। কাজেই কৃষক নয়, শ্রমিক নয়, দেশের মানুষ নয় প্রভুর সেবায় নিবেদিত রাষ্ট্র নিজের অবস্থান পরিবর্তনে অক্ষম। ফলে, বর্ষশেষের শেষ বৈঠকে সেই একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, পরবর্তী বৈঠকের দিনক্ষণ। তবে এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে দিল্লির দূষণ কমাতে রাজধানী ও সংলগ্ন রাজ্যে নাড়া পোড়ানোর দায়ে ৫ বছর পর্যন্ত জেল ও ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার ব্যবস্থা করে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল, কৃষকদের তার আওতার বাইরে রাখা হবে। এবং বিদ্যুৎ আইনে প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলের শর্ত তুলে নিয়ে, আগে সেচের জন্য যে-ভাবে বিদ্যুতে ভর্তুকি মিলত, সেই ভাবেই ভর্তুকি দেওয়া হবে। আদতে সরকারের প্রস্তাব ছিল, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা পুরো মাসুলই নেবে। রাজ্য চাইলে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি দিতে পারে।

চারটি দাবির মধ্যে অন্তত দু’টি বিষয়ে সরকার রাজি হওয়ায়, ৩১ ডিসেম্বর দিল্লির সীমানায় রিং রোডে যে ট্রাক্টর মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। চলমান কৃষক আন্দোলনের সামান্য সাফল্য বুঝিয়ে দিল সঙ্ঘবদ্ধ গণ-আলোড়ন স্বৈরাচারী ঔদ্ধত্যকে পর্যুদস্ত করতে সক্ষম।

কৃষি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কৃষক আন্দোলনের ময়দান ছেড়ে চলে যেতে রাজি নন। অর্থাৎ ২০২০-এ লড়াই শেষ হল না। বাতিল বনাম বহাল লড়াই জারি রেখেই শুরু হতে চলেছে নতুন বছর ২০২১।