আরেক রকম ● নবম বর্ষ সপ্তদশ সংখ্যা ● ১-১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ● ১৬-৩১ ভাদ্র, ১৪২৮
প্রবন্ধ
বহুরূপীর বাহান্ন রূপ
সৃজা মণ্ডল
‘একদিন চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে ঠিক দুপুরবেলা একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল। একটা উন্মাদ পাগল; তার মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছে, চোখ দুটো টকটকে লাল। তার কোমরে একটা ছেঁড়া কম্বল জড়ানো, গলায় টিনের কৌটার একটা মালা। পাগলটা একটা থান ইট হাতে তুলে নিয়ে বাসের উপরে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। চেঁচিয়ে উঠছে যাত্রীরা, দুটো একটা পয়সা ফেলেও দিচ্ছে। একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ ধমক দেয়। খুব হয়েছে হরি, এই বার সরে পড়। অন্যদিকে যাও’। সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের চরিত্র ‘হরিদা’ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য সৃষ্টি। হরিদাকে দেখে ‘বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে, কেউ বা বিরক্ত হয়; কেউ আবার বেশ বিস্মিত। সত্যিই, খুব চমৎকার পাগল সাজতে পেরেছে তো লোকটা’। এইভাবেই ‘কখনও ভয়, কখনও আতঙ্ক, কখনও কৌতুক, কখনও বিস্ময় উদ্রেককারী বিবিধ সাজে সজ্জিত হয়ে মানুষকে বিচিত্র রসের আস্বাদ দিয়ে শ্রমের বিনিময়ে’ বহুরূপীদের দিন গুজরান হত।
বহুরূপের আড়ালে বহুরূপীরা দরিদ্র, শ্রমজীবী লোকশিল্পী। থিয়েটার বা যাত্রাপালার মঞ্চ নয়, মেঠো পথ, গৃহস্থের বাড়ি - এগুলোই তাঁদের অভিনয়ের মঞ্চ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, ‘চারিপাশের চলমান যে জীবনস্রোত তাতেই অবগাহন করে লেখক তাকেই আপনার রচনার উপজীব্য বিষয় করেন’। তাই বহু কথাসাহিত্যিকের লেখনীতে উঠে আসে বহুরূপীর জীবন-দর্শন-রোজনামচার ছবি।
বহুরূপী শিল্পের প্রাচীনত্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি প্রাচীন ভারতের নট শ্রেণিরই একটি শাখা কীভাবে বহুরূপী বৃত্তিতে ক্রমশ উৎসাহী হয়ে পড়ল। তার সুন্দর ব্যাখ্যাও আমরা পাই ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সত্রাজিৎ গোস্বামীর ‘বাংলার বহুরূপী প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে - ‘সামাজিক সম্মান ও সহানুভূতি লাভের জন্য প্রথমদিকে তারা (নট) গ্রহণ করত কাপালিক, ব্রাহ্মণ ভিক্ষু বা শিবের ছদ্মবেশ। কিন্তু এই ভেকধারী ভবঘুরেরা লোকসমাজে বিশেষ মনোরঞ্জনকারী হিসেবে স্বীকৃত হয়ে গেলে তারা শুধু স্ব-পরিচয় গোপন করে অন্নসংস্থানের উদ্দেশ্যেই নয় (যেমন দেখেছি কুদ্দাল জাতক বা চিত্র-সম্ভূত জাতকে), লোকসাধারণকে স্থূল মনোরঞ্জন দানের মানসেই এবং সেই সূত্রে অর্থ তথা অন্নসংস্থানের জন্যই নানা রূপ গ্রহণ করত। একটি দুটি রূপের আশ্রয় ছেড়ে তারা ক্রমশই হয়ে উঠেছিল বহুরূপাশ্রয়ী, বহুরূপী’। যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত বহুরূপী প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘...এর ইতিহাস অতি প্রাচীন। যুগে যুগে রাষ্ট্র চেতনার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অথবা বহু রাজশক্তির উত্থান পতনে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বহুরূপীর নানা পরিচয় পাই। এমনকি মুসলমান শাসনকালেও বহুরূপীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে পুরাণ, উপপুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থেরও নাম করা যেতে পারে’।
১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে H. H. Risley তাঁর ‘Tribes and Castes of Bengal’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘Bahurupia, a mimic, an actor, a person assuming various characters and disguises. Bahurupias are believed to have been originally low-caste Hindus, who on their conversion to Islam affected to trace their descent from Umar-i-yar, the court jester of Naushirwan’. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Folk and Tribal Cultural Centre, Department of Information and Cultural Affairs-e Folk Artists of West Bengal, Directory-তে বহুরূপী সম্পর্কে বলা হয়েছে - ‘It is completely secular in nature and had arisen from the hunger of the general low caste, poverty stricken backward classes of agrarian society’.
বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডক্টর মহাদেব প্রসাদ মহাশয় জানিয়েছেন যে, ‘উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, পঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলে এদের বহুরুপিয়া বলে’। এছাড়া তিব্বত, ত্রিপুরা, ব্রাহ্মণবেড়িয়া, চাঁদপুর, ঢাকাতেও বহুরূপী দেখা যেত। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর ও ইলামবাজারে বহুরূপীরা বিচ্ছিন্নভাবে, মূল জনবসতি থেকে কিছুটা দূরে দলবদ্ধভাবে বসতি গড়েছে। এছাড়াও বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া ও হুগলী জেলায় বহুরূপীর দেখা মেলে। বহুরূপী কোন জাতিগত নাম নয়, এটি একটি বৃত্তিনাম। জাতিগত ভাবে বহুরূপীরা ব্যাধ বা বেদিয়া জনগোষ্ঠীর। স্থানীয় ভাবে আখড়া-বিষ্ণুপুর অঞ্চলে বহুরূপীরা ‘পাখমারা’ নামেও পরিচিত। তবে অনেক বহুরূপী আছেন যারা সদগোপ, কৈবর্ত, নমঃশূদ্র এমনকি ডোম উপজাতির। যেমন- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মতিলাল’ জাতিতে হাড়ি, বাড়ি ডোমপাড়ায়। আবার সমরেশ বসু-র ‘সুচাঁদ বহুরূপী’র বাস পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার বিলডিহি গ্রামের প্রান্তসীমায় এক উঁচু টিলার জমিতে বৈরাগীর ভিটেতে। জাতিতে নমঃশূদ্র, পিতৃপরিচয়হীন।
তফশিলি জনজাতিভুক্ত বহুরূপীরা অতীতে নিজেদের পদবিতে ‘ব্যাধ’ লিখতেন। এখন কয়েক পুরুষ হল পদবি হিসেবে ‘চৌধুরী’ লিখছেন; তবে, বন্ধনীর মধ্যে ‘ব্যাধ’ লিখে তাঁদের সেই ট্র্যাডিশন আজও বজায় রেখে চলেছেন। ‘ব্যাধ’-দের এই ‘চৌধুরী’ পদবি সম্ভবত নবাব বাদশাহদের আমল থেকে। এঁরা মহাভারতের জরাসন্ধ ব্যাধের বংশধর বলেই নিজেদের দাবি করেন। এঁদের আদি নিবাস গুজরাত। ভাড়াটে পদাতিক সৈন্য হিসাবে কোনও এক নবাব-বাদশাহর আমলে তাঁদের এখানে আনা হয়। নবাবি আমলের শেষে তীর-ধনুকে যুদ্ধের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসে। কিন্তু, এই ব্যাধেদের অস্তিত্ব জায়মান এই বাংলার মাটিতে। তবে বহুরূপীদের পদবি ভিন্ন ভিন্ন। আখড়া-বিষ্ণুপুরের বহুরূপীদের পদবী ‘রায়’, মুর্শিদাবাদের বাজার পাড়ায় ‘রাই’, বীরভূম জেলার শীতলগ্রামে ‘বাজিকর’। আবার একই জেলার বিষয়পুর, নাওতারায় এদের পদবি ‘চৌধুরী’। আগে বহুরূপীরা অনেকেই তাবিজ-খুপি, জড়িবুটি বিক্রির পাশাপাশি ভালুক-বাঁদর-ধনেশপাখি নিয়ে খেলা দেখিয়েছেন। বংশধারার এই নেশায় বাঁচার তাগিদে কেউ যেমন পাখি শিকার করছেন, তেমনই কেউ কেউ বহুরূপী সেজে দুটো চাল-কলাই-পয়সার জন্য হন্যে হয়ে লোকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সত্রাজিৎ গোস্বামী দেখিয়েছেন, বহুরূপীদের ঘর ‘আসলে মাটি অথবা দরমার দেওয়ালে ঘেরা একমুঠো অন্ধকার। সেই অন্ধকারের এককোণে ছোটো টিনের তোরঙ্গে বহুরূপীর সাজ। ঘরের দেওয়ালে অথবা চালের বাতায় ঝুলছে টিনের তৈরী রাক্ষসের বা বাঘ-সিংহের মুখোশ। ছোট কুলুঙ্গিতে ফুটপাথ বা মনোহারীর দোকান থেকে কেনা, সস্তা ফ্রেমে বাঁধানো কোনো একটা ঠাকুর দেবতার ছবি, দাওয়ায় বা উঠোনে পাতা উনান, রান্না-বান্নার অতি সামান্য ব্যবস্থা’। তবে এখন মাটির বা দরমার দেওয়ালের পরিবর্তে পাকা দেওয়াল হয়েছে। অবশ্য বেশিরভাগই টালির ছাউনি।
বহুরূপীদের দারিদ্রের ছবি ফুটে ওঠে সাহিত্যের চৌহদ্দিতেও। বাংলার দরিদ্র বহুরূপীদের মত সমরেশ বসুর সুচাঁদও প্রায় একই রকম উপকরণ দিয়ে নানা রূপ ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে - ‘যে পরচুলা দিয়ে মা কালী সাজতে হয়, সেই চুলেই আবার নাগরী ঠাটেশ্বরী সাজতে হয়’। দিন আনা দিন খাওয়া বহুরূপীর আর্থিক বর্ণনার ক্ষেত্রেও লেখক যথাযথ - ‘গতকাল দুপুরে পরশুর রাতের রেখে দেওয়া কিছু ভাত পেটে পড়েছিল। আজ সারা দিনে বারো পয়সার মুড়ি ছাড়া কিছু পড়েনি। সে কারণেই ক্ষুর জল নিয়ে বসেছে সে’। কেদুলির পৌষ সংক্রান্তির মেলাতে কালী সাজ সকলের খুব পছন্দ হলেও অর্থের অভাবে মহাদেব সাজ ভালো হয়নি। কারণ পুরোনো ডোরাকাটা বালিশের খোল দিয়ে সুচাঁদকে বাঘছালের অভাব মেটাতে হয়েছিল।
‘বহুরূপীর বাহান্ন রূপ’ - এই বাহান্ন শব্দের লোকার্থ ‘বহু’। অর্থাৎ বহুরূপীর সাজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আবুল ফজল তাঁর প্রখ্যাত ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থের সঙ্গীত অধ্যায়ে বহুরূপী সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন - ‘এঁরা প্রতিদিন নানা বেশ ধারণ করে উপস্থিত হন। যেমন - একজন যুবা পুরুষ সুন্দরভাবে বৃদ্ধের রূপ ধারণ করেন। বুদ্ধিমান পরীক্ষক এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষকেও এঁরা ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেন’। এই কথারই প্রতিধ্বনি শোনা যায় রিসলে-র কথায়, ‘...They often appear in the guise of a decrepit old woman, her face puckered with gab juice, who calls herself Akbar’s nurse. Another popular role is that of Siv-Gauri, in which the Bahurupia gets up one side of his person as Siva and the other as Gauri, and conducts a humorous dialogue between the two.’
বহুরূপীরা অঙ্গবর্ণের জন্য চড়া গুঁড়ো রং, খড়ি, ভুসোকালি বেশি ব্যবহার করেন। রঙের মধ্যে জিঙ্ক অক্সাইড, ফুলমিনা, পিউলি বা পিউরি বা হরিতাল (হলুদ), কাজল, আলতা, ভ্যাসলিন, নারকেল তেল, সিঁদুর গুঁড়া (লালমিনা), আলকাতরা। প্রচণ্ড রোদে চার পাঁচ ঘণ্টা পথে পথে ঘুরতে হয় বলে এই সমস্ত চড়া রঙই তাঁদের পছন্দ যা সহজে মলিন হয়ে যায় না। এই রং তাঁরা নিজেরাই তৈরি করে নেন। সম্প্রতি ‘দেশ’ পত্রিকায় পলাশ দে-র ‘বহুরূপী’ গল্পে দশরথ বহুরূপী তাঁর নাতনিকে জানায় - ‘জানিস, অপরাজিতা ফুল শুকাইয়া গুঁড়া কইরা জলে মিশাইয়া নিলেই ফুইটা উঠবে নীল রং... ধর তোর হলুদ রং লাগব, কী করবি? গাঁদা ফুল শুকাইয়া বাটলেই হলুদ রং... এই রকম কত রং আমাগো চারপাশেই ছড়ানো। শুধু জানবি, এগুলো ভেষজ, কোনও ক্ষতি নাই’।
তাদের জিনিসপত্রের মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য - তীর ধনুক, পাখির ডানা, হনুমানের লেজ, বিভিন্ন পশু-পাখির মুখোশ, নকল বাহু, সুদর্শন চক্র, রবারের সাপ, ঝুড়ি আরও কত কি। কিন্তু তাতেও দারিদ্র্যের ভ্রূকুটি। বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে ‘ননীচোর নাটুয়া’ বহুরূপীর কথা মনে করিয়ে দেয়, মনে করিয়ে দেয় তাঁদের দারিদ্র্যের কথা - ‘লোকটা পোঁটলা খুলিয়া দেখাইল তাহাতে আছে ছোট্ট একখানা টিনমোড়া আর্শি, একটা রাংতার মুকুট- ময়ূরপাখা সমেত গালে মাখিবার রং, গলায় পরিবার পুঁতির মালা ইত্যাদি কৃষ্ণঠাকুর সাজিবার উপকরণ। বলিল, ‘দেখুন তবুও বাঁশি নেই হুজুর। একটা টিনের বড় বাঁশি আট আনার কম হবে না। এখানে নলখাগড়ার বাঁশিতে কাজ চালিয়েছি’।
বহুরূপীরা পেশাগত প্রয়োজন মেটাতে কিছু জিনিস নিজেরাই তৈরি করে নেন। এই শিল্পকর্মের মধ্যে যেমন খুঁজে পাওয়া যায় তাঁদের শিল্প নৈপুণ্য ও শিল্পীমন, একই সাথে জড়িয়ে থাকে তাঁদের দৈন্য। সিন্থেটিক বস্তার সুতোতে খুব সুন্দর হনুমানের সাজ তৈরি করে নেন নিজেরাই। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মতিলাল’ গাজনের দলে ভালুক সাজে - ‘বস্তা দিয়ে তৈরি ভালুকের পোশাক আছে তার, পেত্নি সাজার ছেঁড়া কাঁথাও আছে’।
মনে পড়ে কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘আয় ঘুম’ উপন্যাস। বর্তমান সময়ের বহুরূপীর এক আখ্যান - ‘দিনের বেলা লোকেন ঠাকুর-দেবতা সাজে। এই গ্রামে ঠাকুর-দেবতা সেজে ঘরের উঠোনে দাঁড়ালে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। একপাল কচিকাঁচা নিয়ে লোকেন ঘুরে বেড়ায় ঘরে ঘরে। গঞ্জের মতো নগদ টাকা না পেলেও, এটা-সেটা, আনাজকুটো অনেক কিছুই একটু একটু করে জুটে যায়। এই খরার মন্দায় সেটাই বা কম কী? কাল লোকেন বাঘছাল কাপড় পরে শিবঠাকুর সেজেছিল। উদোম গায়ে সাদা খড়িমাটি লেপে হাতে ডুগডুগি বাজিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরেছিল। আজ কালো ভুসি কালি তেলে গুলে শ্মশানে কালী। শিবকে দেখে তাও বা মেয়েরা যদি একটু মজা পায়, শ্মশানে কালীকে রীতিমতো ভয় পায়। খয়ের রাঙানো টকটকে জিভটাকে বার করলেই বুড়িরা চোখ বন্ধ করে কপালে হাত ঠেকায়। তাই শিবের চেয়ে কালীর আয় অল্প হলেও বেশি। তবে কালী সাজার হ্যাপাও শিবের চেয়ে বেশি। এই ব্রহ্মতালু চৌচির হয়ে যাওয়া রোদ্দুরে সাদা রং তবুও বা গায়ে যদি রাখা যায়, কালো রঙে গা তেতে ওঠে’। বহুরূপীদের এই জীবনচর্চা পাঠককে রূঢ় বাস্তবের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।
সমরেশ বসু-র ‘সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা’য় দেখা যায় সুচাঁদ বহুরূপী আর তাঁর দীক্ষাগুরু কুতু রায়-এর গুরু-শিষ্য সম্পর্ক। এর থেকে বোঝা যায় বহুরূপীদের মধ্যে আজও গুরু-শিষ্য পরম্পরা বহমান। ‘চৈত্র মাসে কুতু রায় কালী বহুরূপীর কালী সাজে। সেই কুতুই সুচাঁদের গুরু। কুতু তাকে কালী সাজাত, নিজে সাজত মহাদেব। তবে সেই কালী চতুর্ভুজা ছিল না, বা গৌরি দশভুজা দুর্গাও ছিল না। নীল পুজোর আগে বা চৈত্র মাসে নাচ হত, তাতে কালীর দাঁতে কামড়ানো থাকত একটা লাল রঙের টিনের জিহ্বা। গলায় ন্যাকড়া দিয়ে তৈরি, রং দিয়ে আঁকা নরমুণ্ডের মালা। গোটা গায়ে কালি মেখে, কালো রঙের একটা জাঙিয়া পরে, দুহাতে দুটো তলোয়ার নিয়ে, হেলেদুলে নাচা হত। আর গৌরী নিতান্ত, মুখে সাদা রং মাখা, ঠোঁটে লাল রং মাখা, কপালে সিঁদুরের টিপ, নাকে নোলক, নিতান্ত একটি বউ। কিন্তু তার দুই ঠোঁটের মাঝখানে টিপে ধরা থাকত একটা লাল সন্ধাকলি ফুল। ফুলটা দুই ঠোঁটের মাঝখানে না থাকলে, কুতুর গৌরী সাজানো পূর্ণ হত না। আর কুতু নিজে, বোস ঠাকুরতাদের বাড়ি থেকে চেয়ে নিয়ে আসত একখানি বাঘের ছাল। খালি গায়ে সাদা রং মেখে, বাঘছাল পরে ন্যাকড়া দিয়ে তৈরি সাপ গায়ে জড়িয়ে, মাথায় জটা পরে, হাতে ত্রিশূল নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচত। কী সুন্দর যে ভঙ্গি ছিল কুতুর। সে চোখ দুটি আধবোজা করে মুখে একটা হাসি হাসি ভাব রাখত। গায়ে গতরে বেশ মোটাসোটা ছিল। মনে হত, সাক্ষাৎ মহাদেব। হ, কানে আবার ধুতুরার ফুল গুঁজত’।
গ্রাম্য জীবনকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখা শরৎচন্দ্র দেখিয়েছেন বহুরূপীবৃত্তি অবলম্বনকারী মানুষরা বাড়ি থেকে কোন দূরবর্তী অঞ্চলে, কোন বিশেষ সময়ে বহুরূপী সাজ দেখাতে আসেন। ‘ছিনাথ’ সম্পর্কে লেখক আমাদের জানিয়েছেন, ‘ছিনাথের বাড়ি বারাসাতে। সে প্রতি বৎসর এই সময়টায় একবার করিয়া রোজগার করিতে আসে। কালও এ বাড়িতে সে নারদ সাজিয়া গান শুনাইয়া গিয়েছিল’। ফসল কাটার সময় বা ফসল কাটা শেষ হলে গ্রামের মানুষের হাতে বেশ কিছু নগদ পয়সা আসে। তাই ওই সময়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরলে বহুরূপীদের আয় হয় বেশি এবং গ্রামের লোকও এসময় বহুরূপীদের আসা যাওয়াটা আনন্দ সহকারে উপভোগ করতে পারে। বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে নকছেদী ভকতের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মঞ্চি জানিয়েছিল - ‘এই দেখবেন ফসল কাটা হয়ে গেলে আপনাদের এখানেই কত দেশ থেকে কত লোক আসবে। কত বাজিয়ে, গাইয়ে, নাচনেওয়ালী, কত বহুরূপী সং...’। আগে কোন একটি অঞ্চলে বহুরূপীরা ৩-৪ মাসের জন্য আস্তানা গাড়তেন এবং ওই অঞ্চলটিকে গ্রাম হিসেবে মোটামুটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে একএকটি ভাগে ৫-৭ দিন করে বহুরূপী দেখাতেন এবং শেষ দিন সিধা তুলতেন। আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘বাংলার বহুরূপী’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় কখনও কখনও সপ্তাহের শেষ দিনে বহুরূপীরা দুধওয়ালা বা গোয়ালিনীর ছদ্মবেশে অর্থ সংগ্রহ করে।
অতীতে বহুরূপীরা কখনো ভিক্ষাবৃত্তিতে অভ্যস্ত ছিল না। একটি গ্রামে, ঘরে ঘরে গিয়ে তারা বিনোদনের বিনিময়ে চাল, ডাল, ফলমূল, কাপড় এবং কখনও কখনও অর্থ সংগ্রহ করতেন। সমরেশ বসু ‘সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা’য় ফুটিয়ে তুলেছেন সেরকমই এক দৃশ্যপট - ‘সন্ধার সময় খিড়কির দরজার পাশে ধানের গোলার কাছে মস্ত বড় হনুমানের ভেংচি কাটা দেখে নসরত ভুঁইয়া ট্যাঁটা আনার কথা বলতেই হনুমান জোড় হাত করে বলে ওঠে - ‘সেলাম আলেকোম ভুঁইয়া সায়েব, হনুমানের নাম সুচাঁন্দ বউরূপ্যা। দেইখ্যা শুইনা একখান চকচইকা সিকি দেন। ডালা ভইরা উড়ূম (মুড়ি) দেন, এক দলা গুড় দেন, পালি ভইরা, জল খাইয়া, তাড়াতাড়ি যাই গা’। এটি কোন সাহায্য নয়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে বাড়ির গৃহকর্ত্রীর দেওয়া এই দান ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক।
গ্রামের মানুষের হাতে নগদ অর্থ থাকাটা যেহেতু ক্ষেতের ফসল ওঠার ওপর নির্ভর করে তাই আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত গ্রামে বহুরূপীদের আয় ভালো হয়। এসময় গ্রামে তারা নগদ অর্থ ছাড়া কিছু শস্যও সিধা হিসাবে পান। প্রফুল্ল রায়-এর ‘ঘুনুরাম’ মহারাষ্ট্রের নোনপুরায় বাঘ সেজে মানুষের মনোরঞ্জন করে আর তার বিনিময়ে ‘যার যা সাধ্য, অক্লেশে হাসিমুখে তা-ই তারা ঘুনুরামের ঝুলিতে ঢেলে দেয়। এক মাস এখানে কাটিয়ে ঘুনুরাম আবার চান্দা জেলায় ফিরে যায় তখন তার প্রাপ্তির তালিকা খুব একটা ছোট মাপের হয় না। খানচারেক নতুন ধুতি, নগদ দশ-বারোটা টাকা, মণ দেড়েকের মতো চাল, অজস্র চুট্টা (বিড়ির মত নেশার জিনিস), কিছু কার্পাস তুলো এবং আরও টুকিটাকি অনেক কিছুই তার ঝোলাটিকে ভরে তোলে’। নিজের দীপ্তিহীন, অর্ধাহার অনাহার এবং অগৌরবের জীবনে এই একটা মাসই যা কিছু মর্যাদা পায় ঘুনুরাম। আবার এই সময়ে বাঙালিরা মেতে ওঠে নানা মেলা ও উৎসবে, আর এগুলোই হয়ে ওঠে তাদের উপার্জনের প্ল্যাটফর্ম। শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বর অঞ্চলে বা গাজনের সময় বিভিন্ন গ্রামে, বীরভূমের তারাপীঠ অঞ্চলে বহুরূপীর দেখা যায়।
বর্তমান সময়ে শুধু বহুরূপী সেজে আর তাঁদের দিন চলে না। কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বহুরূপী চরিত্র ‘লোকেন’-এর অনেকগুলি ছোটোখাটো পেশার মধ্যে বহুরূপী সাজা একটি পেশা। বহুরূপী বৃত্তিতে অন্ন সংস্থানের সম্ভাবনা ক্রমশ কমতে থাকায় বহুরূপীরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। প্রফুল্ল রায়-এর ‘ঘুনুরাম’কে জীবিকার জন্য চান্দা জেলায় নানা ভূমিকায় দেখা যায় - ‘কখনও সে ভূমিহীন কৃষাণ, কখনও মালটানা কুলি, কখনও তাকে পিডব্লুডি’র রাস্তা বানাতে দেখা যায়। কখনও সম্পন্ন গৃহস্থের মোষ চরায় সে, কখনও আগুনের হল্কার মতো বৈশাখের গনগনে দিনগুলোতে পাহাড়ী ঝরনা থেকে মহাজনদের জন্য বাঁক ভরে জল নিয়ে আসে। আবার কখনও পুরোপুরি বেকার সে’। এছাড়া গ্রীষ্মকালের চড়া রোদে তাঁদের পক্ষে বেশিক্ষণ চলাচল সম্ভব হয় না, ফলে তাঁদের আয়ও হয় কম। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে তাঁদের সাজ পোশাক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এই সময় বহুরূপীদের আয় সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তাই বাধ্য হয়ে এই সময় তাঁরা বহুরূপী বৃত্তি ছেড়ে জাল বা সাতনলির সাহায্যে পাখি ধরা, মৌমাছির চাক ভেঙে মধু সংগ্রহ, জড়ি-বুটি-শেকড়-বাকরের ওষুধ বিক্রি, অথবা কৃষি মজুরের কাজ, মাটি কাটা, ইত্যাদি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। যদিও, আজকাল বহুরূপীরা বিভিন্ন রেল স্টেশনে, এমনকি প্রচণ্ড গরমে ট্রেনের কামরায় পয়সা সংগ্রহ করে থাকে। সন্ধ্যার সময়, বিশেষ করে বন্ধ মৌসুমে, বহুরূপীরা স্থানীয় এলাকায় সাইকেল করে বা হেঁটে খেজুর রস ও মধু বিক্রি করে।
জীবিকার সন্ধানে গ্রামবাংলার লোকশিল্পীরা ক্রমশ শহরে এসে পথ খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। উনিশ শতকের বাংলায় বহুরূপীর সেই দৃষ্টান্ত পাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অলীকবাবু’ নাটকে। এর আদি রূপটি হাস্যরসাত্মক প্রহসন হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ১৮৭৭ সালে ৭ই জুলাই ‘এমন কর্ম আর করব না’ নামে। সেখানে গদাধর নামক চরিত্রের সংলাপ থেকে জানা যায় যে, কলকাতার সেই বাড়িটির নিচের তলায় একটা ঘর ভাড়া নিয়ে এক বহুরূপী থাকেন। দিনমান বহুরূপী সেজে রোজগার করে শহরে। রাত্রে ফিরে আসে সেই ঘরে। বাংলা সাহিত্যে বহুরূপী হিসেবে ‘অলীকবাবু’ প্রহসনেই এই শিল্প ও শিল্পীর প্রথম দেখা পাওয়া যায়।
তবে শুধু গ্রামাঞ্চলে নয়, একটা সময় কলকাতার মতো শহরেও দেখা মিলত বহুরূপীদের। পুরোনো কলকাতার বহুরূপীদের প্রসঙ্গে রাধাপ্রসাদ গুপ্ত ‘কলকাতার ফিরিওয়ালার ডাক আর রাস্তার আওয়াজ’ গ্রন্থে জানান, ‘বাতিওয়ালা চলে যাওয়ার পর অন্ধকার একটু গাঢ় হলে প্রায়ই দেখা দিত বহুরূপী। বহুরূপী এলেই পাড়ার শিশু, কিশোরদের মধ্যে একটা সাড়া পড়ে যেত। অবিশ্বাস্য শোনালেও এটা সত্যি যে সে কখনও কখনও চ্যাপলিনের ভবঘুরে সেজে আসত, চ্যাপলিনের মতো অবিকল হর্ষ, বিষাদ এবং মজার অঙ্গভঙ্গি নিয়ে সেই সময় কলকাতার সান্ধ্য পরিবেশ মাতিয়ে তুলতেন’। কোথাও দলে দলে মানুষ বেরিয়ে আসতেন বহুরূপীদের দেখতে।
কলকাতার নাগরিক সভ্যতা গ্রামীণ লোকসংস্কৃতিকে কিভাবে উৎখাত করছে নিরক্ষর সুচাঁদের জবানিতে লেখক সমরেশ বসু আমাদের তা দেখিয়েছেন - ‘এখানে এসব শহর বাজারে, বহুরূপীর সঙ কেউ দেখতে চায় না। বায়োস্কোপ থিয়েটারের এত সঙ, তরতাজা মেয়ে-পুরুষদের কত লাফানি-ঝাঁপানি, কোমর দোলানি, উদলা গায়ে পুরুষদের সঙ্গে শোয়া, সেসব সঙ যারা দেখে তাদের কি এসব ভালো লাগে?’ লাগে না। বহুরূপী শিল্পকে ভালোবেসে সুচাঁদ আবার বহুরূপী হতে চায় - ‘সেইখানে বউরূপী আছিলাম সঙ আছিলাম। এইখানে আইয়া ভিখারী হইছি। এইখানে আমার সঙ কেউ দ্যাখতে চায় না। ফিরা গিয়া আবার বহুরূপী হমু’।
বিশ্বায়নের যুগে ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হচ্ছে এই শিল্পটি। বিনোদনের নিত্যনতুন মাধ্যম আবিষ্কারের ফলে ক্রমে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এই শিল্পমাধ্যম। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের পথ দেখাচ্ছে পলাশ দে-র মতো আজকের গল্পকইয়েরা। বহুরূপী গল্পে তিনি লিখছেন, ‘দশরথ কাকা, তোমার কী ইচ্ছে? তোমার কাজ লোকে দেখুক, তাই তো? এই শিল্প তা হলে মুক্তি পাবে, বেঁচে থাকবে। আর তোমার এই কাজে প্রধান শত্রু কে? মোবাইল। মানুষ এখন মোবাইল দেখে সারাক্ষণ। তোমার বা তোমাদের মতো শিল্পীর কাজ দেখে না। তা হলে এই মোবাইলকে অস্ত্র করে যদি ফিরে আসা যায়। ক্ষতি কী?’ তাই মনে হয়, যে বহুরূপীরা তাঁদের বেশে দীপ্ত রোদ্দুরের ঘ্রাণ মাখিয়ে দুবেলা দু-মুঠো ভাতের আশায় আজও মুখে রং মেখে পথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন প্রতিদিন, সরকার বা জনসাধারণের সামান্য সাহায্যেই এই লুপ্তপ্রায় লোকশিল্পটির পুনরুদ্ধার হতে পারে।
গ্রন্থপঞ্জি -
● সুবোধ ঘোষ, বহুরূপী, রচনা সমগ্র, ৪র্থ খণ্ড, নাথ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৯৯৮
● তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, রচনাবলী, একবিংশ খণ্ড, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৪০৮ বঙ্গাব্দ
● সত্রাজিৎ গোস্বামী, বাংলার বহুরূপী প্রসঙ্গ, স্টার পাবলিকেশনস, কলকাতা, ১৯৯০
● H. H. Risley, The Tribes and Castes of Bengal (1). Bengal Secretariat Press, Calcutta, 1891.
● Directory: Folk and Tribal Cultural Centre, Department of Information and Cultural Affairs, February 2004, Page-84
● বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশের সঙ প্রসঙ্গে, দি এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা, ১৯৭২
● তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মতিলাল, রসকলি, বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ
● সমরেশ বসু, সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা, রচনাবলী, ৮ম খণ্ড, আনন্দ, কলকাতা, ২০০৬
● রাজ্যেশ্বর মিত্র, মুঘল ভারতের সঙ্গীত চিন্তা, নবপত্র প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৮৫
● পলাশ দে, বহুরূপী, দেশ, ৮৮ বর্ষ, ২০ সংখ্যা, আনন্দবাজার পাবলিকেশনস, কলকাতা, ২০২১
● বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আরণ্যক, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ
● কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, আয় ঘুম, আনন্দ, কলকাতা, ২০১১
● শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত, ১ম খণ্ড, শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ, এম সি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৯০ বঙ্গাব্দ
● আদিত্য মুখোপাধ্যায়, বাংলার বহুরূপী, ইন্দ্রলেখা প্রেস, কলকাতা, ২০০৮
● প্রফুল্ল রায়, বাঘ, গল্প সমগ্র, ১ম খণ্ড, আনন্দ নিকেতন, কলকাতা, ১৯৫১
● অলীকবাবু, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ নাটক, ক্ষেত্র গুপ্ত ও শম্ভনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (সম্পাদক), কলকাতা, ১৯৯৭
● রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, কলকাতার ফিরিওয়ালার ডাক আর রাস্তার আওয়াজ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড; কলকাতা, ১৯৮৪