আরেক রকম ● নবম বর্ষ সপ্তদশ সংখ্যা ● ১-১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ● ১৬-৩১ ভাদ্র, ১৪২৮
প্রবন্ধ
জয়তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফরিদ হোসেন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে তিন বছর হল। এর অনেক আগে ১৯১১ সালে লর্ড কার্জনের বিতর্কিত পদক্ষেপ বঙ্গভঙ্গ বাতিল হয়ে গেছে। এর মধ্যেই ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। প্রথম বাঙালিতো বটেই, তিনিই প্রথম ভারতের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত মনীষী। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ বাঙালিদের মধ্যে নতুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। সেই আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ইতিহাসের এমনি এক সন্ধিক্ষণেই আরেকটি ঐতিহাসিক মাইলফলক সৃষ্টি হল। স্থাপিত হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ব বাংলার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নগরী ঢাকায় যাত্রা শুরু করল এই বিশ্ববিদ্যালয় - পহেলা জুলাই ১৯২১ সালে। সারা বাংলার জন্য এর চেয়ে বড় সুখবর সেদিন আর কিছু ছিল না। "তোরা সব জয়ধ্বনি কর" বলে মেতে উঠল সকলে।
ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দান করলেন ৬০০ একর জমি। সেই একশ বছর আগে এই এলাকা ছিল ধূ-ধূ প্রান্তর, প্রায় জনবসতি শূণ্য, সবুজ মাঠ, গাছ-গাছালি ও পাখীর কলরব মুখরিত। সেদিনের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পরিবেশ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় বাংলার দুই দিকপাল কবি অজিত দত্ত ও বুদ্ধদেব বসুর স্মৃতিকথায়। তাঁরা দুজনেই ছিলেন হরিহর আত্মা - বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক ও সাহিত্য চর্চা করেছেন মিলেমিশে একে অপরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে।
কবি অজিত দত্ত ভর্তি হয়েছিলেন ১৯২৬ সালে বাংলা বিভাগে। আর বুদ্ধদেব ছিলেন ইংরেজী বিভাগের ছাত্র, ভর্তি হয়েছিলেন ১৯২৭ সালে। অজিত দত্তের স্মৃতিকথায় ফুটে উঠল সেদিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তীর্ণ মাঠ, আদিত্যের চায়ের দোকান যেখানে পাওয়া যাচ্ছে ডিম টোস্ট, সন্দেশ ও খাঁটি দুধের চা। আর এই চায়ের দোকান ঘিরেই গড়ে উঠত তুমুল আড্ডা। সাহিত্য, বেনিয়া ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হালচাল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব ও মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে - রাশিয়ায় কমিউনিস্ট বিপ্লব ও পরবর্তীতে মহাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম।
আর বুদ্ধদেবের স্মৃতিগদ্যে জানা যায় কেমন ছিল সেদিনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেমন ছিল সে সময়ের তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের অনুভূতি। তিনি লিখলেন, “আই.এ. পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন ভর্ত্তি হলাম সেদিন মনে ভারি ফূর্তি হল। বাস-রে কত বড় বাড়ি। করিডোরের এক প্রান্তে দাঁড়ালে অন্য প্রান্ত ধূধূ করে। ঘরের পরে ঘর। জমকালো আপিস”। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্পর্কে লিখলেন, “যেখানে বেলা শেষে আধ মাইল হেঁটে টিউটরিয়াল ক্লাশ করতে হয়। তারপর মাঠে গিয়ে ডনকুস্তি না করলে জরিমানা হয়। যেমন আজ নাটক, কাল বক্তৃতা, পরশু গান-বাজনা কিছু না কিছু লেগেই আছে। রমনার আধখানা জুড়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় ছড়ানো সেখানে আমারও কিছু অংশ আছে, একি কম কথা”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে পেছনের দিকে হেঁটে গেলে পাওয়া যায় এই উপমহাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কীর্তির নানা কথা। এই বিশ্ববিদ্যালয় যাদের পদধূলিতে গৌরব বোধ করে তাঁদের মধ্যে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছিল তৎকালীন ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মডেলে। তাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ও বাংলার অনন্য গৌরব এই বিশ্ববিদ্যালয় সত্যি এক সেন্টার অব এক্সিলেন্স (Centre of Excellence) হিসাবে গড়ে উঠেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় ধন্য হয়েছিল স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, যদুনাথ সরকার, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত মহাগুণী মহাজনদের ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।
কবিগুরুর কথা প্রসঙ্গে আসে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তাঁকে নিয়ে কিছু অপপ্রচারের কথা। কতিপয় হিন্দু বিদ্বেষী মুসলিম লেখক ও ইতিহাসবিদ প্রচার করেছিল বিশ্বকবি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। ইতিহাস এই কথার কোনো প্রমাণ দেয় না।সত্য হল এই যে বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে নিয়ে গর্ব করত। ১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মাথায় কবি ঢাকা এসেছিলেন এক সপ্তাহের সফরে। ৭ থেকে ১৪ আগষ্ট ঢাকা সফরে প্রথম তিনদিন তিনি নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ-র আতিথ্য উপভোগ করেন বুড়িগঙ্গা নদীতে এক হাউজবোটে। হাউজবোট ছিল কবির খুবই প্রিয়। শেষ তিনদিন তিনি কাটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রমেশ চন্দ্র মজুমদার আতিথ্যের উষ্ণতায়। রমেশ চন্দ্র মজুমদার পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৩৭ থেকে ১৯৪২ সাল এই ছয় বছর। ঢাকায় অবস্থানকালে কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত হয়েছেন। এর একটি প্রদান করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিদুল্লাহ মুসলিম দলের মুসলমান ছাত্ররারা। অন্য দুটো সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) কার্জন হল প্রাঙ্গণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানীয় ডিলিট উপাধি দিয়েছিল ১৯৩৬ সালে তাঁর মহাপ্রয়াণের ছয় বছর আগে। নিজহস্তে এই সম্মান গ্রহণ করার জন্য কবি ঢাকা আসতে পারেননি কারণ তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন।
গৌরব ও সৌরভের এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানদন্ডে হয়তো অনেক নিচে নেমে গেছেন। অবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য গৌরব অন্যত্র। একটি জাতি গঠনে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনন্য। পৃথিবীর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই গৌরবে কোনো ভাগ বসাতে পারেনি।
আমরা জানি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পেয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাস-ব্যাপী এক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। মহান এই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ পরম বন্ধু হিসাবে পাশে পেয়েছিল ভারত সরকার ও ভারতের জনগণকে। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম বীজ রোপিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানকার সচেতন প্রতিবাদী ছাত্রদের হাতে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে উপমহাদেশ খন্ডিত হয়ে ১৯৪৭ সালে জন্ম নিল পাকিস্তান। শুধু মুসলিম গরিষ্ঠতার কারণে পূর্ব বাংলা যুক্ত হল হাজার মাইল দূরের মূলতঃ উর্দুভাষী পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে। শারীরিকভাবে পাকিস্তানের অংশ হলেও ধর্মনির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের হৃদয়ে মাতৃভাষা বাংলার জন্য যে গর্ব ও ভালোবাসা তা অটুট। বাঙালিদের অন্তরের এই কথাটা বুঝতে পারে না নব্য-প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের শাসকরা। এমনকি এর প্রতিষ্ঠাতা মুহম্মদ আলি জিন্নাহও উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হলেন। পাকিস্তানের গর্ভনর-জেনারেল জিন্নাহ তার প্রথম সফরে ঢাকা এলেন ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ। প্রথম ভাষণ দিলেন, তৎকালীন রমনা রেসকোর্স ময়দানে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে শুধুমাত্র উর্দু একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদী গুঞ্জন উঠল সারা ময়দান জুড়ে। এর কয়েকদিন পরে ২৪ মার্চ সেই গুঞ্জন বিস্ফোরিত হল এক বিশাল প্রতিবাদে জিন্নাহকে যখন সংবর্ধনা দেওয়া হল কার্জন হলে। এখানে তিনি আরো স্পষ্ট করে বললেন, "উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা"।
প্রাণের চেয়েও প্রিয় মায়ের ভাষার এত বড় অপমান বাঙালি তরুণেরা সহ্য করতে পারেনি। না, না ধ্বণিতে বিস্ফোরিত হয় সংবর্ধনার হল। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগানে মুখরিত কার্জন হল ভেতর ও বাহির। ছাত্র-ছাত্রীরা নেমে পড়ে রাস্তায়। গর্জে ওঠে প্রতিবাদে। এই, প্রতিবাদী গর্জনের একজন পুরোধা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ছাত্র শেখ মুজিবর রহমান। এক পর্যায়ে তাকে জেলে পোরা হল। কিন্তু জেল থেকেই তিনি আন্দোলন সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কলকাতার ইসলামিয় কলেজের (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র হিসেবে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের অধিকার ও মর্যাদা অর্জনের সংগ্রামে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেন। ১৯৪৮ সালের সেই প্রতিবাদ পরিপুষ্ট হতে থাকে। পাকিস্তানী শাসকদের রক্তচক্ষু, জেল, জুলুম উপেক্ষা করে ভাষা আন্দোলন বেগবান হয়, সামনে এগিয়ে চলে। ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেরুয়ারী পাকিস্তানি পুলিশের ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাস্তায় নেমে পড়ে। কার্জন হল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিলটি অনতিদূরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে আসতেই পুলিশ নির্বিচার গুলি চালায়। ঢাকার রাস্তায় এই প্রথম পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত ছাত্রদের রক্ত ঝরল। সেদিনই পাকিস্তানের কবর খোড়ার ক্ষণটি শুরু হল। ছাত্রদের সেই রক্তবীজ থেকেই ১৯ বছর পর জন্ম নিল এক নতুন রাষ্ট্র - বাংলাদেশ। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে ছুড়ে জন্ম নিল এক ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। ১৯৫২ সালে এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের যে নতুন একটি স্রোতধারা তৈরি করল তা শেষ হল আরেক ঐতিহাসিক সমাপ্তিতে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ যেদিন জন্ম নিল স্বাধীন বাংলাদেশ। নতুন এই রাষ্ট্র ও জাতির স্থপতি হলেন শেখ মুজিব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি যিনি 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে সম্মানিত হলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের কল্যাণে। এখানেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভাগে উড়ানো হল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা ১৯৭১ সালের ২ মার্চ, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনের ধারাকে আরো বেগবান করল। সবুজ প্রান্তরে লাল সূর্য, মধ্যিক্ষণে তৎকালীন পূর্ববাংলার মানচিত্র এটাই ছিল কলেজ ছাত্র শিব নারায়ণ দাশের নকশায় রচিত সেদিনের পতাকা। স্বাধীনতা লাভের পর তার পরিবর্তন ঘটে।
যে কয়েকটি কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য গৌরবের অধিকারী তার প্রধানটি হল একটি জাতি গঠনে, এবং সেই জাতিকে বিশ্ব দরবারে তার সমগ্র ঐশ্বর্য ও উৎকর্ষ সহ পরিচিত করা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল শুরুতে পূর্ব বাংলার মুসলমান জনগোষ্ঠিকে তুষ্ট করা উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের সন্দেহ নেই। তাদের সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। শুরু থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতা দানা বাঁধতে পারেনি। সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তিক মুসলিম লীগ, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যথেষ্ট চেষ্টা করে এখানে সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপন করতে, তবে তা সফল হয়নি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। হিন্দু-মুসলিম সহ সকল ধর্মের জনগণ এই লড়াই করেছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। দিনে দিনে দেশের এই প্রধান বিদ্যা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে প্রগতিশীল, বামপন্থী, জাতীয়তাবাদী অসাম্প্রদায়িক চিন্তা, ভাষাদর্শ ও আন্দোলনের এক মন্দির।
শতবর্ষী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনি এতটা স্বল্প ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা একটি কঠিন কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, এখানে এই ক্যাম্পাসে, এর সবুজ চত্বরে, করিডোরে পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের মুক্তির জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল এক সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে শিক্ষাজীবনের বেশ লম্বা সময় ব্যয় করেছি। আমাদের যে প্রজন্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছে মধ্য ষাট ও সত্তর দশকে তাদের চোখে যে স্বপ্ন ছিল তা হল, নতুন এক দেশ ও সমাজ নির্মাণ যা হবে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, নিজের হীন স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়ার মানসিকতা ও সর্বোপরি মূল্যবোধ ও ন্যায়-ভিত্তিক। জ্ঞানের চর্চা হবে, জ্ঞান আহরণ হবে ও গবেষণা হবে। তবে এসব কিছুর একটাই লক্ষ্য হবে মানুষের কল্যাণ ও মানবতার সম্মান। গত একশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই লক্ষ্য পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে। আজও দেখি কোথায় কোনো অন্যায়, অবিচার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আসে প্রতিবাদের সম্মুখ সারিতে। তাই তো গর্ব করি, আমাদের এই ‘আলমামাটের’-কে নিয়ে। এখানেই আমাদের আনন্দ।