আরেক রকম ● নবম বর্ষ পঞ্চদশ সংখ্যা ● ১-১৫ আগস্ট, ২০২১ ● ১৬-৩১ শ্রাবণ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

অরবিন্দ পোদ্দার - মার্কসবাদী চিন্তাবিদ

পার্থসারথি দাশগুপ্ত


গত ২০ জুন মারা গেছেন অরবিন্দ পোদ্দার। শতায়ু অরবিন্দ পোদ্দারের মৃত্যু বাংলায় মেধা চর্চার জগতে নিঃসন্দেহে এক নক্ষত্র পতন। বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা সমাজকে মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ভবিষ্যতের গবেষক-বিশ্লেষকদের প্রেরণা যোগাবে।

অরবিন্দ পোদ্দারের জন্ম ১৯২০ সালের ৩ নভেম্বর। জন্মস্থান অবিভক্ত বাংলার শ্রীহট্ট জেলার সাকুচাইল। ময়মনসিংহ মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত। ম্যাট্রিকুলেশনে জেলায় প্রথম স্থান পেলেও ব্রিটিশ পুলিশের সন্দেহ থেকে অব্যাহতি পেতে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে কলকাতায় চলে আসেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে তাঁর মা-ও ম্যাট্রিকুলেশনে জেলার ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। আইএসসি পাশ করার পর পিতা রাধাগোবিন্দ পোদ্দার ও মা দামিনী দেবীর ইচ্ছায় সদ্য যুবক অরবিন্দকে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যাদলয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠানো হয়। তবে মাস ছয়েকের মধ্যেই বিএইচইউ ছেড়ে চলে এসে অরবিন্দ দেশের স্বাধীনতার জন্য মেতে ওঠেন বিপ্লবী কর্মকান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পরেই শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যাপক ধরপাকড়। ১৯৪০-এ কারাবন্দি হলেন অরবিন্দ। ১৯৪৬-এর সেপ্টেম্বরে দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তিনি আরএসপি-র সর্বক্ষণের কর্মী। তবে কারান্তরালে থাকার সময়েই ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেন পিএইডি।‌ বিষয় - মার্কসীয় বিশ্লেষণে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য বিচার - 'বঙ্কিম মানস'। সেই সময় তিনি 'গণবার্তা' পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে নিযুক্ত। এরপর অল্প কিছুকাল ঢাকা মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীকালে রানীগঞ্জ ভুতোরিয়া কলেজ (১৯৫৭), বহরমপুর গার্লস কলেজ, শ্রীপত সিং কলেজ জিয়াগঞ্জ, রামকৃষ্ণ মিশন কলেজ এবং দীর্ঘকাল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন অরবিন্দ পোদ্দার। ১৯৮৫ সালে অবসরগ্রহণ। মাঝে ১৯৭০-৭৩ সিমলার ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডিজে উচ্চতর গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ওখান থেকে ফিরে এসে আবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন।

মার্কসীয় ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাভাবনার যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ বহুমুখী বিতর্কের উদ্রেক করে। জনপ্রিয় এলিট সমাজ এবং তাঁদের পাঠকদের কাছেও অরবিন্দ পোদ্দার ছিলেন একজন উচ্চমাপের বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব। সুদীর্ঘ শতোত্তীর্ণ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সুতীক্ষ্ণ আর্থসামাজিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা, অদম্য প্রাণশক্তি ও রসবোধ, দেশবিদেশের রাজনৈতিক চালচিত্র সম্বন্ধে জানার উৎসাহে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। বাংলা তথা দেশের এই চূড়ান্ত সামাজিক সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ও বামপন্থার সার্বিক দিগভ্রান্তির কালে তাঁর প্রতি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের একাংশের এক ধরনের ঔদাসীন্য এবং বর্তমান প্রজন্মের অনেকের অজ্ঞতা অবশ্যই এক অবশ সামাজিক মননের প্রকাশ।

তিনি নিতান্ত কৈশোরে অনুশীলন সমিতির সদস্য হওয়া থেকে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ভারতরক্ষা আইনে কারাবাস এবং স্বাধীন ভারতে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রের আদর্শে প্রত্যয়ী থেকে তত্ত্ব ও অনুশীলনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বামপন্থার কাছে কিছুটা ব্রাত্য এবং বাঙালি মধ্যবিত্তের সমাজবোধের পটচিত্রে এই অবহেলায় তাঁর অভিমান, এক অর্থে নিভৃতবাস অবশ্যই বেদনাদায়ক।

বাংলার রেনেসাঁস সম্পর্কিত সিমলার গবেষণাপত্রগুলির অন্যতম 'Renaissance in Bengal, Quest and Confrontation' গ্রন্থে তিনি প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগ এবং ঔপনিবেশিক যুগের বিদ্যাচর্চার ধারার প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট স্বরে তত্ত্ব ও অনুশীলনের রসায়নে জারিত করে পল বারানের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় সামগ্রিকতা অন্বেষণ, খন্ড খন্ড থেকে পূর্ণতার যাত্রায় বিদ্বজ্জনের সংজ্ঞা উপস্থাপিত করেছেন। "...to serve as a symbol and reminder of the fundamental fact that the seemingly autonomous, desperate and disjointed morsels of social existence can be understood and influenced only if they are clearly visualized as parts of comprehensive totality of the historical process..."

বারান ঘোষিত এই সামগ্রিক সমাজ সচেতন বিদ্দ্বজ্জনের দায়বদ্ধতা একদা অনুশীলন সমিতি এবং সমাজ বিষয়ে প্রত্যয়ীকে শুধু দুঃসাহসী তথা অপ্রিয় সত্য উচ্চারণে প্রেরণাই দেয়নি, আত্মবিক্রয়ী এলিট এবং পণ্যমোহমুগ্ধ 'পশুখামারের' তথাকথিত জ্ঞানী ব্যক্তিদের 'জননী গর্ভের লজ্জা' বলে কশাঘাত হেনেছেন অরবিন্দ। আবার সমাজমনস্ক বিজ্ঞানীর মত ডুব দিয়েছেন মানবমনের গভীরে। এঙ্গেলসের 'The Origin of the Family, Private Property and the State'-এর মধ্যে খুঁজেছেন নারীপুরুষ সম্পর্ক, প্রেম ভালোবাসা, যৌনতা, লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদির শিকড়। শেষ পর্যন্ত তিনি উত্তর খুঁজে পেয়েছেন 'পশুখামার' প্রবন্ধে, "...বৈষায়িক স্বত্ব স্বামিত্বের চেতনা আমাদের এমন নির্বোধ বানিয়েছে যে একটা বস্তুকে আমরা তখনই নিজস্ব বলে ভাবতে শুরু করি যখন সেটাকে মূলধন হিসাবে লগ্নী করতে পারি অথবা যেমন খুশি যখন খুশি ব্যবহার করতে পারি।..." জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত সমাজ পরিসরে মূল্যচেতনার স্বরূপ আর তার পরিবর্তনের ধারাকে সন্ধান করেছেন। প্রশ্ন করেছেন পূর্বসুরিদের ব্যক্তিক স্বাধীনতার প্রশ্নে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বগ্রাসী প্রবণতায় বিবশ হয়েছেন বার বার। স্বাধীনতা, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ প্রবন্ধে সংবেদনশীল অরবিন্দ পোদ্দার এই দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছেন, "আমি জানি পরম অর্থে স্বাধীন, স্বাতন্ত্রবাদী ব্যক্তির অস্তিত্ব আজ কল্পনাতীত। যে ব্যক্তি সৃষ্টির আনন্দে মুক্তির স্পৃহায় মানবিক সংস্কৃতি নির্মাণের কর্মে লিপ্ত হয়, আর যে ব্যক্তি উৎপীড়িত হওয়ার আতঙ্কে বিশেষ আদর্শে অনুরক্ত থাকতে বাধ্য হয়, তাদের মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ।"

তিনি এভাবেই জীবনভর প্রশ্ন করেছেন। 'বাংলার অগ্নিযুগ/সূর্যোদয় এবং সূর্যান্তের দিনগুলি' গ্রন্থে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন ও তার অসমাপ্ত পরিণতি প্রসঙ্গে বিপ্লবী গোষ্ঠীসমূহের আত্মত্যাগ ও বৈপ্লবিক দুঃসাহস সত্ত্বেও, নির্দ্বিধায় তাঁদের ব্যর্থতার বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন। ভাবুক অরবিন্দের তারুণ্যে অনুশীলন সমিতির সদস্য হওয়া এবং দীর্ঘ কারাবাসে বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসা, পরবর্তীতে গান্ধীবাদের সম্মোহনী প্রভাব এবং জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যবিত্ত তথা পেটি বুর্জোয়া নেতৃত্বের আপস পন্থার পিছনে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গী তাঁর মননে একটি বাস্তবানুগ দ্বান্দ্বিক ধারণা নির্মাণ করেছিল। তাই তিনি নির্দ্বিধায় এই মূল্যবান গ্রন্থের 'প্রেক্ষাপটে' দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, "আজীবন বিশ্বাস করে এসেছি নিজের কালকে স্বদেশকে এবং মনুষ্যত্বকে অন্বেষণ করাই প্রকৃত জীবনচর্যা। সেই অন্বেষণে নিযুক্ত থেকে এও বুঝেছি, অতীতের বিশ্লেষণ, সামাজিক প্রবাহের স্বরূপ নির্ণয় এবং সামাজিক বিবর্তনে ব্যক্তি বিশেষের অবদানের মূল্যায়ন ইত্যাদির বুদ্ধিমার্গীয় কার্যক্রম প্রকৃতপক্ষে বর্তমানেরই অন্বেষণ।"

যদিও তাঁর এই বুদ্ধিমার্গীয় কার্যক্রম দ্বান্দ্বিক দর্শনের আলোকে উদ্ভাসিত, তবুও কৈশোর তারুণ্য ও যৌবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, নামগোত্রহীন সত্তার একনিষ্ঠ তপস্যা ও বিপ্লবী জীবনচর্যা ঋদ্ধ মূল্যবোধে কোথাও যেন গুপ্তবিপ্লবী কর্মকান্ড ও উদ্দেশ্যপ্রণেদিত সশস্ত্র সন্ত্রাসের যৌক্তিকতা খুঁজে পেতেন। 'চারিত্র বৈশিষ্ট্য ও মানসিকতা' প্রবন্ধে অনুশীলন বিপ্লবী প্রতুল গাঙ্গুলীর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করেন তিনি, "আমাদের চিন্তাধারা মহৎ পর্যায়ে উন্নীত করার কৃতিত্ব ছিল বিপ্লবী পথিকদের, ত্যাগ নিষ্ঠা একাগ্রতার ফলেই ক্রমে ক্রমে মনপ্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মবিসর্জন, কারাগারে তিল তিল করে নিজেকে ক্ষয় করে হয় ফাঁসিতে বা গুলিবিদ্ধ হয়ে আত্মদান করে জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাবেন।" বার্ধক্যেও চিরতরুণ অরবিন্দ পোদ্দার অনির্বাণ রেখেছেন সেই আত্মত্যাগ ও দুঃসাহসী প্রত্যয়। বার বার উচ্চারণ করেছেন তুর্গেনিভের প্রখ্যাত কবিতা যেখানে বিপ্লবী তরুণী উচ্চারণ করছে তাঁর দীক্ষাগুরুর কাছে -
'প্রস্তুত আমি অপরাধের জন্যও।
তুমি কি জানো যে বিশ্বাসে আজ তুমি স্থিত তা বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মনে হতে পারে তুমি ভুল করেছ। বৃথাই তোমার কচি জীবনটা জলাঞ্জলি দিয়েছো তাও জানি আমি।
তবু আমি যাবো।'

নির্দ্বিধায় অরবিন্দ পোদ্দার ফরাসি দার্শনিক সাহিত্যিক সার্ত্র-এর ঔপনিবেশিক ইতিহাসে সশস্ত্র বিপ্লবীর ইতিবাচক ভূমিকার সঙ্গে প্রতিধ্বনি করেন। বিপ্লবীর একমাত্র লক্ষ্য শহীদ হওয়া। দেহলী পার হওয়া। বাকী কাজ পরবর্তী প্রজন্মের। হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাব্লিকান এ্যাসোসিয়েশনের খ্যাতনামা বিপ্লবী শচীন সন্যালের দলীয় লক্ষ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তাবের সঙ্গে অরবিন্দ পোদ্দার সহমত। "The object of the Association is to establish a federated republic of the states of India by an organised and armed revolution."

বিপ্লবী আদর্শের একনিষ্ঠ তাগিদ সত্ত্বেও, ভারতের সশস্ত্র বিপ্লব প্রচেষ্টায় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা যে বড় সমস্যা তা বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন তিনি, "বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন দেশের জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, কোনো পর্বেই তাদের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কে অম্বিত ছিল না। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবীদের প্রত্যয়ের ধারাবাহিকতা স্বাধীনতা উত্তরযুগে যেন ধীরে ধীরে বিলীন হল। অন্য কথায় বৈপ্লবিক ভাবাদর্শগত প্রত্যয়ের যে চিরন্তন আবেদন একজন মানুষকে কোন বিন্দুতে থামতে দেয় না, তা অনুপস্থিত ছিল। একথা শুধু যে ব্যক্তি বিশেষের সম্পর্কে প্রযোজ্য তা নয়, অগ্নিযুগের বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কেই সাধারণভাবে তা প্রয়োগ করা যেতে পারে।"

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় বাংলার ইতিহাস (আদি পর্ব) রচনার ক্ষেত্রে এদেশে ডি ডি কোশাম্বী, সি জি শাহ প্রমুখের মতই ঔপনিবেশিক স্বার্থসমন্বিত ইতিহাস চর্চার ধারা ভেঙে ফেললেন। নীহাররঞ্জন প্রকৃতই একজন মার্কসবাদে প্রত্যয়ঋদ্ধ বিদ্বজ্জন। তিনি আবিষ্কার করেন প্রাক্তন অনুশীলন-বিপ্লবী এবং তৎকালীন দৈনিক 'গণবার্তা'র (আরএসপি'-র মুখপত্র) সাংবাদিক-সম্পাদক অরবিন্দ পোদ্দারকে। সেই ১৯৪৮-৫১ সালেই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী প্রক্রিয়ায় ইতিহাসের পুনর্গঠনের দায় অর্পণ করলেন অরবিন্দ পোদ্দারের উপর। বাংলার তথাকথিত রেনেসাঁসের শ্রেণিচরিত্রের সাপেক্ষে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যকীর্তি ও জীবনবোধের পুনরাবিষ্কার। ধর্ম, সংস্কৃতি, সামাজিক আচারবিচার, প্রশাসনিক বিধিবিধান, ন্যায় নীতি, ঔপনিবেশিক আবহ সমন্বিত যে উপরিকাঠামো নির্মিত হয়েছিল - তৎকালীন পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ভিত্তির সঙ্গে তার উভমুখী সম্পর্কের বিশ্লেষণের বিদ্দ্বজ্জনসুলভ দায় ও দায়িত্ব নিলেন অরবিন্দ পোদ্দার গবেষণা গ্রন্থ, 'বঙ্কিম মানস' রচনার মাধ্যমে।

'বঙ্কিম মানসে অলক্ষ্যে মার্কসের 'Critique of Political Economy'-তে ঘোষিত Preface-এ দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় ইতিহাস ব্যাখ্যার নির্দেশিকা, "The aggregate of those productive relationship constitute the economic structure of the society, the real basis on which a juridical and political structure-to which defenite forms of social consciousness corresponds."

প্রতিটি স্তরে অনুসরণ করেছেন তিনি। এই ভাবনাটিই ইংল্যান্ডের শিল্প বাণিজ্যের ধ্বংস জরুরি ও অনিবার্য ছিল। "ইংরেজ আমলেই ভারতে সর্বপ্রথম জমির নগদ অর্থমূল্য ও তার ব্যক্তিগত স্বত্ব স্বামিত্বের আধুনিক চেতনা দেখা দেয়। কারণ, কৃষিনির্ভর গ্রাম্যজীবন বৃহত্তর পৃথিবীর আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে নগদ টাকায় বেচাকেনার ব্যাপক প্রচলন, জমির দাম বাড়তে থাকে। ব্যবহারিক রাজনীতি বিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যায়, ইহা ভারতীয় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ কাঠামোকে ধ্বংস করিয়েছে, আঘাত করিয়াছে সেই সমাজের চিন্তাধারাকে। আর যতই অনিচ্ছাসত্ত্বে হউক না কেন, ভারতে নব ভাবধারায় পুষ্ট রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন বুদ্ধিজীবী শ্রেণি সৃষ্টি করিয়াছে।"

বাংলার রেনেসাঁস তথা নব সংস্কৃতির উন্মেষ ও তার প্রবর্তকদের ভবাদর্শের প্রসঙ্গে অরবিন্দ পোদ্দার লিখছেন, "স্বয়ংসম্পূর্ণ অন্য-নিরপেক্ষ সমাজের অন্তর্গত বিভিন্ন পরিবারের পারিবারিক সম্পর্ক, লেনদেনের জন্য ছিল নির্দিষ্ট বিধান। সর্বোপরি ছিল বর্ণপ্রথার অনুশাসন। পক্ষান্তরে স্বয়ংসম্পূর্ণতা গোটা সমাজের অর্থনৈতিক বিন্যাসের প্রধান পরিমাপক হওয়ায়, এবং শ্রমের উৎপাদন শক্তি কম ছিল বলিয়া, সেই সমাজের অর্থনৈতিক জীবন ছিল অনিশ্চিত।"

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ইংরেজী শিক্ষার অভিঘাতে যে ধরনের চেতনার পক্ষে সম্মতি নির্মিত হয় তার চরিত্রটি অরবিন্দ পোদ্দার মেকলের শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবে স্মরণ করেছেন, "ইংরেজ যাদের শাসন করবে, তাদের মধ্যে দোভাষীর দায়িত্ববান এবং ইংরেজ শাসকদের প্রতি যত্নবান গোষ্ঠী তৈরী করা হবে। যারা রক্তে ভারতীয়, কিন্তু রুচি মতামত নীতিজ্ঞানে ইংরেজ।"

এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গে অরবিন্দ পোদ্দার বলছেন, "এই শিক্ষা ভারতীয় জনগণের বৃহত্তর জীবনের সহিত অথবা সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সামাজিক ও জীবনাচরণের স্বাভাবিক ধারার, এই ব্যবস্থার সামঞ্জস্য ও সংযোগ ছিল অতিশয় ক্ষীণ।" এই বিচ্ছিন্নতা ও ঔপনিবেশিক উৎপাদন প্রক্তিয়ার সপক্ষে সম্মতি নির্মাণের জটিল দ্বন্দ্বের গ্রন্থিসমূহ শুধু উন্নোচনই করেন তিনি আজীবন। নিম্নবর্গভুক্ত শোষিত মানুষের ভাবনা চেতনার সঙ্গে মধ্যবিত্ত নেতৃত্বের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অনম্বয়ের বিষয়গুলিও বিশ্লেষণ করেছেন। স্বীয় আদর্শে স্থিত বিদ্দ্বজ্জন অরবিন্দ পোদ্দার 'বঙ্কিম মানস' রচনার চার দশক পরে 'বাংলার রেনেসাঁস চরিত্র বৈশিষ্ট্য' প্রবন্ধে লেখেন, "রেনেসাঁসের অন্তর্লীন বাধ্যবাধকতার সূত্রে এর আত্মউন্মোচন ঘটেছে সাম্রাজ্যবাদ নিরূপিত নিয়ন্ত্রণ রেখার সীমায় থেকে। অভিব্যক্তি লাভ করতে হয়েছে রক্তের মাধ্যমে পাওয়া নয় এমন ভাষায়, বিবর্তিত হয়েছে ভারসাম্যহীনভাবে উপর থেকে নীচে। এই অস্বাভাবিক উন্মেষ ও উদ্ভাসের যে স্বাভাবিক বিকৃতি ও বিপন্নতা এর অঙ্গাবরণ।"

ইতিহাসে মানব সমাজের ভূমিকা সমন্বিত মার্কসের ব্যাখ্যা, অর্থাৎ মানুষ যদিও নিজেই ইতিহাস রচনা করে, যা সর্বদা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘটে না। নিজেরা সর্বদা ইতিহাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করতেও পারে না। কিন্তু যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, অতীত যেভাবে বর্তমানকে প্রভাবিত করবে, খুব সচেতনভাবেই তার মুখোমুখি হতে হয়। এই ব্যাখ্যাই ছিল অরবিন্দ পোদ্দারের শানিত বোধির দিক নির্দেশিকা। নির্মোহ অথচ বৈজ্ঞানিক বোধিসহ রেনেসাঁস তথা দেশে গণসংগ্রামের শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গী ব্যাখ্যা করতে কথনও দ্বিধা করেননি। কলকাতা কেন্দ্রিক রেনেসাঁসের নায়কদের সম্বন্ধে বলেছেন, "এক একটি পরিবার ধরে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতায় যেসব পরিবার ধনগরিমা এবং এবং সামাজিক আধিপত্যের আসনে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং যাদের সন্তানগণ প্রাচ্য পাশ্চাত্ত্যের সংঘাত থেকে নতুন এক সংস্কৃতির নির্মাতা রূপে আবির্ভূত হন, তাদের সকলেরই ঐশ্বর্য এবং আভিজাত্য ঔপনিবেশিক কাঠামোর দৌলতেই সৃষ্ট হয়েছিল।"

অনুশীলন সমিতি সহ দেশের গুপ্ত সংগঠন প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠের প্রভাব স্বীকার করেও অনেকে এই উপন্যাসে বঙ্কিমের সাম্প্রদায়িক মনোভাব চিহিৃত করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে দেশের জাতীয়তাবোধের উন্মেষকালে একটি নিম্নবর্গের বিদ্রোহেকে একটি সম্ভাব্য বিকল্পরূপে যুবকদের কাছে উপস্থাপিত করা একজন ঔপনিবেশিক আমলার পক্ষে অবশ্যই কঠিন কাজ। বঙ্কিমমানসে সেদিনকার ত্রিশবর্ষীয় গবেষক অরবিন্দ পোদ্দার বিশেষ করে অনুশীলন সমিতিগত ঐতিহ্যের কারণে বঙ্কিমের সমালোচকদের উত্তর দেবার জন্য সচেষ্ট। ইংরেজ শাসকদের রোষানল থেকে মুক্তি পেতে এবং বাংলার বিপ্লব প্রচেষ্টায় লক্ষ্যে ইতিবাচক বার্তা দিতেই 'ইংরেজ' 'সাগরপারের শাসক' শব্দগুলি বঙ্কিম প্রতিস্থাপন করেন 'নেড়ে' 'যবন' ইত্যাদি শব্দ দিয়ে। এই চতুরতা কতটা নেচিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সেই বিষয়টি তখন ছিল ভবিষ্যতের বিচার্য। অরবিন্দ পোদ্দার বঙ্কিমের রচনার বিশ্লেষণে বাস্তবিকই একটি মৌলিক দৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করেছেন, "যে রাজা রাজ্য পালন করেন না, যে শাসন ব্যবস্থায় প্রজাগণ অকারতরে প্রাণ ত্যাগ করিতে বাধ্য হয় - আনন্দমঠের সন্তানগণ সেই অকুন্ঠ অরাজকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং নিশ্চিত জয়লাভ করে। আর শুধু জয়লাভই নয়, ন্যায় ধর্মের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে।"

শুধু তাই নয় বাংলার রেনেসাঁসের প্রবর্তকদের শ্রেণিভিত্তি বিস্মৃত না হয়েও তিনি নির্দ্বিধায় সেই কালান্তরের যুগকে চিহ্নিত করতে বিলম্ব করেননি, "রামমোহন রায়ের ব্যবহার বুদ্ধি প্রণোদিত বিদ্রোহ, বিদ্যাসাগরের ব্যবহারিক সংগ্রাম এবং মধুসূদনের রসঘন জীবনবাদের ঐতিহ্যের অধিকারী হইয়া বঙ্কিমের পক্ষে সেই ঐতিহ্যকে অগ্রগামী করাই স্বাভাবিক ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঐ ধারার স্বাভাবিক পরিণতি বলিয়া আমি মনে করি।" তাঁদের সামাজিক ও শ্রেণিগত অবস্থান ব্যক্তিগত ভাবে সুখকর ছিল এবং দেশের সর্বজনীন কল্যাণের পক্ষেও যথেষ্ট ফলপ্রসু ছিল না। তথাপিও তাদের ইতিহাস নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক দ্বন্দ্বই ছিল দোলাচলের কারণ।"

জেমস মিল, ভিনসেন্ট স্মিথ বা ম্যাক্সমুলার প্রমুখের ভারতেতিহাসের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক যুগপর্বের উপস্থাপনা ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে উচ্চবর্ণের হিন্দু এলিটের মনোভাবকে প্রভাবিত করেছে। অরবিন্দ পোদ্দার বিদেশি এবং শিল্পবিপ্লবের অভিঘাত সম্পন্ন জ্ঞানচর্চা ও সভ্যতার সংস্পর্শে স্থায়ী ফললাভের জন্য রেনেসাঁসের প্রবর্তকদের উৎসাহকে অস্বাভাবিক মনে করেননি। তাই বঙ্কিমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সত্ত্বেও সমালোচনা করে বলেছেন, "বঙ্কিম মনের দৃষ্টি দিয়া দেখিয়াছিলেন প্রাচীন স্বদেশী সমাজকে, তাই বর্তমান কালের জটিল ক্রম রূপান্তরশীল সমাজকে তিনি দেখেন নাই। আবিষ্কার করেন সুদূর অতীতকে। সেই অতীত হিন্দু অতীত। - ব্যবহারিক জীবনের ব্যর্থতার পরিণামে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল - সুতরাং পরশাসিত জাতি হিসাবে অতীতের গৌরবময় পৃষ্ঠাকে অবলম্বন করিয়া অহঙ্কারে গর্বিত হওয়া বোধ করি অস্বাভাবিক নয়।"

রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে বাংলার radical intellectuals যথা ডিরোজিও, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, রাধানাথ শিকদার, অক্ষয় কুমার দত্ত, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন প্রমুখ রেনেসাঁসের প্রবর্তকের ভূমিকার দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী ব্যাখ্যার ধারা বহন করে তিনি কেশব সেন, বিবেকানন্দ হয়ে পৌঁছেছেন সে যুগের বিপ্লবী তরুণদের যুগপুরুষ রবীন্দ্রনাথে। অন্য এক রবীন্দ্রনাথকে, সময় স্বদেশ সভ্যতার সংকট এবং সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসিবাদের প্রেক্ষিত তাঁর এই রবীন্দ্র-অন্বেষণ 'রবীন্দ্রনাথ/রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব' বা 'হে বন্ধু বিদায়'-এ শুধু নয়, জীবনপথে প্রতিটি মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথ এসেছেন তাঁর কাছে। আলো এবং অন্ধকারে।

বিদ্যাসাগরকে তিনি সমকাল অতিক্রান্ত মনীষীর বেদীতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, "সেকালের সমপর্যায়ের খ্যাতিমান বিদগ্ধ অথবা নতুন সাংস্কৃতিক চেতনায় অন্য কোন মানুষকে অবলম্বন করে অনুরূপ চিত্র নির্মাণ করা যায় না। যায় শুধু বিদ্যাসাগরকে নিয়ে।" যে বিচ্ছিন্নতাকে তিনি রেনেসাঁসের প্রবর্তকদের ব্যাধি বলে চিহিৃত করেছিলেন তার বিষাদে বিদ্যাসাগর কখনো দগ্ধ হননি। "কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কথায় বিদ্যাসাগরের চটি জুতা তাঁর নিজেরই চটি জুতা।" দার্শনিক প্লেখানভের ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা সম্পর্কিত চিরায়ত বাণীর প্রতিধ্বনি করেন অরবিন্দ পোদ্দার বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে, "ইতিহাসে ব্যক্তি বিশেষের ভূমিকা আলোচনার সময় স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, সীমা চিহ্নিত করাটাই আসল কথা নয়। সীমার মধ্যে বিচরণশীল থেকেও কোন কর্ম ও ব্যক্তিত্ব সীমাকে লঙ্ঘন করে এবং কালান্তরের পথ দেখায়, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাই তার প্রবহমানতা ও সৃষ্টিশীলতার মধ্যে আবিষ্কার করা, ইতিহাসে ব্যক্তি বিশেষের ভূমিকা চিহিৃত করা।" এভাবেই স্বভাবসিদ্ধ সাবলীল ভঙ্গিতে ভাবীকালের committed intellectual-এর কাছে ইতিহাসের পুননির্মাণের দায় অর্পণ করেছেন।

রবীন্দ্রনাথকে অরবিন্দ পোদ্দার ঔপনিবেশিক ভারতের এবং সমগ্র বিশ্বের আর্থসামাজিক তথা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখেছেন। নির্মম এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত হয়েছে তাঁর বিপ্লববাদ প্রসূত চিন্তাচেতনা এবং কবির প্রতি অভিমান দ্বারা। রবীন্দ্রনাথের শৈশবে পারিবারিক পরিমন্ডলের স্বাদেশিকতার মনোভাব থেকে শুরু করে পরিণত যৌবনে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে এগিয়ে আসা, অসংখ্য কবিতা গানে বক্তৃতায় বিপ্লবী তরুণদের উদ্দীপ্ত করা সত্ত্বেও কখনো কখনো চরম দোলায়মানতা, জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চে স্বদেশ ও স্বরাজ্যের লক্ষ্যে গণ জাগরণের তত্ত্ব, কখনো বা গান্ধী-নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা, কর্তাভজা জমিদার ও পশ্চিমী মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিদের নির্লজ্জ ইংরেজ শাসকদের তাঁবেদারির বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ, ইতালির ফ্যাসিবাদী নেতা মুসোলিনীর উন্নয়ন প্রদর্শনীতে বিভ্রান্তি এবং অবিলম্বে রোমা রোলাঁ প্রমুখের প্রভাবে ইতিহাসের আবর্জনা হওয়া থেকে মুক্তি, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে বিশ্ববিবেকের প্রতিভূ হওয়া, কংগ্রেসে গান্ধী সহ দক্ষিণপন্থীদের প্ররোচনায় সুভাষচন্দ্র বিরোধী চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ - অর্থাৎ চলমান আর্থসামাজিক পরিসরে সূদীর্ঘ রবীন্দ্রজীবনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছেন অরবিন্দ পোদ্দার।