আরেক রকম ● নবম বর্ষ পঞ্চদশ সংখ্যা ● ১-১৫ আগস্ট, ২০২১ ● ১৬-৩১ শ্রাবণ, ১৪২৮

সমসাময়িক

আফগানিস্তানে আবার তালিবান


আফগানিস্তান। ৩৪টি প্রদেশ আর ৪০০ জেলার সমাহার এক ভূখণ্ড। উত্তরে তাজিকিস্তান, দক্ষিণে পাকিস্তান ও ইরান, পূর্বে পাকিস্তান আর পশ্চিমে উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও ইরান। উত্তর পূর্ব কোণায় চিনের সঙ্গে ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য স্থলভূমি ঘেরা এই দেশের উপর বরাবরই সকলের নজর। ইয়োরোপ থেকে স্থলপথে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আসার জন্য আফগানিস্তানকে অতিক্রম করতে হয়। আবার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যে কোনো দেশ থেকে বিমানে ইয়োরোপ যেতে হলে আফগানিস্তানের আকাশ ব্যবহার না করে উপায় নেই। হয়তো সেই কারণেই শক্তিধর দেশগুলো তিন কোটি জনসংখ্যার এই দেশটির উপর সবসময়ই কড়া নজর রাখে অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

এদিকে আবার আফগানিস্তান নিজের স্বাধীন সত্ত্বা বজায় রাখতে সচেতন। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় যে স্বাধীনতা রক্ষায় আফগানিস্তানকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। একশো বছরের কিছু আগে ১৯১৯-এ ব্রিটিশ শক্তিকে পরাজিত করে স্বাধীনতা বজায় রেখেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু গোপনে অনবরত চলেছিল ষড়যন্ত্র। ফলে ১৯২৯-এ রাজা আমানুল্লাহকে সরিয়ে দিয়ে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় মাৎসন্যায়। কয়েক বছর পর ক্ষমতাসীন হলেন নতুন রাজা। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশ শাসন করতেন। বিশেষত উত্তরের প্রতিবেশী প্রবল শক্তিশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নির্ভর করতেন। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য।

দেশের উত্তর ও উত্তর সীমানায় সোভিয়েত ইউনিয়নের উপস্থিতির জন্য কোনো বহিঃশত্রু সরাসরি আক্রমণ হানতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চক্রান্ত চলতেই থাকে। সেইসব ষড়যন্ত্রের আন্দাজ পেয়ে হঠাৎ করেই ১৯৭৯-তে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। এতে নিঃসন্দেহে দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর উন্নতি হয়। আফগানিস্তানের সমাজ জীবনে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু কোনো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়নি। একই সঙ্গে গোপনে শুরু হয় গোঁড়া রক্ষণশীল মৌলবাদীদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া। এই ষড়যন্ত্রে ইন্ধন যোগায় সমস্ত সোভিয়েত বিরোধী শক্তি। গোপনে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ক্রমশঃ শুরু হয় সোভিয়েতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ। অর্থাৎ ১৯৮০-র দশকেই আফগানিস্তানে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ১৯৮৯-এ সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও চলতে থাকে মুজাহাদিন নামের মৌলবাদীদের সশস্ত্র সংগ্রাম। অবশেষে ১৯৯৬-এ গৃহযুদ্ধ দীর্ণ আফগানিস্তানের ক্ষমতায় চলে আসে কট্টর গোঁড়া রক্ষণশীল মৌলবাদীদের সংগঠন তালিবান। বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে আফগানিস্তানে নেমে আসে মধ্যযুগীয় অনুশাসন।

২০০১-এর সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের হামলার অব্যবহিত পরেই গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে অবতীর্ণ হয় মার্কিন সেনাবাহিনী। শুরু হয় মার্কিন অস্ত্রে সমৃদ্ধ তালিবানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি লড়াই। অচিরেই তালিবান শাসনের হয় অবসান।

গোষ্ঠী ব্যবস্থায় বিভক্ত আফগান সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সম্পন্ন গোষ্ঠীর থেকে বেছে নেওয়া হয় নতুন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সহযোগিতায় স্থাপিত হয় আইস্যাফ (ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ফোর্স)। খাতায়কলমে বলা হল যে আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আইস্যাফ সাহায্য করবে। বাস্তবে পুরো দেশটাই চলে গেল আইস্যাফ-এর নিয়ন্ত্রণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, কানাডা এবং ন্যাটো গোষ্ঠির সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র আইস্যাফ-এর সদস্য। সদস্য রাষ্ট্রগুলি সশস্ত্র সেনা ছাড়াও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক পরিষেবার কাজের জন্য নিজের দেশের উপযুক্ত নাগরিকদের আইস্যাফ-এ নিযুক্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, সামরিক বিমান ইত্যাদি এবং অবশ্যই সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। আবার অনেক দেশ সৈন্য বা অস্ত্রশস্ত্র নয় আনুষঙ্গিক পরিষেবায় অংশ নেয়। যেমন আইস্যাফ নিয়ন্ত্রিত ফৌজি হাসপাতালে ডাক্তাররা প্রধানত ইতালি এবং ফ্রান্স থেকে আসেন। আর ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া প্রভৃতি দেশ পাঠায় নার্স ও চিকিৎসা সহায়ক।

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে আপাতদৃষ্টিতে আইস্যাফ-এর কড়া নজরদারিতে আফগানিস্তানে একটা স্থিতাবস্থা বিরাজ করছিল। ইতিমধ্যে দু'বার সাধারণ নির্বাচন আয়োজিত হয়। মনোনীত প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার সাধারণ নির্বাচনে জিতে আসেন। পরবর্তী নির্বাচনে নিয়ম অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্ট কার্যভার গ্রহণ করেন।

ভারত, চিন, বাংলাদেশ প্রভৃতি বিভিন্ন উন্নয়ন ক্রিয়াকর্মাদিতে অংশ নেয়। রাজধানী কাবুল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে লোগার প্রদেশের মেস্-আয়ন্যাক-এ চিন প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২০০৭-এ গড়ে তুলেছে এক তামা নিষ্কাশন প্রকল্প। ভারতের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে আফগানিস্তানের সংসদ ভবন। এছাড়াও ভারতের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে তাজিকিস্তান থেকে কাবুলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য এক দীর্ঘ ট্রান্সমিশন লাইন। সালমা ড্যাম ভারতের উদ্যোগে গড়ে তোলার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও জলসেচ ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ আস্তে ধীরে মাইক্রো ফিনান্স পরিকাঠামো বাড়িয়ে চলেছে। উন্নয়নের কাজ চললেও সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী নানারকমের নামে নিয়মিত সশস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ২০২০-র বিশেষ দিনে অর্থাৎ ২৯-শে ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তালিবানের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হয়। আফগানিস্তানে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়, শান্তিচুক্তির জন্য দুই পক্ষ দোহা-য় উপস্থিত হয়েছিল। আফগানিস্তান সরকারের কোনো প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে দর্শক হিসেবে অন্য বহু দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত।

তালিবানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সিদ্ধান্ত হয়, আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না তালিবান। অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থে‌কে ১৪ মাসের মধ্যে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। এই প্রথম তালিবানকে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ওয়াশিংটনের আফগান বিষয়ক প্রধান দূত এবং তালিবানের প্রাক্তন সেনাপতি এবং পরবর্তীকালে আলোচনাকারী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ভারত সরকার বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে স্বাগত জানায়। আফগানিস্তান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতীয় বিবৃতিতে বলা হয় যে আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এমন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত কাবুলে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সব রকম সহায়তা করবে। অর্থাৎ পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের এলাকা হিসেবে তুলে ধরে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে বলে আবার জানান দেওয়া হয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। প্রকারান্তরে কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তান সম্পর্কে মার্কিন-তালিবান শান্তি চুক্তির দিনেই বিতর্কিত ভূখণ্ড নিয়ে নতুন করে বার্তা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছিল।

দোহা-য় চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে তালিবান এবং অন্যান্য নানান নামের মৌলবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৎপর হয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের কাজ শুরু করে। বিশেষতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে ২০২১-এর সেপ্টেম্বরের আগেই সমস্ত মার্কিন সৈন্য অপসারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাগরাম-এ অবস্থিত আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড়ো মার্কিন সেনাশিবির সম্পূর্ণভাবে গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় থাকা সেনানীরাও দেশের দিকে রওনা দিচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই তালিবান উজ্জীবিত। দেশের বেশিরভাগ জেলায় তালিবান কর্তৃত্ব ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। তালিবান দেশের সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো দখল করতে করতে কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে। এ যেন গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার পরীক্ষিত পদ্ধতির প্রয়োগ।

তালিবান সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশগুলো হঠাৎ করে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। কাতার, দুশানবে ইত্যাদি জায়গায় আয়োজিত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক আলোচনার টেবিলে তালিবান প্রতিনিধি উপস্থিত থাকছেন। এইসব আলোচনায় ভারতকে অবাঞ্ছিত অতিথির ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেরিয়ে তালিবান সম্পর্কে ভারতের ভাষ্য বলার চেষ্টা করছেন। আসলে ভারতের আশঙ্কা আফগানিস্তানে ভারতীয় সহযোগিতায় নির্মিত ও নির্মীয়মান প্রকল্পগুলি তালিবান শাসনে আক্রান্ত হতে পারে। এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।

সবমিলিয়ে তালিবান এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। আর আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে কেউ এখন ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না। অথচ দেশের সম্পন্ন পরিবারের সদস্যরা এখন দেশত্যাগ করে অন্য কোনো দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছেন।

পাকিস্তান তো এখন আগের অবস্থান থেকে সরে এসে অন্য অভিমত ব্যক্ত করছে। কিছুদিন আগেও আফগানিস্তানের তালিবানের পুনরুত্থানের পিছনে ইসলামাবাদের ‘ভূমিকা’র অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এখন সরাসরি তালিবান জঙ্গিদের পক্ষে কথা বলছেন। পাক প্রধানমন্ত্রীর মতে তালিবান কোনও সামরিক বাহিনী নয়। সাধারণ মানুষ। আমরা কী ভাবে তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানে সায় দিতে পারি!

ওদিকে চিনের তিয়ানজিন শহরে ২৮শে জুলাই ২০২১ চিনের বিদেশমন্ত্রী তালিবানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনার শেষে চিনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে যে চিন প্রত্যাশা করে তালিবান আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে দেশের পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় আফগানিস্তানের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মোটেও ভালো নয়। এই পটভূমিতে সৈন্য প্রত্যাহার করলেও আফগানিস্তানে নামে বা বেনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আগ্রহী। তার উজ্জ্বল উদাহরণ তুরস্ক কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনা ও পাহারাদারির দায়িত্ব পালন করতে উৎসাহী। অর্থাৎ ঘুরপথে ন্যাটো আফগানিস্তানে উপস্থিতি বজায় রাখতে চায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার জন্য তালিবানের মতো মৌলবাদকে মদত দিতে আপত্তি নেই। এবং এটাই স্বাভাবিক। চূড়ান্ত বিচারে রঙ ভিন্ন হলেও মৌলবাদীদের লক্ষ্য একই থেকে যায়।

সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের ঘটনা প্রবাহ আরো একটি বিষয় প্রমাণ করেছে। ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছিল উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ‘War on Terror’। সেই যুদ্ধের প্রথম বলি ছিল আফগানিস্তান, যেখানে নাকি তালিবানকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্যে। এই ‘War on Terror’ নীতির ফলেই গদিচ্যুত করে খুন করা হয় সাদ্দাম হুসেন ও গাদ্দাফিকে। কিন্তু যেখান থেকে এই তত্ত্বের শুরু সেই আফগানিস্তানে আবার আসিছে তালিবান। আর গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ভয়ানক উগ্রপন্থী ও মৌলবাদী শক্তি আইসিস-এর দাপাদাপি। ২০০১ সালে অনেকেই বলেছিলেন উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে এইভাবে যুদ্ধ করে সাফল্য পাওয়া যায় না। আমেরিকা কারো কথা শোনেনি। আজ ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদায় নিচ্ছে আর ফিরছে তালিবান। ইতিহাসের এই নির্মম পরিহাস মেনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কি স্বীকার করবেন যে ‘War on Terror’ একটি ভুল নীতি ছিল? কখনই নয়। কারণ মার্কিন রাষ্ট্রপতির অভিধানে সত্য নয়, শেষ কথা বলে ক্ষমতা।