আরেক রকম ● নবম বর্ষ চতুর্দশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ জুলাই, ২০২১ ● ১-১৫ শ্রাবণ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

বাদলা মেঘে বজ্রপাতঃ বিপর্যয় মোকাবিলার প্রেক্ষিত আর প্রতিকার

পার্থপ্রতিম বিশ্বাস


‘খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাঁহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন।… কটাক্ষ করিয়া আকাশের দেবতা দিগন্ত কাঁপাইয়া এক হুংকার ছাড়িলেন… তারপর বৃষ্টি ঝাঁপিয়া আসিল’। - এরপর পাঠকের বুঝতে অসুবিধে হয়নি বাজ পড়ে হারু ঘোষের মৃত্যুর ঘটনা কীভাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরে ছিলেন তাঁর ‘পুতুল নাচের ইতিকথায়’। পুতুল নাচের অদৃশ্য সুতো যে কোনো অদৃশ্য শক্তির হাতে বাঁধা নেই বরং তা বাঁধা পড়েছে মানুষের নিজের হাতেই এই সুরই ছিল সেই উপন্যাসের মূল সুর। মানুষ সব জেনেও পুতুল হয়ে থাকতে চায় কি? এমন প্রশ্ন নতুন করে ভিন্ন প্রেক্ষিতে উঠে এলো সম্প্রতি এরাজ্যের করোনাকালের মানচিত্রে। রাজ্যে এক বিকেলের কালবৈশাখী ভরা বাজের ছোবলে তিরিশ জন বঙ্গবাসীর পরিণতি হল সেই হারু ঘোষের মতোই। সেই বাজ পড়ে নিহত মানুষজনের সিংহভাগই ছিল প্রান্তিক আয়ের চাষি। যারা ঝড়-জলের দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে চাষের জমিতে চাষ করতে গিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য বজ্রাঘাতে একদিনে এতো মানুষের মৃত্যু এরাজ্যে বেনজির ঘটনা। এই প্রেক্ষিতেই প্রয়োজন বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মানুষের বাঁচার কৌশল কেমন হবে এই একুশ শতকে তা নিয়ে পর্যালোচনা । আর প্রয়োজন প্রশাসনিক এবং সামাজিক উদ্যোগের রূপরেখা নির্মাণ।

একুশ শতকে মানুষ ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, শৈত্য এবং তাপপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু দেশের ১৩০ কোটি মানুষের ১% মানুষেরও কোনো ধারণা নেই যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এদেশে সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে ফি বছর। এই প্রেক্ষিতেই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সাম্প্রতিক NCRB রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় বজ্রপাতে মৃত্যুই এদেশে সর্বাধিক। দেশের মোট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যুর ৩৪.২% বজ্রপাতে, শৈত্যপ্রবাহে ১১% এবং হিট স্ট্রোকে ১২.৯%। অথচ দেশে বন্যা কিংবা ভূমিকম্পের মত বিষয়ে মোকাবিলার যে সরকারি প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা থাকে তার সিকিমাত্র দেখা মেলে না বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষার পরিকল্পনায়। সম্প্রতি ‘The south west monsoon lightening report-2019’-এ প্রকাশিত যে এদেশে বাজ পড়ার ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। ঐ বছরে প্রাক বর্ষা আর ভরা বর্ষার মরসুমে সারা দেশে ৯২ লক্ষ বাজ পড়ার ঘটনা ঘটেছে, যে বাজের ৬২% মেঘের মধ্যে মিলিয়ে গেলেও আকাশের মেঘ থেকে মাটিতে এসে আছড়ে পড়েছে ৩৫ লক্ষ বাজ। আর মাটিতে এসে আছড়ে পরা বাজের ঘটনাতেই ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। হাতের মুঠোয় থাকা এমন তথ্যের ভারে কখনও মানুষ সতর্ক হচ্ছে আবার কখনও মানুষ সেই তথ্যের গুরুত্ব উপেক্ষা করে চলেছে বেপরোয়া ঢঙে। এটা আজ বোঝা জরুরি যে অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নিহতের চেয়ে আহতের সংখ্যা ঢের বেশি হলেও বজ্রপাতের ক্ষেত্রে সেই অনুপাতটি ঠিক উলটো। ফলে এমন বিপর্যয় মোকাবিলায় বিপর্যয়ের আগে সতর্কতা এবং সচেতনতা গড়ে তোলাটা এখন বহুগুণে জরুরি। কারণ যে দ্রুততায় ক্ষণিকের ব্যবধানে এই বিপর্যয় নেমে আসে সেক্ষেত্রে বিপর্যয়কালীন কিংবা বিপর্যয় পরবর্তী তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রায় অসম্ভব।

বিপর্যয়ের চরিত্র ভিন্ন হলে তার মোকাবিলার ধরনও ভিন্ন হয়। যেমন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা এখন প্রযুক্তি নির্ভর উপায়ে অনেক আগে থেকে করা সম্ভব বলেই ঘূর্ণিঝড়ে সম্পত্তিহানি ঘটলেও প্রাণহানির সংখ্যা কমানো যাচ্ছে। এমন সতর্কতা বন্যা, খরা, শৈত্য এবং তাপপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যত দিন আগে থেকে করা যায় তেমনটা করা সম্ভব নয় বজ্রপাতের ক্ষেত্রে। যদিও এখন প্রযুক্তি নির্ভর উপায়ে বজ্রপাতের পূর্বাভাস কয়েক ঘণ্টা আগে পাওয়া যায় এবং সেক্ষেত্রে বজ্রপাতের সম্ভাব্য ক্ষেত্রের আগাম আন্দাজ করা যায়। কিন্তু এত অল্প সময় আগে পাওয়া পূর্বাভাষ সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছানোটাই এখন একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। সেই কারণে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাষ অনেকটা আগে থেকে পাওয়ার কারণে যে তৎপরতায় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া বারণ করা কিংবা উপকূলের বিপজ্জনক এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা যায়, বাজের ক্ষেত্রে ঠিক সেইভাবে এমন বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারী পরিকল্পনায় পঞ্চায়েত এবং অসরকারি সমাজসেবী সংগঠনগুলির সমন্বয়ে একদিকে ধারাবাহিক জন সচেতনতার প্রচার যেমন জরুরি তেমন জরুরি কিছু আপতকালীন পরিকাঠামো নির্মাণ এবং তার সংস্কার। বজ্রপাতের পূর্বাভাষ কাঙ্খিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রয়োগ ভাবা জরুরি। বিশেষত এখন দেশের প্রতিটা কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক আকাউন্ট এবং আধার কার্ড থাকার কারণে তাঁদের বাসস্থান চিহ্নিত করে তাঁদের মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্ট ব্লক লেভেলে এলাকার বিপদ সংকেত ঘণ্টা চারেক আগেই পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি রেডিও এবং টেলিভিশন ব্যবস্থাতেও আগাম এই বিপর্যয়ের পূর্বাভাষ প্রচার জরুরি বিশেষত প্রাক বর্ষার মরসুমে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণার ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দেশের মধ্যে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলিকে বিপদের মাত্রার নিরিখে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়েছে ঠিক যেমনটা করা হয়ে থাকে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে। সেই নিরিখে জেলার বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে মানুষের কাছে বাজের পূর্বাভাষ দিতে পারলে মানুষকে আরও বেশি সচেতন করা সম্ভব। এটা খেয়াল রাখা উচিত বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে মূলত প্রাক বর্ষার মরশুমে। ফলে এমন বিপদের এই মরশুম জুড়ে মানুষকে সতর্ক করার বাড়তি প্রয়াস থাকলে বজ্রপাতে প্রাণহানি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। কিন্তু কৃষকেরা প্রাক বর্ষার মরশুমে চাষের তাগিদে যেভাবে ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়েও মাঠে যায় সেকারণে বজ্রপাতে প্রাণহানির সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এদেশে গত দু-দশকে বজ্রপাতে ৯৬% মানুষের মৃত্যু হয়েছে গ্রামীণ এলাকায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আকাশে মেঘ থাকলে বৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা যত বেশি সে তুলনায় আকাশে মেঘ থাকলেই বাজ পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ সব মেঘই বজ্রগর্ভ মেঘ নয়। ফলে ঝড়বৃষ্টির মরশুমে খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই চাষের জমিতে পড়ে থাকেন কৃষকেরা। এখানেই ভাবা যেতে পারে মাঠের বিস্তীর্ণ চাষ জমির সীমানার সংযোগস্থলে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলিতে ছোট ছোট পাকাঘর নির্মাণ যেগুলিতে থাকবে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা। খানিকটা ‘সাইক্লোন শেল্টারের’ মডেলে ‘লাইটনিং শেল্টার’। এমন পরিকল্পিত পাকা ঘরের ব্যবস্থা মাঠের মধ্যে থাকলে প্রবল ঝড়বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের সময় চাষিরা নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে। বছরের অন্য সময়ে সেই ‘লাইটনিং শেল্টার’-গুলিকে পাম্প হাউস কিংবা চাষের যন্ত্রপাতি রাখার জায়গা হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে। আজ খেয়াল রাখা দরকার যে চাষের প্রয়োজনে মাঠে যাওয়া মানুষেরা প্রবল বৃষ্টিতে গাছতলায় আশ্রয় নিতে গিয়েই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পড়ছে। গ্রামাঞ্চলে বাজ পড়ে মৃত মানুষের দশ জনের মধ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে ঝড়বৃষ্টির সময় গাছতলায় আশ্রয় নিতে গিয়ে। ভেজা গাছ বিদ্যুতের সুপরিবাহী হওয়ার কারণে কয়েক লক্ষ ভোল্টের বাজের বিদ্যুৎ মাটিতে পৌঁছানোর আগেই উঁচু গাছকেই বেছে নেয় তার পাতাল প্রবেশের পথ হিসাবে । আর সেই ভয়াবহ উচ্চ শক্তির পাতাল প্রবেশ পথের আশপাশে যারা দাঁড়িয়ে থাকে বাঁচার অপেক্ষায় তাঁরাই অজান্তে সবার আগে মৃত্যুপথে প্রবেশ করে। পদার্থ বিদ্যার সহজ নিয়ম মানলে এমন পরিবাহী মাধ্যমের ওপর ভর করেই বাজের বিদ্যুৎ আকাশ থেকে বাতাস হয়ে মাটিতে প্রবেশ করে। সেই কারণে, জলাশয়, ভেজা গাছ, উঁচু বাতিস্তম্ভ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেই বাঁচতে হবে মানুষকে। পাশাপাশি গ্রাম কিংবা শহরের রাস্তার ধারে পাকা বাসস্ট্যান্ডগুলিতে পঞ্চায়েত ও পুরসভার উদ্যোগে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা রাখা সুনিশ্চিত করতে হবে। আর এই ব্যবস্থা সহজে এবং সুলভে করা সম্ভব।

বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা গ্রামাঞ্চলে বেশি ঘটলেও বজ্রপাতের সংখ্যা দেশজুড়ে শহরাঞ্চলে বেড়ে চলেছে। বছর দুয়েক আগে কলকাতা শহরেই বিবেকানন্দ পার্কে প্র্যাকটিস চলাকালীন তরুণ এক ক্রিকেটারের মৃত্যু কিংবা দিনে দুপুরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখতে আসা দুই পর্যটকের মৃত্যু শহরের মানুষের কাছেও ছিল এক বড় ধাক্কা। শহরে পাকা বাড়ির সংখ্যা তুলনায় বেশি বলেই বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা কম। কারণ পাকা বাড়ির কংক্রিটের ছাদ বিদ্যুতের অপরিবাহী। আর ঠিক উলটোটা হল কাঁচা বাড়ির বৃষ্টি ভেজা খড়ের কিংবা টিনের চাল বা ভেজা মাটির দেওয়াল। যে বস্তু বিদ্যুতের কুপরিবাহী তার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুতের প্রবাহ বাধা পায় বলেই পাকা বাড়ির মধ্যে বজ্রপাতের সময় থাকা তুলনায় অনেক নিরাপদ কাঁচা বাড়ির থেকে। কিন্তু বাজ পড়ার সময় পাকাবাড়ির মধ্যেও বৈদ্যুতিক সংযোগস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা প্রয়োজন। সেই সময়, মোবাইল চার্জ দেওয়া, টিভি বা মাইক্রো ওভেন জাতীয় যন্ত্রপাতি চালানো থেকে বিরত থাকা জরুরি। এমনকি বাড়ীর ছাদের ট্যাঙ্ক থেকে নেমে আসা ঘরের পানীয় জলের কল যেটিও বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে উঠতে পারে বাজের বিদ্যুতের দাপটে সেটির ব্যবহার না করাই শ্রেয় । এমন সামান্য কিছু সতর্কতা স্কুল থেকেই পড়ুয়াদের বিপর্যয় মোকাবিলার পাঠে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে শুধু পড়ুয়ারা নয় এমনকি তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যেও এমন বিপর্যয় মোকাবিলার ন্যূনতম পাঠ দেওয়া যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে যেভাবে শহর জুড়ে জনঘনত্ব আর বাড়ির ঘনত্ব বেড়ে চলেছে সেই প্রেক্ষিতে আশু প্রয়োজন শহর আর শহরতলির বাড়িতে বজ্র নিবারক ব্যবস্থার প্রণয়ন। এক্ষেত্রে নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগের পূর্বশর্ত হিসাবে বাধ্যতামূলক বজ্র নিরোধক ব্যবস্থার বিধি প্রণয়ন করতে হবে সরকার এবং পুরসভাগুলিকে। আর পুরানো বাড়িগুলির ক্ষেত্রে বিশেষত বহুতলে পর্যায়ক্রমে সেই বিধি বলবত করতে হবে।

বজ্রপাতের ঘটনা শহরে উত্তরোত্তর বেড়ে চলার এক অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে দেশের জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণায়নের প্রভাব । দ্রুত নগরায়নের ধাক্কায় শহর জুড়ে সবুজের হ্রাস গত কয়েক দশক ধরেই যে ভাবে দেশের বড় শহরগুলির স্থানীয় জলবায়ুকে প্রভাবিত করে চলেছে সেটাই আজ অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। এখন শহর লম্বায় চওড়ায় জমি সংকটে অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে শহর বাড়ছে উচ্চতায়। আর এমন অপরিকল্পিত ঢঙে বহুতল তৈরি হওয়ার কারণে অবরুদ্ধ হচ্ছে শহরের বায়ু চলাচলের সাবেকী স্বাভাবিক গতিপথ। আর হু হু করে বেড়ে চলেছে কংক্রিট আর কাঁচের নির্মাণ শহর জুড়ে, বাড়ছে রাসায়নিক রঙের ব্যবহার। ফলে এমন সমস্ত নির্মাণ সামগ্রীর লাগামছাড়া ব্যবহারে শহর জুড়ে বেড়ে চলেছে তাপের বহর। পাশাপাশি লাগামছাড়া বাতানুকুল যন্ত্রের প্রয়োগে শহর জুড়ে বইছে গরম হাওয়ার স্রোত। আর এই সব মিলিয়ে দেশের উচ্চ জনঘনত্ব এবং নির্মাণ ঘনত্বের শহরগুলি হয়ে উঠছে তাপের দ্বীপপুঞ্জ (heat island) অথচ সে তুলনায় তার পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ অঞ্চলের বাতাসের তাপমাত্রা তুলনায় কম। এমন তাপমাত্রার স্থানীয় পরিবর্তনে বাড়ছে বাজ পড়ার সম্ভাবনা। এছাড়া শহর জুড়ে মেগাসিটিগুলোতে যান সংখ্যার ভয়াবহ বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে যান দূষণ আর তার সাথে বাড়ছে বাতাসে মিহি দানা এবং মোটা দানার দূষণ। শহরের বায়ুমণ্ডলে এই ভাসমান কণার উপস্থিতিতে বায়ু দূষণ হয়ে উঠছে বজ্রপাতের অন্যতম বড় কারণ। এই নিরিখেই প্রয়োজন নগরায়ন প্রক্রিয়ায় নির্মাণের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ভাবনায় বিশেষ গুরুত্ব। অন্যথায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের জন্য তৈরি থাকতে হবে আগামীতে।