আরেক রকম ● নবম বর্ষ দ্বাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ জুন, ২০২১ ● ১-১৫ আষাঢ়, ১৪২৮

প্রবন্ধ

কৃষ্ণা রাজকুমারী, বর্ণপ্রথা ও ফেয়ারনেস ক্রিম

মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


ভারতবর্ষে ফেয়ারনেস্ ক্রিম ও ব্লিচ জাতীয় পণ্যের বাজার উত্তম। সত্যি কথা বলতে, এই ধরনের পণ্যের বাজার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ‘ভারতীয় ফেয়ারনেস ক্রিম মার্কেট ওভারভিউ’ এর প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৯ সালে বাজারে ফেয়ারনেস ক্রিম ইত্যাদি পণ্যের মোট মূল্য ছিল প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা। ওরা আশা করছে, ২০২৩ সালের মধ্যে তা পৌঁছাবে ৫,০০০ কোটি টাকাতে। তবে এই ধরনের পণ্যের মোট মূল্যমান নির্ধারণ সহজ নয়, কারণ ফেস মাস্ক, ফেস ওয়াশ ইত্যাদি পণ্যকে এই হিসাবে ধরা হয়নি। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০১২ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, ত্বককে হালকা করে তোলার পণ্যগুলি ভারতের স্কিনকেয়ার বাজারের প্রায় অর্ধেক দখল করে রেখেছে।

কালো মেয়ের ফর্সা হতে ভরসা ফেয়ারনেস ক্রিম।

তবে সারা বিশ্বেই রঙ ফর্সা করার জন্যে নানা ধরনের ক্রিম, ট্যাবলেট ও ইনজেকশনের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। ২০১৭ সালে গায়ের রং ফর্সা করার বাজার ছিল প্রায় ৪৮০ কোটি ডলারের। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাজার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৮৯০ কোটি ডলারে। এই দ্রব্যগুলোর চাহিদা মূলত এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যবিত্ত পরিবারে।

বাংলার সংস্কৃতি ও কৃষ্ণরূপা

কেন এত বিপুল চাহিদা ফেয়ারনেস ক্রিমের?

কারণ মেয়েকে বিয়ের বাজারে বিকোতে হবে। তাই মেয়ে কালো হলে তিন মাসের শিশুকে মা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।অথবা, বিয়ে না হওয়ার দুঃখে কালো মেয়ে আত্মঘাতী হয়। কালো হওয়ার ‘পাপে’, বাতিল হবার দুঃখে, প্রত্যাখ্যানের লজ্জায়, কালো মেয়ে বাথরুমে চোখের জল মুছে কৈশোর ও যৌবন কাটায়। অথবা অধরা স্বপ্নের সন্ধানে ফেয়ারনেস ক্রিম মাখে।

আমাদের অবচেতনে নারীর এক রূপ আছে। তাকে হতে হবে ফর্সা, দীঘল চোখ, লাল ঠোঁট, পাতলা ছিপছিপে গড়ন। সে আস্তে চলে, আস্তে বলে। এইসব। বাংলার মেয়েকেও হতে হবে সেন্ট্রাল এশিয়া, আফগানিস্তান বা ইউরোপীয় ধাঁচের সুন্দরী। রবিবারের বাংলা কাগজের চক্ষুলজ্জাহীন ‘পাত্রী চাই’-এর বিজ্ঞাপনের মতো!

এই চাহিদা সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। বঙ্কিমচন্দ্রের একটি উপন্যাসেও কোনো কৃষ্ণবর্ণা, সাধারণা, আটপৌরেকে নায়িকা, এমনকি সহনায়িকা হিসেবেও মনে করতে পারা যায় না। দু-একটি কালো সুতরাং কুৎসিত মানুষ সংসারে আছেন, যেমন ‘ইন্দিরা’ উপন্যাসে সুভাষিনীর শ্বশ্রুমাতা। তাকে দেখে “আমার বোধ হইল, একটা লম্বা কালির বোতল গলায় গলায় কালি ভরা”।শ্বশ্রূমাতা কালো, তাই কুৎসিত, এবং মানুষও তেমন জুতসই নন।তাঁর উপন্যাসগুলোতে কালো নারীরা আছেন বিদ্রূপ ও হাস্যরস উদ্রেকের জন্য।

বাংলা উপন্যাসে নায়িকা হবে আর্যরূপা।

রবীন্দ্রনাথ উপন্যাসের নায়িকাদের অন্তর্লোকের সন্ধান করতেন। তার নায়িকারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতা, ব্যক্তিত্বপূর্ণা। তারা পণ্ডস্ ও পমেটম সহযোগে সজ্জা করে আলুলায়িত চুলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে না। তবুও তারা সকলেই ফর্সা এবং সুন্দরী। সুন্দরী ও বিদুষী। শুধু প্রচলিত অর্থে নয়, অনেকে আবার অপার্থিব সুন্দরী, ইথেরিয়াল। একমাত্র মনে করতে পারছি গোরা উপন্যাসের ললিতাকে, তার গায়ের রং ছিল চাপা।

শরৎচন্দ্রের নারী চরিত্রগুলি বলিষ্ঠ, সাহসী এবং অনেকে অনমনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তবে তারাও, ওই চিরাচরিত আর্য সুন্দরী। পল্লী সমাজের রমা, দেবদাসের পার্বতী, দত্তার বিজয়া অথবা শ্রীকান্তর রাজলক্ষ্মী- সকলেই শুভ্রা সুন্দরী।

আমাদের দেহবর্ণের বিভিন্নতা

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, বাজার চলতি এই শরীরী সংজ্ঞা কিন্তু খুব বেশি দিন আগের নয়। মহাভারতের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী কৃষ্ণা দ্রৌপদী ছিলেন চিরযৌবনা উর্বশী।আর অজন্তার ঘোর কৃষ্ণবর্ণা, তথাপি অপূর্ব রূপবতী, নায়কের জন্য চিরপ্রতীক্ষারতা কৃষ্ণা রাজকুমারী তার চিন্তনে, দীর্ঘ রজনীর ক্লান্ত বিরহে, বেদনাময় সৌন্দর্যে কালোত্তীর্ণা। সেই কৃষ্ণবর্ণা রাজকন্যার শ্বেতবর্ণা দাসীকে দেখে আজকের দর্শক হয়তো সমাজের বৈপরীত্য দেখে চমৎকৃত হবেন, তবে তখনকার সেই অসামান্য শিল্পীর চোখে কৃষ্ণা রাজকুমারী হল অকৃত্রিম, স্বাভাবিক সৌন্দর্যের প্রতীক।

আসলে কালোই মানুষের স্বাভাবিক দেহ বর্ণ। একসময়ে আমরা সকলেই ছিলাম কালো। এমনকি ইউরোপের মানুষও ছিল কালো।ত্বকের এক ধরনের অভিযোজনের কারণে শীতের দেশের মানুষের রঙ হালকা হয়েছে। শীতের দেশে সূর্যের আলো কম। মানুষের ত্বক ভিটামিন-ডি সংশ্লেষ করে সূর্যালোকের সাহায্যে। কালো ত্বক সূর্যালোককে চামড়ার গভীরে ঢুকে ভিটামিন-ডি তৈরি করার পথে বাধা দেয়। যেখানে সূর্যের তেজ যথেষ্ট, সেখানে ত্বকের কালো রঙ সুর্যালোকের অনাবশ্যক প্রবেশ আটকায়। কিন্তু শীতের দেশে কালো রঙ হলে মুশকিল, বিশেষ করে যদি খাদ্যে ভিটামিন-ডি কম থাকে। মনে করা হয়, যখন মানুষ শুধু শিকারী-সংগ্রাহক ছিল তখন ওরা বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস ইত্যাদি খেত, খাদ্যে ভিটামিন-ডি পরিমাণে ছিল অনেক বেশি। সেই সময়ে কালো চামড়া জৈবিকভাবে অসুবিধাজনক হয়নি। কিন্তু কৃষি খানিকটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবার পরে খাদ্যাভাস পালটে যায়, খাবারে ভিটামিন-ডি কমে যায় আর তখন শীতের দেশের মানুষের চামড়ার রঙ ফ্যাকাশে হওয়া বেঁচে থাকার পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাচীন মানুষের দেহাবশেষ থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে তার লিঙ্গ, চুলের রঙ, চোখের রঙ, ত্বকের রঙ, বয়স কিংবা কোন অঞ্চল থেকে সে উদ্ভূত এরকম অনেক তথ্য জানা যায়। জিনবিজ্ঞানের সাহায্যে দশ হাজার বছর আগের এক ব্রিটিশের দেহাবশেষ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে তার মুখের প্রতিচ্ছবি নির্মাণ করা হয়েছে। তার ছিল ঘন কালো দেহবর্ণ, চুল কৃষ্ণবর্ণ, চোখ সবুজ। ওই প্রাচীন ব্রিটিশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ছেডার ম্যান’।

ইউরোপে আট হাজার বছর আগে সকল মানুষ ছিল কালো।শুধু ব্রিটেন বা ডেনমার্ক নয়, অন্য দেশেও মানুষ কালো ছিল। স্পেনে সাত হাজার বছর আগের মানুষের পুনর্নির্মিত মুখ কালো রঙ ফুটিয়ে তুলেছে। গ্রীসেও তাই। আবার সুইডেন, যেখানে আলো আরও কম, সেখানে ত্বকের এই ফ্যাকাশে পরিবর্তন বা ডি-পিগমেন্টেশন শুরু হয়েছে আগে। কয়েক হাজার বছর লেগেছে সারা ইউরোপে ডি-পিগমেন্টেশন হতে।একই কারণে ইউরোপের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের চামড়ার রঙ হয় মাঝারি বাদামি বা অলিভ আর উত্তরে স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের লোকের চামড়া হয় একদম হালকা, ফ্যাকাশে।

ভারতবর্ষে আফ্রিকার মানুষের পরিযান

ভারতবর্ষের প্রথম মানুষ এসেছে আফ্রিকা থেকে। আফ্রিকাতেই মানুষের উদ্ভব। সে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগের কথা। তখন পৃথিবীতে চলছে ‘শেষ তুষার যুগ’।উত্তর গোলার্ধ হিমেল ঠাণ্ডা, অতিমাত্রায় শুকনো। মেরু হিমবাহ ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়েছিল নিচে বিষুব রেখার দিকে। এই ক্রান্তিকালে জনসংখ্যা ছিল একেবারে তলানিতে। খাদ্য ও পানীয়র অভাবে লুপ্ত হবার সামনে দাঁড়িয়ে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছায় মানুষ ঊষর ভূমি পেরিয়ে হেঁটে ইথিওপিয়া ছাড়িয়ে চলে এসেছিল এই ভারতে। একে বলে ‘আউট অফ আফ্রিকা’ মাইগ্রেশন। বাংলায় বলে ‘মহাপরিযান’।স্রেফ টিকে থাকার বাসনায় যে ছোট্ট দলটি আফ্রিকার বাইরে গিয়েছিল সেই দল থেকেই আজকে আফ্রিকার বাইরে পৃথিবীর সকল মানুষের উদ্ভব। অর্থাৎ আফ্রিকার বাইরে যত মানুষ আজ আছে আমাদের সকলের পূর্বজ ছিল ৭০ হাজার বছর আগের সেই দলে।

ওদের একদল ভারতবর্ষে প্রথম পদার্পণ করে অন্তত ৬৫ হাজার বছর আগে। সারা পৃথিবীতেই সেই সময়ে আফ্রিকা থেকে মানুষের পরিযান হয়েছে। তারা সকলে ছিল কৃষ্ণ বর্ণের। আজকের সমগ্র ভারতের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ মাতৃক্রমের দিক দিয়ে সেই আফ্রিকা আগত মায়ের সরাসরি বংশধর। বাসস্থান, জাত, বর্ণ ইত্যাদির উপরে নির্ভর করে শতাংশর বিভিন্নতা। সেই নারী দেখতে ছিল আজকের আন্দামানের ওঙ্গে, জারোয়া বা সেন্টিনেলিজ নারীদের মত। কৃষ্ণরূপা।

ভারতবর্ষে শ্বেতবর্ণ মানুষের প্রবেশ ও বর্ণবিভক্ত সমাজ

সেই যে ৬৫ হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে প্রথম মানুষ এসেছে তার পরেও এই দেশে আরও কিছু পরিযান হয়েছে। ইতিহাসের এক বিশেষ সময়ে, আজ থেকে ৪.৫ - ৪ হাজার বছর আগে, অর্ধ যাযাবর পশুপালক ইন্দো-ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী রাশিয়ার স্তেপভূমি থেকে মাইগ্রেট করেছে দক্ষিণের দিকে।

ওরা ভারতবর্ষে আসে বিভিন্ন দলে, ৪ - ৩.৫ হাজার বছর আগে। ওরা কথা বলত বৈদিক সংস্কৃতে। সেই দলগুলি ছিল পুরুষ প্রধান। অর্থাৎ ওই দলগুলিতে নারীর সংখ্যা ছিল তুলনায় কম। ইন্দো-ইউরোপীয়রা ছিল শ্বেত বর্ণের অধিকারি। শ্বেতকায় আর্যভাষীদের বর্ণের অহংকার ঋগ্বেদেও বহুবার উল্লিখিত হয়েছে। ওরা প্রাগার্যদের প্রতি বারে বারে তাচ্ছিল্যসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে- যেমন, অনাস, কৃষ্ণবর্ণ, হ্রস্বজঙ্ঘ বৃষশিপ্র, রাক্ষস, দাস, দস্যু ইত্যাদি। ওরা কখনও কৃষ্ণবর্ণের মানুষের বসতিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, কখনও বা পঞ্চাশ হাজার কৃষ্ণবর্ণ মানুষকে হত্যার কথা সগর্বে ঘোষণা করেছে।তবে নারীর অভাবে মিশ্রিতও হতে হয়েছে প্রাগার্য দেশজ মানুষের সাথে। জনগোষ্ঠীগুলোর এই মিশ্রণ চলেছিল কয়েক হাজার বছর ধরে, এর মূল চালিকাশক্তি প্রাথমিকভাবে ছিল আগত গোষ্ঠীগুলোতে নারীর অভাব। তবে এই মিশ্রণ সম্পূর্ণ সমসত্ত্ব ছিল না। দেশের অঞ্চল, ভাষাভাষী ও বিভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে মিশ্রণের আনুপাতিক পরিমাণের তারতম্য আছে। তবে জিনবিদ্যার সাহায্যে প্রমাণ করা যায়, এমনকি ভীল, চামার ও কল্লারের মতো প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর মধ্যেও এই মিশ্রণ হয়েছে।

ইন্দো-ইউরোপীয়রা ভারতে হাজার বছর ধরে থাকতে থাকতে এখানকার প্রধানতম শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হয়ে উঠল। সেইসময়ে আর্য ও প্রাগার্য নরনারীর মিশ্রণের গতিতে এল পরিবর্তন। শুরু হল সামাজিক স্তরভেদ, যা দিয়ে আগেকার সংমিশ্রণের প্যাটার্নের পরিবর্তন ঘটল। আজ থেকে প্রায় ২,০০০ বছর আগে এই মিশ্রণ বন্ধ হয়ে গেল। বর্ণভেদ প্রথা এই পরিবর্তন আনল। আসলে তখন ওদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ একটা বড়সড় গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গেছে, নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে নারীর প্রয়োজন আর রইল না।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, আজ থেকে ২,৩০০ বছর থেকে ১,৯০০ বছর আগে মনুস্মৃতি লেখা হয়েছে। আর জিনবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে সেই সময় থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে জেনেটিক আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সময়কাল থেকে নিজের বর্ণের মধ্যে বিবাহ বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এ দুয়ের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

একটা সময় পর্যন্ত জন্মভিত্তিক বর্ণব্যবস্থা দৃঢ়ভাবে গড়ে ওঠেনি। তার থেকে অনুমান করা যায় যে, যেভাবে আজকে বর্ণ/জাত ব্যবস্থা ও সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস চলছে, ইন্দো-ইউরোপীয়রা এদেশে মাইগ্রেট করবার পরেও সমাজে ঠিক এভাবে বর্ণবিন্যাস ছিল না। তখন নিশ্চিতভাবেই বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহ হত। সম্ভবত বর্ণবিভাগ ছিল পেশার বিভাগ, এবং এই পেশা পরিবর্তন করা যেত।

অবশেষে কৃষ্ণা সুন্দরী বনাম ফেয়ারনেস ক্রিম

সেই ৬৫ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আগত নারীর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বহন করে এদেশের অন্তত ৭০% মানুষ। তবু সেই দেশের পুরুষ চায় ইন্দো-ইউরোপীয় ঘরানার শ্বেতবর্ণা সুন্দরী।

কৃষ্ণা রাজকুমারী দুই হাজার বছর ধরে প্রতীক্ষারতা। আর বর্ণবিভক্ত সমাজে (জাত ও দেহবর্ণ- উভয়ত) ফেয়ারনেস ক্রিম হয়ে যায় অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণীয়। ভারতবর্ষের প্রাগিতিহাস থেকে উঠে আসা জারোয়া নারী উপহাস করে বর্তমানের সাদা চামড়ার বাতিকগ্রস্ততাকে।

 

তথ্যসূত্রঃ

১) রামশরণ শর্মা, “প্রাচীন ভারতে শূদ্র”, কে পি বাগচী এন্ড কোম্পানি, প্রথম সংস্করণ (১৯৮৯)
২) সুকুমারী ভট্টাচার্য, “প্রবন্ধ সংগ্রহ”, ১ - ৪ খন্ড, গাঙচিল, প্রথম সংস্করণ, (২০১২-২০১৪)
৩) Stephen Oppenheimer, “Out-of-Africa, the peopling of continents and islands: Tracing uniparental gene trees across the map”, Phil. Trans. R. Soc, B367770–784,(2012)
৪) V. M. Narasimhan et al., “The formation of human populations in South and Central Asia”, Science, 365(6457), (2019)
৫) Priya Moorjani et al., “Genetic Evidence for Recent Population Mixture in India”, A Journal of Human Genetics, 93(3), (2013): 422-438
৬) Mait. Metspalu et al., “Most of the extant mtDNA boundaries in South and South-West Asia were likely shaped during the initial settlement of Eurasia by anatomically modern humans”, BMC Genetics, 5(26), (2004)