আরেক রকম ● নবম বর্ষ দ্বাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ জুন, ২০২১ ● ১-১৫ আষাঢ়, ১৪২৮

প্রবন্ধ

টালিগঞ্জ

মালবী মাকুর


প্রায় দু'দশক ধরে টালিগঞ্জ অঞ্চলে আমার বসবাস। কখনোই এই অঞ্চলের ইতিহাস বা বিবর্তন সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করিনি। মাছে-ভাতে বাঙ্গালির সমসাময়িক ইতিহাস সম্পর্কে কোনোদিনই কোনো আগ্রহ ছিল না, আমারও তাই। ওই ইতিহাস বইতে যতটুকু পড়তে হয় তাই যথেষ্ট।

এরপর হঠাৎই একদিন কর্মসূত্রে টালিগঞ্জ অঞ্চলের একটি শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের (restoration) কাজ করার সুযোগ এসে গেল। সেই সূত্রেই একটু ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে চমকে উঠলাম। বাড়িটির বয়স প্রায় ২৩৮ বছর! এটাই কি তবে টালিগঞ্জের প্রাচীনতম বাড়ি? মন লেগে গেল। তথ্য সংগ্রহের সুবাদে এই অঞ্চলের এক আকর্ষণীয় বিবর্তন খুঁজে পাওয়া গেল। সেটাই লেখার চেষ্টা করা যাক।

প্রথম পর্ব

সাড়ে তিনশো বছরেরও আগের কথা, কলকাতার দক্ষিণপ্রান্তে ঘন জঙ্গলে আবৃত এই অঞ্চলের পশ্চিমদিক দিয়ে বয়ে যেত আদিগঙ্গা। তখন আদিগঙ্গাই ছিল গঙ্গার মূলস্রোত এবং দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যপথ। বড়ো বড়ো মহীরূহবিশিষ্ট, জলাজমি, জন্তু-জানোয়ার আর মশা-মাছিতে ভর্তি এই অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আশ্রয়স্থল। গঙ্গায় নোঙ্গর করা জাহাজ থেকে লুঠপাট করে তারা এই জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ত। আদিগঙ্গার তীরের মন্দিরে পুজো দিতে আসা তীর্থযাত্রীরাও ছিল এদের লক্ষ্য।

এই জঙ্গলে এক বিশেষ ধরণের গাছের দেখা মিলত যার পাতাগুলি বিভিন্ন প্রকৃতির এবং কান্ড, শাখাপ্রশাখা দিয়ে একরকমের রসনির্গত হত। এই বৈশিষ্ট্য থেকেই গাছটির নাম হয়েছিল রসা গাছ। এহেন এক বিশাল রসা গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক পাগলা পীরবাবা। গল্পকথা, এই পীরবাবা নাকি অনেক জটিল রোগ বিশেষত মানসিক রোগ সারিয়ে দিতে পারতেন। এই কারণে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বহু লোক প্রাণ হাতে করেও জঙ্গলে এই পীরবাবার কাছে আসতেন। রসাগাছ আর পাগলা পীরবাবা, মিলেমিশে লোকমুখে জায়গাটির নাম হয়ে যায় 'রসাপাগলা'। বহুবছর ধরে টালিগঞ্জ 'রসাপাগলা' নামেই পরিচিত ছিল। বিশিষ্ট ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী এডওয়ার্ডইভস্ (Edward Eves) এই এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। তার লেখায় আমরা এখানকার কথা ও রসা গাছের বিবরণ পাই (চিত্র ১)।

চিত্র ১: এডওয়ার্ড ইভস্‌-এর বিবরণ

সূত্রঃ ব্রিটিশ লাইব্রেরী।

অন্য একটি মতও শোনা যায়। স্থানীয় পাগলা গাছ (যার একাধিক ধরনের পাতা হয়) থেকেও পাগলা কথাটি এসে থাকতে পারে। আজও এখানে দেখতে পাবেন পাগলা বাবা বা হজরত মাসুদ গাজীর মাজার (চিত্র ২)।

চিত্র ২: পাগলা পীরবাবার মাজার

আর পুরনো মানুষেরা হয়তো মনে করতে পারবেন কিছু বছর আগেও (১৯৫০ পর্যন্ত) কলকাতা থেকে টালিগঞ্জ সংযোগকারী রাস্তাটি 'রসা রোড' নামেই পরিচিত ছিল। এলগিন রোড থেকে কালীঘাট অবধি অংশকে বলা হত রসা রোড নর্থ (এখন আশুতোষ মুখার্জী ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোড) এবং কালীঘাট থেকে টালীগঞ্জ অব্দি অংশকে বলা হত রসা রোড সাউথ (এখন দেশপ্রাণ শাসমল রোড)।

১৭৭০ থেকে আদিগঙ্গা (সম্ভবত গঙ্গা থেকে সরস্বতী পর্যন্ত একটি খাল খননের ফলে) তার গতি হারাতে শুরু করে। ব্রিটিশের কপালে ভাঁজ, কারণ এই নদীপথ ছিলো দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ। ফলস্বরূপ ১৭৭৫-৭৬ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী, Major William Tollyকে (পরবর্তীকালে Lt. Col) এই জলপথটি পুনরুদ্ধারের ভার প্রদান করে। টলিসাহেব ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি পুরনো জলপথটি সংস্কারের পাশাপাশি বিদ্যাধরী মাতলা অবধি যোগাযোগকারী একটি নালাও খনন করান। এই নালাটি যা পরবর্তীকালে 'টালির নালা' হিসাবে পরিচিতি পায়। প্রায় ১৫০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের মধ্যে যোগাযোগকারী একটি বিশেষ বাণিজ্যপথ হিসাবে টালির নালা কাজ করে। উইলিয়াম টলি প্রাথমিকভাবে নিজের পয়সাতেই এই নালাটি খনন করিয়েছিলেন। পরিবর্তে কোম্পানির সাথে তার একটি চুক্তি হয়। প্রথমত এই জলপথ দিয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি বাণিজ্যতরী থেকে ১% হারে শুল্ক আদায় করার অধিকার তাঁর থাকবে এবং দ্বিতীয়ত কোম্পানি তাঁকে নালাটির পূর্বপারে বারো বছরের লিজে, একটি 'গঞ্জ' বা বাজার শুরু করার অনুমতি দেবে। টলি সাহেব ১৭৮৪-এ মারা যাওয়ার পর তাঁর বিধবা স্ত্রী লিজটি আরো পনেরো বছরের জন্য বাড়ানোর সুযোগ পান। পরবর্তীতে টলি সাহেবের হাতে তৈরি করা গঞ্জটির মালিকানা চলে যায় কোম্পানির হাতে, আর টলি সাহেবের নাম চিরতরে জুড়ে যায় এই জায়গাটির সাথে।

টলি সাহেবের এই গঞ্জ ক্রমশ ব্রিটিশদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে, তবে এই অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ ছিল এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ। বিশালকায় সব মহীরূহ ছিল উন্নতমানের কাঠের উৎস। অনুকুল ও নমনীয় আইনের সুযোগ নিয়ে ব্যবসাদার ব্রিটিশ একের পর এক ট্রেডিং পোস্ট গড়ে তুলল। সাফ হয়ে গেল জঙ্গলের অনেকাংশ। একদা জল-জঙ্গল, জীব-জন্তু আর মশা-মাছি অধ্যুষিত রসা পাগলা পরিণত হল শহর কলকাতার ব্যস্ততা আর গন্ডগোল থেকে স্বল্প দূরে, সবুজের মাঝে নিরিবিলিতে থাকার জন্য ইংরেজের প্রিয় বাগিচা শহরে। জঙ্গলের জায়গা নিল গাছগাছালি আর সবুজে ঘেরা ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর সুন্দর কিছু বাগানবাড়ি। এইরকমই এক বাগানবাড়ির কথা শুরুতেই উল্লেখ করেছি। সেটি হলো রিচার্ড জনসনের বাগানবাড়ি, যা বর্তমানে টালিগঞ্জ ক্লাবের মধ্যমনি 'ক্লাব হাউস' নামেই (চিত্র ৩) পরিচিত।

চিত্র ৩: টালিগঞ্জ ক্লাবের ক্লাব হাউস

উচ্চাকাক্ষী ও তীক্ষবুদ্ধিধারী জনসন ১৭৭০-এর ২৫শে সেপ্টেম্বর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামান্য এক করণিক হিসাবে কলকাতায় পদার্পণ করলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কোম্পানির বিভিন্ন উচ্চতর পদে আসীন হয়েছিলেন। তার অন্য পার্শ্বব্যবসা হিসাবে ছিল একটি 'Indigo manufacturing unit’। এরকমও গল্পকথা আছে তিনি নিজেও নাকি নীলচাষী ছিলেন, তবে তার স্বপক্ষে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এই রিচার্ড জনসন উপরোক্ত বাড়িটি ১৭৮১-এ জনৈক এইচ. গ্রান্টের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন (চিত্র ৪)।

চিত্র ৪: জনসনের বাড়ির দলিল

সূত্রঃ ব্রিটিশ লাইব্রেরী।

১৮০৭-এর ১৯শে আগস্ট রিচার্ড জনসন পাকাপাকিভাবে ভারতবর্ষ থেকে বিদায় নেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাগানবাড়িটির মালিকানা চলে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। পরবর্তীকালে কোম্পানি বাড়িটি যুদ্ধবন্দী টিপু সুলতানের উত্তরসূরীদের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহার করে। শুরু হয় ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।

দ্বিতীয় পর্ব

টালিগঞ্জের কথা বলতে গেলে একজনের কথা বিশেষ করে বলতেই হয়। তিনি প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ্, মহীশুরের নবাব ইতিহাসখ্যাত টিপু সুলতানের একাদশ সন্তান। ১৭৯৯-য় শ্রীরঙ্গপত্তনের যুদ্ধে ইংরেজের হাতে টিপু সুলতানের পরাজয় ও মৃত্যৃর সময় তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। ১৮০৬-এর ভেলোর অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেবার অজুহাতে তাঁর দাদা ফতে হায়দার, আবদুল খালিক, মউজুদ্দিনকে ইংরেজ যুদ্ধবন্দী করে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো বিদ্রোহের সম্ভবনা এড়াতে টিপু সুলতানের পরিবারের একান্নজন সদস্যকে হাজার মাইল দূরে কলকাতায় যুদ্ধবন্দী করে পাঠিয়ে দেয়। তাদের সঙ্গেই কলকাতা এসে পৌঁছায় বারো বছরের কিশোর এই প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ্ (চিত্র ৫)।

চিত্র ৫: প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ্‌

তৎকালীন গভর্নর জেনারেল গিলবার্ট ইলিয়ট টিপু সুলতানের উত্তরসূরীদের পূর্ববর্ণিত রিচার্ড জনসনের রসা পাগলার বাগানবাড়িতে থাকার বন্দোবস্ত করেন। মহীশুরের নবাব কোনোদিন কলকাতার মাটিতে পা না রাখলেও এভাবেই তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম চিরকালের জন্য টালিগঞ্জের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

প্রাথমিকভাবে টিপুর পরিবারের সদস্যরা ইংরেজের ব্যবস্থা মতো জনসন হাউস, তার আশেপাশের কয়েকটি আউটহাউস ও পাশ্ববর্তী 'আলদীন'-এ বসবাস করতে থাকেন। জনসন হাউসের (ক্লাব হাউস) কথা প্রসঙ্গে এই এস্টেটে আরেকটি বাড়ির কথা না বললেই নয়। সম্ভবত সেটি ছিল জনসনের ইন্ডিগো ফ্যাক্টরি (বর্তমানে টলি ক্লাবের ইন্ডোর সুইমিং পুল)। আর টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন থেকে কুঁদঘাটের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই পেয়ে যাবেন 'আলদীন' যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের 'সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমী'। আবদুল খালিক ও মউজুদ্দিন ১৮১৫-র আগেই মারা যান। বাকিরা টালিগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। ফতে হায়দার থাকতেন অধুনা গল্ফ ক্লাব রোডের 'বড়া মহল'-এ। মউনজুদ্দিন তৈরি করেছিলেন 'খাস মহল' (এখন লেক গার্ডেন ফ্লাইওভারের মুখে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত একাডেমী)। মনিরুদ্দিন থাকতেন 'নাচ কুঠী'-তে। আর প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ্ বসবাসের জন্য তৈরি করান 'পুল বাহার', এখনকার টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। একদা রাজসিক বিলাস বৈভবে অভ্যস্ত এই নবাবপুত্রদের নতুন করে পথ চলা শুরু হয়, সম্পূর্ণ এক নতুন পরিবেশে, জন্মভূমি থেকে হাজার মাইল দূরে নতুন এক শহরে।

প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ্ চিরকালই ব্রিটিশের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছিলেন আর তাঁর দৌড় ছিল একেবারে গভর্নর জেনারেল অবধি। ফলও পেয়েছিলেন হাতেনাতে। এই নৈকট্যের সুবাদেই তিনি নিজের মাসোহারা বেশ কিছুটা বাড়িয়ে নিতে সমর্থ হন। শোনা যায় তার পৈত্রিক সম্পত্তিও কিছুটা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি টালিগঞ্জ অঞ্চলে বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হন। এর মধ্যে ছিল জনসন সাহেবের বাগানবাড়ি সহ ৩০৫ বিঘার টালিগঞ্জ এস্টেট বা বড়াবাগ, ৮৩ বিঘার কাছারীবাগ যা এখন রয়্যাল ক্যলকাটা গল্ফ ক্লাবের অন্তর্গত, এছাড়াও টালিগঞ্জ অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু জমি। বিভিন্ন সামাজিক কাজ কর্মেও জড়িয়ে ছিলেন তিনি। তৈরি করিয়েছিলেন দুটি মসজিদ, টালিগঞ্জের প্রিন্স আনোয়ার শাহ্ রোড ও ধর্মতলায় অবস্থিত দুটি মসজিদই এখন টিপু সুলতানের মসজিদ বলেই খ্যাত (চিত্র ৬)।

চিত্র ৬: প্রিন্স আনোয়ার শা রোডে অবস্থিত টিপু সুলতানের মসজিদ

পরে তিনি ব্রিটিশের কাছ থেকে KCSI (Knight Companion of the State of India) উপাধি পান। লক্ষ্য করার বিষয়, টিপু সুলতান ও তার এই পুত্র রাজনৈতিক জীবনে পুরোপুরি বিপরীত চিন্তাধারার (একজন তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী ও একজন ব্রিটিশ ঘনিষ্ঠ) অধিকারী হয়েও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে ছিলেন। তবে প্রিন্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল মৃত্যুর কিছুকাল আগে তাঁর উদ্যোগে সৃষ্ট ভারতবর্ষের সবথেকে দৌলতবান ওয়াকফ ট্রাস্ট, 'গুলাম মহম্মদ শাহ্ ট্রাস্ট'।

টালিগঞ্জের এক বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে দুটি বিশ্বমানের গল্ফ কোর্স, টালিগঞ্জ ক্লাব বা টলি ক্লাব এবং রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব (RCGC)। ১৮৯৫-তে 'গুলাম মহম্মদ শাহ ট্রাস্ট' থেকে প্রায় ১২৫ একর জমি লিজে (চিত্র ৭) নিয়ে টলি ক্লাবের পথ চলা শুরু।

চিত্র ৭: টলি ক্লাবের প্রথম লিজ ডীড

প্রথমে এখানে শুধু ঘোড়দৌড়ই হত। পরে গল্ফ ও অন্যান্য খেলাধূলা শুরু হয়। আর রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব হল গ্রেট ব্রিটেনের বাইরে সবচেয়ে পুরনো গল্ফ ক্লাব। ১৮২৯-এ যাত্রা শুরু করলেও RCGC প্রথমেই কিন্তু টালিগঞ্জে অবস্থিত ছিল না। দমদম আর তারপর এসপ্লানেড ঘুরে ১৯১০-এ পাকাপাকিভাবে স্থানান্তরিত হয় টালিগঞ্জে। নেটিভদের কোনো প্রবেশাধিকার ছিল না এই দুটি ক্লাবে, এমনকি মহিলাদেরও নয়। ১৮৮৬ সালে RCGCতে প্রথম মহিলারা প্রবেশাধিকার পান। স্বাধীনতার অনেক পরে দুটি ক্লাবেই মহিলাদের সদস্যপদ চালু হয়। সবুজ মখমলের মতো প্রান্তরে ঘেরা, গাছগাছালি আর জীববৈচিত্রের অপরূপ সম্ভার নিয়ে ক্লাব দুটি টালিগঞ্জ তথা বিশ্বের মানচিত্রে অবশ্যই এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

১৮৮৮ নাগাদ বালিগঞ্জ ও টালিগঞ্জ মিলে তৈরি হয় একটি থানা, আর ১৮৮৯-এ কলকাতার দক্ষিণাঞ্চলকে চারটি মিউনিসিপ্যালিটিতে ভাগ করা হয়। ১৯২১ থেকে মিউনিসিপ্যালিটি এই অঞ্চলের বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে জোর দেয় যেমন রাস্তাঘাট, নিকাশি, জলসরবরাহ ইত্যাদি। এখানকার বহু রাস্তাঘাটের নামকরণ হয় টিপু সুলতানের বংশধরদের নামে, যেমন প্রিন্স আনোয়ার শাহ্ রোড, প্রিন্স গুলাম মহম্মদ শাহ্ রোড বা যেমন আমার বাড়ীর রাস্তাটির নাম প্রিন্স গুলাম হোসেন শাহ্ রোড।

কিন্তু কেমন আছেন এই টিপু সুলতানের বর্তমান বংশধরেরা? অল্প কয়েকজন ভাগ্যবান ছাড়া বেশিরভাগই বেঁচে আছেন গরিবীর সাথে যুদ্ধ করে, কেউ টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের জরাজীর্ণ হাভেলীতে জীবনযুদ্ধ চালাচ্ছেন, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা চালান তো কেউ চায়ের দোকান, আবার কাউকে দিন গুজরান করতে হয় এমনকি রিক্সা চালিয়ে। ওয়াকফ ট্রাস্ট (গুলাম মহম্মদ ট্রাস্ট) যেহেতু শুধুমাত্র জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্যেশেই তৈরি, তাই তারাও এ'ব্যাপারে অপারগ। এছাড়া সারা ভারতবর্ষের মতো গুলাম মহম্মদ ট্রাস্টেরও বহু ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল বা হাতছাড়া হয়ে গেছে নজরদারির অভাবে। তাই নিয়তির নির্মম পরিহাসে টিপু সুলতানের বংশধর সানওয়ারকে আজ পূর্বপুরুষের নামাঙ্কিত রাস্তায় রিক্সা চালাতে হয় (চিত্র ৮)।

চিত্র ৮: টিপু সুলতানের বংশধর শানওয়ার শা

ফিরে আসি আবার ব্রিটিশ শাসিত ভারতে। দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পেরিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার সঙ্গেই আসে দেশভাগ। দু'টুকরো হয়ে যায় ভারতবর্ষ এবং তার সঙ্গে বঙ্গদেশ। আর সাতচল্লিশের দেশভাগের সঙ্গে কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তের এই ভূখন্ডটির ভাগ্য জুড়ে যায় ওতপ্রোতভাবে। কেননা ১৯৪৭ পরবর্তী টালিগঞ্জের ইতিহাস শুধুই ছিন্নমূল মানুষের ইতিহাস।

অন্তিম পর্ব

স্বাধীনতার পর পূর্ববঙ্গ থেকে যে ছিন্নমূল মানুষের স্রোত ভারতবর্ষে আছড়ে পড়েছিল তাদের অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিলো স্বাভাবিক নিয়মেই তৎকালীন বাংলার অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল নগর কলকাতা। সরকারি ক্যাম্পের অপ্রতুলতা, তার নিম্নমান এবং তদুপরি পুনর্বাসনে শ্লথতার কারণে এইসব বাস্তুহারা মানুষেরা কলকাতার চারপাশে ফাঁকা জায়গাগুলিতে নিজেরাই বসবাস করতে শুরু করেন। এর মধ্যে টালিগঞ্জ ছিল অন্যতম। একটা পরিসংখ্যান দিলে চিত্রটা কিছুটা পরিস্কার হবে। ১৯৪১ থেকে ১৯৭১, অনুপ্রবেশের কারণে সারা কলকাতায় যখন জনসংখ্যার স্ফীতি হয়েছিল ২০ শতাংশ সেখানে টালিগঞ্জ অঞ্চলে জনসংখ্যার স্ফূরণ ছিল ১৪০ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীনতা পরবর্তী টালিগঞ্জের কয়েক দশকের অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি সর্বোপরি রাজনীতি এইসব ছিন্নমূল মানুষের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।

শুরু হল ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, নতুন করে গড়ে তোলার লড়াই, শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণাকে বুকে চেপে রেখে অন্যভাবে, অন্য পরিবেশে এগিয়ে চলার লড়াই। অঞ্চলে একের পর এক কলোনি গড়ে উঠল। বিজয়গড়, আজাদগড়, রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনি, গান্ধী কলোনি, নেতাজি নগর, সূর্য নগর, অশোকনগর ও আরও অনেক। প্রতিকূল পরিস্থিতির জীবনসংগ্রাম তাদের সংঘবদ্ধ হতে শেখাল। অতএব পাড়ায় পাড়ায় তৈরি হল কলোনি কমিটি। নির্বাচিত কলোনি কমিটির মাধ্যমে গড়ে উঠল বাজার, তৈরি হল ক্লাব, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে তৈরি হল বেশ কিছু স্কুল, পরে কয়েকটি কলেজ। ভাগাভাগি করে জমি দেওয়া হল, নিজেদের মতো করে তৈরি করলেন রাস্তাঘাট। হয়তো পরিকল্পনায় কিছু গলদ ছিল, কিন্তু অস্তিত্বরক্ষার তাগিদ যখন বড়ো হয়ে দাঁড়ায়, তখন মানুষ বর্তমানে বাঁচে, গভীরে ভাবা সবসময় সম্ভবপর হয়না। এই সময় বেশ কিছু মানুষ এই পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় অগ্রণীর ভূমিকা নিয়েছিলেন। এবার তাঁদেরই একজনের জীবন দিয়ে সময়টাকে একটু বোঝবার চেষ্টা করা যাক।

সদ্য কিশোর সে, পূর্ববঙ্গের এক সচ্ছল জমিদার পরিবারে জন্ম, সব ব্যপারে দাদাই ছিল তার আদর্শ, তার অনুপ্রেরণা। যখন ছোটো ছিল, জমিদারিতে খাজনা বা ঋণশোধ করতে না পারায় অসহায় কৃষকের জমিবাড়ি বাজেয়াপ্ত হলে, নতুন কিছু পাবার খুশিতে আনন্দ পেত। তবুও কোথাও হয়তো কৃষকের চোখের জল সেদিনের শিশুমনে রেখাপাত করেছিল মনের অজান্তেই। তখন ১৯৪৬-৪৭ সাল, সারা পূর্ববঙ্গ তেভাগা আন্দোলনে উত্তপ্ত। সে যুগের নিয়মমতো জমির ফসল হত দুইভাগ, একভাগ পেত কৃষক আর একভাগ যেত জমিদারের ঘরে। কিন্তু চাষের খরচ, পরিশ্রম মিলে কৃষকের এতে চলছিলো না। দাবি উঠল তিনভাগের; তিনভাগ অর্থাৎ 'তেভাগা'। একভাগ যাবে জমিদারের কাছে আর দুইভাগ থাকবে কৃষকের। ক্রমশ এই দাবি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল গ্রাম থেকে গ্রামে। আর দাদার সঙ্গে সেদিনের সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমাদের এই কিশোর। সর্বপ্রথম নিজেদের জমিতে গিয়ে পুঁতে দিল লাল পতাকা। শুভানুধ্যায়ীরা জমিদারকে এসে বললেন, কেন কিছু করছেন না? কেন ওদের পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছেন না? জমিদার পিতা শুধু শূন্য চোখে স্বগতোক্তি করেছিলেন “কাকে আমি পুলিশের হাতে তুলে দেব?”

সেদিনের কিশোর এখন যুবক। দেশভাগের পর এসে পড়লেন টালিগঞ্জের আজাদগড় কলোনিতে। তারপর টালির চালের ছোট্ট বাড়িতে পরিবারের সাথে স্থিতু হওয়া। পুরোভাগে থেকে আরো অনেকের সাথে পুনর্গঠনের কাজে অগ্রণী হওয়া। সামাজিকতা, সহমর্মিতা, দাবি আদায়ে একে অপরের পাশে থাকা। কিন্তু বেশি দিন ভালো গেলনা। স্বাধীনতার স্বপ্নভঙ্গ আর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের হাত ধরে টালিগঞ্জ অঞ্চলে ক্রমশ বাম রাজনীতির শিকড় ছড়িয়ে পড়ল। অঞ্চলে বিরোধী রাজনীতির উত্থান শাসকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াল। শুরু হল সত্তরের দশকের উত্তাল সময়। বহু বামপন্থী সদস্য সমর্থক পরিবারসহ ঘরছাড়া হলেন। অনেক বামকর্মী শহীদ হলেন। পাড়ায় পাড়ায় শহীদবেদীগুলো আজও তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। স্ত্রী শিশু পুত্রকন্যাকে রেখে এই মানুষটিও এলাকাছাড়া হতে বাধ্য হলেন। কিন্তু তাতেও কি রেহাই আছে? একদিন কংগ্রেসআশ্রিত দুষ্কৃতিদের তাড়া খেয়ে স্ত্রী ও শিশু পুত্রকন্যাসহ ঘর ছাড়তে বাধ্য হলেন। কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস, যে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কিৃতীদের ভয়ে তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হলেন, সেই কংগ্রেসী এক প্রতিবেশী পরিবারই তাদের সাহায্য করেছিলেন এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে। সাতাত্তরের পালাবদলের পর আবার ঘরে ফিরে আসা। সকলে পেলেন জমিবাড়ির অধিকার। পরিবার নিয়ে একটু নিশ্চিন্ত আশ্রয়। কিন্তু বাস্তবে তো পুরো এলাকাটাই ছিলো তাঁর পরিবার। ছোট্ট ঘর, অবারিত দ্বার ছিল সবার জন্য। লোকজন আসছে যাচ্ছে, ওই চিলতে ঘরেই হচ্ছে সংস্কৃতিচর্চা, রাজনীতিচর্চা। তার মাঝেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, বড়ো হয়ে ওঠা। ঘরে আসা অতিথিদের সাথেই একটু পাত পেড়ে ডালভাত খেয়ে নেওয়া। এইভাবেই চার দেওয়ালের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক বৃহত্তর পরিবারে সামিল হওয়া। ছেলেমেয়ের জন্য সোনালী ভবিষ্যৎ হয়তো রেখে যেতে পারেননি, কিন্তু রেখে গেছেন গর্ব করার মতো জীবনদর্শন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার মতো আদর্শ, আর বামপন্থী হয়েও থেকে গিয়েছেন ডানবাম নির্বিশেষে বহু মানুষের মনের কোনায়। এই মানুষটি হলেন বামপন্থী সমাজকর্মী মানিক সরকার। তার সঙ্গে প্রত্যেকটি কাজে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিলেন সহধর্মিণী মীরা সরকার।

ইতিমধ্যে আদিগঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। আদিগঙ্গাকে আর এই নামে ডাকে না কেউ। সে এখন পাকাপাকিভাবে টালির নালায় পরিণত। অথচ স্বাধীনতার কিছু আগেও চিত্রটা এরকম ছিল না। রেবতীরঞ্জন ভট্টাচার্য স্মৃতিচারণা করেছেন, তাঁর ছেলেবেলাতেও এটা ছিল যথেষ্ট বড়ো, তখনও এখান দিয়ে বাণিজ্যতরীর আনাগোনা ছিল। আর একটু পুরনো মানুষেরা মনে করতে পারবেন, ১৯৭০ অব্দিও সুন্দরবন থেকে লোকেরা মধু ও বাঁশ নিয়ে এসে আদিগঙ্গার ব্রীজের নীচে বেঁধে রাখতেন। কিন্তু সেসব আজ ইতিহাস। দুইপাশে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য বসতি, তাদের অশোধিত বর্জ্য, এমনকি কলকাতা কর্পোরেশনের অশোধিত বর্জ্য ইত্যাদির চাপে অতীতের বাণিজ্যপথ টালির নালা এখন মৃতপ্রায়। নাগরিক জীবনের কুঅভ্যাস আর ঔদাসিন্যে রোজ আবর্জনার স্তুপ জমা হচ্ছে দুইপাশে। কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছে মেট্রো রেলের জন্য তৈরি হওয়া তিনশোরও বেশি পিলার। নাগরিক সমস্যার চাপে জর্জরিত মৃতপ্রায় এই জলাভূমি আমাদেরই দিকে তাকিয়ে আছে একটু যত্ন, ভালোবাসা আর সদিচ্ছার আশায়।

সময় এগোচ্ছে, বদলাচ্ছে টালিগঞ্জ, বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন একটু একটু করে। রসা পাগলার সেই সবুজ জঙ্গল আজ কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত। যতটুকু ফাঁকা জায়গা ছিল, এমনকি জলা, নীচু জমি সব বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে একের পর এক ফ্ল্যট, আবাসন। বদলে গিয়েছে কলোনি বাড়িও, কলোনিতে খোলার চালের বাড়ি আর প্রায় দেখা য়ায় না। তার জায়গায় অপরিসর রাস্তাতে অল্প জমিতে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে গায়ে গায়ে ফ্ল্যটবাড়ি। কেউ কাউকে একচিলতে জায়গা ছাড়তে নারাজ। বছর পনেরো আগে আমি যখন এই অঞ্চলে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য বাড়ি দেখতে শুরু করি, জানতে পারলাম যে এখানে ফ্ল্যাটের জমি হয় দু'রকম, 'কলোনি ল্যান্ড' আর 'পারচেসেড ল্যান্ড'। কলোনি ল্যান্ডে তৈরি হওয়া কর্পোরেশনের অনুমোদনহীন ফ্ল্যাটবাড়ির দাম হয় কম (এখন নিয়মসাপেক্ষে অনুমোদন পাওয়া যায়)। নগরায়নের চাপে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে বাড়তে থাকা শহরের একদা এই শহরতলিই এখন মধ্যবিত্তের প্রিয় থাকবার জায়গা। আর এইসব অসংখ্য ফ্ল্যাটবাড়িতে ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি এখন বসবাস করেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ, বসবাস করেন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা মানুষ। কেউ কর্মসুত্রে, কেউ ব্যবসায়িক কারণে কেউ বা উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছেন। যা ছিল একদা ছিন্নমূল মানুষের আবাসস্থল সেখানে আজ নানারকম মানুষের আনাগোনা।

মানিক সরকাররা আজ আর বেঁচে নেই। এক একটা মৃত্যুর সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে ছিন্নমূল প্রথম প্রজন্ম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংঘবদ্ধ সংগ্রাম আর নেই। তাই গুরুত্ব কমেছে কলোনি কমিটির, পাড়ায় পাড়ায় কলোনি কমিটিগুলো কোথাও নিষ্ক্রিয়, কোথাও বা কোনোরকমে চলছে। খোলার চালের বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে সেই মিলেমিশে থাকার সংস্কৃতি। বিশ্বায়নের সঙ্গেই ঢুকে পড়েছে 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও' মানসিকতা। দেশভাগের দুর্দশার অংশীদার সেই শিশুটি আজ প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ। তাঁদের বেশিরভাগই আজ পায়ের তলায় জমি খুঁজে পেয়েছেন। বাপ-ঠাকুর্দার সেই জীবনসংগ্রাম আর মনে পড়ে না আজ তেমন করে। প্রতিবেশীর দুঃখে আর ঝাঁপিয়ে পড়েন না আগের মতো, পূর্বপুরুষের তৈরি কলোনির স্কুলে আজ আর ছেলেমেয়েদের পাঠান না। পাঠানো হয় দূরের কোনো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। তাই কলোনির বেশিরভাগ স্কুল আজ অস্তিত্বসংকটে ধুঁকছে। ছোটবেলার না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকেই হয়তো নাবালক ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্টফোন। সুযোগ করে দিয়েছেন আঙুলের টোকায় সমগ্র পৃথিবীকে দেখার প্রযুক্তিকে। তাই আজকে বিশ্বজোড়া বিপণন আর বাজারি অর্থনীতির যুগে ছিন্নমূল তৃতীয় প্রজন্মে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে কলোনি ল্যান্ড আর পারচেসড্ ল্যান্ড। রসা পাগলার জঙ্গল থেকে কয়েক শতাব্দী পথ অতিক্রম করে কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হওয়া টালিগঞ্জ আজ আবার এক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।


* মানিক সরকারের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

সুত্রঃ

● https://bangalnama.wordpress.com/2009/08/31/the-refugee-city-partition-and-kolkata%E2%80%99s-postcolonial-landscape/

● https://www.thethirdpole.net/en/2016/09/19/ganga-disappears-in-west-bengal/

● ”Tollygunge Club” by Pradip & Amita Das.

● http://www.rcgc.in/

● https://en.wikipedia.org/wiki/Tollygunge

● www.tollygungeclub.org

● https://www.livemint.com/Politics/tjFpygaKKxkefzmTitENoK/Waqf-estates-in-neglect-overrun-by-encroachers.html

● https://www.scoopwhoop.com/inothernews/indian-royal-families-that-are-struggling-today/