আরেক রকম ● নবম বর্ষ দ্বাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ জুন, ২০২১ ● ১-১৫ আষাঢ়, ১৪২৮

সম্পাদকীয়

ভ্যাকসিন এখন পণ্য


৭ জুন, ২০২১। বিকেল ৫টা। দেশবাসীর সামনে তিনি টিভির পর্দায় আবির্ভূত হলেন। দেশ জুড়ে হঠাৎ করেই বেড়ে গেল আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা-আশঙ্কার মাত্রা। অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এতদিনে দেশবাসী তাঁর এহেন টিভি-আবির্ভাব সম্পর্কে সুকুমার রায়ের অনুসরণে “সদাই মরে ত্রাসে ঐ বুঝি সে আসে” জাতীয় ধারণা আত্মস্থ করে নিয়েছেন। না, এবার চার ঘণ্টার নোটিশে জাতীয় অবরোধ ঘোষিত হয়নি। তালি বাজিয়ে, থালি পিটিয়ে, দিয়া জ্বালিয়ে একুশ দিনের জন্য সংক্রমণ বিরোধী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আহ্বান জানানো হয়নি। ঘড়ি ধরে বত্রিশ মিনিটের ভাষণে টিকাকরণ নীতির তৃতীয় সংস্করণের রূপরেখা বর্ণিত হয়েছে।

অনেকের মনে হল এতদিনে বোধোদয় হয়েছে। ভক্তজনেরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন। ভাড়াটে সৈনিকের দল কায়দা পাল্টিয়ে উচ্চগ্রামে প্রচার শুরু করলেন। বিরোধী দলের নেতারা বললেন তাঁদের ধারাবাহিক বিরোধিতায় টিকাকরণ নীতির পরিবর্তন হতে চলেছে। বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকেই মন্তব্য করলেন যে বিভিন্ন হাই কোর্টের ক্রমাগত তিরস্কারের ফলেই নীতি পরিবর্তন না করে উপায় ছিল না। অথচ কারো নজরে এল না সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার প্রাক-মুহূর্তে কেন নতুন টিকাকরণ নীতি ঘোষণা করতে হল। সরকারের ওকালতনামার ভিত্তিতে বিভিন্ন আদালতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত ব্যর্থতা, টিকাকরণ প্রক্রিয়া, টিকা বন্টন নীতি ইত্যাদি তীক্ষ্ণ ভাষায় সমালোচিত হচ্ছিল। গণহত্যা, মৃত্যুমিছিল জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে বিভিন্ন হাই কোর্ট সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। সেই মরশুমে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভ্যাকসিন নীতি নিয়ে একটি মামলা শুরু করে। এই মামলায় ভারত সরকারকে ওকালতনামা পেশ করতে বাধ্য করা হয়। ভারতের ছাত্র ফেডারেশন সহ বহু রাজ্য সরকার ও অন্যান্য সংগঠন এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। শুনানি শেষে রায় ঘোষণার ঠিক আগে সাত তাড়াতাড়ি সাতই জুন সরকার নতুন নীতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। অন্যথায় আদালত নির্ধারিত নীতি অনুসারে টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু করতে হত। প্রশাসনের কাজে আদালতের হস্তক্ষেপ কোনো নির্বাচিত সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া আর যাই হোক সম্মানজনক নয়।

যেভাবেই হোক না কেন দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত পনেরো মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রচারে যে সামাজিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। হাজারো উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। জীবিকার প্রশ্ন থেকে শুরু করে চিকিৎসা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা মানুষকে গ্রাস করে রেখেছে। সংক্রমিত হলে ওষুধ কোথায় কী দামে পাওয়া যাবে? অক্সিজেন কোত্থেকে আসবে? হাসপাতালে ঠাঁই হবে তো? সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসা হবে তো? নাকি শুধু খরচ বাড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে হবে?

প্রতিনিয়ত এইসব আশঙ্কায় জর্জরিত মানুষের মধ্যে সরকারের টিকাকরণ প্রক্রিয়া যোগ করল দুশ্চিন্তার নতুন মাত্রা। ১৬ই জানুয়ারি ২০২১ থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। সরকারি ক্ষেত্রে বিনামূল্যে আর বেসরকারি সংস্থায় ২৫০ টাকায় টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হল। বলে দেওয়া হল যে চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। দেশের প্রবীণ নাগরিকরা এমন নির্দেশ মেনে নিয়ে কিঞ্চিত দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন। আচমকা দুটি ডোজের ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়ে নতুন করে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করা হল। এর মধ্যে এপ্রিল মাসে ঘোষণা করা হল যে পয়লা মে থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক পরিষেবার সঙ্গে জড়িত কর্মী বাদে কেন্দ্র শুধু মাত্র ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য রাজ্যকে টিকা জোগাবে। ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়ার দায় রাজ্যের। অর্থাৎ ভারতবর্ষের এতদিনকার প্রচলিত টিকাকরণ নীতিকে সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া হল। অথচ সকলের জন্য টিকাকরণ ভারতবর্ষে কোনো নতুন কর্মকাণ্ড নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে যক্ষ্মা, ট্রিপল অ্যান্টিজেন (হুপিং কাশি, টিটেনাস, ডিপথেরিয়া) স্মল পক্স, পোলিও ইত্যাদি রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় টিকাকরণ প্রকল্প চালু আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় রাজ্যে রাজ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের সুষ্ঠু বন্দোবস্ত রয়েছে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মীরা নীরবে টিকাকরণ করে চলেছেন। প্রয়োজনে তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দিয়ে থাকেন। কোনো হৈ চৈ নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এই পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে দেশের সমস্ত নাগরিকের টিকাকরণ সম্পন্ন করা যেত। প্রাথমিক পর্যায়ে জনকল্যাণমূলক কাজের ইচ্ছার অভাবেই এমন হুলুস্থুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য। তা না হলে এই দুরাবস্থার মধ্যে কী করে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে মোট উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৫০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার কিনবে। বাদবাকি ৫০ শতাংশের অর্ধেক কিনবে বেসরকারী হাসপাতাল আর রাজ্য সরকারগুলির জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৫ শতাংশ।

এই সমস্ত বিষয়ে বিভিন্ন হাই কোর্টের টিপ্পনি, সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, বিরোধীদের চাপ, টিকা না-পাওয়া সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ব্যর্থতা, সর্বোপরি নিজের ভাবমূর্তিকে রক্ষার চেষ্টায় ঘোষণা করা হয়েছে, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্যও অর্থাৎ সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয়র টিকা এখন থেকে কেন্দ্রই জোগাবে রাজ্যকে, বিনামূল্যে। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যে শংসাপত্র দেওয়া হয় তাতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে কোনো শব্দ উচ্চারিত হয়নি। নতুন সংশোধিত নীতিতে এখনও ২৫ শতাংশ টিকা বেসরকারী হাসপাতাল যাতে কিনতে পারে, তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বত্রিশ মিনিটের ভাষণে দাপুটে ভঙ্গিতে বলা হয়েছে যে যদি ভারতের টিকাকরণের ইতিহাসের দিকে তাকানো যায়, দেখা যাবে, দেশকে দশকের পর দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে বিদেশ থেকে প্রতিষেধক আসার জন্য। তা সে স্মলপক্সই হোক, বা পোলিয়ো কি হেপাটাইটিস বি-র টিকা। অন্যান্য দেশে যখন টিকাকরণের কাজ শেষ হয়েছে, ভারতে তখনও তা শুরুই হয়নি। এমন অসত্য ভাষণ যাঁরা তৈরি করে দেন তাঁদের জ্ঞানগম্যি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ভারতে ব্রিটিশ-শাসিত প্রতিষ্ঠানগুলি টিকা উৎপাদনের কাজ শুরু করে। যদিও ভারতে স্মলপক্সের প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছিল ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে। ব্রিটেনে আবিষ্কারের চার বছরের মধ্যে ভারতে প্ৰথম টিকা দেওয়া হয়েছিল। ভারতে সেই টিকাকরণ শুরু হওয়ার পরে তা কখনওই সেভাবে বন্ধ হয়নি। তবে তখনকার ভারতীয় সমাজে এই নিয়ে দ্বিধা ও সন্দেহ থাকায় এবং বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪৪-৪৫ নাগাদ ভারতে টিকাকরণের গতি কমে আসে। ফলে সেই সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি স্মলপক্স ছড়িয়ে পড়ে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরেই এই প্রতিষেধক প্রদান প্রক্রিয়ায় আবার জোর দেওয়ার ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও কমতে থাকে। ১৯৪৭-এ ভারত স্মলপক্সের প্রতিষেধক উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে। ১৯৫৯এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’ গোটা বিশ্বকে স্মলপক্স-মুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়। ‘ইউএস সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’-এর ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালে দক্ষিণ আমেরিকা এবং ১৯৭৫ সালে এশিয়ায় (ভারত-সহ) স্মলপক্স ভাইরাস নির্মূল হয়। তবে প্রতিষেধক না-পাওয়ার কারণে নয়, এই ভাইরাস নির্মূল হতে সময় লেগেছিল বিভিন্ন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণের জন্য। পোলিয়ো-টিকার গবেষণার ক্ষেত্রেও ভারত অগ্রণী দেশ। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এবং মুখে ঢেলে - পোলিয়োর দু’রকম টিকার উৎপাদনই ভারতে গোড়ার দিক থেকেই হয়েছে। ভারতে পোলিয়োর নিজস্ব টিকা তৈরি করে পাস্তুর ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এর মাঝখানে টিকা আমদানিও হয়েছে। অর্থাৎ ‘দশকের পর দশক’ ভারতকে বসে থাকতে হয়নি। ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিয়ে রোনাল্ড রস ও কালাজ্বরের ওষুধ নিয়ে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী তো খোদ কলকাতাতেই সফল গবেষণা করেছিলেন। ১৮৯৭-এ। প্লেগের প্রতিষেধক তৈরি হয়েছিল বম্বে বা অধুনা মুম্বইয়ে। তখনকার গ্রান্ট মেডিক্যাল কলেজে তা তৈরি করেছিলেন ওয়াল্ডেমার হাফকিন। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন প্রতিষেধক তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে স্বাধীন ভারতেও। যেমন ১৯৪৮ সালে তামিলনাড়ুতে তৈরি হওয়া বিসিজি ল্যাবরেটরি (টিবি-র প্রতিষেধক তৈরির)। ভারত সরকারের সাতটি প্রতিষ্ঠানে ডিপথেরিয়া, টিটেনাসেরও প্রতিষেধক তৈরি হয়ে চলেছে। ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন সংক্রমণ সংক্রান্ত প্রতিষেধকের সর্বজনীন প্রক্রিয়া চালু থাকায় ভারত ২০১৪-র অনেক আগেই পোলিও-মুক্ত হয়ে গেছে। এবং টিকাকরণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত। ভারতের নতুন ইতিহাস রচনার যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা কি এইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানেন না?

ইতিহাসের অজ্ঞতা আপত্তিকর নয়। শুধুমাত্র গণমাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ না করাই সমীচীন। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয়ে বাড়তি ব্যুৎপত্তি দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। ভ্যাকসিন সংক্রান্ত নতুন নীতি অনুসারে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে তিন রকমের দাম স্থির করে দেওয়া হয়েছে। ২১শে জুন থেকে যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় কোনোরকম আগাম বার্তা না দিয়েই সরাসরি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে দেশে উপলব্ধ তিনটি ভ্যাকসিনের যে কোনো একটির প্রথম ডোজ নিয়ে আসতে পারেন। বেসরকারি হাসপাতালে কোভিশিল্ড-এর দাম ৭৮০ টাকা, কোভ্যাক্সিন-এর দাম ১,৪১০ টাকা এবং স্পুটনিক ভি-র দাম ১,১৪৫ টাকা। এই দামের মধ্যে ১৫০ টাকা পরিষেবা-সহ ও অন্যান্য কর ধরা হয়েছে বলেই জানানো হয়েছে। এরমধ্যে কোভ্যাক্সিন এবং স্পুটনিক ভি এখনও পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। তবুও ভারত সরকার এই দুই অ-স্বীকৃত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে অনাগ্রহী নয়। এমনকি আরেকটি ভ্যাকসিন উৎপাদক (বায়োলজিক্যাল-ই) সংস্থাকে উৎপাদন শুরুর আগে তো বটেই এমনকি কোনোরকম স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই দেড় হাজার কোটি টাকা আগাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন? কে জানে। অন্যদিকে, জিএসটি কাউন্সিলে বিভিন্ন রাজ্যের তরফে যেই দাবি তোলা হয়েছিল যে ভ্যাকসিনকে জিএসটি-র আওতার বাইরে রাখার, নির্লজ্জ সরকার তা মানতে অস্বীকার করে।

ভ্যাকসিন নিয়ে এইরকম একটা সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে পয়লা মে থেকে বিশে জুন পর্যন্ত পঞ্চাশ-একান্ন দিন ধরে যে কোনো মূল্যে ভ্যাকসিন বিক্রি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও সরকার নিয়ন্ত্রিত দামে, যা প্রকৃত অর্থে যথেষ্ট বেশি, বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিত্তবান মানুষেরা সেই দামেই এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে কিঞ্চিত নিশ্চিত বোধ করছেন বা করবেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে আগ্রহ দেখালে গায়ে হয়তো দেশদ্রোহী-র ছাপ পড়তে পারে বলে সকলেই নীরব রয়েছেন। তবে এই নীরবতার পরিসরে নিপাট ব্যবসা হয়ে চলেছে। অন্যথায় তিন সংস্থার ভ্যাকসিনের দামে এত তারতম্য হতে পারে?

এমন একটা সুবেদি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক চমৎকার ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। টিকাকরণে জনসাধারণকে উৎসাহিত করতে ইউকো ব্যাঙ্ক ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য স্থায়ী আমানতে (ফিক্সড ডিপোজিট) বেশি সুদ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সেই শংসাপত্র দেখিয়ে ৯৯৯ দিনের স্থায়ী আমানত করলে ০.৩০ শতাংশ বেশি সুদ পাওয়া যাবে। 'ইউকোভ্যাক্সি-৯৯৯' নামের এই বিশেষ আমানত প্রকল্প আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালু থাকবে। ইউকো ব্যাঙ্কের মতো এই ধরনের সুবিধা দিচ্ছে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ওই ব্যাঙ্কের তরফেও টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে ০.২৫ শতাংশ বেশি সুদ। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে তা ০.৫০ শতাংশ। তবে ১ হাজার ১১১ দিনের স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রেই দেওয়া হচ্ছে এই সুবিধা।

চূড়ান্ত বিচারে ভ্যাকসিন এখন মানুষের আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা-আশঙ্কা দূরীকরণের অন্যতম উপকরণ হলেও অনেকের কাছেই তা এখন একটি নির্ভরযোগ্য পণ্য। এই দুর্দিনে যাঁরা বাণিজ্যে উৎসাহী তাঁরা তাঁদের মতো চলুন। তৃতীয় তরঙ্গ এলে কীভাবে তার মোকাবিলা করা যাবে সে বিষয়ে কোনো আগাম পরিকল্পনা কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনো স্তরে হয়েছে বলে জানা যায়নি। কাজেই এই সঙ্কটের দিনে প্রতিটি ভারতীয়কে নিজেকেই যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করে সুস্থ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে অনেককাল আগে (১৯০৩) সেই দূরদর্শী কবি লিখেছিলেন, "...তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে..."।