আরেক রকম ● নবম বর্ষ দশম সংখ্যা ● ১৬-৩১ মে, ২০২১ ● ১-১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
প্রবন্ধ
এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
(এক)
আমার নিজের কথা
মমতার বিশাল বিজয়। বা, এই ধরনের কিছু শিরোনাম দিয়ে লেখা লিখতে পারতাম। কিন্তু পার্টি-বামপন্থীদের ব্যর্থতাকেই বিশ্লেষণ করা বেশি দরকার বলে মনে হলো। কারণ, আমি যদিও কমিউনিস্ট নই, কিন্তু বাংলার বামপন্থীদের সম্পর্কে আমার দুর্বলতা চিরকালই আছে। খুব বেশি আছে। উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্ট আরএসএসের সঙ্গে দুই দশক কাটানোর অনেকগুলো বছরেও ছিল। মনের অবচেতনে ছিল। দেবব্রত বিশ্বাস আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের ভক্ত হওয়ার জন্যে ছিল। উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্র, অরুণ মুখোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী, মোহিত চট্টোপাধ্যায়, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় কেয়া চক্রবর্তী আর রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর নাটকের ভক্ত হওয়ার জন্যে ছিল। নির্মলেন্দু চৌধুরী, সলিল চৌধুরী-সবিতা চৌধুরীর গানের ভক্ত হওয়ার জন্যে ছিল। মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক আর তপন সিংহের ছবির ভক্ত হওয়ার জন্যে ছিল। আর ছিল সত্যজিৎ রায়ের সমগ্র সৃষ্টি, যার পরতে পরতে আধুনিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রগতিশীলতা। আর, সবার ওপরে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর বিশ্বমানব হবার ডাক। বাংলার নবজাগরণের শেষ সূর্যচ্ছটা। "সবার পিছে সবার নিচে সবহারাদের মাঝে" তাঁদের ডাক।
এমনকী আমি হীরেন মুখোপাধ্যায়, নিখিল দাস আর জ্যোতি বসুর বক্তৃতারও ভক্ত ছিলাম। বহু পরে যখন অধ্যাপক নরহরি কবিরাজের সঙ্গে আলাপ হলো, আর তিনি আমার আরএসএস-বিজেপির ওপর লেখা ইংরিজি বই "ইন দ্য বেলী অফ দ্য বীস্ট" জেরক্স করে নিয়ে গেলেন, তখন তাঁর সঙ্গেও আমি হীরেন মুখোপাধ্যায়ের বাগ্মীতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি।
সুতরাং, প্রগতিশীলতার প্রতি দুর্বলতা ছিলই। যদিও আরএসএসের সঙ্গে থাকার কারণে বাইরে ছিল তীব্র বাম বিরোধিতা। শিক্ষার অভাব।
আমার অনেক লেখায় আমি লিখেছি, এবং অনেক আলোচনায় আমি বলেছি, কেন আমি আরএসএস বিজেপি এবিভিপি ছেড়ে দিয়ে চিরকালের মতো বেরিয়ে আসি। একটা প্রধান কারণ হিসেবে বলেছি যখন বিশ্লেষণের চোখ খুলতে আরম্ভ করলো, তখনই বুঝলাম রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভূতিভূষণ, সত্যজিৎ, সুকুমার, লীলা, মহাশ্বেতার ভক্ত আমি ধর্মান্ধতা ও বিজ্ঞানবিরোধিতার সঙ্গে কিছুতেই থাকতে পারিনা। যারা ঘৃণা ও হত্যার রাজনীতি করে বিষবৃক্ষের মতো গজিয়ে উঠেছে, যাদের হাতে মহাত্মা গান্ধীর রক্ত, যারা বাংলাকে হিন্দি আগ্রাসনের একটা কলোনি বলে মনে করে, তাদের সঙ্গে থাকা আমার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব।
একদিন না একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতেই হতো। তার জন্যে মানসিক প্রস্তুতি লাগে। ছ বছর বয়েস থেকে প্রায় পঁচিশ বছর বয়েস পর্যন্ত ওদের সঙ্গে ঘোরাফেরা। ওঠাবসা। হাজার বন্ধু, ফলোয়ার। যখন বেরিয়ে আসি, তখন আমি এবিভিপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক। কলকাতা এবং দক্ষিণ বাংলার চার্জে। বহু দায়িত্ব। ছেড়ে চলে আসতে চাইলেই আসা যায়না। আর হঠাৎ একদিনে তা করাও যায়না। ভীষণ জটিলতা। মাথার ওপরে বাবা রয়েছেন তখন। তিনি বাজপেয়ীর মতো বিশাল নেতার সতীর্থ। বাড়িতে আনাগোনা দিবারাত্র ওদের জাতীয় নেতাদের। তাঁরা আমাকে শৈশব থেকে চেনেন। এবং তাঁরা স্নেহশীল। ভাউরাও দেওরাস থেকে অমল কুমার বসু। সর্বত্যাগী প্রচারক। খুব কাছ থেকে তাঁদের দেখেছি।
আমাদের দশ ফুট বাই দশ ফুট মেজেনাইন ফ্ল্যাটের দেওয়ালে টাঙানো হেডগেওয়ার আর গোলওয়ালকারের বাঁধানো ছবি। অরওয়েলের ১৯৮৪'র বিগ ব্রাদারের মতো তাঁদের সর্বগামী উপস্থিতি। আমার প্রতিটি মুভমেন্ট তাঁরা লক্ষ্য করছেন।
এই কথাগুলো এই কারণে বললাম এখানে যে বাংলায় আজন্ম থাকার কারণে যে রবীন্দ্রনাথ, যে শরৎচন্দ্র, যে রামকৃষ্ণদেব, যে বিদ্যাসাগর, যে সত্যজিৎ আমার চেতনার রংকে পান্না হলো সবুজ করতে সাহায্য করেছেন, তাঁরা সকলেই আলোর দিশারী, সাম্যের দিশারী। এবং আসলে আমি তাঁদেরই অতি ক্ষুদ্র এক উত্তরসূরী। বাংলার বামপন্থার আলোচনায় এই পূর্বকথা।
তাঁরা কি উচ্চকিত বামপন্থী ছিলেন? রামকৃষ্ণদেব অথবা শ্রীচৈতন্যদেব সাম্যবাদী ছিলেন বা সমাজবাদী ছিলেন, এ কথা বললে শুধু কমিউনিস্টরা নয়, সাধারণ অরাজনৈতিক বাঙালি হাসবে। ঠিক যেমন এদেশে আমেরিকায় লোকে হাসবে আমি যদি বলি যীশুখ্রীষ্ট একজন সাম্যবাদী নেতা ছিলেন। আচ্ছা, লালন ফকির? শাহ আব্দুল করিম? বাংলার বাউল সংস্কৃতি, কেঁদুলির মেলা?
যদি বলি স্বামী বিবেকানন্দ বা সিস্টার নিবেদিতা প্রকৃত অর্থেই একজন সোশালিস্ট ছিলেন, অধিকাংশ বাঙালি উড়িয়ে দেবে। কারণ, আমাদের সোশালিজমের কনসেপ্ট, ধারণা তৈরী হয়েছে মার্কস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও'এর ছবি দেখে, দেওয়ালে দেওয়ালে কাস্তে হাতুড়ি তারা, কাস্তে ধানের শীষ, কোদাল বেলচার ছবি দেখে। আর নয়তো কয়লা দিয়ে লেখা চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস - এইসব শ্লোগান দেখে। স্কুল কলেজ বন্ধ দেখে, ধর্মঘটের রাজনীতি দেখে, নকশাল আগ্রাসন এবং তারপরে নকশাল নিধনযজ্ঞ দেখে, বোমাবাজি পাইপগানের নিরন্তর যুদ্ধ দেখে, সিআরপির ভ্যান দেখে, ইন্দিরা গান্ধীর মুক্তিসূর্যের রঙিন ছবি দেখে। আমরা সাম্য ও সমাজবাদকে ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া বিদেশী কনসেপ্ট হিসেবেই দেখেছি। এবং তাদের চাপিয়ে দেওয়া নেতাদের মাধ্যমে দেখেছি। যে নেতারা স্বঘোষিত তাত্ত্বিক, এবং তাঁদের কথাই শেষ কথা। না শুনলে খতম। বহিষ্কার।
আমাদের বাড়িতে আরএসএস তাত্ত্বিকদের সর্বময় উপস্থিতি। আর ওদিকে কমিউনিস্ট পার্টির বাড়িতে, অফিসে চাপিয়ে দেওয়া লেনিন স্ট্যালিন মাও। এদিকে হিটলারের মন্ত্রশিষ্যরা। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা। অন্যদিকে ওরা। যারা সর্বহারার একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যেখানে মুক্ত গণতন্ত্র নেই। পার্টির মধ্যেই অসংখ্য গোষ্ঠী, এবং খুনোখুনি। হাজার হাজার ছেলে শেষ হয়ে গেছে এই পার্টির মধ্যেকার রক্তের রাজনীতিতে। কোনোটাই দেশজ রাজনীতি নয়।
আমাদের কাছে সোশালিজম কথাটা কখনো দেশজ সংস্কৃতি, লোকাচার বা স্পিরিচুয়ালিটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত এক জীবনদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। আমাদের সিলেবাসে, আমাদের খবরের কাগজে ও রেডিওতে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরা হয়েছে ধর্মসঙ্গীতের দেবতা হিসেবে। রক্তকরবী, স্ত্রীর পত্র, ডাকঘর, অচলায়তন, চতুরঙ্গর রবীন্দ্রনাথ হিসেবে নয়। আমাদের কাছে বিবেকানন্দ হলেন হিন্দু সন্ন্যাসী, যিনি শিকাগোতে হিন্দুধর্মকে উজ্জ্বল করেছিলেন, কিন্তু জাতিভেদ ভেঙে ফেলার ডাক দেওয়া সমাজবাদী জননেতা হিসেবে নয়। গোঁড়া বামপন্থীদের কাছে বিবেকানন্দ সাম্প্রদায়িক। আমাদের কাছে ভগিনী নিবেদিতা বিবেকানন্দের মন্ত্রশিষ্যা, কিন্তু বাংলায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এক প্রধান প্রেরণা নয়। আইরিশ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের যোগসূত্র নয়। আমাদের চেতনা যখন সবুজ ছিল, তখন তাকে বলপ্রয়োগ করে লাল রঙে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই আমরা সমাজবাদী বুঝিনি।
আমাদের হাইস্কুলের সিলেবাসে "সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে"র এস. ওয়াজেদ আলী আর একটা নজরুলের "দুর্গম গিরি কান্তার মরু" ছাড়া কোনো মুসলিম উপস্থিতি নেই। দলিত লেখক লেখিকা নেই। আমাদের উত্তম সুচিত্রা সিনেমা স্বর্ণযুগে একজনও মুসলমান অভিনেতা অভিনেত্রী নেই পশ্চিমবাংলায়। যেখানে অন্ততঃ তিরিশ শতাংশ মানুষ মুসলমান। কেউ আপত্তি করেনি। কংগ্রেসও না। কমিউনিস্টরাও নয়। আমাদের উগ্র ধর্মান্ধ আরএসএসের কথা তো ছেড়েই দিন, সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে মুসলমান মানেই তাই অবাঙালি। "তোর বন্ধু বাঙালি নাকি? আমি তো ভেবেছিলাম মুসলমান" - পড়ে নেবেন আমার নতুন বই "আপনি কি দেশদ্রোহী?"তে। অনেক লিখেছি এই নিয়ে। বাঙালি জাতির মধ্যে মুসলমানদের যে একটা প্রধান উপস্থিতি, দলিত উপস্থিতি, তা আমরা সকলেই অস্বীকার করেছি। বামপন্থী পার্টিগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মুসলমান বা "নিচু জাতের" হিন্দুর উপস্থিতি দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়। আমরা বুঝিনি।
এবং স্বঘোষিত সমাজবাদের ধারক ও বাহকরাও বোঝেন নি। যাঁরা বুঝেছেন, অন্যভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের তাঁরা পার্টি থেকে একঘরে করেছেন। পার্টি ভেঙেছেন বহু গ্রুপে। অন্যদিকে, উগ্র ধর্মান্ধ, অতি-দক্ষিণ ফ্যাসিস্টরা ঐক্যবদ্ধ। একটু একটু করে শক্তি সংগ্রহ করেছে তারা।
বিষবৃক্ষ আমাদের চোখের সামনেই মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। আমরা দেখেও দেখিনি। আমি দেখেছি। কারণ আমি তখন সেই বিষ গাছেই শাখায় শাখায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।
স্বামী বিবেকানন্দ ও সিস্টার নিবেদিতা সে সময়কার ভয়ানক প্লেগ মহামারীতে মানুষকে বাঁচানোর কাজ করেছিলেন। আজকে এই করোনা মহাদুর্যোগেও কিন্তু একশ্রেণির মানুষ দিবারাত্র পরিশ্রম করছেন মানুষকে বাঁচানোর জন্যে। সমাপতনটা বুঝতে হবে। চোখ থেকে রঙিন চশমা খুলে ফেললে বুঝতে একটু সুবিধে হবে।আমার রঙিন চশমা নেই।
(দুই)
স্বাধীনতার পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় “একজনও বামপন্থী জনপ্রতিনিধি” থাকবে না।
বামপন্থীদের মধ্যে সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি এসব পার্টিগুলো একটাও সীট পায়নি ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, কিন্তু আশ্চর্য হওয়ার সত্যিই কিছু নেই। এই নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক আলোচনাই হয়েছে, ফলে খুব বেশি নতুন কথা আমার বলার কিছু নেই। তাও, আলোচনা ও তর্কের খাতিরে কয়েকটা কথা বলতেই হচ্ছে। মুশকিল হলো, বিশেষ করে সিপিএম'এর একধরনের সমর্থক ও ক্যাডার আছেন, যারা আকাশে বিচরণ করেন। মেঘের জগতে তাদের আনাগোনা। মাটিতে নেমে বাস্তবকে ছুঁতে তাঁরা চান না। একদল অবিশ্বাস্যরকম ঔদ্ধত্য রোগে ভোগেন, একদল ভোগেন ডিনায়াল রোগে অর্থাৎ এগুলো আমাদের পার্টির জনপ্রিয়তার আসল মাপকাঠি নয় কারণ আমাদের পার্টি চরম সত্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য স্ট্যালিনবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং কে না জানে স্ট্যালিনবাদ লেনিনবাদ ও মার্কসবাদই পৃথিবীর মানুষের জন্যে শেষ কথা? আর একদল ভাবেন, এবারের নির্বাচনে আমাদের আসনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে শূন্যতে এসে দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু আসলে তা শূন্য নয়। এই শূন্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আমাদের আসল শক্তি। অনেকে এর মধ্যেই কোন কোন কেন্দ্রে কত ভোট বেড়েছে, তার পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। অর্থাৎ, ওই যে বললাম, মেঘের জগতে ফানুস হয়ে বিচরণ।
বাংলার বামপন্থীদের এই করুণ দশার জন্যে দায়ী কে? দায়ী কী, এবং দায়ী কারা? কেন আজ বামপন্থীরা কেরালায় আবার ক্ষমতায় আসতে চলেছে, কিন্তু বাংলা ও ত্রিপুরায় শেষ হয়ে গেছে? কেন উগ্র ধৰ্মান্ধ ও ঘৃণার রাজনীতি কেরালা বা তামিলনাডুতে এখনো দাঁত ফোটাতে পারেনি, কিন্তু বাংলায় বেনোজলের মতো ঢুকে গেছে? কেন দক্ষিণে হিন্দি আগ্রাসন সফল হয়নি, কিন্তু বাংলায় হয়েছে? বিশ্লেষণ কোথায়?
বাংলার বামপন্থীরা চৌত্রিশ বছর ক্ষমতায় ছিল। তার আগে আরো তিরিশ বছর ক্ষমতায় না থাকলেও সংগঠন হিসেবে প্রবল শক্তিশালী ছিল। সেই যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলার বাম আন্দোলনের ধারা পর্যবেক্ষণ করে তার মূল্যায়ন কি পার্টি কমরেডরা কখনো করেছে? আজ আমি বহুদূরে বসে যেসব কথা আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতায় লিখে যাচ্ছি, এবং বিরাট ঝুঁকি নিয়ে বিজেপি আরএসএসকে নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে এক্সপোজ করে যাচ্ছি, তাতে একদিকে ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্টরা আমাকে নিরন্তর লক্ষ্য করে যাচ্ছেন। আবার অন্যদিকে উগ্র বামপন্থীরা আমার পিন্ডি চটকাচ্ছেন। আচ্ছা বলতে পারেন, কেন আমি এই কাজটা করে যাচ্ছি? আমাকে কি আমেরিকা বা রাশিয়া বা চীন অথবা তৃণমূল টাকা খাওয়াচ্ছে? আমার কথায় হিন্দু ধর্মান্ধরা ক্রুদ্ধ। আমার কথায় মুসলমান ধর্মান্ধরা ক্রুদ্ধ। কিছু মুসলমান আমার বন্ধু সেজে আছেন যাঁরা আসলে ইসলামী সাম্প্রদায়িক। তাঁরা জানেন না আমি ইসলামী সাম্প্রদায়িকতার সম্পূর্ণ বিরোধী।
আমার কথায় ও হাজার লেখালেখিতে ক্রুদ্ধ ভারতীয় ও মার্কিন পুঁজিপতিরা। আমার বইগুলো তাঁদের মোটেই খুশি করবে না। আমার মিডিয়া ও আমার ব্লগ বহুবার আক্রান্ত হয়েছে।
আমেরিকায় আমার শ্রমিক ইউনিয়নের বহু ছাত্র ও ছাত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস আমি একজন পুঁজিবাদ-বিরোধী অতি বাম। দেশেও অনেকে তাই মনে করেন। অথচ আজ আমার ওপর সবচেয়ে ক্রুদ্ধ বাংলার সিপিএম, কারণ আমি বিশ্বাস করি তৃণমূল প্রধান বিপদ নয়, বিজেপিই প্রধান বিপদ। আনন্দ পটবর্ধন এবং এই ধরণের সম্মানিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের মতো আমি বলেছি বাংলায় এই নির্বাচনে জোট বেঁধে মমতার পাশেই দাঁড়ানো এখন দরকার ছিল। পটবর্ধন কি টিএমসি? না। আমি কি অন্ধ মমতাপন্থী? না।
যাঁরা বুঝলেন, বুঝলেন। যাঁরা কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকলেন, তাঁদের বোঝাতে পারলাম না। বন্ধু ও বান্ধবী যাঁরা আমার এতকালের কাজের সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনেই, আমার একটা বই না পড়েই আমার সম্পর্কে কটূক্তি করে গেলেন, তাঁদের বোঝানোর সাধ্য আমার নেই। বাংলায় উগ্র ধর্মান্ধতা ও ফ্যাসিস্ট রাজনীতি ঘাঁটি গেড়ে বসলো।
বামপন্থীরা শেষ - এ কথা আমি বলবো না। হয়তো বলতে পারি, এতদিন যে পার্টিগুলো বামপন্থার একচ্ছত্র স্বত্ত্বাধিকার ভোগ করেছে, সেই পার্টিগুলো এবারের মতো শেষ হয়ে গেছে। তার বদলে বিজেপি-বিরোধী যে কোনো শক্তির মধ্যেই বামপন্থা, অথবা বলা যায় প্রগতিশীলতার ডিএনএ রয়েই গেছে। এবং রয়ে গেছে বলেই এই সুনামির মতো ফ্যাসিস্টদের আক্রমণ থেকে বাংলাকে রক্ষা করা গেছে। সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ইত্যাদিরা হয়তো তা স্বীকার করবে না। তাদের আসনসংখ্যা শূন্য। একসময়ের প্রান্তিক শক্তি বিজেপি এখন ঘৃণা ও প্রোপাগাণ্ডার রাজনীতিতে ভর দিয়ে সেখানে পঁচাত্তর জন এমএলএ তৈরী করেছে। আর দু বছর আগে বামদের মমতাবিরোধী ভোটের হাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেক লোকসভা আসন তাদের দখলে। এই হলো আসল অবস্থা।
তাদের হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান আগ্রাসনের জোয়ারে বাঙালিত্ব ধ্বংসের মুখে।
কংগ্রেস পার্টিও বাংলায় আজ শূন্যস্থানে। বামপন্থীদের মতোই একটাও আসনে জয়লাভ করেনি তারা। এখন, বাংলার বাক্সবন্দী প্রাগৈতিহাসিক বাম এবং রাজবংশ-শাসিত কংগ্রেস - আপনারা ভেবে দেখুন, আপনারা কী করলেন? একবার ভেবে দেখুন। কাদের হাত শক্ত করতে গিয়ে কাকে জেতালেন, কাকে হারালেন? তাতে আপনাদের কী লাভ হলো, এবং কী ক্ষতি হলো?
আপনারা বাকি দেশের কথা ভাবুন, আর পশ্চিমবঙ্গের কথা ভাবুন। আমিও কিন্তু প্রথাগত অর্থে বামপন্থী, কিন্তু আমি ডগমাটিক বামপন্থায় বিশ্বাস করিনা। প্রকৃতপক্ষে, আমি বাম-দক্ষিণ এই প্রথাগত বাইনারিতেই বিশ্বাস করিনা। এই প্রবন্ধের শেষ অংশ পড়লে আমার অবস্থানটা সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন।
আমি রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ, নজরুল, লালন, রামকৃষ্ণদেবের চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। মাটির কাছে থেকেছি চিরকাল, মাটির ধুলো থেকেই উঠে এসে। গণতান্ত্রিক সমাজবাদ, আর্থিক ও সামাজিক সমানাধিকারের পক্ষে, এবং ধর্মান্ধতা, ঘৃণা ও হিংসার রাজনীতির বিপক্ষে আমার অবস্থান। কিন্তু আমি বিজেপি ও তার মাতৃজঠর আরএসএসকে সবচেয়ে বড় বিপদ বলে মনে করে এসেছি, এবং সারা জীবনের ব্যক্তিগত, বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাদের চিনেছি।
আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারলে বাংলায় কী হতো? আগেও অনেকবার বলেছি। (১) বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস হতো, এবং হিন্দি আগ্রাসন বাঙালিকে শেষ করে দিতো। (২) আম্বানি, আদানীদের হাতে বাংলার কৃষি, কলকারখানা, নদনদী, জল, প্রকৃতি ও বনভূমি ধ্বংস হতো। (৩) সরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হতো, এবং সরকারি চাকরি বলে আর কিছুই থাকতো না। (৪) মেয়েরা বাড়ি থেকে বেরোতে পারতো না উত্তরপ্রদেশের মতো। (৫) ট্রাম্পের মতোই মোদীর স্বৈরতান্ত্রিক স্টাইল জাঁকিয়ে বসতো বাংলায়। (৬) মুসলমানদের জীবন বিপন্ন হতো। (৭) বাংলাদেশে ইসলামী ধর্মান্ধরা তার প্রতিক্রিয়ায় আরো শক্তিশালী হতো। (৮) পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক অধিকার ধ্বংসকারী আইন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হতো, এবং আসামের মতোই নিপীড়ন শুরু হতো বাংলায়।
আজকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও আরএসএসের সাম্প্রদায়িকতা ও ফ্যাসিবাদের ওপরে এই কড়া চাবুক দুর্নীতি, মিথ্যা, ঘৃণা, বিভেদ ও কালো টাকার রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের জবাব। খেটে খাওয়া মহিলাদের জবাব। গরিব মানুষের জবাব। বাম ও কংগ্রেস, আপনারা সেই ঐতিহাসিক জয়ের শরিক হতে পারলেন না। সাধারণ মানুষের রায়কে আপনারা পড়তে পারলেন না, এবং অস্বীকার করলেন। এবং নিজেরাই কালের অতলে তলিয়ে গেলেন।
পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে জনসঙ্ঘ বিধানসভায় একটা আসন পেলে ওদের অফিসে পার্টি হতো, সেই হরিপদ ভারতী জনসঙ্ঘের উত্তরসূরি বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এখন কমপক্ষে পঁচাত্তরটা আসন। লোকসভায় দলবদলুদের ধরে নিয়ে একুশটা আসন। তাদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা, অর্থ, মিডিয়া, এবং ঘৃণা ও মিথ্যা প্রচার করার টেকনোলজি সেল। এই একুশটা আসন তারা পেয়েছে দু হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাম ভোট বিশেষতঃ সিপিএম ভোট বিজেপিতে চলে যাওয়ার কারণে। একুশের বিধানসভায় বরং বিজেপির আসনসংখ্যা সেই অনুপাতে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। তার একটা বড় কারণ, সিপিএম বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে আসাতে বিজেপির দিকে সিপিএমের সব ভোট চলে যাওয়াটা বন্ধ হয়েছে, যদিও বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যেই অনেক আঞ্চলিক সিপিএম নেতাদের বিজেপিতে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা গেছে এবারেও। "একুশে রাম ছাব্বিশে বাম" - না এ স্লোগান তৃণমূলের ষড়যন্ত্র নয়। আমার বামপন্থী বন্ধুদের অনেককেই আমি এই ফর্মুলায় বিশ্বাস করার কথা বলতে শুনেছি।
উত্তরবঙ্গে বিজেপি ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, সেখানে কিছু লোক পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য দাবি করতে শুরু করেছে, এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি দেওয়া হচ্ছে, যা আগামী দিনগুলোতে ক্রমশই আরো বিপদজনক চেহারা নিতে পারে। এই হলো আজকের পশ্চিমবঙ্গের আসল অবস্থা।
(তিন)
দ্বিতীয় বৃত্ত, এবং "পার্টি নয় প্রার্থী"র ভবিষ্যৎমুখী মডেল
হয়তো এই সময়ে আমার দ্বিতীয় বৃত্তের তত্ত্ব আপনাদের সামনে আর একবার হাজির করা যেতে পারে। বিশেষ করে যখন আমার "পার্টি নয়, প্রার্থী"র মডেল অনেকেই একটু মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন। স্পেনের একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ২০১১ সালে আমি প্রথম দ্বিতীয় বৃত্ত নিয়ে সমাজবিজ্ঞানের পেপার প্রেজেন্ট করি। তারপর, ওই বছরই ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ দ্য হিউম্যানিটিজে আমার বিস্তারিত প্রবন্ধ এই বিষয়ে বের হয়।
যেহেতু অধিকাংশ রাজনৈতিকভাবে সচেতন শিক্ষিত মানুষ আজও বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী লাইনেই ভাবনাচিন্তা করেন, তাই আমার এই মডেলটা তাঁরা ভালো বুঝতে পারেননি, যদিও যেসব রিভিউয়াররা আমার পেপার প্রকাশ করার জন্যে অনুমতি দিয়েছিলেন, তাঁরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, অরিজিনালিটির দিক থেকে আমার তত্ত্ব অসাধারণ।
আমি মনে করি, অসাধারণ বা অরিজিনাল যদি নাও হয়, ইম্পিরিক্যাল তো বটেই। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় এবং ভারত ও আমেরিকায় দীর্ঘকাল রাস্তায় নেমে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানে ও বিশ্লেষণে এই তত্ত্ব। এই তত্ত্বে আমি বলেছি যে বাম ও দক্ষিণ - এই মেরুকরণ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের, অর্থাৎ যাকে আমরা বলি ৯৯% - তাদের শুধু ক্ষতিই করেছে। আমি বলেছি, তিনশো বছর আগের বাম ও ডান মেরুকরণ আজ অর্থহীন। কারণ, (১) আসল লড়াইটা বাম ও ডানের মধ্যে নয়, বরং ১% বা শাসক ও শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে ৯৯%'এর লড়াই। এবং (২) মধ্যপন্থী বাম ও মধ্যপন্থী দক্ষিণের মধ্যে বিভেদ যত না বেশি, মিল তার চেয়েও অনেক, অনেক বেশি। এবং এই মধ্যবর্তী বিশাল জনসমুহকে আমি "দ্বিতীয় বৃত্ত" বা সেকেণ্ড সার্কল নাম দিয়েছি।
আমি বলতে চেয়েছি, যে দুই চরমপন্থী শক্তি কখনোই কাছে আসতে পারবেনা, তারা হলো অতি দক্ষিণ - যেমন বিজেপি, আর এস এস, বা জামাত ইসলামী, এবং অতি বাম - যেমন হিংসায় বিশ্বাসী মাওবাদী অথবা ওই ধরণের সংগঠন। কিংবা ধরুন, এই আমেরিকায় কেকেকে এবং ব্ল্যাক প্যান্থার। এরা ছাড়া দ্বিতীয় বৃত্তের বিশাল জনসমষ্টি কিন্তু ওভারল্যাপ অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা ও সংগ্রামের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আস্তে আস্তে কাছে আসতে পারবেন।
শাসক ও শোষক ১% তাহলে এই গোলকের কোথায় অবস্থিত? ভয়ঙ্কর শক্তিশালী এই শাসক-শোষক গোষ্ঠী বসে আছে গোলকের ঠিক কেন্দ্রে। তারা হলো আপাত-অপরাজেয় বাণিজ্যিক কর্পোরেট শক্তি, তাদের মিলিটারি, মিডিয়া, ও অর্থ। তারা সংখ্যায় বেশি নয়, কিন্তু তাদের হাতে এখন এই নয়া-উদারনৈতিক আর্থ-সামাজিক সিস্টেমে ক্ষমতা এতো বেশি কেন্দ্রীভূত যে বাম ও দক্ষিণের চিরকালীন লড়াই তাদের কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারবে না, কাবু বা পরাজিত করা তো দূরস্থান। একমাত্র যদি মধ্যপন্থী ৯৯% তাদের মতপার্থক্য সমাধান করতে পারে (যা করা সম্ভব), এবং একসঙ্গে জোট বাঁধে, তাহলে একদিকে তারা চরমপন্থী বাম ও দক্ষিণ, এবং অন্যদিকে প্রবল শক্তিধর বৃত্তের কেন্দ্রে বসে থাকা ১%'কে একদিন অবদমিত করতে পারবে।
জীবনানন্দ বলেছিলেন, "সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ।" মানুষের হাতে আর অনেক শতাব্দী নেই। হয়তো এক শতাব্দীর মধ্যেই মানুষ নামক প্রজাতি পরিবেশ-জলবায়ু সঙ্কটে, কিংবা পারমাণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হবে। আমার গুরু নোম চমস্কি যেমন বলেছেন। স্টিফেন হকিং মারা যাবার আগে এক শতাব্দীর ওই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন। সুতরাং, হাতে সময়ে একেবারেই আর নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি বাঁচার আশা দেখাতেই হয়, প্রাগৈতিহাসিক মেরুকরণ ছেড়ে ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতি ও সমাজনীতি-অর্থনীতি স্থাপিত করার চেষ্টা এখন থেকেই করতে হবে।
পঁচিশ কি পঞ্চাশ বছর আগের পার্টি রাজনীতি এখন প্রাগৈতিহাসিক। মানুষ ভোট দেবে প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে, সততা দেখে, পরিশ্রম করার ক্ষমতা দেখে, ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা দেখে। পার্টি দেখে নয়।
আর দশ কিংবা কুড়ি বছরের মধ্যেই মানবজাতি তার ভয়াবহ, অবিশ্বাস্য সঙ্কটের মুখোমুখি হয়ে এই পার্টি রাজনীতি ছুঁড়ে ফেলে দেবে। রাজনৈতিক সীমানাও বিলুপ্ত হবে। বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গে সীমানা নির্ধারিত করে দেবে পরিবেশ ও জলবায়ু সঙ্কট। লক্ষ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এখনই সমাজবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন "ক্লাইমেট রিফিউজি" বা জলবায়ু শরণার্থী। মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রাজিল, টুভালু, কিরিবাতি ইত্যাদি ছোটবড় দেশে এই মহাসংকট এখনই শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা, বর্মা, থাইল্যাণ্ড ইত্যাদি দেশ, এবং জাপান অথবা ম্যাডাগ্যাস্কার এই অভূতপূর্ব সংকটের আগামী দিনের শিকার।
এখনো আমাদের দেশের নির্বাচনে এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা হয়না। মিডিয়া বলে না। এবং বেশি কেউ তাই জানেও না। শাসকেরা খুব খুশি। মার্কিনপন্থী পুঁজি ও তার কর্পোরেট শক্তি আরো খুশি।
আমার কথা আমি বলে গেলাম। এই বিষয়ে আরো অনেক আলোচনা হোক, এই আশা রাখবো। যে আলোচনায় উদারমনস্ক বাঙালি, প্রগতিশীল বাঙালি, বুদ্ধিজীবী বাঙালি এবং সবচেয়ে বড় কথা, এ্যাক্টিভিস্ট বাঙালি সামিল হবেন।