আরেক রকম ● নবম বর্ষ দশম সংখ্যা ● ১৬-৩১ মে, ২০২১ ● ১-১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
সমসাময়িক
চোপ! সেন্ট্রাল ভিস্তা-র কাজ চলছে
প্রবেশ নিষেধ। সর্বসাধারণের যাতায়াতের রাস্তা নয়। ছবি তোলা বারণ। কোনোরকম ভিডিওগ্রাফি করা যাবে না।
ইত্যপ্রকার নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত বোর্ড টাঙানো লৌহপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে দেশের রাজধানীর কেন্দ্রস্থল। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু হয়ে রাজপথ নামাঙ্কিত যে রাস্তা ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বিস্তৃত সেই সদাব্যস্ত প্রশস্ত সড়কের দুই পাশে রয়েছে নর্থ ও সাউথ ব্লক। ভারতের প্রশাসনের শীর্ষ পদাধিকারীদের মন্ত্রক/দপ্তর এই দুই ভবনে অবস্থিত। তারপর রাজপথের দু'পাশে ছড়িয়ে আছে সবুজ ঘাসের আঙিনা। প্রবীণ বৃক্ষরাজি এই প্রান্তরের সীমানা নির্ধারণ করে। বাস্তবের এই চোখজুড়ানো পরিবেশের সঙ্গে তামাম ভারতবাসী তো বটেই বিদেশিরাও পরিচিত। প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারির সকালে এখানে আয়োজিত সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ এবং অন্যান্যদের শৌর্য-সৌন্দর্যের প্রদর্শনী টেলিভিশনের সমস্ত চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়।
এখানেই এখন চলছে দিবারাত্রি এক করে বিশাল কর্মযজ্ঞ। স্বপ্নের ফেরিওয়ালার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে যে নির্মাণ কাজ চলছে তার সরকারি নাম - ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প'। সম্পূর্ণ নির্মাণ নির্দিষ্ট সময়সূচি ধরে সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পটিকে ‘অত্যাবশকীয় পরিষেবা’-র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণ জনিত কোনো আকস্মিক লকডাউনের সময়ও যাতে নির্মাণের কাজে ব্যাঘাত না ঘটে সম্ভবত সেই উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত।
সর্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগেই কখন যেন চুপিসারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দেশের রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট ও ঐতিহ্যবাহী অট্টালিকার আর প্রয়োজন নেই। অথবা সেই বাড়িগুলি স্বপ্নের নতুন ভারতের উপযোগী নয়। কাজেই সেগুলিকে হয় ভেঙে ফেলা হবে অথবা তাদের অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে।
রাষ্ট্রপতি ভবনের চত্ত্বরেই নির্মিত হবে প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির বাসভবন। ৩০,৩৫১ বর্গমিটার জুড়ে গড়া প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন ও সচিবালয় কমপ্লেক্সে থাকবে ১০টি আটতলা বাড়ি। আগামী বছর মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ১৫ একর চত্বর জুড়ে পুরো প্রকল্পটি গড়ে তোলা হবে। নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য পৃথক আবাসন নির্মাণ হবে আড়াই একর এলাকায়।
এখনকার রাষ্ট্রপতি ভবনের মধ্যেই তৈরি হবে জীব-বৈচিত্র্য উদ্যান বা পরিভাষায় বায়ো-ডাইভার্সিটি পার্ক। সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের জন্য সারা বছরই সেই উদ্যানের দরজা খুলে রাখা হবে। সত্যিই তো ওখানে প্রচুর জায়গা খামোখা পড়ে আছে। তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম নয়। রাজকোষ থেকেই সেই টাকা জোগাতে হয়। পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি করে সেই খরচের কিছুটাও যদি উদ্ধার করা যায় ক্ষতি কী! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রক এবং কর্মীবর্গ মন্ত্রকের প্রধান দপ্তরের ঠিকানা নর্থ ব্লক। রাস্তার অন্য পাশের সাউথ ব্লকে রয়েছে বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান দপ্তর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রী-উপমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকে বসে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। এমনকি সাউথ ব্লকের একটি সংযুক্ত অংশে অবস্থিত সেই বহু আলোচিত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বা পিএমও। লোকে বলে এখন নাকি ওই দপ্তরই দেশ চালায়। এহেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভবন প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুসারে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হবে। এইসব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দপ্তরগুলি নতুন ঠিকানা পাবে।
নির্মাণ ভবন আর শাস্ত্রী ভবন স্বপ্নের নতুন ভারতের উপযোগী নয়। অহেতুক প্রচুর জায়গা জুড়ে নাকি দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই এই দুটি বাড়িকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেই জায়গায় বানানো হবে দশটি আটতলা বাড়ি। সেইসব ঝাঁ চকচকে আধুনিক বাড়িগুলি হবে নতুন কেন্দ্রীয় সচিবালয়। সমস্ত মন্ত্রকের সত্তর হাজার কর্মী-আধিকারিক সেইসব নতুন বাড়িতে বসে নতুন ভারতের প্রশাসন পরিচালনা করবেন। নবনির্মিত প্রতিটি বাড়ির বাইরের চেহারা নর্থ ব্লক এবং সাউথ ব্লকের মতো প্রস্তর আচ্ছাদিত হলেও ভিতরে কিন্তু ইস্পাত এবং কাচের ব্যাপক ব্যবহার হবে। প্রতিটি বাড়ি আবার ভূগর্ভস্থ পথ দিয়ে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এখনকার সংসদ ভবনের অস্তিত্ব লোপ পেতে চলেছে। গড়ে তোলা হবে নতুন সংসদ ভবন। তার স্থাপত্যশৈলী নাকি এককথায় অনবদ্য। বারোশো সাংসদের বসার বন্দোবস্ত করা হবে। মন্ত্রী তো বটেই প্রত্যেক সাংসদের জন্য থাকবে আলাদা বসার ঘর এবং দপ্তর। নতুন বাড়িতে প্রাকৃতিক আলো হাওয়ার যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে নজর দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে ২০২০-র ৫ই ডিসেম্বর প্রস্তাবিত সংসদ ভবনের ভুমিপূজা করেছেন। সবমিলিয়ে এক ধুন্ধুমার ব্যাপার!
১৯৩০-এ ব্রিটিশ স্থপতি স্যর এডউইন লুটিয়েন্সের নকশা অনুযায়ী রাজধানীতে যে প্রশাসনিক স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল, দেশের সংসদ ভবনও তার মধ্যে পড়ে। সেই ‘লুটিয়েন্স দিল্লি’-রই ভোলবদল করতে উদ্যত হয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন সংসদ ভবন-সহ ঐতিহ্যবহনকারী সমস্ত সরকারি ভবনগুলিকে সেখানে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রকল্পের জন্য দরপত্র হাঁকা শুরু হয়। গুজরাতের এইচসিপি ডিজাইন, প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামে একটি সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েই প্রকল্পের বিষয়ে বিবৃতি দেয়। তখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে 'সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প' নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না। পরে দেখা গেল ওই সংস্থাই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। তখনও যদিও করোনা হানা দেয়নি। কিন্তু নোটবন্দি, জিএসটি নীতির ধাক্কায় দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কালো ছায়া নেমে এসেছিল। সেই পরিস্থিতিতে খামোকা নতুন করে সংসদ ভবন নির্মাণের প্রয়োজন পড়ল কেন, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অন্য সব বিষয়ের মতো সেন্ট্রাল ভিস্তা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাব তো দূরের কথা কর্ণপাতই করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
সংক্রমণ ঠেকাতে এপ্রিল মাসের শেষ দিক থেকে টানা লকডাউন চলছে রাজধানীতে। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। রাজধানীর শ্মশানে মৃতদেহের দীর্ঘ সারি। জায়গা নেই কবরস্থানে। রাস্তার ধারের কাঠকুটোও তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহ সৎকারের জন্য। তার মধ্যেই কর্মব্যস্ত ইন্ডিয়া গেটের দু’ধারে রমরমিয়ে চব্বিশ ঘন্টা ধরে সেন্ট্রাল ভিস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ২০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য রাস্তার দু’ধারের ৫০-৬০ বছরের পুরনো মহীরূহগুলো উপড়ে ফেলে চলছে রাস্তা চওড়া করার কাজ। সুদৃশ্য বাতিস্তম্ভগুলি ইতিমধ্যেই অন্তর্হিত। হইহই করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বানানোরও কাজ চলছে। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে যে! যা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন সারা বছর শুদ্ধ বাতাসের অভাবে ধুঁকতে থাকা দিল্লিবাসী। সর্বত্র এ নিয়ে সমালোচনায় অবশ্য কর্ণপাত করতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকার।
দিল্লিতে লকডাউন ঘোষণা করার পূর্বমুহূর্তে ১৬ এপ্রিল সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে গোটা নির্মাণকার্যকেই জরুরি পরিষেবার আওতায় আনা হয়। তার আওতায় ১৮০টি গাড়িকে লকডাউন থেকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে খননকার্যে যে ৩০ জন শ্রমিক দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করছেন, নির্মাণস্থলে তাঁদের থাকার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। করোলবাগ, সরাই কালে খান এবং নিজামউদ্দিন এলাকায় আলাদা আলাদা ঘরভাড়া নিয়ে রয়েছেন তাঁরা। প্রতি দিন সকালে ঠিকাদারের ঠিক করে দেওয়া বাসে বা গাড়িতে চেপে সেখান থেকে কাজে আসেন তাঁরা। সংবাদে প্রকাশ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় কার্ফু চালু হওয়ার আগে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ৫০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। যাঁরা থেকে গিয়েছেন, তাঁদের অভিযোগ, মার্চ থেকে পারিশ্রমিক পাননি। এমন অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না। টাকা হাতে পেলে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা।
ভারত সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, দিল্লিতে কার্ফু জারি হওয়ার আগেই ৪০০ জন শ্রমিককে নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৯ এপ্রিল কার্ফু জারি হওয়ার পরে নির্মাণকার্য যেখানে চলছে, সেখানে শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা শুরু করে সরকার। যতক্ষণ না সেই ব্যবস্থা হচ্ছে, ততক্ষণ শহরের অন্য প্রান্ত থেকে শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। নির্মাণস্থলে ইতিমধ্যেই নাকি ২৫০ জন শ্রমিকের থাকার মতো কোভিড বিধিসম্মত বাসভবন তৈরি হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে চিকিৎসাকেন্দ্র। সেখানেই নাকি কোভিড পরীক্ষা ও নিভৃতবাসের ব্যবস্থা আছে।
ইন্ডিয়া গেট সংলগ্ন যে এলাকা দিল্লির প্রাণকেন্দ্র, সেই এলাকা গমগম করছে রাজমিস্ত্রি, খননকর্মী এবং ট্রাক-লরির আনাগোনায়। কোদাল হাতে ভিত খুঁড়ে চলেছেন একদল শ্রমিক। আর একদল কড়াইতে সেই মাটি মাথায় চাপিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে ফেলছেন। লকডাউনে কাজ বন্ধ নেই কেন জানতে চাইলে সরকারের কোনো মন্তব্য নেই।
দিল্লিতে লকডাউনের সময়ে নির্মাণকার্য চালাতে গেলে নির্মাণকার্য যেখানে হচ্ছে সেখানেই শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু সেন্ট্রাল ভিস্তায় কর্মরত শ্রমিকদের অন্য এলাকা থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ছে বলে প্রকল্পটির বিরোধিতা করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দিল্লি জুড়ে ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বারোটি বিরোধী রাজনৈতিক দল এই প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশের তো বটেই বিদেশের খ্যাতনামা পত্র-পত্রিকায় এই প্রকল্প নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দেশ বিদেশের বুদ্ধিজীবীরা সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সরকার মূক ও বধিরের মতো আচরণ করে কোনো কথা শুনতে রাজি নয়।
দেশের প্রায় প্রতিটি হাই কোর্ট সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকে নিয়মিত সমালোচনা করছে। সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংশাসিত সংস্থাসমূহ হাই কোর্টে তিরস্কৃত হচ্ছে। তবুও ঔদ্ধত্যের কোনো শেষ নেই।
চিতা জ্বালানোর জায়গা না পেয়ে লোকালয়েই তুলে আনতে হয়েছে শ্মশান। দালালের হাত থেকে চড়া দামে কেনা অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রোগীর পরিজনরা। করোনার গ্রাসে বিধ্বস্ত রাজধানীতে গত কয়েক দিনে এমন অজস্র দৃশ্য ধরা পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। চারিদিকে এই থমথমে পরিবেশের মধ্যেও মধ্য দিল্লিতে ঝড়ের গতিতে দৌড়চ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প। এমনকি, রাজধানীতে দৈনিক সংক্রমণ যে দিন ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই, সেই দিনই তিনটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। শুধু তাই নয়, করোনার প্রকোপে যাতে সৌন্দর্যায়নের কাজ থমকে না যায়, তার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার মতোই নয়া সংসদ ভবন নির্মাণ প্রকল্পকে জরুরি পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের মানুষের জন্য বিন্দুমাত্র সহানুভূতি থাকলে অনেক আগেই এই প্রকল্প মুলতুবি রাখা উচিত ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর নিজের নির্বাচন কেন্দ্রের কাছে গঙ্গার জলে শব ভেসে আসছে। সেইদিকে তাঁর নজর নেই। দেশের প্রতিটি মানুষের বিনামূল্যে দ্রুততার সঙ্গে টিকাকরণের বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো নির্দিষ্ট রূপরেখা রচিত হয়নি। দেশের গবেষণায় উৎপাদিত ভ্যাকসিনের উৎপাদন সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও পেটেন্টের অধিকার অন্য উৎপাদনকারী সংস্থার হাতেও তুলে দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চেয়েছে কেরল হাই কোর্ট। এই মামলার সূত্রে জানা গেছে যে দেশীয় গবেষণায় উৎপাদিত ভ্যাকসিন দেশের আরও ১৯টি সংস্থা উৎপাদন করতে পারে। যার মধ্যে আবার সাতটি সংস্থা সরকারি।
সামগ্রিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করা ছাড়া এই সরকারের কাছে আর কোনো বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ সেখানে নিমিত্ত মাত্র। আরও খুঁটিয়ে বললে বলতে হবে নাগরিক মানে ভোটার ছাড়া অন্য কিছু নয়। উপরন্তু সমস্ত ব্যাপারেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য খুঁজে নিতে এই সরকার যথেষ্ট সক্রিয়। অন্যথায় 'সেন্ট্রাল ভিস্তা' নামের এক আপাত দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ না করে দেশের মানুষের মৃত্যু মিছিল প্রতিহত করা যেত। আগ্রাসী মানসিকতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দিয়ে সাময়িকভাবে সবাইকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু তা কোনোমতেই যথাযথ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব নয়। মানবিকতা বাদ দিয়ে যে শাসন চলে তা স্বেচ্ছাচার। আত্মম্ভরীতা নির্ভর শাসকের পক্ষে জনকল্যাণমূলক কাজ করা সম্ভব নয়। সমাজ সভ্যতার ইতিহাসে এটাই চিরায়ত সত্য।