আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ অষ্টাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ● ১৬-৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪২৭

সম্পাদকীয়

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ও একটি বাম বিতর্ক


পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। এই কোভিড আবহেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গতি বাড়ছে। রাজ্যের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি বর্তমানে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই সঞ্চালিত হচ্ছে। এই আবহে একটি বিতর্ক বামপন্থী দলগুলির মধ্যে হঠাৎ জেগে উঠেছে, কে বড় শত্রু, তৃণমূল না বিজেপি? যদি বিজেপি হয় তবে কি তৃণমূলের সঙ্গেও সমঝোতা করা যায়? বিশেষ করে বিহার নির্বাচনে মহাজোটের আপাত সাফল্য এই বিতর্ককে সামনে এনেছে। প্রথমেই বলা দরকার মহাজোট বিহার নির্বাচনে ভালো ফল করলেও তারা এনডিএ জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেনি। অন্যদিকে, বিহারে বিজেপি ও এনডিএ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায়। তাই তার বিরুদ্ধে সব দলের এক মঞ্চে এসে জোট হওয়া সম্ভব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কখনও ক্ষমতা লাভ করেনি। তাই এই রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী জোটে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সামিল করা সম্ভব নয়। তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে বিজেপি ভারতের জনগণের পয়লা নম্বর শত্রু। বিজেপি অন্য পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মতন দল নয়। বিজেপি ফ্যাসিবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের রাজনৈতিক ফ্রন্ট। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের এই রকম বহুবিধ ফ্রন্ট রয়েছে যারা ক্রমাগত ভারতের রাজনৈতিক তথা সামাজিক মানচিত্রকে একটি উগ্র-ফ্যাসিবাদী হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চায়। এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে আরএসএস-এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শক্তির নাম ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি যারা বর্তমানে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর উদ্দেশ্যে। আমাদের রাজ্যেও যাদের ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কাজেই ভারতের সংবিধান, পরমতসহিষ্ণুতার ঐতিহ্য, ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’-এর ভাবধারার সরাসরি বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিজেপি তথা সংঘ পরিবার। তাই ভারতের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই বিজেপি-র তুলনা হতে পারে না। বিজেপি-র মতন ফ্যাসিবাদী শক্তিই যে বামপন্থীদের প্রধান শত্রু সেই বিষয় কোনো মতভেদ থাকার কথা নয়।

যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকানো যায়, তবে বিজেপি-র রাজনীতিতে যে হিংসার বিষ লুকিয়ে আছে তা জলের মতন পরিষ্কার হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এনআরসি চালু করতে চায়। বারবার বিজেপি-র নেতারা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে তারা নাকি দুই-কোটি মুসলমানকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে রাজ্য তথা দেশ থেকে বহিষ্কার করবেন বা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবেন। অসমে এনআরসি-র প্রক্রিয়ায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়ে তারা বেনাগরিক হয়ে গেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ হিন্দু। তাই হিন্দুদের মন জয় করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে নাগরিকত্ব আইন, যেখানে মুসলমান বাদ দিয়ে বাকি যে-কোনো ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবে। অমিত শাহ ‘ক্রনোলজি’ বুঝিয়েই রেখেছেন, আগে নাগরিকত্ব আইন পাশ হবে তারপরে হবে এনআরসি। পশ্চিমবঙ্গের কোনো মানুষ কোনোদিন এনআরসি-র দাবি জানাননি। নাগরিকত্বের দাবি যারা করেছেন, তাদের অন্য আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া যেত। কিন্তু শুধুমাত্র মুসলমান বিদ্বেষ এবং হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার মৌলিক ফ্যাসিবাদী ধারণা থেকে তৈরি হওয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি পশ্চিমবঙ্গে চালু করতে চায় বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের সমাজে হিন্দু-মুসলমান-সহ সমস্ত ধর্মবিশ্বাসী মানুষ যে সহাবস্থানের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন একসঙ্গে থেকেছে তার ভিতকে নড়িয়ে এক উগ্র-হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে রাজ্যের মাটিতে স্থাপন করাই বিজেপি-র লক্ষ্য। একই সঙ্গে উন্নয়নের নামে আদানি-আম্বানিদের বিচরণভূমি তৈরি করা, দেদার বেসরকারীকরণ এবং শ্রমিক-কৃষক বিরোধী নীতি বিজেপি শাসিত প্রত্যেকটি রাজ্যে যেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে তার থেকে পরিষ্কার যে এই রাজনৈতিক দল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে রাজ্যের শ্রমজীবি মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাবে। তার সঙ্গে যুক্ত হবে সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর লাগামহীন আক্রমণ, যেমনটা ঘটে চলেছে উত্তরপ্রদেশে। অতএব, এই হিন্দুত্ববাদী শ্রমজীবি মানুষ বিরোধী এবং সংবিধানের মূল ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিরোধী বিজেপি-র বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং তীব্র প্রচার সংঘটিত করা বামপন্থীদের অবশ্য কর্তব্য।

কিন্তু শুধুমাত্র বিজেপি-কে প্রধান শত্রু হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে হাত ধরা বা তার সঙ্গে আপোস করা বা তার প্রতি নরম হওয়ার কথা যারা বলছেন তারা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তবতা ধরতে পারছেন না। এই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিগত ১০ বছর ধরে রাজ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তা সাধারণ মানুষ আর মেনে নিতে পারছে না। একদিকে, রাজ্যে কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত না হওয়ায় বহু মানুষকে রাজ্যের বাইরে গিয়ে চাকরি খুঁজতে হচ্ছে। অন্যদিকে, রাজ্যে কোনো নতুন আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের চিন্তাধারা তৃণমূল কংগ্রেস হাজির করতে পারেনি। বিবিধ রকম সরকারী প্রকল্পের প্রসার নিশ্চিতভাবে বাড়ানো হয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার ফল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে। কিন্তু এই সরকারী প্রকল্পের টাকার হাত ধরেই এসেছে ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি। একদিকে, রাজ্যের নামীদামি নেতাদের প্রকাশ্যে টিভির পর্দায় ঘুষ নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল স্তরে দিদির দাদাদের দামালপনা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রত্যেকটি সরকারী প্রকল্পের টাকায় কাটমানি নিয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে উঁচু পদের নেতারা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে কাটমানি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, এই টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু চুরি করা দণ্ডনীয় অপরাধ, চোরেরা টাকা ফেরত দিলেই তাদের অপরাধ কমে যায় না। সদ্য ঘটে যাওয়া আম্ফান ঝড়ের পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আবারো তৃণমূলের চুরির নিদর্শন দেখা গেল। আম্ফান ঝড়ে আপনার বাড়ি ধ্বসে গেলেও আপনি ক্ষতিপূরণ পাবেন না যদি আপনি তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ট না হন। আবার তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ট হলে আপনার তিন তলা বাড়ি হলেও ক্ষতিপূরণ আপনি পাবেন। এই অনাচার রাজ্যের গ্রামে গ্রামে ঘটে চলেছে। এর বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা বামপন্থীদের দায়। বিজেপি চলে আসতে পারে বলে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট কীভাবে ঘটিত হবে বললে গ্রামের মানুষের প্রাত্যহিক যে জীবন অভিজ্ঞতা তার কোনো আন্দাজ পাওয়া যাবে না। আপাতত তাকে রোজ তৃণমূলের তোলা-তন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। আগামীদিনের ফ্যাসিবাদের লড়াইয়ের দোহাই দিয়ে আজকের এই লড়াই থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখলে অথবা এই অত্যাচারকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা হলে সাধারণ মানুষ বামপন্থীদের প্রতি প্রসন্ন হবেন না। বরং আরো বেশি করে তৃণমূল বিরোধী মানসিকতা নিয়ে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে পড়বেন।

যারা গ্রামের মানুষের প্রত্যহ লড়াই নয়, তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রাজনীতি ব্যাখ্যা করতে চান তাদেরকে এটাই বলার যে পশ্চিমবঙ্গের বুকে বিজেপি-র সঙ্গে প্রথম জোট করেছিলেন যিনি তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে বিজেপি কোনোদিন রাজ্যে একটি আসনও জেতেনি। কিন্তু মমতার হাত ধরে বিজেপি এই রাজ্যে আসন পায় এবং তাদের সংগঠন নির্মাণ করতে শুরু করে। এই কথা ঠিক যে বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান বিজেপি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে তৃণমূলের মতাদর্শগত অবস্থান যে নড়বড়ে তার এক নম্বর প্রমাণ বিজেপি-র হাত ধরা। অন্যদিকে, ইমাম এবং মুয়াজ্জিনদের সরকারী ভাতা প্রদান, আবার তাকে ব্যালেন্স করতে পুরোহিতদের ভাতা দেওয়া, একদিকে দুর্গাপুজোর বিসর্জনে মুখ্যমন্ত্রীর জোরালো উপস্থিতি অন্যদিকে ইদের নামাজে দোয়া করা প্রমাণ করে যে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণা তৃণমূলের নেই। বরং ধর্মের বিভিন্ন বিষয়কে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করতে তারা পিছ পা নয়।

আবার তৃণমূলের আমলে গণতন্ত্রের প্রসারকে রুদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস এবং রিগিং-এর নতুন উচ্চতা কায়েম করেছে তৃণমূল। বিরোধীদের মনোনয়নপত্র পর্যন্ত জমা দিতে দেওয়া হয়নি। ৩৫ শতাংশের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী তৃণমূল প্রার্থীরা যা রাজ্যে একটি রেকর্ড। দীর্ঘদিন পুরসভা নির্বাচন হয়নি। রাজ্যের প্রায় সবকটি পুরসভা প্রশাসকরা চালাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের আর কোনো ভূমিকা নেই। এহেন পরিস্থিতি শুধুমাত্র শাসক দলের জন্য দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে না। তার সঙ্গে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের বাতাবরণও তৈরি করে। বহু বাম কর্মী, সমর্থক তৃণমূলের হাতে নিহত হয়েছে। এলাকার পর এলাকা বিরোধীশূন্য করে দেওয়া হয়েছে। মানুষ এগুলি আর মেনে নিতে পারছে না। এহেন একটি শক্তির সঙ্গে কোনোরকম আপোস করলে রাজ্যের সমূহ সর্বনাশ হবে।

তৃণমূলের অপশাসনের ফিরিস্তি লম্বা করে লাভ নেই, বামপন্থীরা এই প্রশ্নেও মোটামুটি একমত। কিন্তু তাহলে কে বড়ো শত্রু বা তৃণমূলের প্রতি কী দৃষ্টিভঙ্গি হবে সেই প্রশ্ন উঠছে কেন? উঠছে তার কারণ অনেকে মানতে না চাইলেও ঘটনা এটাই যে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বামপন্থী সমর্থকদের একটি বড়ো অংশ সরাসরি বিজেপিকে ভোট দেয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বামপন্থীরা রাজ্যে ভোট পেয়েছিলেন প্রায় ২৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা কমে হয় মাত্র ৭.৫ শতাংশ, যার অধিকাংশটাই বিজেপি-র ঝুলিতে গেছে। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বামপন্থীরা বা বাম কংগ্রেস জোট কোনো বড় আন্দোলন সংঘটিত করতে পারেনি। অন্যদিকে, বিজেপি তার উগ্র হিন্দুত্বের মাধ্যমে লাগাতার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করেছে, মানুষের মধ্যে বিভাজন করেছে। কিন্তু তৃণমূল যেমন তা রোধ করতে পারেনি, অন্যদিকে বামপন্থীরাও মাঠে নেমে বিজেপি-র বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। আবার বিজেপি-ই যে দেশের মানুষের প্রধান শত্রু সেই কথা বামপন্থীরা জোর দিয়ে বলেননি। তৃণমূল এবং বিজেপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, এই বক্তব্য রাজ্যের মানুষ গ্রহণ করেননি। ফলত, বিজেপি রাজ্যে তৃণমূল বিরোধী হাওয়া এবং বামপন্থীদের শক্তি কমার সুযোগ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে, কারণ প্রথমবার এই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বিজেপি যারা সরকার গড়বে বলে দাবি জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস উভয়ের বিরুদ্ধেই বামপন্থীদের লড়াই আন্দোলন এবং প্রচার চালাতে হবে। নিশ্চিতভাবে বিজেপিকেই প্রধান শত্রু হিসেবে মানতে হবে কিন্তু তাই বলে তৃণমূল কংগ্রেসের অপশাসনের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকলে হিতে বিপরীত হবে। বরং এই দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতে বামপন্থী অবস্থান থেকে একগুচ্ছ দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে আগামী কিছু মাস বামপন্থীরা লড়াই আন্দোলন করতে পারেন, যার ভিত্তিতেই ২০২১ সালের নির্বাচনে মানুষের ইস্তাহার নিয়ে তারা নির্বাচনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

এই নীতিসমূহে দুটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একদিকে দ্যর্থহীন ভাষায় বলতে হবে যে এই রাজ্যে এনআরসি বা সিএএ চালু করতে দেওয়া হবে না। পরিষ্কারভাবে এই অবস্থান নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচার চালাতে হবে। সিএএ বা এনআরসি সংক্রান্ত বিজেপি-র প্রত্যেকটি বক্তব্যকে রাস্তায় নেমে প্রতিহত করতে হবে, কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয় কোনো নির্দেশ দিলে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী আর্থিক নীতি এবং রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে যেখানে আন্দোলনরত থাকতে হবে একই সঙ্গে বামপন্থীরা রাজ্যের মানুষের সামনে কোন বিকল্প হাজির করছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্ট নীতি ও দাবি তৈরি করে মানুষের মধ্যে যেতে হবে। বিজেপি বনাম তৃণমূল এই বাইনারি-র বাইরে বেরোতে হলে শুধু কথা বললে কাজ হবে না। বামপন্থী নীতির ভিত্তিতে মানুষকে একতাবদ্ধ করে লড়াই করা বাদ দিয়ে আর কোনো পথ নেই। জোরালো বামপন্থী রাজনীতি যা শাসক দল বা শাসক শ্রেণির তৈরি করে দেওয়া এজেন্ডার বিরুদ্ধে প্রকৃত শ্রমজীবি মানুষের কর্মসূচীকে সামনে রেখে লড়াই করতে পারে, সেটাই পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত বাম বিকল্প।