আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ সপ্তদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০২০ ● ১-১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৭

সম্পাদকীয়

বিহারের রায়ঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা


এবারের বিহার নির্বাচন একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোভিড অতিমারি জনিত লকডাউন এবং ভয়াবহ পরিযায়ী শ্রমিক সংকটের পরে প্রথম কোনো রাজ্যের নির্বাচন হল। কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতা প্রত্যক্ষ করেছিল দেশের মানুষ। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা মানুষের মনে নাড়া দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই বিহারের মানুষ। বিহার বরাবরই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিমারির আবহে বিহারের নির্বাচন বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল।

ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল বিজেপি-জেডিইউ নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট বিহারে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে, বুথ-ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাসকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করে। এনডিএ জোটের মোট আসন সংখ্যা ১২৫, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আসন সংখ্যা ১১০, ওয়াইসি’র মিম পেয়েছে ৫টি আসন, বহুজন সমাজ পার্টি এবং লোক জনশক্তি পার্টি ১টি করে আসন, বাকি ১টি আসন জিতেছে নির্দল প্রার্থী। তাহলে কি বিহারের জনতা কোভিড ও লকডাউনের জন্য বিজেপি তথা জেডিইউ-কে কোনো শাস্তি দিল না?

এর উত্তর জটিল এবং বিহারের রায় দেখাল একটি নির্বাচন কত রকম সমস্যা ও সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমত, যদি জোট হিসেবে পর্যালোচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে যে এনডিএ এবং মহাজোট উভয়েই পেয়েছে ৩৭ শতাংশ ভোটের কাছাকাছি। কিন্তু আসনের নিরিখে এগিয়ে গিয়েছে এনডিএ। প্রায় ২৬ শতাংশ বিহারের মানুষ দুই প্রধান জোটের মধ্যে কাউকেই ভোট দেননি। যদি, রামবিলাস পাসওয়ানের পার্টির কথা বাদ দিই, যারা এই নির্বাচনে এনডিএ-র বাইরে থেকে মূলত নীতিশ কুমারের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে, তাহলেও দুই জোটের বাইরে ভোটদাতা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ। এই বিশাল অংশের মানুষ দুই প্রধান জোটের পক্ষে রায় না দেওয়া বিহারের নির্বাচনের পর্যালোচনাকে জটিল করে তুলেছে। এই বড়ো অংশের মানুষের মধ্যে এনডিএ যেমন সমর্থন লাভ করতে পারেনি, বিরোধীরাও তাদের সমর্থন লাভ করেনি। ওয়াইসি-র পার্টি মিম বা বিএসপি বিহারের এই রাজনৈতিক প্রবণতার খতিয়ান দিচ্ছে। এই প্রশ্নে আমরা পরে ফিরব, আপাতত এই কথা বলা দরকার যে এনডিএ বিরোধী সমস্ত মানুষকে একতাবদ্ধ করতে বিহারের বিরোধী শক্তি ব্যর্থ হয়েছে। আসন সংখ্যার নিরিখে দুই জোটের তারতম্যের অন্যতম প্রধান কারণ এই।

তবু, ২০১৯ সালের তুলনায় এনডিএ জোটের ভোট কমেছে। ২০১৯ সালে এনডিএ জোট ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, এবারে ৩৭ শতাংশ। ১৭ শতাংশ ভোট এক ধাক্কায় কমে যাওয়ার পরে এই কথা বলা মুশকিল যে কোভিডের কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে আরো কিছু প্রবণতার দিকে তাকানো আবশ্যক। যেমন, বিজেপি ২০১৫ সালের তুলনায় তাদের আসন সংখ্যা শুধু বাড়িয়ে নেয়নি, প্রথমবার বিহারে এনডিএ জোটের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিজেপি মোট ৭৪ আসন পেলেও, বিহারের বৃহত্তম দল হতে পারেনি, কারণ আরজেডি ৭৫টি আসন লাভ করেছে। মনে রাখতে হবে বিজেপি লড়েছিল মাত্র ১১০টি আসনে, যার মধ্যে তারা ৭৪টিতে অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে। যেই আসনগুলিতে বিজেপি লড়েছে সেখানে তারা ভোট পেয়েছে গড়ে ৪২.৩ শতাংশ। আবার যদি এই ভোটের জাতিগত বিন্যাস খোঁজা হয়, তাহলে দেখা যাবে, ব্রাহ্মণ, ভূমিহার, বানিয়া, রাজপুত এবং উচ্চজাতির ভোটারদের ৫০ শতাংশের বেশি এনডিএ এবং বিশেষ করে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, বিজেপি এই নির্বাচনে খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। তারা তাদের জাতিগত জনভিত্তি মোটের উপর বজায় রাখতে পেরেছে এবং বহুদিনের তাদের কামনা বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে তারা নীতিশ কুমারের থেকে বহু আসন বেশি পেয়ে সরকারের চালিকাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই নির্বাচনে বিজেপি-র পরাজয় হয়েছে বা বিজেপি-র ব্যাপক সমর্থন হ্রাস পেয়েছে এমন আলোচনার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। আবার, অন্যান্য রাজ্যের উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে বিজেপি উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকে তাদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়েছে।

তাহলে কি লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকের সমস্যাগুলি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেনি? অবশ্যই ফেলেছে। সরকার যে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারেনি, এই কথাও সত্য। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিরোধী শক্তিরা বিজেপি-র বিরুদ্ধে মানুষের মন জয় করতে পারেনি। এর অনেক কারণ রয়েছে। বিজেপি-র তরফে রয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্র, মিডিয়া, বিপুল অর্থ। এই উপাদানের উপর ভিত্তি করে বিজেপি এক বিশাল নির্বাচনী মেশিনের জন্ম দিয়েছে, যা রাজ্যে রাজ্যে তাদের জিততে সাহায্য করছে। তদুপরি, হিন্দুত্বের মতাদর্শের প্রবল প্রচারও বিজেপি-র পক্ষে। এর সঙ্গে বিহারের মতন রাজ্যে নতুন সামাজিক সমীকরণ তৈরি করতে বিজেপি সক্ষম হয়েছে। জিতেন রাম মাঝি, নিষাদ ইত্যাদির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অন্যান্য দলিত শ্রেণির ভোট এনডিএ-র দিকে এনেছে বিজেপি। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে বর্তমান ভারতে বিজেপি এক কর্তৃত্ববাদী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে।

তবু, বিহারের নির্বাচনের ফলের মধ্যে নিহিত রয়েছে কিছু সম্ভাবনা। বহু বছর পর বিহার তথা দেশের মানুষের সামনে বিরোধীরা বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যকে ভোটের গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তেজস্বী যাদবের ১০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি যুব সমাজের মনে নাড়া দিয়েছে। সামাজিক ন্যায়ের যেই সম্ভাবনা বিহারে লালুপ্রসাদের নেতৃত্বে তৈরি হয়, তা দলিত এবং ওবিসি শ্রেণির কিছুটা ক্ষমতায়ন করলেও, সেই সম্ভাবনা যাদবদের বহুগুন বেশি সুযোগসুবিধা পাইয়ে দেওয়া, দুর্নীতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। তেজস্বী যাদব বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর বাবার জমানার সামাজিক ন্যায়ের স্লোগানে ভর করে তাঁর পক্ষে ভোট বৈতরণী পার করা সম্ভব হবে না। কারণ উচ্চজাতি এবং অন্যান্য দলিত ও বঞ্চিত জাতিরা সেই সময়ের কথা মনে রেখে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেবে। তাই তিনি সামাজিক ন্যায়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক ন্যায়ের মঞ্চ হিসেবে আরজেডি তথা মহাজোটকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এর লাভ তিনি পেয়েছেন। খুব কঠিন নির্বাচন, যেখানে লালুপ্রসাদ জেলে রয়েছেন, নীতিশ কুমারের মতন মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধীতা করেও তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে যে আরজেডি বিহারে সর্বাধিক আসন লাভ করেছে, তাতে তাঁর নেতৃত্ব দৃঢ় হয়েছে। তেজস্বী এক তরুণ নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

তেজস্বীর অর্থনৈতিক ন্যায়ের দাবি বামপন্থীদের সঙ্গে তাঁর জোট হওয়ার মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। বিহারের নির্বাচনে বামপন্থীরা মোট ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। জিতেছেন ১৬টি আসন। বিহারের মাটিতে দীর্ঘদিন ধরে দলিত, শ্রমিক মানুষদের বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে ঘটে চলা সামন্তবাদী অত্যাচারের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে। তবু, তারা ক্ষীণবল হয়ে আসছিলেন। কিন্তু এই নির্বাচনে বামপন্থীদের উপর মানুষ বিশ্বাস রেখেছেন, তারা আবার বিহারের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। অর্থনৈতিক ন্যায়, বেকারত্ব ইত্যাদি প্রশ্নে মহাজোট যেই স্লোগান তুলেছিল, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বামপন্থীদের দীর্ঘদিনের লড়াই। বিশেষ করে লকডাউনের আবহে বামপন্থীদের সাধারণ মানুষের পক্ষে লাগাতার কাজ করে যাওয়া, তাদের ত্রাণ পৌঁছিয়ে দেওয়া, বিভিন্নভাবে ছোট ছোট আন্দোলন গড়ে তোলা বামপন্থীদের প্রতি মানুষের সমর্থন এনে দিয়েছে। অর্থনৈতিক ন্যায় এবং মৌলিক শ্রেণিগত রাজনীতির প্রশ্নে মহাজোটের তরফে যেই প্রবণতা দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীদিন বামপন্থী তথা আরজেডি সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক ন্যায়ের প্রশ্নে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার প্রশ্নে কতটা সাফল্য পান তার উপরে নির্ভর করছে এই সম্ভাবনার বাস্তবায়িত হওয়ার প্রশ্ন।

এই সম্ভাবনা আপাতত শুধুমাত্র সম্ভাবনা। কিন্তু অনেকেই এর মধ্যে পড়ে ফেলছেন বিহারের জাতপাত ভিত্তিক রাজনীতির সমাপ্তির ঘোষণা। এহেন সিদ্ধান্তে আসা ভ্রান্ত এবং রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতির সঠিক বিশ্লেষণ না করার থেকে উৎপন্ন। আমরা আগেই দেখেছি যে বিজেপি উচ্চজাতির ভোট নিজেদের দিকে এককাট্টা রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদি আমরা যাদব ভোটের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে যে তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মহাজোটকে ভোট দিয়েছে, আর মুসলমানদের ৭৬ শতাংশ ভোট দিয়েছে মহাজোটকে। অন্যান্য যেই সব দলিত জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের মধ্যে মহাজোট সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মনে রাখতে হবে মুশাহার, কুর্মি, কোয়েরি ইত্যাদি জনগোষ্ঠী বিহারে যথেষ্ট সংখ্যায় রয়েছে, যাদের ভোট পেতে মহাজোট মোটামুটি ব্যর্থ হয়েছে। এই সমাজের অধিকাংশ মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র এবং শ্রমজীবি অংশ থেকে আসেন। কিন্তু তাঁরা জাতির ঊর্ধ্বে উঠে মহাজোট তথা তেজস্বী যাদবের পক্ষে ভোট করেননি। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা জাতপ্রথা এবং জাতি বিদ্বেষ জনিত অত্যাচারের মধ্যে এই মানুষেরা রয়েছেন। তাঁদের বোঝানো হয়েছে সামাজিক ন্যায়ের অর্থ নিজের জাতির মানুষকে ভোট দেওয়া। শুধু মাত্র একটি নির্বাচনের প্রচারে বহুযুগ ধরে লালিত ব্যবস্থা শেষ হয়ে নতুন সূর্য উঠবে এমন কথা ভাবা বোকামো। দীর্ঘদিনের শ্রেণি সংগ্রাম এবং সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে গণতান্ত্রিক এবং ন্যায্য আন্দোলন এই জাতিভিত্তিক রাজনীতি থেকে উত্তরণ ঘটাবে। আপাতত, সেই সময় আসেনি। সেই সময় যে আসেনি, তার প্রমাণ আর কেউ নন, নীতিশ কুমার স্বয়ং। এই নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ছিল, বিজেপি-র প্রচ্ছন্ন উৎসাহে চিরাগ পাসওয়ান বেছে বেছে তাঁর দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই প্রার্থী দেয় এবং তাঁকে আক্রমণ করে। এর ফলে নীতিশ কুমার আপাতত বিহারে তৃতীয় স্থানে চলে গেছেন। তাঁর দলের প্রাপ্য আসন সংখ্যা ৪৩। তাহলে কী তিনি রাজনৈতিকভাবে সমাপ্ত? এর উত্তর লুকিয়ে আছে বিহারের জাতিভিত্তিক সমীকরণে। এই নির্বাচনে বিজেপি-র জনভিত্তি উচ্চজাতির মানুষ নীতিশ কুমারের দলকে ভোট দেয়নি। অন্যদিকে বিহারের সর্বাধিক ওবিসি যাদবরা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে চিরাগ পাসওয়ানের ফলে দলিতদের একটি অংশও তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তবু তিনি ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন এবং যেই আসনে তাঁর দল প্রার্থী দিয়েছে সেখানে ভোট পেয়েছেন প্রায় ৩৩ শতাংশ। এর নেপথ্যে রয়েছে সেই কুরমি, মুশাহার, কোয়েরি ও অন্যান্য দলিত তথা যাদব নয় এমন ওবিসি শ্রেণি যারা বহু বছর ধরে নীতিশের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এখানে নারী ভোটারদের কথাও অবশ্যই বলতে হয়। মদ নিষিদ্ধ করার পর থেকে বিহারের নারীরা নীতিশের পক্ষে থেকেছেন। গণনা করে দেখা যাচ্ছে যেই আসনে নারীদের ভোটদান বেড়েছে সেই আসনে এনডিএ অপেক্ষাকৃত ভালো ফল করেছে। এর কারণ একদিকে নীতিশের ভাবমূর্তি, অন্যদিকে লালু জমানার অরাজকতার স্মৃতি। তাই নীতিশ কুমারের রাজনৈতিক এপিটাফ লেখার সময় এখনও আসেনি।

এই নির্বাচনে যেই সমস্যা সব থেকে বেশি প্রকট হয়েছে তা হল কংগ্রেসের অপদার্থতা। ৭০টি আসনে লড়াই করে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১৯টি আসন। কংগ্রেসের নেতারা উদ্দীপনা নিয়ে প্রচার করেননি, গা ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছেন। বিহার, উত্তরপ্রদেশসহ যেকোনো রাজ্যে যেখানে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী সেখানে কংগ্রেস কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। তারা এই নির্বাচনে না কোনো রাজনৈতিক আখ্যান নিয়ে হাজির হয়েছেন, না সাংগঠনিকভাবে কোনো প্রভাব ফেলতে পেরেছেন। কংগ্রেসকে কম আসন দিয়ে বামপন্থীদের আর কটি আসন বেশি লড়তে দিলে এবং আরো কিছু আসনে নিজে লড়লে হয়ত তেজস্বী যাদব বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতেন। কংগ্রেসের থেকে আত্মসমালোচনার আশা করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু বাকিরা কি কংগ্রেসের দুর্বলতা নিয়ে সচেতন হবেন, নাকি যেমন চলছে তেমন রাজনীতি চলবে?

কংগ্রেস এখন গাল পাড়ছে ওয়াইসি এবং মিমকে। মিম বিহারের সীমাঞ্চল অঞ্চলে ৫টি আসন লাভ করেছে। মুসলমান সমাজের একটি অংশ ওয়াইসিকে ভোট দিয়েছেন। এর জন্য কিছু ভোট কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস মুসলমান সমাজের জন্য বিগত কয়েক বছরে কী করল? রামজন্মভূমি রায়কে তারা স্বাগত জানিয়েছে, কাশ্মীরের প্রশ্নে কোনো উল্লেখযোগ্য অবস্থান নেয়নি, বারবার ঘটে চলা গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস কটা আন্দোলন করেছে, বারবার নরম হিন্দুত্বের প্রচার হয়নি? এই পরিস্থিতিতে মুসলমান সমাজ ওয়াইসির মধ্যে সম্ভাবনা দেখছেন। কিন্তু তাদেরও বুঝতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ মূলস্রোতের রাজনীতির বাইরে গিয়ে সংকীর্ণ ধর্মীয় আবেগ বা পরিচিতির ভিত্তিতে রাজনীতি কখনই বিজেপি-কে পরাস্ত করতে পারবে না। মুসলমান ভিত্তিক দল নয়, জরুরি মজবুত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি। সেই দায়িত্ব শুধু মুসলমানদের হতে পারে না। মজবুত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি গড়ে তুলতে হলে হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াই লড়তে হবে। বিহার আবারো সেই বার্তা দিল। আগামীদিনে বিহারের মূল বিরোধী শক্তি আরজেডি এবং বামপন্থীরা কতটা আন্তরিকভাবে মানুষের পাশে থাকবেন, তার উপর নির্ভর করবে বিহারের শ্রমজীবি দলিত নিপীড়িত মানুষের ভবিষ্যৎ।