আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ পঞ্চদশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ অক্টোবর, ২০২০ ● ১-১৫ কার্ত্তিক, ১৪২৭

সম্পাদকীয়

‘ইয়ে ক্যা জ্বল রাহা হ্যায়?’


উত্তরপ্রদেশের হাথরস জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের জ্বলন্ত চিতার দিকে তাকিয়ে জনৈকা সাংবাদিকের মর্মান্তিক চিৎকারঃ ‘ইয়ে ক্যা জ্বল রাহা হ্যায়?’। কী পুড়ছে ওখানে? পুড়ছে এক দলিত নারীর লাশ, যাকে ধর্ষণ করে, জিভ কেটে নেওয়া হয়েছে, ভেঙে দেওয়া হয়েছে মেরুদণ্ড, নৃশংস অত্যাচারের পরে ফেলে দেওয়া হয়েছে ক্ষেতে। দুই সপ্তাহ অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করার পরে মৃত্যু হল তাঁর। সরকার সর্বসমক্ষে পক্ষ বেছে নিয়েছে। নির্যাতিতার নয়, ধর্ষকদের। মৃত্যুর পরেও নির্যাতিতার রেহাই মেলেনি। তাঁর পরিবারকে ঘরে আটক করে, বাবা-মাকে শেষ দেখা দেখতে না দিয়ে পুলিশ পুড়িয়ে দিয়েছে তাঁর লাশ যাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই হচ্ছে আমাদের একবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষ!

‘ইয়ে ক্যা জ্বল রাহা হ্যায়?’ কী পুড়ছে ওখানে? পুড়ছে ভারতের দলিত নারীদের শরীর, ভারতের নিপীড়িত জনগণের অত্যাচারিত জীবন, পুড়ছে সভ্যতা, মানবতা, মৌলিক অধিকার ও দেশের সংবিধান। এক কথায় পুড়ছে ভারতের আত্মা। যেই ভারতের সংবিধানের রচয়িতা বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকারকে পড়াশোনা শুরু করতে হয়েছিল শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসে, কারণ তিনি দলিত জাতির ছাত্র ছিলেন, সেই ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল এক দলিতের দ্বারা। অনেকে ভেবেছিলেন সংবিধানে বর্ণিত মানুষের মৌলিক অধিকার, সাম্যের প্রতিশ্রুতি, দলিত মানুষের বিরুদ্ধে ঘটে চলা সহস্র বছরের লাঞ্ছনার ইতিহাসের অশ্রু ও হাহাকারের উপর প্রলেপ লাগাবে, বন্ধ হবে বিশ্বের প্রাচীনতম বর্ণবিদ্বেষের প্রথা। কিন্তু পুড়ে যাওয়া লাশ প্রমাণ করেছে ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়। সংবিধানকে নির্বাক পুতুলে পর্যবসিত করে হিন্দুত্ববাদী ও জাতিবিদ্বেষী শক্তিরা উত্তরপ্রদেশে তাদের নগ্ন ক্ষমতার প্রদর্শন করল। ভারতের গণপরিসরে দলিত মানুষ, বিশেষ করে নারীদের স্থান কী তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল হাথরস। ‘ইয়ে ক্যা জ্বল রাহা হ্যায়’? জ্বলছে সহস্র বছর প্রাচীন পিতৃতান্ত্রিক জাতিবাদের দাবানলের আগুন যাতে প্রতিনিয়ত পুড়তে হয় দলিত ও বঞ্চিত সমাজের মানুষ, বিশেষত নারীদের। হ্যাঁ, আজও।

২০১৯ সালে ভারতে দলিত মানুষের বিরুদ্ধে মোট ৪৫৯৩৫টি অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৩ শতাংশ বেশি। এর এক-চতুর্থাংশ, ১১৮২৯টি দলিত বিরোধী অপরাধ ঘটেছে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশে। একই সঙ্গে ২০১৯ সালে ভারতে মোট ৩২২৬০টি ধর্ষণের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ৩১৩১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দলিত এবং নারীদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা অপরাধ লাগাতার বেড়ে চলেছে দেশে। দুটি ক্ষেত্রেই উত্তরপ্রদেশের প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তফসীলি জাতি ও উপজাতিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আইনের আওতায় ২০১৯ সালে ৩৪৭৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ৫৩৭টি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। দলিত ও আদিবাসী মহিলাদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা বিবিধ যৌন শোষণ ও অত্যাচারের তথ্য দেখলে দেখা যাবে যে হাজারো দলিত ও আদিবাসী মহিলা প্রতিনিয়ত উচ্চবর্ণের পুরুষদের দ্বারা শোষিত এবং ধর্ষিত হচ্ছেন। এই ঘটনার অধিকাংশই জাতীয় অপরাধ তথ্যভাণ্ডারে লিপিবদ্ধ হয় না, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলিত ও আদিবাসী মহিলারা হয় নালিশ জানাতে ভয় পান, কারণ তাদের পরিবারের উপর আক্রমণ নেমে আসবে, অথবা পুলিশ সম্পূর্ণভাবে অপরাধীদের পাশে থেকে নিশ্চিত করে যাতে কোনো এফআইআর গৃহীত না হয়।

এই সমস্ত বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে যদি দলিত বা আদিবাসী মহিলা বা তাদের পরিবার এফআইআর করতে সফল হন, তবে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের অত্যাচার। হাথরসের মহিলার ক্ষেত্রে দেখা গেল, উচ্চবর্ণের মাস্তানরা পুলিশ-প্রশাসন এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সমানে হুমকি দিয়ে চলেছে নির্যাতিতার পরিবারকে। পুলিশের তরফে আগ বাড়িয়ে জানিয়ে দেওয়া হল যে কোনো ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই বয়ানের জন্য পুলিশকে তিরস্কার করেছে, ২০১৩ সালের নতুন আইনের পাঠ পড়িয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনকে। কিন্তু আইন-কানুন নির্ভর সমাজব্যবস্থা উত্তরপ্রদেশে খাটে না, বিশেষ করে যেখানে নির্যাতিতা একজন দলিত মহিলা। তাই তাঁর মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতে তিনি ধর্ষণের অভিযোগ আনলেও পুলিশ নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারে কোনো ধর্ষণ হয়নি। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হতেই আখ্যান পালটানো শুরু হয়ে যায়। বলা হতে থাকে যে মহিলার সঙ্গে নাকি ধর্ষণে অভিযুক্ত এক উচ্চবর্ণের পুরুষের সম্পর্ক ছিল, যা মৃতার পরিবার মেনে নেয়নি। তাই তারাই নাকি নির্যাতিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। মৃতার পরিবার বারবার এই বয়ানের বিরোধীতা করলেও সংবাদমাধ্যমে বিজেপি-র মাইনে করা দালাল সাংবাদিকরা লাগাতার এই মিথ্যাপ্রচার চালাতে থাকে।

অনেকে হয়ত ভাবছেন যে কেন একটি ধর্ষণকে কেন্দ্র করে এত কাণ্ড সরকার ঘটাচ্ছে? এর নেপথ্যে আসল উদ্দেশ্য কী? এর নেপথ্যে একদিকে যেমন বিজেপি ও যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ভয়াবহ ফ্যাসিস্ত মনোভাব রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে উগ্র জাতিবাদী এবং দলিত বিরোধী মানসিকতা। যেই পুরুষদের ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সবাই সেই জাতির মানুষ যার সদস্য যোগী আদিত্যনাথ। আমার জাতির ছেলে ধর্ষক হলেও সে যেহেতু আমার জাতির সদস্য তাকে আগলে রাখা আমার দায়িত্ব—এই মানসিকতা যোগী প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে। তবে সমস্যা শুধুমাত্র যোগীর একার নয়। দলিত মহিলাদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে বহু বার এই বিশেষ নক্সা দেখা গিয়েছে, যেখানে হয় ধর্ষণ ঘটেছে বলে মানা হয়নি, অথবা জাতিগত বিদ্বেষকে ধর্ষণের কারণ হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে, অথবা নির্যাতিতার সঙ্গে তার ধর্ষকের অবৈধ সম্পর্কের গুজব ছড়ানো হয়েছে।

২০০৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের খৈরলাঞ্জি নামক একটি গ্রামে দলিত সমাজের সুরেখা ভোটমাঙ্গে এবং তাঁর কন্যা প্রিয়াঙ্কা ভোটমাঙ্গেকে নৃশংসভাবে নগ্ন অবস্থায় গ্রাম প্রদক্ষিণ করিয়ে, সর্বসমক্ষে গণধর্ষণ করে হত্যা করে গ্রামের প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা। গোটা ভোটমাঙ্গে পরিবারকেই পাশবিকভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু কিছু দলিত সংগঠন বাদে এই নিয়ে মূলধারার রাজনৈতিক শক্তিদের আন্দোলন করতে দেখা যায় নি। এই নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পরে সুরেখা ও তাঁর কন্যার চরিত্রহননের চেষ্টা হয়, এফআইআর নিতে দেরি করা হয়। এমনকি আদালত যখন দোষীদের সাজা শোনায়, তখন সেখানে কোনো জাতিগত বিদ্বেষকে হিংসার কারণ হিসেবে মানতে অস্বীকার করে, যদিও খুব স্পষ্টভাবেই ভোটমাঙ্গে পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উচ্চগামীতার বিরুদ্ধে জাতিবাদী হিংসা এই ভয়াবহ অন্যায়ের নেপথ্যে কাজ করেছিল। এগিয়ে আসুন আরো ছয় বছর। ২০১২ সালে হরিয়ানায় একের পর এক দলিত নারী ধর্ষণ এবং হত্যা ঘটতে থাকে। ঠিক যেই সময় দিল্লির নির্ভয়ার নৃশংস ধর্ষণ এবং হত্যাকে কেন্দ্র করে দিল্লিসহ গোটা দেশ উত্তাল হয়েছিল, সেই সময় ঘটে যাওয়া দলিত নারীদের এই ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিবাদে দলিত সংগঠন বাদ দিয়ে কাউকেই রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। প্রায় প্রত্যেকটি ধর্ষণের ঘটনার পরেই হয় দলিত নারীদের চরিত্র হনন করা হয়েছে অথবা জাতি বিদ্বেষকে এই কাণ্ডগুলির মূল কাণ্ডারী হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে।

এমন নয় যে বাকি নারীদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা দেখা যায় না। আমাদের রাজ্যেই আমরা দেখেছি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পার্কস্ট্রিট ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষণ হয়েছে বলেই মানতে চাননি। নির্যাতিতার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আবার মধ্যগ্রাম ধর্ষণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ জোর করে নির্যাতিতার মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে। ভারতবর্ষে নারীদের উপর ঘটে চলা অবিরাম অত্যাচারের ইতিহাসে এই ঘটনাগুলি বারবার ঘটেছে। কিন্তু দলিত নারীদের ক্ষেত্রে তার বিভৎসতা অন্য মাত্রা পায়। হিংস্র জাতিবাদের সামনে পুলিশ, আদালত, প্রশাসন বারবার নতজানু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণআক্রোশ রাস্তায় ফেটে পড়েনি। সুরেখা ভোটমাঙ্গে নামটাই আমরা অনেকে জানি না। তাই তাঁর জন্য আমরা রাস্তাতেও নামিনি। দলিত নারীর প্রতি উচ্চবর্ণের পুরুষের যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্ষকাম অধিকারবোধ অনেকাংশেই তাঁদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা ভয়াবহ অত্যাচারকে একপ্রকার স্বাভাবিকতা প্রদান করেছে। তাই উত্তরপ্রদেশে উচ্চবর্ণের মাস্তানরা পঞ্চায়েত সভা করে ধর্ষকদের পক্ষে অবস্থান নেয়, নির্যাতিতার বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁর আত্মিয়দের হুমকি দেয়, পুলিশ সেখানে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

তবু, হাথরসের দলিত নারীর উপর ঘটে যাওয়া ঘটনা তাঁদের উপর চলতে থাকা সহস্রাব্দের অত্যাচারের কাহিনির মধ্যেও যেন কিছুটা নতুন এক সূচনার বার্তা দেয়। মনে করে দেখুন, আগে কখনও কোনো দলিত নারীর বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে এত মানুষ রাস্তায় নেমেছেন কি, তাও কোভিড-আতঙ্কের মধ্যে। দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী নির্যাতিতার পরিবারকে দেখতে গিয়ে পুলিশের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন, এমনকি পুরুষ পুলিশ অসভ্যতার নজির সৃষ্টি করেছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কুর্তা টেনে ধরে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন শহরে, মফস্‌সলে হাথরসের ঘটনার বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, এই ছবিও আমরা দেখেছি। তাহলে কি দলিত নারীদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশ আরো সচেতন হচ্ছে, প্রতিবাদে নামছে? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎ দেবে।

যোগী সরকারের কাছে অবশ্য ধর্ষক নয়, মূল অপরাধী প্রতিবাদীরা। তাই তারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ১৯টি এফআইআর দাখিল করেছে এই মর্মে যে হাথরসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাকি রাজ্যে জাতিভিত্তিক হিংসা ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে, দেশদ্রোহিতার মামলাও রুজু করা হয়েছে যার ফলে কেরলের একজন সাংবাদিকসহ বেশ কিছু ব্যক্তি আপাতত জেলে রয়েছেন। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এখন যোগী-মোদীর ভারতে দেশদ্রোহিতায় পর্যবসিত। যারা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর স্লোগান তুলেছিল তারাই এখন ধর্ষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে। আসলে দলিত নারীর ধর্ষণ উচ্চবর্ণের মনুবাদী চেতনায় বিশ্বাসী বিজেপি-আরএসএসের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আবার যদি ধর্ষকের ধর্ম ভিন্ন হত, তবে এই দলিত নারীর উপরেই হিন্দু নারীর তকমা লাগিয়ে বিজেপি-র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষ আমরা দেখতে পেতাম, যা বহু ক্ষেত্রেই তারা করে থাকে। নারী বা দলিত নারীদের বিরুদ্ধে ঘটে চলা অত্যাচারের বিরুদ্ধে, ন্যায় এবং লিঙ্গসমতার পক্ষে বিজেপি-র কোনো দায় নেই। একমাত্র তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এরকম সমস্ত এজেন্ডার প্রতি রয়েছে তাদের অকৃত্রিম টান। কিন্তু জাতপাত দ্বারা বিভাজিত হিন্দু সমাজে আরএসএস-বিজেপি যে দ্বিধাহীনভাবে দলিতের বিরুদ্ধে এবং উচ্চবর্ণের জাতিবাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে হাথরসের ঘটনা তা প্রমাণ করল।

হাথরসের সেই দলিত নারীর পোড়া লাশের গন্ধ আসলে দেশের গণতন্ত্রের চিতার গন্ধ। একজন নাগরিককে আপনার দেশে জাত ও লিঙ্গের নামে যেই পরিমাণ অত্যাচার সহ্য করতে হল, রাষ্ট্র যেখানে তার মরদেহকেও অবমাননা করল, তারপরও আপনি যদি চুপ থাকেন, তাহলে বলতেই হবে আপনার বিবেকের পোড়া গন্ধও বাকিদের নাকে এসে লাগছে। আমাদের দেশের সংবিধান, মানবতা, গণতন্ত্র, যা-কিছু মানুষের প্রিয় বোধ, তার পোড়া গন্ধ যদি না পেতে চান, তবে সাম্প্রদায়িক মনুবাদী, নারী-বিদ্বেষী বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে হাতের কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। নয় তো, কাল আপনার বা পরিবারের অতি প্রিয়জনের লাশও ওভাবেই পুড়বে। তখন ‘ইয়ে ক্যা জ্বল রাহা হ্যায়’ প্রশ্নটি করার জন্য কেউ থাকবে তো?