আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ চতুর্দশ সংখ্যা ● ১-১৫ অক্টোবর, ২০২০ ● ১৬-৩১ আশ্বিন, ১৪২৭
প্রবন্ধ
ফেসবুকের মুখ ও মুখোশ
স্বপন ভট্টাচার্য
এ লেখার শুরুতেই দুটো উদ্ধৃতি তুলে দিই ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে (WSJ) প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে।
প্রথমটা এরকমঃ ‘We lit a fire to his social media campaign and the rest is of course history’. আমরা ওঁর প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ায় আগুন লাগিয়ে দিতে পেরেছিলাম আর বাকিটুকু অবশ্যই ইতিহাস। এই উদ্ধৃতি ২০১৪ সালের এবং ঠিকই অনুমান করেছেন, সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি’র বিপুল জয়ের পরে এই বক্তব্য।
দ্বিতীয়টাঃ It’s taken thirty years of grassroot work to rid India of state socialism finally”. আমাদের তিরিশ বছরের বেশি তৃণমূল স্তরের কাজ ভারতবর্ষ থেকে অবশেষে রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রকে তাড়িয়ে ছেড়েছে। এটিরও সময়কাল অভিন্ন এবং এটি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র ওই একই নির্বাচনে পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা।
এই দুটোই হল ফেসবুকের ভারত সহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর শ্রীমতি আঁখি দাসের গ্রুপ পোস্ট যা WSJ উদ্ধৃত করেছে মাত্র (Jeff Horwitz and Newley Purnell, WSJ Aug. 30, 2020)।
কথা হচ্ছে ফেসবুক প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাজারে নথিভুক্ত হয়েছে ২০০৪ সালে, তাহলে ত্রিশ বছরের যে ‘গ্রাসরুট ওয়ার্ক’-এর কথা শ্রীমতী দাস বলছেন সেটা কার বা কাদের কাজের কথা বলছেন? বোঝাই যাচ্ছে, ফেসবুক নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদীর লক্ষ্যে বহুদিন আগে থেকেই নিজেদের নিয়োজিত করেছে যদিও কোম্পানীর ঘোষিত অঙ্গীকার নিরপেক্ষতার। ফেসবুক ইন্ডিয়ার ভারতে ব্যাবসা করার রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন, যেদিক থেকেই দেখুন না কেন, শ্রীমতী দাস যেভাবে এই মাধ্যমটিকে ব্যবহার করেছেন তার থেকে গোদাভাবে নিরপেক্ষতাকে কলা দেখানো কাজ আর হয় না।
এই বিষয়টি একটা নতুন মাত্রা পেল ওই একই পত্রিকায় গত ১৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর (Newley Purnell and Jeff Horwitz, WSJ Aug. 14, 2020)। এই প্রতিবেদনে WSJ তিনজন বিজেপি নেতার ফেসবুকে প্রচারিত বক্তব্যকে পরিষ্কার ‘হেট স্পিচ’ হিসাবে শনাক্ত করে যা আদতে ঘৃণা এবং হিংসা ছড়ানোর সামিল। এর প্রথমটি হল তেলেঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহের। খাদ্যতালিকায় গোমাংস থাকে এমন মুসলমানদের হত্যা করার এবং মায়ানমার থেকে তাড়া খেয়ে এদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের গুলি করে মারার ভীতি প্রদর্শনের দায়ে অভিযুক্ত একটি ভিডিও তার কল্যাণে ফেসবুকে জ্বলজ্বল করছিল অনেকদিন ধরেই। দ্বিতীয়টি হল, কর্নাটক থেকে নির্বাচিত সাংসদ অনন্তকুমার হেগড়ের মুসলমান সম্প্রয়দায়কে করোনা ছড়ানোর জন্য দায়ি করে ‘করোনা জিহাদ’-এর অভিযোগ তোলা। তৃতীয়টি হল দিল্লির ভূতপূর্ব বিধায়ক কপিল মিশ্র’র পোষ্টগুলি যেগুলি WSJ-এর মতে, সমস্ত বিরোধী দলের তোলা অভিযোগ মোতাবেক এমন কি ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকেরবার্গের মতেও অনৈতিক এবং এ বছর দিল্লিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্যতম প্রধান কারণরূপে অভিযুক্ত। ফেসবুকের অন্দরে এই তথাকথিত ‘লিডার’ত্রয় বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত হবার পরেও এবং যেমন WSJ লিখছে - ফেসবুকে তাদের উপস্থিতি হিংসা (রিয়েল ওয়ার্ল্ড ভায়োলেন্স) শুরু করার সম্ভাবনাসূচক হওয়া সত্ত্বেও শ্রীমতী দাস তাদের সম্পর্কে কোনো রকম কড়া মনোভাব দেখাতে রাজি ছিলেন না। তাঁর যুক্তি-এতে ভারতে তাদের ব্যাবসা মার খাবে। কথাটা মিথ্যে নয়। ভারত হল ফেসবুকের সবচেয়ে বড় বাজার (চিত্র ১)।
সূত্রঃ We are social.
দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকার কুড়ি কোটির কিছু কম গ্রাহকসংখ্যার তুলনায় ভারতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ত্রিশ কোটি এবং এ বাজার আরো কয়েকগুন বাড়ার সুযোগ আছে অদূর ভবিষতে (চিত্র ২)।
চিত্র ২: ভারতে ফেসবুকের ব্যাবসা বৃদ্ধির হার ও পূর্বানুমান
উপরন্তু, ফেসবুক অতি সম্প্রতি ৫.৭ বিলিয়ন (৫৭০ কোটি) ডলারের তহবিল ঢেলেছে মুকেশ আম্বানির টেলিকম দৈত্য রিলায়েন্স জিওর ৯.৯৯ শতাংশ শেয়ার কিনতে। ইতিপূর্বে মাইনরিটি স্টেক (অর্থাৎ ৫০ শতাংশের কম শেয়ার) কিনতে কোনো প্রযুক্তি সংস্থা এত বেশি টাকা ঢেলেছে বলে জানা নেই। এ ছাড়া মাত্র গত বছরেই দুটি স্টার্ট আপ, যথাক্রমে সমাজ-বাণিজ্য ও শিক্ষা-প্রযুক্তির ব্যাবসায় পা রাখা Meesho এবং Unacademy সংস্থা দুটির প্রতিটিতে দেড় কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেছে ফেসবুক। ভারতে ফেসবুকের থেকেও বড় সামাজিক প্রচার মাধ্যম হল WhatsApp এবং প্রতিযোগিতাবিহীন মসৃণ পথে তাদের গাড়ি চালাতে ফেসবুক ২০১৪ সালেই ১৯০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে WhatsApp অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে। ফলে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ-এর সম্মিলিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ভারতে প্রায় সত্তর কোটির মত। ব্যাবসা মার খাবে বলতে শ্রীমতী আঁখি দাস যা বলতে চেয়েছেন তার প্রামান্য নজির রয়েছে ওই গ্রাহকসংখ্যার ম্যাজিকে। ফেসবুকে নরেন্দ্র মোদীর ফলোয়ারদের সংখ্যা সাড়ে চার কোটি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখানে যাকে বলে ডিসট্যান্ট সেকেন্ড (চিত্র ৩)।
চিত্র ৩: প্রথম পাঁচ রাজনীতিকের ফলোয়ার সংখ্যা
সূত্রঃ We are social.
এটাও প্রণিধানযোগ্য যে, যেই কপিল মিশ্রর ঘৃণামিশ্রিত ভিডিও বক্তব্য দিল্লি দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকের অন্দরেই বিপজ্জনক হিসাবে ‘ফ্ল্যাগড’, ফেসবুকে তাকে সেই ভিডিও পোস্ট করবার সুযোগ করে দেবার পর এই বীরপুঙ্গবের ফলোয়ারের সংখ্যা কয়েক হাজার থেকে ২৫ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। WSJ ফাউলের বাঁশি বাজানোর পরে, সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে মূলতঃ ভিতরকার চাপে শ্রীমতী দাসের ঘোর অনিচ্ছা সত্বেও ফেসবুক সংস্থা টি রাজা সিং’এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়। এই ভদ্রমহিলা একজন পরিচিত লবিস্ট বা তদবিরকারিনী। শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ফেসবুক দেয়ালে আঁখি দাসের পোস্ট শোভা পায় ২০১৭ থেকেই এবং স্মরণ করুন তার আগের ত্রিশ বছরের গ্রাসরুট প্রচেষ্টার কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এখন ফেসবুক কেনই বা একজন তদবিরকারিনীকে আঞ্চলিক জনসংযোগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে আর কেনই বা তাঁর ব্যাবসাসংক্রান্ত পূর্বানুমানকে এতটা মান্যতা দেয় তা বুঝতে খুব বেশি নথি ঘাঁটার দরকার পড়ে না। ২০০৪ সালে জন্ম নিয়ে ২০২০ ‘র মধ্যে যে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা আজ বিশ্বের ধনীতমদের একটি হতে পেরেছে তার ইতিহাস যে স্বচ্ছ নয় তা বারবার সামনে এসেছে, এই যেমন এল Purnell এবং Horowitz দের রিপোর্টে।
কেম্ব্রিজ অ্যানালিটিকা ও ফেসবুক
জন্মের পর থেকেই যে ফেসবুক ‘ নিউজ ফীড’ বা খবর খাওয়ানো পাটাতন হিসেবে কাজ করে এসেছে তা নয়। এটা তখন ছিল অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ কেউ একটা অ্যাপ বানিয়ে, কেউ একটা গেম বানিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য অনেকের কাছে পৌঁছাতে পারতেন। ব্যক্তিত্ব নির্নায়ক কুইজ বা Farmville এর মত অনলাইন গেম অনেককে জুড়ে দিতে পারতো ফেসবুকের মাধ্যমে। এরা হল থার্ড পার্টি ডেভেলাপার যারা ফেসবুকের মাধ্যমে খদ্দের ধরত। ফেসবুক ২০০৭ সাল থেকেই এই থার্ড পার্টি ডেভেলাপারদের কাছে তার গ্রাহকদের ডেটা হাতানোর সুযোগ করে দেয়। ২০১৪ সালে আলেকজান্ডার কোগান নামে এইরকম একজন থার্ড পার্টি ডেভেলাপার ফেসবুকে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোমেট্রিক ল্যাবরেটারিতে তৈরি এরকমই একটা পার্সোনালিটি কুইজ অ্যাপ আপলোড করে। সেটি জনপ্রিয় হয় এবং প্রায় ২৭০০০০ জন ফেসবুক গ্রাহক সেটি নিজেদের মোবাইল ফোনে বা ল্যাপটপে ইন্সটল করে নেন। কোগান ফেসবুকের মাধ্যমেই এই গ্রাহকদের এবং তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকে আরো অন্য ফেসবুক উপভোক্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি লোকের একটা নিজস্ব ডেটাবেস তৈরি করে ফেলে এবং কেম্ব্রিজ অ্যানালিটিকা নামক একটা ভোটার প্রোফাইলিং সংস্থার হাতে সেটা তুলে দেয়। অ্যাপ যেহেতু ছিল সম-ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করবার, সেহেতু কেম্ব্রিজ অ্যানালিটিকা সহজেই তিন কোটি মানুষের ‘ভোটার’- মনস্তত্বের (Voter Psychometric analysis) হদিশ পেয়ে যায়। ফেসবুক অবশ্য গোটা ঘটনায় নিজেদের শিশুর মত সরল প্রমাণে উদ্যোগী হয়ে বলে - “No systems were infiltrated, no passwords or information were stolen or hacked,” - কোনো সিস্টেমে কেউ ঢোকে নি, কোনো পাসওয়ার্ড হাতায় নি কেউ আর কোনো তথ্যও চুরি যায় নি। তারা এও জানালো যে কোগানের অ্যাপ ২০১৫ সালেই তারা সরিয়ে দিয়েছে ফেসবুক থেকে। কিন্তু এই তথ্যভান্ডার সম্পদ হয়ে দাঁড়ালো আমেরিকা আর ব্রিটেনের রাজনীতিকদের কাছে। ব্রিটেনে ২০১৬ ‘র ব্রেক্সিট ভোটে এবং নভেম্বরের আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই ভোটার-মনস্তত্বের বিশ্লেষণ করে তৈরি হল প্রচারযন্ত্র। লক্ষ্য স্থির করা প্রচার। কার মন কোন কথায় ট্রাম্পের দিকে ঢলে পড়বে আর কোন কথায় হিলারি ক্লিন্টনের প্রতি বিবমিষা জন্মাবে এ বিশ্লেষণ ফেসবুক থেকে তথ্য হাতানোর ফলেই হতে পেরেছিল। ইউরোপিয়ান ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন অমান্য করার জন্য বিপুল পরিমাণ জরিমানাও হয়েছে ফেসবুকের কিন্তু তারা এতে দমে নি, বরং অভ্যস্ত হয়ে গেছে বলা যায়। তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ খোলাখুলি বলছেন - We will adapt to the environment in which we are operating অর্থাৎ যখন-যেমন-তখন-তেমন নীতিতেই চলবে তারা এর জন্য বিশেষ রাজনীতি অবলম্বনের দায় তাদের নেই।
ট্রাম্পবান্ধব ফেসবুক
একথা সত্যি যে ২০১৬-এর আগে বারাক ওবামার রাষ্ট্রপতিত্বকালে ফেসবুক ছিল ডেমোক্র্যাট ঘেঁষা। ২০১৬ নির্বাচনের আগে Gizmodo নামের অন্য একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা তার কর্মচারীদের নির্দেশ পাঠায় সমস্ত ট্রাম্পপন্থী খবর চেপে দিতে। ফেসবুক খবর পেয়ে রিপাবলিকানদের দিকে হেলে পড়ে কেন না সে ঘাটে নৌকা ভিড়লে ভাগীদার নেই। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে (NYT, Dec 18,2018) এই নির্বাচনে রাশিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় একটা গ্রুপ তৈরি হয় তথাকথিত আফ্রিকান আমেরিকান ভোটারদের যার বহুসংখ্যক অ্যাকাউন্ট আসলে ভুয়ো। তারা এই ধরনের ভোটারদের কাছে প্রচার করতে থাকে কালোরা কেন ভোট দেবেন না বা দিলেও কেবল টেক্সট মেসেজ করেই ভোট দিতে পারবেন। ১৫ কোটি মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে যায় যে হিলারি ক্লিন্টনের যারা অবিচল ভোটার তারা এবার ভোটই দিচ্ছেন না ফলে হিলারির সামগ্রিক ভোটের হার কমে যায় এবং চুলচেরা মার্জিনে জিতে ট্রাম্প আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফেসবুক ২০১৭ ‘র জানুয়ারিতে ট্রাম্পের বিজয় উৎসব পালিত হয় ফেসবুকের লোগোর ছাপ মারা পানীয়ের লেবু সার্ভ করে। ৪ এপ্রিল ২০১৮ তে ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক (BBW) জানায় যে হিলারি হেরেছেন কেন না তিনি ফেসবুকের ‘উপদেশে’ কান দেন নি আর ট্রাম্প কান কেন, মাথাও দিয়ে দিয়েছিলেন।
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর দু মাসও বাকি নেই এবং অবস্থা এমন যে ফেসবুকের যতটা না ট্রাম্পকে দরকার তার চেয়ে বেশি ট্রাম্পের দরকার ফেসবুককে। ফেসবুক সম্ভবত ১৬ কোটি আমেরিকান ভোটারের তথ্য নিয়ে নিজেই খুলে ফেলতে চলেছে তাদের নিজস্ব ভোটার ইনফরমেশন সেন্টার (Sarah Fier and Kurt Wagner, BBW, 17 Sept, 2020)। ট্রাম্পের ফেসবুক নির্ভরতা দেখা গেল এই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময়। ফেসবুকে তার ফলোয়ারদের ডাক দিয়ে ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন মিনিয়াপোলিসের আন্দোলনকারীদের - When looting starts, the shooting starts - লুটপাট চালালে গুলি করে মেরে দেব! এমন কথা আমেরিকা শুনেছিল বর্ণ বিভাজনবাদী প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়ালেসের মুখে। Twitter এই একই পোস্ট সঙ্গে সঙ্গে মুছে দেয়, জুকেরবার্গ নয়। সে নাকি ট্রাম্পের ফোন পেয়ে তাকে জানিয়ে দিয়েছিল, সে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত নয়, কিন্তু মার্ক জুকেরবার্গ একবারও বলে নি যে এই পোস্ট ফেসবুকের নীতির পরিপন্থী। এর পরপরই কিনোশা, উইসকনসিনে ১৭ বছরের একটি শ্বেতাঙ্গ ছেলে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে সত্যিই গুলিতে উড়িয়ে দেয় দু’জনকে, কিন্তু ফেসবুকে ওই রক্তের আহ্বান তখনও থেকে গিয়েছিল।
আই হ্যাভ ব্লাড ইন মাই হ্যান্ডস
নরেন্দ্র মোদীর ফেসবুকে উপস্থিতি ২০১৪ থেকে। অভিযোগ আছে যে বিজেপি’র কুখ্যাত ট্রোল আর্মি ফেসবুক দ্বারাই প্রশিক্ষিত। ফেসবুক তাদের হেট স্পিচ ভিডিওগুলোর ভিউয়ারশিপ বাড়ানো, মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেওয়া, তৈরি করা ভুয়ো খবর, ভুয়ো ভিডিও পোস্ট করা, সেগুলোর প্রদর্শনহার বাড়ানো অর্থাৎ বুস্ট করা - এরকম অনেক কিছুই করে। ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নালের ১৪ আগস্টের যে প্রতিবেদনের কথা আগেই বলেছি সেখানে এটাও বলা হয়েছে যে ওয়াশিংটনে বসে শ্রীমতী কেটি হার্বাথের নেতৃত্বে ফেসবুকের গ্লোবাল গভর্নমেন্ট টীম ভারত থেকে ব্রাজিল, ব্রিটেন থেকে জার্মানি - নানা জায়গায় বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক দলকে মদত দিয়ে এসেছে নির্বাচনে। বলা হচ্ছে “from India and Brazil to Germany and the UK - the unit’s employees have become de facto campaign workers” - এই টীমের কর্মচারীরা দলবিশেষের প্রচার কর্মসূচিতে কার্যত প্রচারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মনে রাখতে হবে এটাও যে শ্রীমতী হার্বাথের ২০০৮-এর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিউ ইয়র্কের বর্তমান মেয়র রুডি জিউলিয়ানির প্রচার দলের সদস্য ছিলেন এবং ফেসবুক তাঁর এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে মাত্র। ২০১৮ তে ভারতে গত নির্বাচনের আগে সাইরিল স্যাম ও পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা News Click পত্রিকায় একটি পাঁচ সিরিজের নিবন্ধমালায় (Cyril Sam and Paranjoy Guha Thakurata, News Click, Nov 22-26,2018) দেখিয়েছেন ফেসবুকের আধিকারিকদের সঙ্গে বিজেপি দলটির এবং বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর প্রচার দলের সদস্যদের সখ্য অন্য দলগুলির তুলনায় ঠিক কতটা গভীরতর ছিল। আমেরিকায় ট্রাম্প, ব্রাজিলে জাইর বোলসেনারো এবং ভারতে নরেন্দ্র মোদী - এঁদের মত দক্ষিণপন্থী রাষ্ট্রনায়কদের সৌজন্যে প্রচারমাধ্যমের উত্তরোত্তর মেরুকরণ দেখছি আমরা। এদেশে রিপাবলিক টি ভি, ওদেশে ফক্স নিউজ সরাসরি ট্রোল টিভি-র ভুমিকায় নেমে পড়েছে অনেকদিন, কিন্তু, তাঁরা জানেন, এই সব দৃশ্য মাধ্যমের থেকে অনেক বেশি ফলদায়ী নির্বাচনে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রচার। সত্য,মিথ্যা, ঘৃণা মেশানো প্রচার একই সঙ্গে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে যেভাবে প্রভাবিত করতে পারে তার তুলনায় বোকা বাক্সের প্রচার কিছুই নয়। ফেসবুক, যা একটা বিশ্বপরিবার গঠনের লক্ষ্যে ব্যবহারকারীদের মুক্ত নিশ্বাস ফেলার জায়গা, কথা বলার জায়গা, হারানো বন্ধু খুঁজে পাবার জায়গা অথবা নতুন বন্ধুত্ব পাতানোর জায়গা হিসেবে এত আশীর্বাদ পেয়েছে, এখনো পেয়ে আসছে - তার ঘৃণার সওদাগর হয়ে পড়া ফেসবুকেরই সবাই মানতে পারেন তা নয়। Buzzlefeed পত্রিকা ১৪ সেপ্টেম্বর এরকম একজন ভূতপুর্ব কর্মচারীর মন্তব্য উল্লেখ করছে - “I have blood in my hands!” হাতে আমার রক্ত লেগে আছে ! সুতরাং শ্রীমতী আঁখি দাস ক্রীড়নক মাত্র, আসলে রাষ্ট্রীয় ঘৃণার সওদা নিয়ে বসে আছেন মার্ক জুকেরবার্গ ও তাঁর ফেসবুক। তারা কিনে নিচ্ছে মানুষের যুক্তি বুদ্ধিনির্ভর স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ অনবরত মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ফেক খবরের মাধ্যমে, কেন না MIT’র গবেষকদের মত ফেসবুকও জানে মিথ্যা সত্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি গতিশীল। ঘৃণার প্রেমিক, ভালোবাসার প্রেমিকের থেকে সংখ্যায় অনেক বেশি এবং ভাইরাসের চেয়েও দ্রুত সংক্রমণশীল হল ঘৃণা। এজন্য বাতাসের চেয়েও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া বিভাজক, সাম্প্রদায়িক, নিষ্ঠুর এবং ঘৃণার জন্ম দেওয়া পোস্ট তারা কেন্দ্রীয়ভাবে ‘বিপজ্জনক’ শনাক্ত করেও সরায় না, বরং সেগুলিকে গুনবাচক বিশেষণে ভূষিত করে তারা তকমা দেয় ‘ভাইরাল’। এই রক্ত মাখা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠর সমরূপ ‘লাইক’ বাটনের যতটা দরকার রাষ্ট্রকে তার চেয়ে বেশি দরকার রাষ্ট্রের তাকে। শ্রীমতী আঁখি দাস নরেন্দ্র মোদীর জয়ে যদি সমাজতন্ত্রের পরাজয় দেখেন তাহলে মার্ক জুকেরবার্গ অন্যতর কিছু দেখবেন বলে ভাবার কোনো কারণ থাকে কি?
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
এসবে ফেসবুকের লাভ কোথায়? ফেসবুকের লাভ এক কথায় বাজার। ফেসবুকের বাজার হল তার ব্যবহারকারীরা। পৃথিবীতে কেবল দু’খনি পণ্য আছে যার বিক্রেতারা ক্রেতাকে বলে থাকে - ‘ইউজার’ বা ব্যবহারকারী। এর প্রথমটি হল ড্রাগ আর দ্বিতীয়টি হল সফটওয়্যার। প্রযুক্তির জগত যত যন্ত্রপাতি-ভিত্তিক প্রযুক্তির থেকে ডেটা বা তথ্যভিত্তিক প্রযুক্তির দিকে সরে যাচ্ছে তত শক্তিশালী হয়ে উঠছে আন্তর্জাল-নির্ভর তথ্যপ্রযুক্তি পরিবেশক সংস্থাগুলি।আপনাকে আমাকে বিনামূল্যে তথ্য পরিবেশন করে গুগল, ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের সত্যিই কী কোনো লাভ থাকার কথা যদি না তারা বিজ্ঞাপনের থেকে আয় করতে পারে? গত জুলাইয়ে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে হাজিরা দিতে হয়েছিল তথ্য প্রযুক্তির চার দৈত্য - গুগল, আমাজন, অ্যাপল এবং ফেসবুকের প্রধানদের। এই করোনাকালে বিশ্বে যখন যে কোনো যন্ত্রনির্ভর শিল্প স্রেফ বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে তখন এই দৈত্য-চতুষ্টয়ের মিলিত পুঁজির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার। জাতীয় সম্পদের পরিমাপে এই পুঁজি কেবল আমেরিকা, চীন এবং জাপানের পিছনে। অর্থাৎ জার্মানি, যারা মার্সিডিজ, বি এম ডাব্লিউ বানায় তাদের জাতীয় সম্পদও গুগলদের পিছনে পড়ে গেছে এবং ভারতকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না এই ব্যক্তিমালিকানার রমরমার কাছে। এদের আয়ের একটা বিরাট উৎস হল বিজ্ঞাপন। ফেসবুকের প্রায় সাড়ে আটানব্বই শতাংশ লভ্যাংশই আসে বিজ্ঞাপন থেকে। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেবে কেন জামা জুতো বা টয়লেট পেপার কোম্পানি আর ফেসবুক তা আমাকে দেখাবেই বা কেন যদি আমি অর্থাৎ ‘ইউজার’ তা না দেখি? আমার মনযোগ কেড়ে নিতে পারাতেই তার সাফল্য। আমার মন আর আমার মনযোগ - এই হল আদতে তার উৎপাদন অর্থাৎ প্রোডাক্ট। এই প্রোডাক্ট ফেসবুক বাজারে বিছিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞাপনদাতাদের সামনে। আমাকে ফেসবুক যতক্ষণ তার প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখতে পারবে ততই তার লাভ গুণিতক হারে বাড়বে। কেবল ফেসবুক নয়, গুগল সার্চ ইঞ্জিন, ই-মেইল, ইউ-টিউব, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট - সবাই চাইছে আমাকে ধরে রাখতে স্ক্রীনে।আমরা যখন তথ্য খুঁজছি, বন্ধু খুঁজছি, ডেটিং সাইটে সঙ্গী বা সঙ্গিনী খুঁজছি, তখন কেউ না কেউ আপনার আমার মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রীনের উপরে-নীচে-পাশে মনোযোগ কাড়তে কোনো না কোনো ‘‘ক্লিক হিয়ার’ উপাদান নিয়ে হাজির হচ্ছে। ইনিই সেই বিজ্ঞাপনদাতা যার কাছে ফেসবুক বা গুগল বা ইয়াহু আমাকে বিক্রি করছে। তিনি এর জন্য টাকা দিচ্ছেন তাদের এবং সারা পৃথিবীর বিজ্ঞাপনজগত থেকে খরচ হওয়া ৬৬০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারের অর্ধেকের বেশিই চলে আসছে এই প্রযুক্তিনির্ভর তথ্য পরিবেশকদের হাতে। বিজ্ঞাপনের জগতে ব্যয়িত প্রতি ডলার থেকে ৩৫ সেন্টই চলে আসে ফেসবুক অথবা গুগুলের পকেটে। এইভাবে দুয়ে মিলে চালানো মনোপলির একটা গালভরা নামও আছে - ডুয়োপলি (চিত্র-৪)।
তারা চায় আমি একা নই, পণ্য হোক সমষ্টি, আমি যার অংশ। এ কারণে তারা জানে, তাদের জানতে হয় প্রতিটি ব্যবহারকারীর পছন্দ অপছন্দ কী? গুগলে পৃথিবীর গড়ন জানতে চাইলে উত্তর হিসাবে তারা অনেক বিকল্পের মধ্যে যদি দেখায় ‘ The earth is flat’ সে কি তারা নেহাত মূর্খ ও যান্ত্রিক বলে? আমি বণ্যপ্রাণে আগ্রহী, এবং ফেসবুক তা জানে, তাই ফেসবুক একই ভাবে আমার টাইমলাইনে এনে দেয় অজস্র বণ্যপ্রাণ সংক্রান্ত ভিডিও। একটায় ক্লিক করলেই তৈরি থাকে পরেরটাও। এ কি সে যান্ত্রিকভাবেই করে? মোটেই তা নয়। এভাবে যতক্ষণ আমি ফেসবুকে থাকব ততক্ষণ সে আমাকে বেচবে তার বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে। আরো এক কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর পছন্দ যদি আমার মতই হয় তাহলে আমি হলাম এক বিশেষ সমষ্টির একজন যাদের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্যের প্রতিনিয়ত উপচে পড়া ভাণ্ডার থেকে পোস্ট বেছে নেওয়া, লিংক বেছে নেওয়া এবং সেগুলি আমাদের খাওয়ানোর কাজ করে চলেছে ফেসবুকের কৃত্রিম মেধা। আমরা ফেসবুক সম্পর্কে যতটা জানি তার চাইতে ঢের, ঢের বেশি সে আমাদের সম্পর্কে জানে। প্রত্যেক ব্যবহারকারীর প্রতিটি ক্লিক সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। প্রতিটি ক্লিক একটি বা একাধিক নতুন ডেটার জন্ম দেয় যা দিয়ে এই কৃত্রিম মেধা একই সঙ্গে ব্যক্তি ও সমষ্টির পছন্দ-অপছন্দ ও মানসিকতার মানচিত্র তৈরি করে। আমাদের পর্দায় ধরে রাখার সময় বাড়িয়ে তোলাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। যত বেশি সময়, তত বেশি বিজ্ঞাপন, তত বেশি আয় - এই হল আজকের ইকোসিস্টেমে কৃত্রিম মেধার অভিযোজন (চিত্র ৫)।
চিত্র ৫: গ্রাহকপ্রতি আয় গ্রাহকের ফেসবুকে থাকার সময় ও বিজ্ঞাপনের হারের উপর নির্ভরশীল
তারাও হ্যাকার, তবে তারা চুরি করে মানুষের মন। প্রশ্ন উঠতে পারে কেবল তথ্য কি মানুষের মনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে? হয়ে তো উঠছে। মানুষের মস্তিষ্কের মত জটিল নয় এখনও সুপার কম্পিউটার কিন্তু মস্তিষ্কের বৃদ্ধি বলে যদি এখনও কিছু থেকে থাকে তবে তা হচ্ছে অতি ধীরে। অপরপক্ষে কৃত্রিম মেধার বৃদ্ধিহার অনির্বচনীয়। তা রীতিমত প্রভাবিত করতে পারছে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে। তা পারছে মানুষকে নেশাগ্রস্ত করতে। ড্রাগের মত নেশা এই সোশ্যাল মিডিয়ার। এর উইথড্রাল সিম্পটম ঢের বেশি প্রাণঘাতী। সোশ্যাল মিডিয়া আসবার পরে বিশ্বে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ১১৪ % এবং আঠারো ঊর্ধ্বদের মধ্যে ৭০% আত্মহত্যার হার বেড়ে গিয়েছে। তরুণ তরুণীরা আর আগের মত রোম্যান্টিকও নেই, তারা নাকি আর আগের মত প্রেমে পড়ে না। শুধুমাত্র ফেসবুকের সুপারিশ করা ভিডিও, পোস্ট এবং ভাইরাল হওয়া ফেকনিউজের প্রেরণায় নাকি বিশ্ব ৬৪ % নতুন সন্ত্রাসবাদী পেয়েছে (Jeff Horwitz and Deena Seetharaman, WSJ, May 20, 2020)। মার্ক জুকেরবার্গ জানে তার অ্যালগরিদম মানুষের মনের বিভেদমূলক প্রবৃত্তিকে জল বাতাসা দিয়ে পোষে, তবু সে জোর দিয়ে এমন কথাও বলতে পারে যে, আরো শক্তিশালী কৃত্রিম মেধা ছাড়া কৃত্রিম মেধার অপব্যবহার রোখা যাবে না। সে জানে লক্ষ্য যখন বিজ্ঞাপনী ডলার তখন আরো ভালো মানে আরো সুড়ঙ্গ, আরো গভীর অন্ধকার মন। এইভাবেই সে বেড়ে উঠেছে এই গত কয়েক বছরে (চিত্র ৬)।
চিত্র ৬: ফেসবুকের আয়বৃদ্ধির হার
ভারত তার বিরাট বাজার, আর তা বাড়বার সম্ভাবনাও অপরিসীম। তাই আমরা চাই বা না চাই, ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মনের সে এখন বড় দখলদার। মার্কিন কংগ্রেসে একটি প্রশ্নের উত্তরে জুকেরবার্গ অবলীলাক্রমে জানায় - প্রতিযোগিতা রাখতে চাই নি, তাই হোয়াটস অ্যাপ আমি কিনে নিয়েছি। ফেসবুকের মানুষের মনের সওদাগর, কিন্তু সে যে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করতে পারে তার নজির দিনে দিনে তৈরি হচ্ছে। আগামী নভেম্বরের আমেরিকার নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের নজর থাকবে যে কেবল পদপ্রার্থীদের বিতর্কে তা নয়, নজরে থাকবে, বড় করেই থাকবে, ফেসবুক। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লুই ব্র্যান্ডিসের বিখ্যাত উক্তিটি আর একবার স্মর্তব্য - “We may have democracy, or we may have wealth concentrated in hands of a few, but we cannot have both” - পেতে চাইলে আমরা গণতন্ত্র পেতেই পারি, অথবা ক্রমবর্দ্ধমান সম্পদ জমা হতে দেখতে পারি মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে, কিন্তু আমরা দুটোই একসাথে কখনই পাবো না। কয়েকজনের হাতে সম্পদের মেরুকরণই আজকের বিশ্বে প্রধান সঙ্কট এবং হয়ত বা ওটাই আজকের তথ্য আর কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ধনতন্ত্রের ‘অ্যাকিলিস হিল’।