আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ চতুর্দশ সংখ্যা ● ১-১৫ অক্টোবর, ২০২০ ● ১৬-৩১ আশ্বিন, ১৪২৭

প্রবন্ধ

শিক্ষায় ‘মাতৃভাষা’ কথাটার মানে কী

পবিত্র সরকার


বিপুল উচ্ছ্বাস আর ‘ভাসা-ভাসা’ ভাষাবোধ

দেশে ২০২০-র নতুন শিক্ষানীতি প্রচারিত হয়েছে, এর আগেকার ২০১৯-এর খসড়াটিও আমরা দেখেছি। প্রথমটি ভয়ংকর ‘সোডার মতো ভসভসিয়ে’ ওঠা উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল। ভাবখানা এমন যে, এই শিক্ষানীতির খসড়া করেই আমরা একটা সাংঘাতিক বিপ্লব করে ফেলেছি দেশে, বা বিশ্বভুবন জয় করে ফেললাম, এবার রাতারাতি দেশের চেহারা আগাপাস্তলা বদলে যাবে। ইংরেজিতে যাকে euphoric বা triumphalist বলে, সেই রকম ভাষা যেন। ‘নাও, দিলাম তোমাদের এক পিস শিক্ষানীতি, এবার দু-হাত তুলে নেত্ত করো!’ গোছের মেজাজ ছিল ওই ভাষায়। ২০২০-র বাষট্টি পৃষ্ঠার বইয়ে তার প্রকোপ একটু কমেছে। এত মামুলি কথা ফেনিয়ে ফেনিয়ে বলেছিল ওই কমিটি যে, পরে নিশ্চয়ই তার সদস্যদের চৈতন্য হয়েছে, তাই খসড়ার ৪৭৮ পৃষ্ঠা শেষ পর্যন্ত ৬২ পৃষ্ঠায় দাঁড়িয়েছে। এতে কমিটি নিজেই প্রমাণ করল যে খসড়াটি অনেক বাগাড়ম্বরের ভুষিমালে পরিপূর্ণ ছিল। যিনি খসড়াটি লিখেছিলেন সেই অজ্ঞাতনামাকে দায়ী করাই যায়, কিন্তু কমিটির অধ্যক্ষ আর অন্যান্যরা নিশ্চয়ই সেটি দেখেই অনুমোদন করেছিলেন। আমাদের ছেলেবেলায় শিক্ষক বলতেন যে, যদি দেখিস পরীক্ষায় জুতমতো প্রশ্ন আসেনি তা হলে একটু ‘ভাষা দিয়ে’ লিখে পাতা ভরিয়ে আসবি, খবরদার কিছু ছেড়ে আসবি না। খসড়া রচনার বেলায় কমিটি মনে হয় সেই কথাটা মনে রেখেছে।

এই শিক্ষানীতি নিয়ে এখন নানা স্তরেই আলোচনা হচ্ছে, আমরা তার সবটা নিয়ে আলোচনা করব না। এই পরিসরটুকু আমরা বেছে নিয়েছি শুধু শিক্ষায় ‘ভাষা’ সম্বন্ধে যে সব কথা আছে সেগুলির আলোচনা করব বলে। শিক্ষানীতির খসড়া আর শিক্ষানীতিটি সামনে নিয়ে দেখি যে ভাষা সম্বন্ধে যে সব কথা কমিটি বলেছে (‘বলেছেন’ লিখব কি?) তাতে ভাষা সম্বন্ধে তাঁদের অতিশয় ‘ভাসা-ভাসা’ ধারণার পরিচয় ফুটে উঠেছে। লক্ষ করে দেখলাম যে কমিটিতে চেনা কোনও ভারতীয় ভাষাবিজ্ঞানীর নাম নেই। ফারসি ভাষার বিশেষজ্ঞ আছেন বটে, আর অন্যদের ভাষা সম্বন্ধে ধারণার কোনও অনুমান তাঁদের পরিচয় থেকে করার উপায় নেই। কিন্তু ভাষা সম্বন্ধে নানা প্রাথমিক ধারণার অভাব এই খসড়া আর চূড়ান্ত প্রস্তাবে ফুটে উঠেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
 

‘মাতৃভাষা’ সম্বন্ধে ধারণা

এই অংশের প্রথম ভাগে আমরা দেখব যে, Home Language/Mother Tongue - ট্যারচাদাঁড়ি দেওয়া এই দুটি কথা এঁরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অবলীলাক্রমে ব্যবহার করে গেছেন (খসড়া 80 পৃ., চূড়ান্ত 13 পৃ.), কিন্তু ভারতের বেশিরভাগ (উচ্চ-ডিগ্রিধারী হোক, খাজা নিরক্ষর হোক) লোকের মতো শিক্ষার ক্ষেত্রে আসলে মাতৃভাষা বস্তুটি কী, ঘরের ভাষা আর মাতৃভাষার সম্পর্ক কী তা নিয়ে মাথা ঘামাননি। যে কোনও ভাষাবিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করলেই তাঁরা এ সম্বন্ধে একটু পরিশীলিত ধারণায় হাজির হতে পারতেন। চূড়ান্ত তালিকায় আবার চারটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে - home language/mother tongue/local language/regional language. এর সমস্যা সম্বন্ধে আমরা পরে বলছি।

‘মাতৃভাষা’ কথাটা ভাষাবিজ্ঞানে সাধারণভাবে সেই ভাষা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেটা শিশু তার বাড়িতে বা আশ্রয়ে একেবারে জন্মের পরেই শেখে, তার জন্মদাত্রী বা পালনকর্তার (caregiver, মায়ের অবর্তমানে) কাছ থেকে। ভাষাবিজ্ঞানে সেটাকে বলে প্রথম ভাষা বা Language 1। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর ঘরের (গ্রামের/অঞ্চলের) এবং শিশু যে শ্রেণিতে জন্মেছে তার ভাষা। আমরা সবাই জানি যে অঞ্চল অনুযায়ী ভাষার তফাত হয়, সেই ভাষারূপকে বলে আঞ্চলিক উপভাষা বা dialect, আবার সেই সঙ্গে শিশু যে ঘরে জন্মায় সেই ঘরের মানুষদের বিত্ত, শিক্ষা, সংস্কৃতি অনুযায়ীও ভাষার তফাত হয়, তাকে বলা হয় শ্রেণিভাষা বা sociolect। এই উপভাষা আর শ্রেণিভাষার মিলিত রূপ (গাণিতিক পরিভাষায় intersection) হল শিশুর প্রথম ভাষা বা ঘরের ভাষা। অর্থাৎ ভাষাবিজ্ঞানে home language আর মাতৃভাষায় কোনও তফাত নেই, দুয়ের মধ্যে মনের সুখে ট্যারচাদাঁড়ি দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই।

এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিশুর এই ঘরের ভাষা = মাতৃভাষা (ধরা যাক পুরুলিয়ার চাষিপরিবারের মেয়ের প্রথম ভাষা), তার শিক্ষার ভাষা নয়। অর্থাৎ হওয়ার কথাও নয়। তা হলে শিক্ষায় যে ভাষা ব্যবহার হয় সেটা কোন্‌ ভাষা? সেটা হল, ওই শিশুর, এবং পুরুলিয়া থেকে সিলেট, দার্জিলিং থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বা খুলনা পর্যন্ত শিশুর - সমস্ত অঞ্চলের সমস্ত শ্রেণির বাঙালি শিশুর যে গোটা বাংলা ভাষা, তার একটা নির্দিষ্ট রূপ, যার নাম প্রমিত বাংলা বা Standard Colloquial Bengali, সেইটা ব্যবহৃত হচ্ছে তার শিক্ষায়। একেবারে প্রথম থেকে ক্লাসে শিক্ষকেরা সাধারণভাবে ব্যবহার করছেন এই প্রমিত বাংলারই মৌখিক রূপ, আর পাঠ্যবইগুলি এই প্রমিত বাংলাতেই লেখা।

পৃথিবীর সব ভাষাতেই এটা ঘটে। শিশুর ‘মাতৃভাষা’ অনেক সময় এক, কিন্তু স্কুলে তাকে আর-একটা (উপ-)ভাষায় লেখাপড়া শিখতে হয়। তার কারণটা পরিষ্কার। ‘ভাষা’ বলতে আমরা সাধারণ, এমনকি ডিগ্রিওয়ালা পণ্ডিত লোকেরাও সাধারণভাবে একটা অখণ্ড সংহত, অবিমিশ্র রূপ বোঝেন, কিন্তু কোনও ভাষাই তা নয়। তা আসলে বহু উপভাষার আর শ্রেণিভাষার একটা গুচ্ছ। এই গুচ্ছের মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে তার একটা রূপ, যাকে বলা যায় super dia-sociolect, বা প্রমুখ উপ-শ্রেণি-ভাষা, যা হল প্রমিত বা মান্য চলিত ভাষা। সেটাই হয় শিশুর শিক্ষার ভাষা, কারণ তারই মূলত মৌখিক আর লিখিত দু-রকম চেহারাই আছে। মৌখিক রূপে তা বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষাদের পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তায়, ক্লাসে, বিদ্যার নানা আলোচনায়, বৈদ্যুতিন সংবাদ-মাধ্যমে, বক্তৃতায় ব্যবহৃত হয়, আর লিখিত রূপে তা চিঠিপত্রে (এখন ইন্টারনেট বার্তায়), সাহিত্যে, সংবাদপত্রে, অন্যান্য লেখায়, সরকারি আর বেসরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য উপ-শ্রেণিভাষা লেখায় ব্যবহার হতেই পারে, চরিত্রের সংলাপে, এমনকি সাহিত্য রচনায়, কিন্তু তা ভাষাগোষ্ঠীর নানা ভৌগোলিক প্রান্তের সকলের মধ্যে মূল আদানপ্রদানের মাধ্যম কখনও হয় না।

সূক্ষ্ণভাবে দেখতে গেলে এই প্রমিত ভাষা ভাষাগোষ্ঠীর অধিকাংশ শিশুর ‘মাতৃভাষা’ বা প্রথম ভাষা নয়। আমাদের মহাপুরুষেরা ‘মাতৃভাষা’ কথাটিকে এই ব্যাপক অর্থেই ধরেছেন, ভাষাবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে তাঁদের মাথা ঘামানোর কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ বা মহাত্মা গান্ধির সময়ে এই ধারণাগুলির এমন মাজাঘষাও হয়নি। কিন্তু এখন যাঁরা শিক্ষার ভাষানীতি নির্ধারণ করবেন তাঁদের এই সূক্ষ্ণ তফাতটা খেয়াল রাখা দরকার, কারণ যাদের ঘরের ভাষা প্রমিত ভাষার কাছাকাছি, ধরা যাক বাংলার ক্ষেত্রে নদিয়া, হুগলি, কলকাতার ছেলেমেয়েদের, তারা তো খানিকটা সুবিধে পায়। অন্যদের নিজেদের ঘরের ভাষা ছেড়ে প্রায় নতুন ভাষার মতো এই প্রমিত ভাষা শিখতে হয়। অবশ্য লেখাপড়ার বিস্তারে, আর রেডিয়ো-টেলিভিশনের ব্যাপক ব্যবহারে, দূরদূরান্তের শিশুরাও এখন প্রমিত ভাষা শোনার সুযোগ পাচ্ছে, ফলে তাদের উপ-শ্রেণিভাষাই ক্রমশ বিলীন হওয়ার দিকে চলেছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলের ভাষাকে ঘরে নিয়ে আসছে। তারা নিজেদের ঘরের ভাষাকে মনে করছে ‘অশুদ্ধ’ ভাষা, তাদের শিক্ষকেরাও অনেক সময় তাদের ধমকাচ্ছেন ক্লাসে ‘অশুদ্ধ’ ভাষা বলছে বলে। ১৯৬০-এর বছরগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কালো ছেলেমেয়েদের যেমন সাদা (কখনও কালোও) শিক্ষকেরা বকুনি দিতেন তারা মান্য ইংরেজি বলছে না বলে, তেমনই অজস্র বাঙালি ছেলেমেয়েও নিশ্চয় এ রকম বকুনি খেয়েছে সে ‘গেঁয়ো’ ভাষা বলছে বলে। ভাষাবিজ্ঞান কিন্তু ভাষার এই জাত-বেজাতের বিচারকে স্বীকার করে না, তার মতে সব ভাষা এবং সব উপভাষার মর্যাদা সমান।

কিন্তু ওই যা হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা ভাষা উপভাষার জাতিভেদ তৈরি করতে বাধ্য হয়, তার কারণ সমস্ত উপ-শ্রেণিভাষায় শিক্ষা দেওয়া (পাঠ্যপুস্তক ছাপানো, শিক্ষা আর শিক্ষকের ব্যবস্থা করা, সংবাদমাধ্যম চালানো) রাষ্ট্রের সাধ্যের অতীত। আর তা উচিতও নয়, কারণ তাতে শুধু নানা রকমের ভাষাবিচ্ছেদ ঘটবে তা নয়, চাকুরিব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হবে। পুরুলিয়ার ভাষায় এমএ পাশ ছেলে বা মেয়ে মালদাতে কাজ পাবে কি না সন্দেহ। আর শুধু উপভাষা নয়, অনেক ভাষা এতই ছোট, বা তার লোকজন এত নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে যে, তাদের জন্য তাদের ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা ভৌগোলিকভাবে যেমন, তেমনই অর্থনীতির দিক থেকেও সমস্যাপূর্ণ। কাজেই শিক্ষার বাহন যে প্রমিত ভাষা, তা mother tongue একটু প্রসারিত অর্থেই। আমাদের মনে হয় একে e-mother tongue বললে ঘরের ভাষা থেকে আলাদা করা যায়। E হল education-এর সংক্ষেপ। বাংলায় বলতে পারি শি-মাতৃভাষা।
 

‘মাতৃভাষা’ মাধ্যম নিয়ে এই নীতিতে প্রতারণা

বোঝা গেল যে, ঘরের ভাষা শিক্ষার ভাষা - এই সব সূক্ষ্ণ কচকচির মধ্যে না গিয়ে বা না বুঝে, শিক্ষানীতি নির্ধারকেরা ওই প্রমিত ভাষাকেই মাতৃভাষা হিসেবে ধরে নিয়েছেন। তবে local language/regional language-এর আরও দুটি বিকল্প রাখলেন কেন? আমাদের মনে হয় তাঁরা এই বিকল্পগুলি ভেবেছেন দু-রকম সম্ভাবনার বিবেচনায়। এক ছোট ভাষার কথা মনে রেখে, আর দুই, যে ছাত্র বা ছাত্রী নিজের অঞ্চলের বাইরে গিয়ে পড়বে - বাঙালি শিশু, ধরা যাক, কর্ণাটকে, বা তামিল শিশু হরিয়ানায় - তাকে সম্ভবত স্থানীয় ভাষার মাধ্যমেই পড়তে হবে। পশ্চিমবঙ্গ এ ব্যাপারে তত কড়া না হলেও - এখানে অন্য ভাষার ছাত্রছাত্রী বাংলা না পড়েও শিক্ষায় এগিয়ে যেতে পারে - কিন্তু অন্যান্য অনেক প্রদেশ তাদের ভাষাপাঠকে আবশ্যিক করেছে।

এতেই বাইরের ছাত্রের শি-মাতৃভাষায় শেখার সুযোগ আর রইল না। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে শি-মাতৃভাষার মাধ্যমে শেখার সুযোগ থাকছে না শিশুর। এমনকি বিষয় হিসেবেও শি-মাতৃভাষা শেখার সুযোগ সে পাচ্ছে না।

এই কমিটি ‘ডিজিট্যাল’ ‘ডিজিট্যাল’ করে চোখ উলটে বারে বারে মুচ্ছো গেছে, কিন্তু এই কথাটা তাঁদের মনে হয়নি যে, আজকের দিনে এরও একটা সমাধান বার করা সম্ভব। অর্থাৎ ভারতীয় শিশু যেখানেই থাকুক, সে সেখানেই তার মাতৃভাষায় শিক্ষা নিতে পারে। বেশি সংখ্যক থাকলে তো নিজেদের স্কুলই করতে পারে, যেটা এক সময় উত্তর ভারতে প্রচুর হয়েছিল। আমার কিশোরবেলায় বহুভাষী খড়্গপুর শহরে হিন্দিভাষী, ওডিয়াভাষী আর তেলুগুভাষীদের স্কুল দেখেছি। কিন্তু সেটা যেখানে সম্ভব নয় সেখানে অনলাইনে তার রাজ্যের সিলেবাস তাকে কোনওভাবে পড়ানো এবং পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা সম্ভব কি না, তা তাঁরা যাচাই করেননি। আমি বলছি না এটা একটা নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা, কিন্তু এক সময় হয়তো তাও সম্ভব বলে বিবেচিত হবে। যাই হোক, শি-মাতৃভাষা মাধ্যমের গুণগান সত্ত্বেও এই হল প্রথম ফাঁকি যে, তাঁরা তার বিকল্পের সম্ভাবনাও রেখেছেন।

আরও ফাঁকি আছে। ফাঁকি বা ফাঁক। দু-নম্বর ফাঁকি হল ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির বিষয়ে। সেখানে কোনও অঞ্চলেই শি-মাতৃভাষা মাধ্যম নয়। এবং এই নীতিপ্রণেতারা তার গায়ে হাত দেবার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেননি। তা হলে তো আধিপত্যকারী শ্রেণির গায়ে হাত দিতে হয়, সেটা রাষ্ট্রের পক্ষে, বা রাষ্ট্রের এই প্রতিনিধিদের পক্ষে, সম্ভব নয়। হ্যাঁ, বলছেন যে বেসরকারি স্কুলগুলিতেও এই নীতি মান্য করা হবে। কিন্তু এখন যে সব স্কুলগুলিতে শি-মাতৃভাষা মাধ্যম নেই, সেগুলিকে মাতৃভাষা-মাধ্যমে রূপান্তরিত করা হবে - এমন কোনও কথা নেই। যেখানে শিশুর মাতৃভাষা অঞ্চলের শিক্ষার ভাষা থেকে আলাদা, সেখানে শিক্ষকদের দ্বিভাষিক প্রকরণ (bilingual approach) গ্রহণ করতে বলা হচ্ছে। সেটা দুটি ভাষা পাশাপাশি, বা একই অঞ্চলে বলা হলে তা কিছুটা সম্ভব। কিন্তু যে তেলুগু ছাত্র বা ছাত্রী গুজরাতে পড়বে, তার গুজরাতি শিক্ষক তেলুগু বলতে পারবেন তো? কমিটি তার ব্যবস্থা কীভাবে করবেন?

তিন নম্বর ফাঁক বা ফাঁকি হল, কমিটি বলছে যে প্রথম কয়েক বছর (until at least Grade 5, but preferably till Grade 8) অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শি-মাতৃভাষা মাধ্যম হলে ভালো, সঙ্গে জোড়া হয়েছে and beyond (p. 13). এই and beyond কথাটির ব্যাখ্যা তাঁরা দেননি। দেওয়া উচিত ছিল, এই জন্য যে তাঁদের vision তো মাত্র কয়েক বছরের নয়।

And beyond বলতে আমরা কী বুঝব? আমরা কি বুঝব যে, অনেক ক্ষেত্রে যেমন আছে, শি-মাতৃভাষায় ছাত্রছাত্রী অন্তত মানবিকী বিদ্যায় এমএ এবং গবেষণার স্তর পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে। সেটা চলবে তো? আমরা জানি যে প্রযুক্তি, ডাক্তারি, ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় এখন আমাদের ইংরেজিতেই পড়তে হয়। বিজ্ঞানে স্নাতক স্তরে কোথাও শি-মাতৃভাষায় পড়াশোনা অনুমোদিত, কিন্তু স্নাতকোত্তর স্তরে নয়। আর প্রযুক্তি ডাক্তারি, ম্যানেজমেন্ট এগুলিতে ইংরেজিই শিক্ষার মাধ্যম।

And beyond বলতে কি আমরা বুঝব যে, উপরের সমস্ত শাখায় তাঁরা শি-মাতৃভাষার মাধ্যম প্রবর্তনের কথা ভাবছেন? আমাদের আশা অনেকের কাছে উন্মাদের প্রলাপ বলে মনেই হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর বহু বহু দেশ তো এটা করে! চিন, জাপান, রাশিয়া সহ ইউরোপের সমস্ত দেশ, দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশ তো শি-মাতৃভাষাতেই সব শেখায়। আমাদের এ রকম একটা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে বাধা কোথায়, অন্তত সুদূর ভবিষ্যতে। এই কথাটা যে তাঁরা ভাবলেন না, সেটা আমার আর-একটা ফাঁক বলে মনে হয়।

এই কথা বলা মাত্র আমি বিপুল অট্টহাস্যের সঙ্গে যে প্রতিযুক্তিগুলি আমার প্রতি ধেয়ে আসবে সেগুলি আমি জানি। না, আমি কখনওই চাই না যে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা অন্য ভাষা শিখবে না। অন্তত ইংরেজি তারা নিশ্চয়ই শিখবে, আশা করি যথাসম্ভব ভালো করে শিখবে। পরে নীতিপ্রণেতাদের multilingualism and the power of language অংশের আলোচনায় আমরা আমাদের বক্তব্য খোলসা করব। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো কথায় কথায় আত্মনির্ভরতার কথা বলেন, তা হলে শিক্ষায় ভাষামাধ্যমের ক্ষেত্রে আমরা আত্মনির্ভর হব না কেন, এবং তার জন্যে ভাষাগুলির পরিচর্যা শুরু করব না কেন? আবার বলি, আমাদের শিক্ষায় ইংরেজির খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান থাকবে, কারণ ইংরেজি এখন বিশ্বে নানা ক্ষেত্রে জরুরি ভাষা। ফলে শি-মাতৃভাষা নিয়ে তাঁদের কথাবার্তায় একাধিক ফাঁকি আমাদের চোখে পড়েছে।
 

স্কুলে অন্তত পাঁচটি ভাষা শেখার বোঝা

২০২০-এর পুস্তিকার 4.11 অংশে এই সমিতি স্কুলে একাধিক ভাষা শিক্ষা সম্বন্ধে যা বলেছেন (অন্তত পাঁচটি ভাষা বারো ক্লাসের মধ্যে শিখতে হবে) তা হাস্যকর রকমের অবাস্তব। প্রথমত তাঁরা যে বলেছেন (4.12) শিশুদের ২ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত ভাষা শেখার ক্ষমতা বেশি থাকে তা দু-দিক থেকে ভুল। এক, শিশুদের ভাষাশিক্ষার বিশেষ সময় (ভাষাবিজ্ঞানে যাকে critical period বলে) তা এর চেয়ে দীর্ঘ। শিশুর ভাষা শিক্ষা প্রায় তার মায়ের পেট থেকেই শুরু হয়, সে যখন মায়ের পেটে সাত মাসের, তখন সে মায়ের কণ্ঠস্বরের ভাষাকে অন্যদের কণ্ঠস্বর থেকে আলাদা করতে পারে। আর জন্মের পর প্রথমে কান্না তার ভাষা; তার পর ছয় সপ্তাহ থেকে গলায় নানা ‘গ্‌গু’ আওয়াজ শুরু হয়, যার নাম cooing পর্ব। তার পর কলধ্বনি বা babbling পর্ব, তা চলবে তার ছয় মাস বয়স পর্যন্ত। এর পরের দু-মাসে তার কথায় intonation pattern বা সুর আসবে। তার পরে সে একশব্দের বাক্য বলতে শুরু করবে, আট মাস থেকে এক বছরের মধ্যে, ছ-মাস পরে, অর্থাৎ তার দেড় বছর বয়সে দুই শব্দের বাক্য বলবে। সবগুলি পর্যায় আমি বলছি না, ভাষাবিজ্ঞানে এটা বলা হয় যে দশ বছর বয়সে স্বাভাবিক শিশুর পরিণত ভাষাদক্ষতা অর্জিত হয় (১)। মানুষের ভাষাশিক্ষার এই স্বাভাবিক শৈশব-দক্ষতা নষ্ট হয় বয়ঃসন্ধির পরে।

এই কথা উল্লেখ করে নীতিপ্রণেতারা যে দ্বিতীয় ভুলটি করেছেন তা হল ওই শ্রুতিকথন-নির্ভর ভাষাশিক্ষাকে স্কুলের ভাষাশিক্ষার সঙ্গে এক করে দেখা। এটা অজ্ঞতাজনিত হতে পারে, অতি উৎসাহের ফলে উপেক্ষাজনিতও হতে পারে। ভাষাবিজ্ঞানীরা কোথাও এ কথা লুকোন না যে, শিশুর ওই ভাষা শিক্ষা আসলে শুনে শুনে আর বলতে বাধ্য হয়ে শিক্ষা, একটা মুখের ভাষা শিক্ষা। মুখের ভাষা শেখার সত্যই একটা বিস্ময়কর ক্ষমতা শিশুর আছে, ওই জন্ম থেকে দশ বছর বয়সের মধ্যে। সে প্রথম ভাষা শেখে মুখে মুখে, তার পাশাপাশি অন্য একাধিক ভাষাও সে শিখতে পারে মুখে শুনে শুনে এবং বলে বলে। এটা অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ করি যে, তারা বাড়িতে মা বাবার সঙ্গে একটা ভাষা বলছে, পাড়ার খেলার সঙ্গীদের (peer group) সঙ্গে আর-একটা ভাষা বলছে, বাড়ির কাজের সহায়ক-সহায়িকাদের সঙ্গে আর-একটা ভাষা বলছে।

কিন্তু, এটা হল বলার দক্ষতা, যেটা স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু যেটা শিক্ষাতত্ত্বের একটা বড় সত্য, স্কুলে শিশু শুধু মুখের ভাষাটা শেখে না। আমাদের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে দ্বিতীয় ভাষা বহুলাংশে ইংরেজি, এবং তাকে যারা ইংরেজি বলতে শেখান শতকরা ৯৯টি ক্ষেত্রে ইংরেজি তাঁদের মাতৃভাষা নয়, জন্মভাষাও নয়। আর তাই ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলে যাই হোক, তার বাইরে শিশুদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি বলতে শেখা খুব আধাক্যাচড়া রকমের হয়। এককালে তাকে ‘বাবু ইংরেজি’ বলা হয়, এখনও সেই বাবু ইংরেজি আমরা শুনি। এখন সেটাকে ‘ভারতীয় ইংরেজি’ বলে একটু মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আমাদের এ কথাটা অতিরঞ্জিত মনে হলেও খুব ভুল নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্কুলে আমরা ভারতীয় ইংরেজি শেখানোর কথা ভাবি না, ব্রিটিশ বা এখন আমেরিকান প্রমিত ইংরেজি শেখানোর কথাই ভাবি।

কিন্তু যেটা বড় কথা, এই অঞ্চলে ইংরেজি স্কুলের ভাষা হিসেবে যখন আসে, তখন তা শোনার চেয়ে লিখতে হয় বেশি, এবং সেই লেখা শেখার কোনও জন্মগত ক্ষমতা শিশুর নেই। অর্থাৎ লেখা দেখলাম আর লিখতে শিখে গেলাম, এই অলৌকিক ব্যাপারটা শিশুর ক্ষেত্রে ঘটে না। আমাদের চেনা ইংরেজির ক্ষেত্রে তো এ সব প্রায়ই দেখি। শিশুকে বর্ণমালা শিখতে হয় (চেনা, ক্রম অনুসারে মুখস্থ করা, ঠিকঠাক লেখা - যেখানে b আর d কিংবা ‘ল’ আর ‘শ’ গুলিয়ে যেতে পারে), বানান শিখতে হয়, বাক্যে শব্দের ক্রম (বাংলার মতো নাও হতে পারে - বাংলায় ক্রিয়াপদ সাধারণভাবে শেষে বসে, ইংরেজিতে সাধারণভাবে কর্তার পরে) আর তার এদিক-ওদিক হওয়া (ইংরেজিতে এক ধরনের প্রশ্নে সহায়ক ক্রিয়াপদ do ইত্যাদি বাক্যের আগে আসে), উচ্চারণ আর ব্যাকরণের নিয়মকানুন শিখতে হয়, নতুন নতুন শব্দ শিখতে হয়। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছাড়া ক্লাসঘরে সে ইংরেজি ভাষা শোনার সুযোগ কম পায়, যদি না টেলিভিশন বা ইউটিউবের সাহায্য নেয়। ইংরেজি শোনা এবং ইংরেজি খবরের কাগজ বা ‘বাইরের বই’ পড়া তাকে সাহায্য করতে পারে। অন্য ভাষার ক্ষেত্রে এই পার্শ্বিক সহায়তা আরও দুর্লভ। কিন্তু মোদ্দা কথা এই - দুই থেকে আট বছরে শিশুর মৌখিক ভাষা শেখার প্রাকৃতিক দক্ষতা তার ভাষা লেখা শিখতে খুব কম সাহায্য করে। সেটা শিক্ষক আর অভিভাবকেরা জানেন, কারণ এ সব শেখাতে তাঁদেরও গলদ্‌ঘর্ম হতে হয়, এবং তা সত্ত্বেও বানান ভুল এবং ইংরেজির অন্যান্য ভুল আমাদের সারা জীবন পশ্চাদ্ধাবন করে। আমি মনে করি শিশুর ওই প্রাকৃতিক দক্ষতার নজির ভারতীয় স্কুলের বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে তোলা এক ধরনের মূঢ়তা।

আর এই সমিতি সেখানে কী করেছেন, না স্কুল পর্যায়েই ছাত্রছাত্রীদের পাঁচ-পাঁচটা ভাষা শেখার সুপারিশপত্র দিয়েছেন। যেমন 4.13 (p.14)-তে দেখি ১৯৬৮-তে ঘোষিত ত্রিভাষা শেখানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে অন্তত একটি ভাষা বিদেশি হবে - ধরে নিচ্ছি সেটা ইংরেজি - এমনই এঁদের মনের কথা। প্রথম দিকে ওই শি-মাতৃভাষা আর অন্য একটি ভাষা, আর ক্লাস সিক্‌স বা সেভেন থেকে তৃতীয় ভাষা, সম্ভবত ইংরেজি। তা হলে দাঁড়াল, ফাইভ পর্যন্ত দুটি ভাষা, আর সিক্‌স বা সেভেন থেকে ইংরেজি। এই তিনটি মোটামুটি ‘বাধ্যতামূলক’। ওই তিন ভাষার মধ্যে সংস্কৃতও থাকতে পারে, খুব উচ্ছ্বসিত ভাবে এঁরা সে কথা বলেছেন (4.17)। Sanskrit will be offered at all levels of school and higher education as an important, enriching option for students, including as an option in the three-language formula. যতক্ষণ তা option ততক্ষণ ঠিকই আছে, তা ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীন নির্বাচন হবে। কিন্তু ত্রিভাষা-সূত্রের মধ্যে এসে গেলে তা আর ঐচ্ছিক থাকবে না।

এর পরে (4.18) আসছে নব্য-ক্লাসিক্যাল ভাষাগুলির কথা। পাঠকেরা হয়তো জানেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৫ থেকে কিছু কিছু ভারতীয় ভাষাকে ‘ক্লাসিক্যাল’ এই নাম দিয়ে চলেছেন। এর মূলে একটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি ছিল, দক্ষিণীদের তুষ্ট করা। তাতে নানা অদ্ভুত শর্ত আছে। একটা হল ভাষাটাকে অন্তত পনেরোশো বছরের প্রাচীন হতেই হবে। কেন দু'হাজার বছর নয়, কেন পনেরোশো বছর - কোন্‌ যুক্তিতে, তা কেউ বলেনি। ফলে দক্ষিণ ভারতের একাধিক ভাষা চিহ্নিত হয়েছে এই ‘নব্য-ক্লাসিক্যাল’ তকমায়, আমাদের প্রতিবেশী ওডিয়াও এই মর্যাদা পেয়েছে। এতে আশ্চর্যের কথা হল, সমগ্র বিশ্বে যা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসিক্যাল ভাষা হিসেবে গণ্য, সেই সংস্কৃতকে সে মর্যাদা দেওয়া হল তামিলের পরের বছর, ২০০৬-এ। এতে সরকারের চক্ষুলজ্জা হয়েছিল কি না জানি না।

কিছু ভাষাকে এইভাবে ‘সিনিয়র সিটিজেনশিপ’ পাইয়ে দেওয়ার যে রাজনীতি, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কিছু মানুষ নানা কারণেই ক্ষুব্ধ, কিন্তু আমাদের তার মধ্যে যাওয়ার দরকার নেই। সমস্যা হল, এর পরে নীতি-সমিতি এই নব্য-ক্লাসিক্যাল ভাষাগুলির (তামিল, মলয়ালম্‌, তেলুগু, কন্নড়, ওডিয়া শুধু নয়, পালি, প্রাকৃত আর ফারসিও) একটিকে পাঠ্যতালিকায় আনার সুপারিশ করেছেন। রক্ষা এই যে, এগুলির পাঠকে option হিসেবে এবং online module হিসেবে রাখতে বলছেন।

এখানেই শেষ নয়। মাধ্যমিক স্তরে, অর্থাৎ উঁচু ক্লাসগুলিতে একটি ইংরেজি-ভিন্ন ‘বিদেশি’ ভাষা শেখানোরও সুপারিশ আছে, যার মধ্যে আছে কোরীয়, জাপানি, থাই, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, পোর্তুগিজ, রুশ। ভাষাগুলির তালিকাতে কোনও মাথামুন্ডু নেই। ‘থাই’ কেন, ‘আরবি’ কেন নয়, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। সমিতিবাবুরা ভুলেই গেছেন বা জানেন না যে, ভাষা মানুষ শখ করে শেখে খুব কম, শেখে প্রয়োজনে। ব্যবহার না থাকলে শেখা ভাষা লোকে ভুলে যায়। কাজেই ভাষার একটা এলোমেলো তালিকা খাড়া করে দিলে সেটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। আরও মজার কথা হল, খসড়াতে ‘চিনা’ ছিল, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় পরেরটাতে তা বাদ গেছে। শত্রুর ভাষাটাও যে শেখা দরকার শত্রুর মতলব বোঝার জন্য, তা এই সমিতির মনে হয়নি। ঐচ্ছিক হোক, আবশ্যিক হোক, মোট পাঁচটা ভাষা শেখার দায় ছাত্রছাত্রীদের উপর চেপেছে।

এ তো এক পাগলের কারবার। তারা বিষয় শিখবে কখন আর ভাষা শিখবে কখন? ভাষা শিখতে সময় লাগে না বুঝি? অনলাইনে হোক যেভাবেই হোক, তার জন্য সময় তো দিতে হবে! আবার holistic, integrative, internationalized - ইত্যাদি অন্তঃসারশূন্য ইংরেজি শব্দের পুনরাবৃত্তির জ্বালায় অস্থির হয়ে যাই। যেন আগের শিক্ষানেতারা এ সব নিয়ে কিছুই ভাবেননি! আগের শিক্ষাব্যবস্থা এ সব বিষয়ে নিরক্ষর ছিল!

 

টীকা ১: প্রাথমিক একটি বিবরণের জন্য এই লেখকের 'ভাষা দেশ কাল' বইয়ের ‘শিশুর প্রথম ভাষা শিক্ষা’ ও অন্যান্য কিছু প্রবন্ধ দেখা যেতে পারে। ২০০৫, দ্বিতীয় সংস্করণ, মিত্র ও ঘোষ, পৃ. ১৮০-১৮৯। তাতে বিদেশি Psycholinguistics-এর বইয়ের উল্লেখ আছে, এই লেখকের কথা বিশ্বাস না করলে পাঠক সে বইগুলিও দেখতে পারেন।