আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ ত্রয়োদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ● ১-১৫ আশ্বিন, ১৪২৭

প্রবন্ধ

মহালয়া এলো, পুজো কতো দূর?

পলাশ বরন পাল


আমাদের ছোটোবেলায়, মানে ১৯৫০ বা ১৯৬০-এর দশকে, মহালয়ার দিনেই কার্যত দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যেতো। প্রায় অন্ধকারে ভোর রাত্তিরে উঠে রেডিয়োতে মহালয়ার অনুষ্ঠান শোনার সময়েই ঘুমচোখে মনে হতো, ইশকুল কলেজে ছুটি শুরু হয়ে গেছে। তার কয়েকদিন পরেই ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী জুড়ে হৈ হৈ, অতঃপর ধুমধাম করে বিজয়া দশমী। এখন মহালয়া থেকে ছুটি শুরু হয় না অনেক জায়গাতেই, অনেক অফিসে ওই দিনটাও ছুটি থাকে না। তবু, মহালয়া আসা মানেই আর ক'দিন বাদে পুজো আসবে, এটুকু তো বদলায়নি!

এই ফর্মুলার অন্যথা কিন্তু হয় কখনো কখনো। মহালয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পুজো হয় না, ষষ্ঠীর বোধন হয় মহালয়ার পাঁচ সপ্তাহ পরে। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের দুর্গাপুজো এই রকমের ব্যতিক্রমের একটা উদাহরণ। মহালয়া ৩১শে ভাদ্র, গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর, বেস্পতিবার। আর দুর্গাপুজোর বোধন ২২শে অক্টোবর, মাসাধিক পরের আর এক বেস্পতিবার।

কেন এমন হলো? কেন এমন হয়? এক কথায় এ প্রশ্নের উত্তর হলো - মাঝখানে একটা মলমাস পড়ে যাচ্ছে, এবং মলমাসে উৎসব হয় না। কিন্তু তাহলে প্রশ্ন উঠবে, মলমাস কী, এবং সে প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের জানতে হবে, মাস আর বছর গোনা হয় কী করে।

বছরের মাপটা মূলত সূর্যকে নিয়ে। সূর্যকে একবার পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর যে সময় লাগে তাকে আমরা এক 'সৌর বছর' বলি। এর দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৪২২ দিন। আর মাস হচ্ছে চন্দ্রকলার বদলের সময়কাল। এক পূর্ণিমা থেকে পরবর্তী পূর্ণিমা, বা এক অমাবস্যা থেকে পরবর্তী অমাবস্যায় যখন সূর্য চাঁদ পৃথিবী একই লাইনে আসে, সেই সময়টাকে বলা হয় এক মাস - পরিভাষায় 'যুতিমাস'। পর পর যে কোনো দুটি অমাবস্যার দূরত্ব ঠিক সমান হয় না, তবু একটা গড় হিসেব মনে রাখলে সুবিধে হবে। এই গড় মাসের দৈর্ঘ্য হলো ২৯.৫৩০৬ দিন। এক বছরে তাহলে কতো মাস? বছরের দৈর্ঘ্যকে মাসের দৈর্ঘ্য দিয়ে ভাগ করে উত্তর পেয়ে যাচ্ছি, ১২.৩৬৮৩।

এইটাই হলো মুশকিল। কোনো হিসেবই পূর্ণসংখ্যার হিসেব হচ্ছে না। পূর্ণসংখ্যক দিনে বছর বা মাস হচ্ছে না। আবার এক বছরে মাসের সংখ্যা হিসেব করলেও পূর্ণসংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ক্যালেন্ডার তৈরি করতে গেলে পূর্ণসংখ্যার হিসেবই রাখতে হবে - বেমক্কা একটা মাসের মাঝমধ্যিখান থেকে নতুন একটা বছর শুরু করে দিলে চলবে না। চাঁদ-সূর্যের গতিবিধির ওপরে তো আমাদের হাত নেই। কিন্তু ক্যালেন্ডারে বছর আর মাস বলতে যা বোঝাবো, তাদের চলনে মিল থাকা দরকার। এই মেলানোর কাজটা করা হয় মূলত তিন রকমের কৌশলে।

একটি হলো সৌর ক্যালেন্ডারের কৌশল। এতে সৌর বছরের হিসেবটা ঠিক রাখা হয়, আর তার মধ্যে বারোটা ভাগ করে তার এক এক ভাগকে বলা হয় এক একটা মাস। অর্থাৎ মাসের সঙ্গে চন্দ্রকলার কোনো সম্পর্ক থাকে না এই ধরনের ক্যালেন্ডারে, মাসের গড় দৈর্ঘ্য হয় বছরের দৈর্ঘ্যের ঠিক ১২ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ মোটামুটি ৩০.৪৬৪৯ দিন। যুতিমাসের চেয়ে বড়ো। গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার (যাকে অজ্ঞতাবশত বা বদভ্যেসবশত আমরা ইংরিজি ক্যালেন্ডার বলি) এই রকম, আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারও সৌর।

এর ঠিক বিপরীত হলো চান্দ্র ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডারের মাস চান্দ্র যুতিমাসই, শুরু হয় অমাবস্যা বা পূর্ণিমা বা অন্য কোনো নির্দিষ্ট চান্দ্র তিথিতে। এমনি বারোটা মাস জুড়ে যে সময়টা, তাকে বলা হয় বছর, এতে মোটামুটি ৩৫৪ দিন। অর্থাৎ এই ক্যালেন্ডারের বছরের সঙ্গে পৃথিবীর বার্ষিক গতির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। মুসলমানদের ধর্মীয় ক্যালেন্ডার এই রকম।

তৃতীয় কৌশলটি এই দুয়ের মাঝামাঝি, তাকে বলা হয় চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডার। তাতে মাসগুলো প্রতিটিই চান্দ্র মাস, শুরু হয় নির্দিষ্ট চান্দ্র তিথিতে। এমনি করে বারো মাস হলে চান্দ্র ক্যালেন্ডারের মতোই বছরে ৩৫৪ দিন হতো। কিন্তু এই ক্যালেন্ডারে বছরের গড় দৈর্ঘ্যটা রাখা হয় সৌর বছরের দৈর্ঘ্যের সমান। কী করে তা সম্ভব হয়? কৌশলটা হলো, সব বছরে মাসের সংখ্যা সমান নয়। কোনো বছরে ১২ মাস, কোনো বছরে ১৩। যে বছরে বাড়তি মাস ঢোকে, সে বছরে দিনের সংখ্যা ৩৮৩ বা ৩৮৪-তে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই বাড়তি মাসগুলো এমন হিসেব করে ঢোকানো হয়, যাতে গড়ে প্রতি বছরের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় সৌর বছরের সমান। চীনাদের, ইহুদিদের ক্যালেন্ডার এই রকম, গোটা উত্তর ভারত এবং পশ্চিম ভারতের ক্যালেন্ডার, এবং আরো বহু ক্যালেন্ডারও।

হিন্দু বাঙালিদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ কেবল গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার আর বাংলা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে। এ দুটোই সৌর ক্যালেন্ডার। তাই অন্যরকমের ক্যালেন্ডারের চালচলন সম্পর্কে হিন্দু বাঙালির মাথাব্যথা নেই তো বটেই, অন্যরকম ক্যালেন্ডার যে হয় এই তথ্যটি সম্পর্কেও অনেকে অবহিত নন। হলে ভালো হতো, কেননা বাঙালি হিন্দুদের উৎসবের দিনক্ষণ সৌর ক্যালেন্ডার দিয়ে ঠিক হয় না, হয় চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডার মারফত, যার চল আছে উত্তর আর পশ্চিম ভারতে।

আগেই বলেছি, চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডারে মাস শুরু বা শেষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে নির্দিষ্ট কোনো চন্দ্রকলার। ভারতে যে চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডার চলে তা অমান্ত, অর্থাৎ এতে মাস শেষ হয় অমাবস্যা দিয়ে। ভাদ্রের শেষে যে অমাবস্যা, সেটি হলো মহালয়া। আর আশ্বিনের শুরুতে শুক্লপক্ষ, তার ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত দুর্গাপুজো। সহজ হিসেবে তাই মহালয়ার এক সপ্তাহ পরেই সপ্তমীপুজো। কিন্তু সহজ হিসেব কখন খাটবে না? আগেই বলেছি, চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডারে মাঝে মাঝে একটা বাড়তি মাস ঢুকিয়ে দিতে হয়। সেই বাড়তি মাসটা যদি ভাদ্র আর আশ্বিনের মধ্যে গিয়ে ঢোকে, তাহলেই ভাদ্রশেষের অমাবস্যার পরে এক মাস বাদ দিয়ে শুরু হবে আশ্বিন মাস। প্রতি বছর তা হতে পারে না, কেননা প্রতি বছর তো আর ১৩ মাসে হচ্ছে না! এমনকি, যে বছরে বাড়তি মাস ঢুকবে, সেই বাড়তি মাসটি যে ভাদ্র শেষ হওয়ার পরেই ঢুকবে এমনও কোনো কথা নেই। কিন্তু যদি ঢোকে, তাহলেই মহালয়ার পরে হপ্তা পাঁচেক অপেক্ষা করে থাকতে হবে দুর্গাপুজোর পথ চেয়ে। ১৪২৭ বঙ্গাব্দে ঠিক সেইটাই হয়েছে।

ব্যাপারটা একটু গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হতে পারে, তার কারণ বাংলা ক্যালেন্ডারে আমরা ভাদ্রের পরে অন্য কোনো মাস দেখছি না, পরিষ্কার দেখছি আশ্বিন। মনে রাখতে হবে, বাড়তি মাস ঢোকানোর কথা যা বলছিলাম, তা কিন্তু বাংলা মাসের কথা নয়। আগেই বলেছি, হিন্দুদের পুজোর দিনক্ষণ ঠিক হয় উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ক্যালেন্ডার মেনে। মুশকিল হলো, সেই ক্যালেন্ডারের মাসগুলো বাংলা ক্যালেন্ডারের মতো নয়, কিন্তু মাসের নামগুলো একই। সেই চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডারে যখন ভাদ্র মাস শেষ হচ্ছে ১৭ই সেপ্টেম্বরের অমাবস্যায়, তার পরে শুরু হচ্ছে অধিক মাস, অধিক আশ্বিন। সেই মাস শেষ হচ্ছে পরবর্তী অমাবস্যায়, গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের ১৬ই অক্টোবর তারিখে। তার পরে শুরু হচ্ছে সেই অন্য ক্যালেন্ডারের আশ্বিন মাস, যেটাকে তারা বলে আসল আশ্বিন, বা শুধুই আশ্বিন। তার শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত দুর্গাপুজো।

বাংলা ক্যালেন্ডার সৌর ক্যালেন্ডার, তা আগেই বলেছি। তার মাসগুলোও সৌর মাস। যে কোনো বাংলা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেই দেখবেন, তার প্রতি মাসের পয়লা তারিখে চান্দ্রতিথি এক নয়। সৌর ক্যালেন্ডারে সেইটা হওয়াই স্বাভাবিক, অধিক মাসও সেখানে অবান্তর। তাই বাংলা ক্যালেন্ডারে ভাদ্র আর আশ্বিনের মধ্যে বাড়তি কোনো মাস নেই। ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ভাদ্র শেষ হচ্ছে অমাবস্যার এক দিন আগে, গ্রেগরীয় হিসেবের ১৬ই সেপ্টেম্বরে। তার পরদিন শুরু হচ্ছে বাংলা ক্যালেন্ডারের আশ্বিন মাস। সেটা শেষ হচ্ছে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের ১৭ই অক্টোবরে। তারপর শুরু হচ্ছে বাংলা ক্যালেন্ডারের কার্তিক মাস, সেই মাসের ৫ তারিখে ষষ্ঠীতে দুর্গাপুজোর বোধন।

প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন ঠিক ভাদ্রের পরেই আসতে হলো অধিক মাসটিকে? এ প্রশ্নের উত্তরে ব্যবহার করতে হবে সেই শব্দটি, যা আগেই একবার ব্যবহার করেছি। বলতে হবে - এই মাসটি মলমাস, তাই অধিক মাস। আবার তাহলে ঘুরে আসবে সেই একই প্রশ্ন, মলমাস কী?

সঙ্গের ছবিটার দিকে তাকালে এ প্রশ্নের উত্তর বুঝতে সুবিধে হবে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের খানিকটা সময় জুড়ে গ্রেগরীয়, বাংলা এবং ভারতীয় চান্দ্রসৌর, এই তিনটি ক্যালেন্ডারে কখন কোন মাস শুরু হয়েছে, তা এতে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেগরীয়টা শুধুই বুঝবার সুবিধের জন্য, আসল আলোচনা বাকি দুটো ক্যালেন্ডার নিয়ে।

আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, বাংলা এবং চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডারের মাসের নামগুলো এক হলেও মাসের সময়গুলো এক নয়। দুটো ক্যালেন্ডার চলেছে যে যার নিজের চালে। ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, চান্দ্রসৌর ভাদ্র শুরু হয়েছে বাংলা ভাদ্র শুরু হওয়ার একটু পরে, শেষ হয়েছেও বাংলা আশ্বিন শুরু হওয়ার পর। অধিকাংশ মাসের বেলাতেই গল্পটা এই রকমই হবে, অর্থাৎ চান্দ্র মাস শুরু হবে সৌর মাসের কোনো একটা সময়ে, শেষ হবে তার পরের সৌর মাসে।

কিন্তু মাঝে মাঝে অন্যথা হবে। চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডারের ভাদ্রর পরের যে মাসটি, যেটির কোনো নাম লেখা হয়নি ছবিতে, সেটির দিকে তাকানো যাক। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এ মাসটি শুরু হয়েছে সৌর আশ্বিনে, শেষও হয়েছে সৌর আশ্বিনেই। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে একটি চান্দ্র মাস পাওয়া গেলো, যার দুই প্রান্ত দুটো সৌর মাসে নয়, একই সৌর মাসে। এই রকম মাসকেই বলা হয় মলমাস। এ রকম মাস থাকবেই, কেননা চান্দ্র মাসগুলো লম্বায় ছোটো সৌর মাসের চেয়ে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ঠিক এই ঘটনাটাই আমরা ঘটতে দেখছি। মলমাসে পুজো হবে না, হবে পরবর্তী মাসে।

মহালয়ার পাঁচ সপ্তাহ পরে পুজোর ব্যাপারটা তাই অকল্পনীয় তো নয়ই, অভূতপূর্বও নয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দেও ঘটেছিলো ঠিক একই ঘটনা। সেই বছরে, আর এই ২০২০-তে, সৌর এবং চান্দ্র মাসগুলো গ্রেগরীয় তারিখে কবে কবে শুরু হয়েছিলো, তা সাজিয়ে দেওয়া হলো একটা ছকে।

দেখা যাচ্ছে, সৌর বৈশাখের মধ্যে শুরু হয়েছিলো একটিই চান্দ্র মাস, তা হলো চান্দ্র বৈশাখ। জৈষ্ঠ্য থেকে ভাদ্র, প্রতিটি সৌর মাসেই একটি করে চান্দ্র মাস শুরু হয়েছে। কিন্তু সৌর আশ্বিনের মধ্যে শুরু হয়েছে দুটি চান্দ্র মাস - একটি একেবারে গোড়ার দিকে, আর একটি শেষ দিকে। তাহলে এর মধ্যে প্রথম যে চান্দ্র মাসটি, তার অবস্থান পুরোপুরি সৌর আশ্বিনের মধ্যে। তাই সেটি মলমাস। এটিকে চান্দ্র আশ্বিন বলা যাবে না, এটি অধিক আশ্বিন। এর পরে, অর্থাৎ সৌর আশ্বিনের প্রায় শেষের দিকে যে চান্দ্র মাসটির শুরু, সেটি চান্দ্র আশ্বিন। দুর্গাপুজো সেই মাসে, মহালয়ার পাঁচ সপ্তাহ পরে। ২০০১-এও, ২০২০-তেও।

কেন এরকম হিসেব মিলে গেলো ১৯ বছর পরে? তার কারণ, সৌর বছরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৪২২ দিন, তাই ১৯ বছরে ৬৯৩৯.৬০১৮ দিন। চান্দ্র যুতিমাসের দৈর্ঘ্য আগে দিয়েছি, তা দিয়ে যদি ভাগ করা হয়, তাহলে পাওয়া যায় ২৩৪.৯৯৭। অর্থাৎ ১৯টি সৌর বছরে প্রায় কাঁটায় কাঁটায় ২৩৫টা চান্দ্র মাস। চান্দ্রসৌর ক্যালেন্ডারে তাই ১৯ বছরে ২৩৫টা মাস আসে, অর্থাৎ ১৯×১২ বা ২২৮-এর সঙ্গে সাতটা অধিক মাস ঢোকানো হয়। চান্দ্রসৌর আর সৌর ক্যালেন্ডারের আবর্তন তাই ১৯ বছর পর পর মোটামুটি মিলে যায়। ২০০১ আর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের তারিখগুলো দিয়ে যে ছক দেওয়া হয়েছে, তাতে এই মিল পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

তাহলে কি ২০০১-এর আগেও ঘটেছিলো এমন ঘটনা? হ্যাঁ, ১৯ বছর আগে, ১৯৮২-তে। ২০২০-র ১৯ বছর পরে, ২০৩৯ খ্রিষ্টাব্দে আবার এরকম ঘটবে? চোখ-কান বুজে বলে দেওয়া যেত ঘটবে, যদি ১৯টা সৌর বছর আর ২৩৫টা চান্দ্র মাস এক্কেবারে সমান হতো। আগেই বলেছি, সামান্য হলেও তফাত আছে, ০.০০৩ মাসের, মানে ২ ঘণ্টার মতো। প্রত্যেক ১৯ বছরে দু'ঘণ্টা করে তফাত জমতে জমতে যখন অমাবস্যা সরে যাবে ১ দিন, তখন এরকম ব্যাপার আর ঘটবে না। অধিক আশ্বিন না হয়ে ভাদ্র যদি অধিক হয়, তাহলে মহালয়া এবং দুর্গাপুজো দুটোই সরে যাবে পেছন দিকে, মাঝখানে ফাঁক হয়ে যাবে না। ২০৩৯-এই সেরকম হবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যতোটা আঁকজোক করতে হবে তা আমি করে দেখিনি।