আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ দ্বাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ● ১৬-৩০ ভাদ্র, ১৪২৭
প্রবন্ধ
রাম নামের ফাঁস
অর্ক দেব
‘হিন্দু’ স্বপ্ন সত্য হল। হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পথে যে ফলকগুলি স্থাপন জরুরি, তার প্রধানতমটি স্থাপিত হল অযোধ্যায়। রামমন্দির শিলান্যাসের মঞ্চ থেকে হিন্দুকুলতিলক বরাভয় দিয়ে ফের বললেন, নতুন দিন আসছেই। কেমন সেই নতুন দিনের ধারণা, নতুনত্বের যে ইশারা-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তা ভারতাত্মার জন্য কতটা শুভ, তা খতিয়ে দেখাই এই আলোচনার উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক নতুন দেশগঠনের প্ৰশ্নে বারংবারই জোর দিয়ে এসেছেন (অন্তত মুখে বলেছেন) একাত্মতা বোধ বিষয়টিতে। দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে জাতীয়তাবাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। ভারতবর্ষের আবহমান ইতিহাস-সঞ্জাত ধারণায় জাতীয়তাবাদ মানে, বর্গনিরপেক্ষ ভাবে দেশের সমস্ত মানুষই এক সত্তা- এই অনুভব। দেশের মধ্যে থাকা বহু বর্ণের, বহু ধর্মের মানুষ নিজেদের যাপনের পার্থক্য নিয়েই যাতে নিজেকে সানন্দে মেলে ধরতে পারেন, আশ্রয়ের একটি চাদর যাতে নিরপেক্ষভাবে সকলের জন্য মেলে ধরা থাকে, সেই প্রত্যয়েরই নাম জাতীয়তাবাদ। কিন্তু আমাদের এই বোঝাপড়া আবারও ধসিয়ে দিচ্ছে করোনা আবহে দেশের ঘটনাপরম্পরা।
কোভিডের বাড়বাড়ন্তের দিনগুলিতে বারবার ছাতি ফোলানো কথা শুনতে পাওয়া গিয়েছে দেশের গণমাধ্যমগুলিতে। প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবিলার হরেক নিদান নিয়ে এসেছেন। কখনও বলেছেন, থালাবাটি বাজিয়ে শুভ শক্তি জাগরণের কথা, কখনও নিজেই অকালদীপাবলি পালন করেছেন। সম্প্রতি তাঁর বলা কথার একটি অংশ তুলে দিতে চাইব এখানে। ৩০ জুন, ২০২০, নরেন্দ্র মোদীকে কৃষক বিষয়ক আলোচনায় বলতে শোনা যায়, "বর্ষা ঋতুতে কৃষি ক্ষেত্র ছাড়া অন্যত্র কাজ কম হয়। অথচ এই সময় থেকেই উৎসবের পরিবেশ শুরু হয়ে যায় দেশে। সামনেই গুরুপূর্ণিমা। এর পরে শ্রবণী উৎসব, রাখি পূর্ণিমা আর তার কিছুদিন পরেই চলে আসবে শারদীয়া। বিহু থেকে ছট, গনেশ চতুর্থী থেকে দুর্গা পুজো, দিপাবলীতে মেতে উঠবে দেশ।" প্রধানমন্ত্রী এই কথা যখন বলছেন তার কয়েক সপ্তাহ বাদেই ঈদ। তাঁর মুখে আসেনি সেই উৎসবের কথা, আসেনি অন্য কোনও ধর্মীয় উৎসবের প্রসঙ্গও। ফলে প্রশ্ন জাগেই, জাতীয়তাবাদ কি তবে এত একমনা? দেশের অন্নদাতা কৃষকসমাজের সকলেই কি হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত? জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, দেশের কোনো নাগরিককেই আনুগত্য প্রকাশের আলাদা দায়ভার বহন করতে হবে না। একই মসনদে আজ যাঁর উত্তরাধিকার তাঁর বাচনভঙ্গিমা অন্য। পোষাক- খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির মাধ্যম অপর বাছাই করার চালু অভ্যেসে তিনি সর্বদাই দেশের এক পঞ্চমাংশ নাগরিকের বিষয়ে মৌন। এর পাশাপাশি গুজরাট থেকে শুরু হয়ে দিল্লি দাঙ্গা, গোরক্ষার নামে দেশে চলা সংখ্যালঘু নিধন গণস্মৃতিতে নিশ্চয়ই ‘নতুন’ দিনের মাপকাঠি হিসেবে ইতিমধ্যেই জ্বলজ্বল করছে।
শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, রামমন্দির স্থাপনের প্রধান উদ্যোক্তা যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যায় স্পষ্টই বলে দিচ্ছেন, একজন হিন্দু সাধু হয়ে তিনি মসজিদ উদ্বোধনে যেতে পারবেন না। ভুলে গেলে চলবে না, আদিত্যনাথ একজন নাথপন্থী। নাথপন্থার শুরুয়াত নবম দশকে মৎসেন্দ্রীয়নাথ ও গোরক্ষনাথের হাত ধরে। শৈবতত্ত্ব, হটযোগে বিশ্বাসী নাথপন্থীরা দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতেন। কবীর নামদেবের ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মবোধ করতেন। তন্ত্রপ্রভাবে এঁরা কৌলমার্গী। গুহ্য সাধনবাদ থেকে উদ্ভূত নাথধর্ম, বৌদ্ধ সহজযানীদের মতো বর্ণাশ্রমকে অস্বীকার করেছে। বলা চলে, হিন্দু ধর্মের প্রচলিত স্রোতের সঙ্গে এই প্রচারকদের মোটেই সহাবস্থান ছিল না। ফলে আদিত্যনাথ নিজেকে যে ভাবে হিন্দু সন্ন্যাসী বলে প্রোজেক্ট করে চলেন, তা আফিম হিসেবে উঁচুদরের, নাথসন্ন্যাসীদের নিরিখে ইতিহাসগত ভাবে সত্য নয়।
ভোটপর্বে নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ছিল-সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। কিন্তু করোনা অতিমারীর সময় আরও প্রকটভাবে বোঝা যাচ্ছে, বিদ্বেষের রাজনীতি সকলের ভালোর পথে অন্তরায় হয়েই থাকে। বরং দুর্বল সময়ে আরও নৃশংস দৃষ্টান্ত তৈরি করে। করোনার পর্বে এমন তিনটি নৃশংসতার খতিয়ান এখানে প্রমাণস্বরূপ রাখা থাক -
ক. যোগীরাজ্যেই তাজমহল লাগোয়া ছোট গ্রাম কাকড়পুর। এই গ্রামের বাসিন্দা রাহুল বাজানিয়া বলে এক দলিত ব্যক্তির স্ত্রী বিয়োগ হয় এই করোনাপর্বেই। স্থানীয় শ্মশানে স্ত্রীর অন্ত্যোষ্টি শুরু হলে ২০০ জন হিন্দু রাহুল বাজানিয়াকে বাধা দেন, বলেন চিতা থেকে আধপোড়া দেহ নামাতে হবে। কেননা এই শ্মশান কেবল মাত্র উচ্চবর্ণের হিন্দুর জন্য সংরক্ষিত।
খ. রামমন্দিরের শিলান্যাসের ঠিক চার দিন পরে রাজস্থানের ৫২ বছর বয়সি রিক্সাওয়ালা গফফর আহমেদ কাচওয়াকে ‘জয় শ্রীরাম’, মোদী জিন্দাবাদ বলার জন্য জোরজুলুম শুরু করা হয়। তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং পাকিস্তান চলে যেতে বলা হয়।
গ. ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের পরের দিনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীরে এক পশুপালক মহম্মদ আসগরকে ধরে রেখে গণধোলাই দিচ্ছে উন্মত্ত জনতা। ভিডিওটিতে স্পষ্ট শোনাও যাচ্ছে, স্লোগান উঠছে, "দেশ কি গদ্দারও কো গোলি মারো সালো কো।" অভিযোগ, আসগর নিজের গবাদি পশুকে বাড়িতে ফেরানোর সময় নাকি আঘাত করেছিল। শিবঠাকুরের দেশের আইন, বিচারের আগেই শাস্তি। তাই সালিশি সভায় তাকে ডেকে, ফেলে পেটানো হল।
উপরে উল্লেখিত কোনও ঘটনাই নতুন নয়, পুনরাবৃত্তি মাত্র। গোরক্ষা, রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার স্বরূপ গত ছয় সাত বছর ধরে এই দেশে এমনই। আসগর আলি, মহম্মদ আখলখ, তবরেজ আনসারি, কালান্তুস বার্লা, ফিলিপ হোরো ও ফাগু কাচ্চাপ, গণপিটুনির কবলে পড়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ। পশ্চিবঙ্গেও শাহরুফ হালদার নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে ব্যাপক মারধর করা হয় গত বছর। কিন্তু এই মুহূর্তে উপরে উল্লেখিত ঘটনাবলীর অন্য তাৎপর্য রয়েছে। সেকুলার দেশে গণতন্ত্রের দাফন নিয়ে যেসব রাজনৈতিক দলগুলি একসময় তর্ক তুলেছিল, তাঁরা একই সঙ্গে হঠাৎই অযোধ্যা বিষয়ে মৌনব্রত পালন করছে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ যে দেশ-কাল ব্যতিরেকে অভিশাপ, গণতন্ত্রের এই মুহুর্মুহু অবক্ষয় যে আসলে আমাদের ঔপনিশেক দ্বিজাতি তত্ত্বের ক্রুশ বইতে বাধ্য করবে, নতুন দিনে নিয়ে যাওয়ার বদলে পশ্চাদগমন হবে, তা ব্যখ্যা করে বলার দায় নেই কোনও দলেরই। কেন নেই?
সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট হারানোর ভয়ে যদি সাংবিধানিক ভাবে সেকুলার দেশের রাজনৈতিক দলগুলি এভাবে মৌন হয়ে যায়, তবে তা স্পাইরাল অফ সাইলেন্স তত্ত্বকে মান্যতা দেয়। ১৯৭৪ সালে এই তত্ত্বটির জন্ম দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এলিজাবেথ নোলেন নিউম্যান*। তিনি দেখান, অনেক সময়েই জনপরিসরে নিজের মতামত খারিজ হওয়ার ভয়ে, একঘরে হওয়া আটকাতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জনস্বার্থবিষয়ক নানা বিষয়ে চুপ করে থাকেন। ফলে ভিন্নমতের গুরুত্ব ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। পরবর্তীতে শেরিস গিয়ারহার্ট এবং ঝ্যাং ইইউর গবেষণা এই বিষয়টিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে এসেছে। তাঁরা দেখাচ্ছেন, সমাজের নামীদামি ব্যক্তিরা বা জননেতারা একটি বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য পেলে, বা সমলোচিত হওয়ার ভয়ে ভীত হলে সেই বিষয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন। এর ফলে একদিকে যেমন প্রশ্রয় পায় লিঞ্চিংয়ের সংস্কৃতি, অন্য দিকে বুক ফুলিয়ে হিন্দু জাতীয়বাদের ধ্বজা তুলে ধরলে তাই একমাত্র নির্বিকল্প সত্য বলে মর্যাদা পেতে শুরু করে। একটি প্রবণতার কথা এখানে উল্লেখ করা জরুরি। তবলিগি জামাতের বেআইনি জমায়েত নিয়ে ব্যাপক পরিমাণ সম্প্রচার হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বাত্মক ঘৃণার চাষ চলেছে। মাস ঘুরতেই দেখা গিয়েছে মন্দির খুলতেই তিরূপতির সেবায়তরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু তা সম্প্রচারও হয়েছে রেখেঢেকে। কেউ এই সময়ে ধর্মস্থান খোলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নও তোলেনি।
ধর্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তা ইতিহাসকে পড়ার যুক্তিনিষ্ঠ চশমাটি খুলে রাখতে বাধ্য করে। আমরা ক্রমেই দেখি, সত্যের থেকে বিশ্বাস বড় হয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ আদালত যখন অযোধ্যা রায় দিচ্ছে প্রতিতুলনা করা হচ্ছে একটি বিশ্বাসের সঙ্গে একটি তথ্যের। ভালো খারাপের প্রশ্ন নয়, প্রশ্নটা হল এই প্রবণতা একটি ডিসিপ্লিনের চলনকেই রুদ্ধ করে। বাবরি মসজিদ যে বাবরের তৈরি করা একটি বিশেষ ইসলামিক ঘরানার স্থাপত্য তা মানতে ইসলাম-বিরোধিরাও দ্বিধা করবেন না, কারণ তারা তার মাথায় উঠে তুর্কিনাচন নেচেছিলেন। অন্য দিকে রামজন্মভূমির গোটা ধারণাটি ভাবাবেগ। রাম যদি ত্রেতার পুরুষোত্তম হন তবে তার জন্ম ৮০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের আশেপাশে। ভাবাবেগের কাছে যুক্তি হেরে যায়। ডিএন ঝা, আর এস শর্মা, এম আথার আলির মতো প্রশিক্ষিত ইতিহাসবিদদের চিন্তা ফুৎকারে নস্যাৎ হয়ে যান। গভীর চিন্তা চেতনার কী পরিমাণ অবমূল্যায়ণের দৃষ্টান্ত তৈরি হয় এই ধরনের ঘটনায় তা নিয়েও ঐতিহাসিক মহলে কথা হচ্ছে, চর্চার জগতে আড়েবহরে বাড়ছে বিষাদ।
ভাবতে হবে, রামের নামে তিনদশক ধরে চলে আসা এক রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত দাফন হচ্ছে এক মুষলপর্বে। বর্গের সঙ্গে বর্গের দ্বন্দ্ব ভয়াল ভাবে রয়েছে, তার সঙ্গে জোঁকের মত চেপে ধরেছে ভয়। কাজ হারানোর ভয়, নতুন করে কাজ পাওয়ার দুশ্চিন্তা, দীর্ঘ দিনের অর্জিত স্কিলসেটকে ফেলে অন্য একটি কাজে যাওয়ার দ্বিধা সমাজের নানা আর্থসামাজিক স্তরের মানুষের চোখের তলায় কালি ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃত অবস্থা ভুলিয়ে দিতে হিন্দুরাষ্ট্রের ধ্বজা তুলে ধরা একদিকে যেমন প্রকৃত ক্ষতটি থেকে নজর সরানো, অন্য দিকে তা খুব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না একথা শাসক ভালই জানে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার কথা বাদ দিচ্ছি, এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে নানা ধরনের সংগঠিত ক্ষেত্রের ৩০ লক্ষ কর্মী ৮ হাজার কোটি টাকা অগ্রিম তুলে ফেলেছেন, কাজ হারিয়েছে। সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু জুলাই মাসেই কাজ হারিয়েছেন দেশের ৫০ লক্ষ বেতনভুক কর্মী। এই অবস্থায় চিড়ে ভেজাতে ঘরেতে রাফাল এল গুনগুনিয়ে। রাফালও একটি দুর্নীতির পর্বতপ্রসব। অনেকেই মনে করতে পারবেন রাফাল ক্রয়ের ইতিবৃত্ত। মোট ১২৬ টি রাফাল বিমান কিনতে চেয়েছিল ইউপিএ সরকার। বিমানপ্রতি ৫৬৩ কোটি টাকা খরচ ধরে রাফাল ক্রয়ের পরিকল্পনা ভারত সরকার আগেই প্রায় স্থির করে ফেলেছিল। নরেন্দ্র মোদীর সরকার পুরোনো চুক্তিকে নাকচ করে ৩৬টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন চুক্তিতে স্থির হয়, প্রতিটি বিমানের দাম হবে ১৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিমানপ্রতি খরচের পরিমাণ এক লাফে বেড়ে যায় ১০০০ কোটি টাকারও বেশি। জনগণকে অন্ধকারে রেখে চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয় হিন্দুস্থান এরোনটিক্স লিমিটেড-এর মতো নামী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে। কিন্তু এসব জানা সত্ত্বেও অতীতে রাফালকে ভোট ইস্যু করতে পারেনি বিরোধীরা, আর সুযোগের সদ্ব্যাবহার করেছে শাসক। এখনও করছে। চিনের সঙ্গে সংঘাতের আবহে রাফাল দেশে আসায় মদগর্বে মত্ত দেশপ্রেমিকরা। যুদ্ধের জিগির মোদী জামানার শুরু থেকেই তুরুপের তাস। সকলেরই স্মৃতিতে উজ্জ্বল, পুলওয়ামা পর্বে দেশের সামরিক বাহিনীর কৃতকর্মের ডিভিডেন্ট ইভিএম-এ নেওয়ার জন্য জানকবুল মানকবুল করে খেটেছে শাসক শিবির।
কিন্তু ভেবে দেখলে রামজন্মভূমির শিল্যান্যাস যেমন অজুত সম্ভাবনার মৃত্যু, যেমন একটি ধর্মভত্তিক রাষ্ট্রের বুনিয়াদ, তেমনই একটি অজুহাতের মৃত্যুও। মন্দিরের পরে কী, উত্তর হতে পারে মন্দিরকেন্দ্রিক ট্যুরিজমের আর একটি শুরুয়াত। কিন্তু তারপর? কাজ হারানো, মহামারিতে প্রিয়জনকে হারানো, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ বাঁচতে চাইছে প্রবল ভাবে। নতুন দিনের গোল গোল বুলি, আর ধর্মের বাণীতে কারও কারও মন ভরলেও সকলের পেট ভরবে না। প্রজার অর্থে ভরা রাজকোষ থেকে প্রজাকেই দানের অন্ন পাইয়ে দেওয়া চলছে। মন্দিরের শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে, এবার প্রজা কিন্তু জানতে চায়, কাজ দিতে পারবে তো সরকারবাহাদুর?
Gearhart, Sherice; Zhang, Weiwu (2015-04-16). "Was It Something I Said?" "No, It Was Something You Posted!" A Study of the Spiral of Silence Theory in Social Media Contexts". Cyberpsychology, Behavior, and Social Networking.