আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ একাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ আগস্ট, ২০২০ ● ১-১৫ ভাদ্র, ১৪২৭

সমসাময়িক

হাসপাতালে হয়রানি অথবা স্বাস্থ্য ব্যবসা


দেখতে দেখতে একশো ষাট দিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু ১১ মার্চ ২০২০ করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণকে মহামারী আখ্যা দেওয়ার পর সত্যি সত্যিই ১৬০ দিন পেরিয়ে গেছে। ভারত সরকারের হিসেবে ১৪২ দিন। আর পশ্চিম বাংলায় ১৪৪ দিন। এই সময়সীমায় দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ লক্ষের বেশি মানুষ। রাজ্যে ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এবং এখন গড়ে প্রতিদিন ৬০ হাজারের মতো ভারতীয় আক্রান্ত হচ্ছেন। রাষ্ট্র অবিশ্যি সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তুষ্ট। খেয়াল থাকে না যে প্রতিটি নাগরিকের সুষ্ঠু চিকিৎসার এবং সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়।

দিনের পর দিন কেটে যায়। অবস্থা অথবা অ-ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। গণ সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করার জন্য নির্দিষ্ট দিশা এখনও নির্ধারিত হয়নি। আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন চুড়ান্ত বিভ্রান্ত। হু ধারাবাহিকভাবে নির্দেশিকা জারি করে চলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে হু সামাজিক দূরত্ব, প্রতি ঘন্টায় সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার ইত্যাদির উপর জোর দিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যায় যে পরামর্শগুলি বাস্তবসম্মত নয়। মানবসমাজের অধিকাংশই বিশুদ্ধ জল থেকে বঞ্চিত। বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্রের কারণে নিয়মিত সাবান এবং স্যানিটাইজার সংগ্ৰহ করতে অক্ষম। এবং বিধিসম্মত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেঁচে থাকা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই হু-র পরবর্তী পরামর্শে ক্রমশ অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে হু-র উপর ক্রমশ আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।

তালি-থালি-দিয়ালি গোছের উৎসব অথবা ব্রত পালনের মাধ্যমে সংক্রমণ দূর করার স্বপ্ন যাঁরা দেখিয়েছিলেন তাঁরাও এখন দিশেহারা। রাষ্ট্রীয় অবরোধ উদযাপন করে সাফল্য পাওয়া গেল কি না তার মূল্যায়ন না করেই বিচিত্র পন্থায় অবরোধের আগল খুলে দেওয়া হল। হাতে মজুত অজুহাত, - অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। ছয় বছরের মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামো যে বাস্তবে এত ভঙ্গুর তা যেন আগে জানা যায়নি। এই পরিসরে সমস্ত গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও সংসদীয় রীতিনীতি লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ত্রুটিবিচ্যুতি প্রকট হয়ে যাওয়ার পরেও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন করার কোনো প্রকল্প কিন্তু শুরু করা হল না। অথচ বিবৃতির শেষ নেই। বেশি কথা বলার ফলও হাতেনাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের বিবৃতির মধ্যে এতরকমের অসঙ্গতি বুঝিয়ে দিচ্ছে যে প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের বড্ড অভাব। অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মতো প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানও শক্তপোক্ত নয়।

পশ্চিম বাংলার অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রথম কয়েক সপ্তাহ, বিশেষ করে অবরোধ শুরুর দিনগুলোতে প্রশাসনিক প্রধান প্রতিদিন নিয়ম করে কলকাতার পথ পরিক্রমার সময় সংক্রমণ প্রতিরোধের নানানরকমের পরামর্শ দিচ্ছিলেন। কখনও মাস্ক পরার প্ৰয়োজনীয়তা কখনও আবার হাঁচি বা কাশির সময় মুখের সামনে হাতের কোন অংশ কীভাবে রাখতে হবে শেখাচ্ছিলেন। কখনও আবার লাল রঙের ইটের টুকরো দিয়ে রাস্তায় সাদা রঙের গোল্লা এঁকে বোঝাচ্ছিলেন লাইনে দাঁড়ানোর সময় কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। লাল ইটের টুকরো দিয়ে সাদা বৃত্ত এঁকে হয়তো তিনি বোঝাতে চাইলেন যে সাহিত্যের জাদুবাস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়ালিজম আর বাস্তবের জাদুর মধ্যে পার্থক্য নেই। সবমিলিয়ে সে এক অনবদ্য প্রহসনের প্রদর্শনী। টিভির পর্দায় নিয়মিত সেইসব কীর্তিকলাপ প্রদর্শিত হল। স্বাস্থ্য পরিষেবার কিন্তু কোনো উন্নতি হল না।

রাজ্যবাসীর নজরে এল রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিধিব্যবস্থার ফাঁকগুলি কত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই রাজ্যে গোড়া থেকেই পরীক্ষার স্বল্পতা বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জুলাইয়েও প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় সাত হাজারের কিছু বেশি পরীক্ষা হয়েছে এই রাজ্যে, যেখানে দিল্লি করিয়েছে এক লক্ষে ৪৩ হাজার, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু ২৫ হাজার। পরীক্ষা কম হওয়ার ফলে সংক্রমণের আন্দাজ পেতে দেরি হয়েছে। তিন মাস পার করে হঠাৎ কোনো এক সকালে নজরে এল কলকাতার আশপাশের জেলাগুলি সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হয়ে গেছে। কোথায় কোথায় গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে আগাম পূর্বাভাস থাকলে নিয়ন্ত্রণ সহজ হতে পারত।

পরীক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। অথচ পরীক্ষার ফল সরকারি নথিভুক্তির জন্য অপেক্ষা করবার বিধি তৈরি হয়েছে। পজিটিভ হলে তা রোগীকে জানানোর আগে স্বাস্থ্যভবনের অনুমতি নেওয়ার নিদান দেওয়া হল। সেই অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা স্থগিত। ফলে সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায়নি। এমনকি অস্ত্রোপচারের আগের মুহূর্তে স্বাস্থ্যভবনের মোহর লাগানো কাগজের অভাবে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মৃতদেহও শেষযাত্রার জন্য পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষারত, এমন সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশিকা প্রতিদিন তো বটেই কখনও কখনও একই দিনে একাধিকবার পাল্টিয়ে যাচ্ছে। কর্তব্যরত ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে তো বটেই যাঁরা নির্দেশিকা জারি করছেন তাঁদের পক্ষেও এত দ্রুত পরিবর্তনের খতিয়ান রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে গেলেই চিকিৎসার আগেই রোগীকে স্বাস্থ্যভবনের মোহর লাগানো কাগজ দেখাতে বলা হচ্ছে। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেই মানুষ ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যায়। ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা হয়। কিন্তু এখন এই রাজ্যে চলছে বিপরীত প্রক্রিয়া। কোভিড-১৯-এর পরীক্ষার ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত কোনো চিকিৎসার সম্ভাবনা নেই। কোভিড-১৯-এর পরীক্ষার পরামর্শ কে দেবে? ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া কি পরীক্ষা করানো সম্ভব? ঘোড়ার আগে গাড়ি না গাড়ির আগে ঘোড়ার মতো চিরায়ত প্রশ্নের উত্তর যেমন অমীমাংসিত পশ্চিম বাংলার স্বাস্থ্য পরিষেবাও এখন সেইরকম এক অমীমাংসিত প্রশ্নের সম্মুখীন। ফলাফল, - কোথাও হাসপাতালের সামনে অপেক্ষারত রোগী মারা যাচ্ছে কোথাও আবার রোগীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে মানসিক উদ্বেগ নিয়ে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। আর সাধারণ অসুখবিসুখে মানুষ হাসপাতালের ধারেকাছে ঘেঁষছে না। সরকারও পরামর্শ দিচ্ছে ডাক্তারের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। টেলিফোন মারফত ডাক্তারের পরামর্শ নিলেই চলবে। আতঙ্ক ও হতাশার এই আবহে হাসপাতালে যাওয়াকে প্রায় নিষিদ্ধ করার ফলে বহু রোগীই যথার্থ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি দৃষ্টান্ত - পশ্চিম বাংলায় অনূর্ধ্ব-৬০ বৎসর বয়সিদের তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি মৃত্যু ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ অনুসন্ধানের খবর পাওয়া গেছে কি? রাজ্য বা কেন্দ্র, সকলের কাছেই এই তথ্য রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক নেতৃত্বের সঙ্কট এইখানেই যে, সেইসব পরিসংখ্যান রাজনৈতিক চাপান-উতোরের উপাদান হয়েছে মাত্র। যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে আরও কার্যকর বিধি তৈরি করার সূত্র হয়ে উঠতে পারেনি।

চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে কোভিড-১৯-এর দ্রুত পরীক্ষা রাজ্যে শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একেবারেই ‘না হওয়ার থেকে দেরিতে হলেও ভালো’, এই কথাটি এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই ব্যবস্থা অনেক আগেই করা যেতে পারত। কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিরোধী দলগুলি অনেক আগে থেকেই এই প্রস্তাব পেশ করে যাচ্ছিল। বিরোধী পক্ষের প্রস্তাব মানলে সরকারের সম্মানহানি হয়! অথচ যা সাধ্যায়ত্ত, তার অভাবে যদি একটিও প্রাণ চলে যায়, তবে সেই অতি-বিলম্ব, বঞ্চনারই শামিল। আর্তের অবহেলা দৈনন্দিন প্রত্যক্ষ করলে নাগরিকের আস্থায় ঘাটতি পড়ে এবং সঙ্কটকে ঘনীভূত করে। কোভিড-১৯ পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালে চিকিৎসা, বিধি-ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি প্রতিদিনই স্পষ্ট হচ্ছে। সেগুলি থেকে শিক্ষা নিতে পারলে পরবর্তী রোগীদের হয়রানি হয়তো খানিকটা কমতে পারে।

সরকারি হাসপাতালের উপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলি রাজ্য সরকারের কোনো নির্দেশ মেনে চলে কি? এই প্রশ্নের ভিত গড়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশনের একের পর এক নির্দেশিকার পরেও বেসরকারি হাসপাতালগুলির উদাসীনতা। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে নৈর্ব্যক্তিক আচরণ মনে হলেও বাস্তবে চলছে লুটতরাজ। বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষ রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগেই যাচাই করে নেয় রোগীর বীমার কাগজপত্র, ব্যাঙ্কের খাতা। যারা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করতে পারে তাদের কাছে এর থেকে বেশি কেউ আশাও করে না। সামাজিক সঙ্কটের সময়ও তারা জাঁকিয়ে ব্যবসা করে চলেছে। রাজ্য সরকারের প্রশাসনের চোখের সামনে প্রতিদিনই এই সমস্ত ঘটনা নির্বিবাদে ঘটে চলেছে। রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশিকা যেন বেসরকারি হাসপাতালগুলির সেই বেপরোয়া মানসিকতাকে মান্যতা দিয়েছে। কারণ এই বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচে রাশ টেনে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। স্বাস্থ্য কমিশন পৃথকভাবে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তাতে সরকার অধিগৃহীত হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশিকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য যে ন্যূনতম খরচ ধার্য করা হয়েছে তা সারা দেশের নিরিখে সর্বোচ্চ। এইসব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বোধ হয় নজরে আসে না যে স্বাস্থ্য পরিষেবা নাগরিকের অধিকার; তা নিয়ে বাণিজ্য করা সঙ্গত নয়। অ্যাম্বুল্যান্স সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক পরিষেবা ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।

ডাক্তার নার্স সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ বিরোধী যুদ্ধের অগ্রগামী সৈনিক আখ্যা দিয়ে ভালো ভালো কথা বলা এখনকার রীতি। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? একটানা দশ বারো দিন হাসপাতালে দিবারাত্র কাজ করার পর তাঁদের যখন কয়েকদিনের জন্য বাধ্যতামূলক নিভৃতবাসে যেতে হচ্ছে তখন তাঁরা কী অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন? ভাড়া বাড়িতে বাসস্থান হলে অনেকেই উঠে যাওয়ার হুমকি পাচ্ছেন। কোথাও আবার পাড়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্বের প্রচার এত বেশি তীব্রতা পেয়েছে যে সামাজিক সংহতি নামের মৌলিক মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ডাক্তার নার্স সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন যাপন প্রক্রিয়া আজ বিপন্ন। অথচ প্রশাসন নির্বিকার।

যুদ্ধক্ষেত্রে কর্তব্যরত সৈনিকের মৃত্যু হলে রাষ্ট্র তাঁকে শহিদের সম্মান প্রদর্শন করে। আর সংক্রমণ বিরোধী লড়াইয়ে যাঁরা প্রাণ হারাচ্ছেন তাঁদের জন্য রাষ্ট্র বা রাজ্য নৈর্ব্যক্তিক আচরণ করছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে দেশে ২০০ জনেরও বেশি ডাক্তারের মৃত্যুর পরেও হুঁশ নেই। তাঁদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কর্তব্যরত ছিলেন। তাঁদের পরিবার কোনোরকম বীমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। রাজ্যে মারা গেছেন ২০ জন। বেশিরভাগই বেসরকারি হাসপাতালগুলির ডাক্তার। এখানেও একই অবস্থা। অথচ বেসরকারি হাসপাতালগুলি এইসব ডাক্তারদের সুনাম ভাঙিয়ে প্রচার চালায়। রাজ্য প্রশাসন হয় চোখ বুজে সবকিছু সয়ে যাচ্ছে অথবা এই অমানবিক আচরণের অংশীদার।

এখানেই রাজ্য প্রশাসনের অপকর্মের তালিকা শেষ হয়ে গেলে হয়তো ভালো হত। কিন্তু শেষ হইয়াও যেন হয় না শেষ। অপকর্ম এবং অপদার্থতার যে শেষ নেই। প্রতি সন্ধ্যায় ঘটা করে নিয়ম মেনে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ একটি বুলেটিন প্রকাশ করে। এই বুলেটিনে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের যাবতীয় খবরাখবর দেওয়া থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি হাসপাতাল এবং চিকিৎসাকেন্দ্রে কতগুলি শয্যা আছে এবং তার মধ্যে কতগুলি খালি রয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ এই বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়। ভালো উদ্যোগ। এই বুলেটিনে রাজ্যসরকার স্বীকৃত প্রতিটি কোভিড-১৯ চিকিৎসার হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতিদিনের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই তালিকায় যখন কোনো ব্যক্তি বিশেষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় তখন বিস্ময় নয় বিরক্তির উদ্রেক হয়। কোনো এক মডেল স্কুলও এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমনকি কোনো লজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামও এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এইসব কাণ্ডকারখানা দেখে পরিস্কার বোঝা যায় যে এখানে একটা অপদার্থ শুধু নয় একটা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের রাজত্ব চলছে।

সংক্রমণ ভয়ে সমাজ এখন সন্ত্রস্ত। শাসক ভুলে যায় সন্ত্রস্ত আর মরণাপন্ন কথা দুটির মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। খাদ্যহীন, কাজছাড়া, কাজহারা, বাস্তুহারা মিলিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ চিকিৎসার অভাবে মরণাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে গেলে মরার আগে কিন্তু বাঁচার বাসনায় একটা চূড়ান্ত হেস্তনেস্ত করে যেতে চায়। শাসকের খেয়াল থাকে না যে এটাই সমাজসভ্যতার স্বাভাবিক পরিণতি।