আরেক রকম ● ত্রয়োদশ বর্ষ অষ্টম সংখ্যা ● ১৬-৩০ এপ্রিল, ২০২৫ ● ১-১৫ বৈশাখ, ১৪৩২

প্রবন্ধ

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অঘোষিত জরুরি অবস্থা

গৌতম লাহিড়ী


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হল ‘ছাত্র-জনতা’র অভ্যুত্থানের পর। হাসিনা দেশত্যাগী হয়ে বর্তমানে ভারতে আশ্রিত। ক্ষমতায় এলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর বাংলাদেশের সরকারি তাঁবেদাররা বলতে শুরু করল এতদিনে বাংলাদেশ গণমাধ্যম মুক্তি পেল - এখন গণমাধ্যমের উপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই।

ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর ১৮ জন সাংবাদিক কারাবন্দি - এদের বিরুদ্ধে আছে খুনের মামলা। এদের কেউ কেউ সম্পাদক। একজন সম্পাদক ক্যান্সার রোগী - তাঁর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন দু’মাস তারা প্রয়োজনীয় জীবনদায়ী ওষুধ রোগীকে পৌঁছে দিতে পারেননি - জেল সুপার অনুমতি দেননি। গত বছরের তীব্র শীতের সময়ে এদের গরম কম্বল দেওয়া হয়নি। তাঁদের অপরাধ তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী - সেই কারণে হাসিনা অনুগামী। হাসিনার সর্বশেষ সাংবাদিক বৈঠকে এই সম্পাদক ইউনূসের আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।

এইসব সাংবাদিকদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। দু'মাস অন্তর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। এদের জীবিকা বিপন্ন। পরিবারগুলি অর্থাভাবে ভুগছে। এছাড়াও ৩০০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। এই কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সমীক্ষা সংস্থা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক তৈরি করে, তাতে বাংলাদেশের স্থান ১৬৫। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থাগুলি মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বারবার সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। তিনি কর্ণপাত করছেন না।

শেখ হাসিনার শাসনকালে কিছু গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ করা বা আটক করার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তা এখনকার মতো গণহারে হয়নি। গণমাধ্যম কর্মীদের হাসিনাপন্থী লেবেল দিয়ে কর্মচ্যুত করা হচ্ছে। এমনকী শারীরিকভাবেও আক্রমণ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থার আরেকটি সমীক্ষা অনুযায়ী -
• ৬০০ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রুজু করা হয়েছে।
• এখনও পর্যন্ত ৬ জন বরিষ্ঠ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
• চোরাগোপ্তা আক্রমণে একশ'র বেশি সাংবাদিক আহত।
• ১ হাজারের বেশি সাংবাদিক কর্মচ্যুত।
• ৫০-এর বেশি গণমাধ্যম হাউসের উপর আক্রমণ করা হয়েছে।
• ৯৬ জন সাংবাদিকের কাছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
• ১৮ জন সাংবাদিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
• ১৬৮ জন সাংবাদিকের সরকারি পরিচয়পত্র বাতিল করা হয়েছে।
• ৮৩ জন সাংবাদিকের প্রেস ক্লাব সদস্য পদ খারিজ করা হয়।

বেশিরভাগ গণমাধ্যম হাউসের সম্পাদকমণ্ডলী পরিবর্তন করে ইউনূসপন্থীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরাই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। অধিকাংশ মূল স্রোতের গণমাধ্যমের মাথায় এখন হয় জামাত অথবা বিএনপিপন্হী সাংবাদিক। এরাই সম্পাদকীয় নীতির নিয়ন্ত্রণ করছেন।

এটাই গণমাধ্যমের নয়া স্বাধীনতা।

বাংলাদেশে ইউনূস সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি হল গণমাধ্যম সংস্কার।বাংলাদেশে দুটি প্রধান গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এবং ‘বসুন্ধরা’ গ্রুপ। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এদের সংকুচিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাব করা হয়েছে এক গণমাধ্যম হাউসের হাতে একটি গণমাধ্যম থাকবে। এই মুহূর্তে এদের হাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম রয়েছে। এতে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

আজকে যারা ইউনূস সরকারকে সমর্থন করেন কালকে কিন্তু এই গণমাধ্যম নীতির কারণেই ইউনূস-বিরোধী হয়ে উঠতে পারেন।