আরেক রকম ● ত্রয়োদশ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা ● ১৬-৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ ● ১-১৫ মাঘ, ১৪৩১
প্রবন্ধ
ইউজিসি-র খসড়া বিধি-২০২৫: উচ্চশিক্ষায় বেসরকারিকরণের বার্তা স্পষ্ট
পার্থপ্রতিম বিশ্বাস
বছরের প্রথম দিনে ক্যালেন্ডার-এর নতুন বছরের দিনক্ষণ ছাপা হতেই উচ্চশিক্ষা সংস্কারে আরও এক পরিবর্তনের নজির গড়ল ইউজিসি, এদেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ামক সংস্থা। স্বভাবতই উচ্চশিক্ষার গুণমান রক্ষায় সদা জাগ্রত প্রহরীর ভূমিকায় থাকার কথা এই নিয়ামক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষকর্তাদের। কিন্তু শীতঘুম ভাঙার মতো বছরের শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে ইউজিসি যে খসড়া নীতি সুপারিশ করেছে তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বুদ্ধিজীবীদের। আত্মনির্ভর শিক্ষার হাঁক পেড়ে যখন মার্কিনী মডেলের শিক্ষাব্যবস্থার কপি-পেস্ট সংস্করণ হিসেবে শিক্ষানীতি এসেছিল দেশের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি হিসেবে, তখনই উত্তরোত্তর স্পষ্ট হচ্ছিল সরকারের এমন শিক্ষানীতি পরিবর্তনের চালিকাশক্তি নিহিত রয়েছে মূলত তিনটি স্তম্ভের উপরে। সেই নীতিগুলোর প্রথমটি হল বাণিজ্যিকীকরণ, দ্বিতীয়টি হল কেন্দ্রীকরণ এবং তৃতীয়টি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকীকরণ। কার্যত এমন তিনটি নীতি যে যুগপৎ কার্যকর হয়ে চলেছে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণের বিভিন্ন পর্ব জুড়ে সেটা স্পষ্ট হল সাম্প্রতিক ইউজিসি-র নোটিফিকেশনের মধ্যে দিয়ে।
ইউজিসি-র ২০২৫ খসড়া বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কেবল শিক্ষাবিদরা নয় এমনকি শিল্প পরিষেবা কিংবা সরকারি প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও বিবেচিত হবেন। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী দেশ এখন 'অমৃতকাল'-এর মধ্যে দিয়ে চলেছে। ফলে স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে শিল্পপতি কিংবা আমলাদের নিয়োগ করার ভাবনা কেন - প্রাথমিকভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরী।
প্রথাগত মাপকাঠিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যোগ্য শিক্ষাবিদের কি ঘাটতি রয়েছে দেশে? দেশের অধ্যাপক গবেষকদের সংখ্যা কিংবা গুণমান কোনোটাই উপাচার্য পদে শিক্ষকের ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে না। তাহলে কেন শিক্ষা জগতের বাইরের মানুষকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় বসানোর এই সরকারি উদ্যোগ? এমন উদ্যোগের পেছনে কার্যত রয়েছে শিক্ষার প্রসার ও মান উন্নয়ন সম্পর্কে সরকারি নীতির ভ্রান্ত দশা।
মনে রাখা দরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠন-পাঠনের সঙ্গে গবেষণা হচ্ছে এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান। আর পঠন-পাঠন ও গবেষণার মান উন্নয়নের পথ এবং শিল্প উন্নয়নের পথ যে গুণগতভাবে ভিন্ন একথা ইউজিসি-র শীর্ষকর্তাদের অজানা নয়। কিন্তু শিল্পের পুঁজি শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হলে চাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শিল্পপতির অংশগ্রহণ। ফলে শিক্ষায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় শিল্পপতি কিংবা আমলাকুলের নিয়োগের নীতি গ্রহণ করেছে দেশের সরকার। এদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালিত হয় Top-Down শৃঙ্খলার নীতিতে। ফলে এমন প্রতিষ্ঠানগুলির শীর্ষ পদে মনমতো পছন্দের মানুষকে বসাতে পারলে বহুলাংশের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়। সরকার পোষিত উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা থেকে যদি সরকার হাত গুটিয়ে নেয় তখন বেসরকারিকরণের পথে চলতে গেলে প্রয়োজন শিল্পের পুঁজি, বানিজ্যের পুঁজির শিক্ষার বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে প্রবাহিত করা। সেই প্রেক্ষিতে খসড়া নীতিতে উপাচার্যের পদে শিল্প-বাণিজ্য কিংবা আইএএস-আইপিএস-দের বসানোর ভাবনা।
আধুনিকতার নামে এমন সংস্কারের সুপারিশের পেছনে সরকারি যুক্তি হচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্যের পদে পঠনপাঠন ও গবেষণার অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অনেক বেশি জরুরী - প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাই জরুরী। কিন্তু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা যে শিক্ষা-পরিষেবা কিংবা শিল্প-বাণিজ্যে ভিন্ন সেটাকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার মোটা দাগের মোড়কে। ইতিমধ্যেএই রাজ্যের রাজ্যপাল আচার্য হিসেবে সাম্প্রতিককালে এক প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিককে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এখন আর অস্থায়ী নয়, তেমন ব্যক্তি ইউজিসি-র খসড়া বিধি চূড়ান্ত হলে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হতে পারেন। এই একই যুক্তিতে আইন কলেজের কোনো বিশিষ্ট অধ্যাপককে কি আদালতের মুখ্য বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা যায়? কিংবা কোনো অভিজ্ঞ সফল উপাচার্যকে কি শিক্ষা দপ্তরের সচিবের মতো উচ্চপদের আমলার আসনে বসানো যায়? বলাই বাহুল্য এমন কোনো নিয়োগ এদেশে আজ অবধি হয়নি। কারণ অধ্যাপকের অভিজ্ঞতা, বিচারপতির অভিজ্ঞতা কিংবা আমলাদের অভিজ্ঞতা গুণগতভাবে ভিন্ন।
তবে শিক্ষক হলেই উপাচার্যের আসনে বসে শিক্ষাব্রতীর ভূমিকা পালন করবেন এমন সরলরৈখিক ভাবনাও সঠিক নয়। আসলে আচার্য কিংবা উপাচার্য যে কোনো পদে শিক্ষা জগতের ব্যক্তিরা নিযুক্ত হলে সেই ব্যবস্থার খামতি ও সামর্থ্য সম্পর্কে তাঁরা অনেক বেশি ওয়াকিবহাল থাকেন।
ইউজিসি-র ২০২৫ খসড়া বিধি অনুযায়ী উপাচার্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটির গঠনে প্রস্তাবিত হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি। সেই কমিটিতে আচার্যের প্রতিনিধি ও ইউজিসি প্রতিনিধি ছাড়া থাকবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি। দেশজুড়ে নিয়ন্ত্রণের রাজনীতিতে যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে ইউজিসি-র মতো প্রতিষ্ঠান কিংবা যে কায়দায় রাজ্যে রাজ্যে রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হচ্ছেন গেরুয়া শাসকের প্রতিনিধি তাতে স্পষ্ট যে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফর্মুলায় যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে এমন সার্চ কমিটি চাপিয়ে দিতে পারে শাসকের সেবায় নিয়োজিত অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইপিএস কিংবা হোটেল, রেস্টুরেন্টের মালিকদের শিল্পপতি তকমা দিয়ে। এরাজ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ব্যবসায়ীরা নিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু কার্যকরী প্রধান হিসেবে সেসব প্রতিষ্ঠানে উপাচার্য হচ্ছেন শিক্ষা জগতের মানুষেরা।
প্রশাসনের উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে দেশের সরকার জয়েন্ট সেক্রেটারি বা তারও উচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। শিল্পের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বা প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন মানুষদের সরাসরি দেশের উচ্চ আমলার পদে সরকার নিয়োগ করেছেন। এমন উচ্চ পদে ভারতের আমলা ব্যবস্থার বাইরের থেকে ভাড়া করা লোকেদের বিভিন্ন চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগ করার মূল কারণ হচ্ছে সরকারি নীতিতে ঘাড় কাত করে সম্মতি প্রদান। ঠিক একই কায়দায় এই চুক্তিভিত্তিক উপাচার্য পদে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষদের নিয়ে আসার চেষ্টাও চলছে আসলে শেষমেশ 'ইয়েস ম্যান' নিয়োগের তাগিদে।
যেভাবে সার্চ কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসকদলের মর্জিমাফিক মানুষদের উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এই রাজ্যে ঠিক একই কায়দায় কেন্দ্রের ইউজিসি-র এই নতুন খসড়া বিধিতে দেশের সরকার উপাচার্য নিয়োগের নিয়ন্ত্রণের রাস টানতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যপাল তথা 'আচার্য' পদকে ঢাল বানিয়ে। আমাদের রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন সরকার পরিবর্তনের নামে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আইন-কানুন পাল্টে উপাচার্য নিয়োগের রাশ কার্যত তাদের হাতে টেনে নিয়েছিলেন, ঠিক একই ধরনের নজির সৃষ্টি করছে কেন্দ্রের সরকার ইউজিসি-র সদ্য প্রকাশিত খসড়া বিধির মাধ্যমে। দেশের সরকার নতুন শিক্ষানীতি গ্রহণ করার আগে কার্যত রাজ্যগুলির সঙ্গে বিনা আলোচনায় যেভাবে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার নীতি গ্রহণ করেছিল ঠিক একইভাবে সেই নতুন শিক্ষানীতি রূপায়ণের বিভিন্ন পর্বে সংস্কারের নাম করে বিভিন্ন বিধি তারা হাজির করছেন। এদেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় শিক্ষা যৌথ তালিকার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষাবিধির খসড়া পরিবর্তনের উদ্যোগে রাজ্য সরকারগুলির মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করেনি দেশের সরকার।
পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে উন্নতমানের গবেষণাপত্রের পরিবর্তে খসড়া নীতিতে প্রস্তাবিত হয়েছে 'ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম'-এ শিক্ষকদের অবদানের বিষয়। ইতিমধ্যে ভারতের জ্ঞান ভাণ্ডার-এর ব্যাখ্যায় সরকারি দৃষ্টিতে এসেছে গোমূত্র থেকে গোবরের গবেষণা কিংবা অবিজ্ঞান অথবা ছদ্ম বিজ্ঞানের নামে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে তুলে ধরার সরকারি প্রচেষ্টা। ফলে অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে চালিত সামাজিক কর্মসূচিগুলো এখন থেকে বিবেচিত হবে শিক্ষকের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের অবদান হিসেবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত হয়েছে শিল্প থেকে অর্থ আয় কিংবা গবেষণা প্রকল্পে অর্থ আদায়ের উপর শিক্ষকের পদোন্নতি। অর্থাৎ সরকারি অনুদানের বিকল্প হিসাবে শিল্পের পুঁজি জোগাড় করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পথে আনতে হবে দল বেঁধে গবেষক কিংবা অধ্যাপকদের। এমন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানে তৈরি হলে, কার্যত মৌলিক উন্নতমানের গবেষণার পথ রুদ্ধ হবে। ফলে শিক্ষকের পদোন্নতির এমন বিচিত্র ফর্মুলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষণা সম্পর্কে আগ্রহ কমিয়ে তুলবে। গবেষণা বিনা আন্তর্জাতিক আঙিনায় প্রতিষ্ঠানের পরিচয় তলানিতে গিয়ে ঠেকবে বলেই আশংকা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এই নতুন খসড়া বিধির কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছে উপাচার্য নিয়োগ বিধি। একইভাবে জাতীয় শিক্ষানীতির দর্শন হল অবৈজ্ঞানিক সাম্প্রদায়িকীকরণের পথ প্রশস্ত করা। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে সেই নীতির তৃতীয় ভিত্তির জন্য বেসরকারীকরণের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। ইউজিসি-র সর্বশেষ নির্দেশনামায় কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত হয়েছিল মোট পদের সর্বোচ্চ দশ শতাংশ। কিন্তু সেই ঊর্ধ্বসীমা এবারের বিধিতে তুলে দেওয়ায় আশঙ্কা, স্থায়ী নিয়োগের পরিবর্তে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ হতে চলেছে ভবিষ্যতের স্থায়ী নিয়োগের রূপরেখায়। চুক্তিভিত্তিক এমন শিক্ষক নিয়োগ করা হয় প্রতিষ্ঠানের খরচে রাশ টানতে। প্রতিষ্ঠানে কম মাইনে দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের নীতি গৃহীত হলে গুণী শিক্ষক কিংবা গবেষক পাওয়া দুষ্কর হবে বলে অনুমান।
ইতিমধ্যে দেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য। দেশজুড়ে এমন নিয়োগ সংকোচনের ধাক্কায় ছাত্র-শিক্ষকের কাঙ্খিত অনুপাতের ঢের বেশি নিয়ে চলছে দেশের সিংহভাগ উচ্চ প্রতিষ্ঠান। অথচ সেই শূন্য পদে নিয়োগের বদলে যদি চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী।
সংস্কারের নামে ইউজিসি-র এই নতুন খসড়া বিধির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত সমাজের সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রেমী মানুষজনের।