আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ অষ্টম সংখ্যা ● ১৬-৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ● ১-১৫ বৈশাখ, ১৪৩১
প্রবন্ধ
ঘুষের আমি ঘুষের তুমি ঘুষ দিয়ে যায় চেনা
অশোক সরকার
রাজনীতিতে যদিও নানা মত নানা পথ, কিন্তু ন্যায় অন্যায় সম্পর্কে সমাজে একটা সহমত আছে। চুরি করা, ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া, জোর করে চাঁদা নেওয়া, বেলাইনে গিয়ে কিছু সুবিধা নেওয়া, ভয় বা লোভ দেখিয়ে সুবিধা আদায় করা, জেনেশুনে বাজে জিনিস খদ্দেরকে গছিয়ে দেওয়া, জেনেশুনে ফেক নিউজ প্রচার করা - তালিকা অনেক লম্বা কিন্তু কেউ এগুলোকে ন্যায়সঙ্গত বলবেন না।
এই তালিকা যত লম্বা, আপামর ভারতবাসী-র কৃত ছোটো-বড়ো অন্যায়ের উদাহরণের তালিকা নিশ্চয়ই তার চেয়েও অনেক লম্বা, কিন্তু নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে বেশি হবে কোনো বিশেষ কাজ সম্পন্ন করাতে ঘুষ দেওয়া। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন কোন কাজে মানুষ ঘুষ দিয়েছে তার তালিকা কেউ করেনি। www.ipaidabribe.com বলে একটা ওয়েবসাইটে ঘুষ দিয়েছেন এমন মানুষেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। খুচরো ঘুষ এবং সরকারি কর্মীকে নাগরিক ঘুষ দিয়েছেন এমন কাহিনীই সেখানে ৯৯ ভাগ। অবশ্য প্রাইভেট সেক্টরেও নানাভাবে ঘুষের প্রক্রিয়া চলতে থাকে একথা সবার জানা। সেটা চাকরির জন্য বা কন্ট্রাক্ট পাবার জন্য হতে পারে, এমনকি কোনো ফিল্মের প্রথম দিনের প্রথম শো দেখার জন্য টিকিট কর্মীকে ঘুষ দেওয়ার কথাও জানি। মন্দিরের পুরোহিতকে ঘুষ দিয়ে অন্যদের টপকে পুজো করিয়ে নেবার কথাও শুনেছি।
ইলেক্টরাল বন্ডটাও ঘুষেরই কাহিনী। তবে আমরা দেখব যে ইলেক্টরাল বন্ডের ঘুষের কাহিনীতে কিছু ব্যতিক্রমী বিশেষত্ব আছে। কিন্তু আমরা কেন এই বিষয়ে আলোচনা করতে বসেছি? বসেছি এইজন্য যে, ইলেক্টরাল বন্ড নিয়ে যে কাহিনী সামনে এল, তার অনেকগুলি দিক আছে - তা ভালো করে বুঝতে গেলে আমাদের সমাজের গভীরে প্রবেশ করতে হবে।
ভারতের সমাজ ও শাসনের কাঠামোটা এমন যে তা মানুষকে ছোটোবড়ো অন্যায় করতে একরকম বাধ্য করে। যেমন ধরা যাক খুচরো ঘুষ দেওয়া। জন্ম সার্টিফিকেট নেওয়া থেকে তার শুরু, মৃত্যুর পরেও তা শেষ হয় না। কেউ স্বেচ্ছায় এই ঘুষ দিতে চান না, কিন্তু দিতে হয়, না হলে কাজ এগোয় না। খুচরো ঘুষ প্রধানত সরকারের নানা অঙ্গের নিচু তলার কর্মীরা নিয়ে থাকেন। বলাই বাহুল্য দেবার লোকের সংখ্যা অনেক বেশি, নেবার লোকের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। একে বলা যায় অনিচ্ছা-ঘুষ। অনিচ্ছা-ঘুষের প্রয়োজনটা মূলত সরকারি কাজ করানোর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
তবে মানুষ তো নানা সুযোগ-সুবিধা পাবার জন্য স্বেচ্ছায়ও ঘুষ দিয়ে থাকে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে ফাইন এড়াতে স্বেচ্ছায় ঘুষ দেয়। মন্দিরে আগে পুজো করিয়ে নেবার জন্য পুরোহিতকে ঘুষ দেয়, মাল বিক্রির জন্য খদ্দের কোম্পানির কোনো কর্তাকে সরবরাহকারী বা সাপ্প্লায়ার স্বেচ্ছায় ঘুষ দেয়। আরও হাজারো পরিস্থিতিতে মানুষ স্বেচ্ছায় ঘুষ দিয়ে থাকে। একে বলা যায় স্বেচ্ছা-ঘুষ।
অনিচ্ছা-ঘুষের ক্ষেত্রে দাতা যা চাইছেন তা আসলে ন্যায্য, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রাপ্য। স্বেচ্ছা-ঘুষের ক্ষেত্রে দাতা যা চাইছেন তা সাধারণত স্বাভাবিকভাবে তার প্রাপ্য নয়। স্বেচ্ছা-ঘুষ বা অনিচ্ছা-ঘুষ, দুটি ক্ষেত্রেই দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। দাতার আছে ‘প্রয়োজন’, আর গ্রহীতার আছে ‘ক্ষমতা’। অনিচ্ছা-ঘুষের ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োজনের কাছে হাত পাতে, আর স্বেচ্ছা-ঘুষের ক্ষেত্রে প্রয়োজন নিজেই ক্ষমতার কাছে হাতজোড় করে। অনিচ্ছা-ঘুষের বেলায় ক্ষমতা চাইলে অনিচ্ছা-ঘুষ ছাড়াই কাজটা করতে পারে। আর স্বেচ্ছা-ঘুষের বেলায় ক্ষমতা চাইলে স্বেচ্ছা-ঘুষের প্রসঙ্গই তৈরি হবে না। অর্থাৎ দাতা যদি জানে, স্বেচ্ছা-ঘুষে কাজটা হবে না, বা কাজটা বিগড়ে যাবে - তাহলে সে ওই পথেই যাবে না। এদেশে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে পুলিশকে ঘুষ দিতে কেউ দ্বিধা করে না, সেই ভারতীয়রাই ইউরোপ আমেরিকায় ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ দেবার কথা ভাবতেও পারে না।
অনিচ্ছা-ঘুষ বা স্বেচ্ছা-ঘুষ এত সহজলভ্য ও এত সহজগ্রাহ্য কেন?
ভারতের শাসনব্যবস্থায় ও সমাজে ‘ক্ষমতার’ (ইংরেজিতে পাওয়ার) একটি বিশেষত্ব আছে। সেটি তার কাঠামো ও সেই কাঠামোর ইতিহাস। ‘ক্ষমতা’-র কাঠামোর তিনটি অঙ্গ - প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক। প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল সম্রাট, রাজা বা বাদশাদের হয়ে জমির খাজনা আদায়ের জন্য, আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। এই শাসনব্যবস্থা ছিল ঊর্ধ্বমুখী, অর্থাৎ উপরওয়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য - প্রজাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়। এই কাঠামোয় যেমন সম্রাট, রাজা বা বাদশার বেতনভুক কর্মীরা ছিলেন তেমনি বহু ক্ষেত্রে তাদের পাশাপাশি ছিলেন মন্দির-মঠ-মসজিদের গুরু-মৌলবিরা, আর অনেক স্থানীয় ছোটো রাজারা, যারা সম্রাট, রাজা বা বাদশার কৃপাধন্য। ইংরেজ আমলে তার সঙ্গে জুড়ে যায় জমিদারেরা, আগের আমলের বেশ কিছু বেতনভুক কর্মীও ক্রমশ জমিদার হয়ে যান। আর যুক্ত হয় পেশাদারী বেতনভুক কর্মী, যাদের আমরা কল্কেটর বলে জানতাম, তিনি ও তার নিয়ন্ত্রিত সরকারি কর্মী।
স্বাধীনতার পরে সংবিধান আমাদের নাগরিক বলে ঘোষণা করল কিন্তু শাসনব্যবস্থার কাঠামো ও চরিত্রে বিশেষ কোনো বদল হল না, ফলে একজন পাটোয়ারি, জংগলের বিটগার্ড আর ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ারের হাতে স্বাধীনতার আগে যে ক্ষমতা ছিল সেই ক্ষমতাই রয়ে গেল। শাসনব্যবস্থার অভিমুখ কখনওই জনমুখী হয়নি।
এর সঙ্গে জুড়তে হবে ‘ক্ষমতা’-র সামাজিক চরিত্রের কথা। সমাজে যে জাতিবিন্যাস আছে, সেটা ‘ক্ষমতা’-র বিন্যাসও বটে। সংবিধান আমাদের সবাইকে সমান বলে ঘোষণা করেছে, কিন্তু সামাজিক জাতি ও ‘ক্ষমতা’-র বিন্যাস তা স্বীকার করে না। এই বিন্যাস বলে, উচ্চ জাতি মানে বেশি ‘ক্ষমতা’ ও বিশেষাধিকার (privilege)। এই ‘ক্ষমতা’-র অভিমুখও ঊর্ধ্বমুখী। ‘ক্ষমতা’-র উৎস উচ্চবর্ণ ও জাতির তৈরি করা সামাজিক নিয়ম, এবং নিম্নবর্ণ ও জাতির ‘ক্ষমতা’-র ব্যবহারও উচ্চবর্ণের তৈরি করা নিয়মের কষ্টিপাথরে যাচাই হয়।
প্রশাসনিক ‘ক্ষমতা’ ও সামাজিক ‘ক্ষমতা’-র মধ্যে একটা অদ্ভুত সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়। দুইয়েরই বিন্যাস এবং দায়বদ্ধতার কাঠামোটি একই ধরনের। ভারতের ইতিহাসে সামাজিক ও প্রশাসনিক কাঠামোয় যে ‘ক্ষমতা’-র বিন্যাস তৈরি হয়েছে তার অনাচারের কাহিনী বহু পুরোনো। তার কারণ এই বিন্যাসটি সুশাসনের বা জনমুখী কোনো নীতিমালার ভিত্তিতে তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছিল রাজা-বাদশা ও অন্যদিকে উচ্চবর্ণ জাতির একছত্র শাসন মজবুত করার উদ্দেশ্যে। সেই শাসনের মূল অর্থনৈতিক উৎস ছিল জমি-ফসল ও অন্যান্য পেশার উপর খাজনা। প্রশাসনিক ও সামজিক ‘ক্ষমতা’-র সুযোগে এই সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ স্বত্বভোগী ছিল রাষ্ট্রের বেতনভুক কর্মচারীরা, মন্দির-মঠের কর্ণধারেরা, ছোটো রাজা ও জমিদারেরা। এই ব্যবস্থার মধ্যে যে মৌলিক অনৈতিকতা ছিল সেটা মানুষ মেনে নিয়েছিল। ক্ষমতার প্রয়োগে ওই অনৈতিকতার উপর দিয়ে যে ব্যাপক শোষণ ও অনাচার চলত তাও মানুষ মেনে নিত, শুধু সহ্যের সীমা পেরোলে বিদ্রোহ করত।
নানাভাবে এই অনাচার চলত। প্রজা-কৃষকের কাছ থেকে জোর করে বা ফন্দিফিকির করে অতিরিক্ত খাজনা আদায়, মিথ্যা হিসাবের জালে প্রজাকে স্থায়ীভাবে ঋণগ্রস্ত করে রাখা, শ্রমদাসের (bonded labour) ব্যবস্থা, নানা অছিলায় জমি কেড়ে নেওয়া ইত্যাদি। সবচেয়ে বড়ো কথা, এই অনাচার সমাজের মূল স্রোতের অঙ্গ ছিল।
এই অনৈতিক অনাচারী ব্যবস্থা থেকেই ঘুষ নামক লেনদেনের ধারনাটির জন্ম। ব্যবস্থা যখন সুদীর্ঘকাল ধরে অনাচারী হয়, তখন মানুষ সেই ব্যবস্থার সঙ্গে একটা বোঝাপড়া তৈরি করে। সেই বোঝাপড়ার বিনিময়টা হল ঘুষ। বলাই বাহুল্য সবাই তা পারে না। যারা তা পারে না, তারা ভুক্তভোগী। ভারতীয় সমাজে ঘুষ নামক বিনিময়টির ব্যাপক প্রচলনের কাঠামো ও ইতিহাস অনেক পুরোনো।
স্বাধীনতার পর সেই অর্থনৈতিক উৎসটি আর নেই, কিন্তু সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার সেই কাঠামোটি রয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে রয়ে গিয়েছে একদিকে ক্ষমতার সেই অনাচারী মানসিকতা ও অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বোঝাপড়ার মানসিকতা। ভারতীয় সমাজে ঘুষ দেওয়া নেওয়ার মূলে দুটি সামাজিক ধারণা কাজ করে। এক, ঘুষ দেওয়া যায়, অন্যটি, ঘুষ নেওয়াও যায়। যার কাছে ক্ষমতা আছে, সে তো ঘুষ চাইতেই পারে। আর যে ঘুষ দিতে পারে, সে দেবে নাই বা কেন?
আমরা এখনও পর্যন্ত রাজনীতিকে এই কাহিনীতে টেনে আনিনি। রাজনীতি বলতে এখানে দলীয় রাজনীতি বোঝাচ্ছি। ভারতের দলীয় রাজনীতি ওই ‘ক্ষমতা’-র বিন্যাসে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সে ‘ক্ষমতা’-র প্রশাসনিক ও সামজিক বিন্যাসে কামড় বসিয়ে দুটি অঙ্গ থেকেই কিছুটা জায়গা কেড়ে নিয়েছে। প্রশাসন এখন শুধু আর মন্ত্রিসভা বা ক্যাবিনেটের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার অনেকটাই এখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছোটোবড়ো অঙ্গের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ইলেক্টরাল বন্ড তার একটা স্তর, শেখ শাহজাহান তার আরেকটা স্তর। শেখ শাহজাহানের কথা অন্য এক লেখায় বলেছি, তাই শুধু ইলেক্টরাল বন্ডের কথাই বলব।
ইলেক্টরাল বন্ডের কাহিনীর তিনটি চরিত্র। রাজনৈতিক দল, সরকার (ইডি/সিবিআই) আর কোম্পানি। সাধারণত যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তার তদন্ত হবে, বিষয়টি আদালতে যাবে,আদালত ফয়সালা দেবে। কিন্তু ইলেক্টরাল বন্ডের কাহিনীতে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দল মুখ্য ভূমিকায় - সেখানে প্রণামী দিলে তদন্ত বন্ধ হবে, কন্ট্রাক্ট মিলবে, অন্য দলের বিরুদ্ধে মামলা সাজানো যাবে, ফেল করা ওষুধ পাস হবে, সরকারের আয় কমবে দলের আয় বাড়বে, সরকারি নীতি পালটে যাবে ইত্যাদি। এখানে প্রয়োজন আর ‘ক্ষমতা’-র সমীকরণটি অন্য - প্রয়োজন একদিকে কোম্পানিগুলির, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের। আবার যদি তারা সরকারে থাকে, তাদেরই আছে ‘ক্ষমতা’। সরকারি প্রশাসনিক ‘ক্ষমতা’ এখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ‘ক্ষমতার’ সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। প্রয়োজন যার ‘ক্ষমতাও’ যদি তারই হয়, তাহলে দুইয়েরই অপব্যবহার হতে বাধ্য।
ইলেক্টরাল বন্ড ঘুষকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে এনেছিল, এবং সেটা যাতে গোপন থাকে তার ব্যবস্থা করেছিল। এক্ষেত্রে ঘুষটা কোনো আমলা বা মন্ত্রীকে দেওয়া হচ্ছে না, হলে সেটা আইনি করা যায় না। কিন্তু পার্টিকে দিলে তা করা যায়।
সরকারের এজেন্সি কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে তদন্ত করবে, পার্টিকে চাঁদা দিলে তা বন্ধ হবে। শেল কোম্পানিগুলির মাধ্যমে কেউ কালো টাকা পার্টিকে চাঁদা দিয়ে সাদা করবে। স্বাভাবিকভাবেই সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা বিনিময়ে কোনো না কোনো সুযোগ-সুবিধা নেবে। পার্টিকে ঘুষ দিলে সরকারি কন্ট্রাক্ট মিলবে।
যদি কেউ ভাবেন যে পার্টি প্রশাসনতন্ত্রকে দিয়ে এই ঘুষের কারবারটিকে সহজে করিয়ে নিতে পারল কারণ প্রশাসন তো পার্টির নির্বাচিত প্রতিনিধি মন্ত্রীর অন্তর্গত, তাহলে ভুল হবে। কাঠামোগতভাবে তা সত্যি হলেও প্রশাসন যদি সাধারণভাবে জনমুখী সৎ ও নির্ভীক হতো তাহলে এটা সম্ভব ছিল না। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ প্রশাসনতন্ত্র ক্ষমতার অনাচারে সাধারণভাবে অভ্যস্ত তাই এই ব্যবস্থায় তারা কোনও প্রতিবাদ করেনি, সহজেই তা মেনে নিয়েছে। ভারতের প্রশাসনতন্ত্র এতটাই ঊর্ধ্বমুখী, নেতা-মন্ত্রীমুখী যে নেতা-মন্ত্রী যখন সরকারের তথা (জনতার বদলে) পার্টির প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে, প্রশাসনের তাতে অসুবিধা হয় না। তাই ক্রমশ প্রশাসনিক ক্ষমতা আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা মিশে গেছে। এটা যে শুধু ইলেক্টরাল বন্ডের বেলায় ঘটেছে তা নয়, অন্য অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেছে, তবে এই ক্ষেত্রে তা ঘটেছে একেবারে উচ্চ স্তরে - সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে তা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই প্রশাসন, দল ও কোম্পানিগুলি এককাট্টা হয়েছিল যাতে এই তথ্য জনসমক্ষে না আসে।
গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা শুধু ইলেক্টরাল বন্ডের ক্ষেত্রে নয়, যে কোনো স্বেচ্ছা ঘুষ এমনকি অনিচ্ছা ঘুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। দাতা ও গ্রহীতা কেউই চান না যে, এই বিনিময়ের কথা জনসমক্ষে আসুক। ঘুষের সংস্কৃতি টিকে থাকে এই গোপনীয়তার উপর।ভঅর্থাৎ দেশকে ঘুষের সংস্কৃতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে গেলে, গোপনীয়তার সংস্কৃতিটিকে ভাঙতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের আইনে ঘুষ যে দেয় আর যে নেয়, দুইই অপরাধী, তাই গোপনীয়তা দুইয়েরই দরকার। তাহলে কি গোপনীয়তার সংস্কৃতিটিকে ভাঙতে গেলে অপরাধের ধারনাটিকে বদলাতে হবে?