আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ অষ্টম সংখ্যা ● ১৬-৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ● ১-১৫ বৈশাখ, ১৪৩১

সমসাময়িক

বিবিসি-র নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত


ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নজিরবিহীন পদক্ষেপ। 'ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন' বা বিবিসি একটি ঐতিহ্যবাহী সংবাদ প্রতিষ্ঠান। শতাধিক বছরের বেশি সময় ধরে বিবিসি প্রচারিত সংবাদের উপর সারা বিশ্বের মানুষের আস্থা আছে। যে কোনো খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ বিবিসি’র টিভি/রেডিও প্রচারিত খবরের উপর ভরসা রাখে।

কর অনিয়মের অভিযোগে বিবিসি’র দিল্লি ও মুম্বইয়ের দপ্তরে গতবছর আয়কর দপ্তর হানা দেয়। এর ঠিক এক বছরের মাথায় ভারতে বিবিসি’র নিউজরুম বন্ধ হতে চলেছে। প্রকাশনার লাইসেন্সটি ভারতীয় কর্মচারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আয়কর লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, বিবিসি তার প্রাক্তন কর্মচারীদের নিয়ে একটি ‘কালেকটিভ নিউজরুম’ নামে সংস্থা থেকে সংবাদ সম্প্রচারের কাজ শুরু করবে।। ভারতে বিবিসি’র সম্প্রচার ‘কালেকটিভ নিউজরুম’ নামে এক সংস্থার মাধ্যমে হবে। বিবিসি কালেকটিভ নিউজরুম কোম্পানিতে ২৬% শেয়ারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। বিবিসি’র তরফে জানানো হয়েছে, যে এটি প্রথমবারের মতো অন্য সংস্থার কাছে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স হস্তান্তর। সাংবাদিকতার সঙ্গে কোনওরকমের আপস করতে রাজি নয় বলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিবিসি’র তরফে দাবি করা হয়েছে।

বিবিসি ১৯৪০ সালের মে মাসে ভারতে সম্প্রচার শুরু করে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার উপর একটি তথ্যচিত্র প্রচার করার পরপরই আয়কর কর্মকর্তারা দিল্লি ও মুম্বাইতে বিবিসি’র অফিসে অভিযান চালায়। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় রাজ্যের তখনকার মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা সম্পর্কে দুটি তথ্যচিত্র প্রচারের পরে ভারত সরকারের সঙ্গে বিবিসি’র টানাপোড়েন শুরু হয়। আয়কর বিভাগের তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিবিসি ভারতে তার নিউজরুমকে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রথম বিবিসি কোনো এক দেশে তাদের লাইসেন্স অন্য কোম্পানিতে হস্তান্তর করল। লাইসেন্সটি ভারতে বিবিসি’র নিজস্ব কর্মচারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, বিবিসি’র চার প্রাক্তন কর্মচারীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত 'কালেকটিভ নিউজরুম' নামে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবি, তামিল, তেলেগু সহ সাতটি ভাষায় বিবিসি’র ডিজিটাল পরিষেবার জন্য কন্টেন্ট তৈরির দায়িত্ব নেবে।

২০২০ সালে প্রবর্তিত নতুন ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (FDI) নিয়মের অধীনে বিবিসি-এর ভারতের কার্যক্রমের এই পুনর্গঠনের প্রয়োজন ছিল যা ভারতের ডিজিটাল মিডিয়া ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ FDI সীমা অতিক্রম করছে না। বিবিসি ইন্ডিয়ার ৯৯ শতাংশের বেশি মালিকানা ছিল।

কালেক্টিভ নিউজরুমের প্রধান বলেছেন “এই প্রথম বিবিসি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রকাশনার লাইসেন্স দিয়েছে এবং বিবিসি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আপস করবে না”। বিবিসি ইন্ডিয়ার সিনিয়র নিউজ এডিটর সহ মোট চারজন কালেক্টিভ নিউজরুমের প্রতিষ্ঠাতা শেয়ারহোল্ডার।

বিবিসি-র মতন ঐতিহ্যশালী সংবাদমাধ্যমকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে তা প্রমাণ করে যে বর্তমান শাসকদল কোনওরকম সমালোচনাকে বরদাস্ত করবে না। ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে এই ধরনের ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিবিসি এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সংবাদ তথা সাংবাদিকতার প্রতি দায় বাড়বে নাকি তারাও আত্মসমর্মন করবে, এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপাতত অপেক্ষা করতে হবে।