আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ সপ্তম সংখ্যা ● ১-১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ● ১৬-৩১ চৈত্র, ১৪৩০
সমসাময়িক
ব্রিটিশ রাজ থেকে বিলিওনিয়ার রাজ
এই বছর ১৮ই মার্চ 'ওয়ার্ল্ড ইনিকুয়ালিটি ল্যাব'-এর সঙ্গে যুক্ত কিছু গবেষক, ১৯২২-২০২৩ সালে, দীর্ঘ ১০০ বছরে ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ধনের বৈষম্য নিয়ে একটি পেপার প্রকাশ করেছেন - Income and Wealth, Inequality in India, 1922-2023 - The Rise of the Billionaire Raj.
তাঁরা জাতীয় আয়, মোট সম্পদ, কর ও তার নীতি, ধনীদের তালিকা এবং আয়, ব্যয় ও সম্পদের ওপর সমীক্ষা করে দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে ভারতের আয় এবং সম্পদ-বৈষম্যের পরিমাণগত তথ্য তৈরি করেছেন। এই গবেষণার চুম্বক নিচে দেওয়া হলো।
স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে অসাম্য হ্রাস পায়, তারপরে এটি বাড়তে শুরু করে এবং একবিংশ শতকের প্রথম দশকের গোড়ার দিক থেকে তা আকাশ ছুঁয়েছে। ২০১৪-১৫ এবং ২০২২-২৩-এর মধ্যে, ওপরের দিকের সামান্য অংশের ধনীর সঙ্গে দেশের অধিকাংশ নাগরিকের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে; সম্পদ ঘনত্ব ক্রমে আরও ওপরের দিকে পুঞ্জীভূত হয়েছে।
২০২২-২৩ সালে ১ শতাংশের আয় এবং সম্পদের শেয়ার (যথাক্রমে ২২.৬ শতাংশ এবং ৪০.১ শতাংশ) ঐতিহাসিকভাবে তাদের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। সেই একই সময়ে শেষ ৫০ শতাংশ মানুষের আয়ের ভাগ ১৫ শতাংশ। এখানে স্মরণযোগ্য, ১৯২২ সালে তখনকার প্রথম ১ শতাংশ ধনীর দেশের আয়ের ভাগ ছিল ১৩ শতাংশ। ভারতের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয়ের ভাগ বিশ্বের মধ্যে (পেরু, ইয়েমেন ইত্যাদি কয়েকটি ক্ষুদ্র দেশ ব্যতীত) সবচেয়ে বেশি। এই আয়ের ভাগ এমনকী ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বা আমেরিকার থেকেও বেশি। আজকের বিলিওনিয়ার রাজ এখন ঔপনিবেশিক রাজের চেয়েও বেশি অসম।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জনবহুল দেশের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্য আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি।
তারা বলছেন, নিট সম্পদের দিক থেকে দেখলে ভারতীয় আয়কর ব্যবস্থা এক পশ্চাদ্গামী নীতি নিয়ে চলেছে। অর্থাৎ দেশের আয়কর নীতি এমন একটি নিয়ম তৈরি করেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
'ওয়ার্ল্ড ইনইক্যালিটি ল্যাব' বলেছে, শিক্ষার অভাব সহ কিছু কারণ কিছু মানুষকে কম বেতনের চাকরিতে আটকে রেখেছে এবং নীচের ৫০ শতাংশ এবং মধ্য ৪০ শতাংশ ভারতীয়দের বৃদ্ধি হতাশ করেছে৷ এই অবস্থার সাক্ষাৎ ছবি আমরা দেখি, রাস্তাঘাটে তরুণ-তরুণীদের অবিশ্বাস্য গতিতে দ্রুত বিপণনের জন্য অসহায় মোপেড যাত্রা থেকে।
তাদের পরামর্শ, গড় ভারতীয়দের সক্ষম করার জন্য আয় ও সম্পদ উভয়ের জন্য ট্যাক্স কোডের পুনর্গঠন এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিতে জনসাধারণের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। এই বিনিয়োগই আপামর জনসাধারণকে বিশ্বায়নের চলমান তরঙ্গ থেকে উপকৃত হতে সাহায্য করবে এবং শুধুমাত্র অভিজাতদের জন্য বৈভবের বৃদ্ধি হবে না।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, ২০২২-২৩ সালে ১৬৭টি ধনী পরিবারের নিট সম্পদের উপর ২ শতাংশ 'সুপার ট্যাক্স', জাতীয় আয়ের ০.৫ শতাংশ রাজস্ব প্রদান করবে এবং এই ধরনের বিনিয়োগের সুবিধার্থে মূল্যবান আর্থিক সংস্থান তৈরি করবে।
নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কালে ধনিক এবং গ্রামীণ দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান প্রভূত পরিমাণে বেড়েছে। এই একই সময়ে আবার ভারতের অর্থনীতি ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে যোগ করা যায় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একেবারে ওপরের অংশের কয়েকজন ধনিকের বিশেষ নৈকট্য। বিরোধী দল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, বন্ধু ধনিকদের অনুগ্রহ কি দলের প্রচারাভিযানে অর্থ যোগানোর একটি উপায়?
শেষ পর্যন্ত, এটাই সত্য, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণী দুই ভিন্ন গ্রহে বাস করেন যারা পরস্পরের থেকে দূরে আরও দূরে চলে যাচ্ছেন।