আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা ● ১৬-৩১ মার্চ, ২০২৪ ● ৩-১৮ চৈত্র, ১৪৩০

প্রবন্ধ

এ মোহ আভরণ

অম্লানকুসুম চক্রবর্তী


পাড়ার শান্তি ভান্ডারের সামনে ডিস্ট্রিবিউটারের গাড়িটা দাঁড়াতেই চঞ্চলদার শান্তি বিঘ্নিত হয়ে চঞ্চলতা গেল বেড়ে। চঞ্চল সাহা। দোকান মালিক। দু'দশক পুরোনো হয়ে যাওয়া, মলিন সাইনবোর্ডের নিচে লেখা - নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। গাড়ির চালককে হেঁকে বললেন, “হাত জোড় করে শেষবারের মতো বলছি, মালগুলো লাগবে আমার খালি। যার বাক্স তাকে গিয়ে দিয়ে এসো হে। দোকানে ফালতু জঞ্জাল রাখার জায়গা নেই আমার।” গাড়ির চালক ও খালাসি মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন সম্ভবত। খালাসি মানুষটি দোকানমালিক বলামাত্র ব্যাগ থেকে বের করে ফেললেন লম্বা এক ছুরি। দোকানের সামনে ইতিমধ্যেই নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল পঞ্চাশ-ষাটটির মতো বাক্স। ছুরি দিয়ে বাক্সে লাগানো সেলোটেপের পেট চিরতে শুরু করে দিলেন বছর কুড়ির খালাসি ছেলেটি। আর মধ্যবয়স্ক ড্রাইভার সাহেব প্রতিটি বাক্সের মধ্যে রাখা জিনিসগুলোকে মুক্তি দিলেন। বলা ভালো, দিনের আলো দেখালেন। বাক্সের বিস্কিট-সাবান-শ্যাম্পু-তেল-ডিটারজেন্ট দোকানমালিক রেখে দিলেন সারিবদ্ধ তাকে, শোকেসে। গাড়ির চালক কার্ডবোর্ডের প্যাকেটগুলো ছুঁড়ে দিতে থাকলেন দূরে। কাজ শেষ হলে খালাসিকে বললেন, “এগুলোর গতি করে দে এবারে।” বলামাত্র কাজ হল। খালাসি ছেলেটি বাক্সের স্তুপের উপরে উঠে বেশ কয়েকবার লাফালো। উপরে প্রবল ওজন পড়ায় বাক্সগুলো ‘ফ্ল্যাট’ হল। এবারে সেই কার্ডবোর্ডসমগ্র ফের উঠে গেল গাড়ির পেটে। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পরে চঞ্চল সাহা ফের চেঁচিয়ে বললেন, “পরের দিন থেকে এই কাজটা করার জন্য আমাকে যেন আর বলতে না হয়। যত্তসব!”

বিশদে যাওয়ার আগে কিংবা লেখার মধ্যে কিউমুলোনিম্বাসের একটা মেঘ ঘনানোর আগে প্যাকেজিং নিয়ে কয়েকটা কথা বলে রাখা ভালো। আমি প্যাকেজিং প্রযুক্তির লোক নই। তবে দুটো বিষয় নিয়ে সামান্য কয়েক লাইন আগেভাগেই লিখে রাখলে বোঝাতে সুবিধা হবে। ধরা যাক একটি গায়ে মাখার সাবান। কাগজের যে আয়তাকার বাক্স দিয়ে সাবানটি মোড়ানো থাকে, তাকে বলা হয় প্রাইমারি প্যাকেজিং। আর ১২০টি সাবানের বাক্স যে কার্ডবোর্ডের বাক্সের মধ্যে রাখা থাকে, তার নাম সেকেন্ডারি প্যাকেজিং। ১২০ সংখ্যাটা উদাহরণমাত্র। সামগ্রীর তারতম্যে এই সংখ্যার এদিক ওদিক হওয়াই স্বাভাবিক। সেকেন্ডারি প্যাকেজিং ব্যাপারটা অনেকটা সামগ্রীর জামার উপরে পরানো আরেকটা জামার মতো। প্যাকেজিং বিশারদরা বলেন, এই দ্বিতীয় জামাটা সামগ্রীগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ভীষণ জরুরি। আর তার চেয়েও বেশি প্রয়োজনীয় পরিবহনের সুবিধার জন্য। কোনও সামগ্রীকে বাক্সবন্দি না করতে পারলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যে কার্যত অসম্ভব। এবারে ক্রমশ মেঘ ঘনাবে! সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা প্যাকেজিং বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদদের মধ্যে গোল বেধেছে সম্প্রতি। পরিবেশকে ভালবাসেন যাঁরা, তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদের এ যুগে দ্বিতীয় প্যাকেজিং কি সত্যিই জরুরি? আবার বলি, দ্বিতীয় প্যাকেজিংয়ের মানে খয়েরি রঙের মোটা কার্ডবোর্ডের বাক্স। আমাদের সার্বিক বিবেকবোধে হাতুড়ির ঘা মেরে তাঁরা জিজ্ঞেস করছেন - আরও কত লক্ষ বৃক্ষচ্ছেদনের পরে আমাদের মধ্যে চেতনার উন্মেষ হবে? একটা কল্পিত দাড়িপাল্লার কথা ভেবে নেওয়া যেতে পারে এ প্রসঙ্গে। একদিকে তাঁরা রাখার চেষ্টা করছেন সেকেন্ডারি প্যাকেজিং থেকে প্রাপ্ত সুবিধাকে। আর অন্যদিকে রাখা হচ্ছে এই অতিরিক্ত প্যাকেজিংয়ের ফলে তুমুল বৃক্ষহত্যাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাড়িপাল্লাটিকে এবারে ছেড়ে দিলে দু'দিকের পাল্লা ঢেঁকির মতো দোল খাবে। কিন্তু, সময় গড়াবে যত, তত ওজন বাড়বে গাছ কেটে নেওয়ার ফলে জন্ম নেওয়া অমেরামতযোগ্য ক্ষতির। অতএব, এখনই সাবধান না হলে আগামী দিন ভয়ংকর। এ নিয়ে যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তির ঝড় উঠছে বিশ্বজুড়ে। পুঁজিবাদের পাউডারমাখা সামগ্রীসুখের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে আমাদের পরিবেশ চেতনা। এ সম্মুখ সমরের দু'দিকেই সাজো সাজো রব।

সমস্যার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। প্রশ্ন উঠছে প্রাইমারি প্যাকেজিংয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও। বিষয়টি সহজ করার জন্য একটি টুথপেস্টের উদাহরণ দেওয়া যাক। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, টুথপেস্টের টিউবের গায়ে প্রডাক্টটি সম্পর্কে যা যা তথ্য দেওয়া থাকে, হুবহু একই জিনিস ছাপা থাকে টুথপেস্টটি যে বাক্স থেকে আমরা বের করি, তার গায়েও। জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, টিউবের মতো যদি একই জিনিস ছাপা থাকে কাগজের বাক্সে, তাহলে সেই বাক্সটি প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা কি? এ তো শুধুমাত্র কাগজ নষ্ট করার এক বিচ্ছিরি অজুহাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে একটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে খুব। একটি প্রথম সারির সর্বভারতীয় সংস্থা ২০২১ সালের মাঝামাঝি তাদের কার্টন-ফ্রি টুথপেস্ট বাজারে আনার কথা ঘোষণা করে। অর্থাৎ, টুথপেস্টটি বিক্রি হবে শুধুমাত্র টিউব হিসেবে। বাইরের কাগজের বাক্সটি থাকবে না। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এর ফলে যত কাগজ বাঁচবে, তার সদগতি করা হবে। বেঁচে যাওয়া কাগজ ব্যবহার করা হবে দুঃস্থ এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশুদের ব্যবহারের জন্য নোটবুক বানাতে। এই প্রকল্পের ফলে বছরে প্রায় ১৫০ টন কাগজ বাঁচানোর দৃপ্ত ঘোষণার কথা আমরা শুনেছিলাম সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের পক্ষ থেকে। তবে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই প্রকল্পটি সফল হয়নি। সেই সময়ে ওই সংস্থায় কর্মরত এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলছিলেন, “এত বছরের সেলসের চাকরিতে এমন ফেইলিওর কেস আগে কখনও দেখিনি ভাই! বিক্রি কমল হু হু করে। প্রডাক্টটা চললই না। ওরা যেন চোখের জল মুছতে মুছতে গাইছিল - ফিরিয়ে দাও, আমার সে জামা তুমি ফিরিয়ে দাও, এভাবে কেড়ে নিও না।“ ব্র্যান্ডের মুখ বাঁচাতে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হয়েছিল টুথপেস্টের বাইরের সেই কাগজের বাক্স।

ইংরিজিতে 'উইশফুল থিংকিং' বলে একটি কথা আছে। তার সূত্র ধরে বলি, কার্টন-ফ্রি প্যাকেজিংয়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন যে মানুষরা, তাঁরা সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন আরও বেশি করে, এ যুগে। একটি পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনাটিকে তাঁরা উদাহরণ হিসেবে দেখতে চাইছেন না আর। তাঁদের কথার ডেসিবেলের উপরে ডেসিবেল চাপছে আরও। তাঁরা বলছেন, পরিবেশ রক্ষার তাগিদে জোরদার সিদ্ধান্ত এবারে নিতেই হবে আমাদের। যে সামগ্রীগুলি আমরা ব্যবহার করি প্রতিদিন, সেগুলোর উপরে অযথা অতিরিক্ত প্যাকেজিংয়ের মোড়ক বন্ধ করার তাগিদে তাঁরা কন্ঠ ছাড়ছেন প্রতিনিয়ত। আশা রাখছেন, আমাদের সুবুদ্ধির উদয় হবে।

খুব বেশি আগের কথা নয়। অনলাইন খুচরো বিপনির কয়েকটি সংস্থা বিদেশ বিভুঁই জয় করার পরে এ দেশের মাটিতে পা রেখেছিল। পায়ে পা মিলিয়ে টক্কর দিতে বাজারে নেমে গিয়েছিল কিছু দেশজ সংস্থাও। ডোরস্টেপ ডেলিভারি আর আরও বেশি ডিসকাউন্টের মোহে আমরা মনের আশ মিটিয়ে অর্ডার দিতাম অনলাইনে। লঘু দ্রব্যে গুরু প্যাকেজিংয়ের কথা মনে পড়ে যায় বারবার। একটা ডিওডোরেন্ট অর্ডার দিয়েছিলাম। যে বাক্সটিতে পছন্দের জিনিসটি ডেলিভারি হয়েছিল, তার মধ্যে দিব্যি ধরে যেত পারত একটা ইস্তিরি, কিংবা ছোট সাইজের প্রেশার কুকার। আর ইস্তিরি অর্ডার দেওয়ার পরে যে বাক্সটি হাতে নিয়ে বাড়ির কলিং বেল বাজিয়েছিলেন সংস্থার ডেলিভারি বয়, অবাক চোখে দেখেছিলাম. সেই বাক্সের গর্ভে জায়গা পেয়ে যেত কোনও মিক্সার গ্রাইন্ডার। মানে মিক্সি। সেদিন গিয়াছে চলিয়া। সংস্থার আধিকারিকরা বুঝতে পেরেছিলেন, এই সামগ্রীগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে এই তুমুল অতিরিক্ত প্যাকেজিং অনাবশ্যক। সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্টের এক পরিচিত অধ্যাপক দিনকয়েক আগে এ প্রসঙ্গে একগাল হেসে চোখ নাচিয়ে বলেছিলেন, “যেখানে একটা হাফহাতা সোয়েটার হলেই কাজ চলে যেত, সেখানে আয়োজন করা হয়েছিল ভারি লেপের। কবিগুরু থাকলে হয়তো বলতেন, এ মোহ আভরণ!” সংস্থাগুলোর বাৎসরিক লাভ-ক্ষতির খাতায় এই অতিরিক্ত কার্ডবোর্ড প্যাকেজিং ব্যবহারের জন্য যুক্তিহীনভাবে যুক্ত হত প্রচুর খরচও। এমন সিদ্ধান্তের ফলে তাঁরা আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন বলা চলে।

মূল প্রডাক্টের গায়েই যদি লিখে দেওয়া যায় সব কিছু, তার পরেও কি শক্ত কাগজের দ্বিতীয় প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকে? এ নিয়ে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা হয়েছিল পৃথিবীর নানা দেশে। মার্কেটিং ম্যানেজমেন্টের অলিতে গলিতে ঘুরতে থাকা মানুষরা বলেন, হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধারের থেকেও জটিল বিষয় হল কনজিউমার বিহেবিয়ার! বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্যগুলো তাদের অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে তরজায় নামতে পারে হা রে রে রে করে। একদিকের যুক্তি বলছে, সামগ্রীটি যদি কাগজের বাক্সের মধ্যে ভরা থাকে, তাহলে তার গুণগত মান নিয়ে ক্রেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। অর্থাৎ, টুথপেস্টটি কাগজের বাক্স থেকে বের করে বাক্সটি পত্রপাঠ ফেলে দিতে ক্রেতাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাক্সটি না থাকলেই তাঁরা মনে করেন, পেস্টটি হয়তো ভাল না! অন্যদিকের যুক্তি বলছে, ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির এই বাজারে ক্রেতারা চাইছেন যতটা কম দামে সম্ভব, তাঁদের কাছে দ্রব্যগুলো পৌঁছোক। বাড়তি প্যাকেজিং না থাকলে কোনও সামগ্রীর দামও কমতে বাধ্য। সহজ সূত্র। উৎপাদনের খরচ কমলে সর্বাধিক বিক্রিত মূল্য, অর্থাৎ এমআরপি-ও কমে।

সদ্য কেনা জুতোর বেঢপ কার্ডবোর্ড বাক্সগুলোর কি গতি করি আমরা? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৌরসভার ময়লা তোলার গাড়িতে ওদের স্থান হয়, পরের দিনই! টিনের বাহারি শিশিতে ডিওডোরেন্ট ভরা থাকে। বাইরের কাগজের বাক্সটির প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি? ‘এখানে বিলাতী মদ পাওয়া যায়’ লেখা দোকানের চারদিকের ফুটপাথ আলো করে থাকে নানা রঙের, নানা আয়তনের কাগজের বাক্স। মদের মোড়ক। বোতলটি ব্যাগে ঢোকানোর পরে তেমন বাক্সের কোনও প্রয়োজন থাকে না আর। বেশ কিছু সামগ্রীর নয়নমোহিনী প্যাকেজিং চোখে পড়ে আজকাল। তাদের প্রস্তুতকারক সংস্থা শুধু প্রকৃতিপ্রেমের কথা বলে। আই লাভ মাই মাদার নেচার। পরিবেশপ্রেম বোঝাতে কাচের বয়ামের টিনের ছিপির উপরে জরির সুতো দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া থাকে চটের এক টুকরো কাপড়! তার পরে বয়ামটি ঢোকানো হয় আরও একটি কাগজের বাক্সে। বাক্সের মাঝবরাবর কাগজ কেটে বসিয়ে দেওয়া থাকে স্বচ্ছ ফিল্ম। এর ফলে বাইরে থেকেও ভিতরের বয়ামটি দেখতে পাওয়া যায়। এমন প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে। বাজারে ক্রমশ ভিড় করতে থাকা ইকো-ফেন্ডলি সামগ্রীগুলিও যেভাবে সেজেগুজে আমাদের সামনে মুখ দেখায়, তার ফলে ফিকে হয়ে যেতে থাকে পরিবেশপ্রেম নিয়ে আমাদের মূল ভাবনাই।

বহু ইমেলের তলায় বড় বড় করে লেখা দেখেছি - প্রিন্ট অনলি ইফ নেসেসারি। পরিবেশকে ভালবাসুন। গাছ বাঁচান। নিচে স্ট্যাম্প সাইজের জঙ্গল। গাছ কাটার অপকারিতা কিংবা কত গাছের বিনিময়ে কত কাগজ তৈরি হয় - তা নিয়ে কয়েক টেরাবাইট তথ্য মজুত রয়েছে আন্তর্জালে। সে প্রসঙ্গ থাক। মুশকিলটা হল, ইমেলের তলায় গাছ বাঁচানো নিয়ে বাহারি শ্লোগান লিখতে পারি আমরা। কিন্তু, একইসঙ্গে আরও অনেক বড় আসন্ন বিপদ দেখেও চুপ করে থাকতে পছন্দ করি। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরে যে পরিমাণ কার্ডবোর্ড বাক্স ফেলে দেওয়া হয় তার পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন টন। এর চার ভাগের মাত্র এক ভাগ পুনর্ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে ফেলে দেওয়া কার্ডবোর্ডের ৯৫ শতাংশই তুলে নিয়ে যান অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা, কাগজকুড়োনিরা। ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া কার্ডবোর্ডের প্রকৃত পরিমাণ কত, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয় না এ দেশের প্রেক্ষিতে। সিঁদুরে মেঘ ঘন হয় ক্রমশ। কিন্তু ঠিকঠাক তথ্য মেলে না।

আশার কথা হল, বিশ্বের বেশ কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা মিনিমাল প্যাকেজিং নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সম্প্রতি। কোনও দ্রব্যের জন্য যতটুকু প্যাকেজিং না হলেই নয়, ঠিক ততটুকু প্যাকেজিংয়ের বন্দোবস্ত করার নামই হল 'মিনিমাল প্যাকেজিং'। এর ফলে সামগ্রীর গুণগত মানের কোনও হেরফের হবে না। শুধু সরিয়ে দেওয়া হবে সেই সামগ্রীর সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া অদরকারি গয়না, অর্থাৎ অতিরিক্ত প্যাকেজিং। এর ফলে হয়তো পরিবহন সম্পর্কিত ড্যামেজ কিছুটা বাড়বে। কিন্তু উৎপাদন খরচা কমার ফলে কমবে দ্রব্যের দাম। দাম কমলে বাড়বে বিক্রি। অর্থনীতির সূত্র অনুসারে ভাল-মন্দ বিচারের ভার আপাতত সময়ের গর্ভে।

এক মোটিভেশনাল স্পিকারকে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বলতে শুনেছিলাম, উইশফুল থিংকিংয়ের ফলে শরীরে খেলা করতে শুরু করে সুখী হরমোন। মনে তাজা হাওয়া বয়। ভাল থাকার, আরও ভালভাবে বাঁচার ভাবনাটাই তো বাঁচিয়ে রাখে আমাদের। হাতে গোণা কয়েকটি সংস্থা যদি দলছুটের মতো এই সাধু-উদ্যোগে সামিল হয়, তা হলে সমস্যার সমাধান হবে না কোনওদিনই। ভাবতে ইচ্ছে করে, হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন ভাবনায় জারিত হোক সব সংস্থা, ছোট-মাঝারি-বড় নির্বিশেষে। আগামী দিনগুলোকে সামনে রেখে প্যাকেজিং নিয়ে ভাবনা নয়া রূপ পাক। মঙ্গলধ্বনি বেজে উঠুক।