আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ পঞ্চম সংখ্যা ● ১-১৫ মার্চ, ২০২৪ ● ১৯ ফাল্গুন - ২ চৈত্র, ১৪৩০

প্রবন্ধ

ধাষ্টামো সর্বত্র

সুখবিলাস বর্মা


কথাটি হল ধাষ্টামি বা ধাষ্টামো। কী করে মাথায় এল এই কথাটি? 'জি বাংলা' চ্যানেলে জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘নিম ফুলের মধু’র দত্ত পরিবারের বড়ো ভাই খিটখিটে খেঁকুড়ে ‘জেঠু’ চরিত্রটি বেশ মজার। কারুর কথা বা কাজ পছন্দ না হলেই তিনি সব কিছুতেই দেখেন ধাষ্টামি বা ধাষ্টামো - খেঁকিয়ে ওঠেন, ‘ধাষ্টামো হচ্ছে!’ ধাষ্টামোর আভিধানিক অর্থ লাজলজ্জাবিহীনতা, লজ্জা শরমের বালাই নেই যেখানে।

সিরিয়াল-এর চরিত্রের মুখে ব্যবহৃত কথাটি কিন্তু লাজলজ্জাবিহীনতার চেয়েও আরও অনেক কিছু প্রকাশ করে। এবং তা করে বলেই এর সঠিক প্রয়োগ আজকের পরিস্থিতিকে - বিশেষত রাজনৈতিক অবস্থানকে ঠিক ঠিক প্রকাশ করতে বিপুলভাবে সাহায্য করে। কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

প্রথমে আসছি আমাদের লাটসাহেব মহোদয়ের কথায়। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে সুদূর কেরালা থেকে তিনি এলেন পশ্চিমবঙ্গে। মাননীয় শ্রী সি. ভি. আনন্দ বোস প্রাক্তন আমলা, নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ দক্ষ প্রশাসক। মাননীয় রাজ্যপালের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল রাজ্য সরকারের পাঠানো তিনটি নাম থেকে ষ্টেট ইলেকশন কমিশনারের শূন্যপদের জন্য নাম বাছাই করা। তিনি বেছে নিলেন সদ্য প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে। একবারও ভাবলেন না, মুখ্যসচিব হিসাবে কতটা দক্ষ ছিলেন তিনি, তাঁর বায়োডাটা থেকে দেখলেন না পঞ্চায়তিরাজে কাজ করার কী অভিজ্ঞতা তাঁর। রাজীব সিনহা ষ্টেট ইলেকশন কমিশনারের পদে যোগদান করার তিন দিনের মধ্যে পঞ্চায়েত বিভাগ, স্বরাষ্ট্র বিভাগ, মুখ্যসচিবের সঙ্গে, জেলাশাসক এস.পি.-দের সঙ্গে আলোচনা না করেই, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়েই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন। স্পষ্টতই বোঝা গেল কার পরামর্শে এ কাজ করেছেন তিনি। রাজ্যের মানুষ বুঝে গেল কি ঘটতে চলেছে, প্রশাসন-পুলিশের সর্বস্তরের আধিকারিকেরা বুঝলেন কী চাইছেন নির্বাচন কমিশনার মহোদয়। তৃণমূল কংগ্রেস দলের ক্যাডারগণ বুঝলেন তাদের পোয়াবারো। নমিনেশন পর্ব থেকেই শুরু হল ক্যাডার-নেতা নেত্রীর তাণ্ডব, চলল ভোট গণনা পর্যন্ত। রাজ্যপাল হয়তো বুঝলেন কেমন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেছেন তিনি। তিনি পুরো সময়টা মিথ্যা আশ্বাস দিলেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবেই। লড়াই শুরু করলেন তাঁরই নিয়োগ করা কমিশনারকে কত রকমের নির্দেশ দিলেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে। নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে কেস হল - কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সহ একগুচ্ছ নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট। বাংলার মানুষ ভাবল, এবার তারা তাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু রাজীব সিনহা হাইকোর্টের নির্দেশকে উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য রিকুইজিশন দিলেন নির্বাচন কাণ্ডের শেষ মুহূর্তে - স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও বাহিনী পাঠাল ভোট গণনার দিন। ফল যা হওয়ার তাই হল। নমিনেশন, ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা সর্বত্রই তৃণমূ্লী তাণ্ডব। প্রকটভাবে প্রকাশ পেল রাজ্যপাল, ষ্টেট নির্বাচন কমিশনার এবং দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ধাষ্টামো।

তবে মাননীয় আনন্দ বোসের অসীম ধাষ্টামো দেখা গেল বাংলার উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে - বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তাঁর ‘আচার্য’ ভূমিকায়। বিধানসভায় আইন পাশ করে রাজ্য সরকার চেয়েছিল সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হবেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। ধাষ্টামোর এও এক অনন্য প্রকাশ। বিধানসভায় পাশ করা সেই বিলে রাজ্যপালের সম্মতি মেলেনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য ‘সার্চ কমিটি’তে তাই রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি রাখতে সরকার মরিয়া। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে ইউজিসির নির্দেশিকা না মেনে বেআইনিভাবে বহু অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা চলছিল । রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ মমতা-পার্থ-অভিষেকের নেতৃত্বে নিয়োগ সহ নানা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে, উপাচার্য নিয়োগও সেই আখড়ার অন্তর্ভুক্ত। নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে একাধিক কেসে নেতা নেত্রীদের কীর্তি ফাঁস হয়ে চলেছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুখ পোড়ানোর পরে প্রাক্তন আমলা শ্রী বোস এগিয়ে এলেন এই শিক্ষার অঙ্গনে। আইন/নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিযুক্ত অনেক উপাচার্যের নিয়োগ বাতিল হল, কিন্তু নতুন কাউকে নিয়োগ করতে গেলে যে ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করা প্রয়োজন সে ব্যাপারে কোনোও সদর্থক পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করলেন আইনের তোয়াক্কা না করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এবং ইউজিসির নির্দেশিকা অনুসারে ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশ সহ প্রেরিত প্যানেল থেকে অধ্যাপক পদে দশ বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকই উপাচার্য হতে পারেন। প্রাক্তন আমলার প্রশাসনিক নৈতিকতা শ্রী বোস মেনে চলবেন সেটাই বঙ্গবাসী আশা করছিলেন। কেরালার বিজেপিপন্থী মাননীয় আনন্দ বোস তাঁর আমলাতান্ত্রিক নৈতিকতা ভুলে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট-এর ভূমিকা পালন করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, ইউজিসির নির্দেশিকা, রাজ্যপালের পদমর্যাদা সব কিছু ভুলে গিয়ে মাননীয় বোস উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে এক প্রাক্তন বিচারক সহ কয়েকজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ করলেন। রাজ্য সরকারের এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সঙ্গে তাঁর সংঘাত তুঙ্গে উঠল। রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে লড়াই হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছাল। উপাচার্যদের বিরুদ্ধে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের হামলা, কনভোকেশনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-আন্দোলন ইত্যাদি অশান্তির সব সীমা ছাড়িয়ে গেল। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপালকে কোনোরকম পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু মাননীয় বোস যাদবপুরে তাঁর খেল দেখালেন । তাঁরই নিয়োগ করা উপাচার্যকে তিনি অসম্মান করলেন, বরখাস্ত করলেন। রাজ্য সরকার উপাচার্য মহোদয়কে সমর্থন জানালো, পদে বহাল থেকে কাজ চালিয়ে যেতে বলল। পুরো ঘটনা আবহে আচার্য-উপাচার্য-রাজ্য সরকারের ধাষ্টামোর পূর্ণ প্রকাশ রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়ল।

ধাষ্টামোর আর একটি বড়ো নিদর্শন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ না ছাড়ার লড়াই। রাজ্য সরকারের বক্তব্য যে, কেন্দ্রীয় সরকার থেকে এক’শ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ইত্যাদি বাবদ অনেক টাকা পাওনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রালয়ের বক্তব্য যে, সেই সব প্রকল্প বাবদ প্রদত্ত অর্থের হিসেব দেওয়া হয়নি। কারণ আইন অনুসারে তথাকথিত Flagship Programme-গুলির খরচের হিসাব সিএজিকে অডিট করতে দেয়নি রাজ্য সরকার। কাজেই সিএজি প্রত্যায়িত হিসাব পেশ না করে যেমন তেমন মনগড়া হিসাব দিয়েই বেশি টাকা দাবি করা হয়েছে। যেমন বুলবুল, আমফান ও ইয়াস-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪২,৮৬৬ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করা হয়েছে, যার কোনো সারবত্তাই নেই। সরকারের কোনো রিপোর্টে বুলবুল ও ইয়াসের খরচের তেমন কিছু উল্লেখ নেই। Economic Review 2020-21 অনুসারে কোভিড-১৯ ও আমফান বাবদ ঐ বছরে খরচ ২৮,৮৩,১১ কোটি, আমপানের খরচ ১,৯৬৯ কোটি টাকা। অথচ এই বাবদ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ৩২,৩১০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার এমন দাবিকে কেন আমল দেবে বলুন তো। আসলে এসব তিনি করছেন বাংলার মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর জানা উচিত যে দুর্নীতির চারণভূমি 'শিক্ষা'র অন্তর্গত নানা প্রকল্প বাবদ ১৫,৮৬৪ কোটি, একশ দিনের কাজে ৬,৫৬১ কোটি, খাদ্য ভর্তুকির ১,২৬৩ কোটির জন্য অডিট করতে পারমিশন না দিলে টাকা মিলবে না। টাকা দেওয়া উচিতও নয়। ভাইপো সহ সাংসদদের দিয়ে দিল্লীতে দরবারের নামে হুজ্জোতি করে প্রচার পাওয়া যেতে পারে - বকেয়ার টাকা নয়। এই সরকারের জালিয়াতির একটা বড়ো ঘটনার উল্লেখ করছি। 'বাংলার বাড়ি' নামক প্রকল্প নিয়ে মমতাদিদির বড়াই সকলের জানা। মজার কথা, প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মশাই-এর বাজেট ভাষণে দাবি ছিল যে ২০১৭-১৮ থেকে চার বছরে এই প্রকল্পে ২৭ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর মিথ্যা ভাষণ বার বার সভার নজরে আনা সত্বেও অর্থমন্ত্রী মিথ্যাচারে বিধানসভাকে বিভ্রান্ত করছিলেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ কেস করতে হয়েছে। সেই কেসে মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়ের রায়ে মন্ত্রীর মিথ্যা ভাষণের কথা অস্বীকার করা হয়নি। তাঁর রায় অনুসারে বছরের পর বছর বিধানসভায় মিথ্যাচার করে মন্ত্রী মহোদয় নাকি সভাকে intentionally বিভ্রান্ত করেননি। অবশ্যই সেটা ছিল বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের subjective judgement। ফল হল এই যে ২০২২-২৩ বাজেট বক্তৃতায় আবার ডাহা মিথ্যা বলে নতুন মন্ত্রী দাবি করেছেন যে এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ৪৭.৩৪ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে। মমতাদিদির এ ধরনের কাজকে বাংলার মানুষ নাকি তাদের প্রতি ভালোবাসারই প্রকাশ হিসাবে দেখে। তবে কেন্দ্রীয় টিমের পরিদর্শনের আগে জেলায় জেলায় ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের টাকায় তৈরি কিছু বাড়ির 'বাংলার বাড়ি' নামের প্ল্যাকার্ড খুলে ফেলার আদেশে এই কাণ্ডের খানিকটা রহস্য উন্মোচিত হল। এ রকম মিথ্যা দিয়ে বাংলার মানুষকে ঠকিয়ে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এমন জালিয়াতির ঘটনা দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে। একশ দিনের কাজে ভুয়ো জব কার্ডের সঠিক সংখ্যা কত? সেইসব জব কার্ডে তোলা টাকা কার ঘরে যাচ্ছে? জলপাইগুড়ির এক নামকরা মন্দিরের সামনে যে বিশাল পুকুর সংস্কার করা হল একশ দিনের কাজের অর্থ দিয়ে, সেই টাকা কার পকেটে গেছে? একশ দিনের প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের দেয় অংশ সহ কোটি কোটি টাকার মজুরী বাকি আছে। একশ দিনের কাজে রাজ্য সরকারের নিজের দেয় কত টাকা বাকি তার উল্লেখ না করে মুখ্যমন্ত্রী বা নেতানেত্রীরা দাবি করছেন যে একশ দিনের টাকা রাজ্য সরকারই দেবে। অবশ্যই রাজ্য সরকারকে দিতে হবে কারণ কাজ করিয়েছে রাজ্য সরকার। কবে মিলবে সে টাকা? দুর্গাপুজোর অনুদান, জাঁকজমক বাবদ খরচে তো এতটুকু দেরি হয় না?

গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের প্রসঙ্গে 'গীতাঞ্জলী হাউজিং প্রোগ্রাম'-এ ২০১১ থেকে ২০১৬ অডিটে প্রকাশ যে সরকারের ২,১৮,৭০৯ লক্ষ্য মাত্রা থাকলেও বাড়ি তৈরি হয়েছে মাত্র ১,৮১,৮২৬টি। ঘটেছে বহু অনিয়ম। উপভোক্তা/সুবিধাভোগী নির্বাচনে বিশাল গলদ, তালিকায় রয়েছে বহু পাকা বাড়ির মালিক। বাড়ির কার্পেট এরিয়া প্রকল্প নির্দিষ্ট ২৫ বর্গমিটারের চেয়ে কম, ৬০%-এর বেশি বাড়িতে টয়লেট নেই। বাড়ি তৈরির অনেক টাকা ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে আছে ইত্যাদি। অর্থাৎ বছরে দু' লক্ষ বাড়ি নিয়ম মেনে নির্মাণ করার দক্ষতা এই সরকারের নেই। বাড়ি নির্মাণের সরকারী অনুমোদন পায়নি এমন বহু উপভোক্তার কাছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী অভিনন্দন পত্র পাঠিয়েছেন। রেশন বাবদ প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাহায্য, এসএসএ সহ শিক্ষা সংক্রান্ত নানা প্রকল্পে অর্থ সাহায্য, খাদ্য সুরক্ষার টাকায় 'খাদ্যসাথী' ইত্যাদি নিয়ে চলছে এমনতর কারবার। অডিট করতে বাধা দেওয়ার কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট। অডিট না হওয়ার জন্য সঙ্গত কারণেই কেন্দ্রীয় সরকার অনেক প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে বাংলার গরীব সাধারনের। অডিট দূরের কথা, 'ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট' না দেওয়ার জন্য ফিনান্স কমিশনের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে গ্রামীন ও শহুরে স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন সংস্থাগুলি। ২০১৭ সময়কাল পর্যন্ত এই সার্টিফিকেট বাকি প্রায় আড়াই লক্ষ, যার মধ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের ৫৪,০০০, শিক্ষা বিভাগের ৪২,০০০ এবং পুর বিষয়ক বিভাগের ২৩,৭২৭। এ ছাড়াও বহু প্রকল্পের 'ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট' দেওয়া হয়নি।পিএল অ্যাকাউণ্টে হাজার হাজার কোটি টাকা পড়ে থাকা সত্বেও বাজার ও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রভুত ঋণ নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ধারা অনুযায়ী বিধানসভার কাছে সরকার দায়বদ্ধ (Accountable)। সেই জন্যই পার্লামেন্ট সহ সমস্ত রাজ্যে পিএসির চেয়ারম্যান হন বিরোধীদল মনোনীত কোনো সাংসদ/বিধায়ক। কিন্তু ২০১৬-র নির্বাচনের পরে ২০১৮ থেকে ২০২১ নির্বাচন পর্যন্ত সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়ে বিরোধী দলের কাউকে পিএসি'র চেয়ারম্যান করা হয়নি। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে পিএসির চেয়ারম্যানের পদটিতে এভাবে নিজের লোক রাখার পাকা ব্যবস্থা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবিধান অনুযায়ী পিএসি'র প্রথম ও প্রধান কাজ বাজেট অতিরিক্ত ব্যয় নিয়মিতকরণ। প্রত্যেক আর্থিক বছরের সিএজি'র রিপোর্ট স্ক্রুটিনি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির সাক্ষ্য ভিত্তিক পিএসির প্রতিবেদন অর্থ বিভাগ বিধানসভায় বিল পেশ করবে এবং আলোচনান্তে বিভিন্ন বাজেট হেডের অন্তর্গত ব্যয়গুলির নিয়মিতকরণ করবে। কিন্তু ২০০৮ পর্যন্ত ব্যয়ের নিয়মিতকরণের পর পিএসির রিপোর্ট পাওয়া সত্বেও পরবর্তী বছরগুলোর নিয়মিতকরণ ২০২১ পর্যন্ত অর্থ বিভাগ করতে পারেনি কারণ এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা আদায় করতে পারেননি। সংবিধানের বাধ্যবাধকতাকে এই সরকার বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলেছেন।

ধাষ্টামোর আরও কত উদাহরণ চাই? যে বিষয়েই কথা বলবেন, দেখবেন ভূরি ভূরি উদাহরণ । শুধু একটু চোখ কান মন খোলা রেখে বিচার করতে হবে।