আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ প্রথম সংখ্যা ● ১-১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ● ১৬-২৯ পৌষ, ১৪৩০
প্রবন্ধ
মফস্বলির কলকাতা
অমিয় দেব
মফস্বল থেকে আসা কোনো তরুণের কাছে কলকাতার এক রোমাঞ্চ তার ট্রামগাড়ি। রেলের মতো অমন জোড়া লাইন পাতা শহরের রাস্তায়! উপরে বিদ্যুতের তার। আকশি গোছের এক লম্বা লাঠি উঠে গেছে ট্রামের মাথা থেকে ওই তারে। আটকেও আছে তাতে এক কপিকল মারফত। তারে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে সেই আকশি। খুলে পড়ে না, কারণ তাকে ধরে রেখেছে বিদ্যুৎ। রেলগাড়ির চাইতে সরু মাপের দুই কম্পার্টমেন্ট। দুই শ্রেণী, প্রথম ও দ্বিতীয়। প্রথমের আসন গদি-আঁটা, দ্বিতীয়ের কাঠের। ভাড়া আলাদা। চালকের এক ছোট্ট কোঠা মতো আছে - প্রথম কম্পার্টমেন্টের সামনের দিকে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চালাতে হয় তাকে। রেলের আছে হুইসিল, এক তীব্র বাঁশি। মোটরগাড়ির আছে হর্ন। ট্রাম বাজায় ঘন্টা। গাড়ি দুটোতেই থাকে একজন করে কন্ডাক্টার। সে শুধু টিকিটই দেয় না, ট্রাম থামবার বা চলবার নির্দেশও দেয়। দুটো গাড়িতেই ঝোলে এক দড়ি। তা একবার বা দুবার টেনে থামতে বা চলতে বলা যায়। প্রথম কন্ডাক্টারের সঙ্গে দ্বিতীয় কন্ডাক্টারের যোগাযোগের ব্যবস্থাও আছে, যাতে দ্বিতীয় শ্রেণীর ওঠা-নামাতে কোনো অসুবিধে না হয়।
ট্রামগাড়ির শবব্যবচ্ছেদ করছি না; বলছি বিশ শতকের মধ্য দিনে মফস্বল থেকে আসা এক তরুণের চোখে দেখা এই আজব পরিবহনের কথা। চলে ঈষৎ ঢিমেতালা গতিতে। কিন্তু সামনে অনেকদূর ফাঁকা থাকলে একটু ছুটতেও পারে। তবে শ্যেন চক্ষু চাই চালকের। আর প্রয়োজনে ব্রেক কষাও চলে ঘটাং শব্দে দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রাম গাড়িটি। (জীবনানন্দের ঘটনাটি ঘটবে তিন বছর পরে) ইলেকট্রিক ট্রেন যখন শুরু হল (আর এখন তো তা জলভাত) তখন কি তার এক মৃদু উপমান ছিল ট্রাম? ঘোড়ায় টানা ট্রামও তো শুনেছি কলকাতায় ছিল - সে কোন মান্ধাতার গল্প! সেই সঙ্গেই বুঝি (?) একদা ট্রাম টানার কিছু স্টীম এঞ্জিনও ছিল! ইতিহাসে দেখছি, ট্রাম হেথা বৈদ্যুতিক হল ১৯০২-এ - এশিয়ায় প্রথম। আর আমি প্রথম ট্রাম চড়লাম ১৯৫১-তে। বড়ো ব্যক্তিগত এই কাহিনি! নিবন্ধ পাঠকের করুণা চাই।
সিলেট থেকে কলকাতা এসে বেনেপুকুরের প্রফুল্ল ছাত্রাবাসে উঠেছিলাম। সেই ছাত্রাবাস লোয়ার সার্কুলার (এখনকার জগদীশচন্দ্র বসু) রোড থেকে দু-মিনিট। অর্থাৎ বেরোলেই বস্তুত ট্রাম-রাস্তা। আবার কাছেই এক মোড়ে দুই ট্রামলাইনের জংশনঃ উত্তর থেকে আসছে দীর্ঘ হাওড়া-বালিগঞ্জ লাইন, আর উত্তর-পশ্চিম থেকে ‘ওয়েল-গড়িয়া’, আসলে ডালহাউসি তথা বিবাদী বাগ থেকে ধর্মতলা ও ওয়েলেসলি (এখনকার লেনিন সরণি ও রফি আহমদ কিদোয়াই রোড) হয়ে রিপন স্ট্রীট-উত্তর বাঁয়ে রয়েড স্ট্রীট ও এলিয়ট রোড ধরে এসে বালিগঞ্জগামী লাইনে সংযুক্ত হচ্ছে। কাছেই আছে আবার এক ট্রামডিপোও - কয়েকটা ট্রামের সেখানে বাড়িঘর। আর লাগোয়া সেই বিস্তীর্ণ সমাধিস্থল যেখানে অবস্থিতি ‘দাঁড়াও, পথিকবর...’ লেখা পাথরের। তা পেরিয়েই ট্রাম বাঁয়ে মোড় নিয়ে পার্ক সার্কাস যায়।
হাঁটা পথের দূরত্বে আমি মফস্বলি তখন হাঁটছিঃ যেমন দুর্গাপ্রসাদদার (ভট্টাচার্য) সঙ্গে কনভেন্ট রোডে ‘সত্যযুগ’ পত্রিকার আপিসে দেখা করতে গেলে হেঁটে যাচ্ছি। কিন্তু দূরে যেতে হলেই চাপছি ট্রামে। শিয়ালদা খুব একটা যাওয়া হতো না, তবে মাঝে মাঝেই এক সুলভ খাবার দোকানে যেতাম গড়িয়াহাটে। হ্যাঁ, একটু অপেক্ষা করতে হয় বইকি ট্রামের জন্য। তবে এসে দাঁড়ালেই হল। নিচু পাদানি, হাত বাড়ালেই স্টীলের খুঁটির সহায়, স্বচ্ছন্দ আরোহণ। বসবার জায়গা না পেলেও অসুবিধে নেই, দাঁড়াবার প্রশস্ত ব্যবস্থা। তবে জানলার কাছে বসতে পেলে তো স্বর্গ। তাকিয়ে তাকিয়ে পাশের বাড়িঘরগুলি প্রায় মুখস্থ হবার জোগাড়। এমনি করেই গড়িয়াহাট ট্রামডিপোর নিরেট দেওয়াল বা বালিগঞ্জ ফাঁড়ির ব্যস্ততা বা বালিগঞ্জ ক্রিকেট মাঠের সবুজ ঘাসে অভ্যস্ততা আসে। ট্রাম লাইনও আবার কোথাও রাস্তা থেকে কিঞ্চিৎ উঁচুতে, আবার কোথাও রাস্তারই অংশ। বলা বাহুল্য ঢং ঢং বেশি দ্বিতীয় ক্ষেত্রে।
কলেজে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করতে একটু দেরি হচ্ছিল, তাই এই ট্রামগাড়ি চড়ার বিলাসিতা। বিলাসিতাই। কেননা শেষ পর্যন্ত যে-রাস্তায় কলেজ করতে এলাম সেখানে ট্রামলাইন ছিল না। তাছাড়া যেখানে থাকবার ব্যবস্থা হল সেই কলেজ-হস্টেল ছিল কলেজ সংলগ্ন। আমহার্স্ট স্ট্রীটে (এখন রামমোহন সরণি) সিটি কলেজ ও রামমোহন রায় হস্টেল। দুর্গাপ্রসাদদার সাহায্যে বিনা বেতনে পড়বার ব্যবস্থা হল। তাছাড়া একটা বৃত্তিও পেয়ে গেলাম যাতে হস্টেল ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচ উঠে আসে। মনে আছে, ওই ব্রাহ্ম কলেজের অধ্যক্ষ অমিয় সেন আমার আবেদনপত্র মঞ্জুর করে বলেছিলেন, যাঁর নামে এই বৃত্তি তাঁর (শিবনাথ শাস্ত্রীর) নামের মর্যাদা রেখো। ভর্তি হলাম দু-বছরের ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্সে। পড়তে হবে বাংলা, ইংরেজি, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, গণিত ও জীববিজ্ঞান। আমার মধ্য-দক্ষিণ কলকাতার অস্থায়ী ঠাঁই বদলে এলাম উত্তর কলকাতায়। নতুন জীবন শুরু হল। ট্রাম এখানেও চড়া যায়, তবে ছুটিছাটায়। হেদোর মোড়ের কাছে আমার সদ্যলব্ধ বন্ধু অশোকের বাড়ি যেতে পাশের বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রীট দিয়ে হেঁটে এসে কর্নওয়ালিস রোডে (এখনকার বিধান সরণিতে) পড়ে উত্তরমুখো গাড়িতে চাপা। কখনও কখনও খানিক এগিয়ে গিয়ে, ডাইনে স্টার থিয়েটার পেরিয়েই, হাতিবাগান মোড়। আরও এগোবার বাসনা জাগলে পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজীমূর্তির পাদদেশে। একা একা। তাই সই, কেননা অশোককে ওই বয়সেই ছুটির দিনে রাঁধতে-বাড়তে হয়। আমাদের অন্য বন্ধু, আহিরিটোলার শিশির বড্ড পড়াশুনোপ্রবণ, একটু-আধটু গল্প যা করত তা তার দোতলার ঘরে বসেই। একবারই সে আমাকে অনতিদূর গঙ্গাতীরে নিয়ে গিয়েছিল। ভাগীরথী গঙ্গা এই আমি প্রথম দেখলাম। এরই জল না আমাদের মফস্বলে পূতপবিত্র, সকল পূজার অত্যাবশ্যক উপচার! হাওড়ার পোল তখনও দেখিনি, কলকাতা এসে নেমেছিলাম শিয়ালদায়।
রামমোহন রায় হস্টেলে দোতলার যে-ঘরে আরও দুজন নাকি তিনজনের সঙ্গে সীট পেয়েছিলাম তার উত্তরের জানলা দিয়ে এক প্রশস্ত বাগান দেখা যেত। উঁচু দেওয়াল ঘেরা। ওরই অন্য প্রান্তে ছিল সেই বাড়ি যেখানে রামমোহন রায় তাঁর আত্মীয়সভা বসাতেন। আমাদের জানলা দিয়ে সেই বাড়িটা অবশ্য দেখা যেত না। রাস্তায় নেমে একটু উত্তরে এগোলে তা দেখা যেত। ঐতিহ্যবাহী অট্টালিকা, যদিও জরাজীর্ণ। রাস্তার উল্টোদিকে হৃষীকেশ পার্ক। পার্কের উত্তরে বাদুড়বাগান লেনে ছিল বিদ্যাসাগরের বাড়ি। রামমোহন, বিদ্যাসাগর - দূর হলেও এঁদের স্মৃতির সান্নিধ্য! কম কথা এক মফস্বলি তরুণের কাছে? বাদুড়বাগান ধরে এগিয়ে গেলেই বোধকরি আপার সার্কুলার (এখনকার প্রফুল্লচন্দ্র রায়) রোডে পড়া যায়; এবং ওই মোড়েই না বসু বিজ্ঞান মন্দির (কোন ঈষৎ বিজ্ঞানচেতন মফস্বলি না জানে বসু মানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু!)। আর ওদিকে (রাজাবাজার) সায়েন্স কলেজের মূল তারকনাথ পালিত ভবনের তিনতলায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কক্ষ, যেখানে তিনি শেষজীবন কাটিয়েছিলেন। মফস্বলির কাছে এক তীর্থ। শহর কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ জুড়েছে যে-দীর্ঘ রাস্তা তা যে এই দুই বিজ্ঞানীর নামে এখন নামাঙ্কিত তা কে না জানে!
রামমোহন রায় হস্টেল থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অবশ্য অত কাছে নয়। তাছাড়া আমহার্স্ট স্ট্রীট গিয়ে উত্তরে যে-রাস্তায় পড়েছে, সেই বিবেকানন্দ রোডেও ট্রামলাইন নেই। আর ট্রাম ব্যতীত অন্য কোনো পরিবহনে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে এই মফস্বলির। অতএব একদিন হাঁটা দিলাম। ভেতরের রাস্তা চিনি না, তাই বিবেকানন্দ রোডই নিলাম। প্রথমে বিধান সরণি ক্রসিং, তারপর আরও পশ্চিমে হেঁটে পেলাম চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউ ক্রসিং, তারও পরে পড়লাম চিৎপুর রোডে। বাঁয়ে যাব এবার। চিৎপুরে ট্রাম চলে, কিন্তু আমার গন্তব্য কাছেই। দ্বারকানাথ ঠাকুরের গলি। তখনো রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেরি আছে। বয়স হয়ে গেলেও ঠাকুরবাড়িকে তার আপন রূপেই পেলাম। তবে সুরক্ষিত। ওই না সেই নাটমন্দির যেখানে রবীন্দ্রনাথ ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ করেছিলেন!
।। ২ ।।
কলকাতায় বাসে চড়তে শুরু করলাম দক্ষিণেশ্বরের পথে। বাসটা আমহার্স্ট স্ট্রীট দিয়েই যেত, বোধহয় ৩২ নম্বর। কালীমন্দিরই গন্তব্য নয় (যদিও তা দেখেছি, যেমন দেখেছি ঠাকুর রামকৃষ্ণের নিরাভরণ বাসকক্ষ ও তাঁর ধ্যানস্থল বটগাছ), গন্তব্য দক্ষিণেশ্বর সন্নিহিত মফস্বল আড়িয়াদহ। সেখানে আমার সিলেটের এক কিশোর বন্ধু, সঞ্জয় মজুমদার - যাকে আমি তার ডাকনামে সমীর বলে ডাকতাম - তখন আড়িয়াদহের স্থানীয় স্কুলে উঁচু ক্লাসে পড়ে। থাকে এক ছোটো একতলা বাড়িতে তার দুই দিদির সঙ্গে। খুবই সংবেদী তার স্বভাব। গান গায়। সুবিনয় রায়ের কাছে গান শিখছে। পাঠ্যাতিরিক্ত বই পড়তে ভালোবাসে। একটু-আধটু লেখেও। পরে কবি হিসেবে একটা ছাপও রাখবে। রামমোহন রায় হস্টেলে আমার খুব নিকট কোনো বন্ধু হয়নি। একটু মুখচোরাও বোধহয় ছিলাম। ক্রীড়ামোদী মোটেও ছিলাম না। হস্টেলের ভেতরের মাঠে ছেলেরা ক্রিকেট খেলত। একদিন আমিও নেমেছিলাম। ব্যাট হাতে দাঁড়িয়েছিলামও। কিন্তু সুজিতের (ভালো খেলত) দ্বিতীয় বলেই স্ট্যাম্পড আউট। তারপর আর ওমুখো হইনি।
কলেজের পড়াশোনায় মন ছিল। বাংলায় বিভূতি চৌধুরী ও তারকনাথ, মানে লেখক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্লাস ভালো লাগত। অনেক ক্লাসই হত গ্যালারিতে। নিচে এক লম্বা টেবিলের ওপাশে এক সমান লম্বা ব্ল্যাকবোর্ড। গণিতের মাস্টারমশাইরা তাতে আঁক কষে কষে পড়াতেন। একটু কড়া গোছের ছিলেন এক শিক্ষক। তাঁকে জব্দ করবার জন্য দু-তিনজন ছাত্র একবার করল কী, তাঁর মাথার উপরের ফ্যানে এক ঝাড়ন বেঁধে রাখল। তিনি ক্লাসে ঢুকে পাখা চালাতেই ঝাড়নটা প্রথমে আস্তে আস্তে, তারপর জোরে শোঁ শোঁ শব্দে ঘুরতে লাগল। তিনি দারোয়ান ডাকতেই সে এল। মালকোঁচামারা গেঞ্জিগায়ে সেই দারোয়ান একলাফে টেবিলে উঠল। সে এক দৃশ্য! আরেকদিন এক ইংরেজির মাস্টারমশাই এক কাণ্ড করেছিলেন। এডিনবরা না কোথাকার পাশ, খুব সাহেবি কায়দায় ইংরেজি বলতেন। আমাদের সহপাঠী সৌমিত্র (চট্টোপাধ্যায়) আমাদের সঙ্গে গ্যালারিতে বসে (পরে ছবি ও নাটক করে যে বিখ্যাত হয় এবং কোভিড যাকে কেড়ে নিল সেই সৌমিত্রই)। সে ছাত্র ইউনিয়ন করত। ইউনিয়ন আপিস থেকে তাকে চেয়ে পাঠিয়ে এক ইংরেজি চিরকুট এল। সৌমিত্র তার নামের বানান লিখত Soumitra। মাস্টারমশাই চেঁচিয়ে পড়ে ফেললেন, সুমিত্রা চ্যাটার্জি ওয়ান্টেড ইন দি ইউনিয়ন রুম। গ্যালারিসুদ্ধ ছেলেরা হেসে উঠল। সৌমিত্রর ফর্সা গাল লাল হয়ে গেল। মাস্টারমশাই ভুলে গিয়েছিলেন, এটা ডে শিফট, তিনি পড়াচ্ছেন ছেলেদের, এখানে কোনো 'সুমিত্রা' থাকতে পারে না। আরও কোনও কোনও মজা ওই দু-বছরে হয়তো হয়েছিল, এক্ষুনি মনে পড়ছে না। তবে জীববিজ্ঞানের প্র্যাক্টিকাল ক্লাসে, মনে আছে, ব্যাঙ কাটতে গোড়ায় ভালো লাগত না; পরে অভ্যেস হয়ে যায়। পদার্থবিদ্যায় যিনি তাপ পড়াতেন, তাঁর ঈষৎ নামডাক ছিল। রসায়নশাস্ত্রের কথা সব ভুলে মেরে দিয়েছি।
হস্টেলের দরজা বন্ধ হয়ে যেত সন্ধেরাত্তিরেই। তাই সিনেমা দেখতে চাইলে ইভনিং শোতে যাওয়া একটু অসুবিধের ছিল। ছুটির দিনে ম্যাটিনিই ছিল প্রকৃষ্ট পন্থা। একটা ছবি দেখার কথাই মনে আছে। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, যাতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি প্রথম আবির্ভূত হন। আর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁর অনবদ্য ‘মাসিমা, মালপো খামু’-র জন্য। দেখেছিলাম আমহার্স্ট স্ট্রীট পাড়ারই কোনও হলে। পূরবীতে কি? ঠিক মনে পড়ছে না। তবে শস্তার সিটে। নিউ এম্পায়ারে সকালের শোতে ছ-আনার লাইন দেওয়ার গল্প পরের - তখন মফস্বলি থেকে অনেকটা কলকাত্তাই হয়ে উঠেছি। এই দু-বছর বরং, মফস্বলের পিছুটানেই কিনা জানি না, মাঝে মাঝে সপ্তাহান্তে আড়িয়াদহ গিয়ে দিন কাটিয়ে আসতে ভালো লাগত। সমীরের দুই দিদিও আমাকে স্নেহ করতেন। যতদূর মনে পড়ছে তাঁদের নাম ছিল ছায়া ও মায়া। তাঁদের সান্নিধ্যে কেমন একটা বাড়ি বাড়ি ভাব পাওয়া যেত। দুপুরে ভাত খেয়ে চৌকিতে শুয়ে সমীরের সঙ্গে গল্প করতে করতে হয়তো একটু ঘুমিয়েও নিতাম। তবে ছায়া বা মায়াদিদি ঠিক সময়ে ডেকে দিতেন। রিকশো করে দক্ষিণেশ্বর গিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রীটের বাস ধরতে হবে না?
[কৃতজ্ঞতাঃ প্রণব বিশ্বাস ও সৌরীন ভট্টাচার্য]
স্কেচঃ অভিজিৎ রক্ষিত