আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ সপ্তদশ সংখ্যা ● ১-১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ● ১৬-৩১ ভাদ্র, ১৪৩১
সম্পাদকীয়
তীব্র হোক গণআন্দোলন
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় মহিলা ডাক্তারকে যে নৃশংসতায় ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ধরনের নারকীয় ঘটনা ঘটলে মানুষ সরকার তথা প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা করে যে তারা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটিকে তৃণমূল কংগ্রেস ও তার সরকার যে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে সেখানে মানুষের এই প্রত্যাশার কোনো দাম নেই। ঘটনা পরম্পরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে তৃণমূল সরকার তথা প্রশাসন তাদের দুর্নীতি ও অপদার্থতার মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।
বারবার যেই কথাটি বলা দরকার তা হল এই যে একজন মহিলা ডাক্তার আমাদের সরকারি হাসপাতালে ৩৬ ঘন্টা টানা ডিউটিতে থাকার পর তার কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণ এবং হত্যার শিকার হয়েছেন। অথচ সেই আর জি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ তথা কর্তৃপক্ষ কোনো এফআইআর পুলিশে নথিবদ্ধ করেননি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন যে অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছিল এফআইআর করা। কিন্তু তা তিনি করেননি কেন? বরং মৃতার বাবা-মা যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তারা এফআইআর দায়ের করে, যা পুলিশ গ্রহণ করে রাত ১১:৪৫ মিনিটে, যেখানে সকালবেলাতেই ডাক্তারের মৃতদেহ সেই কুখ্যাত সেমিনার রুমে পাওয়া গেছে। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করে তার দেহ পুলিশের তৎপরতায় দ্রুততার সঙ্গে সৎকার করার পরে এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে দেখে সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি পারদীওয়ালা বলেছেন যে তাঁর ৩০ বছরের কর্মজীবনে তিনি এমন বিচিত্র কর্মকাণ্ড দেখেননি যা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পুলিশ করেছে। ইতিমধ্যেই মৃতার বাবা-মা জানিয়েছেন যে তাদেরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে প্রথমে জানানো হয় যে তাদের মেয়ে অসুস্থ, তার কিছুক্ষণ পরে জানানো হয় যে তাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেন এই মিথ্যা তাদের বলা হল? কে বলল? কার নির্দেশে বলল? এই প্রশ্নগুলির এখনও অবধি কোনো উত্তর নেই।
ইতিমধ্যে একটি ভিডিও দেখে রাজ্যের মানুষ শিউরে উঠেছেন। সেই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে যে সেই সেমিনার রুমটিকে ঘটনার দিন সকালে প্রায় মাছের বাজারের চেহারা দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ, কিছু ছাত্র, অধ্যক্ষের উকিল, আর জি করের সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু ব্যক্তি সবাই ক্রাইম সিনে দেদার দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। আজকাল শিশুরাও জানে যে অপরাধের ঘটনাস্থলকে সুরক্ষিত রাখা পুলিশের দায়িত্ব। সেই ঘটনাস্থলে যাতে অন্য কোনো মানুষ না আসে তা দেখা তাদের দায়িত্ব কারণ অন্য মানুষরা এলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সেমিনার রুমটিকে মাছের বাজারে পরিণত করে পুলিশ চূড়ান্ত অবিমৃশ্যকারিতার পরিচয় দিয়েছে। নাকি আসলে পুলিশ কারো নির্দেশে চাইছিল তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে? এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এই প্রশ্ন আরো জোরদার হয়েছে পুলিশ এই ঘটনা নিয়ে যে সাফাই দিয়েছে তাতে। কলকাতা পুলিশের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলা হল যে সেমিনার রুমটি প্রায় ৫১ ফুট লম্বা। মৃতদেহ থেকে ৪০ ফুট পুলিশ কর্ডন করে রেখেছিল। ভিড়টি হয়েছে তার বাইরের ১০-১১ ফুট জায়গায়। অথচ কী আশ্চর্য, ঘরটিতে ঢোকা এবং বেরোনোর একটিই রাস্তা রয়েছে। কেন সম্পূর্ণ ঘরটি সীল করে দেওয়া হয়নি? কেন লোকজনকে ঘরের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে? কোন ম্যানুয়ালে লেখা রয়েছে যে অপরাধস্থলকে এইভাবে বিভক্ত করে সেখানে অযাচিত লোকদের ঢুকতে দেওয়াটা তদন্তের অংশ? কলকাতা পুলিশ কি এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে?
আসলে কলকাতা পুলিশের কাছে এই সমস্ত প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। দীর্ঘ ১৩ বছর তৃণমূলের দলদাস হিসেবে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে ফেলার ফলে তারা তাদের পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্ববোধ সম্পূর্ণভাবে ভুলে গিয়েছে। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে যে আপোশ করতে করতে রাজনৈতিক প্রভুদের ভৃত্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে, প্রত্যেকটি ঘটনা থেকে কীভাবে শাসকদলের সুবিধা করা যায় এই ভাবনা ভাবতে ভাবতে কলকাতা পুলিশ সারা দেশের সামনে নিজেদের সম্মান ভূলুন্ঠিত করেছে। এই ডাক্তার ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় কলকাতা পুলিশের অপদার্থতা, তথ্যপ্রমাণ সুরক্ষিত না রাখতে পারার ব্যর্থতার দায় মেনে নিয়ে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
এই ঘটনায় প্রকৃত দোষী কারা তা খুঁজে বার করার দায়িত্ব আপাতত সিবিআই-এর। আর জি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ যে হাসপাতালে নানান দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তা এখন জলের মতন পরিষ্কার হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে সিবিআই এবং ইডি দুর্নীতির প্রশ্নে মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু বিষয়টা এমন নয় যে এই ভয়াবহ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই দুর্নীতির প্রশ্ন সামনে এল। আজ থেকে এক বছরেরও বেশি আগে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সেই হাসপাতালেরই একজন আধিকারিক। তারপরে সন্দীপ ঘোষকে বদলি করা হয়। তারপরে আবার তাকে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আর জি কর হাসপাতালেই স্থানান্তরিত করা হয়। এবং এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও, তার এফআইআর না করা, অসংবেদনশীল কথাবার্তা বলার পরেও তাকে আর জি কর থেকে সরিয়ে ন্যাশনাল মেডিকাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয় তিন ঘন্টার মধ্যে। কেন? সরকার, প্রশাসন তথা তৃণমূল কেন এই ব্যক্তিকে বাঁচাতে এত তৎপর? এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও সন্দীপ ঘোষের চাকরি যায়নি, তাকে সাসপেন্ড করা হয়নি। তিনি এখনও জনগণের টাকায় নিজের বেতন পাচ্ছেন কী করে? কেন সরকার তাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে? যেই দুর্নীতির অভিযোগে এখন তদন্ত চলছে সেই পাঁকে কি গোটা স্বাস্থ্য বিভাগ তথা সরকার ডুবে আছে? মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ এক বছর আগে জানানো হলেও কী করে এই ব্যক্তি আর জি কর হাসপাতালে অধ্যক্ষ থেকে গেলেন? এর উত্তর মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে তৃণমূল তথা সরকারের সম্পর্কটা ঠিক কী?
আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরকারের প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর নিজের হাতেই রেখেছেন। তিনি একই সঙ্গে পুলিশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইত্যাদি। আর জি কর কাণ্ডে এই কথা প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি পুলিশমন্ত্রী অথবা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। তাঁর তত্ত্বাবধানে কলকাতা পুলিশ তথ্যপ্রমাণ সুরক্ষিত রাখতে পারেনি, যেই কথা সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই জানিয়েছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে সন্দীপ ঘোষের মতন দুর্নীতিগ্রস্ত মাফিয়া আর জি কর হাসপাতালে একচ্ছত্র একনায়কতন্ত্র চালিয়েছে। অভিযোগ আসার পরেও মাননীয়া কোনোরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অতএব গোটা ঘটনার দায় নিয়ে পুলিশমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। বারংবার দেখা গিয়েছে যে কোনো ধর্ষণের ঘটনা যখনই রাজ্যের মানুষকে আন্দোলিত করেছে তখনই মুখ্যমন্ত্রী অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছেন। এই ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে গোটা আর জি কর প্রশাসনকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল, কলকাতা পুলিশের নগরপালকে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল, তিনি তার কিছুই করেননি। তাতে জনগণের রোষ আরও বেড়েছে। এখন তিনি দলীয় মঞ্চ থেকে সরাসরি তার দামাল ছেলেদের বলছেন যে ‘বদলা নয়, বদল চাই’ স্লোগান মানার আর প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং তারা যেন ‘ফোঁস’ করে ওঠেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জনগণের আন্দোলনের সামনে এই ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলে কী প্রমাণ করতে চাইছেন? ভয় দেখিয়ে বা ধমক দিয়ে বা ক্যাডার বাহিনীকে রাস্তায় নামিয়ে এই আন্দোলনকে কি আদৌ থামিয়ে রাখা যাবে?
রাজ্য তথা দেশজুড়ে আপাতত আর জি কর কান্ডকে সামনে রেখে যে গণআন্দোলন চলছে তার প্রধান দাবি সেই ডাক্তার মহিলার ধর্ষণ এবং হত্যার বিচার চাই। সিবিআই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই তদন্ত চালাচ্ছে। কিন্তু কলকাতা পুলিশ একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলেও সিবিআই এখন অবধি আর কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। বরং দেখা যাচ্ছে যে সন্দীপ ঘোষ রোজ সিবিআই অফিসে যাচ্ছেন, তাঁকে জেরা করা হচ্ছে, পরের দিন আবার তিনি সিবিআই দপ্তরে পৌঁছে যাচ্ছেন। কিছু মানুষের পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সিবিআই-এর তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। আমরা আশা করব যে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের সামনে সিবিআই হয়ত কিছু নতুন তথ্য পেশ করবে। তাঁরা যদি ভেবে থাকেন যে অপরাধস্থলের পরিবর্তন করা হয়েছে বলে তাঁরা বসে থাকবেন এবং জনগণ তা মেনে নেবে, তাহলে তাঁরা ভুল ভাবছেন। সিবিআইকে দ্রুত এই মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে। আমরা আশা করব সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয় সিবিআইকে সুপরামর্শ এবং নির্দেশ দেবেন।
আর জি করের ঘটনার বিচার চেয়ে যেই গণআন্দোলন গোটা রাজ্যজুড়ে হয়ে চলেছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব। ৯ আগস্ট বিকেলে নির্যাতিতার মরদেহ নিয়ে পুলিশের তড়িঘড়ি চলে যাওয়া প্রতিহত করার মাধ্যমে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তা ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছে। ১৪ আগস্ট মাঝরাতে লক্ষ লক্ষ মহিলা রাজপথে সমবেত হয়ে বিচারের দাবি তুলে ধরার পর তার অনুরণন সারা দেশে তো বটেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই মাঝরাতেই একদল দুর্বৃত্ত আর জি কর হাসপাতালে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালিয়ে চিকিৎসা পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে। নীরব দর্শক পুলিশের সামনেই এই ধ্বংসলীলা চলেছে। পুলিশ প্রশাসন তথা পুলিশমন্ত্রীর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
নারী-পুরুষ-ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবি থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিজের নিজের মতন করে বিচার চেয়ে এই আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন। কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের প্রতিটি শহরে-গঞ্জে এমনকী প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য মিছিল হচ্ছে রাজ্যে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য আন্দোলনকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যারা উন্নাও-হাথরস-কাঠুয়ার মতন ঘটনায় সরাসরি অভিযুক্ত, যারা বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মালা পরিয়ে জেল থেকে ছাড়িয়েছে, তারা হঠাৎ পশ্চিমবঙ্গে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে তৈরি হওয়া জনগণের আন্দোলনকে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত ‘ছাত্র সমাজ’-এর নামে বিজেপি-র ক্যাডার-রা নবান্ন অভিযানের নামে কলকাতা শহরে একদিন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করল। তার পরের দিন বিজেপি বাংলা বন্ধ ডেকে আরও একবার স্বাভাবিক জনজীবন ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা করল। এই সাম্প্রদায়িক এবং নারী বিদ্বেষী শক্তিকে বাংলার মানুষ নিশ্চিতভাবেই আবারও বর্জন করবেন। বিজেপির দুই দিনের কর্মসূচীর পরেই মানুষ আবার নির্যাতিতার বিচারের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। জনগণের আন্দোলন হাইজ্যাক করে নেওয়ার বিজেপি-র অপচেষ্টা ব্যর্থ হবেই।
আসলে বিগত দেড় দশক ধরে রাজ্যে তৃণমূল যে দুষ্কৃতি এবং মাফিয়ারাজ কায়েম করেছে মানুষ তার বিরুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আর জি করের নির্যাতিতার ঘটনা সাধারণ মানুষকে প্রবলভাবে আঘাত করেছে। একটি সাধারণ পরিবারের মেধাবী মেয়ে অনেক কষ্ট এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছিল, সে এমডি করে একজন নামী চিকিৎসক হতে পারত। কিন্তু তাকে তারই কর্মস্থলে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হল। তৃণমূলের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা মাফিয়াতন্ত্রের ডাক্তার প্রতিনিধি সন্দীপ ঘোষ এই ঘটনার পরে দুর্নীতিগ্রস্তের মতোই আচরণ করেছেন। মানুষের মনে পুলিশি অপদার্থতা এবং হাসপাতাল প্রশাসনের গতিবিধি এই সন্দেহের জন্ম দিয়েছে যে সরকার তথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা পুলিশ আসল সত্যকে গোপন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার যে জায়গা - বাড়ির ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে ডাক্তার হবে - তার এই নিদারুণ পরিণতি মানুষ স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেয়নি। তৃণমূলের সার্বিক দুর্নীতির যে চেহারা সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দেখেন, আর জি কর তাকেই এক বীভৎস রূপ দিয়েছে মানুষের মনে। তাই তাঁরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এই আন্দোলনের পাশে থাকা রাজ্যের বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির কর্তব্য। একই সঙ্গে মহিলাদের সার্বিক অধিকার এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলিকে রাজনৈতিকভাবে মানুষের সামনে উপস্থিত করার দায়িত্ব নিতে হবে বাম শক্তিদের। এখন সময় মানুষের পাশে থেকে তাদের আন্দোলনে নিজেদের নিয়োজিত রেখে তাদের সাহায্য করা। আর জি করের নির্যাতিতা যতক্ষণ না প্রকৃত বিচার পাচ্ছে, ততক্ষণ এই আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।