আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ একাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ জুন, ২০২৪ ● ১৬-৩২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১

সম্পাদকীয়

বিপজ্জনক ভাবমূর্তি


মিগুয়েল আঞ্জেল আসতুরিয়াস (Miguel Ángel Asturias - জন্মঃ ১৮৯৯ - মৃত্যুঃ ১৯৭৪)। গুয়াতেমালার কবি-সাহিত্যিক। ১৯৬৭-তে তাঁর হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেবার সময় বলা হয়েছিল - "অবক্ষয়ী সমাজের সীমাহীন দুর্নীতিকে কাজে লাগিয়ে স্বৈরাচারী শাসক কীভাবে জনগণকে নিপীড়ন করে 'এল সেনোর প্রেসিদেন্তে' উপন্যাসে তা বিবৃত হয়েছে।"

'এল সেনোর প্রেসিদেন্তে' (El Señor Presidente)-র পটভূমি এক কাল্পনিক দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ। প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসন থেকে সৃষ্টি হওয়া অসততা-নীতিহীনতা-অমানবিকতা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়ে পচিয়ে দিয়েছে সমস্ত দেশটাকে। বিচারব্যবস্থা ইতোমধ্যেই প্রহসনে পরিণত। রুপোর জুতো পায়ে গলিয়ে রাজপ্রাসাদের বাগানে পদচারণা করেন দেশের রাষ্ট্রপতি। সোনার সুতোয় বোনা তাঁর পরিধানটি আসলে সুরক্ষা বর্ম। কাঁধে ফেলে রাখা রত্নখচিত উত্তরীয়টিও আংশিকভাবে নিরাপত্তার দায় সামলায়। দুর্নীতি, অভাব, বঞ্চনা, নিপীড়ন, অশিষ্টাচরণ, মূল্যবোধহীনতা অর্থাৎ সমাজের পচনের জন্য দায়ী যাবতীয় অশুভ বিষয় 'এল সেনোর প্রেসিদেন্তে'-র উপাদান।

'এল সেনোর প্রেসিদেন্তে'-র নায়ক তো বাস্তবে মানুয়েল হোসে এস্ত্রাদা কাবরেরা (Manuel Jose Estrada Cabreraa - জন্মঃ ১৮৫৭ - মৃত্যুঃ ১৯২৩), যিনি বাইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে গুয়াতেমালার রাষ্ট্রপতির আসনকে অলঙ্কৃত/কলঙ্কিত করে গেছেন। তাঁর আমলে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির কলাবাগিচা থেকে শুরু করে আটলান্টিক-প্যাসিফিক রেল কোম্পানি পর্যন্ত সমস্ত রকমের মার্কিন সংস্থার জন্যে উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল গুয়াতেমালার দরজা। আপাতদৃষ্টিতে গুয়াতেমালায় লাগল উন্নয়নের ছোঁয়া। বাস্তব চিত্রটা কিন্তু একটু অন্যরকম। নিশ্চিন্তে পানামা খালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন যথেষ্ট চিন্তিত। অতএব গুয়াতেমালাকে তোয়াজ না করে উপায় কি!

দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কাবরেরা গুয়াতেমালায় শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে নজর দেন। গড়ে ওঠে প্রচুর বিদ্যালয় আর তার সঙ্গে দেবী মিনের্ভালিয়াসের মন্দির। মিনের্ভালিয়াসের পুজো উপলক্ষে দেশের এখানে-ওখানে মাঝেমধ্যেই উৎসবের আয়োজন করে নিজেকে শিক্ষার রক্ষক বলে পরিচয় দিতেন কাবরেরা। যদিও শিক্ষার মান ছিল অত্যন্ত নীচু।

এল সালবেদরের স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন মাক্সিমিলিয়ানো এরনান্দেস্ মারতিনেস্ (Maximiliano Hernandez Martinez - জন্মঃ ১৮৮২ - মৃত্যুঃ ১৯৬৬)। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৪ পর্যন্ত এই বর্ণবিদ্বেষী স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীন ছিলেন। মারতিনেস্ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে মেরে ফেলেছিলেন তিরিশ হাজার কৃষককে। নিজের খাবারে বিষ আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটা পেন্ডুলাম আবিষ্কার করেছিলেন এই দিব্যজ্ঞানী প্রশাসক। গুটিবসন্তের মহামারীকে প্রতিহত করার উদ্দেশে রাস্তার সব আলোর ওপর লাল রঙের কাগজ জড়িয়ে দিয়েছিলেন এই একনায়ক। তন্ত্র-মন্ত্র-কুসংস্কারে বিশ্বাসী মারতিনেসের বিবেচনায় একজন মানুষকে খুন করার চেয়ে একটা পিঁপড়েকে মেরে ফেলা অনেক বড়ো অপরাধ। কারণ, মানুষ মারা গেলেও নাকি নতুন করে দেহ ধারণ করতে পারে কিন্তু পিঁপড়ের পক্ষে তা সম্ভব নয়। ভীত-সন্ত্রস্ত এল সালবেদরের মানুষের পক্ষে এমন বিচিত্র যুক্তির বিরোধিতা করা সেদিন সম্ভব হয়নি।

আজ থেকে একশো বছরের কিছু বেশি আগে আর্জেন্টিনা বিশ্বের ধনীতম দশটি দেশের মধ্যে একটি ছিল। তার আর্থিক বৃদ্ধি ঘটছিল অত্যন্ত দ্রুত হারে। সে সময় অনেকেরই ধারণা ছিল, আর্জেন্টিনা হয়তো অচিরেই আমেরিকাকে টপকে যাবে। ১৯৩০-এর দশক থেকে ছবিটি পাল্টে গেল - আর্জেন্টিনার অর্থব্যবস্থা ধাক্কা খেতে আরম্ভ করল; আমেরিকা হয়ে উঠল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। ১৯৩০ সালে হোসে ফেলিক্স উরিবুরু সে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই সেখানে দক্ষিণপন্থী উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ক্যাথলিক মৌলবাদের উত্থান ঘটতে থাকে। আমদানি কর বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যের পথে বাধা তৈরি করা হয়, অভিবাসন বন্ধ করা হয়, এবং শুরু হয় বিদেশিদের প্রতি প্রকাশ্য ঘৃণাভাষণ। সেই ধারাবাহিকতায় কোনও ছেদ পড়েনি। ফলাফল, - আজও আর্জেন্টিনার সঙ্কট নিরসন হয়নি।

লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে এমন স্বৈরাচারী প্রশাসকের অভাব নেই। আর তাঁদের কীর্তিকলাপকে কেন্দ্র করে সৃজিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্যের বহু বিখ্যাত উপন্যাস। সেইসব স্বৈরশাসকদের উত্তরাধিকার যেন বহন করে চলেছে একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী। কেউ পুড়িয়ে দিচ্ছেন আমাজনের চিরহরিৎ অরণ্য। কেউ আবার সারা বিশ্বের বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে ধ্বংস করে চলেছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে। হিসেব কষতে শুরু করলে এমন অনেক রাষ্ট্রের খোঁজ পাওয়া যায়। ভারতও কি সেই পথের পথিক?

করোনা সংক্রমণ দূর করার জন্য দেওয়া হয়েছিল তালি-থালি বাজানোর নিদান। দেশের সমস্ত মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। মন্দির নির্মাণের প্রকল্প তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মন্দির নগরীর ঐতিহ্য গুঁড়িয়ে দিয়ে তাকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি চিরস্থির। বিশ্বের উচ্চতম মূর্তি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন তাঁর পরম প্ৰিয় বিষয়।

নোট বাতিল করে কালো টাকা উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর দ্বিধা হয়নি। দেশের শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে সমস্ত রকমের জনকল্যাণকামী প্রকল্প বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে তিনি সতত ব্যস্ত। দেশবাসীকে নিজের মনের কথা শোনানো তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু দেশের মানুষের মনের কথা বা জীবনযাত্রার খবর নেওয়ার বিষয়ে তাঁর মোটেও উৎসাহ নেই। দেশের মানুষকে ‘মিত্রো’ বলে সম্বোধন করে তিনি নির্দ্বিধায় দেশের যাবতীয় সম্পদ-পরিষেবা-পরিকাঠামো তাঁর পরম মিত্রদের হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করেন না।

এক দশক আগে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করে তিনি ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। স্বপ্ন-ফেরিওয়ালা ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন-পূর্ব প্রতিশ্রুতিগুলিকে জুমলা (ধোঁকা) বলে ঘোষণা করে নিজেকে দেশের ‘চৌকিদার’ বানিয়ে দেশকে এমন বিকশিত করে তুলেছেন যে দেশের ৫৭ শতাংশ মানুষকে দিনের পর দিন বিনামূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করতে হয়। তবুও তাঁর দাবি অচিরেই দেশ নাকি পৃথিবীর তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চলেছে।

এক দশক ধরে দেশ শাসনের পর অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রত্যন্ত গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ে তাঁকে চিঠি লিখে জানাতে বাধ্য হয় যে, তাদের ইশকুল নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। দয়া করে বাঁচান। হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি বলে মৃত সন্তানকে ব্যাগে মুড়ে বাসে চেপে চুপিচুপি অসহায় পিতাকে ঘরে ফিরতে হয়। স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে স্বামী হাঁটেন পুরাণের সতীর দেহত্যাগের সময়ের মতো। ভ্যানচালক বাবার সারা দিন সওয়ার জোটেনি বলে খাবার জোটেনি। তাই ছেলে ইশকুলে আসেনি। চিকিৎসা-ব্যয় জোগাতে না পেরে সপরিবারে মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রসূতি মৃত্যুতে এ দেশের বিভিন্ন জায়গা আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর সমান। দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ। আমূল ভূমিসংস্কার এখনও করা গেল না। ‘পিএম কেয়ার্স ফান্ড’-এ কত টাকা জমা পড়েছে? সেন্ট্রাল ভিস্টাই বা কী? কার কাজে লাগল? নাগরিক তো ভোটের সময় ভোট দেন। এখন আবার সেই নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দেশবাসী কি স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন? ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতা কি গণতন্ত্রের শর্ত নয়? ধর্মীয় স্বাধীনতাই বা এত বিঘ্নিত কেন? ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কেন এত বিভাজন, বিদ্বেষ। কোনও মানুষ অসীম শক্তিধর হলেই কি দেশের মানুষের উন্নতি হয়? পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলে চিৎকার করে গলা ফাটানো আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক। পরমাণু বোমা আর চন্দ্রযান সূর্যযান কি দেশকে টেনে তুলতে পারবে? পারবে কি স্লোগান-সর্বস্ব মোমবাতি জ্বালানোর আহ্বান দেশকে আগামীদিনের আলো দেখাতে?

এই পরিস্থিতিতে আয়োজিত হল লোকসভার নির্বাচন। সাত দফার নির্বাচনী প্রচার প্রকৃত অর্থে ‘ম’ ‘ম’ করছিল। দ্বিশতাধিক জনসভায় তিনি সাত রকমের ‘ম’-এ জনতাকে মজিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেননি। মাছ-মাংস-মোঘল-মুসলিম লীগ-মঙ্গলসূত্র-মুসলিম তো বারেবারেই তাঁর ভাষণে ফিরে ফিরে এসেছে। বিরোধীদের সঙ্ঘবদ্ধ আচরণকে শেষ পর্যন্ত ‘মুজরো’ আখ্যা দিয়ে সপ্তম দফার প্রচার অভিযান সমাপ্ত করেছেন। তবে একটি ‘ম’ বাদ গেছে। মণিপুর। দেশের এই প্রান্তিক রাজ্যে বৎসরাধিক কাল ধরে চলতে থাকা জাতিগত সংঘাত-সংঘর্ষে দ্বিশতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। প্রায় এক লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। সারা দেশ আড়েবহরে ঢুঁড়ে বেড়ালেও তাঁর মণিপুরে যাওয়ার সময় বা ইচ্ছে হয়নি। এমনকী মণিপুর সম্পর্কে একটি শব্দ উচ্চারণ করতেও যেন তাঁর ঘোরতর আপত্তি।

এতকিছুর পরেও জনতার মন কোন দিকে মজে আছে আন্দাজ করে উঠতে না পেরেই হয়ত পরিশেষে নিজেকে ‘ঈশ্বরপ্রেরিত’ বলে ঘোষণা করলেন। তাতে যে নিজের মা-বাবাকে পরোক্ষে চরম অপমান করলেন সে কথা তাঁকে কে বোঝাবে? ভারতবাসীর মধ্যে ভগবানে ভক্তির অভাব নেই। সেটাকেই পুঁজি করে ভোট পাওয়ার জন্য শেষ বেলায় নিজেকে ভগবান-রূপে তুলে ধরলেন। ভক্তদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল চরম উত্তেজনা। মন্দের ভালো, সেই উত্তেজনা বৃহত্তর বৃত্তে উন্মাদনায় পরিণত হয়নি।

তাঁর মহিমায় অভিভূত হওয়ার মতো লোক এ দেশে বিরল নয়। বরং অতিমাত্রায় সুলভ। এবং, সম্ভবত সেই সত্যটি বিলক্ষণ জানেন বলেই তিনি আপন মহিমা প্রচারে নতুন পদ বেঁধেছেন। নির্বাচনপর্ব যত এগিয়েছে, তাঁর প্রচারের ভাষা ও ভঙ্গি তত বেশি উগ্র এবং আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। অনেকের মতে ভোটের হাওয়া যথেষ্ট অনুকূল নয় বুঝেই, অর্থাৎ বেগতিক দেখেই, হয়তো তিনি এমন বেপরোয়া আচরণ করে চলেছেন। ভোটের শেষ পর্বে এসে তাঁর নতুন জন্মরহস্য শ্রবণ করে প্রশ্ন জাগতেই পারেঃ মর্তলোকের যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র কাজে আসছে না ভেবেই কি নির্বাচনী প্রচারে পরমাত্মার শরণাপন্ন হতে হল?

এখানেই শেষ নয়। তথাকথিত ‘আজাদী কা অমৃতকাল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ২০৪৭ অবধি দেশকে বিকশিত করার জন্য বিরাজমান থাকার কথাও তিনি উচ্চারণ করতে দ্বিধা বোধ করেননি। তিনি অবিশ্যি খেয়াল করেননি, তখন তাঁর জৈব শরীরের বয়স হবে ৯৬ বছর। পরমাত্মার অবশ্য বয়সের ঝঞ্ঝাট নেই!

প্রায় আড়াই মাস ধরে নির্বাচনের প্রচার শেষ করে তিনি কি এখন ক্লান্ত? তাঁর গতিবিধির উপর যাঁদের নজর আছে তাঁদের মতে, মোটেও নয়। নির্বাচনের বিধিবদ্ধ প্রচার প্রক্রিয়া শেষ করার পর তিনি খুঁজে নিয়েছেন নিজস্ব প্রচার পদ্ধতি। দেশের দক্ষিণতম প্রান্তে সমুদ্রের বুকে অবস্থিত এক শিলাখণ্ডের উপর তিনি ধ্যানে বসেছেন। প্রচার নিষিদ্ধ সময়ে নিজেকে প্রচারের আলোয় আলোকিত করে রাখার যে পদ্ধতি তিনি উদ্ভাবন করেছেন তা দেখে মনে হতেই পারে যে স্বৈরাচারে বিশ্বাসী বিশ্বের সমস্ত প্রশাসকের শিক্ষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অবিশ্যি তিনি নিজেই তো স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু’!

নিজের ভাবমূর্তিকে ক্রমাগত উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তরে তুলে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ তাঁর আচরণে বহু দিন যাবৎ প্রকট। পোশাকের মতো নিজের পরিচয় পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় নিঃসন্দেহে তিনি শ্রেষ্ঠ। স্বপ্ন-ফেরিওয়ালা রূপে ২০১৪-র ও চৌকিদার হিসেবে ২০১৯-এর নির্বাচনী প্রচারের প্রকরণ হিসাবে বেছে নেওয়ার পর দেশের বিকাশ হয়েছে না বিনাশের পথে দেশ এগিয়ে চলেছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে এবং হবে। তবে, তথাকথিত পরমাত্মা প্রেরিত বিশ্বগুরুর কীর্তিকলাপে আর কিছু না হোক দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।