আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ অষ্টম সংখ্যা ● ১৬-৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ● ১-১৫ বৈশাখ, ১৪৩০

প্রবন্ধ

অঞ্জলি লাহিড়ীকে যেভাবে বুঝেছি

সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়




অঞ্জলি লাহিড়ীর জন্ম ১৯২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, কলকাতায়। শৈশব কৈশোর কাটে শিলং, ময়মনসিংহ, ও সিলেটে। ছাত্রজীবনে বামপন্থী সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনীতির কারণে কারাবাসও ঘটে, ষাটের দশকে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে আসেন। পরবর্তীকালে সাহিত্যকর্মের সঙ্গে নিজেকে জড়ান। মৃত্যু অবধি বহমান ছিল সেই কাজ। দেশ বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। জেনেছেন সেখানকার জীবনযাত্রা। সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে তাঁর অদম্য কৌতুহল তাঁর লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে। মেয়েদের শোষণ-বঞ্চনার কথা, তাদের মুক্তির লড়াই-এ একজন উজ্জ্বল যোদ্ধা জীবনে এবং সাহিত্যেও। মেঘালয়ে খাসিয়া পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছিল তাঁর যাতায়াত। খাসিয়াদের সঙ্গে জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সিলেট মেঘালয় সীমান্তে বিপদের ঝুঁকি নিয়েও নানান শরণার্থী শিবিরে থেকেছেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে লেখা তাঁর রচনা ‘স্মৃতি ও কথাঃ ১৯৭১’। এছাড়া উল্লেখযোগ্য উপন্যাস - ‘বিলোরিস’, ‘পাম ভিউ নার্সিং হোম’ এবং শেষতম উপন্যাস ‘সোনার সিঁড়ির উপকথা’। অসমীয়া মহিলা গল্পকারদের অনুবাদ গল্পের সংকলনও তাঁর অনূদিত - ‘অসমের মহিলা কথাকার’। পিতা প্রেমানন্দ দাস এবং ঠাকুরদা প্রখ্যাত চিকিৎসক সুন্দরীমোহন দাস। যাঁর নামে কলকাতায় একটি রাস্তাও আছে - সুন্দরীমোহন অ্যাভেনিউ। অঞ্জলির মা ছিলেন সুবর্ণপ্রভা দাস, জেল রোড গার্লস স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে শিলং-এ বসবাস শুরু করেন। দিদি ডঃ কল্যাণী দাস (মিশ্র)। স্বামী মেঘালয়ের বিশিষ্ট অ্যাডভোকেট নীরেন লাহিড়ী। ছেলে রাহুল এবং মেয়ে পারমিতা। কলেজে পড়ার সময় থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ। ঠাকুরদার প্রভাবে তাঁদের বাড়িতেও অনেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উদার মুক্ত সংস্কৃতির বাড়ি ছিল তাঁদের।

অঞ্জলি লাহিড়ীর সঙ্গে আমার শেষবার দেখা হয়েছে ২০১১ সালে। তখন বোধ হয় ওঁর বয়স ঊননব্বই। ওঁর বোনপোর সঙ্গে বন্ধুতার সূত্রেই আলাপ এবং তারপর গৌহাটি, শিলঙের বাড়িতে যাওয়া, কলকাতায় এলে নিউ আলিপুরের বাড়িতে দেখা করতে যাওয়া এবং দীর্ঘক্ষণ আড্ডা। সবসময়ই দেখেছি আড্ডায় বয়স কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। অফুরন্ত এনার্জি ছিল শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য জগতের নানান খবরাখবর জানার জন্য। উদ্‌গ্রীব হয়ে প্রশ্ন করতেন আমাদের কবিতা লেখা নিয়ে। কী লিখছি, কী ভাবছি, সামাজিক নানান ঘটনায় কীভাবে রিয়্যাক্ট করছি সবই ছিল ওঁর আগ্রহের বিষয়। তরুণ প্রজন্মের লেখালিখি ও সংস্কৃতিচর্চার অনেক খবর রাখতেন নানান পত্রপত্রিকা মারফৎ। অসাধারণ ব্যক্তিত্বময়ী, অথচ অতীব রসিক অঞ্জলি লাহিড়ী নিজের কথা প্রায় বলতেই চাইতেন না। অথচ ওঁর দীর্ঘ জীবন এত বর্ণময়! কখনও কখনও জোর করলে বলতেন ওঁর মা-র কথা, বাবার কথা, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাড়িতে কমরেডদের আশ্রয় দেবার কথা। আর বলতেন শিলং-এর পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা, প্রকৃতির কথা। একবার একসঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম উনি শেষ বিকেলের সূর্যের দিকে দুই হাত নমস্কারের ভঙ্গীতে জড়ো করে ছেলে রাহুলকে ডেকে বলছেন, ‘সূর্যকে প্রণাম করো - উনি আমাদের আলো দেন, রঙ দেন , উত্তাপ দেন...।’ গভীর মগ্ন এক ঋষির মতোই মনে হচ্ছিল তখন ওঁকে।

ওই সময় থেকেই পড়তে শুরু করি অঞ্জলি লাহিড়ীর লেখা। ওঁর বহুদিনের জমানো বেশ কিছু কবিতা নিয়ে আমি একটা সংকলনও প্রকাশ করেছিলাম ‘অনন্ত যাত্রী আমি’। কবিতার বাঁধা ছক বা ছন্দ সেখানে ছিলনা। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের নানান ঘটনা, ও কিছু কমরেডদের নিয়ে লেখা কবিতা ছিলো। যেগুলো সংবেদনশীলতায়, মানবিকতায় এবং চেতনায় রাজনৈতিক আদর্শের দায়বদ্ধতায় ছিল অসম্ভব প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল। প্রচ্ছদেও ছাপা হয়েছিল ওঁরই করা একটি স্কেচ।

অঞ্জলি লাহিড়ীর উপন্যাস পড়তে পড়তে যে দিকগুলি সহজেই নজরে পড়ে, তা হল মূলত সাধারণ, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষদের কথা বলা। তাদের জীবন, জীবন-সংগ্রাম, হাসি-কান্নাই জুড়ে আছে ওঁর বেশিরভাগ উপন্যাস। পাশাপাশি শহুরে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের অন্তঃসারশূন্যতা, নীতিহীনতা, ফোলানো ফাঁপানো জীবন, স্বার্থচিন্তার ছবিও তাঁর লেখায় ফুটে উঠতে দেখি আমরা। প্রথম জীবন থেকে বামপন্থী রাজনীতিতে দীক্ষিত ছিলেন বলে, সরাসরি রাজনীতি করা থেকে সরে এলেও চেতনায় বহন করেছেন সেই আদর্শ সারাজীবন। ফলে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির পরিবর্তন, বা সংকট ওঁর লেখার মধ্যেই চলে আসে বারবার। আর আসে, দেশের নানান পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর অজস্র অভিজ্ঞতার কথা। সাধারণ মানুষের জীবনাচরণ, ধর্মাচরণ, সংস্কার, বিশ্বাস, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তিনি আদর করে তুলে এনেছেন তাঁর রচনার মধ্যে।

এবং যে কথা আলাদাভাবে বলবার, তা হল, অঞ্জলি লাহিড়ী আজীবন মেয়েদের কথা বলেছেন তাঁর উপন্যাসগুলিতে। কোথাও কোথাও অসম্ভব স্পষ্ট করে বলেছেন নারীবাদী তত্ত্বের কথাও। উপন্যাসের চরিত্রের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, কোথাও উপন্যাসের কথকের মুখে তুলে এনেছেন মেয়েদের মুক্তির প্রশ্ন এবং তার সংকট। যেমন ‘পাম ভিউ নার্সিং হোম’ উপন্যাসটি। ভূমিকায় অঞ্জলি লাহিড়ী বলেছেন - একটি নার্সিংহোমের নার্সদের কথা - “আর যারা তাদের সেবিকা? রুগীর সংখ্যা অনুপাতে তাদের সংখ্যা হাতে গোনার মতো। দিবারাত্রি যন্ত্রচালিতের মতো তারা ছুটছে। মাসোহারা কম, পুষ্টির অভাব, অনেকেই জীবনে উপেক্ষিতা। সমাজে যতটুকু সম্মান তাদের প্রাপ্য সবটুকু কি তারা পায়? তাই আসে কর্তব্যে অবহেলা, ব্যবহারে রুক্ষতা, আনন্দহীন রুটিনের যান্ত্রিক ঘেরাটোপে যেন একেকটি রোবট।...”

এখানেই অন্যতম একজন নার্স তপতী জিজ্ঞেস করেছে কথক অলকাকে “মেয়েদের লেখা আপনার কেমন লাগে?”

অলকা বলে - "মেয়েদের লেখা মেয়েদের কলমেই বেশি জীবন্ত ফুটে ওঠে বলে আমার ধারণা।"

কিংবা, তপতী যখন বলে - “সে জন্যই তো ঘরে ঘরে এত হা-হুতাশ, এত অভিযোগ, কিন্তু বাঁধন ভাঙার সাহস নেই।”

অলকা বলছে - “গৃহিনীদের সংসারে আট দশ ঘন্টার মজুরি খেটেও বেতন নেই, চিরবেকার।”

“মনে মনে ভাবলাম বাড়ির গৃহিনীদেরও যদি একটা সংঘ থাকত। লেবার আইন মতে আট ঘন্টা কাজের নিরিখে বাঁধা। গৃহিনীদের দশ ঘন্টা কাজ। বেতন নেই, ছুটি নেই, ধর্মঘট করবার অধিকার নেই। কচিৎ কখনো একটা গয়না বা শাড়ি, কনসোলেশন প্রাইজ হিসেবে পাওয়া ছাড়া। টেকেন ফর গ্রান্টেড।”

আজ আমরা চারদিকে যদি এই ছবির চেয়ে আলাদা কিছু কিছু ছবি দেখেও থাকি, তবু দেশের বিরাট জনসংখ্যার মেয়ে-সমাজের গৃহশ্রমের কোনও মূল্যায়ণই হয়না আজও। এমন কী চাকুরিরতা হলেও বাড়ি ফিরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলাদেরই বাড়ির দেখভালের দায়িত্ব নিতে হয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয় গৃহহিংসা। আজ আমরা Domestic Violence নিয়ে কথা বলি। অন্তরঙ্গ সম্পর্কে হিংসা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেছি। কারণ লিঙ্গ-অসাম্য আজ এতদূর সভ্যতার পরেও এত রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে যে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের পরিচয় এখনও লিঙ্গ-নিরপেক্ষ নয়। আমাদের বাংলা সিরিয়ালে বাড়ির নতুন বউকে তার শাশুড়ি-স্থানীয় কেউ একজন নতুন বরের খারাপ ব্যবহারের পরে তাকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, বিয়ের প্রথম বছর হল নিমফুলের মধু। এই তেঁতোটুকু পেরোলেই মধুর স্বাদ পাওয়া যায় ইত্যাদি... কিন্তু আমরা তো জানি ঘরে ঘরে বিয়ের প্রথম বছরের অসম্মান আসলে ভবিষ্যতের আরও ভয়ঙ্কর, আরও বড়ো কোনও অত্যাচারের প্রথম সিঁড়ি মাত্র। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেন, যখন মেয়েদের মুক্তি আন্দোলন আজ দেশে দেশে সোচ্চার, অগ্নিপ্লাবী, তখনও তারা মনে করেন - যে, নারীবাদ আসলে ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী কিছু মহিলার ঝগড়া মাত্র। কিন্তু সমাজে অসাম্য দেখার চোখ যাঁদের আছে, তাঁরা জানেন এর জন্য এক ভয়ঙ্কর লড়াই-এর দরকার। কখনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, কখনও সমাজের বিরুদ্ধে, কখনও পরিবারের বিরুদ্ধে, কখনও অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধেও!

এইসব কথা আজ মেয়েরা ভাবছে, চিৎকার করে বলছে এবং রাস্তায় নামছে। এসব করার জন্য যে সাহসের দরকার, যে সচেতনতার দরকার, যে মুক্তচিন্তার দরকার যেসব কি আর রাষ্ট্র কিংবা পুরুষতন্ত্র মেয়েদের যোগান দেবে? কখনই দেবে না। দেবে মেয়েদের শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস। পুরুষতন্ত্রের চোখ রাঙানি এবং শত কারচুপির মধ্যেও যেসব মেয়েরা স্বাধীনতার জন্য, মুক্তচিন্তার জন্য, লিঙ্গ-সাম্যের জন্য কলম ধরেছে, গান গেয়েছে - সাহস দেবে তারা। অঞ্জলি লাহিড়ী তাঁদেরই একজন। জীবনযাপনে এবং লেখনীতে যিনি সমান সাহসী। তাঁর আরেকটি উপন্যাস ‘বিলোরিস’-এও পাই এক নারীর আখ্যান। দরিদ্র দোকানি এক খাসি মেয়ে - তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এক শহুরে বাবু। চিরাচরিত শহুরে নীতিজ্ঞানহীন পৌরুষে সে বিলোরিসকে সর্বতোভাবে উপভোগ করে। তাদের সন্তানও হয়। এসব খাসি সমাজের ধর্মীয় অনুশাসন শিথিল হবার দরুণ প্রায়শই ঘটতো। কিন্তু পুরুষেরা পরে এসবের কোনও দায়িত্ব নিত না। এইসব আখ্যান, শোষণ, অসাধারণ মুন্সিয়ানায় অঞ্জলি লাহিড়ী তুলে এনেছেন তাঁর উপন্যাসে। খাসি সমাজের সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মার আত্মীয়তা। জাতপাত, গোষ্ঠী, ধর্ম নিয়ে কোনো বাছ-বিচার তাঁর বা তাঁর পরিবারে কোথাও ছিল না। আসলে দেশে দেশে জাতপাতে কোনও বিচ্ছিন্নতার কথা ভাবতে পারতেন না তিনি। সেই আপনতার বোধ থেকেই এইসব উপন্যাস লেখা হয়েছিল নিশ্চয়। তাঁর বর্ণনা, ভাষা-ব্যবহার এতই সপ্রতিভ যে এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে হয় তাঁর উপন্যাসগুলিকে। মূলত আখ্যানধর্মী তাঁর উপন্যাস। আজকে এই ধরণের উপন্যাসের পাশাপাশি আর একটি ধরণও উঠে এসেছে - যাকে বলা যায় কিছুটা বিনির্মাণধর্মী। তবে বাংলা সাহিত্যে আখ্যানধর্মী উপন্যাসের তালিকায় তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘সোনার সিঁড়ির উপকথা’-কে এক উজ্জ্বল সংযোজন বলা যায়।

অঞ্জলি লাহিড়ী মেয়েদের লড়াই-এ কতখানি সক্রিয় ছিলেন তার একটি উদাহরণ, তাঁর অনুদিত ‘অসমের মহিলা কথাকার’ বইটি। বইটি করার দুটি উদ্দেশ্য ছিল - ১) মেয়েদের লেখার একটা বাজার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাজার সে লেখাকে একটা নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেলতে চায়। এটা সৃজনশীলতার পথে একটা বাধা। এই বাধাকে অতিক্রম করে যাঁরা লেখেন, তাঁদের পরিসরকে আরও একটু বিস্মৃত করা এবং ২) অসমীয়া সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। বিভিন্ন ভাষায় যেসব মেয়েরা লিখেছেন তাঁদের মধ্যেকার সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ব্যবধান দূর করে একটি সেতু নির্মাণ।

এই ছোটগল্পের সংকলনটিতে অঞ্জলি লাহিড়ীর দীর্ঘ, অতীব শ্রমসাধ্য একটি উপক্রমনিকা আছে। যেখানে অসমিয়া সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত কিন্তু সম্পূর্ণ একটি ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা আছে। এইসব কাজ দেখলে বোঝা যায় অঞ্জলি লাহিড়ী কতখানি দায়বদ্ধ ছিলেন সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে। নানান অঞ্চল, ভাষা আর মানুষের মধ্যে ঐক্য আর সম্প্রীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে লেখক শিল্পীদের বিশেষ ভূমিকা থাকে, এটা তিনি বিশ্বাস করতেন।

অল্প কিছুদিন আগে আমরা আর এক মহিয়সীর জন্মদিন পার হলাম। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তাঁকেও লিখতে হয়েছিল একটি বিস্ফোরক, রাজনীতি-সচেতন প্রায় কল্পকাহিনী - সুলতানাস্‌ ড্রিম ((Sultana’s Dream) ১৯০৫ সালে। ১৮৮০ সালে তাঁর জন্ম। সুতরাং একথা বলাই যায় আজ আমরা মেয়েদের অধিকার নিয়ে, লিঙ্গ-সাম্য নিয়ে যে লড়াই করছি - রাজনৈতিকভাবে এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির মধ্যে দিয়ে, সেই লড়াই-এর রাস্তায় এঁরা ছিলেন আমাদের অগ্রজ। অঞ্জলি লাহিড়ীকে আমার কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওঁর ব্যক্তিত্বের প্রতিও আমার সবিশেষ মুগ্ধতা আছে। মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসতেন। বলতেন, ‘মিষ্টি নিয়ে না এলে আমার বাড়িতে প্রবেশ নিষেধ।’ সুতরাং সে আদেশ পালন করতেই হতো আর প্রতিবার ওঁর হাতে সন্দেশ চালানের মধ্যে দিয়েই হয়ত অসমবয়সী দুই নারীর অনেক বাধাবিপত্তি পার হবার সাহস এবং স্পর্ধারও আদানপ্রদান হয়ে যেতো।