আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ দ্বাবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ● ১-১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

প্রবন্ধ

নারীর শ্রম ও একটি নোবেল পদক

অনিন্দিতা রায় সাহা


সেদিন আমার তিন সহকর্মী বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন, বিষয় আজকালকার যুবসম্প্রদায়ের জীবনযাপন। তারা কত বেহিসাবী, কত আরামপ্রিয় আর কতখানি অসংসারী। সেই মতের সপক্ষে একজন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শোনালেন। তিনি কারো বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে যখন তাঁকে চা সাধা হয়েছে, তিনি পরম ভদ্রতাবশতঃ মানা করেছেন। সঙ্গে গভীর সহানুভূতি, না না, তোমাদেরকেই তো বানাতে হবে। নিমন্ত্রণকর্তা মেয়েদুটি হাসিমুখে তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়েছে, না তো, আমরা তো ‘চায়ওস’ থেকে অর্ডার করবো। অতিথি যারপরনাই বিস্মিত। আমাদের ওপরে উল্লিখিত বক্তা, মানে এই অতিথিমশাইয়ের মনে হয়েছে, আজকাল যুবসম্প্রদায়ের খাইখরচ কতো বেড়ে গেছে। এক কাপ চা বাড়িতে বানালে ক’ পয়সা লাগে! তা নয়, গাদা খানেক খরচ করে কিনে আনা! কথা শুনে সঙ্গের দুজন ভদ্রলোক সায় দিলেন, ঠিক, ঠিক, ঘোর কলিকালই বটে! যেটা উহ্য তা হল, আজকালকার মেয়েরাই এমন উড়নচন্ডী। ভদ্রলোককে আপ্যায়নকারী মানুষ দুটি তো মেয়ে। দুজন ছেলের বাড়ি গেলে কি কেউ আশা করে যে তারাই চা বানিয়ে খাওয়াবে! যদি করে তবে সেটি বিশেষ ঘটনা, নাহলে কিনে আনাই স্বাভাবিক। ঘরের কাজ জানতে হবে, এমন তো কথা ছিল না। তাছাড়া, সে তো তার উপার্জনের টাকা দিয়েই কিনছে! কত কষ্ট করে বাইরে কাজ করে জোগাড় করে আনা সে টাকা। শ্রম দিয়ে অর্জিত অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার তো তার ন্যায্য অধিকার।

গম্ভীর আলোচনা শুনে মাথায় কয়েকটা গোলমেলে ভাবনা খেলে গেলো। মার্ক্স সাহেব উঁকি দিলেন বুদ্ধির গোড়ায়। চলে এলেন রোজা লুক্সেমবার্গ। মাথার জটগুলোর সূত্র হল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদবৃত্ত মূল্যের সৃষ্টি (surplus value) আর শ্রমের অবমূল্যায়ন। মনে হলো, আমাদের মা-মাসি-পিসি আর দিদিমা-ঠাকুমারা যুগ যুগ ধরে গার্হস্থ্য কর্মের বৃত্তের ভিতরে কী প্রচন্ড পরিমাণ সারপ্লাস ভ্যালু তৈরী করেছেন । যদি বলি, ‘চায়ওস’ থেকে কিনতে যে দাম দিতে হবে, সেটাই এক কাপ চায়ের নিকটতম সঠিক মূল্য কারণ তাতে চা বানানোর শ্রমের মূল্যটাও ধরা আছে (মুনাফা বাদ দিন), তবে কি তা অর্থবহ হয়? বাড়িতে মহিলারা চা বানালে সে তো কোনো মজুরি পায় না, দুধ-চিনি-চা পাতা আর জ্বালানীর দাম ছাড়া আর তো কোনো খরচ হিসেবে গোনা হয় না। তাই তো যুগে যুগে সংসারের খাইখরচ কম থাকে। মনে পড়ে, রোজা লুক্সেমবার্গ বলেছিলেন, যেদিন মহিলাদের গার্হস্থ্য শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন হবে, সেদিন দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো চুরিটা ধরা পড়ে যাবে। নারীর শ্রম বড়ো অবহেলিত জিনিস। তার বেতন নেই, মূল্য নেই, আর নেই নারীর সম্মান। তাই তো আজ মেয়েরা বাইরে কাজ করতে উৎসুক, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেতে আপ্রাণ পরিশ্রমী। কিন্তু তাতে যদি মনে হয়, সব সমস্যা মিটে গেল, নারীরা শ্রমের মর্যাদা পেল, তাহলে ভুল হবে। বহির্জগতে শ্রম দিলে মেয়েরা সেখানেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। সারাদিন ঘর-বার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, আবার কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে, শ্রমের বাজারে বেতনের বৈষম্য আর সুযোগের অভাবের শিকার হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মনে এল খুব সম্প্রতি শোনা আর একটি নাম - ক্লডিয়া গোল্ডিন।

এ বছরের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যে ৭৭ বছর বয়সী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা, তিনি সারা জীবন এই প্রশ্নের উত্তরটাই খুঁজে গেছেন। হ্যাঁ, ক্লডিয়া গোল্ডিন, অর্থনীতিতে এককভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম মহিলা। আর সাকুল্যে তৃতীয়, ইলিনর অস্ট্রোম আর এস্থার ডুফলোর পর। কী নিয়ে কাজ করেন তিনি? পুরস্কারের ঘোষণায় বলা হয়েছে, তাঁর গবেষণার বিষয় হল শ্রমের বাজারে দীর্ঘমেয়াদী লিঙ্গ বৈষম্য। এর মধ্যে পড়ে মূলত দুটি আলোচ্য বিষয়। প্রথমত, মহিলাদের শ্রমের বাজারে অপেক্ষাকৃত কম অংশগ্রহণ, আর দ্বিতীয়ত, পুরুষ ও মহিলাদের শ্রমের মজুরির মধ্যে তারতম্য। গোল্ডিন কাজ করেছেন মার্কিন অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে। দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস নাড়াচাড়া করে দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে মহিলাদের উৎপাদনে শ্রমদানের ধারা, বৈশিষ্ট্য আর প্রতিবন্ধকতা। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে আজও খুব চেনা এইসব ছবি।

শ্রমের বাজারে মহিলাদের অংশগ্রহণের ধরণ নানা সময়ে বদলাতে থেকেছে। যেমন, ১৯২০ সাল নাগাদ পুরো মার্কিন মুলুকে শ্রমদাতাদের মধ্যে মাত্র ২৫% ছিলেন মহিলা। যদিও এখনো মহিলাদের শতকরা ভাগ পুরুষের চেয়ে কম, তবু বলা যেতে পারে অবস্থার বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন মহিলাদের ভাগ প্রায় ৪৬%। অথচ শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস বলে, এর মান ১৭৯০ সাল নাগাদ ছিল ৬০% । অর্থাৎ এক সময়ে শ্রমিক মহিলাদের অংশ ছিল অনেক বেশি, তারপর তা হয় কমতি এবং শেষে আবার বাড়তি। ওঠাপড়ার এই ধরণটির ছবি আঁকতে গেলে তা দেখতে হবে একটি U-আকৃতির বক্র রেখা। অর্থনৈতিক ঐতিহাসিক ক্লডিয়া এই আকারটির কারণ অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করেছেন দীর্ঘকালীন তথ্যের সাহায্যে।

পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, কৃষি-প্রধান যুগে মহিলাদের কৃষিকাজে অংশগ্রহণ যথেষ্ট বেশিমাত্রায় ছিল। তার অন্যতম প্রধান কারণ কৃষি উৎপাদন হয় মূলত পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে (family farm)। এই ব্যবস্থায় পরিবারের বহু সদস্যই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জুড়ে থাকতে পারে। সেখানে শ্রমের বদলে মজুরি নয়, প্রত্যেকে খাদ্যের বা খাদ্যশস্যের ভাগ পায় সকলের গড় অবদান বা উৎপাদকতা (average product) অনুযায়ী। এই ব্যবস্থায় যেমন থাকে অনেক ছদ্মবেশী বেকার পুরুষ (disguised unemployment), তেমনি নানারকম সংশ্লিষ্ট কাজকর্মে নিযুক্ত থাকে পরিবারের মহিলা ও বয়স্ক সদস্যরা। মহিলারা ঘরকন্নার কাজ সামলানোর সাথে সাথে চাষের জমিতে, শস্যের গোলাতেও কাজ করে। সেই সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরা এগিয়ে আসে পরিবারের বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজে। এতে অবশ্যই মহিলাদের 'সন্তান প্রতিপালন' নামক প্রচলিত সামাজিক দায়িত্বের অনেকটা সুরাহা হয়।

এই গ্রামীণ চিত্রটি বদলাতে শুরু হয় ধীরে ধীরে শহুরে শিল্পক্ষেত্রের উদ্ভব ও বৃদ্ধির সাথে সাথে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মহিলারা ক্রমশঃ শিল্পোৎপাদনে যোগ দিতে থাকে। বদলাতে শুরু হয় শ্রমিকের সংজ্ঞা। পারিবারিক সদস্য থেকে সরে এসে সকলে হতে থাকে কারখানার ব্যক্তি শ্রমিক। শিল্পক্ষেত্রে তার মজুরি নির্ধারিত হয় প্রান্তিক অবদান বা উৎপাদকতা (marginal product) অনুযায়ী। এই যে সংগঠিত শিল্প কাঠামো, তার শর্তাবলী ভিন্ন। আর সব শ্রমিকের মতো মহিলা শ্রমিকদের জন্যও নির্দিষ্ট ঘন্টা আর নিয়ম কার্যকর হয়। ফলে শিশুর মায়েদের পক্ষে কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠতে থাকে। গোল্ডিনের মতে, মাতৃত্বই মহিলাদের শ্রমের বাজারে অংশগ্রহণের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এর ফলেই পূর্বোল্লিখিত U-আকৃতির বক্ররেখার নিম্নগামী অংশ শুরু হয়। এর ওপর কাজ করে সামাজিক রক্ষণশীলতা। বাড়ির মহিলা, মূলত বিবাহিত স্ত্রী যারা সন্তানের জন্মদানের মূল যন্ত্র, তাদের বাঁচাতে হবে কলকারখানার ধুলো-কালি-ময়লা আর কঠিন-কঠোর পরিবেশ থেকে। তাই স্ত্রীরা গৃহবন্দী। এছাড়া আছে পুরুষতন্ত্রের আরেক লক্ষণ, মহিলাদের আর্থিক স্বাধীনতা আটকে রাখা, যাতে পুরুষের আত্মগরিমা চোট না খায়। তাই স্ত্রী আবারো ঘরের ঘেরাটোপে। ক্লডিয়া বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের মার্কিন দেশের এরকম চিত্রই দেখাচ্ছেন। এই অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর তিনটি বৃহৎ ঘটনায়। দুটি বিশ্বযুদ্ধ আর একটি বিশ্বব্যাপী মন্দা। এইসব ধাক্কায় মহিলারা যোগ দিতে থাকে শিল্পক্ষেত্রে, তাদের অংশগ্রহণের মাত্রা আবার বাড়তে থাকে। তারপর বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ধীরে ধীরে সেবা ক্ষেত্রের (services sector) উদ্ভব ও পরিবর্ধনের সাথে সাথে মহিলাদের বাবুকাজে (white collar job) উপস্থিতি দেখা যেতে লাগলো। শুধু মার্কিন মুলুকে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশেও এই ঢেউ লাগলো। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশও তার ব্যতিক্রম নয়।

সমাজের অনেক পরিবর্তন হলেও, মহিলাদের শ্রমের বাজারে ঢোকা আর টিঁকে থাকার পথ কিন্তু আজও সহজ নয়। এর ব্যাখ্যা হিসেবে ক্লডিয়া দুটি বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রথমত, মাতৃত্ব আজও মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি, সাধারণত অবিবাহিত মহিলারাই বাইরে কাজ করতে বেরোতেন, সমাজ বলতো, ওর বিয়ে হয়নি, তাই চাকরি করে। গোল্ডিন দেখিয়েছেন, প্রথম সন্তানের জন্মের পর মায়েদের চাকরি ছেড়ে দেওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার। পরিবারের প্রয়োজনে বাইরের বেতন-ভিত্তিক চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন বহু মহিলা। আমাদের আশেপাশে এমন দিদি-বৌদি-বোন আজও বিস্তর। এখনও বিয়ে, পরিবার, সন্তান - এই আবর্তে বাঁধা অধিকাংশ মেয়েদের জীবন। অর্থাৎ, তারা বাড়িতে থেকে চা বানাবে, অতিথিকে খাওয়াবে, শ্রমের উদ্বৃত্ত মূল্য উৎপাদন করবে, সংসারের খাইখরচ কমাবে। এরকম উদাহরণ অন্যান্য অনেক সাংসারিক খরচের ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়, যেমন সন্তানের গৃহশিক্ষক, সকলের রাঁধুনি, ছেঁড়া জামার দর্জি, শিশু-বৃদ্ধের সেবিকা ইত্যাদি, যা দিয়ে তৈরি হয় সেবার অর্থব্যবস্থা (care economy)। দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্য গোল্ডিন দেখিয়েছেন, তা হলো নারী-পুরুষের শ্রমে মজুরির বৈষম্য। শুধু অসংগঠিত ক্ষেত্রেই নয়, আপিসের কাজ বা বাবুকাজের ক্ষেত্রেও মহিলাদের বেতন বা মজুরির হার পুরুষের তুলনায় অনেক জায়গাতেই কম। আমাদের মনে পড়তে পারে এই নিয়ে কী ভীষণ লড়াই করেছিলেন টেনিস খেলোয়াড় বিলি জিন কিং। শুধু বেতনের হারই নয়, চাকরিতে যেকোনো রকমের সুবিধা আর উন্নতির দ্বার মহিলাদের জন্য আধ-খোলা অথবা আধা বন্ধ। সঙ্গে আছে, মহিলাদের যোগ্যতা নিয়ে পুরুষ সহকর্মীদের তাচ্ছিল্য, চাকরিতে মেয়েদের নিয়োগের প্রতি অনীহা, উন্নতির বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা। এইসব নিয়েই শ্রমিক মেয়েদের নিত্য পথচলা আর লড়াই।

নারীর শ্রমের বাজারে অংশগ্রহণ (female labour force participation) বিষয়ক যেকোনো আলোচনা, পড়াশোনা, আর গবেষণার ক্ষেত্র নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে এক অঘোষিত শ্রেণীবিভেদ আছে। যেন এগুলি নিয়ে কাজ করবেন কেবল মহিলারাই, যেন এগুলি ব্রাত্য, যেন এগুলি করতে লাগে মেয়েলি কম বুদ্ধি। অর্থনীতির জগতে তত্ত্বকথার ভারী সম্মান, গাণিতিক মডেলের সর্বোচ্চ কদর। সেই গজদন্তমিনারে অগুনতি পুরুষের মাঝে যে কজন মহিলার স্থান হয়েছে, আগেই বলেছি তাঁরা সংখ্যায় কোটিকে গুটিক। তাই ক্লডিয়া গোল্ডিন একজন বিরল ব্যক্তিত্ব। এই তো সেদিন, আশির দশকে আমরা যখন ছাত্রাবস্থায় অর্থনীতির পাঠ নিয়েছি, তখন আমরাও এই ভাবনায় বেড়ে উঠেছি যে, এইসব নারীশ্রম আর নারী উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে কম মেধার মানুষেরা, মূলত মেয়েরা, যারা বেশি অংক কষতে পারে না। আজ বুঝেছি, অমর্ত্য সেন যাকে বলেছেন ‘engineering approach’, তাই নিয়ে মানুষের উন্নয়নের হদিশ খোঁজা কতখানি অসম্পূর্ণ।

সম্প্রতি চলে গেলেন আরেক অর্থনীতিবিদ নির্মলা ব্যানার্জী। সময়ের চেয়ে আগে ভাবতে পারা এই অধ্যাপিকা লিঙ্গের অর্থনীতি নিয়েই তো কাজ করতেন। অপরিণত সমাজে আর অর্থনীতির ব্রাহ্মণ্য পরিমন্ডলে যথাযোগ্য সম্মান তিনি পাননি। মেয়েদের নিয়ে মেয়েদের কাজের আর কতটুকু মূল্য! সমাজ তৈরি হতে সময় লাগে। তাই তো অতিথির চায়ের কাপটি বিনা পারিশ্রমিকে উৎপন্ন করে গৃহে আবদ্ধ মহিলা শ্রমিক। আর তা যদি না হয়, তবে সমাজ বলে, আজকালকার মেয়েদের অলসতায় পরিবারের খাইখরচ বাড়ছে। আর ঠিক এই জায়গাতেই ক্লডিয়া গোল্ডিনের কাজ হয়ে পড়ে আমাদের মতো মহিলা শ্রমিকদের জন্য অতি প্রাসঙ্গিক। তাঁর নোবেল বিজয়ে উল্লসিত হই আমরা সবাই, যারা শ্রমের বাজারের মহিলা কর্মী, যারা প্রতিনিয়ত নানা বাধার সম্মুখীন আর ঘরে-বাইরে বিধ্বস্ত। ক্লডিয়ার কাজ আমাদের দিগদর্শক, আমাদের প্রতিবাদের ভাষা, মনের শক্তি। আশা রাখি তাঁর নোবেল জয় আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে, একদিন লিঙ্গসাম্য বাস্তবায়িত হবে। ক্লডিয়া গোল্ডিনকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন, আর নতজানু শ্রদ্ধা।