আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ● ১৬-৩০ কার্তিক, ১৪৩০

প্রবন্ধ

ভাষাচর্চার স্তম্ভ অশোক মুখোপাধ্যায়

শ্রী ঘোষ



অশোক মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালে বহরমপুরে। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ স্কুল পরে কলেজ, তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন। পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্বাবিদ্যালয়েই অধ্যাপনা শুরু করেন। যুক্ত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অবস্থিত 'স্কুল অফ্ প্রিন্টিং টেকনোলজি' প্রতিষ্ঠানে। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। কাজ করেছেন বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগেও।

তাঁর কাজের প্রধান আকর্ষণ ছিল বাংলা ভাষা ও অভিধান চর্চায়। অশোক মুখোপাধ্যায়, জ্যোতিভূষণ চাকী, পবিত্র সরকার, সৌরীন ভট্টাচার্য, সুভাষ ভট্টাচার্য - বাংলা বানান এবং অভিধান চর্চায় নিমার্ণ করেছিলেন একটি যুগ। অভিধান চর্চায় বৈজ্ঞানিক পন্থা ও অনুসরণে তিনি ছিলেন পরিশ্রমী ও আন্তরিক। 'সাহিত্য সংসদ' থেকে প্রকাশিত তাঁর বইগুলি আজও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চাকারীদের বহু প্রশ্নের উত্তরদাতা সর্বক্ষণের সঙ্গী।

অশোক মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়া এক বিরাট ক্ষতি। 'সংসদ সমার্থশব্দকোষ', 'সংসদ বানান অভিধান' ও 'সংসদ ব্যাকরণ অভিধান' বাংলা সাহিত্য ও ভাষাচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলা ব্যাকরণের নানা বিষয়ের ধারণা এবং ভাষার বানান পদ্ধতিকে অত্যন্ত সহজ সরলভাবে পরিবেশন অশোকবাবুর ব্যতিক্রমী প্রয়াস।

তাঁর 'সংসদ সমার্থশব্দকোষ' গ্রন্থটি বাংলা থিসরাস চর্চার জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। গ্রন্থটি সম্পর্কে সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত বলেছেন - "সমার্থশব্দকোষ (সংসদ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একটি অতুলনীয় সংযোজন।... যাঁহার বাহুল্যবর্জিত, প্রসাদগুণাবলী অথচ তাৎপর্য সমৃদ্ধ বাংলা লিখতে আগ্রহী হইবেন, তাঁহারা নিশ্চয় এই গ্রন্থের সমাদার করিবেন।"

সত্যজিৎ রায় বলেছেন - " 'সমার্থশব্দকোষ' ব্যবহার করে আমি বিশেষ উপকৃত হয়েছি। বাংলা থিসরাস ছিল না। এই বই সেই অভাব পূরণ করবে। যেকোনো বাংলা লেখকের কাছে বইটি অপরিহার্য বলে আমি মনে করি।"

সবসময় নতুন চিন্তাভাবনায় মগ্ন থাকতেন। কথা ও লেখা যে কত সহজ-সরলে, কত আশ্চর্য মায়াতে হাত ধরাধরি করে চলে, 'কথার কি ছিরি' গ্রন্থটি তার আদর্শ উদাহরণ। কম্পিউটার নিয়ে ছোটোদের জন্য ধারাবাহিক লিখতেন পত্রিকার পাতায় তখনও মানুষ সড়গড় হয়নি কম্পিউটার নামক যন্ত্রটির সঙ্গে। সে বিষয়ে তাঁর গ্রন্থ 'কম্পিউটারের কত কথা'। যুক্ত ছিলেন বাংলা হরফকে কম্পিউটারের উপযোগী করে তোলার কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও।

১২ অক্টোবর, ২০২৩ অশোক মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সমাপ্ত হল বাংলা ভাষাচর্চার এক বহুমুখী অধ্যায়।