আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ অষ্টাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ● ১-১৫ আশ্বিন, ১৪৩০

প্রবন্ধ

কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে একটু ভ্রমণ

প্রবণ পালন চট্টোপাধ্যায়


কবি জীবনানন্দ দাশ - যাঁর কবিতা প'ড়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'চিত্ররূপময়', যাঁর উদ্দেশ্যে সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু 'প্রগতি' পত্রিকায় বললেন, "জীবনানন্দবাবু বাংলা কাব্য-সাহিত্যে একটি অজ্ঞাতপূর্ব ধারা আবিষ্কার ক'রেছেন বলে আমার মনে হয়"। এই কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা বহুমাত্রিক। কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখে তাঁর কবিতা বিশ্লেষণ বা চিত্রিত করা যায় না।

তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গেলে আমার মতো অল্প জানা মানুষের কাছে বেশ বিড়ম্বনা। তবু তাঁর কবিতা পড়তে পড়তে, আবৃত্তি করতে করতে, প্রাজ্ঞ মানুষদের কাছে বিশ্লেষণ শুনে কিছুটা সমৃদ্ধ হয়েছি।

তাঁর কবিতার প্রধান রং - 'ধূসরতা'। একটা অবসন্ন আচ্ছাদন যেন সবসময় ঘিরে। একটা অস্পষ্ট, ছায়াঘেরা আবহে তাঁর কবিতার চলন। তাই তো তিনি অনায়াসে কাব্যগ্রন্থের নামকরণ করেন, 'ধূসর পান্ডুলিপি'। ১৯৩৭-এ এই গ্রন্থ পড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, "তোমার কবিতাগুলো পড়ে খুশি হয়েছি। তোমার লেখায় রস আছে, স্বকীয়তা আছে এবং তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে"।

তাঁর কলমের উল্লেখযোগ্য চলন হ'ল, প্রকৃতির মধ্যে অনায়াস ভ্রমণ ও অসামান্য উপমার ব্যবহার। তিনি অবলীলায় হেঁটে গেছেন বাংলার প্রকৃতি, ফুল, পাখি, জীবজন্তুর আঙ্গিনায় - কার্তিকের ছায়া, হেমন্তের মিষ্টি রোদ, হিজলের জানলার আলো, হলুদ পাতায় শিশিরের গন্ধ, বুলবুলি, শঙ্খচিল, পেঁচা, সোনালী ডানার চিল, বুনো হাঁস, তারাজ্বলা রাত, শিরিষের ডাল, অশ্বত্থের চূড়া, কলমীর ঘ্রাণ... কী নেই তাঁর ভাবনায়, চয়নে!

'নগ্ন নির্জন হাত' কবিতায় লিখলেন,
"অনেক কমলা রঙের রোদ ছিলো,
অনেক কাকাতুয়া,পায়রা ছিলো,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিলো অনেক"।

কিম্বা, 'বনলতা সেন' কবিতায় নিঃশব্দে সন্ধ্যা নামাকে তুলনা করলেন, শিশিরপাতের কাল্পনিক শব্দের সঙ্গে।

তাঁর কবিতা নিয়ে অনেকেই তাঁকে বলেছেন 'নির্জনতার কবি', অনেকেই তাঁর কবিতায় বিপন্নতা, বিষন্নতার কথা বলেছেন, মৃত্যু চেতনার ইঙ্গিত করেছেন। আমি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত নই। একথা ঠিক যে, তাঁর বহু কবিতায় নির্জনতার স্বাক্ষর আছে, বিষণ্ণতা আছে - যেমন, 'অন্ধকার' কবিতা, সেখানে প্রকৃতি, একাকীত্ব, বিষণ্ণতা আছে একই সঙ্গে। কিন্তু 'মৃত্যু চেতনার' কথা উঠলে দেখি অনেক কবিতায় তিনি প্রকারান্তরে জীবনের কথা বলেছেন, বেঁচে থাকার কথা বলেছেন। 'আট বছর আগের একদিন' কবিতায় আত্মহন্তারক ছেলেটির কথা বলতে গিয়ে তার বিপন্নতা বোধ প্রকাশ করলেন,

"চাঁদ ডুবে চলে গেলে - অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো নিস্তব্ধতা এসেছিল"।

এখানে তিনি মগ্ন চৈতন্য থেকে অনুভব করেছেন মরুভূমির ধূসরতা, রুক্ষতা, সন্ধ্যার অন্ধকার - যা উটের গ্রীবার নিস্তব্ধতায় প্রকাশ।

কিন্তু পরক্ষণেই তিনি আক্ষেপ করছেন, গলায় ফাঁস লাগানোর আগে, "অশ্বত্থের শাখা করেনি কি প্রতিবাদ"?

তিনি জীবনের গান গাইতে বসে লিখলেন,
"থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে, বলেনি কি,
বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?
চমৎকার। ধরা যাক দু'একটা ইঁদুর এবার।
জানায়নি পেঁচা এসে, এ তুমুল গাঢ় সমাচার"!

এখানে তিনি আশাবাদী। মৃত্যু নয়, জীবন চাইছেন, কর্ম চাইছেন - থুরথুরে অন্ধ পেঁচাও বাঁচতে চায়।

চারিদিকে সফেন জীবন সমুদ্রের মাঝে দু-দন্ড শান্তি চেয়েছিলেন জীবনানন্দ। অপরদিকে, পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন আশ্রয় বার্তা দেন। এখানেই বারবার জীবনানন্দের 'মগ্ন চৈতন্য' প্রতিভাত।

তাঁর কৈশোর ও যৌবন ঘিরে বর্ণময় ছিল ইংরেজী সাহিত্যের আবহাওয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটু আগে ও পরে ইউরোপ জুড়ে 'ডাডাইজমের' প্রবাহ - শিল্পীরা বাস্তবতাকে অস্বীকার ক'রে অদ্ভুত ও যুক্তিহীনতায় আশ্রয় নিলেন, একটা বেপরোয়া মনোভাবের জন্ম হ'লো সাহিত্য-সংস্কৃতিতে। ১৯২৪ থেকে 'ডাডাইজম' পড়লো ঝিমিয়ে, নতুন ধারা শুরু হ'লো ফরাসি কবি গিয়োম অ্যাপোলিনিয়ারের হাত ধরে। তাঁর কবিতায় 'সুররিয়ালিজম'-এর শুরু। পরবর্তীকালে বিভিন্ন কবির হাত ধরে জনপ্রিয় হয় সাহিত্য-সংস্কৃতির এই নবধারা। এর মধ্যে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে কবি আন্দ্রে ব্রেতোঁর অবদান স্মরণীয়। এই ধারায় অর্থবহ অবদানের জন্য তাঁকে, 'The Pope of Surrealism' আখ্যা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে অনেক বই ও ইস্তেহার আছে, সেগুলি আলাদাভাবে আলোচ্য।

।। ২ ।।

১৯২৩ সালে ফ্রয়েড প্রকাশ করলেন "The Ego and The Id". এই বইয়ের সহায়তায় তিনি মনের ক্রিয়াগত দিকগুলিকে তিনটি স্তরে ভাগ করলেন। এই তিনটি স্তর হ'ল - অদস (Id), অহম (Ego) এবং অধিসত্তা (Super Ego)। তাঁর মতে, ইদ্ হ'ল পূর্ণ মাত্রায় অচেতন। ব্যক্তি জন্মগতভাবে কিছু প্রবণতা নিয়ে আসে, এই প্রবণতার উৎস অদস্ বা ইদ্। ফ্রয়েড বলেছেন, ইদ্ সবসময় সুখভোগের নীতি অনুসরণ করে। ইদ্ হচ্ছে মানুষের নগ্ন কামনার প্রতিচ্ছবি। ভালোমন্দ বিচারের অবকাশ নেই, সুখই তার কাছে প্রধান। এই ইদ্-এর মধ্যেই লুক্কায়িত 'মগ্ন চৈতন্য' বা 'পরাবাস্তব'।

ইদ্ কোনো ইচ্ছাই সরাসরি পূরণ করতে পারে না, তার ইচ্ছা বাস্তবে চরিতার্থ করতে অহম্ বা Ego-র প্রয়োজন। অহম্ পরিচালিত হয় বাস্তব নীতির দ্বারা। আর অধিসত্তার কাজ হ'ল উচিত-অনুচিত বোধের জন্ম দেওয়া।

জীবনানন্দের লেখায় ইদ্ ও অহম্-এর প্রভাব অত্যন্ত প্রকট। পরাবাস্তবের অবচেতন চিত্র এবং তার সঙ্গে অহমের বাস্তব চিত্র - এই যে রসায়ন, এসবই তাঁর কবিতার গভীরজুড়ে সঞ্চরণশীল। তাঁর Surrealism জুড়ে বিপন্নতা থাকে, সুখ অনুভূতি থাকে, উপমা খেলা করে, প্রেম থাকে, ধূসরতা থাকে, ক্লান্তি আর নির্জনতার মধ্যেও বাস্তব বোধ, জীবনের গান থাকে। তাঁর রচিত 'ধূসর পান্ডুলিপি', 'রূপসী বাংলা', 'বনলতা সেন', 'মহাপৃথিবী', 'সাতটি তারার তিমির' প্রভৃতি গ্রন্থের কবিতাগুলি এর পরিচয় দেয়।

তিনি নিজেই বলেছেন, বিভিন্ন পাঠক, ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাঁর কবিতাগুলিকে 'প্রকৃতি', 'ইতিহাস চেতনা', 'সমাজ চেতনা', 'নিশ্চেতনা', 'প্রতীকী', 'সম্পূর্ণ অবচেতনা', 'সুররিয়ালিস্ট' - ইত্যাদি অলঙ্কারে ভেবেছেন। তিনি বলেছেন, সবগুলিই আংশিক সত্য। এক এক কবিতার এক এক অংশ এইগুলোর সঙ্গে যায়।

তিনি অক্লেশে বলেন,
"আলো অন্ধকারে যাই, মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে,
স্বপ্ন নয়, শান্তি নয়, ভালবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়।
"

এই ভাবনা, এই বোধের মাঝে তাঁর উপলব্ধি হয়;
"নকল লোকের মাঝে বসে
আমার নিজের মুদ্রা দোষে
আমি একা হতেছি আলাদা?
"

এর জন্য বারবার তিনি জর্জরিত হ'য়েছেন সমালোচকদের কুৎসিত, নগ্ন বিরুদ্ধাচরণে। কিন্তু কিছুই তাঁকে ক্ষান্ত করতে পারেনি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালক' (১৯২৭), প্রকাশিত হবার পর, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "তোমার কবিত্বশক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এতো জবরদস্তি করো কেন বুঝতে পারিনে"। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্য সেনগুপ্ত প্রমুখ সাহিত্যিক-মহল জীবনানন্দের গুনমুগ্ধ হয়ে ওঠেন।

অপরদিকে, সজনীকান্ত দাস এবং তাঁর অনুগামীরা নিয়মিতভাবে 'শনিবারের চিঠি', 'পরিচয়' প্রভৃতি পত্রিকার মাধ্যমে তাঁর বিভিন্ন কবিতা নিয়ে নিকৃষ্ট, কুৎসিত, অশ্লীল মন্তব্যে আঘাত হানতে থাকেন। বিশেষ করে 'বনলতা সেন', 'ক্যাম্পে', 'অন্ধকার' প্রভৃতি কবিতার উদ্ধৃতি সহযোগে তাঁর চরিত্র নিয়ে আক্রমন শুরু হয়। কেউ কেউ এরই মধ্যে বলতে থাকেন, 'বনলতা সেন' কবিতাটিতে নিজস্বতা নেই, এটি এডগার এলান পো-র কবিতা 'To Helen'-এর অনুকরণে লেখা।

এসব ছাপিয়ে বুদ্ধদেব বসু ঘোষণা করেন, "জীবনানন্দকে আমি আধুনিক যুগের একজন প্রধান কবি বলে মনে করি"।

পরাবাস্তবতা, অবচেতন মনের প্রতীকী উপস্থাপন, নির্জনতার পাশাপাশি তাঁর ছিল 'সমকাল সচেতনতা', 'সমাজ সচেতনতা', 'ইতিহাস সচেতনতা'।

তিনি লিখলেন,
"অদ্ভূত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ
যারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা।
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই, প্রীতি নেই
করুনার আলোড়ন নেই,
পৃথিবী অচল আজ, তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
"

তিনি বলতেন, "কবিতার অস্থির ভিতরে থাকবে ইতিহাস চেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান"।

এর পরিচয় পাই, 'হাওয়ার রাত', 'পিরামিড', 'নগ্ন নির্জন হাত', 'আবহমান', 'সিন্ধুসারস', 'সুরঞ্জনা' প্রভৃতি বহু কবিতায়।

জীবনানন্দের কলমে যেমন কবিতা এসেছে, তেমনই এসেছে বহু গল্প-উপন্যাস। সামগ্রিকভাবে আলোচনা খুবই শক্ত এবং দীর্ঘ হবে সে আলোচনা। তাঁর কবিতা, উপন্যাসে প্রবেশ করলেই বোঝা যাবে, তারা গভীরতা ও ভাবনা নিয়ে এতটাই ব্যাপ্ত, সব লিখতে গেলে এক একটা উপন্যাসের জন্ম হবে।

।। ৩ ।।

বাংলা সাহিত্যে 'সুররিয়ালিজম'-এর জনক কবি জীবনানন্দের জীবনে নারী বা প্রেয়সীর প্রভাব এসেছে বারবার। বিভিন্ন কবিতার ছত্রে ছত্রে তাঁর ক্লান্ত হৃদয়ে স্থান পেয়েছে বট ও হিজলের ছায়া। তাঁর প্রেম-ভালোবাসা-গভীরতায় ভরপুর মহাসমুদ্র, বিরহের অন্তর্জালে ক্ষত-বিক্ষত, দহনের উত্তাপে ভস্মীভূত অঙ্গার, নির্জনতার বিন্যাসে অন্ধকারের যাত্রী। বনলতা সেন, সুচেতনা, সুরাঞ্জনা, অরুনিমা সান্যাল, সুজাতা, অমিতা সেন প্রভৃতি নামগুলি চিত্রিত হয়েছে কবিতার অক্ষরে... পন্ডিত ও গবেষকেরা নিজেদের মতো করে চেষ্টা চালাচ্ছেন শিকড়ে প্রবেশের।

তবে প্রকাশিত সত্য হ'লো তাঁর জীবনে শোভনা দাসের প্রভাব। ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা খুড়তুতো বোন শোভনার সঙ্গে গড়ে উঠেছিল সম্পর্ক, সে ঘন সম্পর্কের অনেক কাহিনী - তার টানে কবি বারবার ছুটে গেছেন ডিব্রুগড়, শিলং এবং কলকাতার 'ডায়াসেশন কলেজের' হোস্টেলেও। ডিব্রুগড়, শিলঙে থাকাকালীন বেশীরভাগ সময়ে চলেছে কবিতাপাঠ... অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম পাঠিকা ছিলেন শোভনা।

তিনি এক জায়গায় লিখছেন,
"এই তো সেদিন ডিব্রু নদীর পাড়ে আমরা ঘুরছিলাম, মনে হয় যেন হাজার বছরের ওপারে
চলে গিয়েছ তুমি, শুধু অন্ধকারে বাবলা ফুলের গন্ধ যখন পাই কিংবা কখনও কখনও গভীর
রাতে ঘাস মাড়িয়ে তারার আলোয় সেই ব্যথিত ঘাসের শব্দ যখন শুনি রক্তের বিমূঢ় উত্তেজনায়
তখন তোমাকে আমি পাখির কাছে পাখিনীর মতো পাই।
"

এ সম্পর্ক সার্থকতা পাবে না পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনে, তিনি জানতেন, তবুও ছুটেছেন এবং ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, পন্ডিত, ইতিহাসবিদ, গবেষকরা বলেন, তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত শীতল ও উৎসাহহীন। তিনি বারবার অবহেলা ও উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালক' (১৯২৭) তিনি উৎ্সর্গ করেছিলেন শোভনা দাশ-কে। সম্বোধন করে লিখেছিলেন, "কল্যানীয়েষু"।

প্রচুর অপ্রকাশিত লেখা রয়ে গেছে এখনও কয়েকটি ট্রাঙ্ক ভর্তি এবং ডায়েরীর শত শত পাতায়।

তাঁর ভালবাসার কাহিনী লিখতে গেলেও উপন্যাসের জন্ম হবে। 'মাল্যবান' উপন্যাসে অনেকেই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন কাহিনী খুঁজে পান। তাঁর রচনা ছিল 'আত্মজৈবনিক'।

অবসেশড্ ছিলেন বলেই, প্রেম দ্বারা তড়িতাহত হয়েছিলেন বলেই পরিত্রানহীন ছুটে গেছেন। শোভনার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার পর তিনি খুবই ভেঙে পড়েন।

তাঁর লেখায় দেখেছি, "তুমি তো জানো না কিছু - না জানিলে/ আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক'রে"।

কিম্বা, "আবার কুড়ি বছর পরে তার সাথে দেখা হয় যদি"!

অথবা, "তোমাকে দেখার মতো চোখ নেই তবু/ গভীর বিস্ময়ে আমি টের পাই/ তুমি আজো এই পৃথিবীতে রয়ে গেছ"।

অথবা, "আমার মনে অনেক জন্ম ধ'রে ছিল ব্যথা/ বুঝে তুমি এই জন্মে হয়েছ পদ্মপাতা"।

জানি না, কাদের উদ্দেশ্যে তাঁর লেখনীর এ চলন! কে সেই প্রিয়তমা!

আমার চেতনায় ঘুরপাক খায় শুধু,
"আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হ'য়ে উঠছে/ আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার"।


তথ্যসূত্রঃ

● জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
● বিভিন্ন ওয়েবসাইট।