আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ দ্বাদশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ জুন, ২০২৩ ● ১-১৫ আষাঢ়, ১৪৩০
প্রবন্ধ
সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতের সূতীবস্ত্রের বিশ্বায়ন এবং ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়া
অমিয় কুমার বাগচী
প্রয়াত বন্ধুবর শিশিরকুমার দাশ তাঁর 'কেরী সাহেবের মুন্সী' গ্রন্থে, কেরীর (ইংরেজ উচ্চারণে কেয়ারি) প্রাক্কালের গবেষণার একটা দিক দেখিয়ে গিয়েছিলেন। আমি সাহিত্যশাস্ত্রী নই, কেঠো অর্থশাস্ত্রী।
সতেরো থেকে আঠারো শতকের মধ্যে একদিকে ইয়োরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে অন্যদিকে ভারতীয়, আরব এবং চৈনিক বণিকদের মাধ্যমে ভারতের সূতীবস্ত্র আমেরিকা থেকে ফিলিপাইনস পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে ভারতের সুতীকাপড়ের নকশা, ছাপার পদ্ধতি নকল করে অনেক দেশে প্রতিযোগী শিল্প গড়ে উঠছিল। কিন্তু তৎসত্ত্বেও ভারতের কাপড়ের রপ্তানি ছিল অন্যান্যদেশের চেয়ে অনেক বেশি!
ভারতের চারটি অঞ্চল ছিল সুতীকাপড় তৈরির কেন্দ্রস্থল - পাঞ্জাব, করমণ্ডল উপকূল এবং বঙ্গদেশ। যেমন যেমন চাহিদার প্রকার বদলাত তেমনি তেমনি তন্তুকাররা তাদের উৎপাদনের প্রকারেও পরিবর্তন আনতেন। পাঞ্জাব থেকে স্থলপথে আফগানিস্তান, ইরান, লোহিত সাগর হয়ে মিশর, মধ্য এশিয়া এবং তুর্কিতে কাপড় পৌঁছে যেত। অথবা নদীপথে গুজরাট গিয়ে সেখান থেকে সমুদ্রপথে রপ্তানি হতো। স্থলপথের বাণিজ্যে প্রাধান্য ছিল আর্মেনিয়ান বণিকদের আর জলপথে গুজরাটের প্রাধান্য ছিল। প্রধানত আরব প্রাধান্য ছিল ভারত মহাসাগরে। পর্তুগীজরা আসার পরে তারাই প্রধান বণিকগোষ্ঠী হয়ে ওঠে।
ভারতের সূতীকাপড় মালয় এবং ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুজে রপ্তানি হতো, এবং তার বিনিময়ে ভারত গোলমরিচ, জায়ফল, জৈত্রী, বার্ড অব প্যারাডাইস, সুগন্ধী কাঠ, আটা, টিন এবং সোনা আমদানি করত। ভারতের সূতীবস্ত্র চিন এবং জাপানেও পৌঁছে যেত। পর্তুগীজরা আমেরিকার রুপোর বিনিময়ে ভারত থেকে সূতী এবং রেশমি কাপড় কিনত।
পর্তুগীজদের অনুসরণ করে ইংরেজ, ওলন্দাজ এবং ফরাসিরা ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যে যোগ দেয়। তাদের মারফৎ ভারতের সুতীকাপড় পশ্চিম গোলার্ধে পৌঁছে গিয়েছিল। এই কাপড় বিশেষ করে দরকার হতো স্পেন অধিকৃত অঞ্চলের খনিদাসদের এবং উত্তর আমেরিকায় ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলিতে নিযুক্ত আখ এবং তামাকের খামারে কাজ করা ক্রীতদাসদের জন্য।
এখানে বলা প্রয়োজন যে ইয়োরোপীয়দের এশিয়ার বাণিজ্যে প্রবেশের ফলে ব্যবসা করার পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে বদলে গেল। প্রাগ-ভাস্কো ডা গামা-র যুগের এশীয় বণিকদের জাহাজে কয়েকজন পাহারাদার ছাড়া কামান বা প্রচুর বন্দুক থাকত না, অথবা তাঁরা নৌ-বহর ব্যবহার করে কোনও বন্দর বা শহর অধিকার করতে চেষ্টা করতেন না। ইয়োরোপীয় বণিকদের জাহাজ সর্বদা সশস্ত্র থাকত এবং তাদের সরকারের সনদ থাকত যে বাণিজ্যের খাতিরে তারা অন্য যে কোনও রাজ্যকে আক্রমণ করতে পারত। ভাস্কো ডা গামা যেমন কালিকট আক্রমণ করতে চেষ্টা করেছিল। আর ডা গামার দেশে সেবার ১১-১২ বছরের মধ্যে আলবুকার্ক, ভারতের গোয়া, দমন, দিউ দখল করেছিল এবং পর্তুগীজরা গোটা ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের মশলা বাণিজ্যের দখল নিয়েছিল। তারপর থেকে সব এশীয় বণিকদের সম্প্রদায়কে পর্তুগীজদের কর দিয়ে সমুদ্রযাত্রায় বেরোতে হতো। তা নইলে পর্তুগীজরা তাদের জাহাজ আক্রমণ করে দখল নিত। এ বিষয়ে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের 'রক্ত-সন্ধ্যা' নামে একটি মর্মস্পর্শী গল্প আছে। তাছাড়া পর্তুগীজ বোম্বেটেরা ভারতের উপকূল অঞ্চল আক্রমণ করে লুটপাট করত। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে হার্মাদদের নিষ্ঠুরতার অনেক কাহিনি পাওয়া যায়। পর্তুগীজদের এই আধিপত্য এক শতাব্দী টিকে ছিল। তারপরের শতাব্দীতে অর্থাৎ সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংরেজ, ডাচ ও ফরাসি বণিকরা এশীয় বাণিজ্যে প্রবেশ করল। ক্রমে ক্রমে ওলন্দাজরা পর্তুগীজদের হটিয়ে ইন্দোনেশিয়ার দখল নিল, ব্রিটিশরা ভারত দখল করল আর ফরাসিরা ভিয়েতনাম, লাওস এবং কাম্বোডিয়ার দখল নিল।
ভারতের সূতীবস্ত্রের কথায় ফিরে গিয়ে বলতে হয় যে ইংরেজদের প্রধান বস্ত্রশিল্প ছিল পশমী কাপড়। এই শিল্পে গোড়ার দিকে আধিপত্য ছিল ফ্লান্ডার্সের (বর্তমান বেলজিয়ামের)। ক্রমে ক্রমে রাষ্ট্রের সহায়তায় ইংল্যান্ডে এবং ফ্রান্সেও পশমশিল্পের প্রসার ঘটে। এইসব দেশেও ছোট ছোট সূতীবস্ত্র শিল্প ছিল। ফ্রান্সে ছিল রেশমশিল্প এবং লিনেনের তৈরি কাপড়। সেই কাপড় ধনীদের বিলাসদ্রব্য বলে গণ্য হতো। কিন্তু ইয়োরোপের সুতীকাপড়ের না ছিল পরার আরাম, না ছিল রঙ ছবির জেল্লা। ফলত ইয়োরোপীয় বণিকরা ভারতীয় সুতীকাপড় আমদানি করতে শুরু করল। প্রথম প্রমাদ গুনল ফরাসি পশমী কাপড় তৈরির কারিগররা এবং মালিকরা কারণ ইয়োরোপে গ্রীষ্মকালে ভারতের সুতীকাপড় পরে অনেক আরাম। তারপর প্রমাদ গুনল ফ্রান্সের লিনেন এবং রেশমশিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকরা এবং মালিকরা। কারণ সূতীবস্ত্র তার মসৃণতা এবং রঙের ঔজ্জ্বল্য দিয়ে লিনেন এবং রেশম কাপড়ের শিল্পকে প্রতিযোগিতা দিতে লাগল। ভারতীয় সুতীকাপড়ের বিরুদ্ধে জনমত এতই প্রবল হলো যে ১৬৮৬ সালে ফ্রান্সে আইন পাস হলো যে কাউকে যদি ক্যালিকো (কালিকট থেকে ভারতীয় সূতীবস্ত্রের সাধারণ নাম) পরতে দেখা যায় তার জেল হবে। সে সাধারণ শ্রমিকই হোক বা অভিজাত শ্রেণীর লোকই হোক।
ইংল্যান্ডেও অনুরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। সেই প্রতিক্রিয়ার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আমরা পাই একজন পথিকৃৎ ভারতীয় ঐতিহাসিক - পি. জে. টমাস-এর ১৯২৬ সালে প্রকাশিত 'Mercantilism and East India' বইতে (এই বইটি লেখার নেপথ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামী তুলসি গোস্বামীর আর্থিক সহায়তা ছিল)। ইংল্যান্ডে টিউডর রাজা সপ্তম হেনরির সময় থেকে সরকারী সহায়তা এবং বিদেশী পশমবস্ত্রের ওপর চড়া হারে শুল্ক বসিয়ে ইংল্যান্ডের পশম শিল্পের উন্নতি ঘটানো হয়েছিল। ইংরেজ কবি ড্রাইডেন লিখেছিলেন -
"Though Jason's fleece was grown old British wool was growing gold."
এছাড়াও ক্যান্টাবেরির মত অঞ্চলে একটি রেশমশিল্প গড়ে উঠেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (যাদের একচেটিয়া অধিকার ছিল ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করার) যখন উত্তরোত্তর অধিক হারে ভারতের সুতীকাপড় আমদানি করতে আরম্ভ করল তখন ইংল্যান্ডের পশমশিল্প এবং রেশমশিল্পে নিযুক্ত লোকেরা প্রমাদ গুনল। তাদের বাজার ছোট হওয়ার ফলে অনেক লোক ছাঁটাই হল। এইসব বেকাররা যাতে কোনওমতে বেঁচে থাকতে পারে তারজন্য তাদের Poor Home-এ ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। সেই সংস্থাগুলো চলত জমিদারশ্রেণীর টাকায় - যত বেকার বাড়ত, ততই তাদের করের হারও বেড়ে যেত! তাছাড়া ভেড়া পালন হতো জমিদার অথবা সম্পন্ন চাষীর জমিতে। পশমশিল্পের ক্ষতি হলে তারাও মার খেত। সুতরাং পশমশিল্পে প্রত্যক্ষভাবে নিযুক্ত লোক ছাড়াও এই ভূস্বামী এবং কৃষকশ্রেণীও ভারতীয় সুতীকাপড় আমদানীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। এরাই যেহেতু শাসকশ্রেণী ছিল, সুতরাং ভারতীয় কাপড় (ক্যালিকো) আমদানীর উপর যে কুঠারাঘাত হবে তা বলাই বাহুল্য।
ইংল্যান্ডে সপ্তদশ শতকের শেষভাগে সব বাজারেই মন্দা চলছিল। ব্রিস্টল, নিউবেরি, নরিচ শহরে প্রচুর তাঁতকল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে প্রচুর তাঁতি এবং তাদের যোগানদারদের কাজ চলে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই রব উঠলো যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সূতীবস্ত্র আমদানির ফলেই এই দুর্যোগ ঘটছিল। তাছাড়া ভারতীয় কাপড়ের অনুকরণে ইংল্যান্ডেও একটা ক্যালিকো শিল্প গড়ে উঠেছিল। তাদের প্রতিযোগিতাতেও পশম ও রেশম শিল্পের ক্ষতি হচ্ছিল। ১৭০০ সালের ১১ই জুন স্পিটালফিল্ডসের তাঁতিরা লন্ডনে দাঙ্গা বাঁধিয়েছিল এবং গুন্ডারা যাকেই ক্যালিকো পরতে দেখল, তার কাপড় ছিঁড়ে দিল।
এইসব ঘটনার পর পার্লামেন্ট একটা 'Royal Commission' নিয়োগ করল। সেই কমিশনের সুপারিশ অনুসারে ১৭১৯ সালে ক্যালিকো কাপড় আমদানি এবং ইংল্যান্ডে ক্যালিকো কাপড় ছাপানো নিষিদ্ধ হল। ১৭২০ সালে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে ক্যালিকো কাপড় পরা নিষিদ্ধ হল। এবং সেই নিষেধ কেউ খণ্ডন করলে তার কারাবাসেরও ব্যবস্থা হল। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতের সুতীকাপড়ের ব্যবসা রমরমিয়ে চলতে থাকল। কোম্পানি সেই কাপড় পশ্চিম গোলার্ধে, আফ্রিকায় বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করতে থাকল। এই ব্যবসা উনিশ শতকের গোড়া অবধি চলতে থাকল। কোম্পানি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা জয় করার পর ভারতীয় তাঁতিদের উপর অত্যাচার বেড়ে গেল। তাদের বলা হল যে কোম্পানির কাছে ছাড়া অন্য কোনও ক্রেতার কাছে তারা তাঁত বিক্রি করতে পারবে না। সেই আদেশ লঙ্ঘন করলে তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হতো। ভারতীয় সুতীকাপড় আমদানির ফলে পশ্চিম আফ্রিকার সুতীকাপড়ের শিল্প প্রচন্ড মার খেয়েছিল।
ভারতীয় সুতীকাপড়ের দাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ভীষণভাবে কমে গেল ১৮১৩-১৪ সালের পর থেকে। ততদিনে ইংল্যান্ডে সুতো পাকানো এবং তাঁতে কাপড় বোনা যন্ত্র দিয়ে উৎপাদন হতে আরম্ভ করেছে। সুতরাং সুতোর দাম এবং কাপড়ের দাম ভারতীয় কাপড়ের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। ১৮১৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের সঙ্গে একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার রদ করে দিয়েছিল। সুতরাং ম্যাঞ্চেস্টার-এর কলমালিকরা যথেচ্ছভাবে ভারতে সুতো এবং কাপড় রপ্তানি করতে আরম্ভ করল। তার সঙ্গে কোম্পানির অদ্ভুত শুল্কবিধি যোগ হয়েছিল। ভারতে তৈরি শিল্পদ্রব্যের ওপরে শুল্কের পরিমাণ ইংল্যান্ড থেকে আমদানী করা শিল্পদ্রব্যের উপর শুল্কের চেয়ে বেশি ছিল। তার ফলে হাজার হাজার তাঁতী এবং সুতো কাটনীদের কাজ চলে গিয়েছিল। ১৮৩৫ সালে গভর্ণর জেনারেল চার্লস মেটকাফ বলেছিলেন, "হিন্দুস্তানের জমি তাঁতিদের হাড়ে সাদা হয়ে গিয়েছে।"
ভারতে যখন যন্ত্রচালিত সূতীবস্ত্রের নির্মাণ আরম্ভ হল, সেই শিল্প সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পায়নি। ১৮৮০-র দশকে লর্ড রিপন সমস্ত আমদানী শুল্ক তুলে দিলেন। কিন্তু ভারতে তৈরি শিল্পদ্রব্যের ওপর বিদেশে আমদানী শুল্ক চাপানো হতো। ওই নীতিকে পামডাট আখ্যা দিয়েছিলেন, 'one-way force trade policy.' যখন ১৮৯০-এর দশকে সরকারি আয় বাড়ানোর জন্য বিদেশ থেকে (প্রায় সবটাই ম্যাঞ্চেস্টার থেকে) আমদানী সুতোর ওপর অল্প হারে শুল্ক বসানো হল, একই হারে ভারতে তৈরি সুতোর ওপরেও আবগারি শুল্ক বসানো হল। গোটা উনিশ শতক ছিল ভারতের অবশিল্পায়নের যুগ। অন্যদিকে ভারত হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্রিটিশ সুতীকাপড়ের বৃহত্তম বাজার।
১৯১১-১২ থেকে ১৯১৩-১৪ সালে ভারতে আমদানী হয়েছিল ৮,১৭১,৪৯০ টন কাপড়, যেখানে ভারতের তাঁতকলের উৎপাদন সেসময়ে ছিল ৭,৬৯,১৫১ অর্থাৎ আমদানী কাপড়ের এক দশমাংশও নয়।
তথ্যসূত্রঃ
• Bagchi, Amiya Kumar, 1972, Private Investment in India, Cambridge, Cambridge University Press.
• Bagchi, Amiya Kumar, 1976, De-industrilization in India in the nineteenth century; Some theoretical implications, Journal of Development Studies, 12(2):141-6.
• Chapman, S. D., 1972, The Cotton Industry in the Industrial Revolution, London; McMillan.
• Imkori, Joseph, E. 2009, English versus Indian Cotton Textiles: The Impact of Imports on Cotton Textile Production in West Africa; Pages 85-114 in Riello and Roy, 2009.
• Riello, Giorgio and Tirthankar Roy; Ed. 2009; How India Clothed The World: The World of South Asian Textiles 1500-1800; Boston, MA; Bill.
• Stensgard, Niels, 1981; Violence and the Rise of Capitalism; Frederic C. Lane's Theory of Partition, Review (Fernaul Bradel Carter), 5(2); 247-273.
• Thomas, P. J. 1926. Mercantilism and East India Trade, London, P. S. King & Co.