আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ একাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ জুন, ২০২৩ ● ১৬-৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

প্রবন্ধ

অনুভবে ‘ঠাকুর’রবি

অম্বিকেশ মহাপাত্র


১৯৬০-এর দশক, আমার ছোট্টবেলা এবং ১৯৭০-এর দশক, আমার বালকবেলা প্রত্যন্ত গ্রামে কেটেছে। গ্রামটি অত্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত এবং থানা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। স্বাধীনতালাভের ২০-২৫ বছর পরও গ্রামে ছিল না বিদ্যুৎ, ব্যবহার উপযোগী রাস্তাঘাট, ন্যূনতম সরকারি পরিষেবা। গ্রামের সকল পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস সাবেকি প্রথায় বর্ষাকালে বৃষ্টি-নির্ভর আমন ধানের চাষাবাদ। গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারের মধ্যে কমবেশি ১৫টি পরিবার বাদে, বাকি পরিবারের চাষাবাদ থেকে সারা বছর সংসার প্রতিপালনের ন্যূনতম রসদ সংগ্রহ সম্ভব ছিল না। গ্রামের মানুষের পরনের কাপড়, বাড়িঘর, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের করুণ অবস্থা কহতব্য ছিল না। প্রকৃতি-নির্ভর বর্ষাকালে এক-ফসলি আমন চাষের উপর নির্ভরশীল গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই বৈশাখ মাস থেকে ভাতের হাঁড়ির চালের অভাব দেখা দিত। গ্রামবাসীরা নিরুপায়ে ঘাস বিক্রি, কাঁচা বাঁশ বিক্রি, এমনকি বাড়ির ব্যবহার্য ঘটি-বাটি-দরজা-জানালা বিক্রি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করতেন। পাশাপাশি বহু রকমের মহাজনী ঋণ ও সুদের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়তেন। এই অবস্থায় মা-বাবা নিজেদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর কথা মাথায় আনতেই পারতেন না। মেনে নিতে বাধ্য হতেন - ‘লেখাপড়া সকলের জন্য নয়, কেবলমাত্র ভাগ্যবানদের জন্য’। এবং এটাই কপালের লিখন; ঠাকুরের নিদান!

আমার ৯ বছর বয়সে বাবার আকস্মিক মৃত্যু। অভিভাবক মা, অক্ষরের মাত্রাজ্ঞানহীন স্বাক্ষর করতে পারতেন। তার সঙ্গে পারিবারিক দারিদ্র্য তো ছিলই। এই প্রেক্ষিতে শৈশবে গ্রামীণ পরিবেশে রবি ঠাকুরের সঙ্গে শিব ঠাকুর, দুর্গা ঠাকুর, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, কালী, শীতলা, চন্ডী,... প্রভৃতি ঠাকুরের মধ্যে তফাৎ বুঝতাম না। বড় হওয়ার সাথে সাথে লেখাপড়ার মাধ্যমে বুঝলাম, রবি ঠাকুর রক্ত-মাংসের মানুষ; বাকি ঠাকুরদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বাকি ঠাকুর মানুষের কল্পনায় বাঁশ-খড়-মাটি নতুবা পাথর দিয়ে মানুষেরই গড়া। এই সকল ঠাকুর শুধু পুজো নেন। পুজোর দিনক্ষণ ঠিক করা হয়, পাঁজি-পুঁথি-তিথি-নক্ষত্র বিচার-বিমর্ষ করে। এবং পুজো করবেন কেবলমাত্র বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ-পুরোহিত মহাশয়, যাঁদের উপবীত বা পৈতে আছে। অন্যেরা নয়!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মতারিখ ২৫শে বৈশাখে প্রাথমিক স্কুলে প্রতি বছর ছুটি থাকতো। ঐদিন পাড়ার একটু বড়রা ক্লাবের নামে রবি ঠাকুরের ছবিতে ফুলমালা পরিয়ে, ধূপ জ্বালিয়ে গান-কবিতা-কথায় অনাড়ম্বর জন্মদিন পালন করতো। জানতে ও বুঝতে শুরু করলাম, রবি ঠাকুর প্রচুর গান ও কবিতা লিখেছেন। বড় হওয়ার সাথে সাথে আরও জানলাম - শুধু গান ও কবিতা নয়; অনেক অনেক কিছু লিখেছেন। ছড়া, পদ্য, গল্প, নাটক, উপন্যাস কত কিছু। রবি ঠাকুর সাহিত্যে বিশ্বসেরা পুরস্কার ‘নোবেল’ও পেয়েছেন এবং তিনি-ই প্রথম ‘নোবেল’ জয়ী ভারতীয়-বাঙালি। যাঁরা রবি ঠাকুর নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা, চর্চা ও গবেষণা করেছেন, এমন লোকজনে বলেন - রবি ঠাকুর প্রকৃত অর্থেই মানুষের ঠাকুর। তিনি ছোট-বড়-ধনী-গরীব-মুচি-মেথর সকল মানুষের দুঃখ-সুখ-আনন্দ-বিষাদ সব রকমের অনুভূতিকে গানে, কবিতায়, পদ্যে, গদ্যে,... প্রভৃতিতে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে গভীরভাবে ব্যক্ত করেছেন।

প্রাথমিক স্কুলে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'বর্ণপরিচয়'-এর মাধ্যমে বর্ণ বা অক্ষর পরিচয়ের পর, আমাদের রবি ঠাকুরের সহজ পাঠ (১ম ও ২য় ভাগ) পড়ানো হত। তার মধ্যদিয়ে রবি ঠাকুরের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক পরিচয়। মাধ্যমিক স্কুলের পাঠক্রমে বাংলায় আমাদের পড়তে হয়েছিল রবি ঠাকুরের কালজয়ী অমর সৃষ্টি ‘দুই বিঘা জমি’। বাংলার মাষ্টারমশাই পড়ানোর সময় এমনভাবে ব্যাখ্যা সহ বুঝিয়েছিলেন, যা আজও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে রয়ে গেছে, মনের গভীরে দাগ রেখে গেছে। বিশেষ করে কবিতার মুখ্য চরিত্র হতদরিদ্র ‘উপেন’-এর শোক, দুঃখ, বঞ্চনা ও হতাশার উপাখ্যান।

শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভূঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন?এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই -
চেয়ে দেখো মোর আছে বড় জোর মরিবার মত ঠাঁই।’
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা
পেলে দুই বিঘে প্রস্থ ও দিঘে সমান হইবে টানা -
ওটা দিতে হবে।...

* * * * * *

এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

* * * * * *

আমি কহিলাম, ‘শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধু বেশে পাকা চোর অতিশয়!’
আমি শুনে হাসি, আঁখি জলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে -
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।।

আজও ষাটোর্ধ্ব বয়সে উপরোক্ত পঙক্তিগুলির কথা গভীরভাবে ভাবায়। রবি ঠাকুর কলকাতায় জোড়াসাঁকোয় ধনী-স্বচ্ছল ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে দিন কাটিয়ে, অসহায় হতদরিদ্র উপেনের মনকে বুঝলেন কি করে? কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কালজয়ী কবিতার অংশ-বিশেষকে ভুল প্রমাণিত করে!

চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।

আমাদের মাধ্যমিক স্কুলে প্রতিবছর নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত। বাংলার মাষ্টারমশাই বললেন - “সবাইকে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে”। গ্রামের স্কুলের মুখচোরা বেশিরভাগ ছাত্র সাড়া দেয়নি, কতিপয় বাদ দিয়ে। আমি বেশিরভাগেরই দলে। জীবনে কোনও দিন আবৃত্তি করিনি। মাষ্টারমশাই নিজে থেকে আমার নাম নিয়ে নিলেন এবং বললেন - “রবি ঠাকুরের ‘ওরা কাজ করে’ কবিতা মুখস্থ করবে এবং আমাকে আগে শুনিয়ে নেবে। বাকিটুকু আমি বলে দেব। কেমন?” ভীত হলেও মাষ্টারমশাইয়ের নির্দেশ অমান্য করি কী করে? পড়িমরি করে কবিতা মুখস্থ করে, মাষ্টারমশাইকে শোনাতে হল। মাষ্টারমশাই স্কুলের কোয়ার্টারে থাকতেন এবং আমি স্কুলের বোর্ডিংয়ে থাকতাম। মাষ্টারমশাই কোথায় জোর দিতে হবে, কোথায় একটু থামতে হবে, বুঝিয়ে দিলেন। মাষ্টারমশাই বোঝালে কি হবে, আমি আমার মতো। যাক সেকথা, আসল কথায় আসি। কবিতার নিম্নোক্ত পঙক্তিগুলি আজও অনুভবে গেঁথে রয়ে গেছে।

মাটির পৃথিবী পানে আঁখি মেলি যবে
দেখি সেথা কলকলরবে
বিপুল জনতা চলে
নানা পথে নানা দলে দলে
যুগযুগান্তর হতে মানুষের নিত্য প্রয়োজনে
জীবনে মরণে।
ওরা চিরকাল
টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল;
ওরা মাঠে মাঠে
বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে।
ওরা কাজ করে
নগরে প্রান্তরে।

* * * * * *

শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ 'পরে
ওরা কাজ করে।

আজ ষাটোর্ধ্ব বয়সে ভাবি - রবি ঠাকুর যুগযুগান্তরব্যাপী সমাজ পরিবর্তন এবং সমাজের নিত্যপ্রয়োজন মেটানোর চালিকাশক্তি হিসেবে তাঁদেরই, যাঁরা মাঠে-ঘাটে-কলে-কারখানায়-নগরে-প্রান্তরে কাজ করেন অর্থাৎ শ্রমজীবীদেরই নির্দ্দিষ্ট করেছেন। রবি ঠাকুর মনোভাবে মার্কসবাদী ছিলেন কী না জানি না। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না। কিন্তু মানুষের কল্যাণকামী বামপন্থী মননের অধিকারী ছিলেন, আমার অনুভবে তা নিঃসন্দেহ। আর একটু বেশি বয়সে রবি ঠাকুরের ‘রাশিয়ার চিঠি’ পড়ে সেই ধারণাই দৃঢ় হয়েছে। নভেম্বর বিপ্লবের ১৩ বছর পর রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ‘রাশিয়ার চিঠি’তে রবি ঠাকুর লিখেছেন - “আপাতত রাশিয়ায় এসেছি - না এলে এজন্মের তীর্থ দর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত।” তিনি আরও লিখেছেন - “দেখতে পাচ্ছি, বহুদূরব্যাপী একটা ক্ষেত্র নিয়ে এরা একটা নূতন জগৎ গড়ে তুলতে কোমর বেঁধে লেগে আছে। দেরি সইছে না; কেননা জগৎ জুড়ে এদের প্রতিকূলতা, সবাই এদের বিরোধী - যত শীঘ্র পারে এদের খাড়া হয়ে দাঁড়াতে হবে - হাতে হাতে প্রমাণ করে দিতে হবে, এরা যেটা চাচ্ছে সেটা ভুল নয়, ফাঁকি নয়। হাজার বছরের বিরুদ্ধে দশ-পনেরো বছরে জিতবে বলে পণ করেছে।” সে দেশের জনশিক্ষা সম্পর্কে রবি ঠাকুর বললেন - “আমি নিজের চোখে না দেখলে কোনও মতেই বিশ্বাস করতে পারতুম না যে, অশিক্ষা ও অবমাননার নিম্নতম তল থেকে আজ কেবলমাত্র দশ বৎসরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে এরা শুধু ক খ গ ঘ শেখায়নি, মনুষ্যত্বে সম্মানিত করেছে। শুধু নিজের জাতকে নয়, অন্য জাতের জন্য এদের সমান চেষ্টা।” মানুষের কল্যাণকামী বামপন্থী মনন ছাড়া লেখণিতে এই লেখা আসতে পারে না।

বিশ্বমানবতার চরমতম শত্রু, বিশ্বত্রাস ফ্যাসিস্ট হিটলারের বিশ্ব দখলের নেশায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আরও একটু বেশি বয়সে বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন ইতিহাস জানবার যখন চেষ্টা করছি। তখন জানতে পারলাম - বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে মানবসভ্যতা ধ্বংস-যজ্ঞে হিটলার যখন উন্মত্ত এবং তাঁর নাৎসী-বাহিনী অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, প্রতিরোধ নেই, প্রতিরোধ গড়েও উঠছে না, তখন প্রায় অশীতিপর রবি ঠাকুর শেষ শয্যায়। প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছেন। মনোবেদনা ব্যক্ত করছেন - "তাহলে কি মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে? মানবতা বাঁচবে না? মানবের সমাজ থাকবে না?" ১৯৪১ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে রোগ-শয্যায় জেনে গিয়েছিলেন; না শেষমেশ মানবতার পক্ষের শক্তি, যোসেফ স্তালিনের নেতৃত্বাধীন লালফৌজ আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। নাৎসী-বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। রবি ঠাকুর স্বস্তি-স্বরূপ এই বার্তাটুকু জেনে চিরতরে চোখ বুজেছিলেন। বিশ্বমানবতার পথিক রবি ঠাকুর বিশ্বযুদ্ধের শেষ পরিণতি দেখে যেতে পা পারলেও, নিশ্চিত ছিলেন মানবতার শত্রু পরাজিত হবেই। আমরা যাঁরা বেঁচে আছি, জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পরিণতি। পরিণতিতে ফ্যাসিস্ট হিটলারের আত্মহত্যা এবং তার ঠিক দু’দিন আগে হিটলারের গুরু সস্ত্রীক বেনিতো মুসোলিনির জনরোষে মৃত্যু। ছদ্মবেশে ইতালি ছেড়ে পালাতে গিয়ে।

রবি ঠাকুরের উপন্যাস ‘যোগাযোগ’ পড়ার সময় নানান ভাবনায় ভাবিত হই। তারমধ্যে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে চাই। দামী জুতোর চেয়ে কম দামী চপ্পল বেশি ব্যবহারোপযোগী। চপ্পল অপারেশন থিয়েটার, বাড়ির ভিতর, স্নানাগার, রাস্তায়,... সর্বত্র ব্যবহার সামগ্রী। কিন্তু দামী জুতো নিয়ে সমাদর থাকে, তাকে নিয়ে জুতোর মালিক গর্ব করতে পারেন, কিন্তু অপরিহার্য নয়। সেদিক থেকে চপ্পল অপরিহার্য। গরীব মানুষও কিনে পরতে পারেন। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে মনে পড়ে - দুই ধাতব পদার্থ; লোহা এবং সোনা। সোনা মহামূল্যবান তাই সবার ঘরে থাকে না, থাকতে পারে না। কিন্তু লোহার বাজার মূল্য অনেক অনেক কম; সবার ঘরেই এর অধিষ্ঠান, অত্যন্ত ব্যবহারোযোগী এবং অপরিহার্য। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কারও পরিবার পাওয়া যাবে না, যাঁর পরিবারে এক টুকরো লোহা নেই।

রবি ঠাকুরের যা পড়ি, ততই বুঝবার চেষ্টা করি নিজেকে। রবি ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা বারবার পড়ি, বারবার নতুন নতুন উপলব্ধি হয়ে ধরা দেয়। কয়েকটি পঙক্তি উল্লেখ করে আমার লেখার ইতি টানব।

কেউ বা তোমায় ভালোবাসে
কেউ বা বাসতে পারে না যে,
কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা
সিকি পয়সা ধারে না যে,
কতকটা যে স্বভাব তাদের
কতকটা বা তোমারো ভাই,
কতকটা এ ভবের গতিক -
সবার তরে নহে সবাই।

* * * * * *

তোমার মাপে হয়নি সবাই
তুমিও হওনি সবার মাপে,
তুমি মর কারো ঠেলায়
কেউ বা মরে তোমার চাপে -
তবু ভেবে দেখতে গেলে
এমনি কিসের টানাটানি?
তেমন করে হাত বাড়ালে
সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।

* * * * * *

নিজের ছায়া মস্ত করে
অস্তাচলে বসে বসে
আঁধার করে তোল যদি
জীবনখানা নিজের দোষে,
বিধির সঙ্গে বিবাদ করে
নিজের পায়েই কুড়ুল মার,
দোহাই তবে এ কার্যটা
যত শীঘ্র পার সারো।

কোনো কারণে শরীর-মনে প্রফুল্লতা না থাকলে, রবি ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা পড়ি। আবার নতুন উদ্যমে কাজে ব্রতী হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পাই। এবং জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে রবি ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতার নিম্নোক্ত অংশ বিশেষকে অমোঘ বাণীরূপে গ্রহণ করি।

মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।