আরেক রকম ● দশম বর্ষ নবম সংখ্যা ● ১-১৫ মে, ২০২২ ● ১৬-৩০ বৈশাখ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

কলকাতার শপিং মল ও বাংলা ভাষা

মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


দুই বছর আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলে মোবাইল কিনতে গিয়েছিলাম। সাহায্যকারী একটি ছেলেও বাংলা বা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। হিন্দিতে খুব স্বচ্ছন্দ নই, আর বেশ রাগও হচ্ছিল। খাস কলকাতার বিখ্যাত শপিং মলের দোকানে একটি ছেলেও অহিন্দিতে কথা বলতে পারে না!

চারিদিকে তাকিয়ে দেখি, কই আর তো কারোর অসুবিধা হচ্ছে না। স্রোতের মত উদ্ভাসিত যুবক-যুবতী আসছে, দেখছে, কিনছে, চলে যাচ্ছে। সবাই হিন্দিতে স্বচ্ছন্দ।

শুধু আমি এক বিগত যুগে বসে আছি।

সত্যি কি বিগতবাসিনী হলাম? এদিকে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে 'জয় বাংলা' ধ্বনি বেশ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করলে একে অপরের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা আবশ্যিক এমন দাবিও উঠেছে।

কেন এই দাবি উঠেছে? একি শুধুই আবেগ, নাকি এর পেছনে আছে কোন নির্দিষ্ট কর্মসূচি? নির্দিষ্ট পরিকল্পনা?

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের ভাষাতাত্ত্বিক মানচিত্রে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা হ্রাসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অবশ্য এই নিম্নমুখী প্রবণতা হিন্দি বাদে অধিকাংশ আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে স্পষ্ট। হিন্দিভাষীর সংখ্যা ১৯৭১ সালে ছিল ৩৬.৯৯ শতাংশ, ২০১১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪৬.৬৩ শতাংশতে। হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা উল্কাগতিতে বেড়ে চলেছে।

বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বাধিক কথ্য ভাষা বাংলা সঙ্কুচিত হচ্ছে।

● ১৯৯১ সালে বাংলাভাষী মানুষের শতাংশ ভারতের জনসংখ্যার ৮.৩ শতাংশ বলে গণনা করা হয়েছে,
● ২০০১ সালে, সংখ্যাটি ৮.১১ শতাংশে নেমে আসে, এবং
● ২০১১ সালে হয়েছে ৮.০৩ শতাংশ।

বাংলা ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা।

কেন বাংলা সহ সংবিধানের অন্য শিডিউল্ড ভাষাগুলোর অবক্ষয় হয়ে চলেছে তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আগে অনেকেই ভারতবর্ষের ‘তিন-ভাষা সূত্রের’ নমনীয়তার উল্লেখ করতেন। “যেখানে সম্ভব, কমপক্ষে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত, এমনকি সম্ভব হলে ক্লাস এইট পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম মাতৃভাষা/স্থানীয় ভাষা/আঞ্চলিক ভাষাতে হবে। তারপর, যেখানে সম্ভব স্থানীয় ভাষাকে ভাষা হিসেবে শেখানো চলবে। এটি সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ধরণের বিদ্যালয়ে অনুসরণ করা হবে।”

কোনও রাজ্যের ওপরে কোনও ভাষা কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কোন ভাষা শিখবে, কোথায় গুরুত্ব দেবে তা রাজ্য সরকার এবং শিক্ষার্থীদের নিজের পছন্দ মত হবে; অবশ্য তিনটি ভাষার মধ্যে অন্তত দুটি ভারতীয় ভাষা হতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৭ সাল থেকে এই রাজ্যের স্কুলে তিনটি ভাষার মধ্যে একটি ভাষা বাংলা থাকা বাধ্যতামূলক হয়েছে। অধিকাংশ বাঙালি ঘরের ছেলেমেয়েরা প্রথম বা দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা শেখে। ভাষা নীতি কিছুটা সংশোধিত হলেও বাংলা ভাষার স্থান উন্নত হয়েছে এমন প্রমাণ কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।

শপিং মলে নতুন প্রজন্মের বাঙালি দিব্বি হিন্দি বলছে। এতে তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না। আবার অনেকে বাংলা ছেড়ে হিন্দি ধরছে। এই ঘটনায় বিগতযুগের বাসিন্দারা হয়তো আশ্চর্য হয়ে যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে অধিকাংশ আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা আছে। প্রথমে অনুধাবন করা দরকার কেন এই প্রবণতা বাড়ছে।

আবেগ ও অর্থনীতি

বিগত একশ পঞ্চাশ বছর ধরে ঔপনিবেশিক ও জাতীয় শাসকদের স্বার্থে বারবার বাংলার বিভাজন হয়েছে, জনসংখ্যার স্থানান্তর হয়েছে। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আক্রমণের আগে বাংলা ছিল এশীয় উপমহাদেশের অন্যতম বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। এই অঞ্চলের প্রধান উৎপাদন দ্রব্যগুলোর মধ্যে সূতিবস্ত্র ও সিল্ক, গন্ধদ্রব্য, সোনা ও রুপার গয়না এবং অন্যান্য বহু কারুশিল্প দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিল। হাজার হাজার জাতের ধান এবং ফল ও শাকসবজি সহ কৃষিপণ্যের অন্যতম প্রধান উৎপাদক ছিল বাংলা।

অবশ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিল বাংলার বাইরের ব্যবসায়ীরা। বাংলার অধিকাংশ বৃহৎ ব্যবসায়ী পরিবার ঐতিহাসিক ভাবে মারোয়ারি, পার্সি এবং গুজরাটিদের মত ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। বাংলার বিভিন্ন বণিক সম্প্রদায় বর্ণ বিভক্ত সমাজে কোনদিনই যথাযোগ্য মর্যাদা পায়নি।

বাঙালি উচ্চবর্ণ অংশটি ব্রিটিশ রাজের সময় পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসকের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছিল। ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রলোক বাঙালিরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে একটি বিশ্বস্ত গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতার পরে অতি দ্রুত পট পরিবর্তনের সময়ে বাংলার বিভক্তি এবং উদ্বাস্তু সংকটে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পাশে এসে দাঁড়ালো না। আন্দামানের সেলুলার জেলে অধিকাংশ স্বাধীনতা সংগ্রামী বাংলার হলেও স্বাধীনতার একবারে প্রথম মুহূর্ত থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি পশ্চিমবঙ্গকে কোনঠাসা করতে সচেষ্ট থেকেছে। দুই একটা উদাহরণ দিলে তখনকার কেন্দ্রীয় নীতি কিছুটা পরিষ্কার হবে।

ক) বঙ্গভঙ্গের ঠিক রাতেই (১৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় সরকার পাট রপ্তানি শুল্কের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য অংশ ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে। বাংলার পাট ও চায়ের মূল্যে বোম্বাইয়ের (মহারাষ্ট্র ও গুজরাট) সুতি বস্ত্র শিল্পকে সব ধরনের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল।

(খ) পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে ছিল আকরিক লোহা এবং কয়লার বিশাল মজুত। ১৯৫৬ সালে ঘোষিত কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প নীতি অনুযায়ী সারা দেশে লোহা, ইস্পাত এবং কয়লার দাম সমান করা হয়। এইভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় নীতির ফলে অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা লাগে। কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলের কাঁচামালের ওপরে এই সমান দামের নীতি কার্যকর করা হয় না। ফলে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে বিভিন্ন শিল্পের উর্ধগতি হতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের বিনিময়ে।

এমন অজস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে রণজিৎ রায়ের 'দ্য এগোনি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল', ১৯৭২ গ্রন্থে।

স্বাধীনতার পরে কলকাতা শহরের গুরুত্ব কমল, ভারতে বাংলার অবস্থান পাল্টে গেল। ভারতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আর্থ-সামাজিক অবদান ও গুরুত্ব ক্রমাগত হ্রাস পেল। বাঙালি শিল্পপতিরা ছিল ক্ষুদ্র। বাংলার স্বার্থকে প্রতিফলিত করার মত ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি ভদ্রলোক সম্প্রদায় দেশের মধ্যে ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে যায়। এর মধ্যে হিন্দির বাড়বাড়ন্ত হওয়াতে তাদের ওপরে সামাজিক চাপ আরও বাড়তে থাকে।

অবস্থা সামান্য ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সাতের দশকের মধ্যভাগে। কিন্তু ক্রমাবনতি ঠেকানো যায়নি। একসময়ে আমরা শুধু বাংলায় বসবাস করতাম, এখন শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে বাঙালি সন্তানদের ভারতের নানা প্রান্তে থাকতে হয়। আগে শুধু বাংলা জানলে চলত, এখন সাথে হিন্দি জানতে হয়। ইংরেজি জানলে আরও ভাল হয়।

গ্রামের দরিদ্র মানুষ দিল্লি, রাজস্থান এমনকি কেরালা বা উড়িষ্যাতে যায় রুটিরুজির প্রয়োজনে। রাজমিস্ত্রী, জরি শিল্পী, অলংকার শিল্পীরা যায় সারা ভারতবর্ষে। আর মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে-মেয়ে যায় দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে পড়াশুনা করতে, পড়া শেষে কাজ করতে। কর্পোরেট অফিস চলে হিন্দিতে, ইংরেজীতে। উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের যোগসূত্র আজ হিন্দি।

এ হল কেঠো অর্থনীতি।

আজকের ছেলে-মেয়েরা হিন্দি সিনেমা দেখে। ইংরেজিতে পড়ে। কথা বলে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি মিশ্রিত ভাষায়। ওদের অসুবিধা হয় না। ওরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। নিতে বাধ্য হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দিকে উৎসাহের সাথে প্রচার করে, এ হল কঠিন বাস্তবতা। আবার ইংরেজি ও হিন্দির উন্নতির কারণ এই দুই ভাষা জীবিকার সাথে যুক্ত।

শুধু অর্থনীতি নয়, বাংলা ভাষা বিকাশের প্রচেষ্টাও এক সময়ে থমকে গেল। বইয়ের বাজারের বিস্তৃত তথ্য পাওয়া সহজ নয়। তবে ভারতবর্ষে তামিল বইয়ের বাজার ইংরেজি ও হিন্দির পরে। মারাঠি, তেলেগু, মালয়ালম, পঞ্জাবি, কন্নড়, ওড়িয়া ও বাঙলা ভাষায় বইয়ের বাজার আছে। লক্ষণীয় হল, যে রাজ্যগুলি শিল্পায়ন ও চাকরির বাজারে এগিয়ে চলেছে সেখানে বই পড়ার চর্চাও বেড়ে চলেছে। আজও বাংলায় উচ্চশিক্ষার উপযোগী বই হল না। আজও প্রকাশকরা বলেন, বাংলায় বিজ্ঞান, অর্থনীতি, কারিগরি ইত্যাদি বিষয়ের ওপরে বিশ্লেষণাত্মক বইয়ের সংখ্যা স্বল্প। ফলে যারা বাংলায় পড়তে চান তারাও বাধ্য হন ইংরেজিতে পড়তে। সামগ্রিকভাবে বাংলায় প্রকাশনা ব্যবসা ছোট। পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি ও ছোট প্রকাশকদের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল খারাপ অবস্থায় আছে। অধিকাংশ প্রকাশক সব জেলাকে কভার করতে পারে না। সরকার এমনকি এটিকে একটি ক্ষুদ্র শিল্প হিসাবেও গণ্য করে না। প্রকাশনা এখানে পারিবারিক ব্যবসা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকাশকের ব্যক্তিগত যোগ্যতার ওপরে নির্ভর করে প্রকাশনার মান, বন্টন ও ব্যবসা। ইংরেজি বইয়ের মান ও ডিস্ট্রিবিউশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বাংলা বইয়ের পাঠক দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।

বাংলা সিনেমার নায়িকারা আধো আধো উচ্চারণে বাং-ইং-হিং ভাষায় যে কথা বলে তাই শুনে দীর্ঘশ্বাস পড়ে। দেখুন তাদের একটু ছুঁতে মানুষের কত ভিড়! তাদের ভোট দিয়ে নিজেদের ধন্য করতে আমরা কত উদগ্রীব!

আমাদের অর্থনীতির ক্রমাবনতি, বাবা-মায়েদের বাংলা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব এই যুগের ছেলেমেয়েদের বাংলা ভাষা সম্পর্কে কিছুটা যেন আবেগহীন করে দিয়েছে। যে ইংরেজিতে লিখতে পারে সে বাংলায় লেখে না, যে হিন্দি বলতে পারে সে বাংলা বলে না। সারা ভারতে প্রায় সর্বত্রই একই চিত্র। শুধু দক্ষিণ ভারত, বিশেষ করে তামিলনাড়ুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু স্বতন্ত্র। দ্রাবিড় সভ্যতার ভিন্নতা ও উচ্চতা, তামিল ভাষার পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস, দেশে ওই ভাষার ধ্রুপদীভাষা হিসেবে স্বীকৃতি, ওদের ভালবাসার আর আবেগেরও স্বীকৃতি।

তামিলরা পারে না, আমরা কিন্তু উদাসীন হয়ে বাংলাকে দূরে ঠেলে দিলাম। ভুলে গেলাম বাংলা সাহিত্য একসময়ে বিশ্বমানের ছিল। বাংলা ভাষায় কথা বলবার অধিকার রক্ষায় পাশের দেশে বারবার রক্তপাত হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারি হল 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'।

বাংলার অধিকার রক্ষা করবার প্রশ্নটাকে এবার অন্য এক জানালা দিয়ে দেখা যাক। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো যেমন একুশে ফেব্রুয়ারী আছে, তেমনই আছে এই রাজ্যে বসবাসকারী অন্য ভাষাভাষীদের নিজস্ব আত্মাভিমান।

এই বাংলায় নানা ভাষা নানা মত

পশ্চিমবঙ্গের ৮৬% অধিবাসীর মাতৃভাষা বাংলা, তারপরে আছে হিন্দি ৬.৯%, সাঁওতালি ২.৬%, উর্দু ১.৮% এবং নেপালি ১.২%। সাম্প্রতিককালে এই রাজ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালির আধিপত্যর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এই ক্ষোভের মূল কারণ অর্থনৈতিক, তবে তার সঙ্গেই যুক্ত থাকে সংস্কৃতিক ও ভাষাগত অবদমন। যে কারণে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ওপরে অনেক বাঙালির ক্ষোভ আছে, ঠিক একই কারণে বাংলা চাপিয়ে দেওয়াও কখনই কাঙ্খিত নয়। তাই একথা জোর দিয়ে বলা যায় না যে, পশ্চিমবাংলায় থাকলেই তাকে বাংলা বলতে বাধ্য করতে হবে। পাহাড়ে জোর করে বাংলা চাপিয়ে দিলে আবার গোর্খাল্যাণ্ডের দাবি উঠবে, উঠেছেও।

এসব সত্ত্বেও কিন্তু আমরা বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে পারি। ইংরেজি, হিন্দি শিখেও বাংলা ভাষাকে বাঁচান যায়।

তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনার, সেই প্রকল্পের বাস্তবায়নে। সেই পরিকল্পনা করতে হবে মূলতঃ রাজ্য সরকারকে। বাংলাকে জনপ্রিয় করবার চেষ্টা করতে হবে। একটা প্রজন্মকে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে হবে।

বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, বিষয়টা সংবেদনশীল। একেবারে সাদা বা কালো করে এই বিষয়কে বিভাজিত করা যায় না।

তাই হঠাৎ এখন 'হিন্দি হটাও' আর ‘জয় বাংলা’ বলে চটুল রাজনীতি করা যায়, বাংলা আনা যায় না।

শহরেও নয়, গ্রামেও নয়।

শুভ বাংলা নববর্ষ, ১৪২৯