আরেক রকম ● দশম বর্ষ নবম সংখ্যা ● ১-১৫ মে, ২০২২ ● ১৬-৩০ বৈশাখ, ১৪২৯

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্র যখন অনাচারী


সবচেয়ে সংগঠিত গুন্ডাবাহিনীর নাম পুলিশ। মন্তব্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। সত্তর দশকে। পুলিশের জন্ম দিয়েছিল ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের বেআইনি কাজকে আইনসিদ্ধ করতে। তাঁদের পক্ষে গেলে ভালো বিপক্ষে গেলেই অন্যথা।

আজও তার অন্যথা ঘটেনি।

বিচারক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুলিশের সাক্ষ্যগ্রহণ করতে চাইতেন না। আদালতে 'বড়লোকেরা পয়সা খরচ করে তামাশা দেখতে আসে' বলে তাঁর ধারণা ছিল। লিখেওছেন।

ইদানীং পুলিশ প্রশাসন সিবিআই ইডি আয়কর এমনকী সংবাদ মাধ্যমের বৃহৎ অংশ সংঘ পরিবারের শাখা হিসেবে কাজ করছে বা করতে আগ্রহী।

গুজরাটে ২০০২-এ দেখা গিয়েছিল, আক্রান্তদের নামেই পুলিশ আক্রমণের অভিযোগ এনেছে। এই ঘটনার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল, ২০২০-তে দিল্লি গণহত্যার সময়। আক্রান্তদের আক্রমণকারী সাজিয়েছে। জেলে পাঠিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ত্রাণকারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। এক লাখ পাতার চার্জশিট সাজিয়েছে। উদাহরণ, উমর খালিদ। যাঁরাই প্রতিবাদ করছেন, সেইসব লেখক সমাজকর্মীদের একটা বড় অংশ জেলে। সত্য সাইবাবা, গৌতম নওলাখারা আছেন এই দলে। জিগনেশ মেভানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গুজরাটে। করেছে আসাম পুলিশ।

অভিযোগ বিচিত্র।

গুজরাটের দাঙ্গার নামে একতরফা হামলা চালানোর হচ্ছে। পৃথিবীতে জুড়েই তাই হয়। সংখ্যালঘুরা মার খায়। অপবাদও পায়। দাঙ্গা করার। ভারত বাংলাদেশে এক ছবি।

জিগনেশ মেভানি বিধায়ক। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী দলের অন্যতম মুখ। প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে আবেদন জানান, হামলা থামানোর। সংখ্যালঘুদের রক্ষার। টুইটারে। তার জন্য আসামে এক বাঙালি অভিযোগ দায়ের করেন। আসামের পুলিশ, গত দু'সপ্তাহে যে ১৩ জন খুন হয়েছেন, তার অপরাধীদের ধরার সময় পায়নি, কিন্তু গুজরাট ছোটাছুটির অবসর পেয়েছে।

সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই সঙ্ঘী সরকার।

আসামে আদালতে জামিন পেলেন। পাওয়ার পর আবার গ্রেপ্তার। কেন? না মহিলা পুলিশের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন।

সম্ভব এটা করা? পুলিশের ঘেরাটোপে থেকে?

শ্লীলতাহানির অভিযোগ খুব সস্তা করে ফেলা বিপজ্জনক। বিপক্ষে গেলেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ?

বরাপেটা আদালত কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

বলেছেন, সমস্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পুলিশের।

সিসিটিভি কী বলছে? আজকাল তো সর্বত্র নজরদারি। গাড়ির জরিমানা দেখলেই বুঝবেন, রাষ্ট্র সারাক্ষণ আপনার নিরাপত্তা ও যাতায়াত নিয়ে অতি গম্ভীরভাবে চিন্তিত।

চোপ আদালত চলবে না। এই বলাটাই বাকি।

জেগে ওঠে বসন্ত বিলাপ।

কীসের পরিক্রমা? কীসের পরিভ্রমণ? কীসের ফিরে দেখা?

গত বছরের নববর্ষের পর ফ্যাসিবাদী শক্তির পরাজয়ে উল্লসিত হয়েছিল বাংলা। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে, মন ভরে উঠছে বিষণ্ণতায়। লক ডাউন চলল অনেক দিন। ট্রেন বন্ধ রইল। গরিব আরও গরিব হল, কোনো রাজনৈতিক দল লক ডাউনের বিরোধিতা করার সাহস দেখাল না।

ইচ্ছে মতো মামলা জুড়ে দিল প্রশাসন মহামারী আইনের নামে।

এখানে সেখানে।

দুর্নীতির খবর বাড়তে লাগল। বগটুই ঘটে গেল। নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। এর পাশাপাশি আদালতের পর্যবেক্ষণে দেখা গেল স্কুলে করণিক বা শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতি সীমাহীন।

রাজ্য পুলিশ খারাপ কেন্দ্রীয় পুলিশ ভালো - এ-রকম ভাবনা আমাদের নেই। পুলিশ বহুদিন পার্টি দল বা পয়সা অথবা হুমকির সামনে নতজানু।

মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে খুশি করতে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক রায় দিয়েছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতি নিয়ে।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে পর্যন্ত তলব করতে পারে সিবিআই, আদেশ দিয়েছেন।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, তার রায় ডিভিসন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দিয়ে দিচ্ছে।

আপত্তি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছেন তিনি।

তারপর ঘটে গেছে নজিরবিহীন ঘটনা।

হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় হট্টগোল হাতাহাতি মারামারি - সব হয়েছে।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের ডাক দিয়ে অবস্থান করেছেন একদল আইনজীবী।

এতে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ সহ বহু আইনজীবী ক্ষুব্ধ।

আইনকে কি তালাবন্দি করতে চায় রাজ্যের শাসক দল।

দিল্লির শাসকদল তো বিচার ব্যবস্থাকে ঠুঁটো করে দিতে আগ্রহী।

জনগণের দায় সংবিধান ও আইন রক্ষায় পথে নামা।