আরেক রকম ● দশম বর্ষ সপ্তম সংখ্যা ● ১-১৫ এপ্রিল, ২০২২ ● ১৬-৩০ চৈত্র, ১৪২৮

প্রবন্ধ

কাশ্মীর ফাইলসঃ গণহত্যার জন-মন-প্রস্তুতি

ইমানুল হক


।। ক ।।

বিজেপি আরএসএস শুধু ক্ষমতা নয়, সব এজেন্ডাই কার্যকর করছে সফলভাবে। নিছক ক্ষমতায় থাকা ওদের লক্ষ্য নয়। দেশ বেচছে বিনা বাধায়। শিশু-কিশোর-তরুণ মন বদলাচ্ছে, ইতিহাস ও শিক্ষা পাঠক্রম বদলে দিয়ে। ব্যাঙ্ক-বীমা-খনি-বিমানবন্দর-প্রতিরক্ষা সব বেসরকারি করছে। এনআরসি, এনপিএ, সিএএ দেখিয়ে মানসিক বিভাজন সম্পূর্ণ করেছে। অতিধনী, ধনী এবং দরিদ্র থাকবে এই কৌশল সফল হচ্ছে। মধ্যবিত্তকে ধ্বংস করছে। হিন্দুরাষ্ট্রের বেশ কিছু এজেন্ডা কার্যকর। রামমন্দির-বাবরি মসজিদ রায়, গোসন্ত্রাস - এর প্রমাণ।

অজস্র গোপন ও প্রকাশ্য আক্রমণ হচ্ছে - খবর নেই। বিচারবিভাগ, প্রশাসন, সেনা, রিজার্ভ ব্যাংক, সিবিআই, ইডি, আয়কর, শিক্ষা সব জায়গায় সঙ্ঘীপ্রতাপ। ভারতের সব বড় রাজনৈতিক দলকেই কমবেশি নরম হিন্দুত্ব এবং ধর্ম সম্পর্কে নরম মনোভাব নিয়ে চলতে বাধ্য করেছে। এবং বেদনার কথা, তীব্র বেকারি তীব্র মূল্যবৃদ্ধি - তবু তেমন আন্দোলন নেই। জনজীবনের মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে বাধ্য করেছে সব রাজনৈতিক দলকে। দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে নজরদারির আওতায় এনে ফেলেছে। পেগাসাস, আধার ইত্যাদির মাধ্যমে। বিরোধী দলগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারছে - এখনো। লোভ ভয় ইডি আয়কর সিবিআই জুজু দেখিয়ে। সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে। কাশ্মীর, দিল্লি, আসাম, মিজোরাম সমস্যা তার প্রমাণ।

।। খ ।।

এক নাটকীয় ঘোষণায় ২০১৯-এর ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে পূর্ণরাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত করা হয়। লাদাখ পৃথক করে। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে। এবং কাশ্মীরে কার্ফু জারি করে, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে, ১০,০০০-এর বেশি গ্রেপ্তার করে, এর মধ্যে এক হাজারের বেশি সাংবাদিক আছেন। আগে রাষ্ট্রীয় বাহিনী অত্যাচার করলে গোপন করতো, এখন থানায় মাইক বেঁধে তার আর্তনাদ শোনানো হয়। বলা হয়েছিল, কাশ্মীরে আর্থিক উন্নতি হবে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ফেরানো হবে। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে।

কাশ্মীর পৌনে তিন বছর কার্যত কার্ফুবন্দিঃ কী পেয়েছে? এক বছরের হিসেব দেখা যাক। পরের হিসেব তো আর মেলে না। কেউ লিখতেও সাহস করেন না।

১। পণ্ডিতদের ঘরে ফেরানো হয়নি। তাঁরা ঘর পাননি। কিন্তু জনগণেশ 'দি কাশ্মীর ফাইলস' পেয়েছে। তিন হাজার ফ্ল্যাট বানানোর কথা ছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য। অমিত শাহের পর্যালোচনা বৈঠকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী হয়েছে মাত্র ১৭%। আর কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ছেড়ে আসা বাড়িঘরে আছে সেনাবাহিনী। বাড়ি কি আর ফিরে পাবেন পণ্ডিতরা?

২। একটাও নতুন কারখানা হয়নি।

৩। কোনও হাসপাতাল হয়নি।

৪। কোনও নতুন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি।

৫। কোনও নতুন রেলপথ চালু হয়নি।

৬। কোনও সরকারি চাকরির বিজ্ঞাপন বের হয়নি।

৭। পর্যটন বন্ধ। কোনও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি।

কী হয়েছে?

১। ৫ আগস্ট ২০১৯; ৩৭০ ধারা, ৩৫এ ধারা বিলোপ। নেতা-নেত্রীদের গ্রেপ্তার। সংবাদপত্র বন্ধ। আন্তর্জাল বন্ধ। ১০ লাখ সৈন্য ছিল। আরও ৩৫ হাজার বিশেষ সেনা হল। অভিযোগ, এদের এক অংশ সঙ্ঘী।

২। আগস্ট ১৬, ২০১৯: চার হাজারের বেশি কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করে দেশের বিভিন্ন জেলে পাঠানো হল।

৩। সেপ্টেম্বরঃ জম্মু ও কাশ্মীরে থাকা কয়লাখনিগুলি নিলামের বিজ্ঞাপন বেরোল।

৪। অক্টোবর ১৬: বনদপ্তর ২৭১ হেক্টাএকর জমি বেসরকারিকরণ করার ঘোষণা করল।

৫। ডিসেম্বর ১২ তারিখে ৫৭,০০০ একর জমি চিহ্নিত করা হল শিল্পায়নের জন্য।

৬। ফেব্রুয়ারি ২০২০: কাশ্মীরের কয়লাখনি নিলাম হল অনলাইনে। কোন কাশ্মীরি অংশ নিতে পারলেন না। কারণ আন্তর্জাল নেই। ১০০% খনি বাইরের লোক কিনলো।

৭। মার্চ ৩১, ২০২০: বাইরের লোক কাশ্মীরের বাসিন্দা হতে পারবে ঘোষণা হল।

৮। এপ্রিল ২৪, ২০২০: ভারতীয় সেনাবাহিনী বর্ধিত হারে কাশ্মীরি ভূমি দখল করতে শুরু করে।

৯। মে ৮, ২০২০: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির জন্য শর্ত হিসেবে 'আবাসিক অবস্থা' যোগ্যতা হয়ে ওঠে।

১০। মে ১৫, ২০২০: নতুন মিডিয়ানীতি যার মাধ্যমে 'মিডিয়াতে সরকারের কার্যক্রমগুলির উপযুক্ত বর্ণনা' চালু করা হয়।

১১। মে ১৮, ২০২০: আবাসিক বিষয়ক আবেদন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সংজ্ঞায়িত করা হয়। আবাসিক শংসাপত্র অনুমোদিত হলে অনুমোদনকারী সময়মতো তা জারি করতে না পারলে জরিমানা প্রবর্তনের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়।

১২। জুন ১৬, ২০২০: মদের দোকান কোথায় কোথায় থাকবে তা আবগারি কমিশনারের কার্যালয় চিহ্নিত করে দেয়।

১৪। জুন ২২, ২০২০: জম্মু ও কাশ্মীর বনবিভাগ সরকারী মালিকানাধীন কর্পোরেশনে পরিণত হয়। সরকার এখন সর্বসাধারণের জমি বিদেশী সহ বেসরকারী সংস্থা এবং ব্যক্তিগত সংস্হার কাছে বিক্রি করতে পারে।

১৫। জুন ২৫, ২০২০: চার লাখ ডোমিসাইল সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে। ভারত চালু করেছে এই - অ্যাপ্লিকেশন (ইন্টারনেট থেকে অবরুদ্ধ কাশ্মীরিদের কাছে যা অ্যাক্সেসযোগ্য নয় বা অগম্য)।

১৬। জুন ২৯, ২০২০: অসংখ্য অ-স্থানীয় ইটভাটা শ্রমিককে কোভিডের সময় কাশ্মীরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

১৭। জুন ৩০, ২০২০: ঠিকাদাররা খনিজ নিষ্কাশন শুরু করে পরিবেশ দপ্তরের লিখিত অনুমতি ছাড়া। পরিবেশগত প্রবিধান তোয়াক্কা না করে বে-আইনি ব্যবসা সক্রিয়ভাবে চালু।

১৮। জুলাই ৭, ২০২০: হিন্দিকে সরকারি ভাষা করার জন্য পিটিশন দাখিল। নোটিশ জারি করেছে হাইকোর্ট।

১৯। জুলাই ১১, ২০২০: 'ইন্ডিয়া ইনকর্পোরেটেড' কাশ্মীর নিয়ে একটি প্যানেল হোস্ট করে এটিকে 'সুযোগের দেশ' হিসাবে প্রচার করে একটি গ্লোবাল ভার্চুয়াল বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য।

২০। জুলাই ১৭, ২০২০: নতুন বসতিস্থাপনকারীদের জন্য দুই লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে নতুন হাউজিং পলিসি চালু।

২১। জুলাই ২৪, ২০২০: কোনো অনুমতি ছাড়াই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেয় প্রশাসন এবং নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ করতে পারছে। তারা সেই সমস্ত জমি দখল করতে পারবে যেগুলো কাশ্মীর-এর পরিবেশ ও উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর।

।। গ ।।

আর বিনিময়ে সারা দেশে কাশ্মীর ও কাশ্মীরিয়তের বদনাম করা হচ্ছে। 'কাশ্মীর ফাইলস' নামে এক মিথ্যা প্রচারমূলক ছবিকে ঘিরে জন-উন্মাদনা তৈরির কৃত্রিম ও বানানো এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। একটি আরটিআই-এ জানা গেছে, যে বছর হাজার হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত উগ্রপন্থীদের হাতে মারা গেছেন, বা ঘরছাড়া হয়েছেন বলা হচ্ছে, সেই সময় ৮৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত নিহত হয়েছেন এবং ১,৬৩৫ জন মুসলিম নিহত হয়েছেন উগ্রপন্থীদের হাতে।

এই উগ্রপন্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল জগমোহন। এই জগমোহন জরুরি অবস্থার সময় সঞ্জয় গান্ধির ঘনিষ্ঠ হিসেবে তুর্কমানগেটে উচ্ছেদ চালান। পরে বিজেপি সরকারের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী হন কেন্দ্রে।

বিশ্বেন্দু নন্দ লিখেছেনঃ
"১৯৯০-এ লালকৃষ্ণর রথযাত্রার উত্থানের পিঠেপিঠি সিআইএ-র মদতপুষ্ট কাশ্মীরি জঙ্গীদলের উত্থান ঘটে। দুজন-দুজনের বিকল্প। বিজেপির রাজনীতিতে জ্বালানি হিসেবে কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা ব্যবহৃত হল।"

অনুভব দাস জানাচ্ছেনঃ
"১৯৯৯-এর ১৯ জানুয়ারি কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসাবে জগমোহন শপথ নেওয়ার পরদিন থেকে তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বীভৎস সন্ত্রাস শুরু করে। সরকার থেকে প্রচার করা হয় যে কাশ্মীরীদের উপর সামরিক আক্রমণ চালানোর এক ব্যাপক পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে পণ্ডিতদের উপত্যকা ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। ঘোষণা করা হয় যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে উপত্যকায় হিন্দু পণ্ডিতদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবেনা। পাশাপাশি সরকার থেকে বলা হল, যারা যাবে তাঁদের জম্মু বা দিল্লীতে বিনামূল্যে জমি, নগদ টাকা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা পণ্ডিত তাঁদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। ওই একই সময়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা মুসলমান তাঁদের বেতন দেওয়া বন্ধ ছিল।"

১৯৯০-এর পরে ১৩ দিন সহ ভাজপা চারবার সরকার গড়েছে, কিছু স্তোকবাক্য ছাড়া পণ্ডিতদের নিয়ে সমাধানের কথা শোনা যায়নি। আজ হঠাৎ কেন ‘জাগিয়া উঠিল প্রাণ’?

২০১৪-র পর থেকে বা ৩৫৬ ধারা রদ করার পর থেকে কে তাদের পুনর্বাসনে বারণ করেছিল?

কিছু সমাজকর্মী প্রশ্ন তুলেছেন - প্রথমত ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত উপত্যকায় বসবাসকারী কাশ্মীরী পণ্ডিতদের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজারের কিছু কম। সেখানে ৩ লক্ষ পণ্ডিতকে মেরে তাড়ানো কীভাবে সম্ভব? আর একথাও মনে রাখা দরকার যে, এখনও পর্যন্ত উপত্যকায় বহু পণ্ডিত থেকে গিয়েছেন এবং প্রায় ৩৫ লক্ষ কাশ্মীরী মুসলমানদের সঙ্গে দিব্যি বসবাস করছেন।

১৯৯০-এ ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত 'নিখিল ভারত কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্মেলন'-এ বলা হয়েছিল - ১৯৮৯-এর সেপ্ঢেম্বর থেকে ৬৫ হাজার হিন্দু উপত্যকা থেকে পালিয়েছেন এবং ৩২ জন কাশ্মীরী পণ্ডিত উপত্যকায় জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে এই সময়ের মধ্যেই পণ্ডিতদের উপত্যকা থেকে দলবদ্ধ অভিগমণ ঘটেছিল। (তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিয়াস কাশ্মীর ওয়ার ইন সেক্যুলার ক্রাউন অন ফায়ার, কাশ্মীর - সিদ্ধার্থ গুহরায়)।

'ইন্ডিয়া টুডে' পত্রিকার সাংবাদিকেরা ২৩টি ‘ধবংসপ্রাপ্ত’ হিন্দু মন্দিরের তালিকা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীর ভ্রমণ করেন। তাঁদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ওই বছরই ২৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকদের মতে, ২৩টি মন্দিরের মধ্যে ২১টি মন্দিরই ছিল পুরোপুরি অক্ষত। মন্দিরের পূজারীরা পর্যন্ত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁদের উপর বা তাঁদের ধর্মস্থানের উপর কোনওরকম আক্রমণ হয়নি। এমনকী বাজপেয়ী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ কাশ্মীর ঘুরে এসে তাঁর অভিজ্ঞতায় বলেছিলেন যে, পণ্ডিতদের মালিকানাধীন সম্পত্তি, বাড়ি, বাগান কোনও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাঁদের পরিত্যক্ত বাড়িগুলি আগের মতোই স্থানীয় প্রতিবেশী মুসলমানেরা দেখাশোনা করছে।

কাশ্মীরের আজাদির দাবিতে আন্দোলন মূলত অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের এবং ধর্মমত নির্বিশেষে এটি কাশ্মীরী জাতিসত্তার আন্দোলন। আমরা এই সংখ্যাতেই বর্ণনা করেছি কীভাবে নব্বইয়ের দশকের আগে কোনওভাবেই অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর যাতে কোনও হামলা না হয় এ-ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কাশ্মীরীরা কীভাবে সতর্ক ছিলেন।

এটা সত্যি যে ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে বেশ কিছু পণ্ডিত উপত্যকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তার কারণ কী ছিল?

"১৯৯০-এর ১৯ জানুয়ারি কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসাবে জগমোহন শপথ নেওয়ার পরদিন থেকে তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বীভৎস সন্ত্রাস শুরু করে। সরকার থেকে প্রচার করা হয় যে কাশ্মীরীদের উপর সামরিক আক্রমণ চালানোর এক ব্যাপক পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে পণ্ডিতদের উপত্যকা ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। ঘোষণা করা হয় যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে উপত্যকায় হিন্দু পণ্ডিতদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবেনা। পাশাপাশি সরকার থেকে বলা হল, যারা যাবে তাঁদের জম্মু বা দিল্লীতে বিনামূল্যে জমি, নগদ টাকা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা পণ্ডিত তাঁদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। ওই একই সময়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা মুসলমান তাঁদের বেতন দেওয়া বন্ধ ছিল।"

এক সমালোচক লিখেছেন, "জামাতের বেশ শক্ত ঘাঁটি ছিল কাশ্মীর। স্বাধীনতার আগে আর পরেও। কাশ্মীরে যখন ভোটাভুটি সব চুলোয় উঠল, মানুষ খেপে গিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিল, তখন কিছু মানুষ যেমন পাকিস্তানে ঢোকার কথাটা বেশ বড় গলায় বলতে থাকল, আর কাশ্মীরে জামাতে ইসলামি কাশ্মীরিদের পক্ষে লড়তে আরম্ভ করল, ঠিক তখন জগমোহনের মাথায় এই ইখওয়ানের আইডিয়াটা এসেছিল। 'ইখওয়ান' শব্দের অর্থ হল ভ্রাতৃত্ব আর ভাই, এই দুটো। জামাতে ইসলামির আসল ভ্রাতৃত্ব হল মিশরের 'ব্রাদারহুড' বলে যা পরিচিত, সেই ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সাথে। দালাল গোষ্ঠী সব সময়েই ছিল, সেই ইংরেজ আমল থেকে রাজার সময় পেরিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী যুগেও। কাশ্মীরে এরা সামন্তশ্রেণির লোক। কাজেই এক ঢিলে দুই পাখি - জামাতে ইসলামিকে কাবু করা, আর কাশ্মীরের সমস্ত ধরণের, আলাদা কাশ্মীর আর বা ভারত-বিরোধী পাকিস্তান সমর্থকদের সবাইকে একসাথে খতম করে দেওয়ার জন্য জন্ম দেওয়া হল ভারতীয় ইখওয়ানুল মুসলিমিনের, যাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলা হল যাকে খুশি মারতে-ধরতে। শেষে এরা নিজেদের মধ্যেই লড়াই করে কিছু মরল, কিছু সেনার হাতে, কিছু পুলিশের হাতে, আর বাকিগুলো চুপচাপ হয়ে গেল। এই চুপচাপ করে থাকা অনেকেই পরে সক্রিয় রাজনীতি করেছে।

কাশ্মীরের কমিউনিস্ট নেতা ইউসুফ তারিগামী লিখেছেনঃ

"ভোটের স্বার্থে কাশ্মীরের অশ্রু বিক্রি বন্ধ করুন। এই যে ছবিটি তৈরি হয়েছে, আমার মতে কাশ্মীরের পরিস্থিতি এবং আজ পর্যন্ত যা যা দুঃখজনক ঘটনা কাশ্মীরে ঘটেছে, তাকে তুলে ধরা হয়তো বস্তুনিষ্ঠভাবে, সঠিক হতো। এটাই সময়ের চাহিদা ছিল। যা এই সিনেমায় দেখলাম না।

এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে কাশ্মীর গত কয়েক দশক ধরে লাগাতার দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবথেকে মর্মান্তিক ঘটনা যা কাশ্মীরি পরিচিতিকে আঘাত করেছে, তা হলো ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়ার। আমাদের সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের আতঙ্কে, ভয়ে উপত্যকা ছাড়তে হয়েছে। এটা আমাদের ইতিহাসের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এটাও সত্য যে, হিংসার সমর্থকরা দেখেনি কে কোন ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে।

তারা যেমন টিকালাল টাপলুকে মেরেছে, লাসা কলকে মেরেছে, তেমনই মহম্মদ শাহবান উকিলকেও মেরেছে। বয়স্ক নেতা মৌলানা মসুদী সাহেবকেও রেহাই দেয়নি। মীরওয়াইজ কাশ্মীর মৌলানা ফারুক কাদের-কে গুলিতে মেরেছে। তারপর শোকযাত্রায় শামিল, শোকমিছিলে শামিল বহু নিরাপরাধ মানুষ গুলির নিশানা হয়েছেন। তাদের অপরাধ কি ছিল? এটাও আমাদের ছবির অন্যদিক। যেখানে এইচএমটি'র জেনারেল ম্যানেজার খেরা সাহেবকে নিশানা বানানো হয়েছে, তেমনই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর মশীরুল সাহেবকেও হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত সচিব আব্দুল গণি সাহেবকেও হত্যা করা হয়েছে।

এমন অনেক সাধারণ মানুষ, নিরীহ মানুষ যাঁদের ক্ষমতা দখলের সংঘাতের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিলনা, তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের বোন শীতল কল যিনি শ্রীনগরে থাকতেন, তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনন্তনাগের প্রেমনাথ ভাট-কে হত্যা করা হয়েছে। আবার সেখানেই গুলাম নবি সাহেবকেও নিশানা বানানো হয়েছে।

যারা এখনও কাশ্মীরি রক্তের সওদা করছে, খোলাবাজারে বিক্রি করছে, তাদের বলছি, অনেক হয়েছে, এবার রেহাই দাও। কে মরেছে? কে মেরেছে? যেই মরেছে আমার আত্মীয় মরেছে। আমার অভিভাবক মরেছে। তাঁর নাম কি ছিল, কোন ধর্মের ছিল - আসলে তো কাশ্মীরি ছিল। ওয়ানধামা হত্যাকান্ড যেমন হয়েছে, গাও কদল হত্যাকান্ডকেও ভোলা যায়না। বাদগামের সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তেমনই কুপওয়ারাতে বন্দিপোরা থেকে আসা বাসের যাত্রীদের কে মেরেছিল? সোপোরের কাশ্মীরি পণ্ডিত নিরীহ বোনকে যেমন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল, তেমনই কুনান পেশপোরার ঘটনাও আমাদের সামনে আছে। কার ইজ্জত লুট হয়ে গেল? কারা সেই ইজ্জতের উপর হামলা চালালো?

আজও এই চর্চার সময় এই দল, ওই দলের কথা বলা হয়। আমাদের বিধানসভার অধ্যক্ষ ছিলেন, ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস, পিডিপি'র আইনসভার সদস্যদের কে মেরেছে? কেন মারা হয়েছে? বিরাট সংখ্যায় হত্যা করা হয়েছিল। কেন তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল? কারণ, তাঁরা উগ্রপন্থার পথে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। সবথেকে প্রথম যে রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু হয়েছিল, তিনি শ্রীনগরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা মহম্মদ ইউসুফ হালওয়াই। উগ্রপন্থীরা বলেছিল, ১৫ আগস্ট ব্ল্যাকআউট করার জন্য। তিনি রাজি হননি, তাই তাঁকে খুন করা হয়েছিল। আজ এই ছবি যখন বানানো হচ্ছে, তাঁকে কোন শিবিরে সামিল করা হচ্ছে? রাজনৈতিক লাভের জন্য রক্তপাতের এই প্রদর্শন করা দেশের জন্য ক্ষতিকর, মানুষের জন্য ক্ষতিকর এবং কাশ্মীরের জন্য ক্ষতিকর।

কুলগামে হিন্দু-মুসলিম মারা গেছেন যেমন, তেমনই ছত্তি সিংপোরাতে শিখ ভাই-বোনও মারা গেছেন। তখন শিখ শিশুটির চোখের যে জল আমি দেখেছি, যাদের কোনো আপনজন মরে, তারা তার যন্ত্রণা জানে। সিনেমাটি যারা বানিয়েছেন তাঁদের বলছি, এই চোখের জলের রং কি? এই চোখের জল কোন বাজারে বিক্রি করবেন?

কুলগামে আমার গ্রামের কাছে কমরেড অশোক নিহত হয়েছে। তিনি কাশ্মীরি পণ্ডিত ছিলেন। কমরেড ইউসুফকে খুন করা হয়েছে। তাঁর গোটা পরিবার সিপিআই(এম) সমর্থক ছিল। পাশের গ্রামের দুই শিক্ষককে হত্যা করেছিল উগ্রপন্থীরা। তাঁরাও সিপিআই(এম) সমর্থক ছিলেন। যাঁরাই মরেছে, আমার প্রিয়জনরাই মরেছে। আমি আত্মীয়দের এইভাবে ভাগ করতে চাই না যে, তারা মন্দিরে যান নাকি মসজিদে যান।

১৯৮৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর কুলগামে আমার বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়েছিল। কোনোক্রমে বেঁচে যাই। বাধ্য হয়ে আমাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। আমি কাশ্মীর থেকে প্রথম পরিযায়ী। আমার আগে কোনোও রাজনৈতিক কর্মী কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হননি। কোনো কাশ্মীরি পণ্ডিতও উপত্যকা ছাড়েননি। আমার এলাকায় হাজান গ্রামের এক কাশ্মীরি পণ্ডিত জগরনাথ ছিলেন সরকারী কর্মী। কর্মচারী সংগঠনে ছিলেন। তাঁর সরকারী কোয়ার্টারে আমাকে রেখেছিলেন। ৯০-এ যখন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা উপত্যকা ছেড়ে আসতে বাধ্য হলেন, আমি তাঁদের সেই অসহায়তার সাক্ষী ছিলাম। নিজে চোখে তাঁদের দুর্দশা আমি দেখেছি।

পরবর্তী সময়ে রাজ্যপালের বাসভবনের সামনে আমরা একটা মিছিল করেছিলাম। সেখানে আমি দাবি তুলেছিলাম, রাজ্যপাল সাহেব, আপনার ভবনের দরজা খুলুন। এই কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ভিখিরি না। এঁরা কোনও পিকনিকে আসেননি। এঁরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসেছেন। নিজের অধিকার চাইতে এসেছেন। আমার কাশ্মীরি পণ্ডিত ভাই-বোনরা এসব জানেন। অশোকও তো আমার আত্মীয় ছিল। আমার ছায়াসঙ্গী ছিল। আমার শ্বশুর মারা গেছেন। আমার ভাইপো মারা গেছে। কিন্তু শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, পার্টিকর্মীরা, বিধানসভার অধ্যক্ষ, বিধায়কদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁরাও তো আমার সঙ্গী ছিলেন। কাকে কোন ভাগে ফেলব?

কাশ্মীর একখণ্ড জমি নয়। কাশ্মীর একটা সভ্যতার নাম। পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস, যাকে মুছে ফেলা যাবেনা। বাইরের বারুদ হোক, বা ভেতরের বারুদ, আমাদের পরিচয়কে মুছে ফেলা যাবেনা। ধাক্কা লাগতে পারে, কিন্তু তাকে শেষ করা যাবেনা। সত্য দেখার জন্য দুটো চোখের প্রয়োজন। এক চোখে দেখা যাবেনা। কাশ্মীরি পণ্ডিত ভাইবোনেরা যতদিন না সসম্মান এবং নিরাপদে নিজদের দেশে ফিরে না আসছে, নিজেদের ঘরে ফিরে না আসছে ততদিন এই ক্ষত পূরণ হবে না।

বিজেপি'র শাসকদের বলছি। ভোটের স্বার্থে আমার চোখের জল, আমার প্রিয়জনের চোখের জলকে ভাগ করবেন না। যাঁরাই মরেছেন, আমার মরেছে। আমাদের মরেছে। ক্ষতি হয়েছে কাশ্মীরের পরিচয়ের। কাশ্মীরের সভ্যতার। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা সবাই মিলে আমাদের ঘর না সামলাবো, ততদিন এর সমাধান নেই।

ইয়ে গম তেরা হ্যায় না মেরা,
হাম সবকি জাগির হ্যায় প্যারে।

এই দুঃখ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের, শিখদের, মুসলিমদের। আমাদের ভাগ করবেন না।''

আলম সেখ লিখেছেনঃ
"সিদ্ধার্থ গুহরায় 'কাশ্মীর' নিয়ে লেখা বইয়ে বহু মিথ্যার পর্দা ফাঁস করেছেন। কাশ্মীরি পণ্ডিত বিষয়ক তথ্যগুলো দেখা যাক।"

১১৭ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন - "১৯৮৯ সাল পর্যন্ত উপত্যকায় বসবাসকারী কাশ্মীরী পণ্ডিতদের সংখ্যা ছিলো ১ লক্ষ চল্লিশ হাজারের কিছু কম সেখানে ২ লক্ষ ৬০ হাজার / ৩ লক্ষ ৫০ হাজার পণ্ডিতকে কিভাবে মেরে তাড়ানো সম্ভব!... অবশ্য একথাও মনে রাখা দরকার কাশ্মীরের শহরে ও গ্রামে এখনো বহু পণ্ডিত ৩৫ লক্ষ মুসলমানদের সাথে দিব্যি বসবাস করছেন।"

তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন পণ্ডিতরা পলায়ন করেছেন, কারণটাও উল্লেখ করেছেন ১২০-২১ পৃষ্ঠায়। বলেছেন - "১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে হাজার হাজার যে পণ্ডিত উপত্যকা পরিত্যাগ করে জম্মু, দিল্লি অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তার পিছনে রাজ্যপাল জগমোহনের হাত ছিলো। ক্ষমতা পেয়েই তিনি ঘোষণা করেন জঙ্গিদের কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে উপত্যকার হিন্দুদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না, তাই তাদের এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত।... পণ্ডিতদের উপত্যকা ত্যাগের বিনিময়ে তিনি তাদের কিছু সুবিধাদানের কথাও ঘোষণা করেন।... যত বেশি পণ্ডিত উপত্যকা ত্যাগ করবে তত প্রচারের সুবিধা যে মুসলমানদের আক্রমণে পণ্ডিতদের জীবন বিপন্ন।"

মুসলমানদের মন্দির ধ্বংস প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন - "আরএসএস ও বিজেপি দাবি করে যে কাশ্মীরি মুসলমানরা ৩৬-৪০টি মন্দির ধ্বংস করেছে। মুসলমানরা তাদের মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে। 'ইন্ডিয়া টুডে'-র ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩-এ প্রকাশিত সংখ্যায় কাশ্মীর ভ্রমণকারী সাংবাদিকদের কথাগুলো লিপিবদ্ধ হয়েছিল। তাদের মতে - "২৩টি মন্দিরের মধ্যে ২১টি ছিলো পুরোপুরি অক্ষত। মন্দিরের পুজারীরা অব্দি বলেছিলেন, তাঁদের উপর বা তাঁদের মন্দিরের উপর কোনপ্রকার আক্রমণ করা হয়নি। এমনকি যে-সব গ্রামে মাত্র কয়েক ঘর পণ্ডিত বাস করেন তাদের উপরও কোনরকম আক্রমণ হয় না। তাঁরা নির্বিঘ্নে পুজো দেন।"

তিনি আরো বলেছেন "১৯৯০ মার্চ-এপ্রিল নাগাদ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাছে নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসার আবেদন জানানো হয়। আর সেইসাথে সাধারণ মুসলমানদের সতর্ক করে দেওয়া হয় তারা যেন পণ্ডিতদের সম্পত্তি দখল বা বিক্রি না করে। এমনকি অনেক পণ্ডিতরা দেশত্যাগের সময় মুসলমান প্রতিবেশীর কাছে চাবি রেখে গেছেন।"

১৯৯০ সালে কাশ্মীর বিষয়ক মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ কাশ্মীর যান। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন 'The Challenge in Kashmir' গ্রন্থে "বিগত এক বছরে পণ্ডিতদের মালিকানাধীন সম্পত্তি, বাগান, বাড়ি কোন কিছুরই কোন ক্ষতি হয়নি। পণ্ডিতদের বাড়িগুলো মুসলমানরা দেখাশোনা করছে।"

১৯৯০-এর ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্মেলনে বলা হয়েছিল, '১৯৮৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে ৬৫ হাজার হিন্দু উপত্যকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং ৩২ জন জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন।' (India's Kashmir War, in secular crown on fire)।

লেখক সিদ্ধার্থ গুহরায় এই গ্রন্থের ১১৮ পৃষ্ঠায় বলেছেন - "এই নিহতদের সংখ্যা লেখক ও সাংবাদিকগণ ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে গেছেন"।

আরো বলেছেন - "জঙ্গিদের হাতে কতজন মুসলমান নিহত হয়েছেন তারবেলায় পণ্ডিত সম্মেলন নীরব কারণ এই তথ্যগুলো প্রমাণ করবে এই হত্যাগুলো সাম্প্রদায়িক কারণে হয়নি, হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।''

।। ঘ ।।

আসলে 'কাশ্মীর ফাইলস' কোনো চলচ্চিত্র নয়, এটা মুসলিমদের গণহত্যার জন-মন-প্রস্তুতি। হরিদ্বারে দু'কোটি মুসলমানকে হত্যার ডাক দেওয়া হয়েছিল, দেশজুড়ে তেমন প্রতিবাদ হয়নি। ফলে উৎসাহিত সঙ্ঘীরা নেমছে গণহত্যার পটভূমি নির্মাণে।

'কাশ্মীর ফাইলস' করমুক্ত করা হচ্ছে, আর 'গুজরাট ফাইলস'-এর লেখিকা সাংবাদিক রাণা আইয়ুবকে জেলে ভরার প্রস্তুতি চলছে।


পুনশ্চঃ দেবেন্দর সিং নামে কাশ্মীর পুলিশের এই উচ্চপদস্থ অফিসার পুলওয়ামা হামলার সময় পুলওয়ামা এলাকায় ছিলেন।

২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ২০১৯-এ হামলার জন্য দুই উগ্রপন্থীকে অস্ত্রশস্ত্র সহ নিয়ে আসার সময় ধরা পড়েন। এঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশদ্রোহ বা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়নি।

কেন?

ক্রোনোলজি সমঝিয়ে।


ঋণস্বীকারঃ
● ইউসুফ তারিগামি
● সিদ্ধার্থ গুহরায়
● বিশ্বেন্দু নন্দ
● অনুভব দাস
● আলম সেখ
● আন্তর্জাল
● গণশক্তি