আরেক রকম ● দশম বর্ষ পঞ্চম সংখ্যা ● ১-১৫ মার্চ, ২০২২ ● ১৬-৩০ ফাল্গুন, ১৪২৮
সমসাময়িক
আনিস আগুন
মুরগি কাটলে ছাগল কাটলে কি আমরা প্রতিবাদ করি? করি না। নানা দেশে নাৎসিদের কাছে, নাৎসি মানসিকতার লোকদের কাছে সংখ্যালঘুদের হত্যা মুরগি হাঁস ছাগল কাটার মতো। ভীষ্ম সাহানির 'তমস'-এ ছিল মুরগি মেরে খুন করার মানসিকতা 'অর্জন' করছে সঙ্ঘী শাবক। জার্মানিতে নাৎসিরা অকারণে হত্যা করতো সংখ্যালঘু ইহুদি ও কমিউনিস্টদের। বর্ধমানে এক গুন্ডা ছিল সত্তর দশকে কাউকে খুন করার জন্য না পেলে কুকুরকে খুন করতো।
পশ্চিমবঙ্গে কিছু লোকের মধ্যে এই মানসিকতা জাগছে। খুন না হলে পেটাই নির্যাতন মিথ্যা মামলা। নানা তরিকা। বিরোধী মিছিলে হামলা, ভোট দিতে না দেওয়া, মিথ্যা মামলা, নারী নির্যাতন মামলা এবং নিজেরা নারী নির্যাতন করা।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, আনিস হত্যা। বাড়িতে ঢুকে হত্যা করেছে পুলিশ ও সিভিক বাহিনী। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলনের চাপে। একজন হোমগার্ড একজন সিভিক পুলিশ। তাঁরা বলেছেন, যা করেছেন, ওসির নির্দেশে। ওসিকে অপসারণ করা হয়েছে। দাবি উঠেছে গ্রেপ্তার করার।
হাওড়া জেলার আমতা থানার সারদা গ্রামের প্রতিবাদী বামপন্থী যুবক আনিস খান। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছিলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি স্বাস্থ্য দপ্তরকে দেওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। গ্রামে শাসকদলের অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। ফল মানসিক নির্যাতন, ভীতি প্রদর্শন। একটা মিথ্যা মামলাও দেওয়া হয়। পকসো আইনে। গ্রামছাড়া হয়ে যান আনিস। ছয় মাস পরে ফিরলেন। ফেরার খবর পেয়ে গভীর রাতে পুলিশ হানা।ধরতে নয় মারতে। পেশাদার খুনির মতো খুন করে ফেলে দেওয়া হয় বাড়ির ওপর থেকে। একজন পুলিশ নিচের তলায় বাবাকে আটকে রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকী শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় তাঁকে রাখাও হয়নি বলে আনিসের বাবার অভিযোগ। আদালতে মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অসন্তুষ্ট পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
আবার সুরতহাল হবে। এদিকে রাজ্যে দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রথমে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। পরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পথে নামেন। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই রাস্তায় ঝড় তোলে। তীব্র পুলিশি নির্যাতন হয়। হয় আটক।তবু থামেননি জাগ্রত যৌবনের প্রতিনিধিরা। লড়াই চলবে।