আরেক রকম ● দশম বর্ষ চতুর্বিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ● ১-১৫ পৌষ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

সঞ্জয় উবাচ


রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু

ধৃতরাষ্ট্র বললেন, সঞ্জয় তুমি যেন তখন গৌতম নওলখা নামের কোনো মুনিবরের কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেলে। কি যেন তোমার আরো বলার ছিল মনে হল। কোনো অপ্রিয় কথা হলেও আমি তা শুনতে উৎসুক। সংকোচ কোরো না, আমাকে বলো সঞ্জয়।

আমি গৌতম মুনি বিষয়ে কিছু বলিনি মহারাজ। আমি বলতে চেয়েছিলাম একালের একজন বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী বিষয়ে। ইনি গৌতম নওলখা নামেই সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত।

বুঝতে পারছি সত্যিই আমার বানপ্রস্থের দিন এসেছে। এই যে বলছ মানবাধিকার কর্মী, আমি এঁদের বিষয়ে কিছুই জানি না। এঁদের কাজের গতিপ্রকৃতিই বা কিরকম সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। এঁরা কি নির্দিষ্ট কোনো সংস্থা বা সংগঠনের কর্মী? এরকম কোনো স্থায়ী পরিচয় কি এঁরা বহন করেন?

অনেকেই করেন, সবাই হয়তো তা করেন না। কিন্তু মানবাধিকার কর্মী, সাংগঠনিক পরিচয় থাক বা নাই থাক, বললে কী বোঝায়, এ ধারণা কিন্তু একালে মোটামুটি পরিষ্কার।

যেমন?

আসলে মানবাধিকারের ধারণাই এক অর্থে নতুন মহারাজ। এবং এটা যে আধুনিক কালেরই একটা বিশিষ্ট ধারণা, এইটুকু বলাই চলে।

বুঝতে পারছি, সন্ধিবিচ্ছেদ করলে যেটুকু বোঝা যায় সেটুকু আমি বেশ বুঝতেই পারছি - মানবাধিকার সন্ধি ভাঙলে হবে মানব + অধিকার।

এই সন্ধি ভাঙার কথাটা খুব জরুরি। এক অর্থে এই শব্দের সরল অর্থের মধ্যেও ওই মানব যুক্ত অধিকার ছাড়া আর কিছু নেই মহারাজ। মানব, সে যে-কোনো মানুষই হোক না কেন, তার যা যা অধিকার প্রাপ্য তা-ই তার মানবাধিকার।

দাঁড়াও, এইখানে আমার একটু খটকা লাগছে একটা কথা ভেবে।

কোন কথা ভেবে মহারাজ?

তুমি বলছ মানব, তা সে যে-কোনো মানুষই হোক না কেন।

হ্যাঁ, আমি তাই বলেছি বটে।

অর্থাৎ, ভালো লোক, মন্দ লোকের তারতম্য ঘুচে যাচ্ছে। মুড়ি মিছরির এক দর চাইছ।

যদি এইভাবে বলেন কথাটা, তাহলে তাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে এক দরের কথাটা উঠছে শুধুমাত্র মানবাধিকারের প্রসঙ্গে। অর্থাৎ মানব-অধিকার পাওয়া না-পাওয়ার প্রশ্নে দোষী আর নির্দোষের ওজন তুল্যমূল্য। ঠিক যেমন খাওয়া-পরা-শৌচাগারের প্রশ্নে সবারই দাবিদাওয়া তুল্যমূল্য।

মানুষ বলেই একজন ব্যক্তির যা-কিছু প্রাপ্য, অন্তত এক নির্দিষ্ট সময়ে এক নির্দিষ্ট সমাজ তাই মনে করে, সেটাই তার মানবাধিকার।

বুঝলাম সঞ্জয়, কিন্তু আমার এই খটকাটা যাচ্ছে না যে তোমাদের এই মানবাধিকারের বেলায় চোর ডাকাত আর জেলখাটা অপরাধী এবং দয়ালু পরোপকারী মানুষ, দু-জনেরই মানবাধিকার একই, এ কিরকম কথা।

আমি বুঝেছি মহারাজ। সবারই মনে এই খটকাটা প্রথমে লাগে। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, চোর-ডাকাত বা অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে যারা অপরাধী, তারা তাদের অপরাধের মাত্রা অনুসারে বিচারে যা শাস্তি পাবার তা তাদের পেতে হবে। কিন্তু অপরাধী বলে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানে তার কোনো অধিকার নেই, এটা আধুনিক মনের অবস্থান নয়। যে কারণে হাত পা কেটে নেওয়ার মতো শাস্তি আধুনিক মনের বিধান নয়। একেবারে গোড়ার কথাটা হল যে ‘জন্মসূত্রে সব মানুষেরই মর্যাদা ও অধিকার সমান’, এই ধারণাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাই মানবাধিকার বলতে বোঝায় ‘এমন নৈতিক অধিকার যা কেড়ে নেওয়া যায় না এবং মনুষ্যত্বের দাবিতেই যা সকল মানুষের মধ্যেই বর্তমান’।

বুঝলাম আমাদের কালের পৃথিবীর চেহারা তোমাদের সময়ে এসে অনেক বদলে গিয়েছে। আমরা সহজে তার হদিশ পাব না।

আপনার দিশাহারা বোধ আমি অনুভবে টের পাচ্ছি, মহারাজ। আপনি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মধ্যে অবস্থিত থেকেই বিষাদগ্রস্ত হচ্ছেন। আর আমরা যে তার পরে আরো কত কত যুদ্ধের পথ পেরিয়ে এসেছি। বিশ শতকের দু দুটো বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত আমাদের এখনো পুরো শুকোয়নি, মহারাজ। যুদ্ধ বিগ্রহ আর ক্ষমতার দম্ভের কথা ভাবতে গেলে, আপনার সামনে এসব উচ্চারণও আমাদের পক্ষে ধৃষ্টতা, মানুষের সভ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে হয়। আমাকে মার্জনা করবেন মহারাজ।

তুমি আমার কাছে কি মার্জনা ভিক্ষা করছ সঞ্জয়। আপন সন্তানদের মধ্যে এই সর্বেনেশে যুদ্ধ, চোখে দৃষ্টি না থাকলেও আমি যা মর্মে টের পেয়েছি তার দাবদাহ তোমাকে বোঝাতে পারব না সঞ্জয়।

কিন্তু মহারাজ, সেসব যুদ্ধে তবু যুদ্ধ শর্ত বলে একটা কিছু দু-পক্ষের সম্মতিতে নির্দিষ্ট হত। এ কালের যুদ্ধে কৃষিক্ষেত্রে নাপাম বোমা নিক্ষেপ, হাসপাতালে প্রাণঘাতী বোমা বর্ষণ, এরকম কোনো আচরণই আটকাবার কোনো স্বীকৃত পন্থা নেই।

তা মানবাধিকারের ধারণার ব্যবহারে সেদিকে কতটা এগোনো সম্ভব বলে তুমি মনে কর? তা ছাড়া এসব ক্ষেত্রে কার কথা কে বা শুনবে।

আপনি সংশয়ের জায়গা খুব নির্দিষ্ট করেই চিহ্নিত করেছেন মহারাজ। আন্তর্জাতিক আইন কিছু কিছু যা প্রণীত হয়েছে তার প্রধান সমস্যাই প্রয়োগ। সে আইন কার্যকর করার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান তেমন শক্তপোক্ত এখনো কিছু দাঁড়ায়নি। আশার কথা এই যে, রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সংসদে ১৯৪৮-এর ১০ ডিসেম্বর সার্বজনিক মানবাধিকার ঘোষণাটি গৃহীত হয়।

সঞ্জয়, তোমার এই সার্বজনিক ঘোষণা বিষয়ে আমার দুটো জিনিস জানবার আছে। এই রাষ্ট্রসংঘের কর্তৃত্ব কতটুকু আর কোন কোন অধিকারই বা এখানে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেল।

কর্তৃত্বের কথাটা আপনি যথার্থ চিহ্নিত করেছেন। সত্যি কথা বলতে জাতিগর্বের কাছে আন্তর্জাতিকতা এখনো ধূল্যবলুণ্ঠিত। মানসিক স্তরে এই জাতি ধারণা উত্তরণ করে নেশনের গণ্ডি না পেরোতে পারলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে খুব কিছু আশা করা অন্যায় হবে। তা সত্ত্বেও জাতিসত্তা পেরিয়ে উপরের দিকে যে একটু হাত বাড়ানো গেল সেটাও সুলক্ষণ। লীগ অব্‌ নেশনস এতদিন টেঁকেনি, কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ তো এখনো ভেঙে যায়নি। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে মহারাজ, অনেক অধিকারের কথাই সত্যি সত্যি বলা হয়েছে এই ঘোষণায়। অধিকারগুলির দুটো ভাগ আছে। প্রথম ভাগে আছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার। এই ভাগেই আছে আইনের চোখে সমানাধিকার, এবং যথেচ্ছ গ্রেপ্তার, নজরবন্দি ও নির্বাসন থেকে সুরক্ষা। দ্বিতীয় ভাগে আছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার। খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও কাজের অধিকার এই দ্বিতীয় ভাগের অন্তর্গত। মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের দিকে তাকিয়ে এইসব অধিকারের কথা চিন্তা করা হয়েছে।

কিন্তু সঞ্জয়, তোমার কথা শুনতে শুনতে আমার মনে কি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে জান?

আপত্তি না থাকলে আমাকে নিঃসংশয়ে আপনার সংশয়ের কথা বলুন মহারাজ।

দ্যাখ, তোমার কথা থেকে আমি যা বুঝতে পারছি তা এই যে, তোমাদের রাষ্ট্রসংঘ ইত্যাদির জন্য যে জাতীয়তা-পেরোনো মনের প্রয়োজন তারই এখনো অনেক দেরি আছে।

ধর্মরাজ্যের শুধু কর্ণধার না, প্রায় দিশারীর মতো যথার্থ কথাটা বললেন আপনি। আমাদের চারপাশে শুধু কর্কশ রাষ্ট্রীয় কণ্ঠস্বর। দেশের মানুষের সমস্ত দেশবোধ যেন রাষ্ট্রের হাতে ইজারা দেওয়া। দেশটা যে দেশের মানুষেরও, এরকম সরল কথা আজ প্রায় উচ্চারণ করাই চলে না। বলদর্পী রাষ্ট্র যা শোনাবে, যা শেখাবে তাই আমরা সবাই শুনব এবং শিখব। এই যে পয়লা ডিসেম্বর থেকে ভারত আগামী এক বছর সেই জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতির দায়িত্বে থাকবে এই সাধারণ কথাটাকেও আমাদের ধর্মরাজ্যের প্রধান অমাত্য এমনভাবে হাজির করে চলেছেন যে সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়াই যেন ভারতের বিধিলিপি এবং বিধাতার নির্দেশেই যেন ভারত আজ দুর্লভ সম্মানে সম্মানিত।

আমি তো নগরজীবনের খবর আর তেমন পাই না এখন। শুধুমাত্র এই যুদ্ধ বিবরণ যাতে আমি জানতে পারি তাই তোমাকে নিয়ে এই ব্যবস্থাটা করা হয়েছে। তা বলো সভাপতির দায়িত্বভার কিভাবে প্রচারিত হচ্ছে দেশময়।

এক বছর ধরে সারা দেশ জুড়ে বর্ণিত হবে এই অলৌকিক কাহিনীর প্রত্যেকটি বুনোট।

সভাগুলো হবে দেশের বিভিন্ন শহরে। আর কতগুলো যেন শহিদ স্মারক সাজানো হবে আলোকসজ্জায়।

দেখুন মহারাজ, এই সভাপতির দায়িত্ব যদি এতটাই শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হবে, তাহলে এ কথাটা বলতে হবে যে ইন্দোনেশিয়া আমাদের আগেই সেই শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি লাভ করেছে। আমরা কি না সেই ইন্দোনেশিয়ার হাত থেকে বেটনটা পেয়েছি আর সেই জন্যেই আমরা গর্বিত। ইন্দোনেশিয়া পেয়েছিল ইতালির হাত থেকে, আমাদের হাত থেকে পরের বছর এই দায়িত্ব পাবে ব্রাজিল, তার পরে পাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এইভাবেই চলে, চলবে।

তবে দ্যাখ সঞ্জয়, সুযোগ পেলে সবাই এই সভাপতিত্ব থেকে যা ফায়দা তোলার তা তুলবে। এই যেমন আমার প্রধান অমাত্য এখন তুলছেন। তা ছাড়া ২০২৪-এ তাঁকে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে তো।

আপনার সে কথাও খেয়ালে আছে মহারাজ?

দ্যাখ, আমি চোখ বন্ধ করে থাকি অন্ধ বলে, কোনো কিছুই বুঝি না বলে নয়। সত্যি বলতে কিছু কিছু বুঝি।

তা হলে মহারাজ, আপনাকে গৌতম নওলখার সংবাদটা দিই।

হ্যাঁ, বলো, এ বিষয়ে সত্যিই আমি কিছু জানি না।

মহারাজ, এ গল্পের সূত্রপাত ১৮১৮ সালে। দেশে তখন ইংরেজদের শাসন চলছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে চলেছে। আপনার ধর্মরাজ্যের যে-অঞ্চলের নাম আজ মহারাষ্ট্র, তারই অন্তর্গত পুণের ভীমা-কোরেগাঁও ক্ষেত্রে তদানীন্তন পেশোয়া দ্বিতীয় বাজী রাও-এর সঙ্গে ইংরেজদের লড়াই হয়। এই লড়াইতে ইংরেজ পক্ষের সৈন্যদের মধ্যে ছিল অনেক মাহার সম্প্রদায়ের লোক। আপনি জানেন মহারাজ, মাহার সম্প্রদায় উচ্চবর্ণের মানুষের দৃষ্টিতে অচ্ছুৎ বলে বিবেচিত। অধুনা যাদের পরিচয় দলিত। পেশোয়ার সৈন্যরা সেই যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়। একদিকে ইংরেজদের হাতে পেশোয়ার পরাজয়, অন্যদিকে উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে মাহারদের জয়।

পেশোয়ারা ছিলেন মহারাষ্ট্রীয় চিৎপাবন ব্রাহ্মণ।

যে-কোনো জয় পরাজয়ের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির এই ফারাকের অবকাশ তো থাকেই।

হ্যাঁ, মহারাজ, থাকে, আর থাকে বলেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিরোধও জন্ম নেয় সেই ফারাক থেকে।

তা সেই কোরেগাঁও যুদ্ধের পরিণাম কী দাঁড়াল?

আমি সংক্ষেপে আধুনিক সময়ের কথায় চলে আসি মহারাজ। ২০১৮ সালে ওই যুদ্ধে দলিত শক্তির জয়ের স্মৃতিতে ওই ভূমিতে এক মহাসম্মেলনের আয়োজন হয়। জয়পর্বের দুশো বছর পূর্তি উৎসব পালন বলা যেতে পারে। এই আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন আড়াইশোর উপরে, আজ যাদের বলা হয়, এন জি ও সংগঠন। এই মহাসম্মেলন এলগার পরিষদ্‌ নামে পরিচিত। ২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর তারিখের এই সম্মেলন তখনকার এক বড়ো ঘটনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বক্তৃতা ও শ্লোগানের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন থেকে দলিত শক্তির এক উত্থানবার্তা বেশ উঁচু স্বরেই ঘোষিত হয়েছিল।

মূল সমস্যা কি এই যে দলিত শক্তির মাথা তুলে দাঁড়ানো উচ্চবর্ণের সামাজিক প্রতিপত্তির পক্ষে বিপজ্জনক মনে হল?

মহারাজ, কে বলে আপনি দৃষ্টিশক্তিতে অন্ধ? নাকি বহিরঙ্গের এই অঙ্গহানি আপনাকে আরো স্বচ্ছ দৃষ্টির অধিকারী করেছে। অবশ্যই উচ্চবর্ণ ত্রস্ত বোধ করল, কিন্তু তার প্রকাশ ঘটল রাষ্ট্রীয় পরাক্রমে।

যেমন?

ওই অনুষ্ঠানের ভাষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে নাকি হিংসার ইন্ধন ছিল। সেই অভিযোগে গৌতম নওলখা, আনন্দ তেলতুম্বলে প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাষ্ট্র গ্রেপ্তার করে।

গৌতম নওলখা একজন সাংবাদিক, আনন্দ তেলতুম্বলে শিক্ষক। এঁদের সঙ্গে ওইদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক, হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারক, দলিত আন্দোলন কর্মী এবং এইরকম আরো অনেক মানুষ। সম্প্রতি গৌতম নওলখার প্রসঙ্গ যে আবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে তার একটা কারণ আছে, মহারাজ।

কী কারণ বলো সঞ্জয়।

গত কয়েক বছর জেল হেফাজতে থাকার পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে বাড়িতে গৃহবন্দি হিসেবে রাখার ব্যবস্থা হয়। পুলিশের তরফে বলা হয় যে, বাড়িতে তাঁর উপরে উপযুক্ত নজরদারি করা সম্ভব না। জেল হাফাজতেই ব্যবস্থা হোক।

আদালতের নির্দেশের পরেও এই কথা বলা হয়েছিল?

হ্যাঁ, মহারাজ। আপনার সাধের ধর্মরাজ্যে এরকম কথা আজকাল জলভাত হয়ে গেছে।

আদালত অবশ্য বলেছিল, একজন সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ বৃদ্ধের উপরে নজরদারি করা পুলিশের পক্ষে এত কঠিন কাজ। এ কি পুলিশের দক্ষতার পরিচায়ক? যাই হোক, উনি এখন গৃহবন্দি অবস্থাতেই আছেন।

সঞ্জয়, তুমি কি মানবাধিকারের কথা এই প্রসঙ্গে তুলেছিলে?

হ্যাঁ, মহারাজ। এই ধর্মরাজ্যের প্রধান অমাত্য এর আগে সদম্ভে এ ঘোষণাও করেছেন যে কলমধারীদের থেকে উনি এ দেশ মুক্ত করবেন।

এ বড়ো ভয়ানক কথা।

উনি ‘শহুরে নকশাল’ কথাটা মাঝে মাঝেই বলে থাকেন। সমস্ত ক্ষমতাপ্রিয় শাসকের মতো উনি এই জাতের মানুষকে বড়ো ভয় পান। তুমি একজন ভলতেয়ারকে গ্রেপ্তার করতে পার না, এরকম কথা বলার লোক উনি নন।


[সৌরীন ভট্টাচার্য]