আরেক রকম ● দশম বর্ষ ত্রয়োবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ● ১৬-২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
প্রবন্ধ
বঙ্গ ভঙ্গ - অবাস্তব ও অবান্তর প্রস্তাব
সুখবিলাস বর্মা
কোচবিহারের সাবেক রাজপরিবারের নিকট আত্মীয়দের দ্বারা সৃষ্ট সংস্থা গ্রেটার কোচবিহার পিপলস্ এ্যাসোসিয়েশন (জিসিপিএ) ১৯৯৮-তে জেলাশাসকের কাছে এবং ২০০০ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে দাবিপত্র পেশ করে। জিসিপিএ-র প্রধান বক্তব্য যে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় জোর করে কোচবিহারকে পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত করেছেন। ১৯৪৯ সালের ২৮শে আগস্ট ৯টি ধারার Merger Agreement সই করে রাজ্যকে শাসন করার সমস্ত ক্ষমতা কোচবিহার মহারাজা ভারত সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন এই সত্য জিসিপিএ নেতৃবৃন্দ মানতে নারাজ। তাঁরা এই সত্যও মানতে চান না যে ঐ সংযুক্তি পত্রে রাজ্যের প্রজাদের সম্পর্কে কোনো কথাই ছিল না।
ইতিমধ্যে সংস্থার নেতৃত্ব স্থান দখল করে কতিপয় সুযোগসন্ধানী। অযৌক্তিক দাবি নিয়ে তাদের আন্দোলন এক সময়ে জঙ্গি রূপ ধারণ করে। শুরু হয় পুলিশী তৎপরতা। নানা ভাগে বিভক্ত সংস্থার একাংশের নেতা বংশীবদন রায় সঙ্গীসাথী সহ জেলে বন্দি হয়, অপরাংশের নেতা স্বঘোষিত মহারাজা অনন্ত মহারাজ আসামে পালিয়ে যায়। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পরিবর্তিত বন্দীমুক্তি নীতিতে বংশীবদন ছাড়া পায় এবং কালক্রমে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে।
কোচবিহার ও আসামের নানা সভাসমিতিতে সাধারণ রাজবংশী মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে প্রচুর টাকা সংগ্রহ করে অনন্ত মহারাজ কোচবিহারে প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করে। অর্থ সংগ্রহের জন্য অনন্ত রায় ওরফে অনন্ত মহারাজ প্রমুখ নেতারা সহজ সরল গ্রাম্য রাজবংশী মানুষদেরকে ঠকানোর অপূর্ব কৌশল গ্রহণ করেছিল। আজেবাজে কাগজ ভর্তি বাজার করা চটের থলে দেখিয়ে বড় বড় সভায় এই নেতারা ঘোষণা করতেন যে এই সব থলেতে বহু দলিল কাগজপত্র আছে যাতে লেখা আছে যে কুচবেহারের মহারাজা তার প্রজাদের জন্য অনেক কিছু রেখে গেছেন। বক্তৃতায় রাজবংশী ভাষায় তাঁরা বলতেন, ‘দেখো হামার বাপ মাও ভাই ভাতিজা বইনিরঘর, হামার মহারাজারঠে জোর করিয়া আজ্য(রাজ্য)খান কাড়ি নিছে বিধান রায়। মহারাজা পরজাগুলার জন্যে, তোমার হামার জন্যে অনেক কিছু রাখি গেইছে। সেগুলা হামাক আদায় করির নাইগবে। হাম্রা হামার আজ্য ফিরি চাই। কিন্তুক উমরা তো এমনে এমনে দিবে না - তার জন্যে আন্দোলন করির নাইগবে। এই জন্যেই হামার গ্রেটার কুচবেহার আন্দলন - ইয়ার জন্যে মেলা টাকা চাই, এই জন্যে হামরা তোমারটে দান চাই। আর আজ্যের জন্যে চাই আজবাড়ি - হামার নিজের আজবাড়ি বানেবার নাগিবে; তার জন্যেও চাই মেলা টাকা। তোমার সগারে দান থাকি হামরা বানামো আজবাড়ি’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আসামে কর্মরত অনন্ত রায় ছিলেন অয়েল ইণ্ডিয়ার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। আসামেও বাড়ি রয়েছে তার। লোক ঠকিয়ে টাকা আদায় করে প্রাসাদোপম 'আজবাড়ি' তৈরি সহ অনেক ক্রিমিনাল কেস রয়েছে তার বিরূদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ একটু তৎপর হলেই অনন্ত আসামে পগার পার হতে পারত না। আর এখন তো তার বিরূদ্ধে কারুর কিছু বলার নেই। উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রধান শত্রু অনন্ত রায় এখন একদিকে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং অন্যদিকে পরের দিনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছেন।
হায়রে রাজনীতি! যে ক্রিমিনালের জেলে থাকার কথা, তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সলাপরামর্শ করছেন। তিনি রটিয়ে বেড়াচ্ছেন যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অতি শীঘ্রই কোচবিহারকে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিতে চলেছে। গ্রেটার কোচবিহার আন্দোলনের কেন্দ্রশাসিত রাজ্যের দাবি নাকি পূরণ হতে চলেছে। তার এই দাবিকে উত্তরবঙ্গের দুই মন্ত্রী সহ বিজেপির কিছু নেতানেত্রী মৃদু সমর্থন জানাচ্ছে, যদিও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এ সম্পর্কে তাদের অজ্ঞানতা প্রকাশ করে চলেছে। আসলে উত্তরবঙ্গে বিজেপির কিছু উঠতি নেতৃত্ব পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে কল্কে পেতে চাইছে। রাজবংশী ভাষাকে কামতাপুরী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও এক সময়ে তাঁরা এরকম মিথ্যাচার করেছিলেন। এ নিয়ে আমি অনেকবার অনেক লেখা প্রকাশ করেছি। উত্তরবঙ্গের এই ফড়েদের কাজই হল ঘোলাজলে মাছ ধরে আখের গোছানো।
কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হলে কোচবিহারের রাজবংশী মানুষদের কি উপকার হবে তা নিয়ে এখানে একটু আলোচনা করা বোধহয় অবান্তর হবে না। খুব বেশি গভীরে না গিয়েও বলা যায় যে এর অব্যবহিত ফল (immediate fallout) হবে রাজবংশী জনগোষ্ঠীর স্বার্থপরিপন্থী। রাজ্যে এখন রাজবংশীরা ২২% সংরক্ষণের আওতায় - স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চাকরি, প্রমোশন ইত্যাদিতে তারা ২২% সংরক্ষণ পাওয়ার যোগ্য। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংরক্ষণ ১৫% হয়ে যাবে। ট্রাইবদের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বেড়ে হবে ৭.৫%, কিন্তু কোচবিহার জেলায় তাদের সংখ্যা তো খুবই নগণ্য - ১%ও নয়। আমি জানিনা, গ্রেটার কুচবেহার আন্দোলনের নেতারা এবং রাজবংশী গোষ্ঠীর লেখাপড়া জানা মানুষেরা এ বিষয়ে নজর দিয়েছেন কি না। দ্বিতীয়ত, প্রশাসন থেকে আরম্ভ করে সমস্ত চাকরিতে উড়ে এসে জুড়ে বসবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা যেমনটা ঘটেছে অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ধরণের রাজ্যের ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দের বড় অংশ চলে গেছে দিল্লি ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা আমলা, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, করণিক, বন বিভাগের ছোট-বড় অফিসার-সবার পকেটে। কোচবিহার হয়ে উঠবে স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, শোষণের আরও বড় কেন্দ্র। আর সবচেয়ে বড় কথা, কে চাইছে এই কেন্দ্রশাসিত রাজ্য? কোচবিহার জেলার লোকসংখ্যার মাত্র ৪২% রাজবংশী, যাঁদের খুব বেশী হলে ১০% এই ধরণের ইচ্ছা পোষণ করে। লোক ঠকিয়ে টাকা আদায় করে অনন্ত রায়ের প্রাসাদ তৈরি হওয়ার পরে এবং বংশীবদনের বাঁশি মমতার গুণগানে প্রশংসায় ব্যাপৃত থাকার পরে সেই ১০ শতাংশও এখন তলানিতে ঠেকেছে। রাজবংশীর বাইরে বাকি জনগোষ্ঠী অর্থাৎ বামুন, কায়েত, নমশূদ্র, মালো, নস্যশেখ সহ ওবিসি ভুক্ত জনগণ এইসব উদ্ভট তত্ত্ব মানবে কেন? মোট কথা কোচবিহার জেলাকে কেন্দ্রশাসিত রাজ্যে পরিণত করার আশ্বাস ও বিশ্বাস একটা রাজনৈতিক ধাপ্পা ছাড়া আর কিছু নয়।
উপরে বর্ণিত আন্দোলন ইতিহাস থেকে পরিষ্কার যে একমাত্র সুবাস ঘিসিঙ্গের জিএনএলএফ আন্দোলন ছাড়া বাকিগুলি শুধু হৈ চৈ করেছে, কাজের কাজ কিছু হয়নি। জিএনএলএফ স্বশাসিত সংস্থা আদায় করতে পেরেছে প্রধানত ঘিসিঙ্গের নেতৃত্বগুণে - তাঁর নিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার গুণে। অন্য আন্দোলনগুলি অযৌক্তিকতা ও নেতৃত্বের দুর্বলতায় খুব সামান্যই প্রভাব ফেলতে পেরেছে।
শুরু করেছিলাম উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্য গঠনের সম্ভাব্যতা ও বাস্তবতা নিয়ে। একটি বিষয় আমাদের পরিষ্কার মনে রাখা প্রয়োজন যে 'উত্তরবঙ্গ রাজ্য' এই ধারণাটাই অবাস্তব। উত্তরবঙ্গের যে এলাকা নিয়ে, যে আন্দোলনগুলি যথা গোর্খাল্যান্ড, কামতাপুর ও গ্রেটার কুচবেহার নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম, তাদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই, তাদের দাবি ভিন্ন ভিন্ন; এছাড়া এই এলাকার বাইরেও তিনটি জেলা রয়েছে - মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর। মালদহের অর্থাৎ গৌড়ের ঐতিহ্যের কথা সবার জানা। এক সময়ের বাংলার রাজধানী, পাল বংশ, সেন বংশ, লক্ষণাবতী, এমনকি হুসেন শাহের গৌরব কম কোথায়? তাই মালদহের মানুষের ভাবাবেগ তাদের নিজস্ব সম্পদের প্রতি, গৌরবের প্রতি। একই ভাবে দুই দিনাজপুরের নিজস্ব ঐতিহ্য পৌণ্ড্রবর্ধন/বরেন্দ্রভূমি বাণগড়। বরিন্দ এলাকার রাজবংশী, পান, পলিয়া, দেশী নির্বিশেষে সকলের আন্তরিক ভাবাবেগ তাই বরেন্দ্রভুমি-মহাস্থানগড়-গৌড়ের প্রতি যতটা, কামরূপ-কামতা-কোচবিহার বা গোর্খাল্যাণ্ডের প্রতি ততটা নয়। সেজন্যই উল্লিখিত আন্দোলনগুলি নিয়ে এই তিন জেলার মানুষ নির্বিকার, তারা কখনও কোনো সমর্থন জানায়নি। তাছাড়া প্রতিটি আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেক গোষ্ঠীর একাংশের নিজস্ব বিষয়সূচি নিয়ে - একে অপরকে কেউই সাহায্য করেনি।
প্রশ্ন ওঠে - এটাই যদি হয় বাস্তব অবস্থা, তবে মাঝে মাঝেই আলাদা রাজ্যের এই ধুয়া ওঠে কেন? উত্তরবঙ্গ নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সংবাদমাধ্যমে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলার দাবি কি তবে কোনো নতুন ছক? জন বারলা বিজেপি দলের একজন গুরুত্বহীন নেতা। বানারহাটের লখিপাড়া চা বাগানের কর্মী। ২০০৯-১০ সালে অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের দুয়ার-তেরাই আঞ্চলিক ইউনিটের সভাপতি জন বারলা ২০১১ সালে আদিবাসী স্বার্থ বিরোধী কাজের জন্য সংস্থার সভাপতি পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অপসারিত হন। এমন মহান চরিত্রের এই নেতা আজ উত্তরবঙ্গ নিয়ে কাঁদুনি গাইছেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে আদিবাসী এক সাংসদের এমন ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির নতুন ছক কষা, হাওয়া গরম রাখার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পর্যুদস্ত হলেও উত্তরবঙ্গের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে, তাদের জন্য নানা প্রকল্পের ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যেমন কামতাপুরি ভাষার স্বীকৃতি, বেশ কয়েকটি লোকসভা আসন বিজেপি দল দখল করেছে। সুতরাং হাওয়া গরম রাখতে হবে। এই দল বেশ ছক কেটেই এগোচ্ছে বলে মনে হয়। ইতিমধ্যে কামতাপুরি সমর্থকের কিছু মানুষ বিজেপিতে যোগদান করে আসাম থেকে কলকাঠি নাড়ছে। কেএলও নেতা জীবন সিংহ সম্প্রতি সিডি প্রকাশ করে যে ধরনের বক্তব্য রেখেছে তাতে বিজেপির নতুন ছক অনেকটাই পরিষ্কার। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে নির্বাচনী কর্মসূচির ফাঁকে আসামের কোন একস্থানে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকা গ্রেটার কুচবেহার আন্দোলনের নেতা অনন্ত মহারাজের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সাক্ষাৎকারও এই ছকের অংশ।
অন্য দিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কিছু কাজ উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্য গঠনে অনেকটা ইন্ধন জুগিয়েছে - তিনিও অনন্ত রায়ের সঙ্গে, জীবন সিংহ প্রমুখের সঙ্গে কি সব নিয়ে বৈঠক করেছেন। বিধানসভায় বিল এনে সংবিধানের ধারা অমান্য করে রাজবংশী সহ কামতাপুরি ভাষাকে অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এবং তিনি বলেছেন যে কামতাপুরি ও রাজবংশী দুটি পৃথক ভাষা অর্থাৎ এই দুই ভাষাভাষী দুটি পৃথক জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, রাজনৈতিক সামাজিক পরিচয় সবকিছু বিকৃত করে রাজবংশী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন নিয়ে আসার অপূর্ব কৌশল এঁটেছেন। দুঃখের বিষয় এ নিয়ে তেমন প্রতিবাদ সংঘটিত হচ্ছে না। বিধানসভায় আমাদের তীব্র প্রতিবাদ সংখ্যার জোরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ১১৪টি বইয়ের লেখক দিদি দাবি করছেন তিনি সব জানেন। আমরা রাজবংশী গোষ্ঠীর লেখাপড়া জানা মানুষরা গোবর গনেশ বৈ তো কিছু নই! কিন্তু এই কাজের মধ্য দিয়ে অস্তিত্ববিহীন কামতাপুরি ভাষাকে স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে মমতাদিদি পৃথক কামতাপুর রাজ্যের আভাসই দিচ্ছেন না কি? রাজবংশী জনগোষ্ঠীর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার পূর্ণ পরিকল্পনায় তিনি উত্তরবঙ্গের কিছু অঞ্চলে রাজবংশী ও কামতাপুরি মাধ্যমে লেখাপড়ার জন্য প্রায় তিনশো প্রাথমিক স্কুল স্থাপিত করছেন বলে জানিয়েছেন। দেশের বর্তমান সামাজিক-অর্থনৈতিক রাজনৈতিক অবস্থান ও পরিকাঠামোয় ইংরাজী/হিন্দি না জানলে, ইংরাজী মাধ্যমে লেখাপড়া না করলে কোথাও কুল পাওয়া কঠিন। ভালো ভালো বাংলা মাধ্যম স্কুল থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে পারছে না। রাজবংশী মাধ্যমে পড়ে ছেলেমেয়েরা তো অকুল পাথারে পড়বে। প্রাথমিক স্তরের পর কোন ভাল স্কুলে ভর্তি হতে পারবে তারা? দিদির সাধের কামতাপুরি ভাষাটা দেখতে শুনতে যেমনই হোক না কেন, এই প্রকল্প যে পরোক্ষভাবে তথাকথিত কামতাপুর রাজ্যের স্বীকৃতির আভাস দিচ্ছে না তা কি জোর করে বলা যায়? কামতাপুর রাজ্যের প্রধান দাবিদার এখন আর পৃথিবীতে নেই, কিন্তু উপরোক্ত মহান কাজগুলির মধ্য দিয়ে যে ইন্ধন অনুপ্রেরণা জোগানো হয়েছে তা কি বিফলে যেতে পারে? এসবের মধ্য থেকেই তো অনন্ত মহারাজরা নতুন করে কুচবেহার রাজ্যের স্বপ্ন দেখছেন।