আরেক রকম ● দশম বর্ষ ত্রয়োবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ● ১৬-২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

ইতিহাসের পাতা থেকেঃ সাভারকর, লেনিন, গান্ধীজি ও নেতাজি

রঞ্জন রায়


মুখবন্ধ

পরিবর্তিত সময়ে ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ বা পুনর্গঠন অবশ্যই জ্ঞানচর্চার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে একটি কাম্য পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক কালের আমেরিকার ব্ল্যাক লাইভস্ ম্যাটার আন্দোলন আজ আমেরিকা নামক নেশন স্টেট নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কিছু ইতিহাসপুরুষের দাস ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আমাদের দেশেও ইদানীং কথা উঠছে স্বাধীনতার ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যা, নতুন মূল্যায়ন নিয়ে এবং বাংলার কথিত ‘নবজাগরণ’-এর নায়কদের ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে। ‘কারিগর’ বলে একটি গোষ্ঠী দাবি করছেন যে, তাঁরা খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থ ও বিকাশের প্রেক্ষিত থেকে বিদ্যাসাগর এবং রামমোহনকে নিয়ে কাজ করছেন। এরপর হয়ত অনুবীক্ষণে দেখা হবে গান্ধী ও বিবেকানন্দকে, মনে হয় রবীন্দ্রনাথও বাদ পড়বেন না।

সে যাকগে, আমার মত পাঠকের বিভিন্ন প্রেক্ষিত থেকে ইতিহাসচর্চায় নিবেদিতপ্রাণদের কাছে একটিই দাবি - তথ্যনিষ্ঠা, ব্যাখ্যায় আমরা সহমত নাও হতে পারি।

কয়েক দশক আগে আমরা দেখেছি সাবাল্টার্ন স্টাডিজ স্কুলের ইতিহাসচর্চা। তাঁরা অন্ততঃ সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়নে প্রশিক্ষিত ছিলেন বলে পদ্ধতি ও তথ্যনিষ্ঠায় খামতি রাখেননি।

সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চা বলে কিছু কি হয়? ইতিহাসবিদ নিজে এক নির্দিষ্ট দেশকাল ও সমাজে জন্মেছেন। তিনি তাঁর পরিবার, শিক্ষা, অধ্যয়নের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নিজের মতামত গড়ে তোলেন। সমাজবিজ্ঞানের যে কোন শাখার লেখকের ক্ষেত্রে এটি সত্য, ইতিহাসবিদের ক্ষেত্রে এটি আরও সত্য।

মুঘল সাম্রাজ্যের পর্যালোচনায় অধ্যাপক যদুনাথ সরকারের এবং অধ্যাপক ইরফান হাবিবের ফোকাস এক হতে পারে না।

এই বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক এবং মার্ক্সীয় পণ্ডিত ডঃ রণধীর সিং (১৯২২-২০১৬)-এর একটি বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি মনে করেন, সমাজবিজ্ঞান চর্চা করার সময় নিজের পক্ষপাত এবং আগ্রহ বিষয়ে গোড়াতেই অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার। আরও জরুরি--নিজের আগ্রহের বিরুদ্ধ সাক্ষ্যকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা।

অবশ্য সাম্প্রতিক কালে ভারতের ইতিহাস লিখনের সত্যতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

এক, কলোনিয়াল ইতিহাস রচনার সময়ে মধ্যযুগের হিন্দুদের বীরত্বকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, বরং পরাজয়ের কাহিনীগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। হলদিঘাটির লড়াই থেকে শুরু করে অন্যান্য যুদ্ধে হিন্দুসেনার রণকুশলতার কাহিনী লেখা জরুরি।

দুই, স্বাধীনতা সংগ্রামী ‘স্বাতন্ত্রবীর’ বিনায়ক দামোদর সাভারকরের মত চরিত্রকে গান্ধীহত্যার সঙ্গে অপ্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিহাস রচনাতে যথাযোগ্য স্থান দেওয়া হয়নি। তাঁকে যথোপযুক্ত মর্য্যাদা দিয়ে ইতিহাসে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

মুশকিল হচ্ছে, এই ধারার ইতিহাস চর্চায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাকাডেমিক গবেষণার যে আবশ্যক পদ্ধতিগত নিয়মনীতি তা মেনে চলা হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, তথ্যনিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখানে থাকে গুরুতর খামতি। একই বইয়ের বিভিন্ন সংস্করণে বদলে যাচ্ছে কাহিনী এবং ব্যাখ্যা – সূত্র বা টীকা ছাড়াই।

হিন্দিতে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘সাবরকর সমগ্র’তে সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে সাভারকরের বিখ্যাত গ্রন্থে তাঁর লেখা ভূমিকাটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি বলছেন যে, শিবাজীর জমানায় হিন্দুদের মনে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার একটা যুক্তি ছিল, কিন্তু আজও সেই ভাবনা ধরে রাখলে সেটা অন্যায় এবং মূর্খতা হবে। ওই ভূমিকাটি অবশ্য সাভারকর ওয়েবসাইটে অপরিবর্তিত রয়েছে। [1]

সাভারকরের প্রথম জীবনী লেখক ধনঞ্জয় কীরের প্রথম সংস্করণে কোথাও লণ্ডনে কার্জন-উইলিকে হত্যা করতে মদনলালা ধিংড়াকে সাভারকরের নিজের হাতে পিস্তল দেওয়ার কাহিনী নেই। কিন্তু ১৯৬৬ সালে সাভারকরের মৃত্যুর পর প্রকাশিত সংস্করণে এই কাহিনীটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম সংস্করণে বইটির নাম ছিল 'Savarkar and His Times', (১৯৫০); মৃত্যুর পরে যখন ফের প্রকাশিত হল তখন নাম দেওয়া হল 'Veer Savarkar', (১৯৬৬)।

ফলে ইতিহাসচর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে একতরফা বিবৃতি, ঘোষণা এবং নতুন নতুন মিথ নির্মাণ। নতুন ব্যাখ্যা বা বিবৃতির পক্ষে কোন তথ্যসূত্র দেওয়া হয় না বা যা দেওয়া হয় সেগুলো সন্দেহাতীত নয়।

এই ধরণের অমার্জিত ইতিহাস চর্চা প্রসঙ্গে সাভারকরের সঙ্গে লেনিন, গান্ধীজি এবং নেতাজির সম্পর্ক নিয়ে ইদানীং প্রচারিত তিনটি বক্তব্যকে একটু খতিয়ে দেখা যাক।

● ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন লণ্ডনে সাভারকরের সঙ্গে ইন্ডিয়া হাউসে দেখা করেছিলেন এবং তিন বা চার দিন তাঁর আশ্রয়ে ছিলেন।

● দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্দোলনরত ব্যারিস্টার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী লণ্ডনে ইন্ডিয়া হাউসে ব্যারিস্টারি অধ্যয়নরত সাভারকারের সঙ্গে দু’বার দেখা করেছিলেন - ১৯০৬ এবং ১৯০৯ সালে। সেখানে সাভারকর নিরামিষ আমিষ আহার নিয়ে গান্ধীজিকে বিদ্রূপ করেন।

●গান্ধীজি ইত্যাদি কংগ্রেসের নরমপন্থী অহিংস আন্দোলনের পক্ষের নেতাদের সম্বন্ধে বীতশ্রদ্ধ নেতাজি সুভাষ ১৯৪২ সালে দেশ থেকে গোপনে জার্মানি যাওয়ার আগে বোম্বাইয়ে সাভারকরের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে পরামর্শ চান। তারপর তাঁর নির্দেশেই তিনি জাপান এবং জার্মানি যাত্রা করেন।

লেনিন-সাভারকর বিতর্ক

২০১৮ সালের মার্চ মাসে ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর যখন বেলোনিয়া এবং অন্য জায়গায় লেনিনের স্ট্যাচুর মুণ্ডচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন চ্যানেলে ও পত্রিকায় দলের মুখপাত্রেরা এটিকে উচিত কাজ বলে প্রশংসা করছেন তখন ইন্ডিয়া টুডে [2] জনৈক প্রভাস কুমার দত্তের একটি লেখা প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, সাভারকরের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া হাউস বিশ্ব বিপ্লবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। তাতে আইরিশ, চৈনিক, রুশ, মিশরীয়, তুর্কি, ইরান এবং অন্য দেশের বিপ্লবীরা সম্মিলিত হতেন। তখন লণ্ডনের অ্যানার্কিস্ট সমাজবাদী নেতা গাই অ্যালড্রেড-এর প্রয়াসে লেনিন ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে ইন্ডিয়া হাউসে চারবার এসেছিলেন এবং সাভারকরের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছিলেন। কী নিয়ে আলোচনা সেটা অবশ্য জানা যায়নি। লেখকের সূত্র [3] এখানে হল সাভারকরের অনুগামীদের তৈরি ওয়েবসাইট।

এরপর, সাভারকরের জন্মদিনে লেখা হল তিনি পলাতক রুশ বিপ্লবী লেনিনকে ইন্ডিয়া হাউসে তিন দিন শেল্টার দিয়েছিলেন। সাভারকর রাতে খাওয়ার সময় লেনিনকে জিজ্ঞেস করলেন - ক্ষমতায় এলে রুশদেশে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার কীভাবে উন্নতি করবেন? লেনিন নাকি জবাবে বলেছিলেন যে, আগে ক্ষমতায় আসি, তারপরে ভাবব। [4]

তখন মদনলাল ধিংড়া (যিনি মাস দুয়েক পরে কার্জন-উইলিকে হত্যা করবেন) সেই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এমন দাবি করা হয়েছে।

এ জাতীয় অনেক লেখা আজকাল বিভিন্ন সাইট, পত্রিকায়, টুইটারে দেখা যাচ্ছে। এই প্রচারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট; আইন পড়তে লণ্ডনে যাওয়া তরুণ সাভারকর তখনই পরিপক্ক আন্তর্জাতিক নেতা এই প্রস্তাব প্রমাণ করতে চেষ্টা করা, বলা বাহুল্য কেউ এর সমর্থনে কোন তথ্য দেওয়া প্রয়োজন মনে করেননি।

লেনিন তখন কোথায় ছিলেন?

১৯০৫ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে রাশিয়ার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র হয় এবং মেনশেভিক ও বলশেভিকদের মধ্যে বিতর্ক উগ্র রূপ নেয়। ১৯০৮ সালে লেনিন বগদানভের দার্শনিক প্রবন্ধের জবাবে অভিজ্ঞতাবাদ ও সত্যের আপেক্ষিক রূপ ও ব্যক্তিনিরপেক্ষ রূপ, এবং অন্তিম সত্য বলে আদৌ কিছু হয় কিনা - এইসব নিয়ে একটি বই লেখায় ব্যস্ত। বইটি হল 'মেটিরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম - ক্রিটিক্যাল কমেন্টস অন এ রিয়্যাকশনারি ফিলজফি'। লেনিন ১৯০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্য্যন্ত জেনেভায় বসে বইটি লেখেন। নভেম্বরে লণ্ডন গিয়ে একমাস ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে আধুনিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করেন  ফিজিক্সের অধ্যাপক এর্নস্ট মাখ ও অ্যাভেনারিয়াসের পজিস্টিভিস্ট অবস্থানকে বুঝে সমালোচনামূলক পর্যালোচনা করা। তিনি  ডিসেম্বরে প্যারিস গিয়ে এপ্রিল ১৯০৯ পর্য্যন্ত বইটির  প্রুফ দেখায় ব্যস্ত থাকেন। ১৯০৯ সালের মে মাসে বইটি রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়। [5]

তাহলে ১৯০৯ সালের মার্চ মাসে লেনিন ইন্ডিয়া হাউস যান কী করে?

এই প্রসঙ্গে আরও কিছু অসঙ্গতির কথা বলা দরকার।

● সাভারকর দেশি বিদেশি অনেক বিপ্লবীদের নিয়ে লিখেছেন বা উল্লেখ করেছেন - কিন্তু লেনিনের সঙ্গে আলাপ? কোথাও এমন  দাবি করেননি।

● ইন্ডিয়া হাউসে সাভারকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এম. বি. পি. টি. আচার্য, যিনি পরে কাবুলে ১৯২০ সালে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন এবং লেনিনের সঙ্গে দেখা করেন, তিনিও সাভারকরের সঙ্গে ইন্ডিয়া হাউসে লেনিনের পরিচয় নিয়ে কিছু লেখেননি।

● রয়-লেনিন থিসিসের এম. এন. রায়, যিনি কমিন্টার্নের প্রতিনিধি হিসেবে মেক্সিকো, চীন এবং কাবুল গিয়েছেন, ১৯৩৭ সালে সাভারকর মুক্তি পেলে দেখা করতে তাঁর বাড়ি গিয়েছেন - তিনিও কোথাও এমন কিছু লেখেননি।

যোসিপি মাজ্জিনি ধরণের গুপ্ত সংগঠন এবং ব্যক্তি হত্যার থেকে লেনিন ছিলেন অনেক দূর। ছোটবেলায় তাঁর দাদা আলেকজান্দার জারের হত্যার প্রয়াসে ধরা পড়ে মারা যান। তখন থেকেই লেনিনের আস্থা গণ-অভ্যুত্থানে, ব্যক্তি-সন্ত্রাসে নয়। এটা লেনিন স্বয়ং লিখে গিয়েছেন।

লেনিনের পক্ষে ১৯০৯ সালে লণ্ডনে জারের পুলিশের ভয়ে সাভারকরের ইন্ডিয়া হাউসে শেল্টার নিলে বিশেষ লাভ হত না, বরং বিপদ বেশি হত। কারণ ব্রিটিশ বিরোধী কাজকর্মের জন্যে ইন্ডিয়া হাউস তার আগে থেকেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নজরে রয়েছে। কৃষ্ণবর্মা এবং মাদাম কামা তার আগের বছরই প্যারিসে সরে গেছেন। সাভারকর স্বয়ং রাত্রে ওখানে না থেকে বিপিন চন্দ্র পালের বাড়িতে শুতে গেছেন। লেনিন ও ক্রুপস্কায়া ১৯০২-০৩ থেকেই বহুবার লণ্ডনে যান, পড়াশোনা করেন। সেখানে দলের সম্মেলন হয়। শেল্টারের ব্যাপারে তাঁদের নিজেদের সংগঠন সাভারকরের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল।

সাভারকর ও গান্ধীজির লণ্ডনে ক’বার দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল?

বৈভব পুরন্দর একজন নিষ্ঠাবান সাভারকর গবেষক। তাঁর ২০১৯ সালে প্রকাশিত সাভারকরের জীবনীগ্রন্থটি বিবেক দেবরায়, গুরুচরণ দাস এবং সুধীন্দ্র কুলকার্ণীর মত বুদ্ধিজীবিদের প্রশংসা পেয়েছে। তাঁর মতে এবং এতদিনের স্বীকৃত তথ্য অনুযায়ী গান্ধীজির সঙ্গে সাভারকরের লণ্ডনে প্রথম এবং শেষবারের মত দেখা হয় অক্টোবর ১৯০৯ সালে। ১ জুলাই, ১৯০৯ সালে লণ্ডনে মদনলাল ধিংড়া (সাভারকরের নির্দেশে) কার্জন-উইলিকে হত্যা করেন। বিভিন্ন সমাবেশে এবং পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে সাভারকর এই হত্যার সমর্থন করেন।

গান্ধীজি লণ্ডনে আসেন ১০ জুলাই, ১৯০৯ । তিনি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে বললেন - এ যে ভয়ংকর কাণ্ড! তারপরে 'ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন' পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে বললেন - "এটি কাপুরুষোচিত কাজ, [6] তবে ধিংড়া করুণার পাত্র। আসল দোষী যারা ওকে পেছন থেকে উসকেছে। একদিন ঈশ্বরের দরবারে এদের বিচার হবে"। [7] তখন কিন্তু দু’জনের মধ্যে দেখা হয়নি।

তবে দেখা হল অক্টোবর মাসে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে স্থানীয় ভারতীয়রা সেবার লণ্ডনের বেইজওয়াটার এলাকায় নিজামুদ্দিন নামের ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন। গান্ধীজি সবার অনুরোধে সভাপতিত্ব করতে রাজি হলেন। মুখ্য বক্তা বিনায়ক সাভারকর। উপস্থিত প্রায় একশ’ জনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আসফ আলি। তাঁর কথায়, গান্ধীজি খুব সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে সাভারকরকে বলতে দিলেন। সাভারকর বললেনও ৪৫ মিনিট ধরে। তবে সাভারকর এবং গান্ধীজি দুজনেই ওই সভায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের উপর জোর দিয়েছিলেন। লণ্ডন প্রবাসের সময় বিশেষ করে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ নিয়ে বইটি লেখার সময় থেকেই সাভারকর হিন্দু-মুসলিম ঐক্য উচিত এবং বাস্তবে সম্ভব বলে বক্তব্য রাখতেন। [8[ সেই সময় পুণের ‘কাল’ পত্রিকায় (মারাঠি) পাঠানো ডেসপ্যাচে ঘটনাটির উল্লেখ করে গান্ধীজি সম্বন্ধে সাভারকার বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যারিস্টার নেতাটি একজন খাঁটি দেশভক্ত। [9]

বিক্রম সম্পত একজন প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসবিদ। তাঁর সাভারকরের জীবনী নিয়ে দুই খণ্ডে প্রকাশিত গবেষণা [10] অনেকের নজর কেড়েছে। সাভারকরের প্রশংসক শিবির তাঁর লেখার গুণমুগ্ধ। যদিও সাভারকরের কোন লেখাতেই ১৯০৬ সালে লন্ডন প্রবাসের প্রথম তিন মাসের মাথায় গান্ধীজির সঙ্গে দেখা হওয়ার উল্লেখ নেই, তবু তিনি এই প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু পাতা খরচ করেছেন।

গান্ধীজি নিজের স্মৃতিকথায় লিখছেন যে, ১৯০৬ সালের অক্টোবর মাসে কোনো কাজে লণ্ডন প্রবাসের সময় তিনি এবং তাঁর সঙ্গী মি. অ্যালি (Mr. Alley) শ্যামজী কৃষ্ণবর্মার ইণ্ডিয়া হাউসে থাকতে গিয়েছিলেন। সেখানকার যত্নআত্তি ভালই এবং খরচ নামমাত্র। কিন্তু ইন্ডিয়া হাউস লণ্ডন শহরের একপ্রান্তে। অথচ যে কাজে এসেছেন তাতে অল্প সময়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে হবে, তাই তাঁদের বাধ্য হয়ে শহরের মাঝখানে একটি খরচসাপেক্ষ হোটেলে উঠতে হল। [11] তখন তিনি ২৩ বছরের আইনের ছাত্র, সেই সময়ে সাভারকর জুলাই মাসের গোড়ায় ইণ্ডিয়া হাউসের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কি ৩৭ বছরের ব্যারিস্টারটির স্বল্প সময়ের মধ্যে কোন আলাপ পরিচয় হয়েছিল? গান্ধীজির উপরোক্ত স্মৃতিকথায় সাভারকরের কোনো উল্লেখ কিন্তু নেই।

বিক্রম সম্পত যদিও বলছেন যে, দুজনের সাক্ষাতকার বা কথাবার্তার কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি, কিন্তু তাঁর গ্রন্থে উনি হরীন্দ্র শ্রীবাস্তবের সাম্প্রতিক লেখা থেকে একটি আখ্যান (anecdote) উদ্ধৃত করেছেন। [12] বইটিতে শ্রীবাস্তব লিখছেন, হ্যাঁ, দেখাসাক্ষাত হয়েছিল বইকি। ঝাঁসিওয়ালে পণ্ডিত পরমানন্দ নামে এক প্রাক্তন বিপ্লবী হরীন্দ্রকে জানিয়েছেন যে সেই সাক্ষাতকারের উনি প্রত্যক্ষদর্শী।

গান্ধীজি রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করলে সাভারকর তাঁকে থামিয়ে দিয়ে আগে খেয়ে নিতে বলেন। একজন চিৎপাবন ব্রাহ্মণকে চিংড়িমাছ রান্না করতে দেখে গান্ধীজি বিচলিত হলেন এবং নিজে নিরামিষাশী হওয়ায় সেই রান্না খেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিলেন। সাভারকর তখন ব্যঙ্গ করে বললেন, বেশ, আমাদের সঙ্গে বসে যদি খেতে না পারেন তাহলে একসঙ্গে কাজ করবেন কী করে! আর এটা তো সেদ্ধ মাছ, আমরা তো ব্রিটিশদের কাঁচা চিবিয়ে খেতে চাই! [13]

আরেকজন সাভারকর এবং ভারতে হিন্দুত্ব রাজনীতির উত্থান নিয়ে কাটাছেঁড়া করা লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ও ওই প্রসঙ্গ তুলেছেন। [14] তাঁর তথ্যসূত্র হল 'The Economist' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ। [15] কিন্তু সেই প্রবন্ধেও কোন সূত্র দেওয়া নেই।

এ’ব্যাপারে গান্ধীজি নিজে কী বলছেন?

উনি শংকররাও দেবকে লেখা একটি চিঠিতে স্পষ্ট করেছেন যে সাভারকরের সঙ্গে ওনার লন্ডনে একবারই দেখা হয়েছিল, সেটা ১৯০৯ সালে। [16] কিন্তু সম্পত এবং হরীন্দ্র যে একজন বয়স্ক বিপ্লবী ঝাঁসিওয়ালে পণ্ডিত পরমানন্দের প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের উল্লেখ করছেন! খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে যে ঝাঁসিওয়ালে পণ্ডিত পরমানন্দ অনেক কমবয়েসি বিপ্লবী যিনি কখনই লণ্ডন যাননি। ১৯০৬ সালে তাঁর বয়েস ছিল ১৪ বছর, এলাহাবাদে কায়স্থ পাঠশালা স্কুলের ছাত্র। তখন থেকেই তাঁর বিপ্লবীদের সঙ্গে সম্পর্ক হয় এবং পড়াশুনো ছেড়ে দিয়ে ১৯০৮ সালে ঝাঁসিতে বিপ্লবী কাজকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়েন। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর ফাঁসির হুকুম হয়, পরে শাস্তি দ্বীপান্তরে বদলে যায় এবং আন্দামানে গিয়ে ১৯১৬ সালে তাঁর সাভারকরের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়। তিনি ছাড়া পান ১৯২২ সালে। [17] তিনি মুচলেকা দেননি। এর পরেও সত্যাগ্রহ, লবণ আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে প্রায় তিরিশ বছর ইংরেজের জেলে কাটিয়ে ছিলেন। শেষ জীবনে দিল্লিতে গোল ডাকঘরের কাছে 'স্বাধীনতা সেনানী ভবন'-এ থাকতেন।

অথচ তাঁর নামে লণ্ডনে ১৯০৬ সালে কোন ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ছাপা হচ্ছে। তবে সাভারকর চর্চায় তথ্যের হেরফের নিয়ে সমকালীন ইতিহাস লেখক অশোক কুমার পাণ্ডেয় তাঁর বই ‘সাভারকরঃ কালাপানী অউর উসকে বাদ’-এ এই বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অশেষ ধন্যবাদের পাত্র হয়েছেন।

নেতাজি সুভাষ কি সাভারকরের পরামর্শে ভারত ছেড়ে জার্মানি/জাপান গিয়েছিলেন?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গোড়া থেকেই সুভাষ চন্দ্র বোস এবং আরও অনেকে ডিফেন্স অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্টে বন্দী হয়ে জেলে ছিলেন। সেটা ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাস। সুভাষ চন্দ্র ভাবছেন বৃটিশ শাসনকে ঘা দেবার এই সুযোগ ফস্কাতে দেবেন না। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে এক মাস কলকাতার এলগিন রোড বাসভবনে নজরবন্দী থাকবার সময়ে আচমকা ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে গেলেন। এই ঘটনা আমরা জানি।

সাভারকরের জীবিতকালে যে প্রথম জীবনীটি বেরোয় তাতে কী লেখা হয়েছে দেখা যাকঃ

“এটি সর্বজনবিদিত যে দেশগৌরব সুভাষ বোস সাভারকরের মুগ্ধ প্রশংসক ছিলেন। তিনি যখনই ‘ভারতীয় বিপ্লবীদের রাজকুমার’ সাভারকরের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন তখন যথাবিহিত শ্রদ্ধা এবং সৌজন্য দেখিয়েছেন। সুভাষ ছিলেন শিবাজী এবং তাঁর রাজনীতির ভক্ত; এবং এটা আজ কারও অজানা নয় যে জানুয়ারি ১৯৪১-এ নাটকীয় অন্তর্ধানের ছ’মাস আগে ২২শে জুন, ১৯৪০ তারিখে তিনি সাভারকর সদনে গিয়ে সাভারকরের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। আলোচনা চলাকালীন ভারতীয় মাজ্জিনি সাভারকর ভারতীয় গ্যারিবল্ডি সুভাষ বোসকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে দেশের বাইরে থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্যে প্রেরণা যোগান। সেই সংকেতটি সঠিক অর্থে গ্রহণ করে সুভাষ, জন্মগত অধিনায়ক, ভারতীয় গ্যারিবল্ডির ভূমিকা পালন করলেন। পূর্বদেশে গিয়ে রাসবিহারী বোসের তৈরি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অধিনায়ক বা নেতাজি হলেন”। [18] (অনুবাদ লেখকের)

একদিকে বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে হিন্দু যুবকদের দলে দলে ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিতে আহ্বান করা, হিন্দু মহাসভার নেতাদের রিক্রুটিংয়ের কাজে সক্রিয় করা [19] এবং এ’বিষয়ে ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগোর সঙ্গে আলোচনা করা, আর অন্যদিকে সুভাষকে দেশের বাইরে গিয়ে ফৌজ গঠন করে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিকে আক্রমণ করা - যুগপৎ এই দু’টি অবস্থান কি একই ব্যক্তির হতে পারে?

এসব দাবি করার আগে ধনঞ্জয় কীর কি এর স্ববিরোধিতা খেয়াল করেননি?

তবে সাভারকরের অনুগামী বাল সাভারকর দাবি করেছেন যে, সাভারকর নাকি সুভাষ বোসকে বলেছিলেন জাপানে গিয়ে রাসবিহারি বোসের সঙ্গে যুক্ত হতে। [20] এটা শুধু বাল সাভারকরের মুখের কথা, কোন দস্তাবেজ বা দলিল নেই।

এ ব্যাপারে অর্থাৎ বোম্বাইয়ের সাভারকর ভবনে ২২শে জুন ১৯৪০ তারিখে নেতাজিকে সাভারকর তৎকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের রণনীতি নিয়ে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন তার রেকর্ড আছে, অন্যভাবে।

সুভাষ চন্দ্র বোস নিজে এ’বিষয়ে লিখে গেছেন।

জার্মানি যাবার পর ওই সাক্ষাতকার নিয়ে সুভাষ লিখেছেন, "দেখা গেল সাভারকর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত নন। তাঁর একটাই চিন্তা - কী করে হিন্দুদের ভারতের ব্রিটিশ ফৌজে ঢুকিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়"। [21] (অনুবাদ লেখকের)

সুভাষ চন্দ্র সেই সময়ে জিন্নার সঙ্গে দেখা করেও একই রকম হতাশ হয়েছিলেন। দেখলেন জিন্নারও একটাই চিন্তা, কী করে আলাদা একটা পাকিস্তান বানানো যায়। সুভাষ তাঁকে বলেছিলেন যে, এই সময় কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতার জন্য সংযুক্ত আন্দোলন করলে আগামী দিনে মিঃ জিন্নাহ্ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন।[22]

সুভাষ চন্দ্রের ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তা ফুটে বেরোল জার্মানী থেকে অগাস্ট ১৯৪২-এর বেতার ঘোষণায়। তিনি বললেন যে, ভারত ছাড়ো আন্দোলন সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলেছে। ওই আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে। তারপর তিনি জিন্নাহ্ এবং সাভারকরকে একাসনে বসিয়ে প্রকারান্তরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলেন। তাঁর নিজের কথায়ঃ
“I would request Mr. Jinnah, Mr. Savarkar and all those leaders who still think of a compromise with the British to realize once and for all that in the world of tomorrow there will be no British Empire. ...The supporters of British Imperialism will naturally become non-entities in a free India.” [23]

সুভাষ চন্দ্রের চিন্তাধারা নিয়ে সাভারকর কী ভাবতেন?

১৯৩৯ সালে পুণের জনসভায় সাভারকর সমালোচনা করলেন তিন জনের- - গান্ধীইজম, বোসইজম, রয়ইজম। আরও বললেন - ফরোয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ, “Bose did not differ very much from Mahatma Gandhi, except that he went further to woo the Muslims”. [24]

ভারতের মাজ্জিনি ও গ্যারিবল্ডির তথাকথিত গুরু-শিষ্য সম্পর্কের কিছু দস্তাবেজী প্রমাণ উদ্ধৃত করলাম। বেশ বোঝা যায় যে কেন নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের চারটে ব্রিগ্রেডের নাম কেন গান্ধী ব্রিগ্রেড, নেহেরু ব্রিগ্রেড, মৌলানা আজাদ ব্রিগ্রেড এবং সুভাষ ব্রিগ্রেড ছিল, কিন্তু কোন সাভারকর ব্রিগ্রেড ছিল না।


তথ্যসূত্রঃ

1. অশোক কুমার পান্ডেয়, 'সাবরকর: কালাপানী আউর উসকে বাদ', পৃঃ ২৫-২৬, রাজকমল পেপারব্যাকস্, নিউ দিল্লি, ২০২২ (প্রথম সংস্করণ)।
2. ইন্ডিয়া টুডে, ৭ই মার্চ, ২০১৮।
3. Savarkar.org  22/5/2017.
4. Hindi.opindia.com, 28/5/2020.
5. Lenin, Collected Works, Vol. 14, Progress Publishers, Moscow. 1972. Pp. 17-362 & Marxist.org.
6. Gandhi, Collected Works, Vol. 9, Pp. 302-303, 310.
7. Gandhi, Collected Works, Vol. 9, Pp. 302-303, 310.
8. বৈভব পুরন্দরে, 'সাভারকরঃ দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব', পৃঃ ৮৭।
9.  সাভারকর, ‘লণ্ডনচি বাতমিপত্রে’, পৃঃ ১৪৩।
10. সাভারকর, ‘লণ্ডনচি বাতমিপত্রে’, পৃঃ ১৪৩।
11. Collected Works of Mahatma Gandhi, Vol. 5, published by Gandhi Ashhram, Sewagram. Quoted by Sampat in his Savarkar, Echoes from a Forgotten Past, P-133.
12. Vikram Sampat, Savarkar, Echoes from a Forgotten Past, 1883-1924; P-133, Penguin, digital version, 2019.
13. Harindra Srivastava; Five Stormy Years: Savarkar in London, P-29.
14. Nilanjan Mukhopadhyay, 'The RSS: Icons of The Indian Right', Chennai, 2019. Pp. 53-54.
15. The Economist, Christmas Special issue, 17 December, 2014.
16. Collected Works of Mahatma Gandhi, Vol. 50, P. 50, published by Gandhi Ashram, Sewagram.
17. অশোক কুমার পাণ্ডেয়, 'সাবরকর: কালাপানী আউর উসকে বাদ', প্রথম সংস্করণ, দিল্লি, রাজকমল প্রকাশন, ২০২২। পৃঃ ৪০-৪১।
18. ধনঞ্জয় কীর, 'বীর সাভারকর', পৃঃ ২৬০।
19. বৈভব পুরন্দরে, 'সাভারকর, দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য ফাদার অফ হিন্দুত্ব', পৃ-২৫৬।
20. Bose, 'The Indian Struggle', Pp. 34.
21. ঐ
22. সাভারকর।
23. Bose, Testament of Subhash Bose, Pp. 21-24. Also quoted in Vaibhav Purandare’s Savarkar. Pp. 272.
24. Bombay Chronicle,  4th August, 1939. Also quoted in Vaibhav Purandare’s Savarkar. Pp. 257.